#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_০৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
চারিদিকে রাতের আঁধার নেমে এসেছে।ব্যস্ত শহরে যে,যার মতো ব্যস্ত।সবাই নিজ নিজ কাজে মনযোগী হয়ে আছে?দুই পরিবার মিলে,শপিং করতে এসেছে?আয়াতে’র চোখ আব্রাহামে’র দিকে যেতে-ই বুকটা কেঁপে উঠলো।চেহারা’র কি হাল করেছে ছেলেটা।আব্রাহাম’কে বিধস্ত অবস্থায় দেখে,আয়াতের দম বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করল।আব্রাহাম একবার-ও আয়াতে’র দিকে ফিরে চাইলো না।সবাই মিলে,শপিং মলে প্রবেশ করল।রজনী চুপচাপ সবার সাথে,তাল মিলিয়ে চলছে।সবাই যে,যার মতো নিজেদের জিনিস পছন্দ করায় ব্যস্ত।আব্রাহাম এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
-একটা জলজ্যান্ত মানুষের আবেগগুলো’কে খুন করে,তুমি কিভাবে অন্যের সাথে হাসো?(আব্রাহাম)
আবরারে’র একটা কথায় হাসছিল আয়াত।কথাটা কর্ণ প্রহরে আসতে-ই থমকে গেল আয়াত।আব্রাহামে’র দিকে দৃষ্টি দিতেই,দেখলো!আব্রাহাম বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
–আয়াত তুই এখানে কেনো?আম্মু তোকে ডাকছে?বলল রজনী।
–দেখতে-ই পাচ্ছো,আমার শালী সাহেবা’র একটু কথা বলছি।এভাবে বিরক্ত না করলে,হয় না।তুমি যাও,আমি আয়াত’কে নিয়ে আসছি।আবরারে’র কথার মাঝে,
আবরারে’র বাবা আবরার’কে ডাকলো।আবারার চলে যেতেই আয়াত,রজনী’র পিছু পিছু যাচ্ছিল।ঠিক এমন সময় আয়াতে’র চোখে পড়ে,আব্রাহাম একটা মেয়ে দোকানদারে’র হেসে হেসে কথা বলছে?না চাইতে-ও দৃশ্যটা দেখে,বুকের মধ্যে কষ্ট অনুভব করল আয়াত।ধীর পায়ে দোকানের সামনে এগিয়ে গেল।আয়াত’কে দোকানে দেখে আব্রাহাম চলে গেল।আয়াত অসহায় দৃষ্টিতে আব্রাহামে’র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
শপিং করে সবাই একসাথে বাসায় ফিরলো।রাত একটু বেশি হয়ে যাবার কারনে,সবাই খেয়ে,তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো।
আব্রাহাম বেলকনিতে বসে বসে,আকাশে’র দিকে তাকিয়ে আছে।মনের সকল কথা আল্লাহ তায়ালা’র কাছে প্রকাশ করছে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনের,
সকল দুঃখ-কষ্ট গুলো উড়িয়ে দেওয়া’র চেষ্টা করল।কিন্তু বরাবরে’র মতো।এবার-ও ব্যর্থ হলো,রাত হলেই আব্রাহামে’র দু-চোখ অসম্ভব ভাবে লাল হয়ে উঠে।কেমন শান্ত হয়ে যায়।চুপচাপ একা নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে বসে থাকে!বুকে হাত দিয়ে কতবার জোরে জোরে শ্বাস নিল।কপালে হাতে দিয়ে বসে রইল।কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে,চোখ মেলে তাকালো আব্রাহাম।আবরার’ কে দেখে,আবার দু-চোখ পরম আবেশে বন্ধ করে দিল।
–এত রাত হয়ে গিয়েছে,ঘুমাওনি যে?বলল আব্রাহাম।
–তোর দু-চোখের ঘুম কেঁড়ে নিয়ে,শান্তিতে ঘুমোতে পারছি না।ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছি।বলল আবরার।
–সুন্দর অভিনয় জানো ভাইয়া!ইমোশনাল কথা না বলে,যে কাজে এসেছো?আসল কথা বলে ফেলো?এত ভালো সাজতে হবে না।বলল আব্রাহাম।
–তুই কিভাবে সবকিছু বুঝে ফেলিস।আমি যে,এখানে অন্যকোনো উদ্দেশ্যে এসেছি?বলল আবরার।
–ভাই হও তুমি আমার?
–খুব কষ্ট হচ্ছে তোর?
–আমার আবার কিসের কষ্ট?যার কেউ নেই।তার নিদিষ্ট কোনো কষ্ট থাকতে নেই।তার চোখের পানি মুছিয়ে দেওয়া’র জন্য কেউ অস্থির হয়ে উঠবে না।তার ব্যথায় কেউ ব্যধিত হবে না।সে,কষ্ট পেলে কেউ বলবে না।তোমার কি হয়েছে,তুমি কষ্ট পাচ্ছো কেনো?আমি তো আছি তোমার পাশে সব সময়।সবাই ভালো থাকতে বলে,কিন্তু ভালো রাখার দায়িত্ব’টা কেউ নেয় না।
আব্রাহামের কথায় থমকে যায় আবরার।কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকলো।তারপর মলিন হেসে বলল।আমাকে রজনী’র কাছে নিয়ে যাবি।শপিং মলে,সবার সামনে ভালো করে কথা বলতে পারি নাই।মেয়েটা আমাকে একদম সহ্য করতে পারে না।তাই আমি চাই?ওর মনে আমার জন্য সুপ্ত অনুভূতি তৈরি করতে।সেই অনুভূতি থেকে হলে-ও রজনী আমাকে,একটু ভালোবাসবে।
–নিজের ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাবার জন্য কত প্রয়াস।কত চিন্তা!কত আবেগ-অনুভূতির সংমিশ্রণে কথা বলছো?ভাইয়া একটা কথা বলি।নিজের ভালো থাকার জন্য অন্য কারো ভালো থাকা কেঁড়ে নিও না।একই কাজ যদি তোমার সাথে হয়।তুমি সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।অনেক রাত হয়েছে।এমনিতে-ই মেয়েটা দু’দিন পরে,তোমার বউ হয়ে যাবে।রাত করে তার কাছে গিয়ে,মানুষের থেকে বাজে কথা শুনিয়ে নিও না।বলল আব্রাহাম।
–ভূতের মুখে রাম নাম।তুই যে,বেয়াদবে’র মতো সবার সামনে গিয়ে আয়াত’কে দেখে আসলি।তখন আয়াতে’র সন্মানের কথা চিন্তা করলি না।আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস।আগে নিজে ভালো হ!তারপরে অন্যকে জ্ঞান দিবি?বলল আবরার।
–ভাইয়া আমার সাথে নিজের তুলনা করছো?আমি তো’ বেয়াদব?তুমি না ভদ্র!বাবা-মায়ের বাধ্য ছেলে,আমার সাথে নিজের তুলনা করতে,লজ্জা করছে না।সফিউল চৌধুরী জানেন,তার প্রাণ প্রিয় ছেলে,আমার সাথে নিজের তুলনা দিচ্ছে।বলল আব্রাহাম।
–তুই আসলে-ই একটা বেয়াদব।তোর সাথে কথা বলতে আসাটা-ই আমার ভুল হয়েছে?ভেবে ছিলাম,তুই অন্তত আমার মনের,কথা গুলো বুঝতে পারবি।কিন্তু আমার ধারনা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে দিলি।বলল আবরার।
–তোমার বউকে দেখতে ইচ্ছে করছে।তুমি গিয়ে দেখা করে আসো।আমাকে ডাকছো কেনো?নিজে গিয়ে দেখা করার সাহস নেই।আবার বিয়ে করছো?লজ্জা করছে না।তোমার তো স্বামী হবার কোনো,যোগ্যতাই নাই।বলল আব্রাহাম।
–আব্রাহাম?
–একদম আমার সাথে চিৎকার করবে না।চিৎকার করে কথা বলা?আমি একদম পছন্দ করি না।আমাকে তুমি খাইয়ে পড়িয়ে,তোমার বাসায় পালছো না?যে,তোমার গোলাম হয়ে থাকতে হবে।আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যাও।আমি রেগে গেলে,ফলাফল কি হবে।তা’ তুমি ভালো করেই জানো?
আবরার আর থাকতে পারলো না।আব্রাহামে’র শান্ত কণ্ঠে অপমান করা গুলো,বারবার মনের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে।
–আমি চেয়ে ছিলাম।আমার আর রজনী’র বিয়ের পরে,
তোর আর আয়াতে’র বিয়ের ব্যবস্থা করে দিব।কিন্তু তোর মতো বেয়াদব ছেলের উপকার করার কোনো মানেই হয় না।আমি’ও দেখবো।আয়াত’কে কি করে?নিজের কাছে নিয়ে আসিস?বলল আবরার।
–আমি তোমার মতো দুর্বল না।নিজের কাছের মানুষ’কে কিভাবে নিজের কাছে নিয়ে,আসতে হয়।তা’ আমি ভালো করেই জানি।আচ্ছা ভাইয়া।আমার এই শান্ত থাকা।তোমাকে একটু-ও ভাবাচ্ছে না।বলল আব্রাহাম।
আব্রাহামে’র শীতল কণ্ঠে বলা কথাটা আবরারে’র পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।ছেলেটা’র শীতল কণ্ঠে বলা কথা গুলো এতটা ভয়ংকর কেনো?ছেলেটা’র শীতল কণ্ঠে জাদু আছে।তা-না হলে ছেলেটা’র প্রতিটি শীতল কণ্ঠে বলা কথা গুলো,গভীর ভাবে মনের মধ্যে প্রবেশ করে কেনো?এই মুহুর্তে আব্রাহাম’কে আবরারে’র ভিষণ ভয় লাগছে।শরীর গরম হয়ে আসছে।আব্রাহামে’র দিকে তাকিয়ে নিজের,রুমের দিকে পা বাড়ালো।তখন-ই আবরারে’র কানে একটি বাক্য ভেসে এলো।
–ভাইয়া আজকে যদি,তোমাকে আমি মেরে ফেলি।তাহলে কালকে আয়াত আমার কাছে চলে আসবে?তাই না বলো!
–তোর মাথায় সমস্যা আছে।আমার মনে হয়।তোকে একটা ভালো ডক্টর দেখানো উচিৎ?
আবরারের কথা শেষ হবার সাথে সাথে আব্রাহাম রক্তিম চোখে,আবরারের দিকে তাকালো।আব্রাহামে’র শান্ত দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে,আবরারে’র অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।রাত একটু গভীর হওয়ায়।আবরারে’র পুরো শরীর ছমছম করে উঠলো।কোনো কথা না বলে,আব্রাহামে’র রুম ত্যাগ করল।আবরার চলে যেতেই আব্রাহাম হাসলো।নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে,
রাস্তায় চলে আসলো।ফোনের আলো জ্বালিয়ে,
হাঁটতে হাঁটতে একটা কবর স্থানের দিকে এগিয়ে আসলো।পুরো করব স্থানের দিকে,একবার চোখ বুলিয়ে নিল।অধরে’র কোণে হাসি ফুটিয়ে দৌড়ে মাঝের একটা কবরের পাশে গিয়ে দাড়ালো।কবরের দিকে তাকিয়ে,ভেতরের সব দুঃখ-কষ্ট দুমড়ে মুচড়ে বের হয়ে আসছে।কবরের পাশে টান হয়ে শুইয়ে পড়লো।দু-চোখ বেয়ে অশ্রুকণা গুলো গড়িয়ে পড়ছে।দু-হাতে
কবরটা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করছে আব্রাহাম।
–তুমি আমার জীবনে থাকলে,আমার জীবন’টা অন্য রকম হতো?তোমার মুখ দেখে,দিন শেষে শান্তিতে থাকতে পারতাম।নিয়ম করে,মুখে হাসি তুলে দিচ্ছিলে,
বড্ড বেশি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলে।এভাবে শান্ত হয়ে গেলে।তোমার থেকে খুব বেশি কিছু চেয়ে ছিলাম আমি?একটু ভালোবাসা আর শান্তি চেয়ে ছিলাম।তুমি-ও স্বার্থপরের মতো চলে গেলে।জানো আমাকে কেউ ভালোবাসে না।একাকিত্ব আমাকে দিন দিন মৃত্যুর দিকে ঢেলে দিচ্ছে।আমি মন খুলে কারো সাথে কথা বলতে পারি না।আমার মনের কথা গুলো শোনার মতো কেউ নেই।দিন শেষে মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া’র মতো কেউ নেই।অনেক দিন হয়ে গিয়েছে।মায়ের হাতে রান্না খাই না।হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হয়েছে।আমার কি মায়ের হাতের রান্না খেতে ইচ্ছে করে না।এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর সাথে,তাল মিলিয়ে চলতে চলতে,আমি হাঁপিয়ে গিয়েছি।আমি আর পারছি না।তোমার সাথে যদি চলে যেতে পারতাম।তাহলে শান্তিতে থাকতে পারতাম।টাকার শহরে টাকা কামাতে কামাতে একদিন আমি ফুরিয়ে যাব।তবু-ও কারো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পাব না।
–ছেলে মানুষ হয়ে কান্না করছো।লজ্জা করে না?হঠাৎ করে পেছনে থেকে কারো কণ্ঠের আওয়াজ পেয়ে,
একটু-ও চমকালো না আব্রাহাম।তাচ্ছিল্য করে বলল।
–আবার আমাকে জ্বালতে চলে এসেছো?ছেলে মানুষের কান্না করতে নেই?তাদের নিজস্ব কোনো দুঃখ থাকতে নেই।
–না নেই।ছেলের মানুষের চোখে পানি আসা দণ্ডনীয় অপরাধ।এত রাত করে করব স্থানে এসেছো।তোমার ভয় লাগছে না।
–এত রাতে আমার কাছে এসেছো?তোমার ভয় লাগছে না।আমি তোমাকে মেরে-ও ফেলতে পারি।
বৃদ্ধ লোক আব্রাহামে’র কথা হাসলো।আব্রাহাম শুইয়ে থেকেই বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে।মলিন হেসে বলল।
চলবে…..#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_০৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
“ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাতে সবাই গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।ঘুম নেই আয়াতে’র চোখে’।মন’টা বড্ড অস্থির হয়ে উঠছে।আব্রাহাম যখন খুব কষ্ট পায়।তখন আয়াত মনের মধ্যে এমন অস্থিরতা অনুভব করে।আব্রাহাম কি খুব বেশি কষ্ট পাচ্ছে।যে,মানুষ’টা এক মুহুর্ত তাকে,না দেখে থাকতে পারতো না।সেই মানুষ’টা দিব্বি তাকে ছাড়া,দিন পার করে দিচ্ছে।একটু কথা বলার জন্য,যে মানুষ’টা হাজার’টা অজুহাত খুঁজে,তার কাছে আসতো।আজ সেই মানুষ’টা তার থেকে এতটা দূরে।আমি’ও কি বাবা’র কথা ভেবে স্বার্থ পর হয়ে গেলাম।আমি তো’ আব্রাহাম’কে ভালোবাসি না।তাহলে আব্রাহামে’র জন্য কেনো আমার এত কষ্ট হচ্ছে,কেনো ওকে ছাড়া ভালো থাকতে পারছি।আব্রাহাম’কে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আপুর বিয়ে হয়ে গেলে,আমি আবার আব্রাহামে’র কাছে চলে যাব।আব্রাহাম’কে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।আব্রাহাম’কে ভালোবাসা কি না” তা আমি জানিনা।তবে আব্রাহাম’কে ছাড়া এক মুহুর্ত ভালো থাকতে পারছি না।এটা আমি প্রতিটা মুহুর্তে অনুভব করতে পারছি।আব্রাহাম তো” আমার প্রতিদিনে’র অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।যার নাম শুনলে-ই আমার অধরের কোণে হাসি ফুটে উঠে,সে-ই তো” আমার আব্রাহাম।আচ্ছা এখন সবাই ঘুমিয়ে আছে।রাত শেষ হতে,এখনো অনেক সময় বাকি আছে।আমি যদি হসপিটালে গিয়ে আব্রাহাম’কে দেখে আসতে পারি।তাহলে মনের মধ্যে একটু শান্তি অনুভব করতে পারতাম।কিন্তু আব্রাহাম তো” ভাইয়ে’র বিয়ের জন্য বাসায় এসেছে।এত রাতে একা একটা মেয়ে মানুষ যাওয়া’টা কি ঠিক হবে।হাজারো চিন্তা ভাবনা করতে করতে,নিজের চুল দু-হাতে আঁকড়ে ধরলো আয়াত।মনের সাথে যুদ্ধ করে,অবশেষে ঠিক করল।একটুর জন্য হলে-ও আব্রাহাম’কে দেখে আসবে।রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িং রুমে আসলো।মেইন দরজা খুলতে যাবে।তখন-ই আদাজ শিকদারে’র কঠিন গলা ভেসে আসলো।
–মেয়ে মানুষের অতিরিক্ত সাহস ভালো না।কারন একটা ছেলে রাস্তায় রাত পার করে দিতে পারলে-ও,
একটা মেয়ে পারে না।তুমি বুঝতে পারছো।রাস্তার রাত গুলো,মেয়েদের জন্য কতটা ভয়ংকর।সুস্থ হয়ে বাসায় এসেছো।তাই বলে,যা খুশি করবে।আমরা সেটা মেনে দিব।এটা যদি ভেবে থাকো।তাহলে তোমার ধারনা ভুল।এলাকায় আমাদের যথেষ্ট সম্মান আছে।তোমার বড় বোন।আমাদের অর্ধেক সম্মান নষ্ট করে দিয়েছে।আশা করছি।তুমি-ও তোমার বড় বোনের মতো আমাদের সম্মান’টা নষ্ট করে দিবে না।
বাবার কথা শুনে সামনের দিকে পা” এগোনোর সাহস পেল না আয়াত।ভয়ে শরীর রীতিমতো কাঁপছে।করুন চোখে বাবার দিকে তাকালো।কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল।
–আমাকে একটু বাহিরে যেতে দিবে।বাসার মধ্যে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আমাকে যেতে দাও না বাবা।
–আমি’ও যাচ্ছে তোমার সাথে চলো।মেয়ে মানুষ একা একা যেতে নেই।
আজাদ শিকদারে’র কথায় চুপসে গেল আয়াত।আমি একাই যাব বাবা।তোমাকে নিব না।তোমাকে নিয়ে গেলে,আমার আব্রাহাম’কে যে,দেখতে পারবো না।মনের কথা গুলো মনের মধ্যে-ই রইয়ে গেল।মুখ দিয়ে বের হলো না।বাবা’কে কি বলবে বুঝতে পারলো না।আয়াত’কে চুপ থাকতে দেখে আজাদ শিকদার বলল।
–চলো তোমাকে বাহিরে নিয়ে যাই।আমার মেয়ের খারাপ লাগছে।বাবার হিসেবে মেয়ে’কে ভালো রাখার একটা দায়িত্ব আছে না আমার!আজাদ শিকদারের কথা গুলো শেষ হবার সাথে সাথে আয়াত মাথা নিচু করে বলল।
–আমি একটু হসপিটাল যাব বাবা।
আজাদ শিকদার রেগে গিয়ে বললেন।
–আব্রাহামে’র কাছে যাবে।কি আছে ঐ’ ছেলের মাঝে।যে,পাঁচ’টা বছর এমন একটা পাগল ছেলের সাথে কাটিয়ে দিলে?
–বাবা এসব তুমি কি বলছো?
–শুনো মেয়ে আমি তোমার বাবা হই।চুল আমার এমনি এমনি সাদা হয় নাই।তুমি সুস্থ মস্তিষ্কে আব্রাহামে’র কাছে ছিলে।এটা কেউ না জানলে-ও,আমি ভালো করে-ই জানি।তাই আমার সামনে কোনো রকম অভিনয় করার চেষ্টা করো না।
–আমাকে একটু হসপিটালে যেতে দাও না বাবা।
–ঐ” ছেলেটা’র সাথে থাকতে থাকতে তোমার মাথা-ও খারাপ হয়ে গিয়েছে।তুমি-ও পাগল হয়ে গিয়েছো।তা-না হলে, মাঝ রাতে কেউ হসপিটালে যায়।আমাকে রাগি-ও না।বাসার সবাই দেখার আগে নিজের রুমে যাও।
আয়াত বাবার পা” জড়িয়ে ধরে বলল।বাবা আমাকে যেতে দাও না।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,আমি এই অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করতে পারছি না।বুকের মাঝখানে ব্যথা করছে।আমি কথা দিচ্ছি।কেউ জানতে পারবে না।আমি যাব সকাল হবার আগে-ই চলে আসবো।আমাকে যেতে দাও বাবা।ভালো থাকতে পারছি না আমি।আয়াতে’র কথা শেষ হবার সাথে সাথে আজাদ শিকদার আয়াতে’র গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।আয়াত অসহায় দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।
–তোমার সাহসে’র তারিফ করতে হয়।তুমি একটা ছেলের সাথে দেখা করতে যাবে।সেটা আবার নিজের বাবা’কে বলছো।তোমার তো এত সাহস ছিল না।এত সাহস পেলে কোথায় থেকে।বেয়াদবে’র সাথে থেকে বেয়াদব হয়েছো।নিজে যেদিন মা হবে,সেদিন দেখবো।কিভাবে মা হয়ে নিজের ছেলে-মেয়ে’কে মাঝরাতে একটা ছেলের কাছে পাঠাও।আমি আর একটা কথা বলার আগে।আমার সামনে থেকে চলে যাও।আয়াত বাবার কথা শুনে,এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না।নিজের রুমে চলে আসলো।সে জানে,বাবা’কে বলে কোনো কাজ হবে না।আয়াত’কে যখন একবার বেরোতে দেখেছে।তারমানে সারারাত ড্রয়িং রুমে বসে থাকবে।আয়াত বেলকনিতে গেল।আকাশে’র দিকে তাকিয়ে,নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো।ভালোবাসায় এত কষ্ট কেনো।ভালোবাসা’র মানুষের কাছে থেকে দূরে আসলে,
ভেতর’টা এতটা পুড়ে কেনো?তাকে এক নজর দেখার জন্য দু-চোখ এতটা আকুল হয়ে উঠে কেনো?নিজেকে কতটা নিচে নামিয়েছিস আয়াত।একটা ছেলের কাছে যাবার জন্য নিজের বাবার পা’ জড়িয়ে ধরে কান্না করছিস।কতটা বেহায়া হয়ে গিসেছিস।আমি তো” বেহায়া হতে চাই নাই।মনটা আমাকে বেহায়া বানিয়ে দিয়েছে।নিজের সাথে,নিজেই কথা বলছিল আয়াত।দু-চোখের অশ্রু গুলো শুকিয়ে আসতে শুরু করেছে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে আসলো।
–আজকে-ও বুঝি বউয়ে’র হাতে মার খেয়েছো?তাই এত রাতে কবর স্থানে এসে বসে আছো?আব্রাহামে’র কথায় বৃদ্ধ লোকটি হাসলো।
–আজকে আবার তোমাকে কে কষ্ট দিয়েছে?আমার বউ না হয়।আমাকে মেরেছে।কিন্তু তোমার বউ কোথায়?
–আমার বউ তার বাবার বাসায় চলে গিয়েছে।আগে অসুস্থ ছিল,তাই আমার কথা মনে ছিল।এখন সুস্থ হয়ে গিয়েছে।তাই আমাকে ভুল গিয়েছে।আব্রাহামে’র শান্ত কণ্ঠে বলা কথা’টা বৃদ্ধের হৃদয় স্পর্শ করে গেল।ছেলেটা সবকিছু হারিয়ে,কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে।আচ্ছা ছেলেটা’র ভাগ্য এমন কেনো।সবাই খালি তাকে ছেড়ে চলে যায়।বৃদ্ধ উঠে আব্রাহামে’র কাছে গেল।আব্রাহাম’কে তুলে বুকের সাথে চেপে ধরলো।
–নিজেকে কখনো একা মনে করবি না।তোর পাশে কেউ না থাকলে-ও,আমি সব সময় তোর পাশে থাকবো।যখন খুব বেশি কষ্ট হবে।এই বুড়োটা’র কাছে চলে আসিস।এই বুড়োটা সাধ্য মতো তোকে ভালো রাখার চেষ্টা করবে।আমি জানি আমি তোর সব দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিতে পারবো না।কিন্তু তোকে আংশিক ভালো রাখতে পারবো।মেয়ে’কে তোর মনের কথা সব জানিয়েছিস।
–না তার আগে-ই ছেড়ে চলে গিয়েছে।
–তাকে আবার নিজের কাছে নিয়ে আসলি না যে?
–আয়াতে’র বড় বোন’কে আবরার ভাইয়া ভালোবাসে,
এখন আমি যদি আয়াত’কে নিয়ে আসি।তাহলে ভাইয়া অনেক কষ্ট পাবে।ভাইয়া’র বিয়েটা হয়ে যাক।তারপরে আবার আমার কাছে নিয়ে চলে আসবো।
–দেখিস ছেলে,আবার দেরি করে ফেলিস না।মনের কথা গুলো তাড়াতাড়ি বলে ফেলিস।কথা কখনো ফেলে রাখতে নেই।মনে যখন যেটা আসবে বলে দিবি।কারন সময় কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না।আজ তুই আছিস।কাল তুই না-ও থাকতে পারিস।
–একদম ঠিক কথা বলেছো।এখন আমার একটু শান্তির প্রয়োজন।আমার শান্তি’টা শিকদার বাড়িতে রয়েছে।এখন আমি শিকদার বাড়ির রাস্তায় যাব।শুনো বুড়ো একটা কথা বলতে পারবে না।তুমি বলেছো।সময় কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না।মনের কথা গুলো বলে দেওয়া উচিৎ।আমার মন এখন শান্তি চাচ্ছে।থাকো আমি চলে গেলাম।আমার ভালোবাসা’র মানুষ’টা কে” দেখে শুনে রেখো।বলে-ই আব্রাহাম চলে গেল।আব্রাহামে’র যাওয়া’র দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।
–কবে যে,পোলাডার একটা ভালোবাসার মানুষ হবে।
আয়াতে’র বাসার সামনে আবরার’কে দেখে এতটুকু-ও অবাক হলো না আব্রাহাম।সে,ভালো করে-ই বুঝতে পারছে।তার করা অপমানে’র কারনে জেদ ধরে একা একা চলে এসেছে।আব্রাহাম মলিন হাসলো।কোনো কথা না বলে,আবরারের গাড়ির সাথে,হেলান দিয়ে ফোনে স্ক্রল করতে লাগলো।আব্রাহাম’কে দেখে আবরার ভ্রু কুঁচকে তাকালো।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আব্রাহাম’কে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।আব্রাহাম ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল।
–আমি আব্রাহাম!রজনী না।তাই আমাকে এভাবে এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার কিছু নেই।নিজের নজর ঠিক করো ভাইয়া।তা-না হলে,বিয়ের পরে-ও এই অভ্যাস থেকে যাবে।তখন দিনে-রাতে বউয়ে’র হাতে মার খাবে।
–তুই এখানে কেনো এসেছিস?
–তোমার বউয়ের সাথে আলাপ করতে!
–বাজে বকিস না।
–তুমি-ও বাজে বাজে প্রশ্ন করো না।
–আমি এখানে রাজনী’কে দেখতে এসেছি।আমার আসার একটা কারণ আছে।কিন্তু তুই এখানে কেনো এসেছিস?
–নিতে এসেছি।
–কি নিতে এসেছিস?
–শান্তি।
–কোথায়?
আব্রাহাম বুকের মাঝখানে দেখিয়ে দিয়ে বলল এখানে।
–এই তুই আমার সাথে মজা করছিস।
–তুমি আমার বান্ধবী লাগো।যে,আমি তোমার সাথে মজা করতে যাব।তুমি নিজে যে,কাজ করতে এসেছো।নিজের সেই কাজ করো।সাধারণ জনগণের সাথে ঝামেলা করছো কেনো?
–এখানো সাধারণ জনগণ কোথায় থেকে আসলো।
–কেনো আমাকে কি তোমার চোখে পড়ছে না।
–তুই আসলে-ই একটা পাগল আব্রাহাম।
–তুমি পাগলের ভাই।
আবরার বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।আব্রাহাম হেসে ফোনে মনযোগী হয়ে পড়লো।আবরার মশা মারছে আর রজনী’র নাম্বারে ফোন দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু রজনী’র থেকে কোনো সারা শব্দ আসছে না।
চলবে…..
(কেমন হয়েছে জানাবেন।সবাই রেসপন্স করবেন।ভুল ত্রুটিগুলো মার্জিত ভাবে ধরিয়ে দিবেন ধন্যবাদ।)
(৩০ তারিখ পর্যন্ত অনিয়মিত গল্প দিব।সবাই আমাকে ভুল বুঝবেন না।সবার রেসপন্স আশা করছি।মানসিক শান্তির বড্ড অভাব।আজকের পর্বটা বড্ড অগোছালো হয়েছে।কষ্ট করে মানিয়ে নিবেন।)