সুপ্ত ভালোবাসা পর্ব ২৯+৩০

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_২৯

#Tahmina_Akther

-হ্যালো আভিক, হাউ আর ইউ? ও মাই গড ইয়া! ইউ আর সো মাচ প্রিটি।

বলেই কেউ একজন হিয়াকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিলো তবে সে বিফল হলো কারণ আমাদের অভিক তার হিয়াকে কাছে টেনে নিলো।

হিয়া অবাক হয়ে কথা বলার মালিকটির দিকে তাকিয়ে আছে কারণ, বিদেশি এক ছেলে যাকে কি না হিয়া চিনে না কিন্তু ওকে চিনে কিভাবে?
হয়তো অভিকের সাথে এই ভিনদেশির পরিচয় আছে!

-এই মিরা ছাগলনি,এই মিরা এই দিকে আয় তুই।

অভিক বেশ জোরে চিল্লিয়ে ডাকলো মিরাকে।মিরা তৎক্ষনাৎ দৌড়ে এসে দেখলো অভিক আর হিয়ার সাথে আরও একজন দাঁড়িয়ে আছে।সেদিকে নজর না দিয়ে অভিককে বললো,

-কি হয়েছে দোস্ত এভাবে জোরে ডাকছিস কেন? কিছু লাগবে? আন্টিকে ডাকবো?

-আমার কিছুই লাগবে না তোর এই বিদেশি ছাগলটাকে নিয়ে যেয়ে বাংলাদেশী ঘাস খাওয়া তাহলে ওই ধবলদের মতো বাঙালি মেয়েদের যখন তখন জরিয়ে ধরতে আসবে না।

-কি বলিস তুই? এই ছাগলটা আবার কে?

বলেই মিরা ছেলেটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কিছু বলার জন্য কিন্তু কিছুই বলতেই পারলো না। ওর চোখের নোনাপানি গুলো টলমল করছে বেরিয়ে আসার জন্য। চোখের পানিগুলো বের হবার আগেই ছেলেটি মিরাকে “মাই কুইন” বলে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরলো। মিরাও জরিয়ে ধরলো।

ওদের দু’জনের কাহিনি দেখে হিয়ার চক্ষু চরাক গাছে মানে কি এতক্ষণ অভিক কি বললো আর মিরা বা কি করছে!

-মিরা তোর এই ছাগলের লগে কান্নাকাটি শেষ হলে ওরে ছাড় কেউ দেখলে কেলেংকারী হিয়া যাইবো।

অভিকের কথা শুনে মিরা আলাদা হয়ে গেলো ভিনদেশী ছেলেটির কাছ থেকে।
ছেলেটির দিকে তাকিয়ে এক চিলতে হাসি দিয়ে হিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-হিয়া ও হচ্ছে জ্যাক প্যাটিনসন ওরফে মোহাম্মদ জ্যাক ।

জ্যাককে উদ্দেশ্য করে বললো,

-জ্যাক, সি ইজ হিয়া এন্ড হি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড অভিক।

-হাই আভিক
বলেই অভিকের সাথে হাত মিলালো জ্যাক।

এরপর, হিয়ার দিকে তাকিয়ে জ্যাক বললো,

-ইয়া, ইউ আর সো লাকি বিকজ ইউ হ্যাভ এ মোস্ট লাভিং পার্সন। আই হ্যাভ গিফট পর ইউ প্লিজ একসেপ্ট দিজ।

বলেই আমার দিকে একটি বক্স এগিয়ে দিলো।আমি প্রথমে নিতে চাই নি পরে অভিক ইশারা করলো যেন আমি এই গিফট বক্সটা নেই। অতঃপর, হাতে নিয়ে বক্সটি খুলতেই দেখলাম একটি ডায়মন্ডের আংটি যা A শেইপের।আংটির
কারুকাজ বেশ চমৎকার লেগেছে আমার কাছে।

এরইমাঝে তিয়ানা আর আবির ভাই চেলে এলেন। সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো। ওদের চারজনের সাথে জ্যাকের কথোপকথন শুনে মনে হলো এরা একে অপরকে বেশি সময় ধরে চিনে।

নানু সাথে করে পার্লারের দুটো মেয়েকে আমার রুমে নিয়ে এলেন।অতঃপর, তিয়ানা আর মিরা বাদে সকল ছেলেরা আমার রুম ত্যাগ করলো।
আমাকে সাজানো কার্যক্রম শুরু হলো।

তিয়ানা আমার আয়নার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বলছে,

-হিয়া,জানো জ্যাক আমাদের মিরার ভিনদেশী প্রেমিক, স্থানীয় কানাডিয়ান। বাবা মা’র একমাত্র সন্তান। একবার আমাদের কলেজ থেকে কক্সবাজারে শিক্ষা সফরের জন্য যায়। ওখানে গিয়ে জ্যাকের সাথে আমাদের মিরার বেশ বড় রকমের ঝগড়া হয়। কারণ, জ্যাক আমাদের মিরাকে পাব্লিক প্লেসে হাতে কিস করেছিলো ব্যস অমনি আমাদের মিরা ওর গাল এক থাপ্পড়ে লাল করে ফেলেছিলো।সেই ইন্সিডেন্ট আসলে কাকতালীয় ভাবে ঘটেছে কারন জ্যাকেদের দেশীয় কালচারে এইসব পানি ভাত। ওদের যে কাউকে ভালো লাগলে কিস করাটা ওদের ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ।
জ্যাক কিভাবে যেন আমাদের মিরার ফেসবুক আইডি আমাদের কোন সহপাঠীর থেকে সংগ্রহ করে আর ওকে মেসেঞ্জারে নক করে বিভিন্ন ভাবে কনভিন্স করে। ওকে বুঝিয়ে বলে,যে সে বুঝতে পারে নি আমাদের দেশের নারীরা স্বভাবগত ভাবে কিছুটা রক্ষণশীল।আর আমাদের মিরার আস্তে আস্তে ওর প্রতি রাগ কমে যায়। প্রথম কয়েকমাস বন্ধুত্ব থাকলেও পরে এই সম্পর্ক কিছুটা প্রেমে পরিণত হয়।

-কিন্তু, জ্যাকের ধর্ম নিশ্চয়ই মুসলিম নয়? আর সেখানে ওদের যতই প্রেম ভালোবাসা থাকুক বিফলে যাবে।কারণ, না জ্যাকের বাবা-মা মিরাকে মেনে নিবে না মিরার বাবা-মা জ্যাককে মেনে নিবে।
হিয়া মিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো।

-সেটাই তো, প্রথমে আমিও জ্যাককে বলেছিলাম কিন্তু সে আমার কথা শুনে কি করেছে জানো? সে আজ দু’মাস হলো কালেমা শাহ দাহ পাঠ করে মুসলিম ধর্মে রুপান্তরিত হয়েছে।সাথে তার পরিবারের সকলে।
সে আজ বেশ কিছুদিন ধরে বলছিলো বাংলাদেশ আসবে আমার আব্বু আম্মুকে আমাদের সম্পর্কে কথা জানাতে। কিন্তু, আজ যে আসবে সেটা বলে নি। কথায় কথায় একদিন তোমাদের বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলাম আর আজ দেখো পাগলটা এই বাড়িতে চলে এসেছে।
আমার শুধু এখন একটাই চিন্তা বাবা-মা যদি জ্যাককে না মেনে নেয় তখন কি হবে?

বলেই হু হু করে কেঁদে উঠলো মিরা। তিয়ানা উঠে গিয়ে মিরাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। হিয়া মিরাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,

-আমার বিশ্বাস তুমি যদি জ্যাকের কথা তোমার বাবা-মাকে বলো, কিভাবে সে তোমার জন্য তোমার ধর্মকে ভালোবেসে আপন করেছে আশা করি তারা মেনে নিবে।এখন কান্না বন্ধ করো তো। এই দেখো তোমার চোখের পানি দেখে আমার চোখ দিয়ে পানি পরার জন্য আন্দোলন করছে।যদি পানি বেরিয়ে যায় তাহলে মেকাপ ঘেটে সব নষ্ট হয়ে আমাকে কটকটি রানির মতো দেখা যাবে।

হিয়া বেশ মজার সুরে কথাগুলো বলতেই হেসে ফেললো কান্নারত মিরা আর তিয়ানাও।

—————

-জ্যাক, মাই নেম ইজ অভিক নট আভিক, ওকে?

-ইয়েস ইয়েস ইউর নেম ইজ আভিক।

জ্যাকের কথা শুনে অভিক কাঁদবে নাকি হাসবে বুঝতে পারছে না। আবির আর সাঈদ তো হেসে কুটি কুটি। অভিক রেগে গিয়ে আবির আর সাঈদের দিকে কয়েকটা বালিশ ছুড়ে দিলো।ওরা যেন এতে আরও মজা পেলো ওদের হাসি থামছে না। আবির কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বললো,

-তোকে বললো আভিক তাও ঠিক আছে কিন্তু তোর বৌকে তো ডিরেক্ট হিয়া থেকে ইয়া বানিয়ে দিয়েছে। তোদের এই নাম গুলো না আকিকা করে আবার রেখে দিস সেই সুন্দর লাগে নাম গুলো। ইয়া আর আভিক।

আবারও সেই হাসি সাঈদের আর আবিরের। এইদিকে জ্যাক ওদের কোনো কথা বুঝতে পারছে না ঠিকই তবে মজার কিছু নিয়ে যে হাসাহাসি হচ্ছে তা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে।
মনে মনে বেশ চিন্তিতবোধ করছে জ্যাক যদি মিরার বাবা-মা রাজি না হয় তখন কি হবে ভেবে ওর অন্তঃসারশূন্য হয়ে যাচ্ছে।

—————

বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই জামান ম্যানশনে অভিক-হিয়ার রিসেপশনের আয়োজন করা হয়েছে। চারদিকে অর্কিড,লাল,সাদা গোলাপ দিয়ে সাজানো।একপাশে খাবারের বুফে সেট করা অন্যদিকে ফটোসেশানের জন্য হরেক রকমের আর্টিফিসিয়েল ফুল দিয়ে স্টেজ সাজানো হয়েছে। এর সামনে রয়েছে সারিবদ্ধ ভাবে বসার জন্য গোল টেবিল আর চেয়ার।

স্টেইজে বসে আছে অভিক, তার কিছু সংখ্যক কাজিন আর ওর বন্ধুরা। বেশ হাসি তামাশা চলছে এই দলটির মুখ্য সদস্য অভিককে নিয়ে।অভিকের অবশ্য এইসবে তেমন ধ্যান নেই তার মনে শুধু এখন একটি চরিত্রের বিচরণ। সেই চরিত্র তার অর্ধাঙ্গিনী, তার একজীবনের ভালোবাসা হিয়া, তার কল্পনার জগতের একছত্র অধিপত্যে ফুল।

এমন সময় কিছু বাচ্চাদের হৈ হুল্লোড় শোনা গেলো তারা বলছে,

– বৌ এসেছে বৌ এসেছে।

সেই হৈ হুল্লোড় দিকে সকলের আর্কষণ সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ, এই ভিড় কমে গিয়ে দু দলে বিভক্ত হয়ে দুপাশে দাঁড়িয়ে নববধূকে আসার জায়গা করে দিলো ।

বেবি পিংক কালারের লেহেঙ্গায়, কানে স্টোনের দুল,গলায় নেকলেস, মাথায় টিকলি, চুলগুলো কার্ল করা কিছু চুল সামনে এনে রেখেছে সর্বশেষ মাথায় আধ ঘোমটা দেয়া হিয়াকে সবমিলিয়ে আজ আগুন সুন্দরি লাগছে। যার রুপের ঝলকে আজ হয়তো আমাদের অভিক সাহেব ঝলসে যাবেন।

অভিক তার প্রিয়তমাকে দেখতে পেয়ে আস্তে করে নেমে পড়লো স্টেজ থেকে এরপর এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো তার ফুলের কাছে।অভিকের এগিয়ে দেয়া হাতের দিকে তাকিয়ে হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো।

হিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ধীরে ধীরে স্টেজের দিকে এগিয়ে চললো।হিয়াকে স্টেজে রাখা সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওর পাশে বসে পড়লো অভিক।এরইমাঝে ওদের কাজিনদের মধ্যে একজনের ওয়াইফ বলে উঠলো,

-আমাদের কষ্ট অভিক কমিয়ে দিলো।নয়তো ওর বৌকে আমাদের গিয়ে এগিয়ে আনতে হতো। তাই না রে অভিক।

ব্যস অমনি হাসির রোল পড়ে গেলো।হিয়া লজ্জায় কারো দিকে চোখ তুলে তাকানোর জো নেই।কিন্তু, অভিক আজ নির্দ্বিধায় তার ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে।কি চমৎকার এই দৃশ্য তার ফুল লজ্জাবতী গাছের ন্যায় নুইয়ে পরেছে সকলের লজ্জামাখা কথা থেকে রেহায় পাবার জন্য!

ঝামেলাহীন ভাবেই শেষ হলো রিসেপশন।দীর্ঘসময় ধরে অভিকের এখানে উপস্থিত থাকা সম্ভব ছিল না তাই খুব দ্রুতই সমাপ্তি হয় অনুষ্ঠান। আস্তে আস্তে বাড়ির মেহমান যাওয়া শুরু করেছে।

মিরা-জ্যাক এবং আবির-তিয়ানা অভিক আর হিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো। আর যাওয়ার আগে বলে গেছে যেন ওদের জন্য দোয়া করে। তাদের বাবা-মা যেন তাদের সম্পর্ক সাদরে গ্রহণ করে। অভিক আর হিয়া ওদের শুভকামনা জানিয়ে বলে, যদি কোনো প্রকারের সাহায্যের প্রয়োজন হয় যেন ওদের জানায়।

—————-

অভিক-হিয়ার বিয়ের আজ একমাস পূর্ণ হতে চললো।তাদের সম্পর্ক ঠিক আগের জায়গায় আছে কোনো উন্নতি হয়নি তবে আগের মতো সেই জড়তা-সংকোচ নেই।

হিয়া আগের থেকে অভিকের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে হয়তো ভালোবাসে অভিককে কিন্তু বলতে পারছে না।ওই যে মেয়ে মানুষ বুক ফাঁটে তবুও মুখ ফোঁটে না। আর আমাদের অভিকের তার ফুলের প্রতি দুষ্টমিষ্ট ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ তো আছেই। কখনো বুকে জড়িয়ে বা কখনো হঠাৎ করে গালে গাল ছুঁয়ে আবার কখনো ঘুমের ঘোরে তার ফুলের কপালে চুমু দিয়ে।

বাড়ির পরিবেশ ঠিক সেই আগের মতো হয়ে গেছে কোলাহল মুক্ত। অভিকের নানু চলে গেছেন আজ এক সপ্তাহ হলো।আজ অভিকের হাতের প্লাস্টার খোলার হবে। তাই সকাল থেকে বেশ ব্যস্ত হিয়া সকলের জন্য নাস্তা তৈরি করে জরি খালার সাহায্যে টেবিলে সব গুছিয়ে রেখে চললো অভিকের কাছে।যাওয়ার সময় ওর মা এবং শ্বাশুড়িকে ডেকে বলে গেলো, নাস্তা তৈরি হয়ে গেছে যেন খেয়ে নেয় সবাই মিলে।

রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই হিয়াকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো অভিক।অভিমানী সুরে বলে উঠলো,
#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_৩০

#Tahmina_Akther

রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই হিয়াকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো অভিক।অভিমানী সুরে বলে উঠলো,

-কিছু পুরুষের কপাল না সোনায় বাঁধাই করা আর আমার কপাল হচ্ছে ফুৃঁটা। যেখানে অন্য পুরুষ বৌয়ের নরম হাতের পরশে সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে আর আমি কি না বৌয়ের মুখখানা অব্দি ঘুম থেকে জেগে দেখতে পারি না।

-সবসময় উল্টাপাল্টা কথা বলো তুমি। আজ কত তারিখ মনে আছে?জলদি ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নাও আজ হসপিটালে যেতে হবে।

-আরে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আল্লাহ আজ কতদিন পর হাতটা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবে।তাড়াতাড়ি আমাকে ফ্রেশ হতে সাহায্যে করো।

অভিকের ছটফটানি দেখে হেসে ফেললো হিয়া।ওয়াসরুমে যেয়ে অভিককে গোসল করিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো।এরপর, হিয়াও গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।রুমে আসতেই দেখতে পেলো অভিক আর সাদাফ বসে বসে কি যেন আলাপ করছে।

-কি রে সাদাফ আজ এত সকালে এই ঘরে। তোকে তো সকাল ১১টার আগে দেখাই যায় না?

-এমনিতেই আজ কেন যেন ঘুম ভেঙে গেলো। রুম থেকে বের হয়ে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। রুমের দরজা খোলা ছিল দেখি কি অভিক ভাই নিজে নিজে প্যান্ট পরিধান করার চেষ্টা করছিলো। হাজার চেষ্টা করলেও তো পারবে না তাই অভিক ভাইকে এখানে এসে সামান্য সাহায্যে করলাম। দেখছো না প্যান্ট পরে বসে আছে তুমি কখন আসবে আর তাকে শার্ট পরিয়ে দিবে। আচ্ছা, তাহলে আমি এখন যাই আপু পরে দেখা হবে।

বলেই রুম ত্যাগ করলো সাদাফ। সাদাফ যাওয়ার পর রুমের দরজা আটকে হিয়া হালকা হেসে অভিককে উদ্দেশ্য করে বললো,

-তোমার অবস্থা এখন দু’বছরের বাচ্চাদের মতো। কেউ গোসল করিয়ে দিলো করবে,কাপড় চেঞ্জ করিয়ে দিলে করবে আবার কেউ খাইয়ে দিলে খাবে।

-আমার এই সব কাজ করতে কি তোমার বিরক্ত লাগছে ফুল?

-আমি কিন্তু একবারও সেই কথা বলি নি। এমনিতেই মজা করছি তোমার সঙ্গে। আজ থেকে না পারো দু’চারদিন পর থেকে আবার নিজের কাজ নিজেই করতে পারবে।এখন বলো পাঞ্জাবি, নাকি শার্ট পরবে?

-কালো শার্টটা নিয়ে এসো দেখছো না সাদাফ আমায় ব্লু জিন্স পরিয়ে দিয়েছে।

হিয়া মাথা নাড়িয়ে কাবার্ড থেকে কালো শার্ট এনে খাটের উপরে রেখে দিয়ে আস্তে করে অভিককে পরিয়ে দিলো।শার্ট পড়ানো শেষ হতেই এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিলো।
হিয়া অভিকের থেকে খানিকটা দূরে সরে দাঁড়ালো এরপর ওর মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে মনে মনে শুধু একটি শব্দ উচ্চারণ করলো,

-মাশাআল্লাহ।

অভিককে সাথে নিয়ে চললো নিচের ডাইনিং টেবিলে। সেখানে যেতেই দেখা গেলো বাড়ির সকলেই উপস্থিত। হিয়া একটি চেয়ার টেনে অভিককে বসিয়ে দিলো। এরপর, নাশতার প্লেট থেকে খাবার নিয়ে অভিককে খাইয়ে দিচ্ছে। সবাই একপলক হিয়া-অভিকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।কারন, এই একমাসে প্রতিদিনকার রোজ ঘটনার একটি।
হিয়াকে দেখলে কে বলবে যে, সে একসময় আহানকে ভালোবাসতো তাকে ভুলে সে আর অন্য কারোর জীবনের সাথে বাঁধা পরতে চায় নি আর সেখানে বয়সে ছোট অভিককে বিয়ে করতে তার ছিলো এক রাজ্যের অপারগতা।

-হিয়া আমি কি আসবো সাথে?
অভিকের বাবা বলে উঠলেন।

-না ছোট আব্বু।আমি মেনেজ করে নিবো শুধু ড্রাইভার কাকাকে কল দিয়ে বলুন আজ একটু তাড়াতাড়ি চলে আসতে।

– আচ্ছা, বলছি।

-অভিক,

হিয়ার বাবা অভিককে ডাকলেন

-জি বড় আব্বু।

-তোমার ফুপি কল করে ছিলো আমার কাছে। তার শরীরটা নাকি ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। সে চাইছে আমরা সকলে যেন তাকে গিয়ে দেখে আসি।

-কিন্তু, বড় আব্বু আমরা সবাই তো আর একসাথে যেতে পারবো না।

-হুম সেটাই তো ভাবছি। আচ্ছা দেখি কি করা যায়? চাকরিতে কখন থেকে যাওয়া শুরু করবে নাকি রিজাইন করবে?

-ভাবছি আজই রিজান লেটার জমা করে দিবো। ব্যবসায় মন দিতে চাচ্ছি এখন। আব্বু আমার সিদ্ধান্ত কি খারাপ হবে?

-না খারাপ হবে না। নিজেদের ব্যবসা দেখা শোনা করবি এতে খারাপের কি আছে।তাছাড়া, তোর বড় আব্বুর শরীর তেমনটা ভালো নয় আর আমিও চাকরি আর ব্যবসা দুটো একসাথে সামলাতে পারছি না। তুই যদি ব্যবসার হাল ধরিস তাহলে আমরা দু’ভাই নিশ্চিন্ত হবো।
আমি উঠছি তাহলে আজ আবার এক মন্ত্রীর মিটিংয়ের দায়িত্ব পরেছে আমার উপর। ইনশাআল্লাহ সন্ধ্যায় দেখা হবে।

বলে চলে গেলেন অভিকের বাবা।অভিককে খাইয়ে দিচ্ছিলো হিয়া এমন সময় ওর মুখের কাছে কে যেন খাবার তুলে ধরলো।হিয়া উপরে তাকিয়ে দেখলো ওর চাচী মানে অভিকের মা। হিয়া হালকা হেসে খেয়ো নিলো। হিয়ার মা এই দৃশ্য দেখে মন পুলকিত হলো।মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলেন যেন তার মেয়েকে সদা সুখে রাখেন।

—————-

হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে এলো হিয়া আর অভিক। অভিক হাতটা হালকা ভাবে নড়াচড়া করতে পারছে। ধীরে ধীরে আগের মতো হাত নড়াতে পারবে। হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে গাড়ির কাছে যেতেই অভিক বলে উঠলো,

-চাচা, আপনি গাড়ি নিয়ে বাড়িতে চলে যান। আমরা পরে বাড়িতে ফিরবো।

চাচা কি বুঝলেন কে জানে? তিনি হেসে গাড়ির স্টার্ট করে চলে গেলেন। আর আমি রেগে অভিকের তাকিয়ে আছি,

– কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আজ কতদিন পর বন্দিদশা থেকে মুক্ত হলাম তাই আজ তোমায় নিয়ে সারাদিন ঘুরবো। তুমি কিন্তু না করতে পারবে না, ওকে?

-হুম, না করবো না ঠিক আছে। কিন্তু বাড়িতে কল করে বলো আমাদের বাড়ি ফিরতে দেরি হবে।

-আমি আসার সময় মা’কে বলে এসেছি। অতএব, নো চিন্তা ডু ফূর্তি।

রিকশা ডেকে আমাকে উঠিয়ে আমার পাশে অভিক চেপে বসলো।

শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে ফিরেছি আজ। দুপুরে এক রেষ্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করেছিলাম।

এখন গোধুলীর শেষ বেলা।সূর্য আস্তে আস্তে টলে পড়ছে পশ্চিমের আকাশে।সূর্যের শেষ বিকেলের আলোয় চারপাশে হলুদ আভায় পরিপূর্ণ। হলুদ আলোতে অভিকের ফর্সা শরীর থেকে যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছে।ও কাকে যেন কল করে আসতে বলছে?

আমরা এখন বসে আছি ফুচকার স্টলে। চারপাশের কিছু মেয়ে খাওয়া বাদ দিয়ে অভিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি এগুলো দেখে মনের সুখে গান গাইছি মনে মনে।কারণ, অভিক নামক মানুষটি এখন সম্পুর্ন আমার সেখানে সারাজীবন তাকিয়ে থাকলেও কোনো লাভ হবে না।

অভিক আমার পাশের চেয়ারটায় বসতেই কে যেন অভিকের গলা জড়িয়ে ধরলো।ও মাই গড, সব বন্ধুরা চলে এসেছে! অভিক তাহলে ওদেরকে বারবার কল করে বলছিলো তাড়াতাড়ি আসার জন্য।
তিয়ানা-আবির এবং মিরা-জ্যাক তারা কিন্তু এখন নবদম্পতি। তিয়ানা আর আবিরের বিয়ে হয়েছে আজ ১৫ দিন। মিরা আর জ্যাকের বিয়ে হয়েছে আজ চারদিন। মিরা বা তিয়ানার পরিবারের সকলেই রাজি ছিলো বিয়েতে।

মিরা সকলের উদ্দেশ্য বলে উঠলো ,

-দোস্ত, আমাদের আর কখনো একসাথে বসে আড্ডা দেয়া হবে না। আমি বাংলাদেশে আছি আর একসপ্তাহের জন্য। এরপর চলে যাবো কানাডায় জ্যাকের সাথে।
বেশ কাঁদোকাঁদো সুরে কথাগুলো বললো মিরা।

প্রিয় বন্ধুর চলে যাবার কথা শুনে আবির, তিয়ানা, সাঈদ এবং অভিকের বেশ খারাপ যেন কেঁদে ফেললে বাঁচে!

ঠিক এইরকম একটা পরিস্থিতিতে কি বলা যায় বুঝতে পারছিলাম না। তবুও বললাম,

-মিরা, এতে মন খারাপের কিছু নেই। এখন ডিজিটাল যুগ ভিডিও কলে যখন তখন আমাদের সাথে কথা বলতে পারবে। আর যখন তোমার কথা আমাদের বেশি মনে পড়বে তখন কেউ না কেউ গিয়ে তোমায় দেখে আসবে নয়তো তুমি চলে আসবে আমাদের দেখতে।

-হিয়া তো ঠিকই বলছে তুই শুধু শুধু আমাদের সেন্টি খাওয়ালি ফকিন্নি।
আবির কথাগুলো বলতেই সকলে ফিক করে হেসে ফেললাম ।

বন্ধুদের এই দলটি আবারও হাসিখুশিতে মেতে উঠলো।সবাই ফুচকা নামক বস্তুটিকে সাবার করে ফেললাম। নবদম্পত্তিরা যার যার সংসারের কিছু বিবরণ তুলে ধরলো। কেউ তার স্বামী নামে বিচার দিচ্ছে তো কেউ বলছে তার বৌ তাকে ভালোইবাসে না ইত্যাদি।

ওদের এতসব কথা শুনে বেচার সাঈদ বলে উঠলো,

-আমি যে তোদের গ্রুপের একমাত্র সিঙ্গেল তোদের কি মনে থাকে না। তোদের এই সংসারের আলাপ শুনে এখন আমার নিজের হারিয়ে যাওয়া বৌ’টার কথা বেশ মনে পরছে। এখন আমি কি করবো?

আরো একদফা হাসির রোল পড়ে গেলো। মিরা তো সাঈদকে বলেই ফেললো,

-তাহলে বিয়ে করে ফেল। নয়তো, তোকে আমাদের বিবাহিত গ্রুপের মাঝে মিসকিনের মতো লাগে।

আড্ডার শেষের দিকে আমি জ্যাককে বললাম,
যেন মিরাকে সর্বোচ্চ সুখে রাখে।
জ্যাক মিরাকে একহাতে জরিয়ে বললো,

-আই লাভ মাই কুইন। সি ইজ মাই ফার্স্ট এন্ড লাস্ট লাভ।ডোন্ট ওয়ারি সি ওইল বি হ্যাপি উইথ মি। বিকজ আই লাভ মাই মিরা মোর দেন মাই লাইফ ।
বলে সকলের সামনেই মিরার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো আমাদের ভিনদেশী জ্যাক।

এরইমাঝে সাঈদ বলে উঠলো,

-দেখলি অভিক জ্যাক তোর আর হিয়ার নাম ঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারে না কিন্তু নিজের লাভ কুইনের নাম কি সুন্দর করে বলে ফেললো।

ব্যস সকলের সে কি হাসি! জ্যাক এবার হয়তো আমাদের কিছু কথা বুঝতে পেরেছে সেও আমাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসতে লাগলো।

আমাদের বন্ধু মহলের প্রানবন্ত হাসিগুলো আশেপাশের কিছু মানুষের হয়তো ভালো লাগছিলো আবার কারো হয়তো বিরক্ত লাগছিলো আর কেউ বা ফিরে ফিরে দেখছিলো।কিন্তু, এই বিষয়ে আমাদের কারোরই ভ্রুক্ষেপ নেই।

অতঃপর বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেলো।একে অপরের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলাম আমি আর অভিক।

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here