হিয়ার মাঝে পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬

#হিয়ার_মাঝে
৩৪.
#WriterঃMousumi_Akter

রাতের আঁধার কেটে দিনের আলোর দেখা মিললো।প্রকৃতি আস্তে আস্তে ফর্সা হতে লাগলো।নিরবের এত ভোরে না ওঠার অভ্যাস থাকলেও আমার ঠিক ই আছে।কারণ সারাজীবন আমাকে খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে।বাইরে পাখির কিচির মিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে।সূর্য মামা এখনি উঁকি দিবে।পূর্ব আকাশ রক্তিম আভাতে ছড়িয়ে পড়েছে।আমি ঘুম ভাঙতেই দেখি আমার খোলা পেটে ঠোঁট নাক ডুবিয়ে সুয়ে আছে নিরব।আমি দেখেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম তাই কিছুই টের পাই নি আমি।ঘুমের ঘরে কখন আমার কাপড় সরে গিয়েছে কোনো কিছুর ই ঠিক নেই।।আমার সমস্ত শরীর যেনো ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে লজ্জায়। নিরবের মাথায় হাত বুলিয়ে আস্তে করে ডাকলাম এই যে শুনছেন। সকাল হয়ে গিয়েছে উঠতে হবে।নিরবের কোনো রকম কোনো পাত্তা নেই। গভীর ঘুমে মগ্ন আছে সে।একজন ঘুমন্ত মানুষকে খুব জোরে ডাকা টাও ঠিক হবে না।আমি কয়েক বার চেষ্টা করেও ব্যার্থ।এবার কি করবে আমি।বাড়িতে সবার আগেই আমার উঠতে হবে না হলে কি ভাববে নতুন বউ এত বেলা অবধি ঘুমোচ্ছে।বিষয় টা খুব ই জঘন্য দেখাবে।বিয়ে বাড়িতে অনেক লোকজন অল রেডি অনেকে উঠে পড়েছে।আমি আস্তে করে নিরবের মাথা টা সরানোর চেষ্টা করলাম। এতে ফলাফল খুব একটা ভাল হলো না নিরব এবার কোমর শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে অবদ্ধ পেটে গাড় চুম্বন করে আবার ও ঘুমিয়ে পড়ার অভিনয় করলো।আমার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো এই প্রথম বার এমন কোনো অনূভুতি সৃষ্টি হলো আমার ভেতরে।বিদ্যুৎ এর ন্যায় তরঙ্গ খেলে গেলো।আমি বুঝতে পারলাম এটা নিরবের দুষ্টমি ছাড়া কিছুই না।আমি নিরব কে বললাম উঠুন বাইরে সবাই উঠে পড়েছে আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।নিরব মৃদু মৃদু কন্ঠে বলে আমার বউ নিয়ে আমি ঘুমিয়েছি মানুষের কি?বিরক্ত করো না মিথু জন্মের পরে এই প্রথমবার একটা রাত বউ নিয়ে ঘুমোচ্ছি এত কাল তো কোলবালিশ নিয়েই ঘুমিয়েছি বহু প্রতিক্ষার পরে বউ টা পেয়েছি।তাও বিরক্ত করছো।আমি তো আর অন্য কিছু করছি না জাস্ট ঘুমোচ্ছি।অনেক যুগ বউ ছাড়া ঘুমিয়েছি কিন্তু আর নয় এত কালের আক্ষেপ একবারে মিটিয়ে নিতে চাই।আমি লজ্জায় মারা যাচ্ছি উনি আছে ঘুম নিয়ে।এই পাগল টাকে কে বোঝাবে এখন।আমি বললাম ঘুমোনোর জন্য সারাজীবন পড়ে আছে কিন্তু এখন উঠতেই হবে না হলে সবাই খারাপ ভাববে।।নিরব এবার চুল একটু ঝাঁকিয়ে আমার পেটে থুতনি বঁধিয়ে বলে, ওরে আমার সাংসারিক বউ রে যেতে দিবো তবে দশ মিনিট আগে জড়িয়ে ধরে রাখবো তার পর।বলেই নিরব আমাকে টেনে নিয়ে বুকের সাথে মাথা দিয়ে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে ভালবাসি পাগলি।বউ কে ঘুম থেকে ওঠার আগে দশ মিনিট জড়িয়ে ধরে আদর করা সুন্নত।আজ আমিও উঠবো তোমার সাথে।

প্রায় দশ মিনিট পরে এই পাগলের থেকে নিজেকে ছড়িয়ে নিয়ে,, আমি প্লাজু আর কামিজ চেঞ্জ করে আবার শাড়ি পড়ে নিলাম।শাড়িটা একটু ঠিক ভাবে পরা হয় নি নিরব হেল্প করে দিলো।আর নিরব শাওয়ারে গেলো।

আমি নিরব কে বললাম,এত সকালে সাওয়ারে যাচ্ছেন যে,,।

আমি রোজ ভোরেই সাওয়ারে নেই।এটা আমার অভ্যাস।আর আজ বিয়ের প্রথম সকাল এটা কমন ব্যাপার চাইলে তুমিও নিতে পারো সাওয়ার আমার সাথে।

না না আমার অভ্যাস নেই এত সকালে সাওয়ার নেওয়ার ঠান্ডা লাগে আমার।

আমার কথা শুনলে না তো যাও বাইরে ঠ্যালা বুঝবে।।।জোর করে যখন সবাই সাওয়ারে পাঠাবে তখন বুঝবে।

আচ্ছা আপনি কি ঘুমের মাঝে কিছু করেছেন।।

না করি নি তবুও বাইরের সবাই এটাই ভাববে।

যা ইচ্ছা ভাবুক আমি গেলাম।

ওয়েট এক সাথে বেরোবো আমার হয়েই গিয়েছে প্রায়।

ওয়াশ রুমের দরজা খুলে নিরব কে এভাবে দেখবো ভাবতেও পারি নি।সাদা টাওয়াল নাভির নিচে গিট দেওয়া হাঁটু অবধি পড়েছে।আরেক টা টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছ ছে আর চুল ঝাকুনি দিচ্ছে।ইস কি সুন্দর লাগছে।শরীরে পানির ফোটা ফোটা।আমি আপাদ মস্তক তাকিয়ে দেখে টাস্কি খেয়ে গেলাম।নেশাক্ত চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম।নিরব তার ভেজা ভেজা পায়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।আমি এক পা দু পা করে পিছিয়ে ওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে তাকিয়ে রইলাম নিরবের দিকে।নিরব ওয়ালে এক হাত বাঁধিয়ে ঝুকে এসে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।আমি ভীষন লজ্জা পেয়ে নিরব কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলাম।নিরব একটা সাদা টি শার্ট গায়ে দিয়ে আমাকে বেডের উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আমার উপর ঝুকে এসে বলে কি দেখছিলে।আমি লজ্জায় দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে রইলাম।নিরব আমার কোমরে হাত দিয়ে আমাকে বেড থেকে তুলে বুকের সাথে মাথা চেপে ধরে বলে তোমার জিনিস তুমি দেখবে লজ্জার কি আছে পাগলি আমি তো তোমার ই।

আমি রুমের বাইরে আসতেই সবাই ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।যেনো ভূত দেখছে কিন্তু কেনো আমি তো কিছুই বুঝছি না।আবার সবাই এক গাল হেসেও দিচ্ছে কাহিনী কি।আমি নিজেই যেনো বোকা বনে গেলাম।আমার পাশে নিরব দাঁড়িয়ে আছে ওর গেঞ্জি তে যে লিপিস্টিক এর দাগ লেগে আছে সেটা আমি বা নিরব কেউ ই খেয়াল করি নি।নিরবের মা বলেন নিরব বিয়ের দিন সাজ সকালে কি সাদা পোশাক পরেছিস যা তো তোকে কালোতেই ভালো মানায়।নিরবের কাছে অবাক লাগছে যে মা কালো বাদে অন্য কালার পরানোর জন্য পাগল থাকে সে কিনা চেঞ্জ করতে বলছে। হোয়াট ইজ কাহিনী।নিরব পাত্তা না দিয়ে বাড়ি ভর্তি মানুষের মাঝে এই লিপিস্টিকের দাগ লাগানো গেঞ্জি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।।সবাই এটা নিয়েই হাসাহাসি করছে।বাড়ির মুরব্বি সবার চোখেই জিনিস টা পড়েছে।হঠাত ই আমার খেয়াল হলো আমি যে নিরব কে বলবো তার আগেই নিরবের ফুফু আমাকে বলে এই যে বৌমা এদিকে এসো সম্পর্কে ফুফু হলেও আমি কিন্তু ফ্রেন্ডের মতোই বুঝেছো।তা নিরব যে গোসল করে বেরিয়েছে তোমার গোসল কই।আমি চোখ দুইটা মেলে তাকিয়ে রইলাম গোসল কেনো?ফুফু আমাকে বলেন এসব না জানার ই কথা চলো তো আমার সাথে বলেই জোর করে নিয়ে সাওয়ার ছেড়ে দিলেন।ইস এত সকালে গায়ে পানি লাগতেই শিউরে উঠলাম আমি।নতুন বউ কি বলবো আমি আমাকে দিয়ে যা করানো হচ্ছে আমি তাই ই করছি।এখনো পর্যন্ত গোসলের কোনো কারণ না জানা আমি।তবে নিরবের ফুফু টা বেশ অমায়িক।আমাকে গোসল করিয়ে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিলেন।লাল টুকটুকে শাড়ির সাথে দুহাত ভর্তি কাচের চুড়ি বেশ গুছিয়ে দিলেন আমাকে।

এ বাড়ির প্রতিটা মানুষ বড্ড ভালো।নিরবের মায়ের মাঝে নিজের মাকে খুজে পেলাম আমি।
#হিয়ার_মাঝে
৩৫.
#WriterঃMousumi_Akter

মুনতাহা আপু,রিক, রিফাত ভাইয়া সুপ্তির আগমন ঘটে গেলো খুব ভোরেই। ওদের মনে হয় সারারাত ঘুম হয় নি কখন এখানে আসবে চাঁদের হাট বসাবে।নিরবের ফুফুর পরিয়ে দেওয়া শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে দেখি নিরবের গেঞ্জির বেহাল দশা।বাড়ির মুরব্বিরা সবাই নিরব কে গেঞ্জি চেঞ্জ করতে বলছে কিন্তু কেনো বলছে সেই কেনোর উত্তর উনার অজানা।নিরব এর জন্য সবাই আমাকে কি চোখে দেখছে আর কি ভাবছে ছিঃছিঃছি লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।

“রিফাত ভাইয়া বলেই উঠলেন তা ফুলসজ্জা কেমন হলো ভাই।”

“এটা সিক্রেট তোকে বলা যাবে না।”

“আমি তোর একমাত্র বন্ধু আমার তো জানার অধিকার আছে তাইনা। ”

“হুম জানার অধিকার আছে তবে আমার নয় তুই যখন বিয়ে করবি সেটা আমাকে জানাবি আর আমি দোকানে দোকানে চায়ের আড্ডায় ছড়িয়ে দিবো তোর সেই রোমাঞ্চকর কথোপকথন।শুধু তাই নয় আমি একটু ভিডিও ও করবো আর ভিডিও টা ইইটিউবে পোস্ট করবো সুপারহিট হিরো রিফাতের সুপারহিট ব্লকবাস্টার মুভি ১৮ এর নিচে কেউ প্রবেশ করবেন না। ”

নিরবের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।আমি নতুন বউ চাইলেও খুব জোরে হাসা যাচ্ছে না।

“রিফাত বলে শালা সিক্রেট জিনিস ঘরে রাখলেই পারতি।গেঞ্জি তে স্টাম্প মেরে সিল মেরে ঘুরে বেড়ানোর কি দরকার।”

“সুপ্তি বলে দেখি তো আরে জিজু এটা তো মিথুর ই ঠোঁট।”

নিরব এবার নিজের গেঞ্জির দিকে তাকিয়ে নিজেই অবাক হয়ে যায় আসলেই তো।নিরব চারদিকে তাকিয়ে দেখে সবাই কোন না কোনো ভাবে তার গেঞ্জি নিয়ে মুখচাপা হাসি দিচ্ছে।ইস কি লজ্জা বাড়ি ভর্তি মানুষ কি ভাবলো এইজন্য তাহলে সবাই তাকে চেঞ্জ করতে বলছিলো।নিরব ঘর ভর্তি সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো আর বুঝতে পারলো তার ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গিয়েছে।

নিরব টা বিয়ে করে যেনো বেশী দুষ্টু হয়ে গিয়েছে। কোথায় ভীষণ আকারের লজ্জা পাবে তা না বুকের বা পাশে যে গেঞ্জিতে লিপিস্টিক এর দাগ লেগে আছে সেখানে হাত দিয়ে বলে,,বউ এর আদর সাথে নিয়ে ঘুরলে মনে হয় বউ আদর করতেই আছে আহা এক এক মহা শান্তি। কথাটা বলতে বলতেই আমার চোখে চোখ পড়ে নিরবের আর সেই সুযোগে চোখ টিপে দেই নিরব।দ্রুত আশে পাশে তাকিয়ে নিলাম কেউ দেখে নিলো নাতো আবার।এই ছেলেটা কি আসলেই বউ পাগল হয়ে গিয়েছে।

রিক ভাইয়া বলে আমরা যে আশে পাশে আছি আমাদের তো গোনাই হচ্ছে না।আমাদের মতো বাচ্চাদের সামনে এগুলা করলে তো কষ্ট লাগে।আমাদের ও মনে চাই কিছু মিছু।

রিফাত ভাইয়া বলে কারো মনে চাক বা না চাক সুপ্তির মনে চাচ্ছে আমার গেঞ্জিতে লিপিস্টিক এর দাগ লাগাতে।

সুপ্তি রেগে গিয়ে বলে না লিপিস্টিক খাওয়াতে মন চাইছে আপনাকে।

রিফাত বলে আহ এতো মেঘ না চাইতেই জল।এই সুবর্ণ সুযোগ কখন পাচ্ছি।

নিরব বলে শালা লুচ্চা সুপ্তিকে ছোট মানুষ পেয়ে কোন লাইনে এগচ্ছিস।সুপ্তি বুঝতে পারলে তোর কপালে শনি আছে।

মুনতাহা আপু নিরবদের বাগানের বেলি গাছটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।রিক ভাইয়া বলে নিরব আর মৃথিলার ভালবাসা টা সত্যি অসাধারণ তাইনা মুন।দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।আমার জীবনে এমন সুন্দর ভালবাসা এর আগে দেখি নি।মুন তুই আমাকে একবার নিরব হওয়ার সুযোগ করে দিবি আমি চেষ্টা করবো তোকে মৃথিলার মতো ভালবাসার ডালি দিয়ে সাজিয়ে রাখতে।

মুনতাহা আপু রিক ভাইয়ার দিকে ছলছল আঁখি নিয়ে তাকিয়ে বলে রিক ভাই চাইলেই কেউ কারো মতো হতে পারে না।যার যার ভালবাসা তার মতোই সুন্দর। আমার মনের খানিক টা গভীরে কেউ আছে।সে এমন একজন মানুষ,,

যাকে ভালবাসা টা পাপ হবে
যাকে মনের ভুলেও নিজের জীবনে চাইলে অন্যায় হবে।যাকে নিয়ে প্রেমময় দু লাইন ভাবলেও মনে হবে নিজের আপন জনের সাথে বেঈমানি করছি।আবার তাকে ভুলে যাওয়টাও অসম্ভব।

রিক ভাইয়া হেসে দিয়ে বলে যার বিবেক জাগ্রত সে কখনো ভুল করতে পারে না।তাই তোর দ্বারা ও কোনো ভুল হবে না।

_____________________________

নিরবের বাবার ফুফু এসছেন বেশ বয়স্ক সম্পর্কে দাদী হয় আমাদের।উনি আমাকে দেখে বলেন নিরবের বউ এর হাতে রান্না খাবো আজ।দেখি বাপের বাড়ি থেকে কি কি শিখেছে।বিশাল বড় রুই মাছ আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন কোটার জন্য।যেহেতু আমি নতুন বউ তাই কেউ রাজি হচ্ছিলো না আমাকে দিয়ে মাছা কাটাতে।কিন্তু দাদির কথা নতুন বউকে ই মাছ কাটতে হবে। উনার জোরাজোরিতে মাছ কাটতে শুরু করলাম।এসব করার অভ্যাস আমার ছোট বেলা থেকেই আছে তবুও আজ বেখায়ালে হাত খানিক টা কেটে গেলো।ব্যাথা লাগলেও কাউকে কিছু বললাম না।রক্তাক্ত হাত নিয়ে মাছ কাটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমার চারপাশ জুড়ে ছিলেন নিরবের মা,নিরবের ফুফু সহ আরো আত্মীয় রা।আমার হাত কাটতেই নিরবের বাবার ফুফুকে সবাই ভীষণ রকম বকাঝকা শুরু করলেন উনার বাড়াবাড়িতেই নাকি আমার হাত টা কেটেছে।আগের যুগের মানুষ উনারা তো একটু আগের যুগের মতো কথা বলবেই।আমি সেগুলা নিয়ে কিছুই মাইন্ড করিনি।কারণ নতুন বউ হলে বিভিন্ন ধরনের কথা নতুন নতুন শোনা লাগে।নিরবের ফুফু সাথে সাথে আমার হাত টা ধুইয়ে দিয়ে আমার হাত টা বেঁধে দিলেন।

নিরব রাগান্বিত মুডে তাকিয়ে আছে বাড়ির সবার দিকে।এমন কি বলেই বসলো এটা কোন ধরনের অসভ্যতা আম্মু।বিয়ে হয়েছে বলেই সাথে সাথে তার সাথে বাড়ির বৌমা টাইপ আচরণ করতেই হবে।মৃথিলা সব কাজ পারে তাই ওকে নতুন করে কিছু শেখানোর নেই।আম্মু এত আত্মীয় স্বজন বাসা থেকে কবে যাবে আমি জাস্ট ফেড আপ।অলরেডি বাবার তথাকথিত আত্মীয় রা মৃথিলা কে প্রশ্ন করছে ওর মা কিভাবে মারা গেলো।ওর বাবা ওকে ভালবাসে কিনা সৎ মা কোনো অত্যাচার করে কিনা।বিভিন্ন ধরনের বাজে প্রশ্ন।আমি চাইছি না মৃথিলা এ ধরনের প্রশ্নের সসম্মুখীন হোক।

নিরবের আম্মু ছেলের মুড চরম পর্যায়ে দেখে বলেন,,বাবা একদিনের ই ব্যাপার সবাই আজ ই চলে যাবে।প্লিজ বাবা রাগারাগি করিস না।

হাত কেটেছে বাম হাতে ডান হাত দিয়ে খাবার খেতে পারবো তবুও নিরবের আম্মু খাবার মাখিয়ে আমাকে খাইয়ে দিতে দিতে বলেন মাছ টা কাটতে যাওয়ার কি দরকার ছিলো।তোকে কোনো কাজে বললে সোজা বলে দিবি যে পারবো না ভাল লাগছে না।এটা তোর বাড়ি তাই তোর ভাল না লাগলে কেউ তোকে দিয়ে কাজ করাতে পারবে না।আমি নিরবের মা বললাম আচ্ছা মা মায়েরা এতই ভাল হয় তাইনা।তুমি না আসলে বুঝতাম না।নিরবের আম্মু বলে পাগলি মেয়ে আমি ই তোর মা।

সকাল গড়িয়ে দুপুর নিরব দেখছি রুমে ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়েছে।

আমি ঘরএ প্রবেশ করতেই বলে উঠলো,,

“খুদায় পেট চো চো করছে কেউ তো খেয়াল ই করছে না।।।”

“আপনি এখনো খান নি কেনো? ”

“বিয়ের পর কেউ ভাত খায় নাকি।।”

“তাহলে কি খায়”

“বউ এর আদর”

“আমি এসব পারবো না”

“না পারলে আমি আজ সারাদিন কিছুই খাবো না।না মানে না।।।”

“ঠিক আছে না খেয়ে থাকুন।।”

বিকাল ৩ টা বাজে নিরব সকাল থেকে খায় নি কিছুই।আমিও কিছুই বলছি না।এমন সময় নিরবের আম্মু এসে বলেন,,

“মিথু মা দেখ না নিরব রাগ করে কিছুই খাচ্ছে না।”

“কি নিয়ে রাগ করেছে মা। ”

“ওই যে সকালে আমার ফুফু শাশুড়ি তোমাকে মাছ কাটতে বলেছিলো।সেটা নিয়ে অনেক রাগারাগি করেছে।সেই সকাল থেকে কিছুই খায় নি নিরব।মা মিথু তুমি একটু বুঝিয়ে বলো।নিরবের বাবা বলেন মা মৃথিলা তোমার তো দাদী হয় তুমি কেনো বললে না যে দাদী আপনি আমাকে আগে শিখিয়ে দেন।আমি কাজ পারি না।শোনো মা এত কাজ দেখিও না সবাই কে তাহলে দেখবা সবাই কাজের জন্য তোমাকেই খুজছে।শিলা বৌমাকে যেনো নতুন নতুন কেউ আর কাজ নিয়ে কোনোরূপ প্রেসার না করে।”

নিরবের আম্মু আমার হাতে খাবার দিয়ে বলেন যাও নিরব কে দাও।
রুমে প্রবেশ করে দেখি সুয়ে সুয়ে ফোন স্ক্রল করছেন।

“মা আপনার জন্য খাবার পাঠিয়েছেন।খেয়ে নিন।”

“উহু খাবো না বললাম তো খাবো না।”

“দেখুন আপনি না খেলে আমার খুব খারাপ লাগছে।আপনাকে খাওয়ানোর জন্য যা করতে হয় সব করবো আগে খেয়ে নিন।”

“ঠিক আছে আমাকে কিস করো তাহলে খাবার খাবো।”

“দেখুন আমার খুব লজ্জা করে।”

“লজ্জা নিয়েই থাকো আমার আর খাওয়া লাগবে না।”

“আচ্ছা এখন না দিনের এই চকচকে আলোতে আপনার মুখ দেখে কিস করতে ভীষণ লজ্জা করবে আমার।”

“এখন করলে অল্প টাইমে হয়ে যাবে।
রাত হলে কিন্তু ধরা বাঁধা নিয়ম নেই।”

“কেনো রাত হলে কি সারারাত লাগবে?”

“লাগতেও পারে তখন আমাকে দোষ দিতে পারবে না”

ঘড়িতে রাত ঠিক ১০ টা আমি চাদর মুড়ি দিয়ে সুয়ে পড়েছি।নিরব রুমে প্রবেশ করে আমাকে ডাকতেই আমার কোনো সাড়াশব্দ নেই।আমি না ঘুমিয়ে ঘুমোনোর ভান ধরে আছি আর মনে মনে ভাবছি নিরব যেনো ভুলে যায় সব।কিন্তু এই বান্দা তো ভোলা বান্দা না।

নিরব গায়ের গেঞ্জি খুলতে খুলতে রুমের লাইট অফ করে বলে মৃথিলা রেডি তো।

রেডি তো শুনেই আমি বুঝতে পারলাম নিরব কোন রেডির কথা বলছে।তবুও আমি ঘুমের ভান ধরে পড়ে আছি।

নিরব ইচ্ছা করে ফোন থেকে একটা ভৌতিক মিউজিক প্লে করে দিলো।আমি গায়ের চাদর ফেলে এক লাফে এসে নিরব কে জড়িয়ে ধরে ভূত বলে চিৎকার দিলাম।

আমার এভাবে জড়িয়ে ধরাতে নিরবের শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।নিরব এর শরীরের পরিবর্তন বুঝতে পারছি।কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পরে মিথু দুপুরে কি কথা ছিলো। এখন তোমার কথা রাখতে হবে।

ভীষণ লজ্জা নিয়ে এক হাতে নিরবের মাথার পেছন দিক স্পর্শ করে এই প্রথম বার কারো ওষ্টর সাথে ওষ্ট মেলালাম।রুমের মাঝে দুইটা জোনাক পোকা কখন প্রবেশ করেছে জানিনা।ওরা বোধ হয় দুজন মানব মানবীর এমন ভালবাসা ময় মুহুর্তের সাক্ষী হতে চাই।দুজনের নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে দুজনের নাকে মুখে।এভাবে কতক্ষণ কেটে গেলো তার খেয়াল কারোর ই ছিলো না।

নিরব কে ছেড়ে দিয়ে লজ্জায় খানিক টা সরে দাঁড়ালাম।নিরবের চোখে মুখে ভয়ানক তৃষ্ণা।অন্ধকার রুমে নিরব একটা ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে দিলো।ক্যান্ডেলের আলোতে দুজন কে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।লজ্জায় শরীর কাঁপছে আমার।নিরব এর চোখে মুখে এক সমুদ্র নেশা নিয়ে আমার দিকে এক পা দু’পা করে এগিয়ে এলো।আবারো নিরব আমাকে কাছে টেনে নিলো।কোনো রূও বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা আমার ছিলো না।

পরের দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি নিরবের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছি আমি।ঘুম ভাঙতেই নিরবের বুকে নিজেকে দেখে মনে পড়ে গেলো রাতের কথা।

ইস কি লজ্জা!
#হিয়ার_মাঝে
৩৬.(bonas part)
#WriterঃMousumi_Akter

জন্মের পর অনেক গুলো সকাল, অনেক গুলো সূর্যদ্বয়,অনেক গুলা সবুজ ঘাসে বিন্দু বিন্দু শিশির জমতে দেখেছি কিন্তু আজকের সকালের মতো কোনো সকাল ই আমাকে এতটা লজ্জা,এতটা,খুশিতে প্লাবিত বা এতটা স্নিগ্ধতা দিতে পারে নি।নিরব ঘুমোচ্ছে চোখের পাতা দুটোতে কত মুগ্ধতা জুড়ে আছে।একবার নয় হাজার বার প্রেমে পড়ার মতো মুগ্ধতা আছে ওর মাঝে।নিরবের বুকে আস্তে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললাম এই যে শুনছেন উঠতে হবে যে,বিদেশ এর মতো এত বেলা করে ঘুমোনো যাবে না উঠুন নামাজ পড়তে হবে।নিরব আমার ডাক শুনে চোখ মেলে তাকিয়ে বুকের সাথে আরেক বার জড়িয়ে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে উঠছি।

নিরব সাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে ট্রাউজার আর গেঞ্জি গায়ে দিয়ে বুট পায়ে দিয়ে জগিং এ বেরোলো।আর আমি রান্নাঘরে গেলাম।নিরবের আম্মু উঠে নাস্তা বানাচ্ছেন।আমি গিয়ে বললাম মা আপনি এত বছর অনেক রান্না করেছেন আর নয়।আজ থেকে আপনার এই মেয়ের হাতের খাবার ই খেতে হবে।ভালো হোক আর খারাপ হোক খেতেই হবে।

“মা মানে আমার শ্বাশুড়ি মা বললেন,, মোটেও পাকামো করবি না তুই যা পড়তে বস গিয়ে।আগে লেখাপড়া কর ঠিক ভাবে। আমি চাই তুই একের ভিতর ১০০ হবি।বয়স হচ্ছে বৃদ্ধকালে তোর ই সেবাযত্ন করা লাগবে।”

“আমি বললাম,,আজ থেকে মানে এখন থেকেই তোমার সেবাযত্ন আমি করবো।তুমি বাবার সাথে গল্প করো তো যাও।কোনো কথা আমি শুনবো না। বলেই রান্না করা শুরু করলাম।সকালের রান্না শেষে সবাইকে খেতে দিলাম।”

আমাদের চার জনের একটা হ্যাপি ফ্যামিলি।ডায়নিং এ চার টা চেয়ারে মা বাবা আমি আর নিরব বসে খাবার খাচ্ছি।সকালে কেউ ভাত খাই না।তাই খিচুড়ি রান্না করেছি সবজি দিয়ে।ছোট বেলা থেকে রান্না করতে করতে আমি রান্না ভালোই পারি।

নিরব ওর মায়ের কানে কানে বলছে আম্মু তোমার বউমার রান্নাটা কিন্তু সিরিয়াসলি জোস হয়েছে।ডিরেক্ট প্রশংসা করতে পারছি না।তুমি শুরু করো।মা নিরবের কানে কানে বলে তুই কি দিন দিন বাচ্চা হচ্ছিস।মা বাবার কানে কথাটা পাড়লেন হ্যাঁ গো মিথু ছোট মানুষ রান্না করেছে খেতে পারছো তো।কেমন হয়েছে রান্না।বাবা বললেন আমার খাওয়ার স্পিড দেখে বুঝছো না কি সাংঘাতিক ভালো হয়েছে।আমার রোজ মৃথিলার হাতের রান্না চাই।

বাবার কথায় খানিক টা প্রশান্তি পেয়ে বললাম বাবা রোজ আমার হাতের খাবার ই খাবেন আপনি।

সেদিন সন্ধ্যায় টিভি অন করে মুভি দেখছি।এক মনে টিভির দিকে নজর আমার।আর আনমনে নিরব কে ভেবে চলেছি।ভীষণ মিস করছি পাগল টাকে।হুট করেই নিরব এসে চমকে দিলো আমাকে।

“আমি বুকে হাত দিয়ে ফুউ দিয়ে বললাম এভাবে কেউ ভয় দেয় অনেক ভয় পেয়েছি।বলবেন না যে এটা আপনি।”

“ভয় দিলাম যাতে কাল রাতের মতো ভয় পেয়ে একটু জড়িয়ে ধরো তা না উল্টা ধমক দিচ্ছো।”

“একটু লাজুকতা নিয়ে বললাম মনের মাঝে সব সময় এসব ঘুরপাক খায় তাইনা।”

“নিরব বলে বোঝো না একটা মাত্র বউ আদর ভালবাসা না দিয়ে রাখলে হারিয়ে যাবে।ইয়ে মিথু এখন কি সন্ধ্যা মানে একটু পরে কি আবার গত কালের মতো রাত হবে।”

“মোটেও না এখন দিন আকাশে অনেক বড় সূর্য।কোনো রাত টাত হবে না।রাত আর কোনদিন হবে না।গতকাল সারারাত ঘুমোতে দেন নি।আমাকে কি কোলবালিশ পেয়েছেন।”

“ইয়েস ডারলিং প্রতিটা সিঙ্গেল ছেলের কাছে বিয়ের আগে বউ হলো কোলবালিশ।আর এখন আমার বউ হাজির তাই কোল বালিশ কে ডিভোর্স দিয়েছি।”

“থাক হয়েছে হয়েছে দুষ্টু একটা।”

“এই দুষ্টু বর তোমার জন্য গরম গরম পাপর, পিয়াজু এনেছে দ্রুত খেয়ে পড়তে বসো।বলেই নিরব আমার গালে পাপর দিলো।আমি পাপর খাচ্ছি আর নিরবের দিকে তাকিয়ে আছি।”

“নিরব পাপর টা রেখে আমার মাথা আস্তে করে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো হঠাত ভীষণ মায়া লাগছিলো তোমার জন্য কেনো বলোতো।তাই খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছিলো।”

“আমি ওর বুকের স্পন্দন কান পেতে শুনতে শুনতে বললাম কেনো বলুন তো।”

“ওই যে পাপর খাওয়ার সময় আমার দিকে করূন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলে আমার তোমার মায়াবী চাওনি দেখে ভীষণ মন খারাপ হচ্ছিলো।তুমি এক সেকেন্ডের জন্য এমন মায়াবী ভাবে তাকিয়ে ছিলে মনে হচ্ছিলো অনেক কাল দেখো না আমায়।জান পাখি আরো বহু জন্ম তোমার সাথে কাটাতে চাই।আমার টাকা পয়সা চায় না।আমি কুড়ে ঘরে ডাল ভাত খেয়ে তোমাকে বুকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই।বলেই নিরব কপালে আলতো স্পর্শ করলো ঠোঁট দিয়ে।”

“নিরবের বুকে মাথা রেখেই বললাম আপনি আমার জীবনে না আসলে আমার কি হতো।’

“আমার যে আসতেই হতো মৃথিলা।সব নিয়মের অনিয়ম করে আমাকে এখানে আসতেই হতো।শুধু তোমার ই জন্য।
আজ থেকে মন দিয়ে বই পড়বে সামনে এইস এস সি।তারপর তোমাকে ইউ এস পাঠাবো হাইয়ার এডুকেডেট হওয়ার জন্য।”

!আমার বই যে ও বাড়িতে আছে।বিয়ের পর মানুষ বাবার বাড়িতে যায় তাইনা।আমার ই সে কপাল নেই।”

“কে বলেছে নেই।নানার বাড়িতে যাবো কাল সকালে।ও বাড়ি থেকে বই গুলো নিয়ে তারপর যাবো।”

পরের দিন সকালে রেডি হয়ে নিলাম বই আনতে যাবার জন্য।নিরবের মা বাবাকে বলে আমরা বেরিয়ে পড়লাম।

নিরব অনেক মিষ্টি আর ফল কিনলো।বিয়ের পর প্রথম যাচ্ছি না জানি কি সমস্যায় পড়তে হয়।আমি তো চিনি তাদের কত কথা শোনাবে তার ঠিক নেই।নবনিতা আপুদের বাসায় পৌছে কলিং বেল বাজাতেই মা দরজা খুলে দিলো।

দরজা খুলতেই মা বলে এ কি তুই।তোর আবার কি এখানে।মনের মতো তো সব কিছুই পেয়েছিস এখানে কি চাই।তুই জিতে গিয়েছিস আমার নব হেরে গিয়েছে তাই কি জয়ের হাসি দেখাতে এসছিস এখানে।তুই কি সত্যি তোর মায়ের মতো হয়েছিস মিথু।

মায়ের কথা গুলো খারাপ লাগলেও বললাম,,কেমন আছো মা?

আদিক্ষেতা না দেখিয়ে কি জন্য এসেছিস সেটা বল।আর দ্রুত আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যা তুই।

মায়ের এমন কটু কথা শুনে নিরব বলে,,মিথু উনারা ভালো আছেন।তুমি নেই এই কারণে বেশী ভাল আছেন।

ইয়ে আন্টি এখানে আমরা থাকতে বা খেতে আসিনি।আমরা মৃথিলার বই গুলো নিতে এসেছি।মা নিরবের কথার একটা উত্তর ও দিলো না। আমি বই গুলো আনতে আমার রুমে চলে গেলাম।

আপু এসে নিরব কে বলছে,,আমার জীবন টা কেনো এভাবে নষ্ট করলেন নিরব ভাই।কি এমন আছে মৃথিলার মাঝে যা আমার মাঝে নেই।আমি আপনাকে ভালবাসি নিরব ভাইয়া।ভীষণ ভালবাসি।আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারছি না।

নিরব আপুর কথা শুনে ভীষণ বিরক্ত হয়ে গেলো।আর সোজা সাপ্টা উত্তর দিলো,,মানুষ হতে গেলে যা লাগে তা নেই তোমার মাঝে।নিজের বোন কে ভালবাসতে পারলে না আর আমাকে।আমার অসহ্য লাগছে তোমার কথা গুলো।

এমন সময় বাবা এসে বলেন,,
নিরব আশা করবো তোমরা আর এখানে আসবে না।আমার মেয়ের জীবনে অনেক অশান্তি গিয়েছে তোমাদের জন্য।তোমরা এখানে আসলে নবনিতার আরো খারাপ লাগবে সো আমি চাইছি না এখানে আসো।বিশেষ করে মৃথিলার অশুভ মুখ আমরা কেউ দেখতে চাই না।তাই ও এখানে না আসলে আমরা ভাল থাকবো।

নিরব বাবাকে বলে,, মেয়ে হিসাবে মৃথিলার কিন্তু অধিকার আছে এখানে আসার।

বাবা স্পষ্ট বলে দিলেন,,আমার সব কিছুতে অধিকার আমার একমাত্র মেয়ে নবনিতার।আমার তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পত্তির সব আমার মেয়ের নামে করে দিবো।আমি মৃথিলাকে ত্যাজ্য করলাম।মৃথিলার কোনো অধিকার নেই আমার কোনো কিছুতে।

বাবার কথা শুনের বুকের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো আমার।কাঁন্না আটকাতে পারলাম না।প্রতিটা মেয়ের কাছে বাবা হলো বটগাছের ছায়ার মতো।কিন্তু আমার বাবা নামক মানুষ টাকে দেখলে অবাক লাগে আমার।

নিরব বাবাকে বললো,,বড় উপকার করলেন মিথুকে ত্যাজ্য করে।আমাকে ধমক দিয়ে বললো,তুমি কাঁদবে না, একদম ই না।উনাদের মনে কবেই বা ছিলে তুমি।যারা ভালবাসে না তাদের জন্য কিসের কাঁন্না মৃথিলা বুঝলাম না।

নিরব বাবাকে রুড ভাবে বলে আসলো, “আঙ্কেল খুব হাসি পেলো জানেন।যে সম্পত্তি থেকে মিথুর কোনো অধিকার নেই বলছেন সেসব ই ওর মায়ের টাকা দিয়ে করেছেন।হাতে শুধু উপযুক্ত প্রমাণ নেই এই না।প্রমান থাকলেও মিথুর হাজবেন্ড এর কিছু কম নেই যার জন্য নিজের বাবার সাথে আইন বা কোট কাচারীর মোকাবেলা করবে।একদিন খাওয়ার জন্য মৃথিলার হাতে পায়ে ধরতে হবে।আজ ওকে কাঁদালেন একদিন ওর কাছেই শেষ আশ্র‍য়স্হল হবে”।

রাস্তায় আনমনে হাঁটছি মনটা ভীষণ খারাপ।নিরব আমাকে হাত ধরিয়ে একটা গাছের নিচে বসিয়ে বলে মিথু বাবা আর স্বামি কেউ কিন্তু একটা মেয়ের লাইফে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।তাকাও আমার দিকে আমি হবো তোমার বটগাছের ছায়া।ছায়ার মতো আছি তোমার সাথে।আর সারাজীবন থাকবো।বাবা নেই তাতে কি জানো তোমার এই ছোট্ট পেটে একটা ছেলে হবে একদিন সে হবে তোমার বাবা।নিরবের দিকে তাকিয়ে চোখের দু’ফোটা পানি ফেলে বলকাম আমাকে দূরে কোথাও নিয়ে যবেন।নিরব বললো দূরে কি পাগলি এই হিয়ার মাঝে লুকিয়ে রাখবো তোমায়।কোনো কষ্ট পেতে দিবো না।

চলবে।,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here