সোহাগী পর্ব -০৯

#সোহাগী
#পর্ব :৯
Lutful Mehijabin

— আপনি যা ভালো মনে করেন তাই করবেন। আজ প্রিয়ার পরীক্ষার সাজেশন দিয়েছে তাই ওর সঙ্গে সাক্ষাৎ করাটা প্রয়োজন। যদি একটু ডেকে দিতেন।

জুবায়ের শেষোক্ত কথাটা অপছন্দ করেলেন আজিজ। যার দরুন তিনি তৎক্ষণাৎ সরু দৃষ্টিতে জুবায়েরের মুখে দৃষ্টিপাত ফেললেন। আজিজের চাহনি কে এক প্রকার উপেক্ষা করলো জুবায়ের। এই সরু দৃষ্টির নিশ্চয়ই একটা সারমর্ম রয়েছে। এখন এই মুহূর্তে প্রিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বোধহয় পাপ! এইটুকু সারমর্ম বুঝতে অসুবিধা হলো না জুবায়ের। কিন্তু তবুও সে নিজেকে নির্ভীক রাখার চেষ্টা করলো। ভয় পেলে কখনোই নিজের গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব নয় তা ভালো করেই জানে জুবায়ের।

— প্রিয়ার সাথে দেখা করতে পারবেন না মাস্টার! মেয়েটার শরীর খারাপ। তাছাড়া একটা কথা আপনাকে বলবো বলবো করে বলা হচ্ছে না। আমার ভাগ্নে আমিরুলের বিয়ে দিন দুয়েক পর। বউ মরেছে ছয় মাস ও হয় নি হঠাৎ করে ছেলেটার মাথায় বিয়ের ভূত চাপলো। অবশ্য ওর ছেলের একজন মায়ের প্রয়োজন তাই এতো তাড়া।

কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আজিজ। লোকটার কথার বলার ভঙ্গি মোটেও সুবিধা জনক নয়। একদম চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলছেন। জুবায়ের মাথা নিচু করে কথাগুলো শ্রবণ করলো। আজিজ স্বল্প বিরতি নিয়ে ফির বলে উঠেন,

— শুনেন মাস্টার এই কয়েক দিন প্রিয়াকে পড়াতে হবে না। আপনি বরং বিরতি নিন। আর হ্যাঁ আপনার নিমন্ত্রণ রইলো। আশা করি ফিরেয়ে দিবেন না আমাকে। দু দিন পরি বিয়ে। বিয়ের দিন সাত সকালে উপস্থিত হবেন।

আজিজের কথা শুনে আঁতকে উঠে জুবায়ের। দীর্ঘ দুই দিন প্রিয়ার দেখা না পেলে সে কী করে থাকবে! তার তো নিশ্বাস নিতে কষ্ট হবে। আজই হৃদয়ের যে ভয়ানক অবস্থা হয়েছে, তাহলে এতোদিন কী করে সে প্রতীক্ষা করবে? বুকের ভেতর যন্ত্রণা চেপে আজিজের সাথে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু লোকটার সাথে স্বাভাবিক মনে কথা বলতে ব্যর্থ হচ্ছে সে। হাজার হোক গ্রামের এমন প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তি বলে কথা! যতোই চেষ্টা করুক না কেন! কথা বলার সময় মনের গহীনে শঙ্কা যে থেকেই যাই। ভয় হয়, সে যদি তাকে ভুল বুঝে উত্তেজিত হয়ে উঠে। তাহলে তো পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হবে এর কোন সন্দেহ নেই!

— খুবই গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন ছিলো। এখন বুঝিয়ে না দিলে ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু যেহেতু আপনি,,,

জুবায়েরের কথা শেষ করতে দিলেন না আজিজ। মেয়ে যদি ফার্স্ট ডিভিশন না পায় তাহলে তার মান সম্মান ধুলোয় মিশবে! তাই বাধ্য হয়ে আজিজ বললেন,

— ঠিক আছে এতো যখন বলছো তাহলে সাজেশন দিয়েই যাও। তবে একটা কথা আগেই বলে রাখি।

মুহূর্তেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো জুবায়ের। অবশেষে আজিজ রাজি হলেন! একরাশ আনন্দের জোয়ার বয়ে গেলো জুবায়েরের অন্তরালে। প্রিয়া কে দেখার বাসনা তবে পূরণ হতে চললো। আজ রাতে একটু শান্তির ঘুম দিবে। তবে রহস্য যেন কোথাও রয়ে গেলো। শুধু মাত্র বিয়ে ঠিক করেছে বলে কি, প্রিয়া সেদিন ওমন অদ্ভুত আচরণ করলো! শুধু মাত্র এই কারনে কী তবে সে সেদিন বলেছিলো এরা তাকে জে’ন্ত মে’রে ফেলবে! নাকি অন্য কোন দুর্বোধ্য রয়েছে? পরক্ষণে জুবায়ের ভাবলো এসব আজেবাজে চিন্তা করলে চলবে না। বাচ্চা মেয়ে, তাই সেদিন আবেগের বসে নানান কথা বলে ফেলেছে। কোন আদর্শ পরিবারের লোক কি তাদের কণ্যা সন্তান কে জীবন্ত মে’রে ফেলতে পারে! অবশ্যই না, আজিজ ভুঁইয়ার মতো একজন বিচক্ষণ মানুষের বিরুদ্ধে কাউকে জীবন্ত মে’রে ফেলের অভিযোগ গ্রাহ্য নয়। জুবায়ের সকল প্রকার উদ্বেগ ঝেড়ে ফেলে আগ্রহ দৃষ্টিতে আজিজের দিকে তাকলো। আজিজ খানিকটা সময় পর বলেন,

— মেয়েটা বেশ অসুস্থ। দুর্বল হয়ে পড়েছে তাই বেশি সময় নষ্ট করবেন না। আমি ডেকে দিচ্ছি, অপেক্ষা করুন।

— ঠিক আছে।

জুবায়েরের আনন্দের সাথে উত্তর দিলো। তৎক্ষণাৎ আজিজ তার আয়েশের গদি থেকে উঠে দাঁড়ালেন।অতঃপর কয়েক পা এগিয়ে নিকটবর্তী দেয়ালে আষ্টেপিষ্টে বাঁধানো টেলিফোনে কাছে এলেন। মুহূর্তেই জুবায়েরের দিকে এক পলক তাকান। অধির প্রতীক্ষায় যে ছেলেটি স্বল্প আতঙ্ক নিয়ে বসে রয়েছে তা তাকে দেখে তা বলা মুশকিল! আজিজ ডান হাতের তজর্নী আঙ্গুলের স্পর্শে কয়েকটা সংখ্যা স্পর্শ করলেন অতঃপর অন্য হাত দিয়ে টেলিফোন তুলে কানে নিলেন।

— শমিত, নূরী কে বল প্রিয়াকে নিয়ে এক্ষুনি দালান ঘরে আসতে।

ক্রোধ মাখা কন্ঠে কথাগুলো বলেন আজিজ। দীর্ঘ বিশ বছর আগে থেকেই ভুঁইয়া বাড়িতে টেলিফোনের ব্যবস্থা ছিলো। ১৯৮৯ সনে বাংলাদেশে প্রথম মোবাইল ফোন আসে। তখন কয়েকশ ব্যবহারকারী নিয়ে পথ চলা শুরু হলেও বর্তমানে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হয়তো ভুঁইয়া বাড়িতে প্রায় প্রতিটি সদস্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, গ্রামের খুব কম মানুষই ব্যক্তিগত ভাবে মোবাইল ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছে। অবশ্য জুবায়েরও মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে! দীর্ঘ ছয় বছর পূর্বের ঘটনা। ১৯৯৭ সনে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ন কালীন এক দারোগার ছেলেকে পড়াতো জুবায়ের। যেখান থেকে মোটা অংকের অর্থ আয় করতো সে। তখন তার বেশ কয়েক জন বন্ধু মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে আরম্ভ করে। নতুনত্ব বস্তুর প্রতি মানুষের আগ্রহের শেষ নেই! জুবায়ের ও নিজের আগ্রহ দমন করে রাখতে পারে নি। অতঃপর মাস তিনেকের পারিশ্রমিক সঞ্চয় করে। সেই সময়ে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না। কিন্তু সে ওসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। সে ভেবেছিলো কয়েক দিন বাদে চাকরি পাবে। তাই নিশ্চিন্তে সখের বসে ব্যয় বাহুল্য হওয়া সত্ত্বেও মোবাইল কিনেছিল সে। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৯৮ এর মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় তার সাজানো গোছানো জীবনটা তছনছ করে দেয়। পায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনটাও ভেঙে চুরমার হয়ে যায়! সবে মাত্র আলো প্রবেশ কৃত জীবনটা নিমিষেই আঁধারে ডুব দেয়। মাস চারেক হাসপাতালে ভর্তি থাকে জুবায়ের। তাকে বাঁচতে তার বাবার নিজের জমানো সব অর্থ সহ বাড়ির ভিটাটা পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয়। সৃষ্টিকর্তার কৃপাতে মৃ’ত্যুর পথ থেকে বেঁ’ চে ফিরে ছেলেটা। কিন্তু সুস্থ হয়ে যখন বাড়ি ফিরে তখন সৃষ্টিকর্তা তাকে জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ শুনায়। তার পিতার মৃত্যু সংবাদ! এর বছর খানিক পর সকল বেদনা ভুলে চাকরির জন্য আবেদন করে সে। কিন্তু পা না থাকার জন্য তার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। একজন সাফল্য প্রকৌশলী হয়ে বিদেশে যাওয়া তো দূরে থাক দেশেও তাকে চাকরির নিম্নপদ দেওয়া হয়। তাই গ্রামের এসে শিক্ষকতা শুরু করে।

হঠাৎ কথাগুলো স্মরণ হতেই জুবায়েরের বুকে মোচড় দিয়ে উঠে! ইশ, তার এই অক্ষমতা কখনো আজিজ মেনে নিবেন না। পরিশেষে কী তাকে হেরে যেতে হবে পৃথিবীর কাছে? এসব চিন্তায় যখন মশগুল সে ঠিক তার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে উপস্থিত হয় নূরী এবং প্রিয়া। জুবায়ের প্রথমে খেয়াল না করলেও নূরীর কন্ঠস্বর পেয়ে বাস্তবে ফিরে আসে সে।

— সাহেব, নিয়া আইজি মাইরে,,,

আজিজ ভুঁইয়া তৎক্ষণাৎ জুবায়েরের উদ্দেশ্যে বলে,

— জলদি সাজেশন দেন মাস্টার। মেয়েটা অসুস্থ।

প্রিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত ফেলতেই জুবায়েরের বুকটা কেঁপে ওঠে। এই এক দিনের ব্যবধানে মেয়েটার কি হাল হয়েছে! শুভ্র রয়ের গায়ের রং ম্লান হয়ে গিয়েছে। চোখের নিচটা কালো বর্ণ হয়ে ফুলে উঠেছে। মুখের কয়েকটা জায়গায় স্বল্প আয়তনে কেটে গিয়েছে। তার চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই উষ্ণ পরিবেশ মেয়েটার সম্পূর্ণ শরীর পুরু চাদর দিয়ে ঘেরা! হাঁটার বল পাচ্ছি না বোধহয়, কারণ নূরী শক্ত করে মেয়েটা কে ধরে রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে অপ্রত্যাশিত জুবায়েরের নিকট। সে বাকরুদ্ধ! তাহলে কী বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ভুঁইয়া তাকে মে’রেছে?

— জলদি করেন মাস্টার।

আজিজের কথা শুনে আঁতকে উঠলো জুবায়ের। দ্রুত পদে স্তম্ভিত চাহনিতে প্রিয়ার সান্নিকটে এলো। পকেটে থেকে কয়েক টা কাগজ বের করে প্রিয়ার হাতে দিয়ে বলে উঠলো,

— এগুলো এই তিন দিনে পড়ে রাখবে কেমন?

জুবায়েরের স্পষ্ট কাঁপা কন্ঠস্বর! আজিজ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে। প্রিয়ার মলিন দৃষ্টি। মেয়েটার অসহায় চাহনি বলে দিচ্ছে মেয়েটা ভালো নেই! প্রিয়া এক দৃষ্টিতে জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয় হ্যাঁ বোধক উত্তর দিলো।

নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করলো জুবায়ের। কি করবে সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। মেয়েটা এমন অবস্থায় সহ্য করা তার পক্ষে অসম্ভব! আকস্মিক আহত কন্ঠে সে বলে উঠলো,

— সবকিছু ঠিক আছে তো?

প্রিয়া কোন প্রত্যুত্তর দিলো না। মাথা কাত করে টলমল চোখে তাকিয়ে রইলো জুবায়ের চোখে। মেয়েটার হাত কাঁপছে! যার প্রমাণ সরুপ তার হাতে থাকা কাগজ গুলোও থরথর করে নড়ছে। ঠোঁট কামড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো জুবায়ের। আজিজের দিকে একপলক তাকালো। লোকটা তাদের দিকে অতি মনোযোগ সহকারে তীক্ষ্ণ মুখে তাকিয়ে রয়েছে।

— অসুস্থ হলে কী করে? আর এই গরমে মোটা চাদর পরে রয়েছো কেন?

জুবায়েরে কথাগুলো বলে চাতক পাখির ন্যায় প্রিয়ার কন্ঠস্বর শুনতে চাইলো। তার প্রশ্ন করার একমাত্র কারণ হলো অনন্ত একবার মেয়েটার কন্ঠস্বর শ্রবণ করা। কিন্তু না, এবারো মেয়েটার মুখে কোন কথা নেই! বরং উত্তরে নূরী বললো,

— জ্বর আইছো।

জুবায়েরের তাও প্রিয়ার মুখে দৃষ্টি আবদ্ধ রাখলো মেয়েটার কন্ঠস্বর শোনার লোভে। কিন্তু মেয়েটা কিছু বলার বদলে হেসে ফেললো। অট্টহাসিট নয় তবে সেই ভয়ঙ্কর মুচকি হাসি! যেই হাসির পেছনে রয়েছে একরাশ রহস্য। মেয়েটা কেন এভাবে হাসে? সেদিনের মতো আজও ভয় পেলো জুবায়ের! প্রিয়া যেন সত্যিই কথা অনুযায়ী এক মৃ’ত ব্যক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছে! মুহূর্তেই শুকনো ঢোক গিললো জুবায়ের। কিন্তু সে কিছু বলার পূর্বে আজিজ ভুঁইয়া এসে তার সামনে দাঁড়ালেন। তড়িঘড়ি উত্তেজিত হয়ে বললেন,

— হয়েছে? এখন প্রিয়াকে নিজে যাও নূরী।

নূরী আর এক অপেক্ষা করলেন না। চোখের পলকে প্রিয়াকে নিয়ে চলে গেলেন। শূন্য করে ফেলে দিয়ে গেলো জুবায়ের কে।

____________

রাতের আঁধারে ঢেকে গিয়েছে চারপাশে। দূর প্রান্ত থেকে শেয়ালের ডাক বলে দিচ্ছে রাত যেন ক্রমশ গভীর হচ্ছে। এই সময়ে নিজের ঘর ফেলে সোহানার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আমেনা। আর বাতাসের সঙ্গে তার গভীর দীর্ঘশ্বাস মিলে যাচ্ছে বারংবার! আমেনার যেন চিন্তার অন্ত নেই। সেই দুপুর থেকে কিছু খাই নি সোহাগী। আমেনা হাজার চেষ্টা করেও সোহাগী কে বিয়েতে রাজি করতে পারে নি। মেয়েটা জেদ ধরে বসছে বাবা না এলে কিছুতে বিয়ে করবে না। শুধু তাই নয় এক দিনে হাসি খুশি প্রাণোচ্ছল মেয়েটা শক্ত কাঠে পরিনত হয়েছে। দু দিন পূর্বের সেই শিশু সুলভ আচরণে যেন কোন এক আবরণে পরু ঢেকে পরেছে। শুধু তাই নয় মেয়েটা মধ্যে ব্যক্তিত্ব হাজির হয়েছে! আমিরুল দের কে মোটেও পছন্দ হয় নি আমনার। বিশেষ করে আসমার শর্ত তার গায়ে লেগেছে। সে চাই না তার নাতি বন্ধ্যা নারী হয়ে পার করুক। তাই মেয়েকে বোঝাতে এসেছেন তিনি।

— এতো রাগস কেন রে? মাইয়াটি তো তোর মাইয়া! একদম সতালো মার মতো ব্যবহার করুস কেন সোহার হাতে?

চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো সোহানা। কিন্তু হঠাৎ আমেনার বক্তব্য শুনে চোখ জোড়া উন্মুক্ত করলো। আমেনার কথা যে তার পছন্দ হয়নি তা চোখের ভাষার প্রকাশ করেলেন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— আমি ওর আপন মা হইলাম কবে! এতো আদর দিয়া বড়ো করলাম এখন কও আমি ওর সৎ মা? কিন্তু আফসোস তোমাগো জন্যে ওর সৎ মা কি মাইয়াডারে বুঝাইতে পারলাম না।

আমেনা জিহ্বা দ্বারা একবার ঠোঁট জোড়া ভিজেয়ে ফির বলেন,

— তুই যদি ওর মা হইতিছ তাইলে ওই ছ্যামরার লগে ওর বিয়া ঠিক করতি না। পঞ্চাশ হাজার টাহার জন্যি ওরে বিক্রি করতে পারতি না। কষ্ট হইতো তোর।

আমেনার কথাগুলো শুনে কদাচিৎ ক্ষেপে গেলেন সোহানা। ক্রোধে ফুসতে ফুসতে বললেন,

— কী কইলা আম্মা? দেহো, বেশি বুঝবা না। আমি যা করতেছি তা সোহাগীর ভালোর জন্যই করতেছি। এতো বড়ো লোক ছাওয়াল তুমি গ্রামে আর পাবা না। তোমার নাতিন দেইখো রাজরানী হইয়া থাকবো ওই বাড়িতে। মেলা সুখে থাকবো।

সোহানার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আমেনা। অতঃপর আহত কন্ঠে বলে উঠেন,

— কোন সুখের কথা কইতেছিস তুই? মাইয়াডার জীবনের সবচেয়ে বড়ো সুখ কাইড়া নিয়ে কোন সুখের কথা কস! মাইয়া গো জীবনের সবচেয়ে বড়ো সুখ হইতেছে নিজের পেটের বাচ্চা। বাচ্চা ছাড়া মাইয়া গো জীবন ভরাট হয় না। সুখ তো দূরে থাক ‘মা’ ডাক না না শুনলে শান্তি ও থাকে জীবনে। মাইয়ার আরেক রুপ হইতেছে মা। আর তুই ওর কাছ থাইকা এই সুখ কাইড়া নিলি?

(চলবে)
[। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here