#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
টেবিলে বসে সকালের নাস্তা করছে কায়াসা আর ইতি।হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই ইতি কায়াসার দিকে ঘুরে বসে।
” আচ্ছা কায়ু আমাকে একটা কথা বলতো।”
” কি?”
” ওই লোকটা কে ছিল যে আমাকে ফোন করেছিল?কথা শুনে তো মনে হলো লোকটা তোকে চেনে।তোর সবকাজ সম্পর্কে তার জানা।”
ইতির কথা শুনে কায়াসার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।সে নিচের দিকে তাকিয়ে মুখের খাবারটা আস্তে আস্তে নাড়তে থাকে।
” কি হলো কিছু বলছিসনা কেন?”
” কি বলবো?আমার জানা থাকলেই না তোকে কিছু বলবো।যখন আমিই কিছু জানিনা তখন তোকে কি করে বলবো?”
” কিছু জানিস না মানে?তুই যদি কিছু না জানতিস তাহলে তোর পক্ষে এতোটা নরমাল থাকা সম্ভব ছিলনা।তুই ওই লোকটা ব্যপারে আগে থেকেই জানিস।সত্যি করে বলতো ঘটনা কি?”
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কায়াসা আস্তে আস্তে ইতিকে সব বলে এতোদিন তার সাথে কি কি হয়েছিল।সব শুনে ইতি খুব বেশি ভয় না পেলেও সে অবাক হয়।
” কি বলছিস তুই এসব?লোকটা মানুষও খুন করেছে?”
” হুম।আর কয়েকমাস আগে যে ইফাদ ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছিল আর আমি রক্ত দিয়েছিলাম মনে আছে?”
” হুম।”
” ওই এক্সিডেন্টের পেছনেও উনার হাত ছিল।”
” কিন্তু কেন?এখানে ইফু ভাইয়া আবার কি করলো?”
” ওনার দোষ ছিল আমি ওনার সাথে কলেজে গিয়েছিলাম।”
” কি?এতটুকু একটা কারণে?”
” শুধু এটাই নয় মিস্টার আদ্রিক আমাকে বাড়ি ড্রপ করে দিয়েছিল বিধায় উনি ওনারও এক্সিডেন্টে করিয়েছিলেন।”
” হুম বুঝলাম।”
” কি?”
” এইযে লোকটা তোর প্রতি খুবই পজেসিভ।কিন্তু যতই উনি তোকে ভালোবাসুক কিন্তু ওনার কাজটা মোটেও ঠিক নয়।এটাকে ভালোবাসা না সাইকোগিরি বলে।হ্যাঁ এটা ঠিক ওই ছেলেগুলো মেরে উনি ঠিক করেছেন কারণ আইন প্রমাণের কারণে ওদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।কিন্তু ইফু ভাইয়া আর আদ্রিক স্যারের সাথে উনি যেটা করেছেন ওটা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।”
” হুম জানি আমি সেটা কিন্তু কি করবো তাই তো বুঝতে পারছিনা।আমি কি করি না করি সব কেমন করে যেন উনি জানতে পেরে যায়।”
” হয়তো উনি তোর উপর নজর রেখে চলেছেন?”
” কি বলছিস এসব তুই?”
” আমি সিউর না তবে হতেও পারে।”
ইতির কথা শুনে কায়াসার মনে ভয় আরো বেড়ে যায়।
” আচ্ছা তোর কি মনে হয়?কেউ তোকে ফোলো করে?”
” না।আমার তো সেরকম কিছু কোনদিনও মনে হয়নি।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।এতো চিন্তা করিস না।আমি আছি তো।এখন থেকে কোন সমস্যা হলে আমাকে বলিস।”
” হুম।”
” আর শোন আরোহীর সাথে যথাসম্ভব কম কথা বলবি।ওর জেদের কারণে আর ওর ক্যারেক্টরলেস বয়ফ্রেন্ডের জন্য তোর এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল।”
” কিন্তু এতো ওর কি দোষ বল?ও কি আর জানতো ওর বয়ফ্রেন্ড এরকম।”
” হ্যাঁ তুমি তো মহান মানবী।এতো বড় বিপদেরমুখে পড়েও তোমার শিক্ষা হয়নি।বেশি কথা না বলে আমি যা বলছি তা কর।আমি রাতুলের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোরগার করার চেষ্টা করবো।”
” কেন শুধু শুধু এসব ঝামেলায়…….. ”
” এগুলো শুধু শুধু কোন ঝামেলা না।ওর মতো জানোয়ারকে এভাবে খোলা ছেড়ে দিলে না জানি আরো কত মেয়ের জীবন নষ্ট করবে।ওকে তো শিক্ষা দিতেই হবে।আর সেটা আমি যেকোনভাবে দিয়েই ছাড়বো।এখন তোকে যেটা বলেছি সেটা কর।আমি আসছি এখন।দরজা ভালো করে লাগিয়ে রাখবি,না জেনে হুট করে দরজা খুলবিনা আর টিউশনে সাবধানে যাবি।দরকার পরলে রিক্সা নিয়ে আসা যাওয়া করবি।”
কায়াসা মুখ দিয়ে কিছু না বলে বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়িয়ে ইতির কথায় সায় দেয়।
” এখন দরজা বন্ধ করে যা।”
ইতির পেছন পেছন কায়াসা দরজার কাছে আসে।ইতি বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে কায়াসাকে দরজা বন্ধ করাই আর যাওয়ার আগে নিজেও একবার চেক করে নেয় যে কায়াসা ঠিক মতো দরজা বন্ধ করেছে কিনা।
বিকেল বেলা একটু বিশ্রাম নিচ্ছে কায়াসা।কিন্তু ফোনের আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে যায়।সে ঘুম জারানো চোখে ফোন রিসিভ করে।
” হ্যালো।” ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে কায়াসা।
” কায়ু।আমি আরোহী বলছি।”
” হুম বল।”
” কোথায় তুই?”
” বাসায়।ঘুমাচ্ছি।”
” কায়ু তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
” বল।”
” তুই এখন ঘুমের ঘোরে আছিস।বললেও কিছু বুঝবিনা,তাই উঠে নরমাল হয়ে বস।”
সব আলসেমি ছেড়ে কায়াসা উঠে বসে।
” বল কি বলবি?”
” কেমন আছিস তুই এখন?”
” ভালো।এটা জানার জন্য ফোন দিয়েছিস?”
” না।শোন না কাল রাত থেকে রাতুলের কোন খোঁজ পাচ্ছিনা।ওকে সকাল থেকে কত বার ফোন দিয়েছি কিন্তু ও ফোন রিসিভ করছে না আর এখন তো ফোনই বন্ধ।এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”
রাতুলের কথা শুনে আরোহীর প্রতি কায়াসার একধরনের বিরক্তির সৃষ্টি হয়।
” তুই রাতুল নামের ছেলেটাকে খুব ভালোবাসিস না?”
” হুম।নিজের থেকেও বেশি।”
” নিজের থেকেও বেশি কাউকে কখনোই ভালোবাসা যায় না।যদিও যায় তবে ভাগ্য গুণে হাজারে একটা।কারণ জীবন কারো জন্য থেকে থাকেনা।”
” মানে?” কায়াসার কথার মানে বুঝতে না পেরে আরোহী প্রশ্ন করে।
কিন্তু কায়াসা আরোহীর কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বলে,” খুব বিশ্বাস করিস না ওকে?”
” হুম।”
” আচ্ছা যদি কখনো জানতে পারিস ও তোর বিশ্বাস ভেঙেছে,ও তোকে যা দেখায় আসলে ও সেটা নয় তাহলে?”
” কিসব বলছিস তুই?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”
” কিছুনা।সময় হলে বলবো কোনদিন।চিন্তা করিস না,হয়তো ও কোন সমস্যায় আছে বা কাজে ব্যস্ত আছে তাই ফোনটা বন্ধ করেছে বা হয়তো চার্জ নেই।এতো ভাবিস না,নিজের খেয়াল রাখিস।”
আরোহীকে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে কায়াসা ফোনটা দেখে দেয়।কায়াসারও এখন আরোহীর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।তার মস্তিষ্কে ইতির কথার কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে।তার মন আরোহীর এতে কোন দোষ নেই এটা বললেও তার মস্তিষ্কের একটা ক্ষুদ্র অংশ বলছে আরোহীরও এতো দোষ আছে।ওর দোষের কারণে সে তার সম্মান,সতীত্ব সব হারাতে বসেছিল।
টিউশনে এসে কায়াসা।সে স্টুডেন্টকে পড়াচ্ছে।স্টুডেন্ট অনিকার মা একটু উপরের ফ্ল্যাটে গিয়ে।তখন দরজা খুলে কেউ ঘরে প্রবেশ করে।কায়াসা মনে করে অনিকার মা এসে তাই সে নিজের মতো অনিকার দেখা খাতা কাটতে থাকে।কিন্তু কিছুক্ষণ পর কায়াসার মনে হতে থাকে কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে।কায়াসা ঘাড়টা পাশ করে দেখে ইমন তার পেছনে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ইমনকে দেখে কায়াসা অন্যপাশে মুখ করে চোখ বন্ধ করে নেয় তারপর চোখ খুলে আবারো অনিকার খাতা কাটায় মনোযোগ দেয়।ইমন কিছুট দূরে থাকা সোফায় একদম কায়াসার সামনাসামনি বসে।
” কি খবর টিচার ম্যাডাম?”
” মার খেয়েও শিক্ষা হয়নি।বেয়াদব ছেলে।” বিরবির করে বলে কায়াসা।”
” কি ম্যাডাম?কি বিরবির করছেন?”
” কিছুনা।আপনার হাত কেমন আছে?”
” ওটাতো একদম ফাটাফাটি আছে।”
তখনি দরজা খুলে আবারো ঘরে কেউ প্রবেশ করে।কায়াসা পেছন ফিরে দেখে অনিকার মা এসেছে।
” ও বাবা তুই এসে পড়েছিস দেখি।বাহ্ বেশ ভালো হলো তাহলে।”
” আচ্ছা অনিকা আমি আজ আসছি।যা পড়া দিয়েছি তা পড়ে রেখো।আমি কাল এই সময়ে আসবো।”
” চলে যাচ্ছো নাকি নিশাত?”
” হ্যাঁ আন্টি,আজকের মতো অনেক পড়া হয়েছে।বেশি পড়ালে ও কাভার করতে পারবেনা।”
” হুম তা যা বলেছে।”
” আচ্ছা আন্টি আমি তাহলে আজ আসি।”
” চলুন তাহলে টিচার ম্যাডাম,আমি আপনাকে ছেড়ে দিয়ে আসছি।”
” হ্যাঁ সেটাও ভালো হবে।সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে,তার উপর তুমি মেয়ে মানুষ।”
” না আন্টি ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই।এটা আমার প্রতিদিনের কাজ।আমি চলে যেতে পারবো।ভালো থাকবেন,আল্লাহ হাফেজ।”
কায়াসা একবার ইমনের দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে।
চলবে…….