সুপ্ত ভালোবাসা পর্ব ৫

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_৫

#Tahmina_Akther

আজকের ব্রেকিং নিউজ জামালপুর এলাকায় আজ দুই যুবককে আহত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। এই দুই যুবকের দুটো চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে তাদের দুজনের ডানহাত ভেঙে ফেলা হয়েছে ।এই দুই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ কিন্তু কে বা করা করেছে তারা কিছু বলতে চাইছে না?
তবে যে জায়গায় এই ঘটনাটি ঘটেছে সেখানকার সিসি টিভি ফুটেজে পুলিশ দেখেছে এক হুডি পরা ব্যক্তি তাদের এই নিমর্ম ভাবে আহত করেছে।

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে হাফ ছাড়লো অভিক। মোবাইলটি এগিয়ে দিলো হিয়ার কাছে, তারপর বললো

– এই ছেলে দুটোকে আমাদের এরিয়ার মনে হচ্ছে না।কিন্তু, এরা আমাদের এলাকায় এসেই দূঘর্টনার কবলে পরলো কিভাবে?

-আসলে অভিক কি ভাবে যে বলি তোকে কথাগুলো? এরাই হচ্ছে রেষ্টুরেন্টে আমাকে বাজে বিহেব করা ছেলেগুলো।আসলে এদেরকে না এইভাবে শাস্তি দেয়া উচিত। তুই তখন ওয়েটারের কাছে অর্ডার দিচ্ছিস। আমি উঠে ওয়াসরুমের দিকে যাচ্ছিলাম কিন্তু, জানিস না এই ছেলে দুটো ওয়াসরুমের সামনে দাড়িয়ে আমাকে কি বলছিলো জানিস?
বলছিলো,চল না আজ তোকে আমাদের সাথে নিয়ে যাই। যত টাকা চাইবি তার ডাবল দিবো বলেই খুব বিশ্রিভাবে আমার পুরো শরীরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আমার তখন ঘৃনায় পুরো শরীর রি রি করছিলো।
আমি দৌড়ে রেষ্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে বাড়িতে চলে আসি।
বলেই নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে হিয়া।

অভিক এগিয়ে এসে হিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,

-ফুল, তোমার উচিত ছিলো তখনই ওই বেজন্মা দুটোকে জুতোর বাড়ি দেয়া। যদি নাইবা পারবে তাহলে আমাকেই এসে নাহয় বলতে। কিন্তু, তুমি কি করলে আমাকে না জানিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়িতে চলে এলে। বাড়িতে যখন এসেই পড়েছো তখন একটা কল দিয়ে আমাকে জানাতে। ভাগ্যিস, মা’র কাছে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি বাড়িতে গিয়েছো কি না? নয়তো সেইখানে তোমাকে খুজে মরতো হতো আমার।

-অভিক, মরার কথা বলিস না।
অভিকের মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো হিয়া।

যতটা সহজে আমরা মুখে বলি মৃত্যুর কথা কিন্তু মৃত্যু এরচেয়েও বেশ কঠিন। ওয়াদা কর আর কখনো নিজ মৃত্যুর কথা মুখ আনবি না? অভিকের মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো হিয়া।

-ওয়াদা আর কখনো বলব না। আচ্ছা, এখন কান্নাকাটি বন্ধ করো। ওরা ওদের কৃতকর্মের ফল পেয়েছে আর যে ওদের এই হাল করেছে তাকে পেলে আমি গলায় জড়িয়ে নিতাম। তাড়াতাড়ি এসো রেস্টুরেন্ট থেকে বিরিয়ানি এনেছি সবার জন্য তুমি এলে সবাই একসাথে খেতে বসবে।

-আমি গোসল করে আসছি তুই যা।

অভিক চলে গেলো আর আমি আমার মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ অপশনে যেয়ে কিছুক্ষণ আগে আসা একটি মেসেজ ওপেন করলাম। সেখানে লেখা,

-যেই চোখ দিয়ে আমার হিয়াপাখির দিকে খারাপ নজরে তাকিয়েছে সেই চোখের দৃষ্টি আমি কেড়ে নিয়েছি। আর হিয়াপাখি আজ তোমাকে আমার প্রথম এবং শেষ ওয়ার্নিং আজকের পর থেকে যেন কোথাও বোরকা ছাড়া বেরুতে না দেখি। যদি আমার কথা অমান্য করেছো এরপর আমি কি করবো তার কোনো নিশ্চয়তা নেই মাইন্ড ইট।

আর আমার হিয়াপাখির জন্য তার ভালোবাসার উপহার

“তোমার অধরে নিকোটিনে স্পর্শে পুড়ে যাওয়া আমার ওষ্ঠের চুম্বন ”

ব্যস, এতটুকুই ছিলো মেসেজটি। কিন্তু, কে এই লোক যে আমার জন্য ওই ছেলে দুটোর চোখের দৃষ্টি কেড়ে নিলো? আর আমাকে সে ওয়ার্নিং দিয়েছে আরে বাবা। যেই হোক সে মনে হয় সন্ত্রাস টাইপ কেউ হবে? চাচ্চুর সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলতেই হবে নাহলে চরম বিপদে পরে যাবো।
কথাগুলো আনমনে ভেবেই গোসল করতে চলে গেলো হিয়া।

————–
আধার কালো রুমটিতে বসে আছে একটি ছেলে। যার একহাতে কাঠি অন্য হাতে হিয়ার ছবি।

-আমার হিয়াপাখি শুধু একান্তই আমার। সেখানে তোরা ওর দিকে বাজে নজরে তাকাবি আমার তা সহ্য হয় কি করে? আজকের পর থেকে আমার হিয়া কেন আর কোনো মেয়েকে দেখতে পাবি না।
বলেই হাতে থাকা কাঠির দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো ছেলেটি।

———-
এরই মাঝে কেটে গেছে দুসপ্তাহ।
আকাশে আজ মেঘ জমেছে তাই আমার মনটা আজ বেশ খুশি কারণ অনেকদিন হয় বাংলাদেশের মাটিতে বৃষ্টিতে ভেজা হয় নি। তাই আমি, সাদাফ আর অরিন অপেক্ষা করছি বৃষ্টি নামার।কিছুক্ষণের মাঝেই বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করলো। আমি, সাদাফ আর অরিন দৌড়ে চলে গেলাম ছাদে। ছাদে যাওয়ার পর বৃষ্টি বেশ মুশলধারে হচ্ছিলো।

আমি চোখ বুজে বৃষ্টির এক একটি বিন্দু অনুভব করছিলাম। বৃষ্টির পানির মতো পবিত্র জিনিস আর কিছুই বুঝি নেই!

আমার পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেলাম কারণ আমার ঘাড়ে তপ্ত নিশ্বাস গুলো আছড়ে পরছিলো।আমি পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলাম।
কালো জ্যাকেট, কালো জিন্স, মাথায় হুডি পড়া, চোখে কালো চশমা আর মুখে কালো মাস্ক পড়া। চেহারার কোনো কিছুই বোঝা যাচ্ছিলো না। আমি ভয়ে ভয়ে ছাদের চারদিকে তাকালাম কিন্তু সাদাফ অরিন ওরা কেউ নেই। আমি আবারও লোকটির দিকে তাকালাম।
ঠিক সেই মূহুর্তে আমার সাথে একটি অভাবনীয় একটি কান্ড ঘটলো। কারণ, সেই লোকটি আমায় তার বুকে জরিয়ে নিলো। আর আমার ভয়ে মুখ দিয়ে একটু টু শব্দ বের হচ্ছিল না।

আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

-তোমার বৃষ্টিতে ভেজা রুপ দেখার লোভ সামলাতে পারছিলাম না তাই তোমার কাছে এসেছি হিয়াপাখি।

বুঝতে পারলাম এই লোকটি হচ্ছে যে আমার মোবাইলে মেসেজ পাঠায়।

-হিয়াপাখি, খবরদার যেন আমার কথা তোমার চাচ্চুর সঙ্গে বলো না নইলে আমি কি করতে পারি তা তোমার অজানা নয়? আমি আসছি নিজের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ।

বলেই ছাদের পাইপ বেয়ে নিচে নেমে গেলো।
আর আমি তখন অতিরিক্ত ভয়ে সেন্সলেস হয়ে পড়ে রইলাম।

বেশ শীত শীত অনুভব করছি চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেলাম। আম্মু আমার মাথার পাশে বসে আছে। আব্বু আর চাচ্চু সোফায়, চাচী আমার পায়ে কি যেন ডলে দিচ্ছে। আর সাদাফ-অরিন কান্না করছে।
আমি সাদাফ অরিনকে ডাক দিতেই সবাই আমার দিকে তাকালো আর সকলের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
আমার মনে পড়লো আমি তো ছাদে ছিলাম তাহলে এইখানে এলাম কি করে?

-মা, আমার এত শীত করছে কেন? আর আমি ছাদ থেকে রুমে এলাম কখন?মনে পড়ছে না যে।

-মা’রে কি হয়েছিলো তোর? ভয় পেয়েছিস কিছুতে মা’কে বল নয়তো তোর বাবাকে বল?

-কি হয়েছে আগে সেটা বলো?

-হিয়া, অভিক তোকে সেন্সলেস অবস্থায় ছাদ থেকে পেয়েছে ওই তোকে কোলে করে বাড়ির ভিতরে এনেছে। যদি ও তোকে সময়মতো না দেখতো তাহলে অঘটন একটা ঘটতো? জানিস তুই দু’ঘন্টা ধরে এভাবে সেন্সলেস হয়ে আছিস তোর গায়েও বেশ জ্বর।তাই তোর শীত লাগছে। ডাক্তার এসেছিলো তোকে ইনজেকশন আর কিছু ঔষধ দিয়ে গেছে।
অভিকের মা কথাগুলো বললো।

-হিয়া, কি হয়েছিলো চাচ্চুকে বল?

মনে পরে গেলো সেই লোকটির কথা। না চাচ্চুকে কিছু বলা যাবে না যদি কোনো বিপদ হয়?

-আসলে,চাচ্চু অনেকদিন বৃষ্টিতে ভিজি নি তো তাই হয়তো সেন্সলেস হয়ে পড়েছি।
আগামী থেকে খেয়াল রাখব। তোমরা কেউ চিন্তা করো না প্লিজ।

বাবা আর চাচ্চু চলে গেলেন আমার রুম থেকে আর বলে গেলেন, যেন সামনে থেকে খেয়াল রাখি নিজের প্রতি।

-জানিস অভিক কি করেছে?

-কি করেছে মা?

-যখন দেখলো তোর একবারে সেন্স নেই তোর পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছিলো। তখন ও কেঁদেই ফেললো ও হয়তো মনে করেছে তুই মারা যাবি? পাগল ছেলে একটা জানিস না ;তোর জন্য কেন যে ছেলেটা এত সেন্সসেটিভ বুঝতেই পারি না।

-অভিক এখন কই আছে মা?

-তোর রুমের বাইরে দাড়িয়ে আছে। ভিতরে আসতে চাইছে না তুমিই ডাক দাও দেখবে চলে আসবে।
চাচী খাবার হাতে নিয়ে আমার রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললেন।

অভিক, এই অভিক আমার কাছে আয় দেখ তো আমার জ্বরটা বোধহয় আবার বেড়ে গেলো।
আমার কথা বলতে দেরি হয়েছে কিন্তু মহাশয় রুমে আসতে দেরি হয় নি।

অভিক ওর মুখ নামিয়ে রেখেছে। আমি ইশারায় আম্মু আর চাচীকে রুমে থেকে যেতে বললাম। ওনারা চলে গেলেন।
আমি অভিককে আমার সামনে এসে বসতে বললাম। ও বাধ্য ছেলের মতো আমার সামনে এসে বসলো।

-অভিক, আমার দিকে একটি তাকিয়ে দেখ তো?
আমার চোখে কি যেন পড়েছে?

এবার অভিক আমার দিকে তাকালো সত্যিই ওর চোখদুটো অতিরিক্ত কান্নার ফলে লাল হয়ে আছে।

-আমার জন্য কান্না করার কি আছে বোকা ছেলে?
আমি সুস্থ আছি। কিন্তু, তোকে এখন একটি কাজ করে দিতে হবে আমার জন্য পারবি না?

-একবার বলেই দেখো আমার ফুলের জন্য আমি সব করতে রাজী আছি।

#চলবে

(গল্পের স্বার্থে কিছু শব্দ ব্যবহার করতে হয়েছে তাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here