স্বামী পর্ব ২২

#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_২১

সোহানের দিকে পাশ ফিরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবারও চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলাম। মাথাটা হঠাৎ করে ঝিমঝিম করছে। কয়েকদিন ধরে হাজারও চিন্তা মাথার ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে। যার কারণে রাতে ঘুমাতে পারছি না বলে মাথা ব্যথা করছে। সোহানের মা আসার অপেক্ষা করছি তিনি এলে তার ছেলের সমস্ত বিষয় তুলে ধরব। নিজের ছেলেকে নিয়ে এতদিন অন্ধের মতো বিশ্বাস করে গেছেন কিন্তু আসলে যে তার ছেলে কত বড় নোংরা মেন্টালিটির বলে বুঝানো যাবে না। বাবার সাথে কথা বলাটা খুব জরুরি কিন্তু কীভাবে? এত কিছু ভাবতে ভাবতে চোখদুটো লেগে গেল। সকালে ঘুম থেকে উঠে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকলাম। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে রুমে এসে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি সোহান ঘুমুচ্ছে।
রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে চুলায় চায়ের পানি দিয়ে এক কাপ চা করলাম। লিকার হয়ে গেলে মগে ঢেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খেলাম।
ঝটপট আটা দিয়ে চারটে পরোটা বানিয়ে গতকালকের রান্না করা তরকারি আর ডিম পোচ করলাম। হটপটের ভেতরে পরোটাসহ ডিম রেখে সোফার উপরে ফ্যান ছেড়ে বসলাম। প্রচণ্ড গরম পরেছে শ্বাস করার মতো বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। ইচ্ছে করছে ফ্রিজ খুলে ঠাণ্ডা পানি বের করে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলি তাতে যদি অস্বস্তি কাটে।
কিছুক্ষণ সোফার সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি। হঠাৎ সামনের দিকে চোখ পরতেই সোহানকে দেখে চমকে উঠলাম।
সোহান শার্ট পরে দরজার কাছে এসে বলল,
– আমি নাস্তা আনতে যাচ্ছি তুমি বসো।
– নাস্তা আনতে যাওয়া লাগবে না আপনি টেবিলে বসেন আমি নাস্তা দিচ্ছি।
সোহান বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল,
– জান্নাত তুমি কী নাস্তা বানিয়েছ?
– জি।
– কখন?
– একটু আগে।
– তুমি এই সকালবেলা নাস্তা বানিয়েছ?
– সকাল কোথায়? প্রায় ৮ টা বাজে।
– যাই হোক একই কথা।
– আপনার মোবাইলটা আমার কাছে দিবেন? আমি একটু বাবার সাথে কথা বলতাম। অনেকদিন বলা হয়নি।
সোহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
– কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা কর আমি তোমার জন্য বিকালবেলা একটা মোবাইল কিনে নিয়ে আসব। টার্চ ফোন কী ইউজ করতে পার?
– কখনও করিনি তবে চেষ্টা করলে পারব। মানুষ পারে না এমন কোন জিনিস নেই।
– ঠিকাছে তাইলে বিকালে পেয়ে যাবে এখন জলদি নাস্তা দাও খেয়ে ব্যাংকে যাব।
সোহানকে নাস্তা বেরে সামনে দিলাম।
সোহান পরোটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে ডিম দিয়ে খাচ্ছে।
– মায়ের সাথে কী কথা হয়েছে? তারা আসবে কবে কিছু বলছে?
– কথা তো হয়েছে কিন্তু আসার কথাটা জিজ্ঞেস করতে মনে ছিল না। আজকে কল করে জিজ্ঞেস করে নিব।
– হুম।
সোহান খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে তারপর কুলি করে রুমে ঢুকল। একটুপরে রেডি হয়ে বেরিয়ে এসে বলল,
– জান্নাত আমি যাচ্ছি তুমি সাবধানে থেকো।
সোহানের কথাশুনে আমি তো পুরোই থ মেরে থমকে গেলাম। বিয়ের পরে এই প্রথম সোহান এমন কথা বলল।
সোহান দরজা লক করে চলে গেল।

নাস্তার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে বেশ অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম সমস্ত বিষয় নিয়ে কিন্তু মাথায় কিছু কাজই করছিল না।
দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে পরলাম ঘুমানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু ঘুম তো আসছে না। মাথাটাও ঝিমঝিম করছে। বিছানার উপরে এপাশ ফিরছি তো ওপাশ কিছুতেই ঘুম আসছে না। সোহানের মতিগতি ভালো লাগছে না। সোহানকে আমার কাছে সাইকো মনে হচ্ছে। হঠাৎ মনে পরল রাতের প্রটেকশনের ব্যাপারটা তো সোহানকে জানানো হয়নি।

সন্ধ্যার পরে সোহান রুমে এসে আমার হাতে মোবাইলের প্যাকেট ধরিয়ে দিল। জান্নাত এই নাও তোমার জন্য ফোন কিনে এনেছি।
প্যাকেটটা হাতে নিয়ে তো অবাক হয়ে গেলাম। তিনি তার কথা ঠিক রেখেছেন? একদিন তো বলেছিলেন মেয়েদের ফোন ব্যবহার করার পক্ষে সে নয় তবে হঠাৎ কী এমন হল যে সে নিজে থেকে ফোন কিনে দিতে চাইল এবং যেই বলা সেই করা। খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার মুখের দিকে।

সোহান তার মাকে কল দিল।
– আসসালামু আলাইকুম মা। কেমন আছেন? বাবা, সাথী কেমন আছে?
– ওয়ালাইকুম সালাম। আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে। জান্নাত কোথায়?
– এই তো আমার পাশে আছে।
– জান্নাতের কাছে দে কথা বলব।
সোহান ফোনটা আমার কাছে এগিয়ে
দিল।
ফোনটা কানের কাছে ধরে হ্যালো বলতেই মা বলল,
– জান্নাত কেমন আছিস? কোন খোঁজ খবর নাই। মায়ের কথা কী একবারও মনে পরেনি?
– পরেছে তো মা কিন্তু আমার তো মোবাইল নেই। কথা বলার সময় সমস্ত শরীরে তীব্র থেকে তীব্রতর ব্যথা করছে। তবুও কাউকে বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে লাগলাম। মা আপনি ও তো একটিবার কল করে কথা বলেনি? আপনিও তো ভুলে গেছেন।
– আমি যখন তোকে চেয়েছি সোহান বলেছে হয় তুই ঘুমাও না হলে সোহান অফিসে। আমি বারবার করে বলে গেলাম তোকে একা রেখে যেনো কোথাও না যায় তবুও সোহান গেছে বিষয়টা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। যাই হোক আমারই ভুল হয়েছে তোকে একটা মোবাইল কিনে দিলে ভালো হতো তাহলে এত ঝামেলা লাগত না।
– মা আপনারা কবে আসবেন?
– আল্লাহ বাঁচালে কালকে আসব।
– ঠিকাছে মা।
কথা বলা শেষ হলে সোহান ফোনটা নিয়ে অন্য রুমে চলে গেল।
আমি গম্ভির হয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। সোহানের মা আসলে সব কিছু বলে স্বামীর সংসার ছাড়ব। এমন স্বামীর ঘর করতে মন চাচ্ছে না। একটুপর সোহান রুমে এসে আমার পাশে বসে বলল,
– জান্নাত মোবাইল পছন্দ হয়েছে?
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম,
– পছন্দ আর অপছন্দের কিছু নেই। জীবনে মোবাইল তো ইউজ করিনি তাই জানিও না যে মোবাইল কেমন হয়। তাছাড়া আপনি যখন নিয়ে এসেছেন অবশ্যই ভালো হবে।
– ভিতরে সীম ভরা আছে। তুমি এখন তোমার বাবার সাথে কথা বলো।
অবাক হয়ে সোহানের দিকে তাকালাম।
– আরেকটা কথা, বাবার সাথে কথা বলো ঠিকাছে তবে আমার বিপক্ষে কোন কথা বলবে না। তোমার আর আমার ভেতরে যা আছে সেটা স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার বাহিরের কারও সামনে বলা যাবে না।

সোহানের কথা শোনার পরে কী উত্তর দিব বুঝতে পারলাম না। মাথার ভেতরে শুধু একটা বিষয় কাজ করছে সোহানের সাথে এক সাথে থাকা সম্ভব না।
হঠাৎ সোহানের ফোনটা বেজে উঠল।

স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অপরিচিত নাম্বার দেখে অনেকটা বিস্মিত হল সোহান। কয়েকবার বাজার পরে কলটা রিসিভ করে কাঁপা গলায় বলল,
– হ্যালো কে?
– আপনি কী সোহান বলছেন? নিলয় আপনার কী হয়?

নিজের নাম শুনে আরও চমকে গেল সে। আপনি কে বলছেন বলল, নিলয় আমার বন্ধু হয় কিন্তু আপনি আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছেন কেন? কোন সমস্যা হয়েছে?
– জি, নিলয়ের খুন হয়েছে। কে জেনো নিলয়কে খুন করে লাশটা জঙ্গলে ফেলে দিয়ে গেছে।

নিলয়ের খুন হয়েছে মানে কথাটা বলে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠল সোহান।
#স্বামী
#লেখনীতেঃ_নুসরাত_জাহান
#পর্বঃ_২২

নিলয়ের খুনের কথা শুনে হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। মনে হচ্ছে দমটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিছু ভেবে পাচ্ছে না কী করবে? তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপা গলায় বলল,
– নিলয়ের মা-বাবাকে কল করে জানাচ্ছি।
– আপনি একটু কষ্ট করে ঘটনাস্থলে আসবেন তাহলে ভালো হত।
আসার কথা শুনে আরও কাঁপা গলায় বলল,
– ঠিকাছে আমি কিছুক্ষণ পরে আসছি।

সোহান মোবাইলটা রেখে দিয়ে ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা বেয়ে তরতর করে ঘাম পরছে।
জান্নাত সোহানের দিকে আড়চোখে দেখে। অনেকক্ষণ কিছু জিজ্ঞেস না করে শুধু তাকিয়ে দেখছে সোহানকে।
জান্নাত বলার জন্য মুখ খুলবে তখনি সোহান বলল,
– জান্নাত নিলয় খুন হয়েছে।
– কী বলেন? কীভাবে?
– জানি না। এইমাত্র কেউ একজন কল করে বলল, যে নিলয় খুন হয়েছে। আমাকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেছে।

– আপনার কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে চেনা নেই জানা নেই আপনাকে কল করে নিলয়ের খুনের কথা বলবে কেন? আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন তো এটা কী আদৌ সম্ভব! নিলয়ের খুন হয়েছে মানলাম কিন্তু তারা আপনার নাম এবং নাম্বার কোথায় পেল? বিষয়টা একটু কেমন রহস্য লাগছে না আপনার? হুট করে কারও খুনের কথা পুলিশকে না জানিয়ে আপনাকে জানাবে কেন? আপনি তো নিলয়ের কিছুই হোন না তাইলে? যেখানে মা-বাবাকে জানানোর কথা সেটা না করে আপনাকে বলল? আমার কাছে সন্দেহজনক লাগছে। আরেকটা কথা নিলয়ের মা-বাবা যদিও মৃত্যুর খবরটা না পায় তাইলে আপনি নিলয়ের বাবার কাছে কল দিয়ে পুরো ঘটনার সত্যতা যাচাই করুন। একজন অপরিচিত লোক আপনাকে যেতে বললেই আপনি যাবেন এটা কেমন কথা! যদি আপনাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন তাহলে কী করবেন? মানুষকে বিশ্বাস করতে নেই। দিনকাল ভালো না যদি আপনার পুরানো কোন শত্রু হয়ে থাকে তাইলে তো সমস্যায় পরবেন।

জান্নাতের কথাগুলো শুনে সোহান পুরো অবাক হয়ে যায়। কী বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। জান্নাতের কথায় জোড় আছে এটা মানতে হবে। তবুও জান্নাতকে কিছু বুঝতে না দিয়ে চুপ করে কিছুক্ষণ নিজে নিজে ভাবল। জান্নাত তোমার কী সত্যি মনে হয় কেউ আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমনটা করছে? আমি তো কারও কোন ক্ষতি করিনি।
– হয়তোবা। আসলে আজকাল বোঝা যায় না কে সত্যি বলছে আর কে মিথ্যা? আপনার কাছে মনে হচ্ছে কারও ক্ষতি করেনি কিন্তু তার কাছে মনে হয়েছে আপনি তার ক্ষতি করেছেন। বিষয়টা এমনও হতে পারে আমি শুধু ধারণা করলাম মাত্র। সত্যি যে এমনটা হবে এটা বলা যায় না।
যাই হোক আমার যেটা মনে হল বললাম বাকীটা আপনার ইচ্ছা।
– ঠিকাছে। সোহান সোজা হাঁটা শুরু করল রান্নাঘরের দিকে।
আমিও ফ্যালফ্যাল করে তার পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

একটুবাদে হাত ভর্তি মগ নিয়ে রুমে ঢুকল সোহান। এখন সোহানকে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। মানুষটার সাথে বিয়ের এতদিন পরেও তাকে চিনতে পারলাম না এটা খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি। কিন্তু ভাগ্যের লেখন বদলানো যায় না এটাই চিরন্তন সত্য।

সোহান রুমে ঢুকে মগটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
– নাও কফি খেয়ে শরীরটা চাঙ্গা করে নাও।
– হাত বাড়িয়ে কফির মগটা হাতে নিলাম। মগে চুমুক দিতে দিতে বললাম, আপনার কী মনে খুশির দোলা লেগেছে নাকি! এতক্ষণ মনমরা হয়ে ছিলেন আর এখন পুরো চাঙ্গা! কাহিনী তো কিছুই বুঝলাম না। সব ঠিকঠাক আছে তো? নাকি মাথার ভেতরে অন্য কিছু ঘুরছে।
– হ্যাঁ সব ঠিক আছে। তুমি কফি খাও।

কফি খাওয়া শেষ করে মগটা টেবিলের উপরে রেখে মোবাইলটা চাপতে লাগল সোহান। অনেকটা বিরক্ত লাগছিল আমার। ততক্ষণে সোহানের ফোন আবারও বেজে উঠল। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে চোখদুটো বড় হয়ে গেল। মনে হচ্ছে ভুত দেখার মতো অবস্থা। স্ক্রিনের উপরে নিলয়ের নাম্বারটা ভেসে উঠেছে। তোতলাতে তোতলাতে বলল, একি নিলয়ের নাম্বার থেকে কে কল করেছে? একটু আগে তো বলল নিলয়ের নাকি লাশ পাওয়া গেছে। তাইলে কী নিলয়ের আত্না কল করেছে?
সোহান কথাগুলো বলছে আর ভয়ে কাঁপছে। এবার আর বসে থাকতে পারলাম না। ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে হ্যালো বলতেই অপর পাশ থেকে একজনে বলল,
– নিলয় যে খুন হয়েছে সেটা তো সোহানকে কনফ্রম করে বলা হয়েছে তবুও লাশটা দেখার জন্য আসল না কেন? বন্ধুর লাশ দেখতে না এসে পারল কীভাবে? মানুষ তো মানুষের জন্য কিন্তু সোহান এত বড় পাষাণ হইল কীভাবে?
– লোকটির কথা থামিয়ে বললাম, কে আপনি? তাছাড়া সোহান নিলয়কে দেখতে যাবে কী যাবে না সেটা তার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। আপনি এতে নাক গলানোর কে? শোনেন লাশ পাওয়া গেছে তো সেটা সোহানকে বারবার বলছেন কেন? পুলিশকে ইনফর্ম করেন তাইলে তারা এসে সব কিছুর ব্যবস্থা করবে। শুধু শুধু একটা মানুষকে হয়রানি করার কী আছে?
– ওয়েট ম্যাডাম, আপনি কী বলছেন বুঝতে পারছেন? আমি সোহানকে হয়রানি করতে যাবো কোন দুঃখে? আমার তো আর দায় পরেনি। সব কিছুর একটা লিমিট আছে। ঘটনাস্থলে সোহানের চশমা পেয়েছি তাই বুঝতেই তো পারছেন সোহান সন্দেহের তালিকায় পরছে। পুলিশে জানানোর আগে সোহানের সাথে কথা বলাটা দরকার। শেষে হিতে বিপরীত হবে।

– আপনি এত নিশ্চিত হয়ে কী করে বলছেন যে চশমাটা সোহানের? আপনি কী খুন করার সময় সোহানকে দেখেছেন?
– না দেখিনি।
– তবে চশমাটা নিশ্চিত করে কীভাবে বলছেন ওটা সোহানের? এক রকম চশমা তো অহরহ পাওয়া যাচ্ছে তাইলে এটা কোন ধরণের কথা।

– দেখুন ম্যাডাম, আপনার সাথে তর্ক করার কোন ইচ্ছা নেই যদি সোহান নির্দোষ হয়ে থাকে তাইলে সেটা ভিন্ন কথা। আর যদি দোষী প্রমাণিত হয় তাইলে এর ফলাফাল ভালো হবে না।
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কলটা কেটে দিয়ে সোহানের হাতে ফোনটা দিয়ে দিলাম।
– জান্নাত তবে কী সত্যি নিলয়ের মৃত্যু হয়েছে? আমার তো বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে। নিলয়ের নাম্বার থেকে কল এসেছে বিষয়টা এখন ভাবাচ্ছে।

– জানি না। তবে বিশ্বাস করতে পারছি না।
– তাইলে আমি গিয়ে একবার দেখে আসব।
– যদি আপনার সমস্যা না হয় তাইলে পরিচত কাউকে নিয়ে যেতে পারেন। অন্ততপক্ষে নিজের মনকে সান্ত্বনা তো দিতে পারবেন।

সোহান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরল। রাত অনেক বাজে এখন কাউকে ডাকাটা তার ঠিক হবে না। তাই সে নিজে একা যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিল।

গাড়ি চলছে ধীর গতিতে। সোহান চালাচ্ছে ঠিকি তবে মনের ভেতরে অজানা ভয় কাজ করছে। সত্যি নিলয় মরেছে? যদি মরে থাকে তবে কে মারল ওকে? আমার জানা মতে তো নিলয়ের রিলেটিভ তেমন নেই তবে কী বাহিরের লোক মেরেছে? কিন্তু আমার চশমাটা ঘটনাস্থলে কীভাবে পেল? সত্যি কী আমার চমশা? আদৌ কী এমনটা সম্ভব? হঠাৎ মনে পরল একবার তো নিজের চশমাটা নিলয়কে সব কিছুর হিসেব মিলাতে মিলাতে গাড়িটা এসে থামল। সুনসান জায়গা তাই অনেকটা ভয় কাজ করছে সামনে আগাতে। যতদূর চোখ যাচ্ছে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না এমন অন্ধকার রাস্তায়। অনেকটা পথ আগানোর পরে সিদ্ধান্ত নিল সামনে আর আগাবে না। হঠাৎ মনে পরল ওই নাম্বারে কল দিয়ে একবার চেক করে দেখি সে এখন কোথায় আছে? পকেট থেকে ফোনটা বের করে নাম্বারটাতে কল করল সোহান। কিন্তু নাম্বারটি সুইচ অফ বলছে। নাম্বারটা বন্ধ দেখে সোহানের মাথায় আবারও চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে। নাম্বারটা বন্ধ কেন? তাইলে কী জান্নাতের কথা সত্যি! গাড়িটা পিছনে মোড় ঘুরাতে গিয়ে সামনে কাউকে অস্পষ্টভাবে দেখতে পেল সোহান। ভালো করে খেয়াল করার চেষ্টা করল কিন্তু চেহারাটা কাপড় দিয়ে ঢাকা। দেখতে দেখতে গাড়ির একদম কাছাকাছি চলে এসেছে। সোহান ভেবে পাচ্ছে না দরজা খুলবে কী খুলবে না। সোহানের বলার অপেক্ষা না করে লোকটি গাড়ির গ্লাসে টোকা দিল। সোহান দরজাটা খুলতে বাহিরে বের হয়ে বলল,
– কে আপনি?
– আমাকে আপনি চিনবেন না আমি আপনাকে ভালো করেই চিনি। আপনাকে খুন করার জন্য আমাকে সুপারি দেওয়া হয়েছে।

নিজের খুনের কথা শুনে সোহানের চেহারার রঙ পাল্টে গেল। ভয়ে সমস্ত শরীর শিউরে উঠল। রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে এপাশ ওপাশ চোখ করে দেখে জঙ্গলে ভরপুর। কোথায় পালাবে বুঝতে পারছে না। গাড়িতে হাত রাখতে গেলে লোকটি হাতের উপরে তার হাত রাখে। সোহান মনে মনে ভাবতে লাগল এবার বুঝি তার জান শেষ। এই জঙ্গলে মেরে ফেলে দিলে তার লাশেরও কোন খোঁজ থাকবে না। লাশটা শকুন, শিয়ালরা ছিঁড়ে খাবে।
কথাগুলো ভাবতে পারছে না। ভাবতে গেলে বুকের বাঁ পাশে চিনচিন করে ব্যথা করে। সোহান পালানোর জন্য পা বাড়াবে তখনি পিছন থেকে কেউ এসে মাথার উপরে বারি মারে। সোহানের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। চোখদুটো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে যায়।
ধপাস করে তার দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পরে। মাটির উপরে শুয়ে পরাতে তার সমস্ত শরীর কাঁপতে থাকে।
পিছন থেকে কেউ অট্টহাসিতে মেতে উঠে। হাসি থামিয়ে কী যেনো বলছে কিন্তু সোহান বুঝতে পারছে না।
কণ্ঠস্বরটা সোহানের কানে আসতে লাগল। মনে হচ্ছে কণ্ঠটা খুব পরিচিত কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তি নেই।

চলবে…………..
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here