###__স্বামী__###
পর্ব-১১
Nirzana(Tanima_Anam)
-নির্ঝর ছাড়ুন লাগছে…
নির্ঝর অনুর হাতটা পিছনে পেঁচিয়ে রেখেছে।।
-অনু কি পাগলামো হচ্ছে এসব??বলেছি না তুমি আমাকে ছাড়া কোথাও যেতে পারবে না!!
অনু বাহিরে সিমি আর নির্ঝরকে একসাথে দেখে ঘরে এসে ব্যাগ পত্র গোছাতে থাকে।অনেক হয়েছে।এ বাড়িতে অনু আর এক মুহূর্ত থাকবে না।কিন্তু নির্ঝর এসে অনুকে আটকে দেয়।
-দেখুন নির্ঝর ছাড়ুন আমাকে আমি আপনার মতো চরিত্রহীন লোকের সাথে থাকতে চাই না!!
কথাগুলো বলতে বলতে অনু ছটফট করছে।বার বার ছোটার চেষ্টা করছে নির্ঝরের হাত থেকে।
-এক চড় লাগাবো এতো রাতে কি নাটক শুরু করেছো??কোথায় যাবে তুমি??
-আমার বাড়ি!আপনার মতো চরিত্রহীন লোকের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।দয়া করে আপনি আপনার এক্স ওর প্রেসেন্ট গার্লফ্রেন্ড নিয়েই থাকুন আমি আমার বাবার কাছে চলে যাবো।।
নির্ঝর অনুকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেয়।তারপর অনুকে বিছানায় চেপে ধরে ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।
অনু নির্ঝরকে ইচ্ছে মতো ধাক্কাচ্ছে,কিল ঘুষিও মারছে কিন্তু নির্ঝরকে একচুল নড়াতে পারছে না।
একটা সময় নির্ঝর অনুকে ছেড়ে দিয়ে ওঠে দাড়ায়
-তুমি চাও বা না চাও তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।আমাকে ছাড়া এক পা এ বাড়ির বাহিরে দিয়ে দেখো ঠাং ভেঙ্গে ঘরে ফেলে রাখবো।তবুও কোথাও যেতে দিবো না।
কথাগুলো বলেই নির্ঝর হাটা ধরে। অনু বিছানায় গুটি শুটি মেরে বসে আছে।নির্ঝর কি মনে করে আবার ফিরে আসে।অনুর সামনে হুট করে হাটু গেড়ে বসে অনুর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলতে শুরু করে…
-সৌমিতা আমার বন্ধু খুব ভালো বন্ধু।ছোটবেলা থেকেই আমরা একই স্কুলে পড়তাম আর সেখান থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব।সৌমিতাকে আমি ছোট্ট করে সিমি বলি।সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আমরা একসাথে বড় হয়েছি।সিমি আমি আর সা….
যাই হোক তুমি যেমনটা ভাবছো তেমন কিছুই নেই আমাদের মাঝে আমারা জাস্ট ফ্রেন্ড।
কথাটা বলেই নির্ঝর অনুর হাতে একটা চুমু এঁকে দেয়। তারপর উঠে দাড়ায়……..
নির্ঝর এক দৃষ্টিতে অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।অনুও ছলছল চোখে নির্ঝরের
“অনু আমার জীবনে প্রেম বলো আর ভালোবাসা বলো তা একবারই এসেছে।আর সেই একজন হলে তুমি।তুমি ছাড়া না কেউ কখনো আমার মনে ছিলো না কেউ কখনো আসবে।অনু বড্ড ভালোবাসি তোমায়”
কথাটা বলেই নির্ঝর বারান্দার দিকে হাটা ধরে তার বড্ড সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে।চেইন স্মোকারদের এই এক বিপদ একটু পর পর সিগারেটের নেশা মাথায় চড়ে বসে……
তবে নির্ঝর চেইন স্মোকার হলেও সিগারেটের নেশা তাকে যতোটা ঘায়েল করতে পারে নি তার চেয়ে বেশি ঘায়েল করেছে অনুর নেশা।
অনুর কথা বলা, চলা ফেরা,হাসি দুষ্টোমি সব নির্ঝকে বার বার ঘয়েল করেছে……
অনু এতোক্ষন কাঁদছিলো কিন্তু নির্ঝরের বলা শেষ কথাগুলো কানে আসতেই ঠোটের কোনে ঈশৎ হাসির রেখা ফুটে ওঠলো।কি জানি কি আছে নির্ঝরের সেই ভালোবাসি কথাটায়।এতো দিন নির্ঝরের কথাটা অসহ্য লাগলেও এখন বেশ ভালোই লাগে।।
জ্বানালার পাশে বসে আছে সায়ন।বার বার নির্ঝরের ফোনে ফোন করছে কিন্তু গতকাল হটাৎই ফোনটা কাটার পর প্রত্যেক বারই নির্ঝরের ফোনটা সুইট ওফ বলছে।
সায়নের মাথাটা হাং হয়ে আছে।কাল যখন নির্ঝকে ফোন করেছিলো তখন কোনো একটা মেয়ে ফোন ধরেছিলো।গলাটা বড্ড চেনা চেনা লাগছে সায়নের কাছে।হটাৎই নেটওয়ার্ক প্রবলেম তাই ভালোমতো কিছু শোনা যাচ্ছিলো না।
সায়নের কেন যেন মনে হচ্ছে ওটা অনুর গলা ছিলো।
কিন্তু নির্ঝরের ফোনে অনু কি করে আসবে……
অনু!!
একয়দিন সায়ন অনুকে নিয়ে এতো ভেবেছে যে শুতে গেলেও অনু বসতে গেলেও অনু।হয়তো মনের ভূল।।কথাগুলো নিজেই নিজেকে বলছিলো সায়ন
বাহিরে স্নো ফল হচ্ছে।
সায়ন এক মনে বাহিরে সাদা তুলোর মতো স্নো গুলো দেখছে।
অনুর বড্ড ইচ্ছে ছিলো হ্যানিমুনে এরকম একটা জায়গায় আসবে।
আর সারা রাত জ্বানালার পাশে বসে স্নোফল দেখবে।
ওহ্ ম্যাডামের আবদার সারা রাত সায়নকেও অনুর পাশে ঠায় দাড়িয়ে থাকতে হবে।
কি আবদার বাবা!!
সারা রাত নাকি দুজন হাত ধরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্নো ফল দেখবে
সায়ন তো অনুর এমন আবদার শুনে হেসে দেয়।
অনুতো রাগে লাল হয়ে গিয়েছিলো।
অনু যখন রেগে যায় তখন অনু ফর্সা গাল দুটো গোলাপী রং ধারন করে আর নাকের মাথাটা লাল হয়ে যায় তাতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে।
সায়ন কতো বার দুষ্টামি করে অনু নাক টেনে দিতো অনু তো আরো বেশি রেগে যেতো…..
অতীতের কথা মনে পড়তেই সায়ন হেসে দেয়।
“অনুকে তোমাকে নিয়ে কতো স্বপ্নই না ছিলো।কিন্তু মাতৃ আগ্ঞা উপেক্ষা করার সাহস বা স্পর্ধা কোনোটাই আমার ছিলো না।আমাকে ক্ষমা করো”
কথাগুলো ভাবতেই সায়নের ফোন বেজে ওঠে।
মোবাইলের স্ক্রিনে সৌমিতা নাম আর সায়ন,সিমি আর নির্ঝরের ছবিটা ভেসে ওঠে…….
চলবে…..
(