#সে_জানে
#Part_4
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
‘ এই লোকের বুকে আমি করছি! আমি তো রাতে একদম ওই পাশে শুয়েছিলাম। তাহলে আমি এখানে কি করে এলাম। উনি আবার আমাকে…. ছিঃ কি ভাবছি এসব! উনি তো রাতেই বললো আমাকে উনি বাবার কথায় বিয়ে করেছে। তার মনে আর ভালোবাসার জায়গা নেই। উনি কাছে আসার চেষ্টা করবে না অন্তত এইটুকু বুঝতে পারা যায়৷
নুপুর কি ভাবে উঠবে বুঝতে পারছে না৷ উঠলেই যদি দিবসের ঘুম ভেঙে যায়, আর নুপুরকে দেখে বুকে শুয়ে আছে তাহলে দিবস কি ভাববে ভেবে লজ্জায় মরে যাবার অবস্থা নুপুরের।
অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে নুপুর এই ভাবেই পড়ে আছে দিবসের বুকে। দিবসেরও ঘুম ভাঙছে না। নুপুরের এবার গরম লাগছে। আর দিবস কোল বালিশের মতো নুপুরকে যেভাবে চেপে ধরেছে নুপুরের দম যায় যায় অবস্থা। নুপুর দোয়া দরুদ পড়ছে যাতে দম বন্ধ হয়ে গেলে বেহেশতে চলে যেতে পারে।
কিছুক্ষণ যাবার পর নুপুর চেষ্টা করছে উঠার জন্য। কিন্তু ছাড়াতে পারছে না দিবসকে। ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে দেখে সাতটার ঘর ছুঁই ছঁই করছে। এতো বেলা করে ঘুম থেকে উঠলে সবাই কি ভাববে!
নুপুর আর কোন পথ না পেয়ে বিসমিল্লাহ বলে দিবসকে জোরে একটা চিমটি কাটলো। দিবস নুপুরকে ছেড়ে লাফ মেরে বিছানায় একবারে দাঁড়িয়ে যায়, লম্ফঝম্প করতে করতে
‘ সাপ সাপ। আমাকে বাঁচাও সাপ কামড় দিয়েছে।
দিবসের এই অবস্থা দেখে নুপুর বেয়াক্কলের মতো বসে আছে। এই লোক আসলেই পাগল। নয়তো মাথায় সমস্যা আছে। এক চিমটি খেয়ে কেউ এমন করে নাকি। নুপুর হতভম্ব হয়ে
‘ আরেহ আরেহ কি করছেন? কেউ শুনতে পেলে কি বলবে? সাপ কোথায় থেকে আসবে এই খানে!
দিবস ড্যাবড্যাব করে নুপুরের দিকে তাকিয়ে
‘ তুমি জানো না আমি একটা সাপকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলাম আর সে অনেকক্ষণ ধরে উঠার চেষ্টা করছিলো কিন্তু পারছিলো না। তারপর হঠাৎ আমায় কামড় দিয়ে ধরে।
দিবসের কথায় নুপুর লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। তারমানে দিবস এতক্ষণ ধরে জাগ্রত ছিলো। নুপুর নতজানু হয়ে
‘ আসলে…
দিবস হাই তুলতে তুলতে
‘ আসলে তুমি শুয়ে ছিলে বুঝতে পেরেছি।
নুপুরের রাগ হচ্ছে নিজের উপর এমন ভাবে এই পাশে আসার কি দরকার ছিলো তার ঘুমের মাঝে! আর দিবসেরই বা এমন করার কি আছে? মনে হচ্ছে নুপুর ঘোর কোন অন্যায় করে ফেলেছে। নুপুর মাথা নুইয়েই বসে আছে।
দিবস শয়তানি হাসি দিয়ে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। নুপুর নিজেকে হাজার খানেক বকা দিচ্ছে আর ব্যাগ থেকে নিজের কাপড় বের করছে। নুপুরের মা নুপুরকে অনেক কাপড় দিয়ে দিয়েছে। এতো কাপড়ের কি দরকার ছিলো নুপুর বুঝতে পারছে না। এখানে কি সে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় এসেছে নাকি?
ওয়াশরুম থেকে দিবস বের হতেই নুপুর সোজা হয়ে দাঁড়ায়। দিবস তোয়ালে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা মুছতে মুছতে গান করছে গুন গুন করে। নুপুর কিছু বলবে বলবে করেও বলতে পারছে না। দিবস বুঝতে পেরে
‘ কিছু বলবে?
নুপুর দিবসের একটু কাছে এসে
‘ আসলে বাড়িতে মাকে জড়িয়ে ধরে শুতাম তো তাই হয়তো ঘুমের মাঝে আ……
নুপুরের কথা শেষ হবার আগেই দিবস হো হো করে হাসি শুরু করে দেয়। নুপুর এবার লজ্জায় কেঁদে দেবে অবস্থা, সাথে রাগও হচ্ছে ভীষণ। রাগে গজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে যায়। এই লোকের সমস্যা কি নুপুর বুঝতে পারে না। এতো হাসির কি আছে? এতো হাসতে কেন হবে সব কথায়? ও কি কোন জোক বলে নাকি যে হাসবে সব কথায়! আর কথা-ই বলবে না ভেবে নুপুর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোজা রুমের বাইরে বেড়িয়ে যায়।
নুপুর ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে দিবসের বাবা বসে বসে পেপার দেখছে। তার খালা শাশুড়ি আর চাচি শাশুড়ি রান্না ঘরে কাজ করছে। নুপুর আস্তে ধীরে রান্নাঘরে যেতেই তার চাচি শাশুড়ি
‘ আরেহ মা তুমি কেন রান্না ঘরে এসেছো? তুমি আজকে তোমার রুমেই থাকো। কিছুক্ষণ পরই আরো লোকজন আসবে তোমায় দেখতে সাজুগুজু করে বসে থাকো।
নুপুর মুচকি হেসে
‘ চাচিমা আমি আপনাদের একটু সাহায্য করি ভালো লাগবে আমার।
নুপুরের খালা শাশুড়ি
‘ সাহায্যের জন্য সারাজীবনই পরে আছে। আজকে তোমার কিছু করতে হবে না। তুমি পারলে তোমার শশুড় আর বড় আপাকে চা টা দিয়ে আসো। বড় আপা কাল থেকে রুমেই আছে, বের হয়নি একবারের জন্যও। আর এই বাড়িতে এমনিতেই সবাই দেরি করে ঘুম থেকে উঠে।
নুপুর একটু ভয় পাচ্ছে তার শাশুড়ির কাছে যেতে। গতকাল তিনি ভীষণ রেগে ছিলো। আজকে আবার নুপুরকে দেখে রেগে না যায়! নুপুর জীবন চৌধুরীকে চা দিতেই জীবন চৌধুরী
‘ কেমন লাগছে মা এই খানে?
নুপুর মলিন হেসে
‘ ভালো বাবা।
জীবন চৌধুরী চায়ে চুমুক দিয়ে
‘ আস্তে আস্তে ভালো লাগবে। একটু পর থেকেই মেহমান আসতে শুরু করবে। যা তোর শাশুড়িকে চা দিয়ে আয়। আর শোন তোকে কিছু বললে চুপ করে থাকিস , ওর মেজাজ এখন অনেক খারাপ।
নুপুর মাথা উপরনিচ করে
‘ জ্বী বাবা।
চা নিয়ে রুমে যেতেই দেখে খালেদা আক্তার হেলান দিয়ে শুয়ে আছে খাটে। নুপুর আস্তে করে দরজায় টোকা দিয়ে ভিতরে আসে। চায়ের কাপ খালেদা আক্তারের সামনে এগিয়ে দিয়ে
‘ মা আপনার চা।
খালেদা আক্তার নুপুরের দিকে একবার তাকিয়ে
‘ আমি তোমার মা নই।
নুপুর মাথা নিচু করে
‘ আপনার চা।
খালেদা আক্তার চা হাতে নিতেই নুপুর বের হয়ে যাবে এমন সময় তিনি বললেন
‘ এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছো ঠিকি কিন্তু এই বাড়িতে বউয়ের জায়গা তুমি কখনো পাবে না। না আমার থেকে না আমার ছেলের কাছ থেকে। এমন ডিভোর্সী মেয়ে আমার ঘরের বউ হতে পারেনা।
নুপুর কথা গুলো শুনে পিছনে না ফিরেই দরজা আটকে দিয়ে বের হয়ে দাঁড়ায়। কান্না তার গলায় দলা পাকিয়ে গিয়েছে। নুপুর চোখের পানি আটকানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু বার বার চোখ থেকে পানি বের হয়ে গালে চলে আসছে। আর সে বার বার সেই পানি দু’হাত দিয়ে মোছার চেষ্টা করছে।
নুপুর জানে না তাকে আর কতো ডিভোর্সের কথা শুনানো হবে! ডিভোর্সী বলে আখ্যা দিবে তাকে। আর কতো তাকে এর জন্য অপমান সহ্য করতে হবে। এই একটা মানুষ তার পুরো জীবনটাই নষ্ট করে দিয়ে গেলো। রাদিলকে সে সারাজীবনে কখনোই মাফ করতে পারবে না। চোখ মুছে এদিক সেদিক তাকিয়ে সামনে অগ্রসর হয় নুপুর।
রুমে গিয়ে দেখে দিবস ফোন টিপছে। নুপুর কথা না বাড়িয়ে নিজের মতো বসে আছে। দিবস বার বার আড়চোখে দেখছে নুপুর কি করছে।
দুপুরে নুপুরের বাড়ি থেকে সবাই এসেছে। নুপুর তার মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলছে। নুপুরের মা নুপুরকে বুঝাচ্ছে এইখানে ভালো মতো চলতে। দিবস এসে সালাম দিয়ে যায় নুপুরের ফেমিলির সবাইকে।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই বসে গল্প করছিলো। দিবস তার কিছু বন্ধুদেরও দাওয়াত দিয়েছে। ওরা আরেক সাইডে বসে গল্প করছে। নুপুর ওদের সবার জন্য পায়েস নিয়ে যায়।
পায়েস দিয়ে আসার সময় নুপুর একজন আরেকজনকে বলতে শোনে,
‘ আরেহ জানিস না আগেও আরেকটা বিয়ে হয়ছে। ডিভোর্সী। কিন্তু দেখ তাও কত সুন্দর ফিগার। ইউজ মাল হলেও দেখতে মাশাআল্লাহ।
নুপুরের চোখ বেয়ে পানি ফ্লোরে গড়িয়ে পরে। ফ্লোর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চলে যেতে নিলেই দেখে সামনে দিবস। তার চোখে আগুনের লাভা। দিবস নুপুরের দিকে তাকিয়ে হাত ধরে নুপুরকে সাইড করে। নুপুর তাকিয়ে আছে দিবসের দিকে। দিবস ওদের মাঝে গিয়ে, যে এসব বলছিলো তার কলারে ধরে মুখে কয়েকটা ঘুসি মারে। তারপর সাইডে থাকা ফুলের টব নিয়ে সব শক্তি দিয়ে ওই ছেলের শরীরে আঘাত করে
‘ তোর সাহস কি করে হলো আমার স্ত্রীকে এসব বলার…
দিবসের সব বন্ধুও তাকে আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আটকিয়ে রাখতে পারছে না……….
চলবে…….
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।