#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি 💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-27
চারিদিকে শুমশাম নিরবতা। স্তব্ধ নিস্তব্ধ সারা আহসান বাড়ি জুড়ে। বিস্ময়ে ছেয়ে গেছে বাড়ির সব মানুষ আত্মীয়স্বজন মেহমানরা।জাকজমক কোলাহল পূর্ণ বিয়ে বাড়িতে মুহুর্তেই একদম নিরব হয়ে গেছে।
বিয়ের ঠিক আগ মুহুর্তে কনের মুখে এমন একটা কথা শুনবে কেউ ই আশা করে নি। প্রনয় আহসান মেয়ের দিকে নিশ্চুপ ভাবে তাকিয়ে রয়েছেন।চোখ বন্ধ করে তিনি কিছুক্ষণ আগের ঘটনা আরেকবার ভেবে নেন,
প্রীতিকে কবুল বলতে বললে প্রীতি চুপ থাকে। বলে না কিছু। হাত পা তার ক্রমশ কাপছে।ঠোঁট দুটোকে যেনো কেউ সুপারগ্লু দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছে।প্রীতি চোখ বন্ধ করে। সাথে সাথে নীলাভের মুখটা ভেসে উঠে চোখের সামনে।প্রীতি চট করে চোখ খুলে ফেলে। কবুল বলার ঠিক আগ মুহুর্তে প্রীতি দাঁড়িয়ে যায় একদমে কোন দিকে না চেয়ে বলে উঠে,
-আমি এ বিয়ে করবো না।করবো না এই বিয়ে।আমি…আমি নীলাভকে ভালোবাসি।
নীলাভের কানে কথাটা যাওয়া মাত্র ও থমকে যায়।বিষন্নতায় ঘেরা মুখের চোখ দুটো মুহুর্তেই চিকমিক করে উঠে। চঞ্চল হয়ে উঠে চোখের মনি দুটো। প্রীতি নীলাভের দিকে তাকিয়েই অসহায় চোখে আবারও বলে উঠলো,
-আমি ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে…..সত্যি #হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি।
নীলাভ ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।মাথার চুল গুলো হাত দিয়ে ধরে হাসলো।নীলা চৌধুরীর দিকে তাকালো। নীলা চৌধুরীর মুখ খুশিতে চকচক করছে।খুশিতে তৌফিক চৌধুরীর হাত এমন ভাবে ধরে রেখেছে যেনো যৌবন বয়সে থাকলে তিনি রীতিমতো খুশিতে লাফাতেন।
নীলাভ একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো।বাড়িয়ে দিলো দুটো হাত প্রীতির উদ্দেশ্যে।
প্রীতি কান্নামাখা চোখে মৃদু হেসে যেই দৌড়ে নীলাভের কাছে আসতে যাবে।ওমনি ওর হাত টা তনয় আটকে ধরলো।এমন ভাবে মুচড়িয়ে প্রীতির হাত টা ধরলো প্রীতির হাতের চুড়ি গুলো ডেবে যেতে লাগলো।সবাই শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে।কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না একটুও।রাফান দাত কিড়িমিড়ি করে এগিয়ে আসতে চাইলে স্নেহা আটকে দিলো।
প্রীতি হাত মুচড়াতে মুচড়াতে বলল,
-আহ…লাগছে আমার। ছাড়ুন।
তনয়ের চোখ দুটো লাল।ভয়ানক লাল হয়ে আছে।হুংকার ছাড়ার মতো করে সে বলল,
-লাগুক। লাগার জন্যই তো ধরেছি।তোমার কত বড় সাহস ভরা আত্মীয়স্বজন মেহমানের সামনে তুমি বিয়ে ভাঙছো?অপমান করছো?এই বিয়ে করতেই হবে তোমার।ডানা বেশি বড় হয়ে গেছে তাই না?একবার বিয়েটা হতে দেও।তোমার ডানা কীভাবে ভাঙতে হয় সেটা আমি দেখছি।
প্রীতি চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিয়েছে।বারবার ফুপিয়ে উঠছে।তনয় টানতে টানতে বলে উঠলো,
-এসো এসো বলছি।এই কাজী বিয়ে পড়ান।
,
প্রীতির মাথার ঘোমটা নিচে পড়ে গেছে।নাকের নথ খুলে গেছে।মাথার টিকলি এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেছে।সোনার চুড়ির সাথে কিছু কাচের চুড়ি ছিলো সেগুলো কয়েকটা ভেঙে নিচে পড়ে আছে।তনয় এক হাত দিয়ে প্রীতির হাত টেনে নিতেই কে যেনো প্রীতির আরেক হাত খপ করে ধরলো।তনয় বাধা পেয়েই পেছনের দিকে তাকালো।
সামনের মানুষটির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে তনয় বলে উঠলো,
-আংকেল….?
প্রনয় আহসান কিচ্ছু বললেন না।তনয় আবারও কঠোর গলায় বলে,
-আংকেল আপনি ওর হাত কেনো ধরেছেন?ছেড়ে দেন প্রীতির হাত।
প্রনয় আহসান মুখ খুললেন। বেশ শান্ত ভাবে বলে উঠলেন,
-এই বিয়ে হবে না।
সবাই চকিতেই অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
তনয়ের মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা।এবার তনয়ের বাবা এগিয়ে এলো।তামিম রহমান হালকা রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলেন,
-বিয়ে হবে না মানে?বিয়ে হবে না মানে কি?ফাইজলামি করছিস বিয়ে হবে না?এতো আত্মীয় স্বজন সবার সামনে অপমান করার চেষ্টা করছিস?
তনয়ের মা মুক্তা রহমান বলে উঠলো,
-মগের মুল্লুক না কি বিয়ে ঠিক করে আবার বিয়ের আসরে বিয়ে ভেঙে দিচ্ছে।ভরা বাড়িতে এভাবে অপমান?
এরপর স্বামীর উদ্দেশ্যে নেকা স্বরে তিনি আবারো বলে উঠলেন,
-ওগো,আমি বলছি শুনো। এসব ওদের সাজানো।প্লেন করে ওরা এসব করেছে আমাদের অপমান করার জন্য।একবার বিয়ে টা হক না শুধু এরপর ওই মেয়ের ঠ্যাং ভেঙে রেখে দিবো।ভালোবাসা না ভালোবাসা?মুখ একদম ভেঙে দিবো।
প্রীতি নির্বাক হয়ে সব দেখে যাচ্ছে।বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে ও।
তনয় আবারো প্রীতির হাত টা টেনে ধরলে প্রনয় আহসান খুব শান্ত ভাবে মুচড়িয়ে তনয়ের হাত টা ছাড়িয়ে নিলেন প্রীতির হাত থেকে।মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে শান্ত স্বরে তিনি বলে উঠলেন,
-এই বিয়ে হবে না।আমি যখন বলেছি তার মানে এই বিয়ে হবে না।প্রথমে ভেবেছিলাম এই ভরা আত্মীয় স্বজনের সামনে আপনাদের অপমান করবো না।মেয়ের মতের বিরুদ্ধে হলেও আমি তনয়ের সাথেই বিয়েটা দেবো।কিন্তু আপনারা?তামিম,তোর ছেলে বলছে বিয়ের পর না কি আমার মেয়ের ডানা কেটে দিবে?আর তোর বউ বলছে, একবার বিয়ে টা হোক আমার মেয়ের ঠ্যাং ভেঙে দেবে মুখ ভেঙে দেবে।
প্রনয় আহসান থামলেন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে তামিম রহমানের উদ্দেশ্যে তিনি আবারো বলে উঠলেন,
-আমার অনেক আদরের মেয়েরে।অনেক আদর যত্ন দিয়ে আমি ওকে মানুষ করেছি।ওর বেলায় যেকোনো জিনিস আমি সাতবার ভেবেছি।বেস্ট জিনিস সবসময় আমি আমার মেয়েকে দিয়েছি।আর আসল জিনিসের সময় ই আমি আমার মেয়েকে একটা অপাত্রের হাতে তুলে দেবো?যে জায়গায় আমার মেয়ে কখনো সুখী হবে না।বিয়ের আগেই শুনতে হয় তোরা আমার মেয়ের ঠ্যাং ভাঙবি মুখ ভাঙবি।তোরা বিয়ের আসরে দাঁড়িয়ে এসব বলছিস তাহলে বিয়ের পর কি করবি?
তনয় মাঝপথে প্রনয় আহসানকে থামিয়ে দিয়ে দাত কিড়িমিড়ি করে বলে উঠলো,
-আপনি তাহলে বিয়ে টা আমার সাথে দেবেন না।
প্রনয় আহসান -না,বেরিয়ে যাও এ বাড়ি থেকে।
তামিম রহমান বলে উঠলেন,
-কাজ টা তুই ঠিক করলি না প্রনয়।এর মাশুল তোকে গুনতে হবে।
প্রনয় আহসান -দরজা খুলা চলে যা।
তনয় যাওয়ার সময় একবার ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে নীলাভের দিকে তাকালো।নীলাভও চোখ লাল করে তনয়ের চোখের দিকে তাকালো।মনে হচ্ছে চোখে চোখে লড়াই করছে ওরা।একে অপরকে চোখ দিয়েই জ্বলসে দিচ্ছে।
তনয় আর একটা কথাও না বারিয়ে বাবা মা আর বরযাত্রী নিয়ে চলে গেলো। বরযাত্রী যাওয়ার পর বাড়ি অনেকটাই ফাকা হয়েছে।প্রনয় আহসান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেলেন।এরপর বললেন,
-আমার এই মা টার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।তুমি আগে কেনো বলনি বলো তো মা যে, তুমি নীলাভকে ভালোবাসো তাহলে তো আগেই আমি সব ঠিক করে দিতাম।
প্রীতি বাবাকে জড়িয়ে ধরে মাথা নিচু করে বলে উঠলো,
-আমি বুঝতে পারি নি বাবা স্যরি।
প্রনয় আহসান -ইটস ওকে মা।কিন্তু তুমি যদি আমাকে আগে বলতা তাহলে আজ এতো অপমানিত হতে হতো না।
প্রীতি ছোট্ট করে আবারও বলল,
-স্যরি।
প্রনয় আহসান মেয়েকে ছেড়ে এবার নীলা চৌধুরী আর তৌফিক চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাড়ালেন হাত জোড় করে বলে উঠলেন,
-আমার মেয়েটাকে তোদের ঘরে নিবি?আমি আমার মেয়ের সারাজীবনের দায়িত্ব তোদের দিতে চাই।
তৌফিক চৌধুরী প্রনয় আহসানের হাত ধরে বলে উঠলেন,
-এভাবে বলছিস কেনো?প্রীতির বিয়ে যদি আগে থেকেই অন্য জায়গায় ঠিক না করতি তাহলে আমরাই ওকে আমাদের বাড়ির বউ বানিয়ে নিয়ে যেতাম।
নীলা চৌধুরী খুশিতে বলে উঠলেন,
-প্রীতি মাকে আমার বরাবর ই পছন্দ।ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে প্রথমে আমি ২ দিন ঠিকমতো খায় নি।আপনি চিন্তা করবেন না ভাইজান।প্রীতিকে আমি বউ হিসেবে নয় মেয়ে হিসেবে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রনয় আহসান সস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন।তার মেয়ে এই বাড়িতেই ভালো থাকবে।সুখে থাকবে।প্রনয় আহসান নীলাভের সামনে গিয়ে কিছু বলে উঠার আগেই নীলাভ তারাহুরো বলে উঠলো,
-আমার কোনো আপত্তি নেই আংকেল।আমি রাজি।
নীলাভের এহেন কথায় সবাই হেসে দিলো।
রাফিয়া আহসান নিজেও অনেক খুশি।যেইদিন থেকেই তিনি নীলাভ কে দেখেছেন।ওইদিন থেকেই তার ইচ্ছা ছিলো নীলাভকে জামাই বানানোর।কিন্তু গোপনে গোপনে। রাফান ও খুশি।তার বোন ভালোবাসে নীলাভকে। এর চেয়ে বড় আর কিছু নেই।তার বোন যেখানে খুশি সেও সেখানে খুশি।আর নীলাভ ছেলেটা অনেক ভালো।
প্রনয় আহসান এবার রাফিয়া আহসান আর স্নেহাকে হাক ছেড়ে বলে উঠলেন,
-তাড়াতাড়ি মেহেন্দির আয়োজন করো।আমার মায়ের হাত খালি।আজ মেহেন্দি হবে কাল গায়ে হলুদ।পরসু বিয়ে।
সবাই যে যার কাজে লেগে পড়লো।
,
নীলা চৌধুরী আর তৌফিক চৌধুরী বাড়ি চলে গেছেন দুই দিন পর বিয়ে কত কাজ কত ডেকোরেশন।
স্নেহা প্রীতিকে ধরে উপরে নিয়ে গেলো চেঞ্জ করানোর জন্য।রাফান ও নীলাভকে নিয়ে চেঞ্জ করাতে গেলো।
_______________________________
রহমান বাড়ি থেকে ভাঙচুর এর শব্দ আসছে।কেউ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে একের পর এক জিনিস ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে।তামিম রহমান এবার ছেলেকে আটকে ধরে বলল,
-শান্ত হও মাই সান।শান্ত হও।ওই মেয়েকেই আমি এনে দিবো।একদম তোমার পায়ের কাছে এনে দিবো।
তৎক্ষনাৎ হুংকার ছেড়ে তনয় বলে উঠলো,
-চাই না আমার ওই মেয়ে।চাই না।নীলাভ আবারো জিতে গেলো আবারও জিতে গেলো।ও আমার শত্রু।আমি কখনো জিততে পারি নি ওর জন্য।না কোনো স্পোর্টস এ না কোনো এক্সাম এ নাথিং। সবসময় নীলাভ ফার্স্ট আর তনয় সেকেন্ড। ভারসিটির ক্রাস আইকন নীলাভ। ও আমার জীবনের কাল।আই হেট হিম।হোক ওদের বিয়ে হোক..আমি ওদের জীবন নরক বানিয়েই ছাড়বো।একবার বিয়েটা শেষ হক।তনয় রহমান কে অপমান করা তাই না?ভরা বাড়িতে আমাকে অপমান করেছে এর শোধ আমি তুলবোই।শুদে আসলে তুলবো।
হকিস্টিক দিয়ে জোরে ডেসিনটেবিলের গ্লাসে বারি মারলো তনয়।
____________________________
কলাপাতা রঙের একটা হালকা কাজ করা পাঞ্জাবি পড়ে বিরক্তিসহীত একা বসে আছে নীলাভ।এই এতো অপরিচিত বাড়িভরা মানুষের মাঝখানে একা একা বসে থাকা তার জন্য লজ্জিতস্বরুপ।তারমধ্যে রাফান ও একটু আগে একটা কাজে বেরিয়েছে।তাহসিন আসছে।রাস্তায় আছে এখন।তাহসিন এলে নীলাভ যেনো একটু রেহাই পাবে।ঘড়ির টাইম দেখতে দেখতেই নীলাভের চোখ সিড়ির দিকে পড়লো।
লিনা আর স্নেহা মিলে প্রীতিকে নিয়ে আসছে।কলাপাতা কালারের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে প্রীতি। গায়ে টিয়া কালারের ফুলের গয়না।মুখে খুশির হাসি।নীলাভের চোখের সাথে প্রীতির চোখ পড়তেই নীলাভ অন্যদিকে ঘুরে তাকালো।প্রীতি মুচকি হাসলো।লিনা সবটা খেয়াল করে প্রীতির কানে কানে বলল,
-গোমড়া চুপচাপ মানুষ রোমান্টিক হলে কিন্তু মারাত্মক।
প্রীতি চোখ পিটিপিটি করে তাকালো যার অর্থ এখানে
রোমেন্টিকতার কি হলো?
পার্লার থেকে মেয়ে এসেছে মেহেদি দিয়ে দেওয়ার জন্য।মেহেদীর সাথে সঙ্গীত ও হয়ে যাবে।
প্রীতি মেহেদী দিতে বসেছে।বারবার ও কোনা চোখে নীলাভকে তাকিয়ে দেখছে কিন্তু নীলাভ একবারো তাকায় নি প্রীতির দিকে।সেই কখন থেকে নীলাভ ফোনের মাঝেই ডুবে আছে।প্রীতির রাগ লাগছে।অনেক রাগ।সাথে আবার মনে হচ্ছে,
-নীলাভ কি ভালোবাসে তাকে?সে তো বলার সুযোগটাই দিলো না। হুটহাট বিয়েটা ঠিক হয়ে গেলো।এমন তো হতেই পারে নীলাভ প্রীতিকে ভালোবাসে না অন্যকেউ আছে ওর জীবনে।
প্রীতি ভেবেই আবার ও নীলাভের দিকে তাকালো।কিন্তু নীলাভ নেই।জায়গাটা ফাকা পড়ে রয়েছে।প্রীতি চমকে উঠলো।এই তো এখানেই ছিলো।এর ই মাঝে কই হাওয়া হয়ে গেলো নীলাভ…
প্রীতি এদিক সেদিক তাকাতেই নিজের কানের কাছে নরম কিছুর টের পেলো।গরম বাতাস পেলো।প্রীতি আবেশে চোখ বন্ধ করে সোফার সাথে হেলান দিলো।সাথে সাথে নীলাভ বলে উঠলো,
-ভালোবাসি..ভালোবাসি #হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি।
প্রীতির ঠোঁটে চমৎকার হাসি ফুটে উঠলো।প্রীতি আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো।নীলাভ নেই।প্রীতি আবারো এক দফা চমকে গেলো।
তাহলে কি সে স্বপ্ন দেখছিলো?কিন্তু তা কি করে হয়?প্রীতি আশেপাশে তাকাতেই দেখলো নীলাভ একটু দূরেই দাড়িয়ে ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। নীলাভ প্রীতির দিকে একবার তাকিয়ে হাসলো।আহা!কি সুন্দর হাসি।
প্রীতি বেশ আয়েশ ভাবে সোফায় নিজেকে পুরোপুরি ভাবে এলিয়ে দিলো।এটা স্বপ্ন না বাস্তব।প্রীতি হাত দুটো টান টান করে মুচকি হেসে পার্লার এর মেয়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
-সুন্দর করে আমার হাতে লিখো ‘আমার গোমড়ামুখো’।
#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-28
চারিদিকে অন্ধকার। সবার হৈ চৈ এর মাঝেই আচমকা সব আলো নিভে গেছে।নীলাভ ফোনে কথা বলছিলো আচমকা কারেন্ট চলে যাওয়ায় সে ফোন রেখে আশেপাশে তাকালো।অন্দকারে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। শুধু মানুষের গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে।নীলাভ শুনতে পেলো কে যেনো হাক ছেড়ে বলে উঠলো,
-এই লাইট জ্বালাও।
সাথে সাথে একটা আলো জ্বলে উঠলো।নীলাভ তার চোখের উপরে হাত দিলো।আলো টা চোখে সয়ে যেতেই সে হাত টা নিচে নামালো ধীরে ধীরে। সামনে তাকিয়ে দেখলো সব মেয়েরা এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে।শুধু সামনে একটা মেয়ে কলাপাতা রঙের লেহেঙ্গা পড়া।বাকি সবাই গোল্ডেন কালার।নীলাভ বুঝতে পারলো এটা প্রীতি। তবুও তার ভ্রুযুগল কিঞ্চিৎ কুচকিত যে এখানে কি হতে চলেছে? নীলাভের ভাবনার মাঝেই প্রীতি ওর দিকে চেয়ে মুচকি হেসে গেয়ে উঠলো,
তোমায় দেখে মনের ভেতর জাগলো ইমোশন
আমি প্রেমে পড়ে গেছি ওগো,
ওগো জেন্টেলম্যান ।
তোমায় দেখে মনের ভেতর জাগলো ইমোশন
আমি প্রেমে পড়ে গেছি ওগো,
ওগো জেন্টেলম্যান ।
মনেতে প্রেমের বাতি জ্বলছে দিবারাত্রি,
পরান জুড়ে উঠে যে তুফান….
আমি প্রেমে পড়ে গেছি ওগো,
ওগো জেন্টেলম্যান।
প্রীতির এমন পাগল গানে পাগল নাচ দেখে নীলাভ হাসছে।ওর মাঝে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে।’ভালোবাসার ভালোলাগা’।নীলাভের ভাবনার ঘোর কাটলো প্রীতির ছোয়ায়।প্রীতি নিজের বুকের বাম পাশে হাত রেখে নীলাভকে পেছন থেকে হালকা ভাবে ধরে বলল,
তোমায় দেখে মনের ভেতর জাগলো ইমোশন
আমি প্রেমে পড়ে গেছি ওগো,
ওগো জেন্টেলম্যান।
আশায় আশায় যার
বসে থেকেছি
তোমার মাঝে তার ঠিকানা খুজে পেয়েছি। (ii)
মনেতে মাতামাতি, কর যে দিবারাতি
পরান জুড়ে উঠে যে তুফান…
আমি প্রেমে পড়ে গেছি ওগো,
ওগো জেন্টেলম্যান।
তোমায় দেখে মনের ভেতর জাগলো ইমোশন
আমি প্রেমে পড়ে গেছি ওগো,
ওগো জেন্টেলম্যান
গলায় একটা গোল্ডেন কালার উড়না ঝুলিয়ে প্রীতির পেছনে গিয়ে নীলাভও গেয়ে উঠলো,
ওওও…বাঙালি মেয়ে
একটু শুনে যাও….
তুলনা তোমার হয়না যে আর কোথাও।
আশেপাশের সব ছেলেমেয়েরা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এতো শান্তশিষ্ট ভদ্র নীলাভ গান পারে?
নীলাভ প্রীতির দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে প্রীতির কোমড় ধরে ঘুরিয়ে দিয়ে আবার গেয়ে উঠলো,
ইস্ট দেখেছি ওয়েস্ট খুজেছি
নেই তোমার জুড়ি
তুমি সত্যি করে ওয়াও……
প্রীতি ঘুরে আবার নিজের দু হাত নীলাভের চোখের সামনে ধরে গেয়ে উঠে,
চুরি পড়েছি, কাজল পড়েছি
আকাশ ভরা প্রেম তোমার জন্যে রেখেছি….(ii)
মনেতে আছো সাথী
তুমি যে দিবা রাতি
পরান জুড়ে উঠে যে তুফান….
আমি প্রেমে পড়ে গেছি ওগো
ওগো জেন্টেলম্যান।
তোমায় দেখে মনের ভেতর জাগলো ইমোশন
আমি প্রেমে পড়ে গেছি ওগো,
ওগো জেন্টেলম্যান।
প্রীতি গান শেষে নীলাভের কাধে দু হাত রেখে দাড়ালো।সাথে সাথে প্রীতির কোমড় জড়িয়ে ধরলো নীলাভ।
আশেপাশে সবাই সিটি বাজাচ্ছে হাত তালি হৈ হুল্লোড় করছে।প্রীতি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচে নামিয়ে ফেলল।প্রীতির কপাল গিয়ে ঠেকলো নীলাভের ঠোঁটের উপর।প্রীতির সারা শরীর বিদ্যুৎের মতো কেপে উঠলো। ঝড়ের বেগে ও সরে আসতে চাইলে।তখনি নীলাভ আরো টাইট করে নিজের সাথে ওকে জড়িয়ে ধরলো।
________________________________
আজ গায়ে হলুদ নীলাভ আর প্রীতির।
প্রীতির খুশি যেনো বাধ ভাঙছে না।সেটা ওর হাসি মুখ দেখলেই বুঝা যায়।রাফিয়া আহসান আজ মেয়েকে নিজের মনের মতো করে সাজিয়েছেন।মেয়ের গায়ে হলুদ শাড়ি জড়িয়ে দিয়েছেন।কাচা হলুদ কমলা ফুলের গহনা পড়িয়ে দিয়েছেন।হাতে মেহেদী পায়ে আলতা দিয়ে দিয়েছেন।একদম ভরপুর লাগছে আজ প্রীতিকে।
মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে রাফিয়া আহসান মুচকি হেসে বলে উঠলো,
-কি? আজ ও শুধু গালেই হলুদ মাখাবো?
প্রীতি ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।হেসে বলে উঠলো,
-না মা।আজ যত ইচ্ছা হলুদ মাখাও। সারা শরীরে মাখিয়ে দেও।
তখনি স্নেহা প্রীতিকে হালকা ধাক্কা মেরে ফিসফিস করে বলল,
-আমার যখন বিয়ে হয়েছিলো তোর ভাইয়া আমাদের বাড়িতে চুপিচুপি গিয়ে সবার আগে আমাকে হলুদ লাগিয়ে এসেছিলো।এখন তুই…
স্নেহাকে আর বলতে না দিয়ে প্রীতিও গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলে উঠলো,
-তুই কি এটা বুঝাতে চাচ্ছিস আমার জামাই রোমান্টিক না?তাহলে শুনে রাখ।আমার জামাই আমাকে এডভান্স হলুদ মাখিয়ে গিয়েছে তাও এক দিন আগে।কাল সবার আগে তো ওই মাখিয়েছে তাহলে আজ মাখানোর দরকার কি?একদম আমার পিছনে লাগবি না স্নেহার বাচ্চা।
স্নেহা মুখ টিপে হাসলো।লিনা এবার হা-হুতাশ করে বলে উঠলো,
-বিয়ে হওয়ার আগেই এতো বরের পক্ষ নিচ্ছিস?বিয়ে হলে কি করবি?আমাদের তো ভুলেই যাবি।
প্রীতি বিরক্তিতে ‘চু’ শব্দ করে বলে উঠলো,
-মা হলুদ লাগানো শুরু করো তো।
প্রীতি চাইছে গায়ে হলুদে পুরোপুরি ভাবে মনোযোগ দেওয়ার কিন্তু পারছেই না।প্রীতির এমন বিরক্তি ভাব দেখে স্নেহা ঠোঁট চেপে হাসি আটকে রেখে বলে উঠলো,
-লিনা দেখ, কেমন তারাহুরো করছে ? দুদিন আগে তো এই মহারানী গায়ে হলুদ করবেই না।তার না কি এসব নিয়ম কানুন ভালো লাগে না।আর আজ দেখ ছোবলার মতো কেমন করছে।
লিনা সশব্দে হেসে দিলো।রাফিয়া আহসান সহ মুরুব্বি সবাই হেসে দিয়ে প্রীতিকে হলুদ লাগানো শুরু করে।প্রীতিকে হলুদ লাগানোর মধ্যেই আবার লিনা গিয়ে প্রীতির কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
-দোস্ত দেখিস তো। তোর কোনো সিঙ্গেল দেবর ভাসুর আছে না কি?না মানে তাহলে আমার ও একটা হিল্লে হয়ে যেতো আর কি।
প্রীতি লিনার পেটে একটা গুতা দিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে,
-তুই আমাকে ডিস্টার্ব করা বন্ধ করবি?
সাথে সাথে আবারো হেসে লুটিয়ে পড়লো স্নেহা আর লিনা।প্রীতি যে এখন বিয়ে ছাড়া আর অন্য কিছু ভাবতে চাইছে না তা ওরা বেশ ভালো বুঝতে পারছে।
,
কাল প্রীতি আর নীলাভের বিয়ে।সে আর এই বাড়িতে থাকবে না।হঠাৎ মাঝে মাঝে দু একদিনের অতিথি হয়ে আসতে হবে তাকে।
ভাবলেই প্রীতির কান্নারা বাধ ভেঙে আসতে চায়।বারান্দায় দাড়িয়ে প্রীতি আকাশের দিকে তাকালো।
আকাশে অজস্র তারার মেলা বসেছে।চারিদিকে উজ্জ্বল তারার ভিড়ে প্রীতি নীলাভ আর ওর তারা টা খুজে চলেছে।অনেক্ষন খুজাখুজির পর ও বলল,
-এই তো এই তারাটা। এই তারা টা আমি আর পাশের তারাটা উনি।আর তার পাশের টা….
প্রীতি আর বলতে পারলো না।ফোনের বিকট শব্দে তার পুরো মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেছে।
প্রীতি ভ্রু কুচকে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নীলাভ ফোন দিয়েছে সেই আগের নাম্বার টা দেখেই।প্রীতির মুখে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠলো।ফোনটা কানে ধরে বলে উঠে,
-জি বলেন? ‘ছেছড়া মিসকিন’ আমাকে হঠাৎ কি মনে করে ফোন দিলো?
-‘৬৩ টাকা ফকিন্নি’ কে যে খুব মিস করছিলো তাই ফোন দিয়েছে।
-তাই বুঝি?
-হমম…এই তোমার না কাল বিয়ে!কই একটু লজ্জা টজ্জা পাবে।গাল লাল টুকটুকে হয়ে যাবে।আস্তে আস্তে নিমজ্জিত গলায় কথা বলবে তা না করে এতো পটপট করে কথা বলছো?
প্রীতি চোখ ঘুরিয়ে বলে উঠে,
-বিয়ে হলে কি কথা বলা বারন না কি?
নীলাভ -বারন না।কিন্তু কম বলতে হয়।
প্রীতি -ভালো হইছে।
নীলাভ -হমম একটা কথা বলার ছিলো।
প্রীতি -জি বলেন।
নীলাভ কপালে সুক্ষ্ম চিন্তার ভাজ ফেলে বলে উঠলো,
– তুমি না কি তনয়কে ভালোবাসো তাহলে আবার আমাকে কীভাবে বিয়ে কর?
প্রীতি ভ্রু কুচকে শান্ত স্বরে বলে উঠলো,
-আমি তনয়কে ভালোবাসি?কে বলল?
নীলাভ -তুমি নিজেই না কি তনয়কে বলেছো? বিয়ের দিন আমি আন্টিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আন্টি তখন বলেছিলো।
প্রীতি কপালে ভাজ ফেলে ভ্রু কুটি করে বলল,
-কই না তো।আমি তো এমন কোনো কথা তনয়কে বলি নি।তনয়ের সাথে আমার এমন সম্পর্ক ও কখনো গড়ে উঠে নি যে আমি তাকে ভালোবাসি বলবো।আর বলবোই বা কেনো আমি তো তাকে ভালোবাসি না।
নীলাভ কিছু একটা চিন্তা করে বলল,
-আচ্ছা থাক।
প্রীতিও আর বেশি মাথা ঘামালো না
-হমম…তো কি করেন?
নীলাভ বিছানায় আরাম করে শুয়ে বেশ অধিকারীবোধ গলায় বলে উঠে,
-এই তো। আমার বউয়ের কথা ভাবি।
নীলাভের কথাটা প্রীতির কানে পৌছার সাথে সাথে সে লজ্জায় গাল লাল টুকটুকে হয়ে গেলো।সর্বাঙ্গ শরীর গরম হয়ে উঠলো।কান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে যেনো।নীলাভ ও এমন কথা বলতে পারে?এমন ভাবে লজ্জা দিতে পারে?ভাবতেই প্রীতির মুখ আরো লাল হয়ে উঠলো।
‘বউ’ এই দুটো বর্নের শব্দটি তে থাকে কত ভালোবাসা কত আবেগ কত দায়িত্ব কত মান অভিমান কত অভিযোগ কত স্বপ্ন।’ঘর বাধার স্বপ্ন।’সারাজীবন নিজের কাছে ভালো রাখার দায়িত্ব। হুটহাট মান অভিমানের সাথী।ছোট ছোট জিনিসের আবদার অভিযোগ। সাথে সীমানাহীন মৌহ ভালোলাগা আবেগ প্রেম মায়া ভালোবাসা।
নীলাভ আবারও কিছু বলে উঠলো প্রীতি চোখ বন্ধ করে ফেলল।সাথে অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,
-শান্ত শিষ্ট মানুষগুলো আসলেই মিনমিনে শয়তান হয়।আপনি এতো খারাপ এতো অসভ্য!আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন।একদিনের মধ্যেই এতোটা পরিবর্তন কীভাবে?
নীলাভ নিজের এক ঝাক চুল নাড়িয়ে হেসে বলে উঠলো,
-বা রে..নিজের বউকে এগুলো বলবো না তো কি অন্যের বউকে গিয়ে বলবো?পাবলিক মারবে তো।
প্রীতি শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। রগে রগে শিরশির অনুভব হতে লাগলো।’বউ’ নামের দুটো বর্নের শব্দটি শুনে।ইশ…লোকটা বারবার কেনো বউ ডাকে।আমি তো মরে যাচ্ছি!
চলবে🙂