###__স্বামী__###
পর্ব-৩১
#Nirzana(Tanima_Anam)
-একটা সময় ছিলো যখন তোকে আমি ভালোবাসতাম
একটা সময় ছিলো যখন তোকে আমি পেতে চাইতাম!!
সময়টা আমার ছিলো চওয়াটাও আমারই ছিলো।তুই সেই চাওয়ার দাম দিস নি সৌমিতা তাহলে আজ কেন??কেন বন্ধুত্বের মুখোশ পড়ে আমার ক্ষতি করতে এসেছিস??
নির্ঝর সিমির দিকে তাকিয়ে একদমে প্রশ্নটা করে।সিমি নির্ঝরের থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে আছে।আর অনু নির্ঝরকে ধরে ফুপিয়ে কাঁদছে…..
নির্ঝর সিমিকে ফোনে কথাগুলো বলার পর সিমি নিজেকে আর সামলাতে পারে নি সোজা এই বাড়িতে চলে আসে….
সিমি বাড়িতে এসেই নির্ঝরের ঘরে চলে যায়।নীরা সিমিকে দেখেই নির্ঝরকে ফোন করে তারপর পেছন পেছন ছুট লাগায় ঘরের দিকে।কেন যেন সিমির হাব ভাব তার ভালো লাগছে না।
অনু তখন বারান্দায় রাখা ফুলের গাছগুলোতে পানি দিচ্ছিলো….
সিমি সোজা ঘরে গিয়ে অনুকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় চলে যায়।বারান্দয় যেতেই দেখে অনু গুন গুন করে গান গাইছে আর গাছে পানি দিচ্ছে।
অনুকে হাসি মুখে দেখেই সিমির রাগ চিড় চিড় করে মাথায় উঠে যায়।
সিমি গিয়ে অনুর পেছনে দাড়ায়।অনু একটু পেছোতেই সিমির সাথে ধাক্কা খায়।
অনু ভয় পেয়ে যায়।পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে সিমি দাড়িয়ে আছে
-সিমি আপু তুমি??
-ঠাসসসসসস…
সিমি রাগে গজ গজ করতে করতে অনুকে চড় মারে।অনু ছিটকে গিয়ে ফুলের টবের উপর পরে যায়।টবের কর্নার লেগে অনুর কপালটা কেঁটে গেছে।ঘটনাটা হটাৎ ঘটায় অনুর মাথায় কিছু আসছে না।
নীরাও হতম্বের মতো দাড়িয়ে আছে।কি হচ্ছে বুঝে উঠার আগেই সিমি অনুকে টেনে ঘরে নিয়ে আসে
-এই মেয়ে তোর লজ্জা করে না অন্যের প্রেমিককে কেড়ে নিয়ে সংসার করতে??তোর লজ্জা করে না??তোর জীবনেও তো একজন ছিলো বুঝিস না চোখের সামনে যখন ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কেউ কেড়ে নেয় কতো কষ্ট হয়??বুঝিস না??জানিস না নির্ঝরকে আমি ভালোবাসি??জানিস না নির্ঝর আমাকে ভালোবাসে??
অনু অবাক হয়ে সিমির কথাগুলো শুনছে….কি বলবে বুঝতে পারছে না।অনুর কানে বার বার সিমির বলা একটা কথা বাজছে
“প্রেমিক…”
-ওনি তোমায় ভালোবাসে….???(অবাক হয়ে)
-হ্যা হ্যা তা নয় তো কি??একটা ছেলে আর একটা মেয়ে যখন এতো কাছা কাছি থাকে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়াও আরো কিছু থাকতে পারে তুই জানিস না??এটা বন্ধুত্ব না এটা ভালেবাসা নির্ঝর আমায় ভালোবাসে তাই এতো কিছুর পরও ও আমাকে ওর জীবনে এলাও করে…..বুঝিস না তুই???ছবি দেখায় নি তোকে??দেখিস নি???তাও কেন পরে আছিস আমার নির কে নিয়ে??
কথাটা বলেই সিমি অনুকে আবার ধাক্কা দেয়।অনু আবার পড়ে যেতে নিলে নীরা এসে অনুকে ধরে নেয়।
অনুর মাথা ঘুরছে।
-কি করছো কি!!এরকম পাগলের মতো বিহেভ করছো কেন সিমি পি…ভাবির লেগে যাবে।দেখো কি করেছো কপালটা কেটে গেছে।তোমার এইসব পাগলামো থামাও!!
নীরা কথাগুলো বলেই অনুকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।এদিকে অনু চিন্তায় মগ্ন
“কিসব বলছে সিমি এগুলো?কেন বলছে?তহলে কি এবার ও সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবো আমি??”
অনু নীরাকে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে যায়।নীরাও কেমন থম মেরে আছে…..
-সিমি আপু সত্যি করে শুধু একটা কথা বলো তো মি.চৌধূরী কি তোমাকে ভালোবাসে???
-হ্যা হ্যা বাসেই তো নির শুধু আমাকে ভালোবাসে…..
-ভালোবাসে না বাসতো…..!!!সময়টা পল্টেছে শব্দটাও পাল্টেছে…..
নির্ঝরের গলা শুনে সবাই পেছন ফিরে তাকায় নির্ঝর দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে।
অনু নির্ঝরকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারে নি একছুটে গিয়ে নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে।
নির্ঝরও অনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে…..কঁপালে একটা চুমু এঁকে দেয়।
সিমি ছলছল চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।এদিকে অনু নির্ঝরের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে…..
নীরাও ছুটে গিয়ে নির্ঝরের পাশে দাড়ায়।
-ভাইয়া আসছিস। দেখনা তোর এই শাঁকচুন্নি বান্ধবী পাগল হয়ে গেছে।পাগলের মতো কি সব বলছে আর কি সব করছে।ভাবিকে তো…….
নীরাকে কথার মাঝে থামিয়ে দেয় নির্ঝর……..
অনুর দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে….
[স্কুল লাইফ থেকেই সৌমিতার সাথে আমার বন্ধুত্ব।স্কুলের গন্ডিও আমরা একসাথেই পার করি।দুষ্টুমি খুনসুটির মধ্যে দিয়ে বেশ চলছে সব কিছুই।তারপর বিদেশ পাড়ি জমাই ও একসাথে।ওখানেই আমরা সারা জীবন একসাথে থাকার প্লন করি।আমাদের সম্পর্কের মধ্য পরিবর্তনটাও ওখান থেকেই শুরু।বেশ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছিলাম আমরা সরি নট আমরা ওনলি মি।শুধু আমি
বিদেশে হাই স্কুল কমপ্লিট করতেই দেশ থেকে খবর আসে আমার বাবা আর নেই।তখন আমি দেশে চলে আসি ক দিনের জন্য।বাট এখানে এসেই আমি বুঝতে পারি।মা আর নীরার আমাকে প্রয়োজন।আমি পার্মানেন্ট দেশে থাকার প্লান করি।কিন্তু দেশে তখন আমি একা সম্পূর্ণ একা।
মানসিক ভাবেও বেশ দূর্বল ছিলাম।তখন আমি সিমিকে সরাসরি দেশে ফিরে আসতে বলি ইভেন সৌমিতাকে এটাও বলেছিলাম ও ফিরে এলে আমি ওকে বিয়ে করে দেশেই সেটেল হবো বাট…..
কিন্তু সিমি তখন নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত।ও দেশে আসতে চায় নি।ও বিদেশেই……
নির্ঝর একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করে
-অনু আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিলো তখন যখন আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।আমি তখন খুব একটা বড় ছিলাম না আমি মেন্টালিও এতো স্ট্রং ছিলাম না আমার সাপোর্টের প্রয়োজন ছিলো সিমি আমার সঙ্গ দেয় নি।বরং আমাকে রিজেক্ট করে বলে দিয়েছিলো ও নাকি শুধু আমার বন্ধু হয়ে থাকতে চায়।ব্যাস্ এই আর কি]
নির্ঝর কথাগুলো বলেই অনুর দিকে তাকায় অনু তখন হা করে নির্ঝরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
-অনু তখন সিমির প্রতি আমার যা ছিলো তা ভালোবাসা না কি অ্যাট্রাকশান আমি জানি না তবে এখন সিমির জন্য আমার হৃদয়ে আর বিন্দু মাত্র জায়গা নেই…….আমি শুধু মাত্র অনুকেই ভালোবাসি
সিমি ছুটে এসে নির্ঝরের কলার চেপে ধরে….
-আমি ভুল করেছি বার বার বলছি আমি ভুল করেছি আমি তোকে ভালোবাসি নির….তুই চলে আসার পর আমি তোকে কতোটা মিস করেছি আমি তোকে কতোটা ভালোবাসি তুই কল্পনাও করতে পারবি না…..
অনু সিমিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়
-জানো প্রকৃত ভালো তো সেই বাসে যে খারাপ দিনেও সেই মানুষটার হাত ধরে রাখে।তুমি ওনার হাত ধরো নি….তাই
-তাই প্লিজ সিমি আমার গুছানো লাইফটাকে এলোমেলো করে দিস না।আমি অনুকে ভালোবাসি।আমার জীবনের শেষ দিনও আমি অনুর সাথে কাটাতে চাই….
সিমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে জবাব দেয়
-ভালো থাকিস নির আমি আর তোকে কখনো ডিসটার্ব করবো না পাক্কা প্রমিস…..
সিমি শেষবারের মতো নির্ঝকে একবার জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।তারপর আর নির্ঝরের দিকে ফিরেও তাকায় নি।তবে নির্ঝর তাকিয়ে ছিলো এক দৃষ্টিতে সিমির যাওয়ার দিকে…..
দুচোখ বেয়ে একফোটা পানি টুপ করে মেঝেতে পড়ে
“কিছু মানুষের প্রতি কিছু অদ্ভুদ টান থাকে।এক অদৃশ্য বন্ধন থাকে হয়তে এমন কোনো অদৃশ্য বন্ধন নির্ঝর সিমির মধ্যেও ছিলো।তবে সব বন্ধন কি আর সারা জীবন টিকে থাকে??”
অনু গিয়ে নির্ঝরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে…..নীরা অনেক ক্ষন কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে গেছে।ভাই তাদের জন্য সব ছেড়ে ছুড়ে চলে এসেছিলো।তার ভাইয়ের জীবনে এমন একটা চ্যাপ্টার ছিলো যা নীরার জানা নেই।
নির্ঝরের কোনো রেসপন্স নেই।অনু কি মনে করে নির্ঝরকে ছেড়ে দিয়ে পেছন ফিরতেই নির্ঝর অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে……
“তুমি ছাড়া শূন্য আমি।অস্তিত্ব হীন আমার কোনো অতীত নেই নেই কোনো ইতিহাস আমার বর্তমান আছে ভবিষ্যৎ আছে….আমার বর্তমানে প্রত্যেক পাতায় তুমি আছো থাকবে আজীবন……”
ব্যাস অনুও নির্ঝরকে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে দেয়…..
হয়তো এটাই শুরু তাদের নির্ঝনঝাট জীবনের তবে সত্যিই সিমি নামটা সারা জীবনের জন্য মুছে গেলো তাদের জীবন থেকে নাকি সিমি আবার ফিরে আসবে??
ভয় হচ্ছে বড্ড ভয় হচ্ছে…..!!!
আজ নীরা আর সায়নের বিয়ে।
দীর্ঘ মত বিরোধের দোটানার মধ্যে দিয়ে শেষ মেষ বিয়েটা হচ্ছে।
নীরা বেশ খুশি।আজকাল অনুর সাথেও তার বেশ ভাব হয়ে গেছে।বিয়ের সমস্তটা অনু একা হাতে সামলাচ্ছে।শ্বাশুড়ি বেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অনুকে পর্যবেক্ষন করছে….
তবে এতো গভীর ভাবে লক্ষকরার পরও কোনো ক্ষুদ খুজে পাচ্ছে না।শ্বাশুড়ি অনেক বার চেয়েও অনুকে কাছে টানতে পারছে না ঐ যে ছেলেপোলে হবে না।
“এ কেমন বউ যে একটা ছেলেপুলের জন্ম দিতে পারবে না”
ব্যাস অনুকে ভালোবাসতে এসেও তিনি মুখ ঘুরিয়ে চলে যান।
এদিকে নির্ঝরও বেশ গুরুত্ব দিয়ে অনুকে পর্যবেক্ষন করছে।তার ধারনা ছিলো অনু সায়ন নীরা বিয়েটা মানতে পারবে না নয়তো মন খারাপ করবে তবে অনুতো দিব্য খুশি খুশি মন নিয়ে কাজ কর্ম করছে।বিষয়টা নির্ঝরের কাছে বেশ ভালো লাগছে।
হয়তো অনুও সব ভুলে গেছে নয়তো……
এদিকে গায়ে হলুদের দিন থেকে অনুর শরীরটা কেমন কেমন লাগছে।সেদিকে পাত্তা না দিয়ে অনু দিব্যি কাজ করে যাচ্ছে।তবে আজ সকাল থেকেই শরীরটা আরো বেশি খারাপ লাগছে কেমন মাথা ঘুরছে বমি বমি পাচ্ছে।নড়তে ইচ্ছে করছে না।তবে বাড়ির একমত্র বউ ইচ্ছে থাকলেও বসার উপায় নেই একরকম বাধ্য হয়েই অনু কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে সব সামলে নিচ্ছে।
হটাৎই নির্ঝরের ডাক পড়ে।অনু কোনো রকমে ঘর অব্দি গিয়ে নির্ঝের সমনে গড় গড় করে বমি করে দেয়।
নির্ঝর হতম্ভের মতো দাড়িয়ে আছে…..
অনু ক্লান্ত হয়ে পড়ে যেতে নিলেই নির্ঝর দুহাত ধরে বুকের মধ্যে আকড়ে ধরে…….
চলবে…..
(আর মাত্র এক পর্বেই গল্পের সমাপ্তি ধন্যবাদ)
৩০ পর্বের লিংক….
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=142107453865285&id=113358383406859###__স্বামী__###
পর্ব-৩১
#Nirzana(Tanima_Anam)
-একটা সময় ছিলো যখন তোকে আমি ভালোবাসতাম
একটা সময় ছিলো যখন তোকে আমি পেতে চাইতাম!!
সময়টা আমার ছিলো চওয়াটাও আমারই ছিলো।তুই সেই চাওয়ার দাম দিস নি সৌমিতা তাহলে আজ কেন??কেন বন্ধুত্বের মুখোশ পড়ে আমার ক্ষতি করতে এসেছিস??
নির্ঝর সিমির দিকে তাকিয়ে একদমে প্রশ্নটা করে।সিমি নির্ঝরের থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে আছে।আর অনু নির্ঝরকে ধরে ফুপিয়ে কাঁদছে…..
নির্ঝর সিমিকে ফোনে কথাগুলো বলার পর সিমি নিজেকে আর সামলাতে পারে নি সোজা এই বাড়িতে চলে আসে….
সিমি বাড়িতে এসেই নির্ঝরের ঘরে চলে যায়।নীরা সিমিকে দেখেই নির্ঝরকে ফোন করে তারপর পেছন পেছন ছুট লাগায় ঘরের দিকে।কেন যেন সিমির হাব ভাব তার ভালো লাগছে না।
অনু তখন বারান্দায় রাখা ফুলের গাছগুলোতে পানি দিচ্ছিলো….
সিমি সোজা ঘরে গিয়ে অনুকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় চলে যায়।বারান্দয় যেতেই দেখে অনু গুন গুন করে গান গাইছে আর গাছে পানি দিচ্ছে।
অনুকে হাসি মুখে দেখেই সিমির রাগ চিড় চিড় করে মাথায় উঠে যায়।
সিমি গিয়ে অনুর পেছনে দাড়ায়।অনু একটু পেছোতেই সিমির সাথে ধাক্কা খায়।
অনু ভয় পেয়ে যায়।পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে সিমি দাড়িয়ে আছে
-সিমি আপু তুমি??
-ঠাসসসসসস…
সিমি রাগে গজ গজ করতে করতে অনুকে চড় মারে।অনু ছিটকে গিয়ে ফুলের টবের উপর পরে যায়।টবের কর্নার লেগে অনুর কপালটা কেঁটে গেছে।ঘটনাটা হটাৎ ঘটায় অনুর মাথায় কিছু আসছে না।
নীরাও হতম্বের মতো দাড়িয়ে আছে।কি হচ্ছে বুঝে উঠার আগেই সিমি অনুকে টেনে ঘরে নিয়ে আসে
-এই মেয়ে তোর লজ্জা করে না অন্যের প্রেমিককে কেড়ে নিয়ে সংসার করতে??তোর লজ্জা করে না??তোর জীবনেও তো একজন ছিলো বুঝিস না চোখের সামনে যখন ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কেউ কেড়ে নেয় কতো কষ্ট হয়??বুঝিস না??জানিস না নির্ঝরকে আমি ভালোবাসি??জানিস না নির্ঝর আমাকে ভালোবাসে??
অনু অবাক হয়ে সিমির কথাগুলো শুনছে….কি বলবে বুঝতে পারছে না।অনুর কানে বার বার সিমির বলা একটা কথা বাজছে
“প্রেমিক…”
-ওনি তোমায় ভালোবাসে….???(অবাক হয়ে)
-হ্যা হ্যা তা নয় তো কি??একটা ছেলে আর একটা মেয়ে যখন এতো কাছা কাছি থাকে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়াও আরো কিছু থাকতে পারে তুই জানিস না??এটা বন্ধুত্ব না এটা ভালেবাসা নির্ঝর আমায় ভালোবাসে তাই এতো কিছুর পরও ও আমাকে ওর জীবনে এলাও করে…..বুঝিস না তুই???ছবি দেখায় নি তোকে??দেখিস নি???তাও কেন পরে আছিস আমার নির কে নিয়ে??
কথাটা বলেই সিমি অনুকে আবার ধাক্কা দেয়।অনু আবার পড়ে যেতে নিলে নীরা এসে অনুকে ধরে নেয়।
অনুর মাথা ঘুরছে।
-কি করছো কি!!এরকম পাগলের মতো বিহেভ করছো কেন সিমি পি…ভাবির লেগে যাবে।দেখো কি করেছো কপালটা কেটে গেছে।তোমার এইসব পাগলামো থামাও!!
নীরা কথাগুলো বলেই অনুকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।এদিকে অনু চিন্তায় মগ্ন
“কিসব বলছে সিমি এগুলো?কেন বলছে?তহলে কি এবার ও সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবো আমি??”
অনু নীরাকে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে যায়।নীরাও কেমন থম মেরে আছে…..
-সিমি আপু সত্যি করে শুধু একটা কথা বলো তো মি.চৌধূরী কি তোমাকে ভালোবাসে???
-হ্যা হ্যা বাসেই তো নির শুধু আমাকে ভালোবাসে…..
-ভালোবাসে না বাসতো…..!!!সময়টা পল্টেছে শব্দটাও পাল্টেছে…..
নির্ঝরের গলা শুনে সবাই পেছন ফিরে তাকায় নির্ঝর দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে।
অনু নির্ঝরকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারে নি একছুটে গিয়ে নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে।
নির্ঝরও অনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে…..কঁপালে একটা চুমু এঁকে দেয়।
সিমি ছলছল চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।এদিকে অনু নির্ঝরের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে…..
নীরাও ছুটে গিয়ে নির্ঝরের পাশে দাড়ায়।
-ভাইয়া আসছিস। দেখনা তোর এই শাঁকচুন্নি বান্ধবী পাগল হয়ে গেছে।পাগলের মতো কি সব বলছে আর কি সব করছে।ভাবিকে তো…….
নীরাকে কথার মাঝে থামিয়ে দেয় নির্ঝর……..
অনুর দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে….
[স্কুল লাইফ থেকেই সৌমিতার সাথে আমার বন্ধুত্ব।স্কুলের গন্ডিও আমরা একসাথেই পার করি।দুষ্টুমি খুনসুটির মধ্যে দিয়ে বেশ চলছে সব কিছুই।তারপর বিদেশ পাড়ি জমাই ও একসাথে।ওখানেই আমরা সারা জীবন একসাথে থাকার প্লন করি।আমাদের সম্পর্কের মধ্য পরিবর্তনটাও ওখান থেকেই শুরু।বেশ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছিলাম আমরা সরি নট আমরা ওনলি মি।শুধু আমি
বিদেশে হাই স্কুল কমপ্লিট করতেই দেশ থেকে খবর আসে আমার বাবা আর নেই।তখন আমি দেশে চলে আসি ক দিনের জন্য।বাট এখানে এসেই আমি বুঝতে পারি।মা আর নীরার আমাকে প্রয়োজন।আমি পার্মানেন্ট দেশে থাকার প্লান করি।কিন্তু দেশে তখন আমি একা সম্পূর্ণ একা।
মানসিক ভাবেও বেশ দূর্বল ছিলাম।তখন আমি সিমিকে সরাসরি দেশে ফিরে আসতে বলি ইভেন সৌমিতাকে এটাও বলেছিলাম ও ফিরে এলে আমি ওকে বিয়ে করে দেশেই সেটেল হবো বাট…..
কিন্তু সিমি তখন নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত।ও দেশে আসতে চায় নি।ও বিদেশেই……
নির্ঝর একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করে
-অনু আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিলো তখন যখন আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।আমি তখন খুব একটা বড় ছিলাম না আমি মেন্টালিও এতো স্ট্রং ছিলাম না আমার সাপোর্টের প্রয়োজন ছিলো সিমি আমার সঙ্গ দেয় নি।বরং আমাকে রিজেক্ট করে বলে দিয়েছিলো ও নাকি শুধু আমার বন্ধু হয়ে থাকতে চায়।ব্যাস্ এই আর কি]
নির্ঝর কথাগুলো বলেই অনুর দিকে তাকায় অনু তখন হা করে নির্ঝরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
-অনু তখন সিমির প্রতি আমার যা ছিলো তা ভালোবাসা না কি অ্যাট্রাকশান আমি জানি না তবে এখন সিমির জন্য আমার হৃদয়ে আর বিন্দু মাত্র জায়গা নেই…….আমি শুধু মাত্র অনুকেই ভালোবাসি
সিমি ছুটে এসে নির্ঝরের কলার চেপে ধরে….
-আমি ভুল করেছি বার বার বলছি আমি ভুল করেছি আমি তোকে ভালোবাসি নির….তুই চলে আসার পর আমি তোকে কতোটা মিস করেছি আমি তোকে কতোটা ভালোবাসি তুই কল্পনাও করতে পারবি না…..
অনু সিমিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়
-জানো প্রকৃত ভালো তো সেই বাসে যে খারাপ দিনেও সেই মানুষটার হাত ধরে রাখে।তুমি ওনার হাত ধরো নি….তাই
-তাই প্লিজ সিমি আমার গুছানো লাইফটাকে এলোমেলো করে দিস না।আমি অনুকে ভালোবাসি।আমার জীবনের শেষ দিনও আমি অনুর সাথে কাটাতে চাই….
সিমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে জবাব দেয়
-ভালো থাকিস নির আমি আর তোকে কখনো ডিসটার্ব করবো না পাক্কা প্রমিস…..
সিমি শেষবারের মতো নির্ঝকে একবার জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।তারপর আর নির্ঝরের দিকে ফিরেও তাকায় নি।তবে নির্ঝর তাকিয়ে ছিলো এক দৃষ্টিতে সিমির যাওয়ার দিকে…..
দুচোখ বেয়ে একফোটা পানি টুপ করে মেঝেতে পড়ে
“কিছু মানুষের প্রতি কিছু অদ্ভুদ টান থাকে।এক অদৃশ্য বন্ধন থাকে হয়তে এমন কোনো অদৃশ্য বন্ধন নির্ঝর সিমির মধ্যেও ছিলো।তবে সব বন্ধন কি আর সারা জীবন টিকে থাকে??”
অনু গিয়ে নির্ঝরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে…..নীরা অনেক ক্ষন কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে গেছে।ভাই তাদের জন্য সব ছেড়ে ছুড়ে চলে এসেছিলো।তার ভাইয়ের জীবনে এমন একটা চ্যাপ্টার ছিলো যা নীরার জানা নেই।
নির্ঝরের কোনো রেসপন্স নেই।অনু কি মনে করে নির্ঝরকে ছেড়ে দিয়ে পেছন ফিরতেই নির্ঝর অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে……
“তুমি ছাড়া শূন্য আমি।অস্তিত্ব হীন আমার কোনো অতীত নেই নেই কোনো ইতিহাস আমার বর্তমান আছে ভবিষ্যৎ আছে….আমার বর্তমানে প্রত্যেক পাতায় তুমি আছো থাকবে আজীবন……”
ব্যাস অনুও নির্ঝরকে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে দেয়…..
হয়তো এটাই শুরু তাদের নির্ঝনঝাট জীবনের তবে সত্যিই সিমি নামটা সারা জীবনের জন্য মুছে গেলো তাদের জীবন থেকে নাকি সিমি আবার ফিরে আসবে??
ভয় হচ্ছে বড্ড ভয় হচ্ছে…..!!!
আজ নীরা আর সায়নের বিয়ে।
দীর্ঘ মত বিরোধের দোটানার মধ্যে দিয়ে শেষ মেষ বিয়েটা হচ্ছে।
নীরা বেশ খুশি।আজকাল অনুর সাথেও তার বেশ ভাব হয়ে গেছে।বিয়ের সমস্তটা অনু একা হাতে সামলাচ্ছে।শ্বাশুড়ি বেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অনুকে পর্যবেক্ষন করছে….
তবে এতো গভীর ভাবে লক্ষকরার পরও কোনো ক্ষুদ খুজে পাচ্ছে না।শ্বাশুড়ি অনেক বার চেয়েও অনুকে কাছে টানতে পারছে না ঐ যে ছেলেপোলে হবে না।
“এ কেমন বউ যে একটা ছেলেপুলের জন্ম দিতে পারবে না”
ব্যাস অনুকে ভালোবাসতে এসেও তিনি মুখ ঘুরিয়ে চলে যান।
এদিকে নির্ঝরও বেশ গুরুত্ব দিয়ে অনুকে পর্যবেক্ষন করছে।তার ধারনা ছিলো অনু সায়ন নীরা বিয়েটা মানতে পারবে না নয়তো মন খারাপ করবে তবে অনুতো দিব্য খুশি খুশি মন নিয়ে কাজ কর্ম করছে।বিষয়টা নির্ঝরের কাছে বেশ ভালো লাগছে।
হয়তো অনুও সব ভুলে গেছে নয়তো……
এদিকে গায়ে হলুদের দিন থেকে অনুর শরীরটা কেমন কেমন লাগছে।সেদিকে পাত্তা না দিয়ে অনু দিব্যি কাজ করে যাচ্ছে।তবে আজ সকাল থেকেই শরীরটা আরো বেশি খারাপ লাগছে কেমন মাথা ঘুরছে বমি বমি পাচ্ছে।নড়তে ইচ্ছে করছে না।তবে বাড়ির একমত্র বউ ইচ্ছে থাকলেও বসার উপায় নেই একরকম বাধ্য হয়েই অনু কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে সব সামলে নিচ্ছে।
হটাৎই নির্ঝরের ডাক পড়ে।অনু কোনো রকমে ঘর অব্দি গিয়ে নির্ঝের সমনে গড় গড় করে বমি করে দেয়।
নির্ঝর হতম্ভের মতো দাড়িয়ে আছে…..
অনু ক্লান্ত হয়ে পড়ে যেতে নিলেই নির্ঝর দুহাত ধরে বুকের মধ্যে আকড়ে ধরে…….
চলবে…..
(