স্বামী পর্ব ২৪

#স্বামী (সিজন-২)❤️
#পর্ব -২৪
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_____________________________

“- ভাতের হাড়িটা নিয়ে ঘরে আসছিলো তিতিল।
হাত থেকে ফসকে হাড়িটা ফ্লোরে পরে সব ভাত পরে ছরিয়ে ছিটে গেছে।গরম ভাত নিজের পায়েও কিছু পরেছে।শরিলের এক কোনে যান্ত্রনার আহ. শব্দ বেরিয়ে গেছে।
— এমন বিকট শব্দে তিতিলের বাবা নিজের ঘর থেকে ছুটে এসেছে।
” ভাতের হাড়িটার পাশে বসে ভাত গুলো দেখছে তিতিল।

কিরে মা কি হল!!
তিতিলের উওর দিতে হল না।সামনেই স্পষ্ট দেখতে পারছে হাড়ি থেকে ভাত গুলো ফ্লোরে ছিটকে রয়েছে।

— বাবার দিকে তাকিয়ে তিতিলের করুন স্বর।তুমি বসো বাবা এখনই আবার ভাত করে দিচ্ছি।
” আহা ব্যাস্ত হস না, ভাত করতে আর কত ক্ষন। তবে তুই এত চিন্তায় মরছিস যে??
— বাবা ভাত পরে যাওয়া নাকি অলক্ষীর লক্ষন!!
আমি কি সত্যি অলক্ষী বাবা।

“চুপ কর কি বাজে বকছিস।তুই অলক্ষীনা রে মা, যারা তোকে এসব বলে ওরাই অলক্ষী।
আমার মেয়ের মত লক্ষী মেয়ে আছে নাকি এই মহল্লায়।

তিতিলের বাবা তো তিতিলকে শান্ত করতে চাইছে।তবে তাকে কে শান্ত করবে? মেয়ে স্বামীর ঘর ছেরে বিনা অপরাধে বাপের বাড়ি পরে আছে। মেয়েটার জীবন আমিই শেষ করেছি। সংসারের হাল সামলাতে পারিনি। অভাবো মদ গিলা শুরু করি।আর এই মদ আমায় আরো কষ্টে ফেলে।ওর মাকে হারালাম।এই মেয়েটাকেও অবহেলায় অনাদরে রাখলাম।আর স্বামীর ঘরে গিয়েও সেই অনাদরে।
জীবনে ব্যার্থতা ছারা আমার আর কি আছে!

মেয়েকে শেষে চরিত্র হীনা অপবাদ।
আসার পর থেকে মেয়েটা আমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে,আমি যাতে ভেঙে না পরি সেই কারনে নিজেকে শক্ত রাখতে চাইছে।তবে বাপ হয়ে মেয়ের চোখের কষ্ট টা বেশ বুঝতে পারি।

— তিতিল তো আবার ভাত বসিয়েছে।মন তো রান্নায় নেই।তার মনে হাজার প্রশ্নের পাহাড়।গর্ভে আসা সন্তানের বাবা কে হবে? আমার সন্তান কে না ঐ বাজে ভাষায় কেউ ডাকে।
সর্ব হারা আমি এই সন্তান আমার শেষ সম্বল ওর কোন কষ্ট আমি সইতে পারব না।
আর উনিকি কোন দিন আমায় কাছে ডাকবে! যদি ডাকে তাহলে আমি যাবো নাকি নাহ!!!

———
“- হাসপাতালের বেডে রিদয় অচেতন অবস্থায়। ডাক্তার তার সাদ্ধ মতই চেষ্টা চালাচ্ছে।
আসলে অনেক রক্ত ঝরেছে।
ভাগ্য ভালো গুলিটা বাম দিকে লাগেনি।ডান দিকে গুলিটা বিধেছে। আরিফ আর সায়ন পাগলের মত এদিক সেদিক ছুটছে।শরিফ তার বৌকে নিয়ে রৌনা দিয়েছে।তবে পৌছাতে পৌছাতে বড় দেরিই হবে।

—————————

“-
সায়নের করা সেতুর গুলিটা তার বাহু ছুয়ে বেরিয়ে গেছে। এটা তেমন কিছু নয়। নিজের শরিলে আঘাত পাবার পর যন্ত্রনা কেমন তা টের পেলো সেতু।আহ করে হাতটা চেপে ধরে বসে পরেছিলো।

কেউ তাকায়নি ওর পানে।রিদয় তো নিজের কষ্টে কাতর হয়েও সেতুর পানে তাকিয়ে ছিলো কিছুক্ষন, এই মেয়েকেই ভালোবেসেছিলাম! ওকে নিয়ে জীবন পার করার কথা ভাবছিলাম!

– রিদয়কে হাসপাতালে নেয়ার জন্যে রৌনা দিয়েছিলো ওরা এখন সেতুকে শাস্তি দিতে গিয়ে দেরি না হয়ে যায়। ওকে তো পরে দেখছি
।সেতু তখনও বসে চোখের জল ছারছে।
তবে মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটেছে রুহিকে দেখে। আর চিন্তা কি!!
” রুহি আয় জলদি আয় আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চল জলদি।

— রুহি সেতুর কথায় কর্নপাত করল না। কেন করবে? যাকে ভালোবাসে বলে দাবী করে তার বুকে গুলি চালাতে হাত কাঁপেনি।তখন আমিতো শুধু কাজের সহ পাঠী আমায়ও যে কোন দিন ওর গুলির শিকার হতে সময় লাগবে না।
— কি রে হা করে কি ভাবছিস,আয় না জলদি তুল আমায়। দেখ না কত রক্ত ঝরছে।সেতু নিজের হাতটা চেপে ধরে রুহির সাহায্য নিয়ে উঠতে চাইছে।

“যে ইচ্ছা করে কাদায় পরে তার উঠতে অন্য কারো সাহায্যের দরকার হয় না।
— এই মূহুর্তে হেয়ালি পনা পছন্দ না হলেও কিছু করার নেই।এখন সে অচল।অসহায়তা ছারা আর কি বা আছে।
” বোন আমার এই শায়েরি রেখে আমায় হাসপাতালে নিয়ে যা,পরে তর সব শায়েরি শুনব।
—- রুহি সেতুর কাছে এসেছে হাতটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।বেশ জখম হয়েছে তবে তেমন ব্যাপার না।রিদয়ের যা অবস্থ্যা করেছে সেই তুলনায় ওর মাথায় গুলিটা করা দরকার ছিলো।

— হাসপাতাল তো যাবি তবে,তোকে আমি না অন্য কেউ হাসপাতালে নিয়ে যাবে।
“সেতু হাতের থেকে চোখ সরিয়ে রুহির পানে প্রশ্ম সূচক হয়ে তাকিয়ে আছে।
কে নিয়ে যাবে রুহি কি পাগল হল! এখানে কে আছে আমার শুভাকাঙ্খী।
-কে??
প্রশ্নটা করার আগে সেতুকে নেয়ার জন্যে তিন জন লোক এসেছে একজন মহিলা দুইজন পুরুষ।
” পুলিশ!!!!
— sry সেতু, যে নিজের ভালোবাসার মূল্য জানেনা সে বন্ধুত্বের কি দাম দেবে।তর ঐ মরন ঘাতি পিস্তলের গুলিতে আমার নাম লিখা নেই তার কি গ্যারান্টি। এত দিন ভাবতাম তুই রিদয়কে ভালোবাসিস ওকে ছারা বাঁচবিনা, তাই তর কথা মতই কাজ করেছিলাম।তবে এখন তো তর আসল চেহারার দেখা মিলেছে।
—— তাই তর সব কুকর্মের কথা আমি কোর্টে বলব। রিদয়ের মত মানুষটাকে এভাবে আঘাত করলি? ওর বুকে নয় তুই ওর বিশ্বাসে গুলি করেছিস…
ইন্সপেক্টার নিয়ে যান এই বেঈমানটাকে।আপনাদের সিনিয়র অফিসারকে আমার সামনে গুলি করেছে ও।
আর নিজের হাতে গুলি করে নিজেই বাঁচতে চাইছে আইনের কাছ থেকে।

— পা পাগল হলি নাকি কি সব বকছিস,সেতু তো ভরকে গেছে। কি করবে কিনা, দৌড়ে পালাতেও পারবে না এখন।রুহিটা মুখ খুললে বেশ বিপদ। এমন পরিস্থিতিতে পরবে ভাবতেই পারেনি।নেশার রেশ কেটে গেছে পুলিশ দেখে সেতুর।

—চলুন ম্যাডাম আপনাকে আমাদের সাথে জেতে হবে।

বলে না ঠেলার নাম বাবাজী,তাই ভুলভাল কত কিছুই বলবে। পুলিশের সাথে যাওয়া??।।ইন্সপেক্টার আমায় তো চেনেন আমিকে?? আপনাদের নামে মামলা করব মিডিয়ার দ্বারা বদনাম করে ছারব যদি আমায় গায়ে হাত লাগান।

“-সরি ম্যাডাম মিডিয়া হাজির অলরেডি, আপনার কর্ম সব ক্যামেরা বন্ধি। তাই অহেতুক নাটক করে সময় নষ্ট করবেন না চুপ চাপ চলুন নয়তো!!!

রুহি তুই!! এত বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করলি??
“হ্যা রে সেতু তর চেলা তো তর থেকেই বুকে ছুরি মারা শিখেছি কিনা।

সেতুকে তো পুলিশ আটক করেছে তবে রিদয়কে যে আঘাত করেছে সেই ভরপাই কি হবে?

——
” আরিফ রহমান কোন কিছুতেই মাথা কাজ করছে না। এক মাএ ছেলেটা এভাবে চোখের সামনে পরে রয়েছে ভাবতেই গা সিউরে উঠছে।
— আমার পাপ এগুলো।শুধু নিজের ছেলের বৌ কেই নয় বরং একটা মায়ের মনে আঘাত করেছি তার সন্তানকে পাপ বলেছি। মরতেও বলেছি, তাই আজ আমার সন্তান মূত্যুর পথে।
আমার ক্ষমা চাইতে হবে হ্যা ক্ষমা!!!

এত গুলো ফোন পেয়েও তিতিলের বাবা ফোনটা তুললো না। আসা যাওয়ায় অনেক সময় লাগবে।তাই তিতিলের কাছে খবরটা পৌছাতে পারলে সে উরন্ত পাখি হয়ে তার স্বামীর কাছে পৌছে যাবে।
তবে ফোনটা না তুললে খবর পাঠাবো কি করে!!
রিদয়ের জীবন এখনও কিছুটা বিপদ জনক। এই মূহুর্তে তিতিলকে সব জানানো দরকার স্বামীর পাশে এসে ও দাড়াবেনা তো কে দাড়াবে। জানাতে তো হবেই.
“————

★★

“- সন্ধা নাগাত আরিফ তিতিলের বাড়ি পৌছে গেছে।
দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছে অসহায়তা জেনো তার সঙ্গে তারা করছে।
— তিতিলের বাবা তিতিলকে আরিফ রহমানের এত ফোন দিলো তা বলেই নি।আমার মেয়েকে রক্ত কান্না করিয়ে ঐ বাড়ি থেকে বার করেছে।এখন আর কি বাকি যার কারনে আবার ফোন দিচ্ছে!

আমি এখনও বেঁচে আছি,মেয়েকে সঠিক ভাবে পালন করিনি এমন অধম পিতা ছিলাম।
তবে এখন মেয়ে আর তার সন্তান কে ভরন পুষনের ক্ষমতা আমার আছে।চাইনা ওদের কাউকে।ওদের ছায়া তো দূর ওদের কন্ঠস্বরও আমার মেয়ের কানে পৌছাতে দিবো না।

— দরজায় কেউ ঠক ঠক করে শব্দ করছে।
এই সন্ধায় আবার কে হাজির হল!
তিতিলের বাবা এত বিকট শব্দে রেগেই গেছে।কারন মেয়েটা সারাদিন নাওয়া খাওয়া ছারা। রাতে তো ঘুমালোই না।সবে মাএ নানান কথায় ভুলিয়ে ঘুমপারিয়েছি।এভাবে না খাওয়া আর রাত জাগা ওর জন্য ভালো নয়।তার উপরে উটকো ঝামেলা এসে এখন ওর ঘুম ভাঙাতে ব্যাস্ত।

“- দরজা খুলতেই তিতিলের বাবার রাগ এবার সিমা অতিক্রম করেছে।
আপনি এখানে কি চান??

—- ভাই তিতিলকে ডাকুন আমার বড় বিপদ।
” ভাই কে ভাই? আর আপনার বিপদে আমি কি করতে পারি! এটাকি সমাজ সেবার ক্যাম্প!!
— আমি জানি আপনি রেগে আছেন, কারন আমি কাজই এমন করেছি।তবে এখন সেই সব নিয়ে বসলে চলবে না।তিতিলকে একটিবার ডাকুন, ওর সাথে কথা আছে।
” আপনি চলে যান আরিফ রহমান সাহেব। আপনি যে অপমান আমার মেয়েকে করে বাড়ি ছারা করেছেন।এর চাইতে কোন অংশে কম অপমানিত হবেন না।
তাই আমার ধর্যের পরিক্ষা না নিয়ে বিদায় হন।

“–উনাকে তো আরিফ বুঝাতে পারছেনা একটিবার তিতিলের দেখা মিলতো।রিদয়ের এই খবর শুনে আর বসে থাকতে পারত না।
” দেখুন “”
দেখা শেষ এবার এই চেহারাটা নিয়ে বিদায় হন তো।
— তিতিলের বাবারই বা কি দুষ,মেয়েকে এভাবে যে লোকটা বাড়ি ছারা করে। একটি বারও ভাবলোনা মেয়েটা কি আত্মহত্যাই করবে কিনা।

“আমার ছেলেটা মরে যাচ্ছে ভাই।একটি বার তিতিলকে ডেকে দিন আপনার পায়ে পরি।

ঘামে আরিফ রহমানের শরিল ভিজে গেছে সাদা পান্জাবিটা ভিজে একাকার।শরিলটা দেখা যাচ্ছে।বেশ হন্ত দন্ত হয়েই এসেছে বুধ হয়।
— তিতিলের বাবার এত কিছুর দিকে লক্ষ নেই।তার এক কথা আরিফ এখান থেকে চলে যাক।

পান্জাবিটা মেলে দিয়ে আরিফ তিতিলের জন্যে ভিক্ষা চাইছে।আমি আমার কর্মে লজ্জিত ভাই। যা শাস্তি দিবেন তাতেই আমি প্রস্তুত,তবে এখন শুধু একটিবার তিতিলকে ডেকে দিন….

তিতিল বাড়িতে নেই।ওর খালার বাড়িতে গেছে।কথাটা বলেই দরজাটা বেশ শব্দ করেই বন্ধ করে দিয়েছে।

“-হতাশায় মুখ ছেয়ে গেছে।এই মুহুর্তের কি করবে!
এখন তিতিলকে না বলতে পারার ব্যার্থতা, অন্যদিকে ছেলেকে হারাবার ভয়। এখানে বসে থেকে লাভ হবে না এর চেয়ে বরং রিদয়ের কাছে যাওয়া যাক।অনেক দূর জেতে হবে।

——-

— সায়ন বার বার আরিফকে জলদি হাসপাতালে পৌছাতে তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে,রিদয়ের রক্তের প্রয়োজন। ব্যান্ডেজের উপরভাগ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতটা রক্তক্ষন হচ্ছে।
এখনই আরো রক্ত চাই o+.

আরিফের মাথা আরো ঘুরে গেলো।এই সময় রক্ত কোথায় পাবো? সায়ন তো রিদয়কে ফেলে কোথাও ছুটতেও পারছে না।

— যত দ্রুত সম্ভব আরিফ হাসপাতালে পৌছেছে। রাস্তায় অনেক ব্ল্যাড ব্যাংকে খুজ নিলো, কাজ হল না।
আজকে কি হয়ে গেলো কোনো দিন কল্পনাও করেনি এমন দিন আসবে। কতটা শান্তিতে ছিলাম।
আর আজ সব এলোমেলো হয়ে গেলো।
আমার পরিবারটা ছরিয়ে গেলো।
আরেক দিকে খালি বাড়িতে জুই ফুল।ওরা কি করে থাকবে একা”!!
“——–★

” রাত ৩টা নাগাত আরিফ হাসপাতালে পৌছে গেছে।
এখন রক্তের কি জোগার হল! বিচলিত গলায় বেশ নরম করে জিজ্ঞাসা। চোখে পরল জুই ফুল এখানে! ওরা একা কি করে এলো? এসেছে তো ভালোই করেছে তবে এলো কখন?কার সাথে!

তবে আরেক খবরটা শুনে এক রাশি ঠান্ডা হাওয়া মন ছুয়ে গেলো আরিফ রহমানের ।
“আল্লাহ মানুষকে পরিক্ষায় ফেলেন আবার তিনিই রক্ষা করেন।

রক্তের জোগার হয়েছে।আর রক্ত দাতার নাম শুনেই মুখে হাসি চোখের কোনায় জল এসে গেছে। তৃীব্ব মাথা যন্ত্রনার অবসান ঘটেছে।
তবে এটা কেমন করে হল!! ভাবনার বাহিরে চলে গেছে।
ওরাহ…….
— সায়নের গলা জরিয়ে হাসিতে মেতে উঠেছে।এবার আমার ছেলে ভালো হয়ে উঠবে সায়ন দেখিস। যা লাখ টাকার ঔষধে পারেনা তা প্রিয় মানুষের উপস্থিতি করে দেয়। আর সেই প্রিয় মানুষ আমার ছেলের পাশেই আছে।আর কিছুই হবে ওর।

চোখের পানি গাল বেয়ে মুখে আসার আগেই আরিফ তা মুছে নিয়ে রুমে ঢুকেছে।

(” চলবে)””””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here