স্বামী পর্ব -০৭

###__স্বামী__###
পর্ব-৭
Nirzana(Tanima_Anam)

-আহ্ নির্ঝর লাগছে….ছাড়ুন আমাকে প্লিজ!!!
-লাগুক তোমার এতো সাহস হয় কি করে যে তুমি সায়নকে ফোন করো??
একটুও লজ্জা করে না???

নির্ঝর অনুর হাত পেছনে মুড়ে রেখেছে।অনু ব্যাথ্যায় ছটপট করছে….
অনুর অপরাধ সে সায়নকে ফোন করেছিলো।যদিও ফোন বার বার রিং হয়ে কেটে গেছে সায়ন ফোন তোলেনি!!!

নির্ঝর সেই সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্য প্রায় রাতের দিকে বাড়ি ফিরে দেখে অনু বারান্দায় দাড়িয়ে কাকে যেন ফোন করছিলো আর বার বার চোখের পানি মুছছিলো…!!!

নির্ঝর কিছু একটা আন্দাজ করে অনুর কাছে গিয়ে ছো মেরে ফোনটা কেড়ে নেয়।ফোনের স্ক্রনের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সেখানে সায়নের নাম্বার।
নির্ঝরের মাথা আগুন ধরে যায়….

অনুকে টেনে ঘরে আনে….ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলে।

নির্ঝর অনুর হাতটা পেছনে মুড়ে রেখেছে…..
অনু বার বার ছোটার চেষ্টা করছে..

অনু কেঁদে দেয়
-দেখুন মি.চৌধুরী আপনি কি চান বলুন তো??
-তুমি কি চাও সেটা আগে বলো?? আমাকে কেন আরো খারাপ হতে বাধ্য করছো!!
-সায়নকে চাই!!
-আর আমি তোমাকে!!

নির্ঝর অনুর হাতটা ছেড়ে দেয়….
অনু নির্ঝরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ায়….
“তুমি তাকেই ভালোবাস যে তোমার ভালোগুলোকে ভালোবাসে তুমি তাকে ভালোবাসো না যে তোমার খারপগুলোকেও ভালোবাসে”

কথাগুলো বলে নির্ঝর বেরিয়ে যায়…..

অনু থম মেরে বসে পড়ে মেঝেতে….
সায়নকে ঘিরে তার মনেও এক বড় সড় দ্বন্দ রয়েছে……।।
সায়নের হটাৎ চলে যাওয়া…..
দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দের কারণ কোনোটাই অনুর জানা নেই!!!

Flash back
[[[[গ্রামের সেই বিয়ে বাড়িতে সায়ন অনু বেশ কাছাকাছি আসে….
টুকটাক দেখাদেখি একটু চোখাচোখি আর একটু ভালো লাগা এক পর্যায়ে ভালোবাসা।

অনু সায়ন বাড়ির সামনে বাঁধায় করা পাড়টায় পাশা পাশি বসে আছে। অনু নিচের দিকে তাকিয়ে হাতে কি একটা আঁকি বুকি করছিলো….

সায়ন দুম করে অনুর হাতটা ধরে ফেলে।
অনু একরকম চমকে ওঠে সায়নের দিকে তাকায়
সায়ন সেই পাড়ের মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে।
অনুর দিকে কয়েকটা কাশফুল আর একটা নাক ফুল এগিয়ে দেয়….

-জানি না ভালোবাসা কি শুধু জানি আমার ভালোলাগার আরেকটা নাম তুমি।

অনু হা করে সায়নের দিকে তাকিয়ে আছে…
-জানো আমি প্রথম দেখায় তোমার প্রেমে পড়েছিলাম।
একেবারে যাকে বলে পা পিছলে আলুর দম!!

অনু সায়নের কথায় হো হো করে হেসে দেয়

কোনো মেয়েকে প্রোপোজ করার সময় এসব কেউ বলে ….তা অনুর জানা ছিলো না।
অনু সায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে কাশ ফুল গুলো নিয়ে নেয়।
কিন্তু নাক ফুলের দিকে হাত বাড়িতেই সায়ন হাত সরিয়ে নেয়
-উহু এটা এখন তোমায় নয় যেদিন তুমি আমার বউ হবে সেদিন নিজের হাতে পড়িয়ে দেবো…..

ব্যাস এটাই শুরু সায়ন অনুর সম্পর্কের।
অনুকে সায়নের মায়ের বেশ পছন্দ হয়েছে।
সায়নও নিঃসন্দেহে ভালো ছেলে।

বাসায় ফিরে দুই পরিবারের মধ্যে সায়ন অনুকে নিয়ে কথা বর্তা পাকা করা হয়।অনুর পরিক্ষা শেষ হলেই সায়নের সাথে আকদ করিয়ে রাখবে।
বেশ বছর তিনেক তারা প্রেম করে….

দেখতে দেখতে আকদের দিন এগিয়ে আসে।
আকদের দিন দুই পরিবারই বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে নিজেদের।
সেদিন সকাল থেকেই অনুর শরীরটা কেমন কেমন করছে।একটু পরপর মাথা ঘুরছে সাথে অসম্ভব পেট ব্যাথা করছে আবার কমেও যাচ্ছে।
অনুর ধারনা হয়তো ফুড পয়জ্নিং হয়েছে।
কিন্তু বিপত্তি বাধলো যখন আকদের জন্য অনুকে নিচে ডাকা হলো অনুর হটাৎ করেই আবার প্রচুন্ড পেট ব্যাথ্যা করতে শুরু করলো।অনু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নামার সময় মাথা ঘুরে দুম করে পা পিছলে নিচে গড়িয়ে পড়ে।

ঘটনাটা হটাৎ ঘটায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সিড়ি বেয়ে পড়ে অনুর মাথায় প্রচুন্ড আঘাত লাগে অনুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে প্রথমবার যখন অনু চোখ খোলে তখন সায়ন অনুর হাতটা শক্ত করে ধরে রয়েছে।
তারপর আবার অনু গ্ঞান হারিয়ে ফেলে।।
কিন্তু পরের বার চোখ খুলে অনু আর সায়নকে দেখে নি সেই দেখায় ছিলো সায়নকে শেষ দেখে।
শুধু সায়ন কেন সায়নের পরিবারের কাউকেই অনু আর দেখে নি।

হাসপাতালে বাবা মা কে সায়নের কথা বললে সবাই যেন মুখে কুলুপ এটে বসে আছে।কেউ সায়নের নামও মুখে আনছে না।।

ব্যাস তারপর সব কেমন পাল্টে গেল এবাড়ির কেউ আর সায়নকে সহ্য করতেই পারে না।
এখানে সায়নের নাম নেওয়াও মানা।

অনু সায়নের সাথে অনেক যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না।সোহাটাও আর অনুর আসে পাশে আশে না।।।
একরকম হওয়া বিয়ে ভেঙ্গে যায়।।।

তারপর নির্ঝরের সাথে অনুর বিয়ে ঠিক করা হয়।এ বিয়েতে অনুর কোনো মত ছিলো না বাড়ির সবাই একরকম ধরে বেধে অনুকে বিয়েটা দেয়

অবশ্য বিয়ের দুই দিন আগে অনুর সায়নের সাথে কথা হয়
সায়ন অনুকে নিয়ে পালাতে চায়।বিয়ের আগের দিন অনু সায়নের বলা ঠিকানায় চলে তো আসে কিন্তু সায়ন আসে না……..।।অনু সারা রাত সেখানে অপেক্ষা করে কিন্তু সায়ন আসে না।পরদিন ভোর বেলা অনুর ভাই অনুকে খুজে নিয়ে এসেছিলো।তবে ইতি মধ্যে সারা বাড়ি কথাটা ছড়িয়ে পরেছে কণে নাকি পালিয়েছে…..

তবে এই গুজবে নির্ঝেরর সাথে বিয়েটা ভাঙ্গে নি….

সায়নের হটাৎ পরিবর্তনের কারনটা অনুর আজও অজানা।
তার ধারনা হয়তো এর পেছনে তার ভাইয়ের কোনো হাত আসে সে যে সায়নকে দুচোক্ষে সহ্য করতে পারে না।তার নাকি প্রথম থেকেই নির্ঝরকে পছন্দ……

তবে অনুর ধারনা কতোটুকু সত্য তাও অনু ভালো করে জানে না]]]

((এখন বর্তমানে আশা যাক))

প্রায় রাত গড়িয়ে ভোর হতে চললো নির্ঝরের কোনো খবর নেই।
অনুর মনে শুধু একটা কথায় ঘুরছে এই লোকটা বার বার কি বলতে চাইছে টা কি??

অনু বারান্দায় পায়চারি করছে এমন সময় বাড়ির গেট দিয়ে একটা গাড়ি ভেতরে ঢুকছে….
এটা নির্ঝরের গাড়ি।
অনু একটু উকি ঝুকি মারতেই দেখে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে একটি মেয়ে বসা……
মেয়েটি নিজে গাড়ি থেকে নেমে নির্ঝরকে দরজা খুলে দেয়।
নির্ঝরের ডান হাতে ইয়া বড় ব্যান্ডেজ…..

মেয়েটি নির্ঝকে ধরে ধরে ভেতরে নিয়ে আসছে।
নির্ঝর কেমন খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে….
এই দৃশ্য দেখে অনুর কপালে কিন্ঞ্চিৎ ভাজ পড়লো…..!!!

বাড়ির বেলটা বাজছে।অনু ছুট লাগায় দরজা খুলতে….অনু
দরজার কাছে যাওয়ার আগেই নির্ঝরের মা গিয়ে দরজা খুলে দেয়।।।।
মেয়েটি নির্ঝরকে সোফায় বসিয়ে রেখে নির্ঝরের মাকে গিয়ে জড়িরে ধরে….!!!

অনু মেয়েটিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে….
কোথায় যেন দেখেছিলো মেয়েটিকে কিন্তু কিছুতেই মনে আসছে না……!!
“মেয়েটিকে কোথায় যেন দেখেছিলাম…..”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here