সে আমার মানসিক শান্তি পর্ব -০৪+৫

#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_০৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

–আজকে আমাকে খাইয়ে দিবে আয়াত?জানো,আমাকে কেউ কখনো খাইয়ে দেয় নাই?

–তুমি কি’ ছোট বাচ্চা নাকি?যে,তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে।চুপচাপ খেয়ে আমাকে কলেজে দিয়ে আসো।

আব্রাহাম আর কোনো কথা বলল না।কাল রাত থেকে পেটে কিছু পড়েনি’।চুপচাপ খেতে শুরু করল।এক লোকমা ভাত আয়াতে’র সামনে ধরলো।আয়াত অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।আব্রাহাম এক হাতে,
আয়াতে’র মুখখানা নিজের দিকে,ঘুরিয়ে জোর করে খাবার মুখ দিয়ে দিল।আয়াত বিরক্ত হয়ে বলল।

–সমস্যা কি তোমার?আমি সকালে খেয়েছি।তোমার ক্ষুদা পেয়েছে।তুমি চুপচাপ খেয়ে নাও।এভাবে জোর করে আমার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছো কেনো?

–তুমি আমাকে খাইয়ে দিলে না।তাই আমি তোমাকে শিখিয়ে দিলাম।কিভাবে খাইয়ে দিতে হয়।আমি যতক্ষণ খাব।তোমাকে-ও আমার সাথে খেতে হবে।এটা-ই তোমার শাস্তি।আয়াত বিরক্ত প্রকাশ করল।মুখে কিছু বলল না।চুপচাপ আব্রাহামে’র সাথে খেয়ে নিল।খাওয়া-দাওয়া শেষ করে,দু’জনে-ই বাহিরে আসলো।আয়াত ফুচকা’র দোকান দেখিয়ে দিয়ে বলল।

–আমাকে ফুচকা খাওয়াবে আব্রাহাম?

–আমার প্রিন্সেস খেতে চেয়েছে।আমি খাওয়াবো না।তাই কখনো হয়?চলো,বলে-ই রাস্তার বিপরীত পাশে চলে গেল।ফুচকা আলা’কে ফুচকা দিতে বলে,দু’জন অপেক্ষা করছে।

–আজকে আমি না তুমি ফুচকা খাবে আব্রাহাম।আর সব থেকে বেশি ঝাল দেওয়া ফুচকা তুমি খাবে।তাহলে আমি তোমাকে মাফ করে দিব।বলল আয়াত।

আব্রাহাম আয়াতে’র দিকে তাকালো।আয়াত শান্ত দৃষ্টিতে আব্রাহামে’র দিকে তাকিয়ে আছে।আব্রাহাম
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,অধরের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলল।

–বেশ আমি খাব।তুমি নিজে ঝাল মিশিয়ে নিয়ে আসো।আয়াত কোনো কথা বলল না।ফুচকা আলা’র কাছে চলে আসলো।দিগুণ ঝাল ফুচকা’র মধ্যে দিতে বলল।ফুচকা বানানো শেষ হলে,ফুচকা’র প্লেট’টা আব্রাহামে’র হাতে তুলে দিল।আব্রাহাম ফুচকা’র প্লেট’টা হাতে নিয়ে,
বিনাবাক্যে খেতে শুরু করল।কিছুক্ষণে’র মধ্যে ফুচকা’র প্লেট’টা ফাঁকা হয়ে গেল।আয়াত চোখ বড় বড় করে,আব্রাহামে’র দিকে তাকিয়ে আছে।এত ঝাল আব্রাহাম কিভাবে সহ্য করছে।ইতিমধ্যে আব্রাহামে’র দু’টো রক্তিম বর্ন ধারন করেছে।দু-চোখের কোণে অশ্রুকণা গুলো এসে,জমা হয়েছে।আব্রাহাম ফুচকার বিল মিটিয়ে দিয়ে,আয়াত’কে কলেজে’র উদ্দেশ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়লো।পুরো রাস্তা আব্রাহাম একটা কথা-ও বলে নাই।আয়াত আব্রাহামে’র দিকে তাকিয়ে আছে।ফর্সা মুখাখানা কেমন লাল হয়ে গিয়েছে।দু-চোখ গভীর ভাবে রক্তিম হচ্ছে,আয়াতে’র নিজের-ই ভয় লাগছে।মাঝে মধ্যে আব্রাহাম কেশে কেশে উঠছে।আচ্ছা আব্রাহামে’র কি কষ্ট হচ্ছে?আয়াতে’র ভাবনার মাঝেই,গাড়ি থেমে গেল।আয়াত দেখলো গাড়িটা তার কলেজে’র সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে।আয়াত আব্রাহামে’র থেকে বিদায় নিয়ে কলেজে প্রবেশ করল।আজ’কে আয়াত ভিষণ অবাক হলো,অন্যদিন আব্রাহাম তাকে যাওয়া’র আগে,শাসিয়ে যায়।আজকে একটা কথা-ও বলল না।নিমিষে-ই আয়াতে’র মন খারাপ হয়ে গেল।আব্রাহাম দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে,হসপিটালে যাচ্ছে।কিছুক্ষণের মধ্যে হসপিটালে পৌঁছে গেল।হসপিটালে এসে একটা চেয়ার টেনে বসলো।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে,আব্রাহাম।পুরো শরীর তরতর করে ঘামছে।রীতিমতো কাশি উঠে গিয়েছে।সবাই আব্রাহামে’র দিকে এগিয়ে আসলো।আব্রাহাম নার্স মারিয়া’কে কিছু বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু শ্বাসকষ্টে’র জন্য বারবার বলতে ব্যর্থ হচ্ছে,ডক্টর ইমরান দৌড়ে আব্রাহামে’র কাছে আসলো।আব্রাহাম’কে দেখে রেগে গিয়ে বলল।

–আব্রাহাম তুমি আবার ঝাল খেয়েছো?তোমাকে কতবার বলবো?তোমার ঝালে এলার্জি আছে।শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়েছে।দ্রুত আব্রাহাম’কে মিষ্টি জাতীয় খাবার দাও।মুখ অক্সিজেন মাক্স দিতে হবে।সবাই মিলে আব্রাহাম’কে একটা বেডে নিয়ে গেল।ডক্টর ইমরান আব্রাহাম’কে দেখছে।ছেলে’টা বড্ড খাম খেয়ালি।দীর্ঘদিন ভালো করে ঘুমোয় না।আমি ঘুমের ঔষধ দিয়ে দিয়েছি।কেউ উনার বেডের কাছে এসে বিরক্ত করবেন না।বলতে বলতে সবাই’কে নিয়ে রুম থেকে আসলেন ডক্টর ইমরান।সবাই’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–ডক্টর আব্রাহামে’র ঝালে এলার্জি আছে।ভুলে-ও কেউ তাকে ঝাল জাতীয় খাবার দিবে না।বলে-ই উনি চলে গেল।

কলেজ থেকে বেড়িয়ে আয়াত ভিষণ অবাক হলো,
অন্যদিন আব্রাহাম তাকে নিয়ে যাওয়া’র কাউকে না।কাউকে পাঠিয়ে দেয়।হাতে সময় থাকলে,মাঝেমধ্যে সে,নিজে-ও আসে।আজকে আয়াত’কে কেউ নিতে আসে নাই।বিষয়’টা গভীর ভাবে আয়াত’কে ভাবাচ্ছে।আয়াত হতাশার শ্বাস ফেলে,আবার কলেজে চলে গেল।আজকে সারাদিন ফ্রেন্ডদে’র সাথে ঘুরবে।

মাগরিবের আজানে’র প্রতিধ্বনিতে ঘুম ভেঙে যায়, আব্রাহামে’র।দু’টো মেলে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে।হাতে স্যালাইন চলছে।চারিদিকে মানুষের কোলাহল।আজানে’র মধুর প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।আশেপাশে তাকিয়ে আব্রাহাম কাউকে দেখতে পেল না।সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত।আব্রাহাম ফোন দিয়ে,ডক্টর ইমরান’কে ডাকলো।ডক্টর ইমরান এসে গম্ভীর মুখ করে,আব্রাহামে’র দিকে তাকালো।আব্রাহাম মলিন মুখে বলল।

–স্যার আয়াত এসেছে।সকালে কলেজে দিয়ে এসেছিলাম।এত কি করে যে,ঘুমালাম।বুঝতে পারছি না।মেয়েটা ঠিকঠাক ভাবে আসতে পারলো নাকি?

–সারাদিন খালি আয়াত আর আয়াত।মেয়েটা’র পেছনে ছুটতে গিয়ে,নিজের কি হাল করেছো?আমি তোমার বাবা’র মতো।নিজের ছেলের মতো তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে শাসন করার অধিকার আমার আছে।এতে তুমি আমাকে যা খুশি ভাবতে পারো।তাতে আমার কোনো যায় আসে না।তুমি আয়াতে’র জন্য চিন্তা করছো?আয়াত সারাদিন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরছে।এখনো হসপিটালে ফিরে আসে নাই।সারাদিনে একটা বার তোমার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেছে।

আব্রাহাম মলিন হাসলো।এই মানুষ’টা তাকে ভিষণ ভালোবাসে,আব্রাহামে’র সব দুঃখ-কষ্টের কথা,এই মানুষ’টা জানে,তাই তো নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করে।

–স্যার আপনি রাগ করবেন না।আয়াত বাচ্চা মেয়ে,ওর এখনো জ্ঞান-বুদ্ধি হয় নাই।আপনি রাগ করবেন না।আমি দেখছি আয়াত কোথায় গেল।আব্রাহাম’কে উঠতে দেখে,ডক্টর ইমরান রেগে আব্রাহামে’র দিকে তাকায়।নিজের মাথার সাদা চুলগুলো দেখিয়ে বলল।

–আমার চুলগুলো এমনি এমনি পাকে নাই।কলেজ পড়ুয়া মেয়ে নাকি বাচ্চা।মেয়ে’টা তো’ তোমাকে আগে অনেক ভালোবাসতো।হঠাৎ কি এমন হলো,যে দিন দিন মেয়েটা এমন হয়ে যাচ্ছে?তোমার কোথাও যাওয়া’র দরকার নেই।আমি দেখছি বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে চলে গেল।

আয়াত সারাদিন পরে ক্লান্ত শরীর নিয়ে,হসপিটালের কেবিনে প্রবেশ করল।ফ্রেশ হয়ে এসে,বসতে-ই নার্স মারিয়া এসে,বলল।

–সারাদিন কোথায় ছিলে,স্যার সকালে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।নার্সের কথা শুনে,আয়াত কেমন অস্থির হয়ে উঠল।

–কি বলছেন আন্টি।আব্রাহাম এখন কোথায়?

–ছয় নাম্বার কেবিনে আছেন!আয়াত এক মুহুর্ত দেরি করল না।হন্তদন্ত হয়ে ছয় নাম্বার কেবিনে’র দিকে ছুটে গেল।কেবিনে’র বাহিরে দাঁড়িয়ে,নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল।আব্রাহামে’র সামনে কিছুতে-ই দুর্বল হলে চলবে না।আব্রাহাম কপালে একটা হাত রেখে,চোখ বন্ধ করে শুইয়ে ছিল।আয়াত কোনো কথা না বলে,
আব্রাহামে’র পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বলল।

–শুনলাম তুমি নাকি অসুস্থ?বলেই ফোনে মনযোগ দিল।আয়াতে’র মুখের দিকে তাকিয়ে,অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করল আব্রাহাম।মনের মধ্যে,সব অশান্তি নিমিষেই দূর হয়ে গেল।শান্ত হয়ে আয়াতে’র দিকে তাকিয়ে আছে।আয়াত ফোন দেখায় ব্যস্ত।আব্রাহাম মুখ’টা গম্ভীর করে বলল।

–সারাদিন কোথায় ছিলে,কারো ফোন নেওয়া’র আগে,তার থেকে অনুমতি নিতে হয়।এটা তুমি জানো না।

–তুমি-ও আমার,তোমার ফোন-ও আমার।তাই অনুমতি নেওয়া’র প্রয়োজন বোধ করি নাই।তুমি আমাকে নিতে যাও নাই।তাই সারাদিন ঘুরেছি।তবু-ও আমার খোঁজ নাও নাই।তাই একাই ফিরে আসলাম।

–আচ্ছা আয়াত আজকে যদি আমি মরে যেতাম।তাহলে তুমি আমাকে মনে রাখতে?আব্রাহামে’র কথা শেষ হবার সাথে সাথে আয়াত রেগে আব্রাহামে’র দিকে তাকালো।

–একদম বাজে কথা বলবে না।এসব কি ধরনের কথাবার্তা।আজকে তুমি আমাকে নিতে যাও নাই।আমি যদি গাড়ির তলে পড়ে মরে যেতাম।তখন তুমি কি করতে?

–আয়াত…

–একদম চিৎকার করবে না।মানুষ মাত্রই মরনশীল।কেউ সারাজীবন থাকতে আসে নাই।একদিন সবাই’কে চলে যেতে হবে।তাই বলে,এভাবে বলার কি আছে।তোমার যেমন লেগেছে।আমার’ও ঠিক তেমনই এখানে লেগেছে।বুকের বা পাশে দেখিয়ে বলল আয়াত।আব্রাহাম মৃদু হাসলো।কোনো কথা না বলে,দু-চোখ বন্ধ করে শুইয়ে রইল।আব্রাহাম দু-চোখ বন্ধ করতে-ই,
আয়াত দ্রুত পায়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেল।

অন্ধকার রুমে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটা চেয়ারে বসে আছে রজনী।তার সামনে-ই দাঁড়িয়ে হাসছে আবরার।রজনী ক্রোধিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।তা-দেখে আবরার শব্দ করে হেসে ফেলল।রজনী’র সামনে পড়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলল।

–বলেছিলাম না।আমার সাথে বাজে ব্যবহার করার ফল তুমি পাবে।বলতে বলতে রজনী’র মুখের বাঁধন খুলে দিল।আবরার রজনী’র খুব কাছে থাকায়।রজনী আবরারে’র গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারছে।আবরার’কে অবাক করে দিয়ে,রজনী আবরারের গালে কামড়ে বসিয়ে দিল।আবরার ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠল।মুখ’টা গম্ভীর করে,রজনী’র দিকে তাকালো।রজনী শব্দ করে হেসে বলল।

–ফুলের সুবাস নিতে এসেছেন।ফুলের কাঁটার আঘাত সহ্য করবেন না।তাই কখনো হয়।

–এটা কিন্তু ঠিক না।রজনী ফুলে,কাঁটা নেই।

–কিন্তু আমার আছে?

–তুমি কল্পনায় বেশি সুন্দর।বাস্তবে অসহ্যকর?বিরক্তি মাখা মুখে নিয়ে বলল আবরার।

–আমাকে কল্পনা শেখা’ও?
আমি হলাম গিয়ে কল্পনাবিলাসী।আমি পুরোটা-ই কল্পনাময়ী নারী’।আমাকে শুধু কল্পনাই করা যায়।ছোঁয়া যায় না।যারাই আমাকে ছুঁইয়ে দেখতে আসবে।তারাই কল্পনা’র অতল গভীর তলিয়ে যাবে।বলল রজনী।

–আমি হলাম গিয়ে সাঁতারু।আমাকে তোমার অতল গভীরে তলিয়ে যেতে দাও।আমি ঠিক সাঁতার কেটে,
তীরে উঠে চলে আসবো।বলল আবরার।আবরারে’র কথা শুনে,রজনী বিরক্ত হলো।অসহ্যকর দৃষ্টিতে আবারের দিকে তাকিয়ে আছে।আবার গম্ভীর মুখ করে রজনী’র দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়াত অস্থির হয়ে সবাই’কে একটা’র পরে একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।আব্রাহাম অসুস্থ হলো কি করে?তাকে কেনো জানানো হয় নাই।আয়াতে’র এমন প্রশ্নে সবাই খুব বিরক্ত।আব্রাহামে’র ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।

চলবে…..#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_০৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আবরার রজনী’র হাত পায়ে’র বাঁধন খুলে দিল।রজনী পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিল।রুমে আশেপাশে একটা জানালা নেই।সামনে একটা ছোট দরজা।রুমের মধ্য ছোট্ট একটা আলো জ্বলছে।তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আবরারে’র দিকে তাকিয়ে আছে রজনী।আবরার পকেটে দু’হাত গুঁজে রজনী’র দিকে তাকিয়ে আছে।রজনী কিছু বলছে না দেখে,আবরার বলল।

–এভাবে তাকিয়ে থেকো না।প্রেমে পড়ে যাবে।তখন কিন্তু আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।

–মানুষের রুচি কতটা খারাপ হলে,আপনার মতো মানুষের প্রেমে পড়ে?বলে-ই গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছে রজনী।

–আমার এক ইশারায় মেয়েরা আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে।

–তাহলে সেই সব মেয়েদের কাছেই যান না।আমাকে এভাবে আঁটকে রেখেছেন কেনো?

–তোমাকে একটা কাজ করতে হবে?

আবরারের কথা শুনে,রজনী ভ্রু কুঁচকে তাকালো।রজনী’কে তাকাতে দেখে আবরার বলল।

–আব্রাহাম আর আয়াত’কে আলাদা করতে হবে।তবেই আমরা আরোহী আর আহনাফ ভাই’কে খুঁজে বের করতে পারবো।আরোহী আপু আয়াত’কে বুঝিয়েছে।আব্রাহাম আরোহী আর আহনাফ ভাই’কে লুকিয়ে রেখেছে।আব্রাহাম’কে মারলে-ই আয়াত আরোহী আর আহনাফ ভাই’কে খুঁজে পাবে।আব্রাহাম’কে কষ্ট দেওয়া’র জন্য বড় বোন,ছোট বোন’কে লেলিয়ে দিয়েছে।একটা বার ভাবলো না।একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে থাকলে,কি হতে পারে।আব্রাহাম নিসন্দেহে অনেক ভালো ছেলে।তাই আয়াত’কে আগলে রেখেছে।আহনাফ ভাই-ও কাজ’টা ঠিক করছে না।আব্রাহাম’কে বুঝিয়েছে,আরোহী তাকে লুকিয়ে রেখেছে।আহনাফ ভাইয়ে’র খোঁজ একমাত্র আয়াত জানে,দু’জন দু’জনকে ভুল বুঝে আছে।এরা প্রতি সেকেন্ড ফন্দি আঁটছে,কিভাবে একজন আরেকজনে’র ক্ষতি করে,নিজেদের ভাই-বোন’কে খুঁজে বের করবে।আহনাফ আর আরোহী ভালোই আছে।মাঝখান থেকে বাচ্চা দু’টো ছেলে-মেয়ে’র জীবন’টা নষ্ট করে দিচ্ছে।এখনো সময় আছে রজনী।তুমি তোমার বোন’কে বাসায় নিয়ে যাও।আয়াত সম্পূর্ন সুস্থ।আয়াত আব্রাহামে’র ক্ষতি করার জন্য আব্রাহামে’র কাছে আছে।আর আব্রাহাম আয়াতে’র ক্ষতি করার জন্য আয়াত’কে নিজের কাছে রেখেছে।তার একে অপরের ক্ষতি করতে পারছে না।এতগুলো বছর একসাথে থাকার কারণে হয়তো মায়া তৈরি হয়ে গিয়েছে।তাই বারবার আঘাত করতে গিয়ে-ও থেমে যাচ্ছে।কথা গুলো বলে থামলো আবরার।

–আমি আপনাকে কিভাবে বিশ্বাস করবো।আপনি আমাকে মিথ্যা কথা-ও বলতে পারেন?আবরার রজনী’র কাছে এসে বলল।

–নিজের স্বামী’কে বিশ্বাস করতে শিখো!আবরারের কথা শুনে রজনী চোখ বড় বড় করে তাকালো।

–একদম বাজে কথা বলবেন না।

–আমি ছাড়া তোমাকে কেউ বিয়ে করবে না।

–আমার বাবা আপনার সাথে কিছুতেই বিয়ে দিবে না।বলতে বলতেই রজনী’র ফোন বেজে উঠল।ফোনের স্কিনে আব্বু নাম’টা জ্বলজ্বল করছে।বাবার নাম দেখে রজনী ভয় পেয়ে গেল।ভীত দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকালো।আবরার’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–প্লিজ আপনি কথা বলবেন না।আমি কোনো ছেলের সাথে আছি,জানলে আব্বু আমাকে শেষ করে ফেলবে।বলেই এক হাতে আবরারে’র মুখ চেপে ধরলো।এক হাতে বাবার ফোন তুলল।ফোনের ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো।

–আসসালামু আলাইকুম আব্বু।আমি আফিয়াদে’র বাসায় আসছি।এখনই বাসায় যাচ্ছি।

–তুমি নিজের সামী ভুলে গিয়েছো?তোমাকে বলেছি,
যেখানে-ই যাবে সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে আসবে।রাত হয়ে গিয়েছে।এখানো বাসায় পা’ রাখো নাই।দশ মিনিটে’র মধ্যে যদি তোমাকে বাসায় না দেখেছি।আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।বলেই কল কেটে দিলেন।রজনী’র ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,এই প্রথম তার বাবা তার সাথে কঠিন গলায় কথা বলল।রেগে আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে।

–চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।আমি বুঝতে পারি নাই।রাত হয়ে গিয়েছে।রজনী কোনো কথা বলল না।সোজা বাহিরে চলে গেল।আবরারের-ও ভিষণ খারাপ লাগলো।মেয়েটা তার জন্য আজ বাসায় কথা শুনবে।বিশ মিনিটের মধ্যে আবরার রজনী’কে বাসায় পৌঁছে দিল।রজনী বাসায় পা’ রাখতে-ই বাবা গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো।

–খুব সাহস হয়ে গিয়েছে।কাল থেকে বাহির বাহিরে যাবে না।আমি তোমাকে বিয়ে দিব।কালকে পাত্র পক্ষ তোমাকে দেখতে আসবে।কথা’টা শোনা মাত্রই রজনী’র কলিজা কেঁপে উঠল।চিৎকার করে বাবা’কে বলতে ইচ্ছে করছে।বাবা আমি বিয়ে করবো না।আমি পড়াশোনা করতে চাই।নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে চাই।মনের কথা গুলো মনে থেকে গেল।ভয়ে বাবার সামনে একটা কথা মুখ দিয়ে বের হলো না।চুপচাপ মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে গেল।

নিজের রুমে এসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে রজনী।মাথায় কারো স্নেহের হাত পড়তে-ই তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল রজনী।মাকে দেখে নিজের চোখের অশ্রুকণা গুলো মুছে নিল।স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে বলল।

–আম্মু কিছু বলবে?

–বাবার কথায় কষ্ট পেয়েছিস মা?কষ্ট পাস না।তুই আমাদের অবস্থা’টা দেখতে-ই পাচ্ছিস।তোর বাবা তোকে নিয়ে সব সময় ভয়ে থাকে।তুই যদি আরোহী’র মতো কাজ করিস।আয়াত’কে তা-ও নিয়ে আসতে পারবো।সবাই’কে যাই হোক বুঝ দাওয়া যায়।আয়াত পাগল তাই আয়াত’কে হসপিটালে রাখা হয়েছে।কিন্তু আরোহী একটা বার আমাদের কথা ভাবলো না।তুই অনন্ত আরোহীর মতো হোস না।তোর কোনো পছন্দ থাকলে বল।আমি তোর বাবা’কে বুঝিয়ে তার সাথে বিয়ে দেওয়া চেষ্টা করবো।তবু-ও তুই কষ্ট পাস না মা।

–আম্মু আমার কোনো পছন্দ নেই।আমি পড়াশোনা করে জব করতে চেয়ে ছিলাম।আমি জানি তোমরা আমার কখনো খারাপ চাইবে না।তোমাদের ওপরে আমার বিশ্বাস আছে।তোমাদের কখনো কষ্ট দিতে পারবো না।তোমরা যাকে বিয়ে করতে বলবে।আমি তাকেই বিয়ে করবো।শুধু একটা জিনিস খেয়াল রাখবে।আমি যেনো বিয়ের পড়ে পড়াশোনাটা করতে পারি।

–এটা কোনো ব্যাপার না মা।আমি তোর বাবা’কে বলবো।তুই চিন্তা করিস না।তোর ওপরে আমার ভরসা ছিল।আমি জানতাম তুই কখনো আমাদের কষ্ট দিবি না।বলেই চলে গেল।

আব্রাহামে’র ঝালে এলার্জি আছে শুনে,কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গেল আয়াত।আব্রাহাম আগে কখনো তাকে বলে নাই।আব্রাহামে’র ঝালে এলার্জি আছে।আয়াত বহুবার আব্রাহাম’কে ঝাল খাইয়ে,কষ্ট দেওয়া’র চেষ্টা করছে।আজ নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে।বুকের মধ্যখানিতে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে আয়াত।সে,তো আব্রাহাম’কে কষ্টই দিতে চায়।আব্রাহাম কষ্ট পাচ্ছে।এতে তার কেনো খারাপ লাগছে।আয়াত আবার আব্রাহামে’র কাছে আসলো।আব্রাহামে’র মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে কলিজা কেঁপে উঠল।আস্তে করে আব্রাহামে’র কাছে গিয়ে বসলো।আব্রাহামে’র কপালে হাত রাখতে-ই চমকে উঠল আয়াত।আব্রাহামে’র শরীরে’র তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে শুরু করেছে।আব্রাহাম মুখ দিয়ে বিরবির করে বলছে।

–আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও আম্মু।আমার তোমাকে ছাড়া থাকতে অনেক কষ্ট হয়।আমাকে কেউ ভালোবাসে না আম্মু।তুমি আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও।আয়াত আব্রাহামে’র মুখের কাছে কান এগিয়ে দিল।তবু-ও আব্রাহামে’র একটা কথা কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।আয়াত সারারাত জেগে আব্রাহামে’র সেবা করল।

আব্রাহামে’র সুস্থ হতে দু’দিন লাগলো।আব্রাহাম এখন বেশ খানিকটা সুস্থ।আজকে আবরার বাবা থেকে রাগ করে না খেয়ে চলে এসেছে।সেজন্য আবরারে’র মা নিজ হাতে রান্না করে,ছেলের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।আবরার নিজের কেবিনে বসেছিল।মাত্রই পেশেন্ট দেখা শেষ হলো।আবার বিকেল থেকে দেখা শুরু করবে।দুপুর টাইমে মা’কে দেখে অবাক হলো আবরার।

–আম্মু তুমি এখানে এসেছো কেনো?কোনো দরকার পড়লে আমাকে বলতে,আমি বাসায় চলে যেতাম।

–তুই কতো বাসায় যেতি তা’ আমার ভালো করেই জানা আছে।রাগ করে বেড়িয়েছিস।বাবা হয়ে ছেলে’কে দু’কথা বলতে-ই পারে।তাই বলে রাগ করতে হবে।আমি নিজ হাতে তোর জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছি।খাইয়ে দিয়ে চলে যাব।

–আম্মু এখানে আব্রাহাম আছে।তুমি কি ভুলে গিয়েছো?ও’ জানলে মন খারাপ করবে?

–আমাকে তোর বোকা মনে হয়।আমি দু’জনের জন্যই খাবার নিয়ে এসেছি।আমি তোকে খাইয়ে দিয়ে চলে যাব।আব্রাহামে’র সাথে দেখা হলে,তুমি আব্রাহাম’কে খাবারটা দিয়ে দিস।তোর বাবা জানলে খুব রাগ করবে।তাড়াতাড়ি খেয়ে নে’।আমাকে বাসায় চলে যেতে হবে।বলেই আবরার’কে খাইয়ে দিতে লাগলো।পরম আদুরে ভাবে আবরার’কে খাইয়ে দিচ্ছে।পর্দার আড়াল থেকে আব্রাহাম মা-ছেলের আদুরে দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করছে।মুহুর্তের মধ্যেই আব্রাহামে’র দু-চোখ ভরে এলো।আবরারে’র কাছে একটা তথ্য নিতে এসেছিল।এখন ভেতরে গিয়ে তাদের বিব্রত অবস্থায় ফেলবে না দেখে,দাঁড়িয়ে আছে।আয়াত আব্রাহাম’কে দেখতে না পেয়ে,খুঁজতে খুঁজতে আবরারে’র কেবিনের কাছে আসলো।আব্রাহাম’কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,আস্তে করে আব্রাহামের পাশে গেল।ভেতরে উঁকি দিতেই আয়াতে’র চোখ কপালে উঠে গেল।আয়াত কিছু বলতে যাবে।তার আগেই আব্রাহাম আয়াতে’র মুখ চেপে ধরলো।আয়াত’কে টেনে নিয়ে দূরে সরে আসলো।আব্রাহাম আয়াতে’র মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিতে-ই,আয়াত জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল।

–তোমার আম্মু এমন কেনো?এক ছেলে সারাদিন হসপিটালে পড়ে থাকে।বছরে কয়বার বাসায় যায়।তার কোনো খোঁজ রাখে না।আবার আরেক ছেলে’কে হসপিটালে এসে মুখে তুলে,খাবার খাইয়ে দেয়।

–একদম আমার আম্মুর নামে বাজে কথা বলবে না।আম্মু আমার জন্য-ও খাবার নিয়ে এসেছে।দেখবে ভাইয়া একটু পরে এসে আমাকে দিয়ে যাবে।

–আমি তোমার আম্মুর নামে বাজে কথা কখন বললাম।উনি যে,কাজ করেছেন।আমি শুধু সেটাই বললাম।তুমি আমার ওপরে রেগে যাচ্ছো কেনো?

–আম্মুকে নিয়ে কেউ কোনো কথা বললে,আমার খুব রাগ হয়।তাই আমার সামনে আম্মুকে নিয়ে কোনো কথা বলবে না।আয়াত আর কোনো কথা বলল না।নিচে চলে গেল।আব্রাহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাহিরে খেতে চলে গেল।

বাজারের মধ্যে দেখা হলো আজাদ শিকদার আর সফিউল চৌধুরী’র।আজাদ পাশ কাটিয়ে চলে যাবে।তখন-ই সফিউল চৌধুরী বলে উঠল।

–আজাদ ছেলে-মেয়ে দু’টোকে মাফ করে দিয়ে,আমরা সবাই মিলে এক হতে পারি না

–ভাইজান আমি তো’ এক হতেই চাই।ওদের মাফ করে দিতেই চাই।কিন্তু ছেলে-মেয়ে দু’টোকে খুঁজে না পেলে কি করবো।আপনার ছোট ছেলে ওদের কোথায় লুকিয়ে রেখেছে।আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।আমার ছোট মেয়েটা’কে-ও আঁটকে রেখেছে।আমি কোথায় যাব বলেন।এলাকায় আমার একটা সন্মান আছে।আমার ভয়ে হয়তো আমার সামনে কিছু বলতে পারে না।কিন্তু আমার আড়ালে আমাকে নিয়ে নানান কটু কথা বলে।আজাদের কথা শুনে,সফিউল চৌধুরীর মুখ’টা গম্ভীর হয়ে গেল।নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল।

–আয়াত’কে আপনাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।তবে আমার একটা শর্ত আছে?

–আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।আমি সাধ্য মতো আপনার শর্ত পূরণ করার চেষ্টা করবো।

–আপনার মেজো মেয়ে রজনী’র সাথে,আমার মেজো ছেলে আবরারের বিয়ে দিতে চাই।আপনি যদি রাজি থাকেন।তাহলে আমাকে আপনার পাশে সব সময় পাবেন।

–দেখুন বিয়ে সারাজীবনে’র বিষয়?মুখ দিয়ে বললেই হয়ে যায় না।আপনার ছেলে কেমন তা আমি জানি না।আমার মেয়ে রাজি হবে কি না।আপনার ছেলের কোনো মতামত আছে কি না?

–আমি আপনাকে সাতদিন সময় দিলাম।এখন আপনি ভেবে দেখুন।বলেই সফিউল চৌধুরী চলে গেলেন।

অন্ধকার রুমে হাত-পা বাঁধা অবস্থা অচেতন হয়ে আছে আয়াত।তার সামনে কালো পোশাক পড়া দশ জন লোক বসে আছে।দীর্ঘ দুই ঘন্টা অচেতন হয়ে আছে আয়াত।সবাই আয়াতে’র জ্ঞান ফেরার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে।

চলবে…..

(সবাই রেসপন্স করবেন।ভুল ত্রুটি গুলো মার্জিত ভাবে ধরিয়ে দিবেন।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here