স্বামী পর্ব ৯

#স্বামী (সিজন-২)
#পর্ব–৯
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
__________________________
“তিতিল দিব্যি রান্না করছে, শশুর স্বামী ননদের কাপর কাচঁছে।ঘরের প্রতিটা কোনা সে সাফ সাফাই করে বেরাচ্ছে।
এক দম কাজের মেয়ের মতই।
আরিফ রহমান রিদয়ের উপর যতটা রাগ তার চাইতে বেশি তিতিলের উপর।
নিজের হাতে নিজের ঘর ভাঙা মেয়ে এই একটা দেখলাম।
কোথায় স্বামীকে নিজের আচঁলে আটকে সংসার করবে তা নয় অন্যের কাছে ঠেলে দিচ্ছে।

– সেদিনের আরিফের প্রশ্নের উওর রিদয় দিতে পারেনি।না তার উওরের আশায় আরিফ রহমান দাড়িয়ে ছিলো।
রিদয় তার বাবার সাথে কথাই বলছে না। কি বলবে? কথা বলতে গেলেই যদি বাবা তার প্রশ্নের উওর জানতে চায় তখন।

সকালে বেরিয়ে যাওয়া আর বহু রাত পর বাড়ি ফেরা, এটা তার কাজের জন্যে নাকি ইচ্ছা কৃত সেই জানে।

“-এত কিছু জানেনা রিদয়।শুধু জানে এখানে সব দুষ তার নিজেরই।
সেতুর বা তিতিলের কোন দুষ নেই। তবে ওর জন্য অন্যের জীবন নষ্ট হক তা চায়না। আর একজনকে তো কাঁদাতেই হবে।
তিতিলকে বিয়েটা দয়া ছিলো।আর সেতু তার ভালোবাসা।তবে পায়ে ঠেলে দেবে এমন কাউকে সে বাছাই করতে পারছে না।

— রিদয় এক ঘরে আর তিতিল আরেক ঘরে।
চলছে এভাবেই।
আজকে তিতিলকে চমকে দেয়া ঘটনা ঘটেছে।তিতিলের বাবা তিতিলকে দেখতে এসেছে।কিভাবে আজ মেয়ের কথা মনে পরল।
” বাবাকে সামনে পেয়ে চোখে নোনা জল বেয়ে পরছে।
বাবাকে আজ বেশ করে দেখে নিলো তিতিল।উনি মাতাল হলে কি!জন্মদাতা পিতা। ।
অবাক তো আরেকটু হয়েছে তিতিল।
বাবা তো গুফ রাখতো।আজ গুফ নেই দাড়ি রেখেছে।
সাদা কালো চুলে বেশ ভালোই দেখাচ্ছে বাবাকে।মাথায় টুপি।
নামাজ পড়া শুরু করেছে হয়তো।বাবার এত পরিবর্তনে তিতিল আজ বড্ড খুশি।

—তিতিলের বাবা মুখ দিয়ে একটি শব্দ বেরিয়েছে।
এখানে ভালো আছিত তো!!!
হয়তো প্রশ্নটা করার দরকার নেই।মেয়ে দেখলে বুঝা যায় বেশ জত্ন হয় ওর এখানে।

“কত রকমের রান্না করেছে বাবার জন্যে,আরিফ রহমান তিতিলের বাবার পরিবর্তন দেখে খুশি।
খানা পিনা শেষে তিতিলের বাবা চলে জেতে চাইলেও যাওয়া হল না। আরিফ বা তিতিল কেউ ছারল না তাকে।

বেয়াই দুদিন আমাদের সাথে থেকে তার পর যাবার চিন্তা করবেন। আপনার সাথে গল্প হবে।খানা পিনা হবে। রাত ভর দুই ভাই আড্ডা দিবো।

তিতিল ছোট বাচ্চাদের মত বাবার পান্জাবিটা হাতের মুঠোয় আটকে ধরেছে।বাবা যেও না তার মুখে একই কথা। তিতিলের মুখটার দিকে তাকিয়ে ওর বাবা জেতে পারল না।

“— রিদয় রাতে এসে সোজা নিজের বাবার রুমে পা দিয়েছে।
এসেই শশুরের পা ধরে সালাম করে কুশল বিনিময় করে নিলো। পুলিশের পোশাকে জামাই বাবা আমার রাজ পুত্র লাগছে। তিতিলের বাবা রিদয়কে জরিয়ে ধরল।
আরিফ রহমান কিছুটা অবাক।রিদয় তো জানেনা ওর শশুর এসেছে।আর কেউ বলেনিতো।তাহলে ও!!!!!
একবার জিজ্ঞাসা করল না কখন এলো।শুধু বললো আসতে সমস্যা হয়নি তো। রিদয় তার শশুরকে ডেকে পাঠিয়েছে তা বুঝতে বাকি নেই।
যে ভাবেই আসুক তিতিলটার মুখে হাসিতো ফুটেছে।আর রিদয় কি তিতিলের মুখে হাসি ফুটাতে উনাকে ডেকেছে।

-নিজের ঘরে পা দিতেই চোখে পরল তিতিলের দিকে।
ও এই ঘরে!
এবার চোখটা ছোট্ট টেবিলটায় গেলো।ওহহহ খাবার দিতে এসেছিলো।তাহলে এই সময়টায় এসে খাবার দিয়ে যায়! আজ হয়তো ভাবেনি জলদি ফিরব।প্রতিদিনের মত আজ একই সময় খাবারটা রাখতে এসেছে।

ডান বাম কোন দিক না তাকিয়ে সোজা দরজাটা দিয়ে হন হন করে বেরিয়ে এলো তিতিল।কোন কথা বলার নেই।না শুনার আছে।তাহলে ওখানে বেহায়াদের মত দাড়িয়ে লাভটা কি!

_____ শশুরের সামনে দিব্যি নাটক চালিয়ে যাচ্ছে রিদয়। মেয়ের জামাই কতটা ভালো হয় কত প্রকার ও কি কি,তা রিদয়কে দেখে জানা গেলো।
আরিফ রহমান কিছু বলতে চাইছেনা উনাকে, এসেছে বেড়াতে।বুকের ব্যাথা বারাতে নয়। আপাদত দেখা যাক শেষটা কি হয়।সব শেষ হয় নাকি শেষ থেকে শুরু হয়।

★- ——সুখের সংসারে ভেসে জাওয়াটা হল সৌভাগ্য।
“আর যেখানে সব শেষ সেখান থেকে ফিরে এসে শেষ থেকে শুরু করাটাই গল্পের অক্ষর।……..★

দেখা যাক তিতিল আর রিদয় নতুন গল্পের ডায়রিতে নিজেদের গল্পটা গাঁথতে পারেকিনা।

” বিকেলে চায়ের চুকুমে উঠানের এক কোনায় বেশ মনরম পরিবেশ সাজিয়েছে সবাই।
গন্ধরাজ ফুল গাছটায় বেশ ফুল ফুটেছে,এই ফুলের সুভাসে তো ভেসে জেতে ইচ্ছা করছে।
আরিফ রহমানের ভাই ভাবি ওরাও এসেছে।তবে এক রাশি মুখ ভার নিয়ে।
কিছু বলছেনা তবে বলে দিতে কত ক্ষন।রোকেয়া বেগম তো তিতিলের উপর খিপ্ত। নিজের ঘর নিজে গিলতে চাওয়া মেয়ে।
ওর বাবাকে বলে দেখা যাক মেয়েকে বুঝাতে পারে কিনা।

“রিদয় এক রাশি বিষন্নতা নিয়ে বাড়িতে ঢুকেছে। সবাইকে উঠানের ঐ কোনায় দেখে সেখানেই এসেছে।
এসে তিতিলের কাছা কাছি দাড়াতেই তিতিল উঠে তার শশুরের পাশে দাড়িয়েছে।এখন এটা দেখার বিষয় নয়। কে কোথায় দাড়ালো।তবে রিদয় এমন চুপসে আছে কেন??
-আরিফ রহমানের গলা থেকে প্রশ্ন টা বের হবার আগে রিদয়ের এমন দেখানোর কারন সামনে এসেছে।এখন রিদয় না সবার মুখই ভার।কি সুন্দর একটা পরিবেশ ছিলো তা শেষ।
সেতু আবার এখানে কেন??
এই রিদয়ের কান্ড জ্ঞান তো বলতে নেই।তিতিলের বাবার সামনে সেতুকে না আনলে হত না।

—যে চেয়ারটা তিতিলের জন্য ছিল সেটা নিজের করে বসে নিয়েছে সেতু।
আরিফ বার বার রিদয়ের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে চোখ দিয়ে শাষাচ্ছে।সবার হাসি গায়েব।তিতিলের বাবার মুখে হাসিটা এখনো লেগে রয়েছে।কারনটা জানলে হয়তো উনার হাসিটাও মিলিয়ে যাবে।
তিতিল রিদয়ের দিকে বার বার তাকাচ্ছে। কেন বার বার উনি আমার আশাটা শেষ করে দেয়। আর কিসেরই আশা, উনিতো আমায় কোন আাশাই দেয়নি তো ভাংঙবে টা কি।
সেতু আর উনাকে মানাবে বেশ। ওদের মাঝের কাঁটা তো আমি।

সবাই চুপ থাকলেও সেতু তো কথা বলতেই এসেছে।সবার ভালো মন্দ খুজ নিয়ে হাসি মাখা মুখে কথা বলেই যাচ্ছে।বাদ্ধ্য হয়ে আরিফ আর তার ভাই কথা বলছে।
-আরেহ তুমি এভাবে দাড়োয়ানের মত দাড়িয়ে কেন!
সেতু কথাটা বলে সেকেন্ট দেরি করল না।রিদয়ের হাতটা ধরে পাশের চেয়ারটায় বসিয়ে দিয়েছে।তিতিলের বাবার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো,মেয়েটা কে? আর রিদয়ের সাথে এত মাখা মাখি!!
তিতিলের দিকে তাকাতেই সে হাসি দিয়ে বাবার মনে আসা সন্দেহ টা সরাতে চাইছে।তবে হাসি তো মানুষের অনেক রকম হয়।সুখের হাসি,কষ্টের হাসি তাচ্ছিল্য হাসি, হেরে যাওয়ার হাসি।
তবে তিতিলের মুখের হাসিটা সুখের তো নয়।তবে কোন ক্যাটাঘরিতে পরে ঐ হাসি।

-যেমন তিতিলের বাবার মনে প্রশ্ন জেগেছে মেয়েটা কে.ঠিক তেমন সেতুর মনেও প্রশ্ন জেগেছে এই লোকটা কে?
আর এমনিতেও তিতিল এই বাড়িতে আছে বলে সেতুর চিন্তার শেষ নেই।

“উনাকে তো চিনলাম না, হাসি মাখা হয়ে তিতিলের বাবাকে দিখিয়ে প্রশ্নটা করল।

—-উনি তিতিলের বাবা।
সেতুর প্রশ্নের উওরটা রোকেয়া দিয়ে দিলো।
বাববাহ একটা চাকরানির বাবাকে এত আদিক্ষেতা! মেয়েটাকে নিয়ে যা করছে তো করছে এখন এর বাবাকে নিয়েও মাতা মাতি। কত বার রিদয়কে বললাম মেয়েটাকে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করো। নয়তো আমি এর চাইতে ভালো একটা চাকরির যোগার করে দিই মেয়েটাকে সেখানে পাঠাও। নাহ জনাবের মুখ ভার হয় এসব বললে।
আসলে রিদয়ের পরিবার বেশ ভালো তাই হয়তো সবাইকে আগলে নেয়। চাকর বাকর মনে করে না।

– সেতু আর কথা না বাড়িয়ে আরিফ রহমানের সাথে কথায় মজেছে।
“আংঙ্কেল আসল কথা হল, বাবা আপনার সাথে কথা বলতে চাইছে।যেদিন আপনার সময় হয় আমায় বলুন বাবাকে ডেকে নিই।
–রিদয়ও জানত না সেতু এমন কিছু বলবে।জানলে কোন না কোন বাহানায় ওকে আটকে নিতো।
আরিফ রহমান এবার নরে চরে বসেছে।
সেতু আসায় ওদের আনন্দ মাটি হয়েছে।
আর সেতুর দুষই বা কি,ওর সাথে রাগ দেখানোর মানেই বা কি! সে তো শুধু ভলোবেসেছে।ভালোবাসায় বেঈমানিতো রিদয় করল।আর তিতিলকে বিয়ে করেছে এতে ওর উপরে নয় ওর রাগ হবার কথা।
আসল কথা হল কারো দুষই নেই দুষ টা সময়ের।

“-আমি জানাবো রিদয়কে দিয়ে। আরিফ রহমান বহু কষ্টে গলা দিয়ে মিথ্যে কথাটা বের করেছে।এই ছেলের জন্য কত মিথ্যা বলতে হবে কে জানে।কবে ওর সত্যিটা বলার সাহস হবে?

তিতিল তার বাবাকে ডেকে ঘরে নিয়ে এলো বাবাকে অন্য কথায় মন ভুলাতে চেষ্টায় ব্যাস্ত।

“সেতু ওয়াস রুমে জাবে তাই রিদয়ের রুমটাকেই বেছেছে।অবশ্য রিদয়ই ঐ রুমটা দেখিয়ে দিয়েছে।
রিদয় তার বাবার সাথে কথা বলতে উঠানে চলে এলো।
– তিতিলের বাবা বারান্দার আরেকটা দিক দিয়ে ধিরে ধিরে হাটছে,সেতুর আসার পথে তো পরে না।তবে সেতু তার পথ আটকে দাড়িয়ে।

.মা কিছু বলবে??
তিতিলের বাবার হাসি মাখা কথা, সেতু তো কিছু বলবে বলেই এসেছে। নয়তো পথ আটকাতো কেন? রিদয়ের মুখে তিতিলের রান্নার প্রশংসা শুনেছে,ওর সব কাজ কত নিখুত ভাবে করে তা শুনেছে।এতে সেতুর গা তো জ্বালা করছে,সেই জ্বালাই মিটাবে আজ।

— কোন চিন্তা ভাবনা না করে সেতু তার কথা শুরু করেছে।
” দেখুন আপনি আপনার মেয়েকে কি বুঝে এই বাড়িতে কাজ করতে পাঠিয়েছেন??
-তিতিলের বাবার চোখ বেরিয়ে এলো বলে,
কাজ করতে পাঠিয়েছি মানে???
“-দেখুন আপনার মেয়ে তো বাচ্চা নয়।বড় হয়েছে।এই বাড়িতে দুটো ছেলে রয়েছে। এভাবে মেয়ের কামাই না খেলেও পারতেন…….
” তিতিলের বাবার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে,মেয়েটা কি সব বাজে বকছে!!
— আপনার মেয়ের রুপ আছে বলেইকি এই বাড়িতে পাঠিয়েছেন, জাতে এই বাড়ির দুই ছেলের মাঝে একজন কে ফাসাতে পারে??


চলবে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here