বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে আসতে যে পরিমান সাহস দরকার হয় তা আমার কোনদিনই ছিলোনা।
আমি বরাবরই ভীতু মানুষ।সামান্য টিকটিকি দেখলেও ভয়ে লাফিয়ে উঠি।সেই আমি কি করে যে এতো সাহসীকতা দেখিয়ে ফেললাম আমি ভাবতেও পারিনা।
হয়তো ভালবাসার জন্য!ভালবাসার মানুষটার সাথে সংসার সাজানোর সপ্নই হয়তো আমায় এতোটা সাহস জুগিয়েছে।
আমার মা যদিও আমাকে সাহায্য করেছে।
বিয়ের আসর ছেড়ে মেয়েকে পালাতে কোন মা ই সাহায্য করেনা।কিন্তু আমার মা করেছে।
আমরা মামা বাড়িতে থাকি।আমার বাবা নেই।নেই বললে ভুল হবে,আছে কিন্তু আমাদের সাথে নেই।
আমি ছোট থাকাকালীন আমার বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হয়।মা আমাকে নিয়ে মামা বাড়িতে থাকতে শুরু করে আর বাবা আমার বড় ভাইকে নিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে নতুন সংসার গড়ে।
মা প্রায় প্রায়ই ভাইয়ার জন্য কাঁদে। যতো যাই হোক ভাইয়া তার প্রথম সন্তান ছিলো।
যদিও আমার সেসব কিছুই মনে পরেনা।আমি তখন কোলের শিশু।
আমার আর মায়ের দেখভাল করেন মামা।যদিও দেখভাল বলা চলে না,বলতে হয় বাড়িতে শুধু ঠায় দিয়েছেন তিনি।
আমাদের খরচ চালায় আমার মা।তিনি খুব আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে পছন্দ করেন।আত্মসম্মানবোধ তার প্রবল।তাই হয়তো বাবার সংসার তার করা হয়নি।
আমিও চাকরী করে সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিলাম।কিন্তু মা এতে রাজি হননি।
সেই মামা হুট করে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন।ছেলে বিশাল বড়লোক।মামাকে কিছু টাকাও হয়তো দিয়েছে।সেইজন্য লোভে পরে আমার বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
মা অনেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেননি।
অবশেষে উপায় না পেয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে আমাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।
বিয়ের ভারী শাড়ি গয়না পরে আমি বসে আছি বাসস্টান্ডে।কোথায় যাবো আমি জানিনা।শুধু জানি আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে।এবং খুব দ্রুত।
আমার ফোনটা মামা নিয়ে নিয়েছিলো।
ফোন থাকলে হয়তো প্রিতমকে আমি মেসেজ করতে পারতাম।কিন্তু এখন সে উপায়ও নেই।
আশেপাশে মানুষজন আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাচ্ছে।
আমার বেশ ভুষা দেখেই তাদের এই কৌতুহল।
আমি জড়োসড়ো হয়ে বসলাম।
বাস আসেনি এখনো।এতক্ষণ কি করবো একা একা?
চারপাশে চোখ বুলালাম কিছুক্ষণ।
হাতের ব্যাগটা খুললাম।আসার আগে মা এই ব্যাগটা হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।
ব্যাগের ভেতর কিছু জামা কাপড় আর টাকা আছে।মনে মনে মাকে ধন্যবাদ দিলাম।
মা সাহায্য না করলে হয়তো আজ ওই লোকটার সাথেই আমার বিয়ে হয়ে যেতো।
ভাবতেই বুকটা ধক করে উঠলো আমার।
বিয়ে হয়ে গেলে কি করতাম আমি?কি হতো আমার সপ্নের?
যেই সপ্ন আমি আর প্রিতম একসাথে মিলে দেখেছি?
প্রিতমের কথা মনে পরতেই মুখে হাসি ফুটলো আমার।
মনে পরলো প্রথম দিনের কথা।
সচরাচর ফেসবুকে ছবি পোস্ট করিনা আমি।তবে সেবার করেছিলাম।
এবং তার ঘন্টা খানেক পরেই একটা মেসেজ রিকুয়েষ্ট এসেছিলো।
মায়াবতী,
চোখে কি মায়ার চারা বুনেছো তুমি?নাকি গাজার চাষ করেছো?ও চোখে তাকালে চোখ ফেরানো এতো দুষ্কর কেনো বলোতো?আচ্ছা তুমি আয়নায় যখন নিজের চোখের দিকে তাকাও তখন নিজের প্রেমে নিজে পরোনা?তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করেনা?
নাকি শুধু আমারই এমন হচ্ছে?
আমার নাওয়াখাওয়া সব বাতিল হয়ে গেছে যে?এর সমাধান কি বলোতো?
মেসেজটা দেখে আমি হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেয়েছিলাম সেদিন।
আমি ফর্সা নই,ওতো সুন্দরীও নই।কেউ আমায় নিয়ে এভাবে কখনো বলেনি।বরংচ গায়ের রং চাপা হওয়ায় লোকমুখে টিটকারি শুনেছি অনেক।
কিন্তু এমনভাবে এতো সুন্দর করে প্রসংশা হয়তো কেউ করেনি আমার।
কথাগুলো ভেবে আনমনেই হাসলাম।কি পাগল ছেলে প্রিতম।প্রথম দিন থেকে এ পর্যন্ত ওর পাগলামিতেই তো বেধে রেখেছে আমায়।
নয়তো দেখা নেই কথা নেই শুধু মেসেজে মেসেজে প্রেম হয়?
—আপনি কি আমায় কামড়াবেন?
কথাটা শুনেই ভাবনার জগৎ থেকে বের হলাম।পাশে তাকিয়ে দেখি একটি ছেলে।ছেলে বললে ভুল হবে তাকে বলতে হবে সুপুরুষ।
এতো সুন্দর ছেলে হয়তো আমি কখনোই দেখিনি।কিন্তু চোখেমুখে তার দুষ্টুমির ছাপ।
কেমন শয়তানি হাসি হাসছে সে।
আমি বললাম,
—জ্বী? আমাকে কিছু বলছেন?
ছেলেটা দাড়িয়ে ছিলো। আমার কথা শুনে আমার পাশে বেন্ঞ্চটায় বসলো।সামনে আসা ছিলকি চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে সরাতে সরাতে বললো,
—বলছিলাম আপনি আমায় কামড়াবেন না তো?
আমার কপাল কুঁচকে এলো আপনাআপনি।
আমি কামড়াবো?কেনো?তাও আবার এই অচেনা ছেলেকে?
আমাকে ভাবতে দেখে ছেলেটা আবার হাসলো।গালভরা মিষ্টি হাসি।একপাশের গালে ঠোলও পরলো।বললো,
—না মানে আপনাকে এই বেশে বসা দেখলাম তারউপর একা একা হাসছিলেন।তাই আর কি ভাবলাম আপনি হয়তো….
কথা শেষ করতে দিলাম না আমি।ফট করে দাড়িয়ে পরলাম।তেড়ে গিয়ে বললাম,
—কিহ?আপনি আমায় পাগল বললেন?
ছেলেটা ইনোসেন্ট মুখ বানালো।বললো,
—আমি কখন পাগল বললাম?
—বলেছেন।
–সত্যি ভেবে দেখুন তো,আমি কি আপনায় পাগল বলেছি?
আমি চিন্তায় পরে গেলাম।সত্যি ছেলেটা আমায় পাগল বলেনি।কিন্তু?
কিন্তু তো থেকেই যায়।পাগল বলেনি কিন্তু মিন তো করেছে নাকি?
আমি কিট মিট করে পাশে তাকাতেই দেখি কেউ নেই।
আশেপাশে তাকিয়েও কাউকে পেলাম না।
ছেলেটা চলে গেলো?আমাকে পাগল বলে চলে গেলো?
কতো বড় সাহস?রাগলে আমার কান্না পায়।কিন্তু এইখানে কাঁদাটা সমিচীন নয়।আমি জোর করে কান্না আটকালাম।
প্রিতম জানে আমি রাগলে কেঁদে ফেলি।তাই সে আমাকে কখনো রাগায়নি।আমায় ভালবাসে যে।খুব ভালবাসে।
ভালবাসার মানুষটা কাঁদুক কে চায় সেটা?
,
,
#সাহেব_বিবি_গোলাম
#নুশরাত_জেরিন
#পর্ব:১