#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
পিটপিট করে চোখ খুলে কায়াসা।সে আসতে আসতে উঠে বসে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে বাইরে আলো ফুটেছে।ভ্রু-কুচকে কায়াসা রুমটা একবার দেখে।আরে এটা তো তার রুম না কিন্তু সে এই রুমটাকে চেনে।এটা আদ্রিকের বাড়ির গেস্ট রুম।কায়াসা তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে নিচে নেমে আসে।সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে থাকে।কায়াসা বুঝতে পারছেনা সে তো তার বাসায় ছিল তাহলে ঢাকায় আদ্রিকের বাড়িতে কি করে এলো।
” আরে ম্যাডাম আপনি উঠে পড়েছেন?”
” সুমি,আমি এখানে কি করে?আর তোমার স্যার কোথায়?ওনাকে ডাকো।”
” আমি এখানে কায়াসা।”
কায়াসা পেছন ফিরে দেখে আদ্রিক উপরে দাঁড়িয়ে আছে।
” আদ্রিক স্যার আমি আপনার বাড়িতে কি করে এলাম?আমি তো চট্টগ্রাম ছিলাম।তাহলে ঢাকায় কি করে…..?”
” মাত্রই উঠেছো আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।তারপর আমার রুমে এসো।বলছি তোমাকে সব।” আদ্রিক নিজের রুমে চলে যায়।কায়াসা দ্রুত পায়ে গেস্ট রুমে গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নেয়।মুখ ধোঁয়ার সময় কায়াসা খেয়াল করে তার ডানহাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলটাতে নীল রঙের কালি লেগেছে আছে।তবে কায়াসা এই বিষয়টাকে এড়িয়ে গিয়ে আদ্রিকের রুমে চলে আসে।
” বলুন এবার।”
” বলছি তবে তার আগে তোমাকে একটা কথা বলবো,শোনার পর মোটেও চিল্লাপাল্লা করবেনা।”
” আচ্ছা বলুন।”
” তুমি এখন কাগজে কলমে আমার স্ত্রী।যদিও ধর্মীয় ভাবে আমাদের বিয়ে হয়নি কিন্তু তাও তুমি এখন আমার স্ত্রী।”
আদ্রিকের কথা শুনে কায়াসার নিজের বৃদ্ধ আঙ্গুলটার দিকে তাকাই।তারপর আঙ্গুলটা আদ্রিকের দিকে করে বলে,
” তারমানে এটা….?”
” হুম।যেহেতু তুমি অজ্ঞান ছিলে তাই টিপসই নেওয়া হয়েছে।”
” কিন্তু কিভাবে হলো এসব?” শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে কায়াসা।
” কাল……
ফ্ল্যাসবেক,
কলেজ ছুটি হয়ে যাওয়ার পর আদ্রিক নিজের কেবিনে বসে খাতা দেখছিল।তখন ইতি এসে উপস্থিত হয় সেখানে।
” আদ্রিক স্যার….” হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ইতি।
” আরে ইতি তুই এই সময় এখানে?বাড়িতে যাওনি কেন?”
” স্যার অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গিয়েছে।আমার এখন আপনি ছাড়া আর কারো কথা মনে পড়েনি।আমার মনে হয়েছে আপনিই কিছু করতে পারবেন।”
” কিন্তু কি হয়েছে?”
” স্যার কায়াসার আব্বু ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।”
” ও আচ্ছা।কিন্তু এতে আমি করতে পারি?”
” স্যার কায়াসা এই বিয়েটা করতে চাইনা।প্রথম কারণ সে তাদের কাউকে চেনেনা আর দ্বিতীয় বিয়ে হয়ে গেলে কায়াসা আর পড়াশোনা করতে পারবেনা আর না ওর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।প্লিজ স্যার আপনি কিছু একটা উপায় বলুন যাতে কায়াসার বিয়েটা ভাঙা যায়।”
আদ্রিক কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু একটা চিন্তা করে।
” ইতি আমরা এখন ওর থেকে অনেক দূরে আর এতো দূরে থেকে কিছু করা সম্ভব নয়।কিছু করতে হলে আমাদের কায়াসার বাড়িতে গিয়ে তার বাবার সাথে কথা বলতে হবে।”
” হুম ঠিক বলেছেন স্যার।আচ্ছা স্যার আমি তাহলে এখুনি বের হচ্ছি।”
” দাঁড়াও ইতি আমিও তোমার সাথে যাবো।তুমি একা গিয়েছে কিছু করতে পারবে বলে মনে হয়না।”
” আপনি স্যার?আচ্ছা স্যার চলুন।”
ইতি আর আদ্রিক কলেজ থেকেই সোজা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
কায়াসার বাড়ি যেহেতু ইতি আগে থেকে চিনতো তাই তাদের বেশি অসুবিধা হয়নি।ইতি গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে।
” কায়াসা…..কায়াসা…..” চিৎকার করে বলে ইতি।
” আরে আরে কেডা আপনি?সাহেবের মাইয়ার নাম লইয়া চিল্লান ক্যান?বউয়ের নাম ধরে এমন কইরা কেউ চিল্লাই নাকি?”
” আগে এটা বলুন কায়াসা কোথায়?”
” আপা তো নিজের রুমে,অজ্ঞান হইয়া পইড়া আছে।সাহেব,ভাইজান,বরের বাড়ির সবাই এতো সেইখানে।”
” আমাকে রুমটাতে নিয়ে যাও।”
” কিন্তু আননে কেডা?”
” আমি কায়াসার বান্ধবী ইতি।”
” আচ্ছা আহেন।”
মিতা নামের মেয়েটা ইতিকে কায়াসার রুমে নিয়ে যায়।ইতি রুমে গিয়ে দেখে অনেকগুলো মানুষ ভিড় করে আছে।ইতি ভিড় টেলে ভিতরে ঢুকে দেখে কায়াসা বিছানায় শুয়ে আছে।
” কায়ু কি হয়েছে তোর?উঠ,দেখ আমি চলে এসেছি।”
” আরে এই মেয়ে কে তুমি?ভেতরে এলে কি করে?” কায়াসার ফুফু বলে।
” আমি ইতি,কায়াসার বান্ধবী।আঙ্কেল আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।যদি একটু সবাইকে যেতে বলতেন।”
” কি বলবে সবার সামনে বলো।” গম্ভীরভাবে বলে কায়াসা৷ বাবা।
” আঙ্কেল আমার কথাগুলো সবার সামনে বললে কিন্তু আপনার সম্মানের সমস্যা হবে।”
আকাশ সাহেব সবাইকে বাইরে যেতে বললেন কিন্তু কায়াসার ফুফু থেকে যায়।
” বলো কি বলবে।”
” আঙ্কেল আপনি এটা কি করছেন?কায়াসা এভাবে হুট করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন?ও তো এই বিয়েতে রাজি নয় তাহলে কেন ওকে ব্ল্যাকমেইল করিয়ে বিয়ে করতে জোর করছেন?”
” আমি মোটেও ওকে ব্ল্যাকমেইল করছিনা,যা করছি ওর ভালোর জন্য করছি।”
” কোন ভালো কিছু হচ্ছে না ওর,এতে ওর জীবন শেষ হয়ে যাবে।”
” এই মেয়ে তুমি নিশাতের বান্ধবী তাই এতোক্ষণ সহ্য করেছি।তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো।”
” আমি যা বলছি ঠিক বলছি।আমি কায়াসাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে এসেছি।ওর যখন মনে হবে এটা বিয়ে করা উপযুক্ত সময় তখনই ও নিজে থেকেই আপনাদের বলবে।”
” না নিশাত কোথাও যাবেনা।বরযাত্রীও চলে এসেছে এখন কি করে বিয়ে বন্ধ করা যায়?” ফুফুমণি বলে।
” সেটা আপনাদের ব্যাপার।আমি কায়াসা নিতে এসেছি তো ওকে নিয়েই যাবো।”
” এটা সম্ভব না।নিশাতের বিয়ে আজই হবে।”
” আপনি কেমন বাবা হ্যাঁ যে নিজের মেয়ের মত নেই জেনেও তাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন?এতোই যদি জোর করার ইচ্ছে থাকতো তাহলে এতো পড়াশোনা কেন করিয়েছেন?কেন ওকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন?”
” পড়াশোনা বিয়ের পরেও করা যাবে।” গম্ভীরভাবে বলে কায়াসার বাবা।
” হাসালেন আঙ্কেল।আঙ্কেল আপনি কিন্তু ভালো করেই জানেন বিয়ের পর কায়াসা আর পড়াশোনা করতে পারবেনা,তাও কেন ওকে মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন?আর আপনি কিন্তু জানেন পরিবারটা মোটেও ভালো হয়।যদি ভালো হতো তাহলে আপনাদের এতো হুমকি দিতোনা।”
” এই মেয়ে তুমি নিজের সীমার মধ্যে থাকো।মেয়েটা আমাদের,তাই সীদ্ধান্তটা আমারাই নেবো।”
” আপনারা……”
” ইতি তুমি কিছু বলোনা আর।আমি বলছি বাকিটা।” পেছন থেকে আদ্রিক বলে।
” এইটা আবার কে?তুমি কি সাথে করে পুলিশ নিয়ে এসেছো নাকি?” কায়াসার বাবা বলে।
” আমি হচ্ছি ডাঃআদ্রিক আহসান,সেইসাথে ওদের কলেজের প্রফেসার।আঙ্কেল আপনি প্লিজ আমার সাথে আসুন,আপনার সাথে আমার একটু কথা আছে।”
” আবার তুমি কি বলবে?” ফুফুমণি বলে।
” চলো তুমি আমার সাথে।”
আকাশ সাহেব আদ্রিককে ওনার রুমে নিয়ে যায়।আদ্রিক ওনাকে অনেক বোঝায় অতঃপর উনি কিছুটা হলে বুঝতে পারেন।
” তোমার কথা না হয় বুঝলাম।বিয়েটা না হয় আমি ভেঙে দেবো কিন্তু আমার মেয়েটার কি হবে?আশেপাশের মানুষরা যখন জানতে পারবে বিয়েটা হয়নি তখন তো ওরা নানা রকম কথা বলবে।আর নিশাত আমার কাছেও থাকেনা,সে ঢাকা শহরে একা থাকে যদি এরা কিছু করে ফেলে তো?তোমার কথায় আমি বিয়েটা ভেঙে দিলাম ঠিক আছে কিন্তু আমার মেয়ের দায়িত্বটা কে নেবে?”
আকাশ সাহেব কথা বলে আদ্রিকের দিকে তাকাই।ওনার তাকানোর ধরণ দেখে আদ্রিক বুঝে যায় উনি কি বলতে চায়ছেন।
.
.
.
” তারপর?” এবার মুখ খুলে কায়াসা।
” তারপর আর কি উনি আমাকে বলেন তোমাকে যাতে আমি বিয়ে করি আর এতে ইতিও মত দেয়।তাই তখনই আমাদের বিয়ে হয়ে যায় আর আমরা এখানে চলে আসি।সব তো শুনলে এবার বলো তোমার কি এই সম্পর্কে আপত্তি আছে?আপত্তি থাকলে এখনই বলে দাও তাহলে আমি……”
আদ্রিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই কায়াসা উঠে দাঁড়ায়।
” বিয়েটা কোন ছেলেখেলা নয় যে বললেই শেষ হয়ে যাবে।যেভাবেই হোক বিয়েটা হয়েছে আর আমি এই সম্পর্কটাতে সম্মানও করি।যা হওয়ার ছিল তা হয়ে গিয়েছে।আমার এই বিয়েতে কোন আপত্তি নেই,আমি আপনার সাথে সংসার করতে রাজি।আশা করি আপানারও কোন আপত্তি নেই।”
কায়াসা চলে যেতে নিলেও আবারো পেছনে ফিরে তাকাই।
” আমি কি এখন থেকে এখানে থাকবো?”
” যেহেতু তুমি এখন আমার স্ত্রী তাই আমার সাথেই থাকবে এই বাড়িতে।তবে চিন্তা করোনা যেহেতু সব হুট করে হয়ে গিয়েছে তাই আমরা কিছুদিন আলাদা থাকবো তারপর নাহয় বাকি ভেবে দেখা যাবে।”
কায়াসা চলে যায় আর কায়াসার কথা শুনে আদ্রিক হাসে।আদ্রিকের ফোন আসলে সে ফোনটা রিসিভ করে।
” স্যার,ওদেরকে এখানে নিয়ে এসেছি।এবার কি করবো?”
” বেঁধে রাখো,সময় হলে আমি আসবো।” ফোন কেটে দেয় আদ্রিক। “কায়ুপাখি তুমি কি করে ভাবলে যে আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো?তোমাকে পাওয়ার জন্য এতকিছু করলাম তাহলে কি করে এতো সহজে ছেড়ে দিয় বলো।” কথাগুলো বলে বাঁকা হাসে আদ্রিক।
চলবে……