#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_41
ঘুম থেকে উঠে ফারহান কে না দেখতে পেয়ে ফারাবির মন খারাপ হলো।
হয়তো নিচে গেছে ভেবে আড়মোড়া ভেঙে নিচে চলে আসলো।
কিন্তু ফারহান কে দেখতে পেল না। মেইন ডোর টা বাইরে থেকে লক করা। তার মানে ওনি বাইরে গেছেন।
ফারাবি মুখ টা ছোট করে নিয়ে রুমে চলে আসলো। কাল রাতে ফারহান কে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিল।
আর সকালে উঠে দেখলো মানুষটা পাশে নেই। গেল টা কোথায় ?
ফারাবি ফোন লাগালো , কিন্তু সুইচ অফ বলছে।
নিজের প্রতি খুব রাগ হলো। কেন এতো ঘুমায় ওহ ?
পাশ থেকে বর উঠে চলে গেল আর বুঝতে ও পারলো না।
ফোন টা ডিবাইনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে রুমে চলে আসলো।
ভেতর থেকে কেমন ক্লান্ত লাগছে। ফারহান কে ফোনে না পেয়ে ভয় ও লাগছে। মানুষ টা এই অসময়ে গেল ই বা কোথায় ?
ফারাবি আপনমনে এসব ভাবতে লাগলো। আর ঘরময় পায়চারি করতে লাগলো।
বিজ্ঞদের মতো ভাবনা বাদ দিয়ে বেডে উবু হয়ে শুয়ে পরলো।
গলা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। তবু ও ইচ্ছে হচ্ছে না পানি টা ঢেলে খাওয়ার।
তৃষ্ণা টা বেশি ই পেয়েছে। তাই অলসতা ঝেরে ফারাবি উঠে বসলো।
সাইট টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিতে যেতেই একটা চিরকুট চোখে পরলো।
ফারাবির ভ্রু যুগলো সামান্য কুঞ্চিত হয়ে গেল। ফারহানের কথা মাথায় আসতেই দ্রুত চিরকুট টা নিয়ে নিলো।
চিরকুট টা খুলে পড়তে লাগলো।
” আমার মিষ্টি প্রেয়সী । অফিসে আর্জেন্ট একটা মিটিং পরে গেছে। তাই আমাকে যেতে হলো। তোর ঘুমন্ত মুখ টা দেখে আমার ডাকতে ইচ্ছে হয় নি। একদম পিচ্ছি দের মতো ঠোঁট গোল করে ঘুমিয়েছিলি। আমার অন্তকর্নে যেন ঢুকে গেছিস। চাইছিলাম আরেকটু সময় বুকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সময় হলো না। না বলে যাওয়ার জন্য স্যরি জান। আর শোন আমি তোর গোল হয়ে যাওয়া ঠোঁটে চুমু খেয়ে এসেছি। ফিরতে একটু লেট হবে। রাতে ফিরে এসে তোর থেকে চুমু খাবো কিন্তু । খাবার সব ফ্রিজ করা আছে খেয়ে নিস। নিজের যত্ন রাখিস। ”
লাইন গুলো পড়ে মুচকি হাসলো ফারাবি। পরক্ষণেই মন খারাপ হয়ে গেল। রাতের আগে ফারহানের দেখা পাবে না ভাবতেই বুক টা ছ্যাঁৎ করে উঠছে।
*
রক্ত মাখা শার্ট টা মুঠো বন্দি করে বসে আছে ফারহান। কপালে গাঢ় ক্ষতর দাগ। শরীরে নানান জায়গায় ও আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট। তবে মুখে তাচ্ছিল্যর হাসি।
রাফি বার বার ফারহানের কাছে আসছে। ফারহান হাত দিয়ে ইশারা করলো সে ঠিক আছে। তবু ও রাফি মানছে না। কপালের কোন থেকে অনড়গল রক্ত ঝরছে। আর সে বলছে সে ঠিক আছে।
রায়হান ফাস্ট এইডস বক্স হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ফারহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। রিফাত মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ আরে আমি ঠিক আছি। তোরা এমন করছিস যেন আমি মরে যাবো। আম ওকে ইয়ার।
_ তুই শালা কোনো দিন আমার কথা শুনবি না। ভাগ্যিস রায়হান সবাই কে খবর দিয়েছিলো।
না হলে কি হতো বুঝতে পারছিস?
ফারহান তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে সামনে তাকালো। রিক কে বেঁধে রাখা হয়েছে। রাগে কটমট করছে ওহ। ফারহানের চোখ মুহুর্তেই রক্ত বর্ন ধারন করলো। চোখ খিচে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
রিকের দিকে একটু একটু করে আগাতে লাগলো। রিফাত দ্রুত এসে ফারহান কে ধরে ফেললো।
_ রিফাত ছাড়।
_ তুই এখন ইনজুরিতে আছিস। এতো হাইপার হোস না প্লিজ।
_ ছাড় ইয়ার। হাইপার হবো না আমি।
_ না তুই এখন ওর কাছে যাবি না। ঐ জানোয়ার কে আইন ই শাস্তি দিবে।
_ ওকে ফাইন । আমি কিচ্ছু করছি না।
_ তুই
_ কিচ্ছু হবে না। হাত পা খোলা যখন ছিলো তখনি তো কিছু করতে পারলো না।
চিন্তা করিস না আমাকে জানে মারার ক্ষমতা ওর নেই।
রায়হান এগিয়ে এসে ফারহানের দিকে তাকালো। ফারহান ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে রাখলো।
রায়হান মুখ টা মেঘবরন করে নিলো।
_ তুই ওহহ ?
_ ভাই। আপনার অবস্থা টা দেখেন । হারামি তে সুযোগ পেয়ে কি হাল করেছে।
_ কিন্তু একটা কথা বল রায়হান রিকের সাথে ভাই পেরে উঠলো না ?
ফারহান দারুন হাসিতে হাসলো। রিফাত ভাবুক হয়ে ভাবতে লাগলো। ফারহান মোহনীয় হেসে বলল
_ ফুটেজ এর লাস্ট কপি টা ওর হাতেই ছিলো। আমি বারাবারি করলে তিনটে মেয়ের জীবন শেষ হয়ে যেত।
এই টুকু রক্ত ঝরেছে তাতে সমস্যা নেই।
_ কি হয়েছিলো বল তো ?
ফারহান মৃদু ছন্দে হাসতে লাগলো। রিকের দিকে তাকিয়ে কিছু ক্ষন আগের ঘটনা ভাবতে লাগলো।
অতীত
” বেশির ভাগ সময় বাসায় থাকাতে কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। আজ ভোর বেলা একটা আর্জেন্ট মিটিং চলে আসে। তরিঘরি করে মিটিং এ আসে। মিটিং এর অর্ধেক কমপ্লিট হতেই খবর আসে রিকের কাছে এক্সট্রা যে ফুটেজ ছিলো তা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ফারহান তৃপ্তির হাসি হাসলে ও সে হাসি ম্লান হয়ে উঠে।
যখন শুনতে পায় রিকের কাছে লাস্ট একটা ফুটেজ আছে। রিক সমস্ত কিছু বুঝতে পেরে গেছে। আর এটা ও জানে যে ওর জন্য জেল হাজির রয়েছে। তবে শেষ বোম টা না ফাটিয়ে তো ওহ জেলে যাবে না।
একজন কে হায়ার করে নেয় রিক। যার মাধ্যমে সমস্ত টা ভাইরাল করতে পারবে।
ফারহান তখনি রিফাত কে মিটিং কমপ্লিট করতে বলে চলে আছে।
রিকের সাথে আরো দুটো ছেলে ও ছিলো। যাদের হাতে ফুটেজ টা ছিলো। রিক ফারহান কি দেখে ভরকে যায়। কিন্তু ওর পাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে পৈশাচিক হাসি তে মেতে উঠে।
ফারহান ওর দিকে তেড়ে গেলেই ওহ ওর লোকজন কে বলে ফুটেজ টা ভাইরাল করতে।
ফারহান বাঁধা দিতে গেলেই রিক মারতে থাকে ওকে। রিক ওর লোকজন কে বলে ওর গায়ে যদি ফারহান একটা আঘাত করে তাহলে তখনি যেন ফুটেজ সাবমিট করে দেয়।
ফারহানের তখন কিছু করার ছিলো না। মেয়ে গুলোর ভাবনাই ছিলো তখন। রিক সেই সুযোগেই বেঘোরে ফারহান কে মারতে থাকে। ফারহান যথা সম্ভব নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষ ওহহ , ব্যথা তো লাগবেই।
আর্তনাদ করে উঠলেই রিক পৈশাচিক হাসে। নিজের এতো দিনের রাগ মেটাতে থাকে। ফারহান সুযোগ খুঁজতে থাকে। কোনো ভাবে লোকগুলোর থেকে ফুটেজ টা নিতে পারলেই হতো।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান সক্ষম হয় ওদের কাছ থেকে ফুটেজ নিতে। আঘাত বেশি হওয়াতে তিনজনের সাথে ঠিক ঠাক পেরে উঠে না।
রিক হকি স্টিক দিয়ে ফারহানের কপালে আঘাত করে। আরেকটা আঘাত করার আগেই রিফাত এসে ধরে ফেলে। রায়াহান রাফি আর রিফাত মিলে সবাই কে মারে।
ফারহান নিজেকে সামলে নিয়ে রিক কে বেঘোরে মারতে থাকে। এতোটাই মারে যে রিকের জ্ঞান হারিয়ে যায়। রিফাত দু হাতে ফারহান কে আটকায়।
তারপর নিয়ে আসে ওদের গোডাউনে। সমস্ত ফুটেজ নষ্ট করে দেওয়া হয়। ফারহান তপ্ত শ্বাস ফেলে।
বর্তমান
_ তুই আমাকে জানাতে পারতি। আমি তোর সাথে আসলে এতটা ঝামেলা হতো না।
_ মিটিং টা খুব প্রয়োজন ছিলো। না হলে কথার খেলাপ হয়ে যেত।
রিফাত তপ্ত শ্বাস ফেলল। এই ছেলেটা এমন কেন ? অন্যের জন্য নিজের জান টা বাজি রেখেছে।
অথচ প্রিয় মানুষ টার কথা ভাবলো না। যদি ওর কিছু হয়ে যেত তাহলে সবার কি হতো ?
*
রাত সাড়ে আটটা বেজে গেছে। ফারাবি ডাইনিং এ বসে আছে। সারা দিন এটা সেটা করে কাটিয়েছে। একবার ছাঁদে ও গিয়েছিলো। তবে পাইন গাছের সাড়ি দেখে ভয় পেয়ে চলে এসেছে।
বাগানে যাওয়ার ও উপায় নেই। কারন ফারহান লক করে রেখে গেছে । ফোন করেছিলো বলেছে একটু পর ই চলে আসবে।
অথচ দুই ঘন্টা পেরিয়ে গেল আসলো না। ফারাবির একটু চিন্তা ও হচ্ছে। দেখতে দেখতে নয় টা বেজে গেল। সাধারনত আট টায় ডিনার সারে ওহহ।
একটু ক্ষিদে পেলে ও গলা দিয়ে খাবার নামছে না। তাই খাবার টা রেখে দিলো। দেখতে দেখতে সাড়ে নয়টা বেজে গেল। বাসার মেইন ডোর খোলার আওয়াজে ফারাবির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
ছুটে গিয়ে মেইন ডোরের কাছে আসলো। হা হয়ে তাকিয়ে রইলো ফারাবি। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতে লাগলো। ফারহানের কপালে ব্যান্ডেজ দেখে ফারাবির যেন আকাশ ভেঙে পরলো। ফারহানের দিকে আগাতে গিয়ে ও পারলো না । শরীর কাঁপতে লাগলো। ফারহান ধীর কন্ঠে ফারাবি বলে ডাকতেই ফারাবির শরীর নিস্তেজ হয়ে পরলো। ফারহান ছুটে এসে ধরলো ওকে। একটুর জন্য মাথায় ব্যথা পায় নি। ফারহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ফারাবি কে কোলে তুলে নিলো।
শরীরে চাপ পরাতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। তবে ফারহান সে দিকে পাত্তা দিলো না।
সফেদ বেডশিট টা তে মলিন মুখে বসে আছে ফারহান। ফারাবি জ্ঞান শূন্য হয়ে আছে। মেয়েটার জ্ঞান ফিরলে কি করে বোঝাবে ওকে ?
না জানি কি করে বসবে। মলিন মুখে উঠে গিয়ে একটু স্যুপ বানিয়ে নিলো।
অর্ধেক টা খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিলো। ধীর হাতে ফারাবির শুকিয়ে যাওয়া মুখ টাকে স্পর্শ করলো।
ফারাবির মুখের কাছে মুখ নিতেই ফারাবির গরম নিশ্বাস ফারহানের মুখে আঁচড়ে পরলো।
প্রশস্ত হাসলো ফারহান। মেয়েটার কপালে সময় নিয়ে অধর ছোঁয়ালো।
ঘন্টা খানেক পর ফারাবির জ্ঞান ফিরলো। চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ করেই লাফিয়ে উঠলো। ফারহান কে খুঁজতে লাগলো। দু চোখ বেয়ে অশ্রুর ধারা নেমে যাচ্ছে।
পাগলের মতো হাউ মাউ করতে লাগলো। ফারহান কিচেনে গিয়েছিলো স্যুপ টা কে গরম করতে।
ফারাবির চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসলো। ফারহান কে দরজায় দেখে পাগলের মতো করতে লাগলো।
ঝাঁপিয়ে পরলো ফারহানের বুকে। ফারাবির দৃষ্টি এলো মেলো , হাত দুটো ফারহানের সারা শরীর কে স্পর্শ করে যাচ্ছে।
ফারহান অনুভব করছে ফারাবির শরীরে কম্পন। ধীর হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করলো।
কিন্তু কোনো লাভ হলো না। ফারাবির কান্নার বেগ বাড়তে লাগলো। মুহুর্তেই হেচকি উঠে গেল । ফারহান মেয়েটাকে সামলাতে পারছে না।
কেমন পাগলামি করছে। কোনো উপায় অন্তর না পেয়ে টেবিলে রাখা এক জগ পানি ফারাবির মুখে ছুঁড়ে মারলো।
ফারাবি থমকে গেল। খানিকটা স্থির হলো , আসলে প্রচন্ড শক পেয়ে জ্ঞানে ছিলো না ওহ।
ফারহান ধীর হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবি কাঁপছি , এখনো ঠিক ঠাক হুসে নেই। কোনো দিকে খেয়াল নেই। পুরো ভিজে গেছে । ফারহান ধীর কন্ঠে বলল
_ চেঞ্জ করে আয়।
কিন্তু ফারাবির কোনো হেলদোল নেই। ফারহান খানিকটা চিন্তিত হলো। এতো টা শক পেলো মেয়েটা ?
দীর্ঘশ্বাসে ভরে গেল পুরো ঘর। কাবাড থেকে ড্রেস এনে ফারাবি কে চেঞ্জ করিয়ে দিলো ফারহান।
ফারাবি যেন পাথরের মুর্তি। ফারহান মৃদু হেসে স্যুপ টুকু ফারাবি কে খাইয়ে দিলো। যে মেয়ে স্যুপ দেখলে লাফিয়ে উঠে খাবে না বলে।
আজ সে বিনা বাক্যে খেয়ে নিলো। ফারহানের বেশ চিন্তা হলো। লম্ভা ঘুমের প্রয়োজন । নিশ্চয়ই ফারাবির মাথার নিউরন গুলো কাজ করছে না।
টেম্পোরালি শক যাকে বলে। লম্বা ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।
ফারাবি কে বেডের এক পাশে শুইয়ে দিয়ে ফারহান ও শুইয়ে পরলো।
কিছুক্ষণ পর ফারাবি কে আষ্ঠে পৃষ্ঠে বুকে জড়িয়ে নিলো।
আদর মাখা কন্ঠে ফারাবি কে লক্ষী বউ বলে ডাকতে লাগলো।
ফারাবির অধরে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে দিলো।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_42
শুভ্র সকাল । পাখির গুনগুন গান শোনা যাচ্ছে। বেলী ফুলের গন্ধে ম ম করছে। সাথে হালকা বৃষ্টির ঝুম ঝুম শব্দ । মনে হচ্ছে কোনো স্বর্গ পুরী। ফারহানের বুকে লেপ্টে শুইয়ে আছে ফারাবি। সারারাত বেঘোরে ঘুমিয়েছে ওহ। অবশ্য ফারহানের চোখে ঘুম নেই। সারা রাত মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে গেছে। ভোরের আজান পরতেই ফারাবি চোখ পিট পিট করে তাকালো ।
মেয়েটা সারাক্ষণ ঘুমালে ও ফজরের সময় টা উঠে যায়। ফারাবির বিচরন বুঝতে পেরে ফারহান হাত টা আলগা করে ফেললো। ফারাবি হাই তুলে উঠে গেল। একদম ফ্রেস দেখাচ্ছে ওকে। ফারহান মৃদু হেসে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবি প্রান ভরে শ্বাস নিলো। ফারহানের দিকে না তাকিয়ে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই ফারহান আহহ বলে আর্তনাদ করে উঠলো। ফারাবি চমকে তাকালো। ফারহান মেকি হাসি দিয়ে বলল
_ ব্যথা তো।
ফারাবি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে কাল রাতের সব মনে পরে গেল। ফারাবি মাথা চেপে ধরলো। ফারহান ফারাবি কে বুকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলাতে লাগলো ।
_ কিচ্ছু হয় নি। শান্ত হ তুই , এভাবে অসুস্থ হয়ে পরবি।
ফারাবি কিছু টা বিচলিত হয়ে পরলো। ফারহান মুখ টা ছোট করে রইলো। ফারহানের সারা শরীরে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
_ আপনার খুব বেশি লাগে নি তো ? কষ্ট হচ্ছে খুব ? কি করে এসব হলো ? আমার কথা একদম ই শুনতে চান না।
_ শান্ত হ একটু। আমি ঠিক আছি । হ্যাঁ লেগেছে তো বটে তবে তোর ঠোঁটের স্পর্শ পেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
_ আপনি এমন কেন ? আমার সাথে সব সময় মজা করেন। আমি ভেবে পাচ্ছি না । আর আপনি কি না আমার সাথে
ফারাবি কথা গুলো বলতে বলতে কেঁদেই দিলো। ফারহান বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। এই টুকুনি বিষয়ের জন্য কেউ কাঁদে ?
তা ও আবার বাচ্চা দের মতো ফ্যাচ ফ্যাচ করে। আগেই ভালো ছিল সারাক্ষণ ভয়ে চুপসে থাকতো। মেয়েটার গালে চর বসাতে হবে। তাহলে যদি আগের মতো চুপসে যায়।
ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ফারাবি কোনো কথা না বলে ওয়াসরুমে চলে গেল। ওযু করে এসে নামাজ পড়ে নিলো। ফারহানের সুস্থতার জন্য চার রাকাত নফল নামাজ ও পরলো। ফারহান থমথমে মুখ করে চেয়ে রইলো।
ব্যান্ডেজ ভেজানো যাবে না। তাই নামাজ পড়তে পারলো না।
ফারাবি নামাজ পড়ে দ্রুত ব্যলকনি তে চলে আসলো। বেলি ফুলের টপে অনেক গুলো বেলি ফুটে আছে। আর তার ই সুভাসে মুখরিত পরিবেশ।
ফারহান মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে নিলো। মেয়ে টা এতো রাগ করতে পারে তা ওহ স্বপ্নে ও ভাবতে পারে নি।
ভেতর থেকে ক্লান্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
_ ফারাবি আমি ঘুমোচ্ছি আমাকে বারো টার আগে ডাকবি না।
ফারাবি কোনো প্রতি উত্তর করলো না। ফারহান খানিকটা দুঃখ পেল। তবে এই মুহূর্তে বিরহের থেকে ঘুমের প্রয়োজন। তাই ফারহান কথা বাড়ালো না। বিছানায় গাঁ এলাতেই নিদ্রা মহাসয় জড়িয়ে নিলো।
*
বেলি ফুলের দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে ফারাবি। মৃদু বৃষ্টি তে গাছ টা প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে। প্রকৃতি যেন নতুন ছন্দে মেতে উঠেছে। বোধহয় বর্ষার শেষ সময়। ফারাবি মৃদু হাসলো। ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করলো। ফারহানের সামনে হাত নাড়াচাড়া করলো। না বাবা ঘুমিয়ে পরেছে। ফারাবি ঝরা হাসলো। ফারহানের চুলে হাত গলিয়ে দিলো। চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি পরলো। ফারাবির বুকের ভেতর ভীষন যন্ত্রণা হচ্ছে । ফারহানের কপালে সময় নিয়ে চুমু খেল। ধীরে ধীরে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হাত দুটি ফারাবি কে বুকে টেনে নিলো। ফারাবির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। বিষয় টা এতো টাই দ্রুত ঘটেছে যে ফারাবির মাথায় কিছুই ঢুকলো না। ফারহানের বাহু ডোরে থেকেই ভাবতে লাগলো। ফারহান নিশব্দে হেসে বলল
_ এতো ভাবাভাবির দরকার নেই। আমি ঘুমানোর অভিনয় করছিলাম।
ফারাবি চমকে তাকালো। ফারহান মেকি হাসি দিয়ে আরো কাছে নিয়ে আসলো। ফারাবির ইচ্ছে করছে নিজের গালে ঠাস ঠাস করে চর বসিয়ে দিতে।
ফারহান ধীর হাতে ফারাবির কোমর জড়িয়ে ধরলো। ফারাবি শিউরে উঠলো। ফারহান মৃদু হেসে ফারাবির গলায় চুমু দিয়ে দিলো। ফারাবি কাচু মাচু করতে লাগলো । ফারহান অধর কোনে হাসি রেখে বালিশে মাথা এলিয়ে দিলো।
*
পাঁচ দিন পর
মনিকা আর আরিফের বিয়ের ডেট আর তিন দিন পর। রিলেটিভ দের ইনভাইট করা হয়ে গেছে । তাই এতো ঝড় ঝাপটা তে ওহ ওদের বিয়ের ডেট টা চেঞ্জ করা হলো না।
ফারহান আর ফারাবি কে নিয়ে এখনো স্বাভাবিক হতে পারে নি তিনজন। রিকের বিষয়ে জেনে সবাই হতাশ হয়েছে। মনে মনে সবাই ফারহান আর ফারাবির বিষয়ে খুশি হয়েছে। তবে সবার ভেতর অস্বস্তি কাজ করছে। আরিফ বিকেলে এসে ফারহান আর ফারাবি কে বুঝিয়ে গেছে। ফারহান প্রথমে দ্বিমত পোষণ করলে ও রাজি হয়ে গেছে।
তবে বলেছে সাধারন গেস্ট দের মতোই যাবে ওরা। আরিফ হতাশ হলে ও খুশি হয়েছে। না যাওয়ার থেকে যাবে যে এটাই তো অনেক।
ফারহান এখন খানিক টা সুস্থ। মাথার ব্যান্ডেজ খুলে ফেলা হয়েছে। তবে কপালের ক্ষত স্থানে ছোট ব্যান্ডেজ লাগানো আছে। ফারাবি এই পাঁচ দিনে ফারহানের প্রচন্ড খেয়াল রেখেছে। ফারহান অবাক হয়েছে তার পিচ্ছি বউ টাকে দেখে।
ভালোবাসা বোধহয় এমনি হয়। অপর জনের অসুস্থতায় নিজের জান দিয়ে খেটে যায়। ফারহান কে বেডে শুইয়ে দিয়ে ফারাবি সাওয়ার নিতে গেছে।
ফারহান সুস্থ থাকলে ও ফারাবির কড়া নির্দেশ ফারহান যেন অফিসে না যায়। আর তার জন্য সে বাসাতেই লেপটব হাতে কাজ করে যাচ্ছে।
তবে রিফাত বেচারার অবস্থা খারাপ। একে তো এর আগে অফিস সামলায় নি। তার উপর প্রচন্ড কাজ সাথে মনিকার অভিযোগ ।
এই তো একটু আগে ও ফারহান কে ফোন করে বিরহের কবিতা শোনাচ্ছিল।
ফারহান ঠিক করেছে এদের ঝামেলার দারুন অন্ত ঘটাবে।
যার পুরোটাই সিক্রেট ।
ফারাবি বাথরুম থেকে চুল মুছতে মুছতে বের হলো।
ফারহান কে বেডে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে হাসলো। লেপটব টা পাশেই পরে আছে। ফারাবি ধীরে ধীরে লেপটব সরিয়ে নিলো। সদ্য গোসল করা ফারাবির চুল থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে।
ফারাবির মাথায় দুষ্টুমি খেলে গেল। এক গাল হেসে ফারহানের পাশে বসলো। চুলের আগাটা ফারহানের চোখের উপরে ধরলো। চোখে পানির ফোঁটা পরতেই ফারহান পিট পিট করে তাকাতে লাগলো। ফারাবি দ্রুত সরে গিয়ে ও ফারহানের হাত থেকে রক্ষা পেল না।
ফারহান খপ করে ফারাবির হাত ধরে ফেললো। ফারাবি জ্বিভে কামড় দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ফারহান মেকি হাসি দিয়ে ফারাবি কে হেচকা টান মেরে বেডে ফেলে দিলো।
তারপর ফারাবির দু হাত চেপে ধরে রহস্য হাসলো। ফারাবি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল
_ রাগ করে থাকতে পারিস না আর রাগ দেখাস ?
_ মোটে ও না। ছাড়ুন আমাকে , আমি কিছুই করি নি।
ফারহান দাঁতে দাঁত চেপে বলল
_ আচ্ছা আমার চোখে চুলের পানি টা কার ?
_ আমি আমি কি করে জানবো ? ছাড়ুন আমায়।
_ জানিস না ?
_ না জানি না।
ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবি নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে। ফারহান ছাড়ছে না। অবশেষে ফারহানের সাথে না পেরে উঠে ফারাবি দমে গেল। ফারহান মোহনীয় হেসে ফারাবির কপালে চুমু এঁকে দিলো। ফারাবি নিঃশব্দে হাসলো। ফারহান ফারাবি কে আরেকটু কাছে টেনে নিলো। ফারাবি মৃদু হেসে বলল
_ এবার ছাড়ুন। আপনার শরীরে আঘাত রয়েছে। ব্যথা পাচ্ছেন তো।
_ উহহুহ পাচ্ছি না। তোকে কাছে টেনে নিলে আমার সমস্ত আঘাত শেষ হয়ে যায়। বুঝেছিস
_ হয়েছে তো। এবার ছাড়ুন , আর সাওয়ার নিয়ে আসুন। ক্ষিদে পেয়েছে।
ফারহান একটু ভেবে ফারাবি কে ছেড়ে দিলো। ফারাবি নিজেকে ঠিক করে নিলো। ফারাবির কপালে ভালোবাসার পরস দিয়ে সাওয়ার নিতে গেল।
*
একটা রেসট্রন এ বসে আছে রিমি। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে বেশ ভয় ও লাগছে। ফাহাদের আসার কথা ছিলো কিন্তু ফাহাদ এখনো আসে নি। রিমির বেশ চিন্তা হচ্ছে।
ফাহাদ কে একের পর এক কল করে যাচ্ছে। কিন্তু ফাহাদের ফোন নট রিচেবল বলছে। একজন ওয়েটার এসে রিমির কাছে অর্ডার জানতে চাইলো।
রিমি একটা কোল্ড কফি অর্ডার করে দিলো। ফাহাদের সোসাল মিডিয়া ও ইন একটিভ। রিমির খুব রাগ হচ্ছে। চল্লিশ মিনিট ধরে বসে আছে।
অথচ ফাহাদের আসার নাম ই নেই। সন্ধ্যা হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ। সাথে কার ও নিয়ে আসে নি।
লোকাল যানবাহনেই যেতে হবে। রিমি আর দেড়ি করলো না। টেবিলে বিল রেখে দিয়ে চলে গেল।
ক্যাব বুক করতে চেয়ে ও করলো না। তবে এই দিক টা শুনশান দেখে রিমির বেশ ভয় হচ্ছে। রিমি এক পা দু পা করে আগাতে লাগলো। এ কেমন পরিবেশে ফাহাদ ডেকেছে ওকে ?
রিমির প্রচন্ড রাগ হলো। ফাহাদের সাথে আর কথাই বলবে না ওহহ।
রিমি ব্যাগ থেকে স্কাফ বের করে মাথায় মুরিয়ে নিলো। বাসা থেকে বলেছে বান্ধবীর বাসায় নোট নিতে যাচ্ছে। সবার মন খারাপ তাই কেউ অতো গুরুত্ব ও দেয় নি।
রিমির খুব ইচ্ছে হলো নিজের গালে ঠাস করে চর বসিয়ে দিতে। এমন আক্কেল ছাড়া কাজ টা কি করে করলো ওহ ?
আর ফাহাদ কেন এতো আর্জেন্ট দেখা করতে বললো।
আচ্ছা ওর কোনো বিপদ হয় নি তো ?
রিমির বুক টা কেঁপে উঠলো। ফাহাদ কে খুব ভালোবাসে ওহহ। ফাহাদের কিছু হলে ওহহ বাঁচতে পারবে না।
রিমির চোখের কুর্নিশ এ পানি জমে গেছে। এক পা দু পা করে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ওহহ।
নির্জন রাস্তা, লোকাল গাড়ি ও দেখা যাচ্ছে না। আচ্ছা ওহ কি একবার রাফাজ কে ফোন করবে ?
কিন্তু রাফাজ তো কুমিল্লা গেছে। রিমির খুব রাগ হচ্ছে । আর ফারহান কে ফোন করা কি উচিত হবে ?
ফারহান তো অসুস্থ । দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে রিমি ফোন টা হাতে নিলো। ফারহানের নাম্বার ডায়াল করবে তখনি ফোন টা হাত থেকে পরে গেল। রিমি বিরক্তি নিয়ে ফোন টা তুলতে গেল। ফোন টা তুলতেই কারো অবয়ব দেখতে পেল। রিমির চিত্ত কেঁপে উঠলো। ভয়ে ভয়ে ফোন টা হাতে তুলেই পেছন ফিরে তাকালো।
পেছনে আরেক টা লোক দাড়িয়ে আছে। দুজনের চোখ মুখ কেমন দেখাচ্ছে। এদের শরীর থেকে কেমন বোটকা গন্ধ বের হচ্ছে। রিমি বুঝতে পারলো এরা মাতাল হয়ে আছে।
রিমি শুকনো ঢোক গিলে পাশ কাটাতে চাইলো। কিন্তু লোকটা রিমির হাত চেপে ধরলো।
রিমির বুক ধুকপুক করে উঠলো। অজানা ভয়ে কপাল বেয়ে ঘাম নেমে যাচ্ছে। রিমি হাত মুচরাতে লাগলো। লোক টা বিশ্রী হাসি তে মেতে উঠলো। রিমি কে টেনে নিতে লাগলো। রিমি নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। কিন্তু অসুরের মতো শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।
কাঁধের ব্যাগ টা রাস্তা তেই পরে গেল। গাঁয়ে উড়না নেই। রিমি চিৎকার করতে লাগলো। রিমির চিৎকার কেউ শুনতে পেল না। রিমি কে টেনে নিয়ে গেল রাস্তার পাশের জঙ্গলে। লোক দুটো বিকৃত হাসি তে মেতে উঠেছে। রিমি চিৎকার করে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ রিমির কন্ঠ শুনছে না। রিমির চোখ ঘোলাটে হয়ে গেল। স্তব্ধ হয়ে গেল শরীর।
রিমি হার মেনে নিলো। তাকিয়ে থাকতে পারলো না আর। মুহূর্তেই রিমি জ্ঞান শূন্য হয়ে পরলো।