#স্বামীর অত্যাচার !!
#Part_10
রিংটোনের শব্দে ধ্যান ভাঙেে তাহিনের…
নিলয় ঘুমিয়ে আছে দেখে মোবাইলটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই চমকে উঠল…….
ফোনের ওপারে থাকা লোকটির কথা শুনে….
-সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।আগামীকাল নীলিমা ম্যামকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে….
নীলিমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে সেটা নিয়ে ভাবনায় পড়ে যায় তাহিন…..হঠাৎ বুকের ভিতর চিনচিন করে উঠল…লোকটির শেষের কথাটা কানে ভেসে আসতে….কথাটা শুনে তো খুশি হওয়ার কথা…তবু কেন এমন করছে..?খুব বেশি না বুঝলে একটু হলে ও বুঝতে পারছে….লোকটির শেষের কথাটি ছিল এমন…
-তারপর তৌহিদ আহমদের একটা ব্যবস্থা করে…আপনি ও খুব শ্রীঘ্রই চলে যেতে পারবেন……
তাহলে তো খুব শ্রীঘ্রই নিলয়েরর থেকে মুক্তি পেতে চলছে…তবু ও কেন এমন লাগছে…?শেষে তো এমনটা হওয়ার কথা ছিল….এটায় তো চেয়েছিল তাহিন।নিলয় থেকে নিজেকে মুক্ত করতে……হুম এখন এটায় হবে এখন…..আর ভাবভে না…কখনো না.বড় একটা দীর্ঘনিশ্বাস বের হয়ে আসল.. সেই নিংশ্বাসে যেন চোখের কোণ থেকে এক ফোঁটা জল বেয়ে পরল…..
ওপাশ থেকে লোকটা হ্যালো হ্যালো কথাটা কানে ভেসে আসছে তবু ও যেন সেদিকটায় খেয়াল নেই…হঠাৎ হাত লেগে পাশ থেকে গ্লাসটা পড়ে যেতে
নিলয়ের ঘুম ভেঙে যায়…নিলয় চোখ খুলতে তাহিন তড়িগড়ি করে চোখের পানি মুছে মোবাইলটা নিলয়ের হাতে দিয়ে রুম থেকে বের চলে গেল।।
নিলয় এখনো মাটিতে পায়ের ভার দিয়ে চলতে পারে না…….পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো সময় লাগবে….তাহিন নিলয়কে খাবার খাইয়ে নিচে আসতে দেখল আফরিন আর কয়েকজন গার্ড এসে নিয়লকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে….অবশ্য এটা তাহিনের অজানা নই খুব ভালোভাবে জানে কোথায় যাচ্ছে ওরা…কিন্তু এই ব্যাপারে তাহিনকে কিছু বলে যায় নি……বলবে বা কেন…?আর না ভেবে নিজর মত কাজ করছে…ওরা যেতেই খাওয়া দাওয়া করে সব গুছিয়ে রুমে চলে গেল…..এখন অবশ্যই কয়েকজন কাজের লোক রাখা হয়েছে…..
সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে তাহিনের…..চোখ খোলে পাশে নিলয়কে দেখতে পেল না..প্রয়োজন বোধে এখন নিলয়ের রুমে থাকে।।।ওরা হয়ত রাতে ফিরেনি……রুমে থেকে বের হতে পাশের রুমে চোখ পড়তে নিলয়ের দেখা মিলল…যেখানে আগে তাহিন থাকত…….নিলয় ওখানেই শুয়ে আছে…..শেষ রাতের দিকে হয়ত বাসায় ফিরেছিল।।তাই এখনো অঘোর ঘুমে তলিয়ে আছে….
নাস্তা রেড়ি করে নিলয়ের রুমে আসল…ব্রেকফাস্টটা দেওয়ার জন্য…..নিলয় অাধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ কি যেন করছে।।সকাল সকাল তার কাজ শুরু হয়ে গেল…..তাহিন দেখে নিলয় ল্যপটপ বন্ধ করে দিল।।তারপর নিলয়কে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে নাস্তাটা খাইয়ে নিচে চলে আসল।।
সময় চলছে তার আপন গতিতে..আর সময়ের সাথে সাথে প্লাল্লা দিয়ে চলে যাচ্ছে দিনগুলোও…দেখতে দেখতে একমাস কেটে গেল….
নিলয় এখন সম্পূর্ণ সুস্থ…..তাহিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয় না…তবু কেন যেন মনে হচ্ছে নিলয়ের আগের দিনগুলো ভালো ছিল…এতদিন খুব কাছ থেকে দেখেছে মেয়েটা… সম্পূর্ণ যেন আলাদা মেয়েটা…এত অত্যাচারের পরে সেবা যত্নে কোনো ত্রুটি রাখেনি…..ঘৃণা করে দূরে টেলে দেয়নি…কিন্তু? তবু ও যেন মনের মধ্যে একটু হলে ও সেই কুট রয়ে গেল।।নাকি তৌহিদ আহমেদের সাথে মেয়েটাকে জড়িয়ে ভুল করে ফেলেছে?ওর কথায় কি বিশ্বাস করা উচিত ছিল.? কথাগুলো আজকাল বেশ ভাবাচ্ছে নিলয়কে…..
পড়ন্ত বিকেলে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে তাহিন…..মৃদ হাওয়ায় চুলগুলো ওড়ছে…ঝরা পাতা ওড়ে এসে বসন্তের জানান দিচ্ছে….এই বসন্তটায় হয়ত নতুন কোনো রং নিয়ে আসবে জীবনে নতুন দিগন্তের পথ ধরে
এমনটা মোটেও আশা করছে না ভাবছে …..জীবন এখন মনে হচ্ছে সেই ঝরা পাতাগুলোর।যার আর কোনো অস্তিত্ব নেই।।এই বাড়ীতে বন্দি দশার মধ্যে পার হচ্ছে দিনগুলো…..
নিলয় এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।নিজের দায়িত্বটা সম্পূর্ণ করেছে…..তবু ও যে তৌহিদ আহমদের কারণে এখনো পড়ে থাকতে হচ্ছে এই বাড়ীতে…তৌহিদ আহমেদ নিলয়কে মারার জন্য এখন ও হন্য হয়ে খুঁজজে যাচ্ছে ওদের ঠিকানা…..
হঠাৎ করে কারো হাতের স্পর্শ পেতে তড়িগড়ি করো চোখ মুছে ঘুরে তাকাল…
হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা কাজের মেয়ে বিলকিসপর দিকে….মেয়েটা হাসি যেমনি সুন্দর তার মন… সবসময় তাহিনর সাথেই সাথেই থাকে….ঠোঁঠের কোনো হাসি ফুঁঠিয়ে তাহিন বলল,
-কিছু বলবে….
-স্যার বলছে তোমাকে কপি করে রুমে নিয়ে যেতে..
-তা সেটা তো তুমি ও দিয়ে আসতে পারতে..
– স্যার তো তোমাকেই বানাতে বলেছে…
আজকাল নিলয় তাহিনের হাতের খাবারগুলো অন্যরকম একটা স্বাদ পাচ্ছে..এখন আর একটু ও মাটিতে পরে না….
-যদি বা আমি না থাকি তখন তো সব তোমাদেরকেই তো করতে হবে..
-ওপপ এই কাজ আমরা করতে পারবে স্যারের যা রাগ দেখলেই ভয় করে…..আপনি থাকবেন মানে?কি কন?
-ধরো আজকেই আমার হায়াত শেষ হয়ে গেল…
-ওপপ আপামনি আপনি এভাবে বইলেন নাতো.. আল্লাহ আপনারো হাজার বছরের হায়াত দিক….তবু ও এমন কথা বইলেন না…এবার চলেন তো দেহি…
নিলয় ল্যাপটপ বসে কাজ করছে….তাহিন কপিটা টেবিলের পাশে রেখে চলে যেতে থমকে দাঁড়াল…নিলয়ের মুখে নিজের নামটা শুনে… এই প্রথম নিলয় ওর নাম ধরে ডাকল….কোনো অনুভূতি হয়নি শুধু একটু চমকে গেল….ঘুরে তাকিয়ে…
-কিছু বলবেন
নিলয় মাথা নাড়িয়ে বলল না….
-ওহহহ
কিছু যেন বলার ছিল নিলয়ের কিন্তু মন আর মস্তিষ্ক দুইটায় একসাথে কাজ করছে।।।যার কারনে বলা হলো না…
সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে চোখ গেল মেইন ডোরের দিকে….কখনো কি এই দরজাটা খুলবে না…..একটু কি সূর্যের আলো উকি দেবে না এই দরজা দিয়ে…এখন সবসময় বাইরে থেকে বন্ধ থাকে এই দরজা।।আজ ও ঠিক তাই…নিলয়ের তো এতদিন প্রয়োজন পড়ে নি বের হওয়ার….আর প্রয়োজন ব্যাতীত খোলা হত না….
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে কম্বলটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হতে..
-কোথায় যাচ্ছ….?
গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল নিলয়…..তাহিন ঘাড় ঘুরিয়ে বলল..
– আগে যেখানে থাকতাম।।।আশাকরি এখন আর আমার প্রয়োজন হবে না…
নিলয় রাগি কন্ঠে….
-তুমাকে বলছি না অন্য রুমে না ঘুমাতে….
তাহিন কথা না বাড়িয়ে দ্রুতগতি রুম ত্যাগ করল এখন যে নিলয়কে বিশ্বাস করাতে পারল না…..আর সেই অবিশ্বাসের মধ্যেই রয়ে যাওয়াই ভালো।।
নিলয়ের রাগে লাগছে কি করে ওর কথা না শুনে চলে গেল মেয়েটা……যখন পাশে থাকতে নিষেধ করেছিল তখন জোর করেই গা ঘেঁসে শুয়ে পরত….আর এখন…?রাগে ফুসছে কিন্তু করতে পারছে না…..আজ যেন ওকে ছাড়া রুমটা শূণ্যতায় ভরে আছে….রাগে ফুসতে ফুসতে দুচোখের পাতা এক করল নিলয়….
কিন্তু দুচোখের পাতা এখনি এক করতে পারলনা তাহিন…..নির্ঘোমে কেটেছে এমন অনেক রাত…
ঘুম থেকে উঠে তাহিন নিলয়কে দেখতে কোথাও দেখতে না পেয়ে….বিলকিসকে জিজ্ঞেস করতে বলল বের হয় গেছে….
হঠাৎ দরজার দিকে চোখ পড়তে
খুব আশ্চর্য হয়ে গেল দরজাটা খেলা দেখে…..সূর্যের আলো আজ যেন উকি দিচ্ছে বারবার এই ঘরে…..বড্ড টানচে বাইরের পরিবেশটা….বাইরে যেতে আরো অবাক হলো আজ কোনো গার্ড নেই শুধু দারোয়ান ছাড়া…..কতদিন পর মনটা যেন একটু প্রশান্তি খুঁজে পেল..
নিলয়ের চোখে মুখে আগুন জ্বলছে…রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে…..বুঝতে পারছেনা এত বড় ভুল কি করে করতে পারল….একটু বিশ্বাস করে মেয়েটা যেন খুব বড় ভুল করে ফেলল… মেয়েটা এই সুযোটাকে কাজে লাগিয়ে দিবে ভাবতেই পারেনি…দারোয়ানকে মেরে পালিয়ে গেল…….দারোয়ান বেহুশ হয়ে পড়ে আছে এখনো কিছু জানা গেল না….কখন করছে এই কাজটা….দৌড়ে ভিতরে গেল কাজের লোকদের থেকে কিছু জানার জন্য……কিন্তু একটা কাজের লোক ও নেই……নিলয়ের রাগটা এবার যেন মাথায় উঠে গেল….. বিছানার পাশে রাখা চিরকুটাকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলল…..স্টিকটা হাতে নিয়ে রুমের জিনিসপত্র ভাঙতে শুরু করল…..
তাহিনকে হন্য হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে নিলয়ের লোকেরা…যেভাবে হোক ১ঘন্টার মধ্যে ওকে খুঁজে বের করে নিলয়ের সামনে নিয়ে যেতে হবে।তা নাহলে যে নিলয় এক এক করেই সবাইকে শেষ করে দিবে……..
খবরটা যদি একবার তৌহিদ আহমেদ এর কানে পৌছায় তাহলে এর থেকে বড় সমস্য হতে পারে……..যদি ও বা নীলিমা এখন সুরক্ষিত স্থানেই আছে….তবু তৌহিদ আহমেদ এর কোনো বিশ্বাস নেই।।খুঁজে বের করতে বা কতক্ষণ….
ভুল করেছিল এতদিন তৌহিদ আহমেদ নামের চ্যাপ্টারটা ক্লোজড না করে।। এবার সেটা করতেই হবে।।নাহলে আরো সমস্যা বাড়বে কমবে না..একের পর এক ভুল কি করে করে যাচ্ছে বুঝতে পারছেনা নিলয়………
রাগে সারা শরীল জ্বলছে…এতকিছুর পরে ও রাগটা একটু ও কমাতে পারল না…যতক্ষণ না তাহিনকে চোখের সামনে দেখতে পারবে ততক্ষণ যেন শান্ত হতে পারবে না….পালিয়ে যাওয়ার শান্তি তো নিলেয় দিয়েই ছাড়বে….
চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আছে তাহিনের…চারিদিকটা যেন অন্ধকার। মনে হচ্ছে হাত পা দুটো অবশ হয়ে গেছে।। কিছুতেই নাড়াতে পারছেনা……তা যেন খুব শক্ত করে কিছু একটা সাথে বাঁধা….মাথটা একপাশে নুয়ে পড়েছে….হঠাৎ চোখে মুখে পানির ছিটা পরতে চোখ খুলে তাকাতেই চমকে উঠল….. হাত পা চেয়ারের সাথে বাধা দেখে….সর্বশক্তি দিয়ে বাধনা খুলার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই আলগা করতে পারছেনা….তাহিন জানে এই কাজটা কার…কে ওকে এখানে নিয়ে এসছে তা ভালো করেই জানেই…সজোরে চিৎকার দিয়ে উঠল তৌহিদ আহমেদকে।।।।
মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে তৌহিদ আহমেদ।কতই না প্লেন করেছিল নিলয়ের কাজ থেকে তাহিনকে ছিনিয়ে নেওয়ার।কিন্তু প্রতিবারিই ব্যর্থ হয়েছিল নিলয়ের জন্য..অথচ আজ কোনো ঝামেলায় করতে হলো না সামান্য একটু বুদ্ধি খাটিয়ে নিলয়কে বাড়ী থেকে বের করছে।।আর তাতে কাজ হয়ে গেল।।কখনো কোনো ছেলেকেেই ওর কাছে ঘেঁষতে দেয়নি…সর্বক্ষন নজরে নজরে রেখেচিল যে ঘেষতে চেয়েছিল তাকেই শেষ করে দিয়েছে।।কিন্তু নিলয় যে কিভাবে তনিমাকে হাত করে বিয়ে করে নিল।।।সেটা বিন্দুমাত্র টের পাইনি তৌহিদ আহমেদ।।টের পেলে তো জীবনে ও এমন হতে দিত না……
তাহিনের চোখে মুখে রাগের চাপ…ঘৃণায় সারা শরীল গিনগিন করছে লোকটাকে এভাবে হাসতে দেখে…
-কি ভেবেছেন আমি কিছু জানতে পারব না….আপনার আসল চেহারার কথা……কেন মেরেছিলে এতগুলা নিরহ মানুষদের?কি ক্ষতি করেছিল ওরা আপনার..?
-কাদের মারার কথা বলছিস?
-একদম ন্যাকামি করবেন না…কেন মেরেছন আফজাল আংকেল কে?নিবিরদের কে?এখন আবার নিলীমা আন্টি আর নিলয়কে মারতে চাচ্ছেন…..?কেন জবাব দিন এসবের..
তৌহিদ আহমেদ দাঁতে দাঁত চেপে..
-ও নিলয়েরর বাচ্চা তুকে সব বলে দিয়েছে না।সেদিন যে কিভাবে বেঁচে গেল বুঝতে পারছি না…তুকে এত কষ্ট দেওয়ার পর ও তুই ওই ছেলের নাম কি করে মুখে আনছিস …জানিস ওর বাবা কি করছে তোর বাবাকে বরবাদ করে দিয়েছিল যা ছিল সব ছিনিয়ে নিয়ে। তাই আমি ওকে পৃথিবী থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে…..কিন্তু নীলিমা ছিল সব কিছুর চাবিকাঠি যার জন্য ওকে সেদিন মারিনি।।নিজের স্বার্থ হাসিল না করে কি করেই বা মারি বল….বহু কষ্টে সব পেয়ে গেছি…আর কেউ কিছু না জানার আগেই ওকে ও কোমাতে পাটিয়ে দিয়েচি… কিন্তু ও নিলয় যে কিভাবে জানি অনেক কিছু জেনে গেছে।।।যদি এটা জানতে পারে ওর বাবার সব সম্পত্তি ও আমি ঘ্রাস করছি তাহলে ও নিলয় আমার থেকে সব নিয়ে নিবে।।এমনিতে আমার পিছু উঠে পরে লেগেছে তাই নীলিমা যেন কোমা থেকে উঠে এসব বলতে না পারে তার জন্য ওকে ও দুনিয়াতে থেকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছি….
তারপর নিলয়কে ও ঠিক একিই অবস্থা করব….
নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছে না…লোকটা জগন্য কাজ করছে কিন্তু এতটা জগন্য কাজ করতে পারে সেটা যেন কল্পনার বাইরে ছিল…ঘৃণায় গা গিনগিন করছে নিজেকে এমন জগন্য বাবার সন্তান ভেবে।।। এই কেমন বাবা?সামান্য সম্পত্তি জন্য এতটা নিচে নেমে যেতে পারে ভাবতেই পারছেনা…..তাহিন ধিক্কার দিয়ে
-লজ্জা করেনা কি করে এমন কথাগুলো এত সহজে বলে ফেললে… কথাগুলো বলার আগে তো তোমার তো মরে যাওয়া উচিত ছিল…ছি::তোমার মত জগন্য লোকের কেন ফাঁসি হল না।।
তৌহিদ আহমেদ রেগে তাহিনের গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয়…..গার্ডদের ইশারা করে কিছু একটা নিয়ে আসতে বলে।।।।।
তাহিনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।এক জনের বিবাহিত স্ত্রী জেনে ও আরেকজন সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য তুলে এনেছে। তাও আবার এমন একটা লোকের সাথে যার বিয়ের বয়সটায় যেন পেরিয়ে গেছে দুযুগ আগে…তবু যেন লোকটার চোখে মুখ যুবতী মেয়ের লালসায় নেশাগ্রস্ত হয়ে আছে।। এমন লোককে তো বিয়ে করার চেয়ে মরে যাওয়ায় ভালো।।।নিলয় হয়ত ডিবোর্স দিতে পারবে….তবু এই লোককে বিয়ে করা অসম্ভব….
-ভালই ভালই আমাকে ছেড়ে দিন বলছি…..এমনিতে তো সম্মান করার মত একটু জায়গা রাখলে না… অসম্মান করার জন্য যে জায়গাটা আছে সেটা ও হারিয়ে ফেলিয়েন না
মেজাজটা বিগরে তৌহিদ আহমেদের তাহিনের মুখে না কথাটা শুনে সজোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল….গাল পাঁচ আঙুলের চাপ বসে গেছে তবু ও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিল….
-বিয়ে করবি না মানে তুকে এই বিয়ে করতেই হবে..
-কক্ষনো না….
কে হোন আপনি আমার?কেন আপনার মত নিকৃষ্ট মানুষের কথায় এমন একটা লোককে বিয়ে করতে যাব….
-আমি তোর বাবা বুঝেছিস।।।
তাহিন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে
-বাবা।।।।বাবা শব্দটা ও তোমার মুখে মানায় না…তোমার মত লোকের জন্য বাবা শব্দটার অসম্মান হচ্ছে…এমন একটা জগন্য লোক তো আমার বাবা হতে পারে না।।।
বাবা হওয়ার যদি এত ইচ্ছায় থাকত তাহলে এমন জগন্য কাজ করতে পারতে না…কখনো আমাদের ছেড়ে যেতে না..
এখন অত্যান্ত বাবাগিরি দেখাতে আসবেন না….
-তুকে সবসময় আমার হাতের মুঠোয় রাখতে চেয়েছিলাম..কিন্তু ওই তনিমার জন্য পারিনি… এমনকি তুকে একবার নিয়ে জোর করে নিয়ে ও গেছিলাম….
-আমার মা ঠিক কাজ করেছে তোমার মত জগন্য লোকের কাছে আমার দায়িত্ব না দিয়ে।।
আপনি একজন জগন্য খুনি…সেই কি করে আমার বাবা হতে পারে….বুঝতে পারছি না।। কেন আমার মা সব দোষটা নিজের ঘাড়ে নিয়েছিল?নিশ্চয় আপনি হুমকি দিয়েছিল…যার কারণে আমার মা এমন করতে বাধ্য হয়েছিল…
রাগে সারা গাঁ জ্বলছে তৌহিদ আগমেদে আবারো সজোরে থাপ্পর বসিয়ে দিল তাহিনের গালে…
-হুম আমি জগন্য খারাফ…এবার আমার জগন্য খারাপ।।এবার সেই ভয়ঙ্কর খারাপ রুপটায় দেখবি।। সব সময় তোর সাথে ভাল সাজতে চেয়েছি যাতে তুকে হাতের মুঠোয় রাখতে পারি…ভাল হয়ে যখন পারিনি এবার খারাপ হয়ে দেখাব…
-যে লোক এতগুলা মানুষকে খুন করতে পারে সেই তো ভয়ঙ্কর হবে।ঘৃনা হচ্ছে আমার আপনার মত মানুষকে
-আমার ও এমন ঘৃনা হয়েচিল যখন আমার বাবা আমার সাথে বিশ্বাসঘাত করেছিল, বলেছিল তনিমাকে বিয়ে করলে সব সম্পত্তি আমার নামে নামে করে দিবে কিন্তু সেই তার কথা রাখে নি এক কানা কড়ি ও আমাকে দেয়নি সব তোর নামে করে দিয়েছে….যার ফল এখন তুকেই ভোগ করতে হচ্ছে ওয়িলে যদি এমন আজেবাজে শর্ত না দিয়ে রাখত..তাহলে তো তুদের ও কবেই মেরে দিতাম….এতদিন চুপ ছিলাম তোর আঠারো বছর পূর্ন হয়নি বলে….আজ তোর আঠারো বছর পূর্ন হয়েছে এখন সব সম্পতি তোর নামে….এখন সেটা আমার নামে করে দিবি….তোর নামে থাকলে অর্ধেক সম্পতি আবার নিলয়ের কাছে চলে যাবে।।সেটা আমি হতে দিব না…এজন্য তোর কাছে কোনো ছেলেকে ঘেষতে দিয়নি….যে ঘেষেছে তাকেই শেষ করে দিয়েছি……কিন্তু তনিমা ওই বজ্জাত ছেলেটার সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিল।।।
তাহিন থমকে গেল গেল।তৌহিদ আহমেদ কথার মানেটায় যেন বুঝতে পারল না…বুঝবে বা কি করে এসব যে ওর অজানা।।। চোখ দিয়ে ঠলঠল করে পানি পরছে।।সামান্য সম্পত্তি জন্য এতগুলা মানুষকে খুন করছে এমনকি নিজের বউ বাচ্চার কোনো মায়া হলো না….এমন লোককে তো অনেক আগেই মেরে ফেলা উচিত ছিল… হাতের বাধন যদি বাধন না থাকত তাহলে এমন লোককে মারতে একটু ও হাত কাঁপত না।।
হঠাৎ করে তৌহিদ আহমেদের ফোনটা বেজে উঠল….রিসিভ করে চিৎকার করে গালাগাল করছে দ্বতীয় ঘরের ছেলে সায়নকে…..পুরায় একটা বকাটে…ফোনটা কেটে তড়িগড়ি করে
তাহিনের সামনে তিনটা কাগজ ধরে…
– যলদি এ কাগজগুলাতে সাইন কর…
-কক্ষনো না এই কাগজগুলাতে মরে গেলে ও সাইন করব না…..
-সাইন তো তুকে করতে হবে এখন তো জেনেছিস এগুলো কিসের কাগজ তারপরে সাইন করতে অসুবিধা কোথায়…….ও নিলয়ের বাচ্চাকে ডির্বোস দিয়ে ও লোকটাকে বিয়ে করবি তারপর সব কিছু আমার নামে করে দিবি…ব্যাস এইটুকু তারপর তুই যেখানে খুশি চলে যাস এই লোকটা এমনিতে ও দুদিন পর দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে নিবে…
-প্রয়োজনে সব সম্পত্তি বিক্রি করে গরীরদের দিয়ে দিব তারপরে তোমার মত জগন্য লোককে দিব না….আর এমন একটা লোককে আমি বিয়ে করব সেটা তুমি কি করে ভাবলে…..
এখন সময় আছে নিজের জগন্য কাজের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করে ভালের পথে চলতে পারো কিনা দেখ…এরপর হয়ত সেই সুযোগটায় পাবে না…
কথাটা শুনে তৌহিদ আহমেদর রাগে গা জ্বলে যাচ্চে এত কিছু করল এসব পাওয়ার জন্য।আর সেই কিনা বলছে সাইন করবে না…রাগে ফুসতে ফুসতে তাহিনকে থাপ্পর দিয়ে যাচ্ছে।
-এ বিয়ে তো তুকে বিয়ে করতেই হবে…..আর এই লোকটাকে তুকে বিয়ে করতে হবে এটা শুধুমাত্র নিলয়কে শিক্ষা দেওয়ার জন্য…না হলে তোর বিয়ে টিয়ে নিয়ে আমার কোনো ম্যাথা ব্যাথা নেই।।।।।
ঠোঁঠ বেয়ে রক্ত পরছে তাহিনের…বাকশক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে তবু ও একটায় কথা বের হচ্ছে
-আমাকে মেরে ফোললে ও কখনো এই কাজে সফল হবে না……
এভাবে হবে না।এবার অন্য উপায়ে কাজটা হাসিস করার কথা ভাবছে তৌহিদ আহমেদ।।তা না হলে যে সারা জীবনের পুষে আশা স্বপ্নটা ব্যর্থ হয়ে যাবে….মোবাইল টা বের করে তাহিনের দিকে ঘুরিয়ে দেখাতে…..তাহিন নিজেকে সামলাতে পারল না চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি বেয়ে পরছে।।।।
তৌহিদ আহমেদ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে
-এবার তো সাইন না করে যাবি কোথায়…? তা না হলে যে তোর সো কলড মাকে সারাজীবনের জন্য হারাতে হবে।।।।।
হাত কাঁপছে তাহিনের…তৌহিদ আহমেদ ডান হাতের বাধঁনটা খুলে দিয়ে ডিবোর্স পেপারটা সামনে ধরল..চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে গেছে চোখের পানিতে….হাতটা সামনের দিকে চলছে না…নিলয়কে থেকে একদিন না একদিন আলাদা হয়ত হয়েই যেতেই…কিন্তু এমন একটা লোককে বিয়ে করে নই…. পালানোর মত অবস্থায় ও নেই যে পালিয়ে যাবে।।।মনে মনে অাল্লাহ স্মরণ করছে একটা পথ দেখানোর জন্য….
নিলয় কি আসবে বাঁচাতে নাকি পালিয়ে গেছে ভেবে আবার ভুল বুঝবে….
তাহিনের নিরবতা দেখে তৌহিদ আহমেদ টেবিলে বারি দিয়ে…..
-তাড়াতাড়ি কর হাতে একদম সময় নেই হাতে….
ওই নিলয়ের কথা ভাবিস না জীবনে এখানে আসতে পারবেনা…তুকে এতদিন লুকিয়ে রেখেছে এবার আমি লুকিয়ে রাখব…
আর কিছু করতে পারুক বা নাই পারুক এমন লোকের মুখে তো থুথু ছিঠিয়ে দিতেই পারে……
তৌহিদ আহমেদ রেগে তোর এত বড় সাহস আর মুখে থুথু দিছস……
হঠাৎ করে হেসে দিয়ে যা আজকের মত মাফ করলাম….এবার লক্ষী মেয়ের মত সাইনটা কর…না হলে কিন্তু তনিমা
তাহিন চিৎকার করে
-না
-তাহলে যলদি সাইন কর……
ধমক দিয়ে কথাটা বলতেই,
কলম নিয়ে গেল প্রপার্টি পেপারে……..
চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে আসছে….শরীলে যেন আরেকটু শক্তি ও অবশিষ্ট নেই নিজের সাথে যুদ্ধ করার….
চলবে…..
<ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন>
Wait for the next one