#হিংস্রতার আড়ালে ভালোবাসার
#part:9
#Writer:Jeba
🌸
মেয়ে টা কি সত্যিই বলছে?আমি ভুল বুঝছি না তো?কিন্তু কেউ কি কারো মাকে নিয়ে মিথ্যে কথা বলবে?আমি কি একবার ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে দেখবো?(মনে মনে কথাগুলো বলল রিহান )
।
হসপিটালে এসে নিজের কেবিনে বসে কাঁদছে হিয়া।এমন সময় সায়ন তার কেবিনে আসল।সায়ন কে দেখে হিয়া নিজের চোখ তাড়াহুড়ো করে মুছে নিল যেন সে না বুঝতে পারে যে হিয়া কাঁদছিল।তবুও হিয়ার চোখের জল সায়ন এর চোখ এড়ালো না।সায়ন হিয়ার সামনে গিয়ে বসল।হিয়া মুখে মিথ্যে হাসির রেখা টেনে বলল,,,,কি রে হঠাৎ আমার কেবিনে?
-কেন আসতে পারি না?
-পারিস।তোর যখন ইচ্ছে হয় আসতে পারিস।তুই তো আমার কাছের একজন আমার কেবিনে আসতে তোর কোনো বাঁধা নেই।
-তাহলে নিশ্চয়ই তোর চোখের জল এর কারণ জিগ্যেস করতে ও বাধা নেই?
।
সায়ন এর কথায় হিয়া ছল ছল চোখে তার দিকে তাকালো।এইভাবে তাকিয়ে রইল বেলা খানিকক্ষণ তারপর সায়ন নিরবতা ভেঙে হিয়ার উদ্দেশে আবার বলতে লাগল,,,,
-কাঁদছিলি কেনো হিয়া?
-কই কাঁদছিলাম।চোখে কি যেনো পড়ছিল তার জন্য পানি চলে আসছিল।
-আমার সাথে ছবির ডায়ালগ দেওয়া বন্ধ কর।এইসব ডায়ালগ শুধু ছবিতেই মানায় তোর মুখে নয়।
-আমি কেন ছবির ডায়ালগ দিতে যাবো?সত্যি এমন টাই হয়েছে।
-মিথ্যে বলছিস আবারো আমার সাথে।ছোট থেকে চিনি তোকে।ছোট থেকে এখন পর্যন্ত তোকে আমার চেয়ে ভালো কেউই চিনে না।
-এতো ভালো করে আমাকে আমার চেয়ে ও ভালো করে কিভাবে চিনিস তুই?
-কারণ আমি যে তোকে খুব******
-খুব,,,,,,,তারপর কি?
-তারপর হলো তোর মন্ডু।তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড তাই খুব ভালো করে চিনি তোকে।
-তাই নাকি ডাক্তার সায়ন?
-জ্বী ডাক্তার হিয়া।তাই।
-আচ্ছা হিয়া তোকে কয়েকদিন ধরে দেখছি তুই মন খারাপ করে থাকিস।আবার আড়ালে চোখের জল ও ফেলিস।কি হয়েছে খুলে বলবি আমায়?
-সবই বলব।সায়ন,,,,,,
-হুম বল।
-আমি কি কয়েকদিন তোর বাসায় থাকতে পারি?
-কিন্তু রিহান কি বলবে?
-কিছু বলবে না।
-তুই কয়েকদিন না।চাইলে সারাজীবন থাকতে পারবি।কিন্তু তুই রিহান এর বাসায় যাবি না কেনো?
-আমি তোকে রাতে সব খুলে বলব।
-ঠিক আছে।
।
🌸
প্রিয়ার ছবি সামনে নিয়ে বসে আছে রিহান।আর প্রিয়ার ছবির সাথে কথা বলছে,,,,,,
-আচ্ছা প্রিয়া আমি কি হিয়া কে বুঝতে ভুলে করছি?ও কি তোমার মৃত্যুর জন্য দায়ী না?আমি কি হিয়া কে কোনো ভুল ছাড়াই কষ্ট দিচ্ছি?আমি তো কখনও এতো টা হিংস্র ছিলাম না।একটা নির্দোষ মেয়ের সাথে বিনা দোষে কি আমি হিংস্রতা দেখাচ্ছি? যদি এমনই হয়ে থাকে তাহলে হিয়ার কাছে ওর পায়ে ধরে ও ক্ষমা চাইতে রাজি আছি।আর যদি ওর বলা কথাগুলো মিথ্যে হয় তাহলে ও আমার আরো বেশি হিংস্র রূপ দেখবে।
।
ছাদে দাঁড়িয়ে আছে হিয়া।রাত এগারোটা বাজে।এতো ঠান্ডা হওয়া সত্বেও হিয়া যেনো বাতাসের বেগে নিজের ভালো লাগার এক অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছে।চোখ বন্ধ করে সে উপভোগ করছে বাতাসের দেওয়া স্পর্শ।আর তার এই মুহূর্তের মুগ্ধকর মায়াবী চেহারা টা নিমিষেই ঘায়েল করে যাচ্ছে সায়ন এর ক্ষতবিক্ষত হৃদয় টা।অপলক দৃষ্টিতে সে দূর থেকে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছে তার মায়াবীনির মায়াভরা সৌন্দর্য টাকে।
।
সায়ন যখন হিয়ার সাথে মেডিক্যালে পড়ে তখন সে ফিল করেছিল সে হিয়া কে একটু নয় অনেক বেশি চাই বন্ধু হিসেবে নয় নিজের ভালোবাসা হিসেবে।কিন্তু কখনও বলা হয়ে উঠে নি তার।কারণ সে হিয়ার দু চোখে তার জন্য ভালোবাসা নয় শুধু বন্ধুত্ব দেখতে পেতো।আর হিয়া ও কখনও সায়ন এর চোখে ভালোবাসা টা পড়ার চেষ্টা করে নি।তার কাছে সম্পর্কটার ভিত্তি শুধু মাত্রই বন্ধুত্ব ছিলো আর আজও আছে।
।
কথাগুলো চোখ বুঝে ভেবে সায়ন হিয়ার দিকে এগিয়ে গেল।হিয়া বাতাসের স্পর্শের পাশাপাশি তার পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করল।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল সায়ন তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।সায়ন মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,,,,
-এই ঠান্ডায় বাতাস উপভোগ করছিস?
-হুম বাতাসে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছি ।
-নিজের নাকি রিহান এর অস্তিত্ব খুঁজে বেরাচ্ছিস?
।
সায়ন এর কথায় নিজের এতক্ষণ জমিয়ে রাখা চোখের পানি গুলো ছেড়ে দিল হিয়া।হিয়ার চোখ থেকে গড়িয়ে যাওয়া জল গুলো সায়ন ভেতর ওতাল পাতাল ঝড় সৃষ্টি করে দিলো।হিয়া কেঁদে যাচ্ছেই তো যাচ্ছে।সায়ন হিয়া কে ঝাঁকিয়ে বলল এইভাবে কাঁদছিস কেনো হিয়া ?কি হয়েছে তোর?
।
হিয়া আচমকা সায়ন কে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরল।হিয়ার চোখের জলে সায়ন এর টি শার্ট এর বুকের অংশ টা ভিজে গেল।সায়ন নিজেকে সামলে নিয়ে হিয়ার মাথায় হাত ভুলিয়ে তাকে নিয়ে দোলনায় বসালো।তারপর হিয়ার চোখের জল নিজের হাতে মুছে দিয়ে বলল,,,,,
।
-তোকে বিয়ের পর থেকে দেখছি তুই কেমন যেনো মন খারাপ করে থাকিস।বিয়ের দিন ও তো খুব হাসি খুশি ছিলি তুই যখন ফোনে কথা বললাম।আর হঠাৎ বিয়ের পরের দিন তোর হাসি খুশি মুখটা আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে।কি হয়েছে হিয়া বল আমায়।রিহান কিছু বলেছে?
।
হিয়া বিয়ের রাত থেকে শুরু করে যা যা হয়েছে রিহান আর তার মধ্যে সবকিছু খুলে বলেছে সায়ন কে।
।
।
সায়ন আচমকা হিয়ার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
🌸
চলবে,,,,,