#গল্পঃস্বামী
#পর্বঃ৬
#পারভেজ_ইসলাম
আমি উনার কথা শুনে চোঁখ বড় বড় করে তাকালাম উনার দিকে।
আমিঃআসলে আমি….
আদৃতঃআপনি তখন সেটা খুশিতে করেছেন।এতে লজ্জা পাওয়ার তেমন কিছু নেই।আমিও দাদিকে জড়িয়ে ধরি বেশি খুশি হলে।
আমিঃআপনি আর দাদিতো এক হলেন না আর।
আদৃতঃসেই কথাই তো বোঝালাম সবাই এক না তাই সবাইকে জড়িয়ে ধরবেন না হুতোশে।
আমিঃআসলে অভ্যাস নামক জিনিসটা অনেক খারাপ।একদম কোনো কিছুর অভ্যস্ত হয়ে পড়লে আর তা সহজে ছাড়ানো যাই না।আমার জন্য খুশির কারণ ছিল রায়হান।যখনই খুশির খবর শুনতাম ওর থেকে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরতাম।তাই আরকি।
আদৃতঃযদি এমন হয় অভ্যাসকে ভুলতে হবে।কঠিন কিন্তু অসম্ভব না।অভ্যাসকে ভুলতে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলেন।নতুন অভ্যাসের ভীড়ে পুরোনো অভ্যাস গুলোর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।
আমিঃনতুন কি অভ্যাস গড়ে তুলব?
আদৃতঃএকটা গুণকেই না হয় অভ্যাস বানিয়ে নেন।
আমিঃমানে?
আদৃতঃযেমন ধরেন যদি ভালো গান গেতে পারেন গান গাওয়ার অভ্যাস করেন,যদি ভালো ছবি আঁকতে পারেন ছবি আকার অভ্যাস করেন নইলে কবিতা লেখার।
আমিঃকোনোটাই পারিনা।
আদৃতঃআপনি কিন্তু অনেক ভালো ডিজাইন বানাতে পারেন।ভার্সিটিতে একটা অনুষ্ঠানের ফ্যাশান সোতে আপনার ডিজাইন করা নীল একটি শাড়ি ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছিল।
আমি উনার কথা শুনে থ মেরে দাড়িয়ে রইলাম।এ কমপক্ষে হলেও ৪ কি সাড়ে চার বছর আগের কথা।আমার নিজেরই মনে নেই।তার থেকেও বড় কথা তিনি আমায় তখন থেকে চিনতেন?
আমিঃআপনি কিভাবে জানলেন?
আদৃতঃযেদিন প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম আপনার বাবা বেশ গর্ব করে বলেছিলেন।মনে হয়েছিল আপনি না যেন পুরস্কার পেয়েছেন।
কথাটা শুনে বুকের মধ্যে কিছু একটা থমকে গেলো।শুন্যতা জড়ো হতে আরম্ভ করেছে হৃদয়ে।বাবা আমায় কতোই না ভালোবাসত।আর আমি এই রায়হানের জন্য তাদের কষ্ট দিয়েছিলাম।কিন্তু রায়হান ওহ কি করল।আমি পেয়েছি পাপের শাস্তি।এবার রায়হানের সময় শাস্তি পাওয়ার।
আদৃতঃএখন অনুশোচনা বোধ করে যাদেরকে হারিয়েছেন তাদের আর পাবেননা ফিরে।
আমিঃপেলেও যেতাম না তাদের সামনে।ওতো সাহস নেই আমার।
আদৃতঃআপনার তাদের সামনে যাওয়ার আগেই তারা আপনার সামনে এসে ঢাল হয়ে দাঁড়াত।তারা আপনার বাবা মা ছিলেন।
আমি একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললাম,
আমিঃএটাই তো তাদের দুর্ভাগ্য ছিল যে তারা আমার বাবা ছিলেন।আমি রুমে যাচ্ছি আপনিও পারলে ঘুমিয়ে পড়েন।
বলেই রুমে চলে আসলাম।নইলে আমার চোঁখের জল আর মনের বারণ না শুনে আমার অবাধ্য হয়েই আদৃতের সামনে ঝড়ে পড়বে।আর আমি তা চাইনা।রুমে ঢুকেই গেট লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুজে দিলাম।আমার আর আমার কষ্ট এই দেয়ালেরাই জানুক।
🥀
পেন্সিলটা কানে গুজে নিয়ে বাহাত দিয়ে গাল ধরে ডান হাত দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছি।আদৃতকে সেই দিন বলেছিলাম আমি ডিজাইন করতে বেশ পছন্দ করি এটাকে প্রোফেশন করতে পারলে হতো।বলে রুমে আসার আগেই সে একজন নামকরা ডিজাইনারকে ফোন দিয়ে বসেন।সেই ডিজাইনার আবার আমাকে বলেছেন দুটো শাড়ি ডিজাইন করতে দুইটা পার্টির জন্য।যদি ডিজাইন করা শাড়ি পছন্দ হয় আমার সাথে তারা নাকি কাজ করবে।ব্যাস তারপর থেকে আদৃত শুরু এই ল্যাপটপ ট্যাব কলম পেন্সিল মানে যা যেখানে আছে পারলে সবই এনে দিয়েছেন।আমিও তার আগ্রহ আর ইচ্ছা দেখে রাজি।৩ দিন ধরে বহুত ভেবে একটা শাড়ি ডিজাইন করেছি।ব্লাক জরজেট শাড়ি।শাড়ির উপরে গোলাপ করা ব্লাক কাপড় দিয়ে।তার উপরে স্টোন। স্টোন তো না যেন ডাইমন্ড।পুরো শাড়ির মধ্যে ছড়ানো গোলাপ হলেও পাড়টাতে পর পর গোলাপ।আর একটা নিয়ে এখনো ভেবেই চলেছি।কালার হিসেবে সবুজ পছন্দ করেছি। সবুজ কাতান হবে।কিন্তু কুচিটা হবে সোনালি রঙের।এটা ল্যাপটপেই করেছি।আমি এই যুগেরই মেয়ে ল্যাপটপ ফোন পারি ব্যবহার করতে।প্রথম প্রথম যদিও প্রবলেম হতো।কিন্তু আদৃত সাহায্য করেছে।বুঝিয়ে দিয়েছে।ল্যাপটপ থেকে ডিজাইন তাদের ইমেইল করতে হবে।তাদের পছন্দ হলে তারা বানাতে দেবে।দেখি কি হয়।
এখন কেনো জানিনা মাঝে মাঝে মন প্রশ্ন করে সেদিন আদৃতের সাথে বিয়ে হলে আমার আজ কতোই না সুন্দর হতো জীবন ।কিন্তু মস্তিষ্ক বলে আজকে রায়হান এমনটা করেছে বলে তোর এটা মনে হয়। তুই কখনো খুশি হতে পারতিস নাম।আবার মন বলে যে বান্ধবী হিসেবে এতো যত্ন নেই সে জীবনসঙ্গী হিসেবে কতোই না ভালোবাসত।কিন্তু এটা ভেবে খারাপ লাগে যে লোকটা সামনে এগোচ্ছেন না।নিজের জন্য কাউকে পছন্দ করে বিয়ে করছেন না।আমাকে তো চাইলেও সে আর পাবে না।তাহলে?কেনো মিথ্যা আশার জন্য নিজের জীবনকে বিলিন করে দেওয়া।ভালোবাসা বড্ড পোড়ায়।ইশ যদি রায়হানের সাথে কখনো দেখাটাই না হতো।ভাগ্য জিনিসটা বড্ড খারাপ আমার।সত্যিকারের ভালোমানুষটাকে মিথ্যে ভালোবাসার জন্য চিনতে পারিনি।কিন্তু আজ আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমার।
🥀
আজকে তারা ডিজাইন কেমন হয়েছে জানাবে।আদৃতের আমার পছন্দ করা শাড়ি বেশ ভালোলেগেছে।কিন্তু আমি এতে আশ্চর্য নই।আমি সিম্পল সাদা শাড়ি ডিজাইন করলেও তার পছন্দ হতো।কিন্তু দাদিও বলেছে শাড়ি দুটো বেশ সুন্দর।আমার মন মানে না।পছন্দ হলে হলো আর না হলে আবার চেষ্টা করব।একবারেই যে সফলতা আসবে তা নই।সফলতা আসার একটা সুনির্দিষ্ট সময় আছে যেটা উপর আল্লাহ ঠিক করে দিয়েছেন।আমার ক্ষেত্রেও সেই সময় এই আসবে সফলতা।কবিও তো বলেছেন একবার না পারলে শতবার দেখতে।আর শতবার দেখলে বারেবার তো হারব না।আর জীবনে একেবারে সব পেলে সেটার মুল্যও কমে যায়।
আমার কপাল ভালো আমি প্রথমবারেই স্বার্থক।আমার শাড়ি ডিজাইনার কম্পানির ওনার আর যাদের জন্য ডিজাইন করেছিলাম দুইজনের বেশ পছন্দ হয়েছে।উভয়ের আমার সাথে কাজ করতে চান।শাড়িদ্বয়ের জন্য আমাকে নাকি টাকাও দেওয়া হবে।ভাবতেই খুশি লাগছে।সেই টাকা আদৃতকে দিয়ে ঋণ কমাবো।উফ একটু হলেও শান্তি লাগবে।আদৃত আমার পাশেই দাঁড়িয়ে। খবরটা পাওয়া মাত্রই হাসি দিয়ে তার দিকে তাকালাম।কিন্তু আদৃত আমার তাকানো দেখে দাদির পাশে সড়ে গেলেন।প্রথমে নাহ বুঝলেও পরে বুঝেছি যে তাকে যেন আগের দিনের মতো খুশিতে,ঠ্যালায়,ঘোরেতে জড়িয়ে না ধরি তাই সড়ে গেলেন।উফফফ এই অভ্যাসটা অসহ্যকর।
দাদিঃকিরে জান্নাত কই হারালে এত খুশির দিন তোমার জন্য আজকে।
আমিঃনা দাদি হারায়নি।কিছু ভাবছিলাম।কিন্তু কি ভাবছিলাম মনে নেই।(মনে আছে কিন্তু বলা যাবে না)
দাদিঃথাক মনে করা লাগবেও না।
আদৃতঃআমি ডেকারেশনের লোকদের ফোন দিয়ে আসি।
আমিঃকেন?কার বিয়ে?কবে বিয়ে?কার সাথেই বা বিয়ে?ওমা আমাকে যে বলেলেনও না।(কৌতুহল সমেত জিজ্ঞেস করলাম)
আদৃতঃশুধু বিয়ের আয়োজনের জন্যই কি ডাকা হয় নাকি ডেকোরেশন এর লোকজন কে?আপনার সাকশেস পার্টি আজকে সন্ধ্যায়।
আমিঃকি?কিসের সাকশেস?ওমা এর জন্য কেউ পার্টি দেই।নানা লাগবে না।
আদৃতঃআমি আপনার কাজে বাধা দিই?না।আপনিও দিবেন না বাধা।
বলেই ফোন কানে ধরে চলে গেল। আমি আর কি বলব দাদিও একমত।আমিও রুমে এসে রুমের গেট লাগিয়ে শাড়ি দুইটা দেখতে লাগলাম।এতো ভালো হলো কেমনে?কতোদিন পর ডিজাইন করলাম।যাক ভালো হলেই ভালো।এর পর আরো অর্ডার দেবে নাকি।
কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বের হয়ে দেখি বেশ কয়েকজন ডেকারেশনের লোক এসেছে।সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত।কেউ নির্দেশনা দিতে ব্যস্ত,কেউবা সেই নির্দেশনা মানতে ব্যস্ত।লাল,সাদা,গোলাপি গোলাপ দিয়ে লেখালেখির কাজ চলে।আর নীল সাদা কাগজের ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে।বাহ সব কিছু কি সুন্দর।ইশ যদি রায়হান থাকত।সে দেখে কি আদেও আফসোস করত।কিন্তু সে তো নাকি বিয়ে করে দেশের বাহিরে গিয়েছে হানিমুনে।সে এসবের কিছুই কিহ জানতে পারবে।এসব ভাবতে ভাবতেই দেখি আদৃত নিচ থেকে বলে উঠলেন,
আদৃতঃফুলের রং কি পছন্দ হয়েছে?চাইলে অন্য রং আনাতে পারি।
আমিঃজ্বি খুব সুন্দর রং গুলোর কম্বিনেশন।দেখলাম একটা জায়গায় খুব সুন্দর করে চারপাশে সাদা গোলাপি গোলাপ দিয়ে মাঝে কিছু জায়গা ফাকা।সেইখানে কিছু লিখবে।আমি তাকিয়ে রয়েছি কিন্তু দুইজন লোকের জন্য দেখা যাচ্ছে না।কিছুক্ষণ পরে তারা সড়ে গেলে দেখলাম লালগোলাপ দ্বারা লেখা,
“Congratulations Jannat “.লেখাটা দেখেই এক অজানা ভালোলাগা মনে সাই দিলো।খুব সুন্দর করে লেখা।আমি আদৃতের দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিলাম।আমার বাকা হাসির জবাবে সেও টেডি স্মাইল দিলেন।আকি হাসতে হাসতেই রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
চলবে………🥀