#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-9
প্রীতি এমন স্ক্যান করা দেখে নীলাভ হঠাৎ বলে উঠলো,
-আমাকে দেখা শেষ?
প্রীতি মুখ ঘুরিয়ে বলল,
-আপনাকে আমি কোন দুঃখে দেখতে যাবো।
নীলাভ-দুঃখে কেনো দেখতে যাবা?আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলেকে দুঃখে সুঃখে পাগলে ছাগলে গরুতে সবাই দেখে।যেমন,তুমি পাগল ছাগল।
প্রীতি একটা আঙ্গুল তুলে তেড়ে গিয়ে বলল,
-ইউ……
নীলাভ প্রীতির আঙ্গুল টা আটকে দিয়ে বলল,
-চলো তাহলে আমরা রিসোর্টে যাই।
প্রীতি কিছু বলল না শুধু একগুচ্ছ রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ধরাম ধরাম পা ফেলে চলল।
ওদের যাওয়ার পথেই হঠাৎ করেই বৃষ্টি থেমে গেলো।প্রীতি একটু টেনে বলে উঠলো,
-আআ…একবার হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হলো আবার হঠাৎ করেই থেমে গেলো।
নীলাভ এগোতে এগোতে বলল,
-জীবনের সবকিছু হঠাৎ করেই আসে আবার হঠাৎ করেই শেষ হয়।
প্রীতি -কেনো?
নীলাভ-কেনো মানে?আল্লাহ এমন করে দিয়েছে তাই।গাধা গাধা প্রশ্ন করো কেন?
প্রীতি থেমে গিয়ে বলল,
-আপনি কি আমার মধ্যে ভালো কিছু দেখেন না?একবার বলেন আমার বাচ্চামো স্বভাব আবার বলেন বেয়াদপ আবার বলেন পাগল আবার বলেন ছাগল এখন আবার বলতাছে গাধা গাধা প্রশ্ন করি।আপনাকে বলাটাই আমার ভুল।আজাইরা….
নীলাভ-বলো কেন?
প্রীতি -আর একটা কথাও বলবো না আপনার মতো অসভ্য লোকের সাথে।
নীলাভ বুকে হাত দিয়ে একটু হাফ ছাড়ার অভিনয় করে বলল,
-উফফ….বাচলাম
প্রীতি রেগে আবার ঠাসঠুস করে এগিয়ে চলেছে।
নীলাভ একটু গলা ছেড়ে জোরে বলল,
-এতো রাগ দেখায়েন না মাটি কিন্তু পিছলা।একটু আগে বৃষ্টি হইছে ঠাস ঠুস কইরে হাটতাছেন ধরাম কইরে যখন পড়বেন না তখন মজা বুঝবেন।
প্রীতি তাও কোনো কথা না শুনে ওভাবেই হেটে চলেছে।
নীলাভ এগিয়ে এসে প্রীতির আগে যেতে যেতে বলল,
-আমার সাথে জীবনেও পাবা না।
প্রীতি থেমে গিয়ে রেগে বলল,
-আপনি জানেন আপনি কতোটা শয়তান আর খারাপ লোক।আপনি না কি বোবা কালা?কথা কম বলেন?হাসেন না গোমড়ামুখো?ঝগড়া করেন না?এগুলোই তার নমুনা?
নীলাভ থেমে গিয়ে চোখ ঘুরিয়ে বলল,
-আমি আবার কখন কার সাথে ঝগড়া মারামারি করছি?আমি তো আমার মায়ের ইনোসেন্ট পোলা।(ইনোসেন্ট ফেস করে)
প্রীতি -দূর..
নীলাভ কে ধাক্কা দিয়ে প্রীতি আবার চলতে লাগলো।নীলাভ দুষ্টু হেসে ভাবতে লাগলো,
-বুঝ এখন কেমন লাগে?দুইটা দিন আমারে যা জ্বালানির জ্বালাইছিস এগুলা শোধ না দিলে তো জীবনেও বুঝবি না তোর জ্বালার কি পরিমাণ প্যারা।
নীলাভ মুখে শিষ বাজাতে লাগলো ‘তুম হি হো’ গানে।
প্রীতি এবার দাত কেলিয়ে নীলাভের দিকে চেয়ে বলল,
-আমি তো এখানেই আছি😁
ওমনি নীলাভ খোচা দিয়ে বলল,
-ও মা..রাগ শেষ? এতো তাড়াতাড়ি মেয়েদের রাগ শেষ হয়ে যায়?দিস ইস ভেরি বেড। আমি তো জানি মেয়েদের রাগ উঠলে মেয়েরা কি করে তাই জানে না?আকাশ পাতাল এক কইরে ফেলায়।সেই হিসেবে তোমার উচিত ছিলো এই পাশের পাহাড় টা তুলে এক বারি মেরে আমার মাথাটা ফাটিয়ে ফেলার।আর তুমি কি না আমার দিকে ঘুরে দাত কেলিয়ে বলছো,আমি তো এখানেই আছি।সেই হিসেবে দিস ইস ভেরি বেড। বলি আমি কি তোমাকে কিছু বলছিলাম,হুদাই আমার সাথে কথা কেনো বলো।শুনো,একদম কাছে আসার চেষ্টা করবা না।
প্রীতি চোখ কপালে তুলে বলল,
-এই ছেমড়ায় কয় কি?আমি কখন এর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম?আমি বলছি আমি তো এখানেই আছি।
নীলাভ-একই কথা।
প্রীতি -আজাইরা ঝগড়া করার জন্য ফাদ পেতে এক কদম আগায় বসে থাকে।
এই বলে যেই প্রীতি আবার ধরাম করে পা ফেলতে যাবে ওমনি গেলো পিছলায়।নীলাভ তাড়াতাড়ি হ্যাচকা টানে প্রীতি কোমড় জড়িয়ে পড়া থেকে বাচালো।
নীলাভ রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে প্রীতির দিকে।মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে ওর আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে।প্রীতি একটা ঢোক গিলে একটু সাহস সঞ্চয় করে।নিজেকে নীলাভের থেকে ছাড়িয়ে বলল,
-একদম এডভান্টেজ নিবেন না।
নীলাভ প্রীতির দিকে এমন ভাবে তাকালো প্রীতির আত্মা উড়ে যায় যায় অবস্থা।চোখ দিয়ে যেনো রক্ত পড়বে এতো লাল হয়ে গেছে।প্রীতি বিরবির করে বলল,
-হায় আল্লাহ.. এই পোলায় এমন ভাবে চায় কেন আমার দিকে।
নীলাভ কাছে এসে চিল্লিয়ে বলল,
-Are you mad? বার বার বলছিলাম এমন ভাবে চলো না।এখান থেকে পড়লে সোজা বেয়ে বেয়ে খাদে পড়তা।সেই চিন্তা করো?শুধু ঝগড়াই করতে জানো আর কি জানো হ্যা?আজ যদি এখান থেকে পড়তা তাহলে এর দায় কে নিতো?কে তোমার বাবা মার কাছে এক্সপ্লেইন করতো বলো?যত্তসব উটকো ঝামেলা।
নীলাভের শেষের কথা শুনে প্রীতির চোখে পানি এসে পড়লো।রীতিমতো চোখ দিয়ে পানি টপটপ করে পড়ছেও।
-আমি উটকো ঝামেলা?হ্যা আসলেই আমি উটকো ঝামেলা এর জন্যই তো অজানা অচেনা এক ছেলেকে বিরক্ত করছি ফাসিয়ে দিয়েছি।নাহ..আর যাবো না তার সাথে।
প্রীতি সেখানেই দাড়িয়ে রইল।নীলাভ এগিয়ে গেছে।একবার নীলাভ পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো ও রাগের বশে অনেক টা পথ এগিয়ে এসেছে আর প্রীতি সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে,
-ইসস..বেশি বলে ফেললাম না কি?বলেছি তো কি হয়েছে ওর প্রাপ্য ছিলো এটা।
নীলাভ গিয়ে আবার প্রীতির সামনে দাড়ালো আর বলল,
-চলো।
প্রীতি কোনো কথা বলল না।নীলাভ আবার বলল,
-যাবা না কি এবার আমি নিজে ফেলায় দিবো তোমাকে?
প্রীতি চোখ মুছে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলল,
-আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।আমি যাবো না কোথাও।
নীলাভ বিরক্তিতে বলে উঠলো,
-ধ্যাত…..
এই বলে প্রীতির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।এমন হেচকা টানে প্রীতি অল্প থেকে পড়ে গেলো না।ও হাত মোচড়া মুচড়ি করছে ছাড়া পাবার জন্য।
শেষে কিছুদূর যাবার পর নীলাভ ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
-ওকে ফাইন,ঠিকাছে যাও তুমি যেখানে যাবা।যাও।
প্রীতি নিজের হাত ঢলতে ঢলতে আবার ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো নীলাভের দিকে।নীলাভ বলে উঠলো,
-আরে আজ আমি ছিলাম বলে বেচে গেছো।আমার জায়গায় একটা খারাপ ছেলেও থাকতে পারতো।তখন কি অবস্থা হতো তোমার জানো?এতক্ষনে লাস হয়ে যেতে।বাড়ি থেকে যে পালিয়ে এসেছো একবারো কি এটা ভেবেছিলে আমি একা যাচ্ছি কই থাকবো কি করবো কই চলবো?নিজেকে কি খুব চালাক মনে করো তুমি? বোকার গোডাউন একটা।একটা জামা কাপড় জুতো কিচ্ছু ঠিকমতো আনো নি।আসার আগেই হাত পা কেটে আহামরি অবস্থা করে ফেলেছো আমি সাথে থাকতেই।আর আমি যদি না থাকতাম তোমার যে কি হতো আল্লাহই জানে।কেয়ারলেস মেয়ে একটা। পারো তো শুধু গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে কাদতে আর ঝগড়া করতে।আবার একটু কড়া কথা বলছি এটাই উনার গায়ে লাগছে।পাহাড় থেকে পড়ে গেলে খুব ভালো হতো না?আসো তাইলে আবার যাই।তুমি আবার পিছলা খাও আমি এবার একটু ও বাচাবো না।যাও, মরে যাও। আসো।
প্রীতির হাত ধরে টেনে নিতেই প্রীতি আবার চোখের পানি ছেড়ে দিলো।
নীলাভ প্রীতিকে ধরেই বলল,
-আরে আমি কাকে কি বুঝাচ্ছি?ছাগলরে বুঝাইতাছি জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মানে আর ছাগল বারবার মে মে করতাছে।এই হইছে তোমার দশা।চলো..
প্রীতির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো নীলাভ।প্রীতিও চোখ মুছে আর কোনো কথা না বলে যেতে লাগলো।ও ব্যাপারটা একবার নিজেই নিজের মনে মনে আওড়ালো,
-সত্যি তো একেই দেশের অবস্থা ভালো না তারউপর পাহাড়ি এলাকা।আমি এখানে এসেছি উনি যদি না থাকতেন তাহলে আমার কি হতো।আজ তো আমি এখানে দাড়িয়ে নাও থাকতে পারতাম।আমারই দোষ….
_______________________
ফ্রেস হয়ে ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে এসেছে দু জন।প্রীতি বার বার হাচ্ছি দিচ্ছে।বৃষ্টিতে ভিজেছে তাই।
নীলাভ তেতে বলে উঠলো,
-বারবার বলেছিলাম যে বৃষ্টিতে ভিজো না ভিজো না।সেই ভিজলোই এখন হাচি দিতাছে।কানের কাছে আইসে একদম হাচ্চি দিবা না এখন।
নীলাভের ধমকের সুর শুনে প্রীতি বলে উঠলো,
-আমি কি.. হাচ্চু..করছি আমার ঠান্ডার.. হাচ্চু…সমস্যা আছে তাই… হাচ্চু…ঠান্ডা লাইগে গেছে।
নীলাভ গিয়ে এক কাপ কফি আর এক কাপ রঙ চা অর্ডার করলো সাথে গরম পানি নিয়ে এলো।প্রীতির হাতে দিয়ে বলল,
-এই গরম পানি ২ মিনিটে খায়ে শেষ করবা।
প্রীতি -গরম তো….
নীলাভ-এতোটাও গরম না।চুপচাপ খাও।
প্রীতি গরম পানি খেয়ে বলল,
-এতো কেয়ার কেন করতাছেন?
নীলাভ-তোমার কেয়ার কিসের জন্য করতে যাবো?🙄কানের সামনে বার বার হাচি দিতাছো যদি জ্বর আসে সেবা তো আমারই করার লাগবো এর জন্য গরম পানি খাওয়াইলাম।
একটু পর কফি আর রঙ চা দিয়ে গেলো। নীলাভ কফি টা নিযে নিয়ে রঙ চা টা প্রীতিকে দিলো আর বলল,খেতে।
প্রীতি রঙ চা খায় না কিন্তু নীলাভের ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না।অনেক কষ্টে নাক ছিটকে ছিটকে খাচ্ছে।
নীলাভ দূর থেকে তা দেখে চোখ মুখ কুচকে নিল।
প্রীতি করিডোরে এসে প্রকৃতি দেখতে লাগলো যতই দেখছে ততই যেনো প্রেমে পড়ে যাচ্ছে এই প্রকৃতির রঙ তুলি দিয়ে আকা যেনো এই সবুজ গাছ সাদা মেঘ নীল সবুজ পাহাড়।
প্রীতি সেই সবুজ সতেজ প্রকৃতির দিকে তাকিয়েই ভাবতে লাগলো,
-একটা ছেলেকে চিনি না জানি না।আমি কিভাবে তার সাথে আছি?তাও এক ই রুমে?কিন্তু এটা ঠিক ছেলেটা ভালো।২দিন থেকে আছি কই এর মাঝে তো খারাপ কিছুই দেখতে পেলাম না।একটু রাগী এরোগেন্ট।কিন্তু এটিটিউড ব্যাপক।ভাব দেখায় আমার সাথে।আমারে বকা দেয়।আরে আমারে তো চিনে না।এই প্রীতি যে কতো ভাব দেখাইতে পারে হুহ…😏
নীলাভ কফি খেতে খেতেই বলল,
-মুখ তেরি কইরে কি ভাবো?
প্রীতি -মেয়েদের মতো খুচান কেন হ্যা?সব বিষয়ই আপনাকে বলা লাগবো?
নীলাভ ভ্যাবলাকান্তের মতো বলল,
-আমি মেয়েদের মতো খুচাই?সবাই বলে আমি কথা কেনো বলি না কথা কেনো বলি না?এতো কথা কম কেনো বলি?আর এ মেয়ে বলে আমি না কি মেয়েদের মতো খুচাই?হুদাই একটা।
প্রীতি -আমি হুদাই?আর আপনি আহমক গবেট গাধা মহিষ সাদা বান্দর।
নীলাভ তেড়ে বলল,
-তোমারে তো আমি…..
প্রীতি আস্তে আস্তে বলল,
-মিনমিনে শয়তান একটা।
তারপর আবার বলল,
-আচ্ছা আপনার নাম টা কে রাখছে বলেন তো?এতো সুন্দর একটা নাম এতো সুন্দর দেখতে মানুষ।কিন্তু স্বভাব এতো ক্যারক্যারা কেন?
নীলাভ ভ্রু কুচকে বলল,
-ক্যারক্যারা আবার কি?
প্রীতি -মানে খারাপ বদ।
নীলাভ -আগে নিজের চরকায় তেল দেও।তোমার খুব ভালো স্বভাব তাই না?দেখতেই যা সুন্দর কিন্তু স্বভাব নাউজুবিল্লাহ…..
প্রীতি -অপমান করলেন? না কি সুনাম করলেন?
নীলাভ-পুরাটাই অপমান করছি এইখানে কোনো সুনাম নাই।
প্রীতি -হুহ….
নীলাভ-ক্যায়ারলেস,ঝুগড়ুটে, গাধা,পাগল,ছাগল একটা…
প্রীতি -এই যে হাতে চায়ের কাপ দেখতাছেন না?এটা দিয়ে আপনার মাথায় বারি মেরে ভেঙে ফেলবো।আরেকবার আমার নামে আজেবাজে কথা বললে।
#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা শাহরীন
Part:10
এক ঝলক মিস্টি রোদ এসে পড়লো প্রীতির মুখে।আজ রোদ উঠেছে।কালকে যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে আজ রোদ যেনো তা পুষিয়ে দিয়েছে।
প্রীতি উঠে একবার ঘড়ি চেক করলো।ঘড়ি চেক করতেই চোখ টাকে বড় বড় করে ফেলল।মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।এই মুহুর্তে নিজের উপর প্রচন্ড রাগ উঠছে ওর সেই সাথে নীলাভের উপর ও। ইচ্ছে করছে নীলাভের মাথার সমস্ত চুল একটানে ছিড়ে ফেলতে।
নীলাভ বাহির থেকে এলো মাত্র। নীলাভ কে দেখা মাত্র প্রীতি মাথা থেকে হাত টা নামিয়ে দিয়ে সব ভাবনা দূরে ফেলে দিয়ে নীলাভের সামনে গিয়ে রেগে বলতে লাগলো,
-বলেছিলাম না আমাকে সকাল সকাল ডাক দিতে। ডাক কেনো দেন নি হ্যা?আমি সূর্যোদয় দেখতে চাইছিলাম।
নীলাভ একবার ভ্রু কুচকে প্রীতির দিকে তাকিয়ে ওকে সাইড করে ডেসিন টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের জ্যাকেট খুলতে লাগলো।আর বলল,
-মিনিমাম ১০ বার ডাক দিয়েছি তোমাকে।মরার মতো ঘুমাও না কি?এতো বার মনে হয় জীবনে কাউকেই ডাক দেই নাই।তোমাকে ১০ মিনিট ধরে যতগুলা ডাক দিছি।
প্রীতি -আমাকে একটু নড়াইলেই আমি উইঠে পড়তাম।
নীলাভ আড়চোখে প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,
-আমি মেয়েদের টাচ করি না।
প্রীতি কোমড়ে হাত দিয়ে রাগি স্বরে বলল,
-আহ..হারে…আসছে আমার সাধু পুরুষ এই পর্যন্ত দুই বার কোলে নিয়ে নিছে।আর বলতাছে সে না কি মেয়েদের টাচ করেন না।কথা শুনলে মনে হয় এক বারি মেরে মাথা দু ভাগ করে ফেলি।
নীলাভ-এতো কথা বলা বাদ দিয়ে রেডি হও তো মেঘলা যাবো।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসবা।মেয়ে মানেই দেরি।
প্রীতি মুখ তেড়ি করে চলে গেলো ফ্রেস হতে।ওয়াসরুম এ গিয়ে কিছুক্ষণ নিজের সাথে নিজেই ঝগড়া করলো।আর সেই ঝগড়ার কারন হলো কেনো সে এলার্ম দিয়ে রাখে নি।তাহলে সূর্যোদয় দেখা টা মিস হতো না তার।
নিজের সাথে নিজেই কিছুক্ষণ ঠেলাঠেলি করে ২০ মিনিট পর সে একদম রেডি হয়েই বের হলো ওয়াসরুম থেকে।
___________________________
অতঃপর ওরা এসে নামলো মেঘলা।অনেক ঢালু পথ নিচে সিড়ি পেরিয়ে তারপর আরো কিছু ঢালু রাস্তা আছে সেগুলো পেরোতে হবে।
প্রীতি সিড়ি গুলো বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে পার হলো।
নীলাভ সবসময় বিরক্তিকর চোখেই তাকিয়ে ছিলো প্রীতির দিকে।এতো বড় একটা মেয়ের বাচ্চামো স্বভাব তার কাছে মোটেই ভালো লাগছে না।বিরক্ত লাগছে সব কিছু।এতো বড় মেয়ের এভাবে বাচ্চামো করার মানে কি?বলতে গেলে তার কাছে প্রীতি মেয়েটা মানেই আস্তো একটা বিরক্তির স্তুপ।কবে যে ছাড়া পাবে এই মেয়ের থেকে সে আশায় আছে।আরো পুরো ১ দিন এ মেয়েকে সহ্য করতে হবে তার।
প্রীতি লাফিয়ে নামতে নামতেই বলল,
-আমরা তো কাল চলে যাবো।
নীলাভ কিছুই বলল না।
প্রীতি -কয়টায় বাস আমাদের?
নীলাভ-রাত ৭ টায়।
প্রীতি -কিহ আপনি নাহ বলছিলেন কালকে যাবো।
নীলাভ মুখ কুচকে বলল,
-আরে রাত মানে কি কালকে না?কালকে রাতেই তো যাবো।এতো দূরের জার্নির জন্য রাত ই বেস্ট।এখন চুপ থাকো।
প্রীতি বিরবির করে বলল,
-গোমড়ামুখো একটা।
সিড়ি পাড় করে ঢালু জায়গাটুকুতে প্রীতি এমন ভাবে দৌড় দিলো যার কারনে সে ব্যালেন্স ই হারিয়ে ফেলেছিলো।পা আটকাতেই পারছিলো না।প্রীতি এমন দৌড় দেখে নীলাভ ও দৌড় দিয়েছিলো।ওর মতে,এই মেয়ে কিছু করেছে তার মানে নিশ্চয়ই কোনো বিপদ আছে।
ঠিক তাই ই হলো ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে প্রীতি উল্টে পড়ে যেতে লাগলো।তখনই নীলাভ ওর হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
প্রীতি তো ভয়ে চোখ মুখ কুচকে নিয়েছে।পড়ে যাওয়ার ভয়ে নয় নীলাভের বকা খাওয়ার ভয়ে।
নীলাভ প্রীতির হাত ছেড়ে দিয়ে সামনে এগোতে এগোতে বলল,
-কুকুরের লেজ জীবনেও সোজা হয় না।এতোগুলা কথা শুনালাম কালকে আজকের মধ্যেই সব খায়ে ফেলাইছে।ঝামেলা মেয়ে একটা। হুদাই হাত ধরে আটকাইছি পড়ে গেলে বেশ হতো।একটা শিক্ষা হতো।
প্রীতি ফুসে উঠলো নীলাভের কথা শুনে তার সাথে ইচ্ছে করলো নিজের গালে একটা কষে চর মারতে।সব সময় আসলেই সে বেশি বেশি করে।যেইখানেই যায় একটা না একটা অঘটন বাধিয়েই রাখে।ঝামেলা যেনো ওর শিরায় শিরায়।
নিচে নেমে প্রীতি জায়গাটা দেখতে লাগলো জায়গাটা আহামরি সুন্দরের কিছুই নাই।তবুও অনেক মানুষ জন এখানে। আর বাংলাদেশ মানেই মানুষ জন।বাংলাদেশের মানুষ বন্যা আসলে পানিটা সহ দেখতে যায় আর এখানে আসবে না।জায়গাটার সবচেয়ে আকষর্নীয় বিষয় হলো ঝুলন্ত ব্রিজ আর ক্যাবল কার।প্রীতির মেঘলা জায়গাটা অল্প ভালো লাগে নি।কিন্তু ঝুলন্ত ব্রিজ দেখে ও নীলাভ কে বলল,
-এটা কি ঝুলন্ত ব্রিজ?
নীলাভ-হমম।
প্রীতি -কিন্তু ঝুলন্ত ব্রিজ না রাঙামাটিতে?
নীলাভ বিরক্ত হলো।যাকে বলে চরম মাত্রায় বিরক্ত।মাত্রাহীন সেই বিরক্ত নিয়েই বলল,
-ঝুলন্ত ব্রিজ যে শুধু রাঙামাটিতেই থাকবে এমন তো কোনো কথা নেই।রাঙামাটির টা আরো বড় আর সুন্দর বেশি।এখানে এই লেক টার পানি যেমন দূষিত সেখানের লেকের পানি পরিষ্কার অনেক সুন্দর লাগে জায়গাটা।চারিপাশে পাহাড় গাছপালা তারমধ্যে রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ।
প্রীতি মুখ টা গোল করে বলল,
-ওওও…….
প্রীতি একটু আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।হঠাৎ একটা জায়গায় ওর চোখ আটকে গেলো ও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে একটু চিল্লিয়ে বলল,
-এটা কি?
নীলাভ প্রীতির চিল্লানিতে সেদিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মহিলা নাচ্ছে আর তার আশেপাশে কিছু লোক ভিড় জমিয়ে তার নাচ দেখছে।কিছু মানুষ আবার যেতে যেতে দেখছে।মহিলাটা একটা নীল কালার শাড়ি পড়ে আছে।এটা আসলে মহিলা না কি হিজড়া বুঝতে পারা যাচ্ছে না।
নীলাভ প্রীতির দিকে একটু আড়চোখে তাকিয়ে আবার হাটা শুরু করে বলল,
-দেখো না নাচতাছে?
প্রীতি তাও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।নীলাভ একটু ধমক দিয়ে বলল,
-এই মেয়ে আসো তো।
প্রীতি -আমার নাম নুসরাত প্রীতি।আমার এতো সুন্দর নাম থাকতে আপনি আমাকে এই মেয়ে এই মেয়ে করে কেনো ডাকেন হ্যা?
নীলাভ -আচ্ছা আসো।
ঝুলন্ত ব্রিজের সামনে গিয়ে প্রীতি বড় করে একটা হাসি দিয়ে বলল,
-আমরা যখন এই ব্রিজ দিয়ে যাবো তখন এটা ঝুলবে তাই না?
নীলাভ ছোট করে বলল,
-হু..
প্রীতি মিস্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,
-অনেক মজা হবে।
নীলাভ প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,
-ক্ষেতে গেলে কৃষাণ এর খবর।
প্রীতি তিক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
-মানে?
নীলাভ -একটু পরেই বুঝবা।
প্রীতি -হুহ….
প্রীতি নীলাভের আগে আগে হাটা শুরু করলো।ঝুলন্ত ব্রিজের উপর উঠেই ব্রিজ টা নড়তে লাগলো।প্রীতির মনে হচ্ছে ও পানিতে পড়ে যাবে।প্রীতি মাতাব্বরি করে বেশি ভাব দেখিয়ে আগে আগে হেটে চলতাছিলো।ব্রিজ টা ঝুলছে দেখে প্রীতি চোখ মুখ কুচকে হালকা চিৎকার দিয়ে বলল,
-আম্মু……..
নীলাভ দূর থেকে প্রীতির এই অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দিলো।প্রীতির কাছে এসে বলল,
– এর জন্যই তখন সেই প্রবাদ বাক্যটা বলেছিলাম বুঝছো?
প্রীতির মুখ কাদো কাদো হয়ে গেছে। ও আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।কিছু মানুষ ভয়ে ঝুলন্ত ব্রিজ এর রেলিং ধরে ধরে যাচ্ছে।কিছু মানুষ নির্বিঘ্নে হেটে যাচ্ছে আবার কিছু কিছু মানুষ একজন আরেকজনের হাত ধরে আবার কাধে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।আর কিছু ছেলেমেয়ে প্রীতির দিকে তাকিয়ে হাসছে।
প্রীতি আবার ভাব দেখিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো।এক কদম এগোতে না এগোতেই নীলাভের শার্ট খামচে ধরে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বলল,
-আম্মু…..আমি যাবো না আমি যাবো না।আল্লাহ গো…পানিতে পড়ে যাবো। চলুন ফিরে যাই প্লিজ।
নীলাভ আর কিছু না ভেবে প্রীতিকে কোলে নিলো।
প্রীতি হঠাৎ নিজেকে ভাসতে দেখে অবাক হয়ে নীলাভের দিকে তাকালো।তারপর আশেপাশে তাকিয়ে একটু দেখলো।সবাই ওদের দিকে উৎসুক ভাবে তাকিয়ে আছে।এখানে নীলাভই একমাত্র মানুষ যে কোলে নিয়ে হেটে চলেছে।
প্রীতি একটু নিচু স্বরে বলল,
-নামান আমাকে।সবাই দেখছে।
নীলাভ কিছু না বলে হেটে চলেছে।নিজের কাজে নিজেই অবাক ও।এটা কেনো করলো।এটা তো করার কথা ছিলো না।যে মেয়েকে সহ্য পর্যন্ত করতে পারে না সেই মেয়েকে এভাবে কেনো……।নাহ..আর কিছু ভাবতে পারছে না নীলাভ।এখন ওর মাথায় একটা কথায় ঘুরছে প্রীতিকে কোলে নিয়েই এই ব্রিজ টা ঘুরাবে
আর কোনো দিকে না তাকিয়ে নীলাভ প্রীতিকে নিয়ে হেটে পুরো ঝুলন্ত ব্রিজ টা রাউন্ড দিলো।সবাই সিটি বাজালো হাত তালি দিলো।প্রীতি তো লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলেছে।
নীলাভ প্রীতিকে নামিয়ে দিয়ে একবারো প্রীতির দিকে তাকালো না।সোজা নিজের মতো হেটে চলেছে।
প্রীতি একবার নীলাভের দিকে তাকিয়ে নিজের বুকে হাত দিয়ে ভাবলো,
– এটা কই থেকে কি হইলো?হঠাৎ এমন কেনো হলো?
বুক টা কেমন ধুকপুক ধুকপুক করতাছে।হৃদপিন্ডের সাউণ্ড যেনো ওর কানে এসে লাগিছে।কিছুক্ষন বড় বড় নিশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।
এরপর আবার বেহায়ায় মতো নীলাভের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলল,
-আমি ক্যাবল কারে উঠবো😂
নীলাভ প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,
-একদম কথা বলবা না তুমি।
প্রীতি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,
-এই কথাটা তো আমার বলার ছিলো।আমার পারমিশন না নিয়ে আপনি আমাকে টাচ কেনো করছেন?
নীলাভ-হুহ….আমার কোনো ইচ্ছে ছিলো না তোমাকে টাচ করার…নেহাৎ কি হলো। আমার মাথায় ভুতে ভর করলো আর কোলে নিয়ে গেলাম তোমায়।
প্রীতি -ভালো করছেন।আমারে সেলিব্রেটি বানায় ফেলছেন।এখন আমি ক্যাবল কারে উঠবো।
নীলাভ কাটকাট ভাবে জবাব দিলো,
-কোনোদিন ই না।সামান্য এই ব্রিজে উঠে যা করলা।ক্যাবল কারে উঠলে না জানি কি করবা তুমি।
প্রীতি কাদো কাদো ফেস নিয়ে বলল,
-এমন কেনো আপনি?একটু চলেন যাই প্লিজ প্লিজ প্লিজ…
নীলাভ প্রীতির এমন ভাবে রিকোয়েস্ট এ আর না করতে পারলো না।বলল,
-ঠিকাছে।
খুশির ঠেলায় যেই প্রীতি নীলাভ কে টাচ করতে যাবে ওমনি নীলাভ বলে উঠলো,
-একদম কাছে আসবা না।
প্রীতি ও নিজেকে সংযত করে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
-আপনিও একদম এডভান্টেজ নিবেন না।
নীলাভ-ঝামেলা…🙄
প্রীতি -গোমড়ামুখো…😒
নীলাভ ক্যাবল কারের কাছে গিয়ে দেখলো একসাথে অনেক মানুষ উঠে তা দেখে নীলাভ নাক ছিটকে বলল,
-এই এতো মানুষের মধ্যে নীলাভ চৌধুরি যাবে?জীবনেও না।
প্রীতি -এমন ভাবে বলতাছেন যেনো আপনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা লাগেন?😏
নীলাভ রেগে তেড়ে গিয়ে বলল,
-ইউ……..
প্রীতি দাত কেলিয়ে বলল,
-আই প্রীতি 😁
নীলাভ-তোমার সাথে কথা কেন বলি আমি?আমি তো ভুলেই গেছিলাম।পাগলরা বুঝে কম চিল্লায় বেশি।
চলবে🙂
🥴