#হিয়ার_মাঝে
৩৭.
#WriterঃMousumi_Aktar
ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি হাঁপিয়ে উঠেছে।জনবহুল শহরে গরমের উত্তাপের সাথে মানুষের গরমে যেনো ঢাকা শহরে আগুনের উত্তাপ এ অগ্নিরূপ ধারণ করেছে।গাছের একটা পাতা ও নড়ছে না গাছ পালা আকাশ সব থমথমে রূপ ধারণ করেছে।আকাশের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে এই রাগে সব লন্ডভন্ড করে দিবে।কোথাও কোনো বাতাস নেই।রিক্সাওয়ালা মামাদের শার্ট ভিজে চপচপে হয়ে আছে, এই ভীষণ গরমে শুধুই পেটের দায়ে তারা রিক্সা নিয়ে ছুটেছে।রাস্তার পাশের কুকুর গুলো ড্রেনে গিয়ে পানিতে মুখ দিচ্ছে পানির তেষ্টায়।মাথার উপর সূর্যর প্রচন্ড উত্তাপ মাথার ঘিলু টগবগ করছে।
এই গরমে আমার মুখের দুইপাশ লাল হয়ে আছে টোকা দিলেই রক্ত বেরোবে।ভীষণ ক্লান্ত লাগছে আমার শপিং মলের একটা টুল টেনে বসে পড়লাম একটা কর্নারে। নিরব আমাকে বসতে দেখে বুঝতে পারলো আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।কারণ আমার কখনো বলা লাগে না আমার কি অসুবিধা হচ্ছে।নিরব আমার সব সমস্যা মুখ দেখলেই বুঝে যায়।আর এটাই আমার প্রতি নিরবের ভালবাসা।নিরব আমার পাশে একটু ঝুঁকে একটা কোল্ড ড্রিংক্স দিয়ে বলে এটা খেতে লাগো একটু ভালো লাগবে।গলা টা ভিজিয়ে নাও দেখবে কিছুটা ভাল লাগবে।বুকের মাঝে এতটাই শুকিয়ে গেছিলো আমি দ্রুত ড্রিংক্স টা খুলে খেয়ে নিলাম।নিরব নিজেও একটা কোল্ড ড্রিংক্স খাচ্ছে।একটা মানুষের খাওয়ার ভঙ্গি ও কি সুন্দর যা দেখেও মানুষ প্রেমে পড়তে বাধ্য।আচ্ছা উনার সব কিছুই কি অন্য রকম।নিরবের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছি আমি।অন্য রকম সুন্দর লাগছে নিরব কে।পৃথিবীর সব সৌন্দর্য আমি ওর মাঝেই খুজে পেয়েছি।আমার সব ক্লান্তি ওর মুখের দিকে তাকালেই চলে যায়।
ঘেমে নিরবের শার্ট পিঠের সাথে লেপ্টে আছে।চোখে মুখে ঘামের ছড়াছড়ি।ড্রিংক্স টা খেয়ে নিরব আমাকে নিয়ে পাশের একটা বড় রেস্টুরেন্টে গেলো।
গরুর কলিজা,ইলিশ মাছের ডিম আর পাবদা মাছের অর্ডার দিলো।রেস্টুরেন্টে এসি থাকায় খানিক টা প্রশান্তি পেলাম।রেস্টুরেন্টে খাওয়া শেষে কিছু সময় বসে রেস্ট নিলাম।নিরব আমার হাত ওর দু হাতের মুঠোতে নিয়ে বলে মৃথিলা আমি বুঝতে পারছি শাড়ি পরে তোমার বেশী কষ্ট হয়ে গিয়েছে আজ।মোটেও নিজেকে কষ্ট দিয়ে বাড়ির বউ বলে শুধু মানুষের বাহবা পাওয়ার জন্য শাড়ি পরে ঘোমটা দিতে হবে না।তুমি শাড়ি পরবা যেদিন হঠাত আমার তোমাকে শাড়িতে দেখতে মনে চাইবে শুধু সেদিন তুমি শাড়ি পরবে তার আগে নয়।আমি জানি তোমার কষ্ট হলেও বলছো না।তোমার যে পোশাকে ইজি ফিল হবে তুমি সেটাই পরবে বুঝলে।আমি পাশের টেইলার্স এ তোমার জন্য থ্রি পিছ ওয়ান পিছ বানাতে দিয়ে এসছি।আর এখানে প্লাজু,লেগিন্স,গাউন,টপস,জিন্স, লেডিস টি-শার্ট, স্কার্ট সব কিছুই নিয়েছি যখন যেটা ভাল লাগে পরবে।আর কিছু হ্যান্ড পার্স নিয়েছি ঘুরতে বেরোলে জাস্ট ফোন টা পার্স এ নিয়ে বেরোবে।আর স্লিপার, সহ লেডিস জুতা ও নিয়েছি যেটা ভাল লাগে সেটাই পরবে।তোমার নিজের যেটাতে প্রশান্তি লাগে সেটাই পরবে।অন্যর ভাল লাগার জন্য নয়।অনেক তো অন্যর জন্য করেছো এবার একটু ডানা মেলে নিজের জন্য বাঁচো।আমি আছি তোমার পাশে।
নিরবের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি।ওর ভালবাসা প্রকাশের ধরণ টাই আলাদা।পৃথিবীতে সব মেয়েই যেনো একটা করে নিরব পায়।একটা ছেলের চোখে চাওয়া পাওয়া তে এত টা নিষ্পাপ নিঃস্বার্থ ভালবাসা কিভাবে থাকে।শুনেছি এখনের ছেলেরা নাকি শুধু টাকা, দেহ,আর যোগ্যতা দেখে ভালবাসে।আমার শোনা কথাটা নিরব এসে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে।কি দিয়েছি আমি ওকে কিছুই তো না।নিরব আমার জীবনে এসে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আল্লাহ যখন মানুষকে খুশি দেন তখন এত বেশী খুশি দেন যে খুশির জন্য কোনো চালাকি বা শয়তানি করা লাগে না।আজ আমি এটা উপলব্ধি করতে পারছি ভালবাসা চেয়ে বা ইচ্ছা করে পাওয়া যায় না।এটা সৃষ্টিকর্তা নিজে নির্ধারন করেছেন তিনি যেকোনো মুহুর্তে মানুষের জীবনে পরিবর্তন করে দিতে পারেন।তাই সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখাই উত্তম। তার সিদ্ধান্ত সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত।মাঝে মাঝে আমরা সৃষ্টিকর্তার সিধান্তের বিরুদ্ধে যেতে চাই।আমরা তার কাছেই প্রশ্ন করি কেনো এমন করলে।তিনিই উত্তম পরিচালনাকারী তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গেলে খারাপ ছাড়া কখনো ভালো হয় না।মা বাবার থেকেও আল্লাহ তার বান্দাকে বেশী ভালবাসে।
আমার আরেক টা হাত নিরবের হাতের উপর রেখে বললাম আমি শুধু আপনার জন্য বাঁচতে চাই নিরব।আমার জীবনের অতীত আমি ভুলে গিয়েছি।আমার এক জীবনে বেঁচে থাকার কারণ শুধুই আপনি বলেই একটা দীর্ঘঃনিঃশ্বাস নিলাম।
নিরব আমাকে বললো ডোন্ট আপসেট মিথু।চলো মামার বাসায় যেতে হবে।
____________________________
বিকালেই মুনতাহা আপুদের বাসায় গেলাম।রিফাত,রিক,মুনতাহা আপু সবাই আমাদের জন্য ওয়েট করছিলো।ওখানে শুধু মিসিং ছিলো সুপ্তি।আমার ছেলেবেলা থেকে একমাত্র সাপোর্টিং আর ভালবাসার মানুষ টা সুপ্তি।সুপ্তিকে ভীষণ বেশী মিস করছিলাম।সুপ্তির আম্মুকে রাজি বানিয়ে নিরব সুপ্তিকে আনার ব্যাবস্থা করলো আমাদের গ্রেট রিফাত ভাইয়া সুপ্তিকে এগোতে গিয়েছেন না জানি কি কান্ড ঘটাবে সারাপথ।
“লাল টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার পরে রিক্সা নিয়ে ওয়েট করছে রিফাত সুপ্তির জন্য।সুপ্তি রিফাত কে দেখেই বললো নিরব ভাইয়া মানুষ আর পেলো না আপনাকেই পাঠিয়েছে।তাও আবার অর্ধউলঙ্গ হয়ে এসেছেন।মানুষ তো আমাকে দেখে হাসবে যে কোন পাবনা ফেরতের সাথে এসেছি।”
“দেখো মারাত্মক গরম লাগছে আমার ইচ্ছা ছিলো আন্ডারওয়্যার পরে আসবো। কিন্তু তুমি লজ্জা পাবে বলে আসি নি।এখন যদি কিছু বলো সত্যি সত্যি থ্রি কোয়ার্টার খুলে আন্ডারওয়্যার পরেই যাবো বলেই রিফাত ভাইয়া এমন একটা ভাব করলেন যেনো রাস্তার মাঝেই খুলে ফেলবেন।”
“সুপ্তি বললো এই না না খবর দার না।ছিঃকি অশ্লিল লোক রে বাবা।”
“এমন ভাব করছো তুমি আন্ডারওয়্যার পরো না।ছোট বেলায় কত পরেছো।”
“নাউজুবিল্লাহ।”
“কেনো নাউজুবিল্লাহ কেনো?মনে হচ্ছে আমি কোনো জঘন্য কথা বলেছি।”
“এসেছেন নাউজুবিল্লাহ মার্কা পোশাকে আবার জানতে চাইছেন কোনো জঘন্য কথা বলেছি কিনা।”
“হায় আল্লাহ তুমি এর বিচার করো।আমি ছেলে মানুষ থ্রি কোয়ার্টার পরেছি আমি খালি গায়ে থাকলেও যেখানে সমস্যা নেই তাতেই নাউজুবিল্লাহ হয়ে গেলাম।আমার পাশে বসে থাকা ভদ্র মহিলা যে সারাদিন হিন্দি হিরোইন দের হাফপ্যান্ট পরা পিকচারে লাভ রিয়্যাক্ট দিচ্ছে তাদের নাচ গান দেখছে তাতে দোষ নেই।এমন কি এই ভদ্র মহিলা ইমরাণ হাশমির আশিক বানাইয়া গানে কমেন্ট করে ড্যাশিং ইয়ার।”
“আপনি কিভাবে জানলেন তার মানে আপনি এইগুলা দেখেন।”
“দেখি না ক্লাস ফাইভে থাকতে দেখেছিলাম আরকি।”
“ওহ মাই গড! ক্লাসে ফাইভে থাকতে এগুলা দেখেছেন, এখন তাইলে কি দেখেন।”
“এখন পাশে বসে থাকা রগিনী এম এম এস সরি সুন্দরী মহিলা কে দেখছি।”
“ওহ মাই গড! আপনার ফোন চেক করলে না জানি কত কি পাওয়া যাবে দেখি সার্চ অপশন।”
“থাক নিব্বি মানুষ এগুলা দেখলে মাথার মাঝে চক্কর দিবে তোমার।”
সন্ধ্যার আগে আগেই ফিরে এলো রিফাত ভাইয়া সুপ্তি কে নিয়ে।
মামার অপারেশন করাতে হবে তিন দিন বাদে।নিরব আর আমি নানা আর মামা, মামির সাথে বসে এটা নিয়েই কথা বলছিলাম।মামি আর রিফাত ভাইয়ার আম্মু রান্নার কাজে বিজি আছে আবার একটু মন ও খারাপ আছে মামির।কারণ মামার এত বড় একটা অপারেশন সেই টেনশন থেকেই মন খারাপ।নিরব নানা কে বলেছে একদম ই চিন্তা নেই আমরা আছি।আমি নানাকে পান বেটে দিতে দিতে বিভিন্ন গল্পে মেতে উঠলাম।আমাকে আর নিরব কে পেয়ে সবাই অনেক খুশি।
বাইরে একটু বাতাস উঠেছে।কারণ সারাদিনের প্রচন্ড গরমে মেঘ জমেছে আকাশে।প্রচন্ড ঝড় বাতাস ও উঠেছে।
রিক ভাইয়ার রুমে বসে আড্ডা চলছে সবার।
হটাত লোড শেডিং হওয়াতে রুমময় অন্ধকার হয়ে গেলো।আর এই সুযোগ টাই নিরব কাজে লাগাতে চেষ্টা করলো।হুট করেই ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।আর সাথে সাথেই কারেন্ট ও চলে এলো।আমাদের এমন বিশ্রি অবস্থায় দেখে ওদের সবার চোখ কপালে।এদিকে নিরবের হুঁশ ই নেই কারেন্ট চলে এসছে।ওর হুঁশ থাকবে কিভাবে ও তো ভীষণ ইমপরটেন্ট কাজে বিজি।আমি যে উমম উমম সাউন্ড করছি তার কোনো পাত্তাই নেই।বাধ্য হয়ে জোরে কামড় দিয়ে দিলাম। নিরব উহ বলেই ছেড়ে দিলো আমাকে।
এমন বাজে লজ্জাময় সিসুয়েশনে জীবনে পড়েছি বলে মনে হয় না।লজ্জায় কোনো ভাবে কারো দিকে তাকাতে পারছি না।রিক ভাইয়া রিফাত ভাইয়া মুনতাহা আপু সুপ্তি আমাদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলছে কি ব্যাপার কি। আমাদের মতো বাচ্চাদের সামনে এইগুলা কি হ্যাঁ।আমাদের সিঙ্গেল জীবনের অবসান না ঘটিয়ে তোমরা আর কোনো রোমান্স করতে পারবে না।
লজ্জায় আমি দৌড়ে পালালাম।
নিরব বললো আচ্ছা তোদের কি বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই।বউ এমনিতেই কোনো সুযোগ দিতে চাই না।বাচ্চা মানুষ এমনি তে লজ্জা পায় তাতে তোরা নির্লজ্জর মতো হা করে তাকিয়ে ছিলি।এনি ওয়ে খাবার দেখলে মানুষের খেতে ইচ্ছা করে আমাদের রোমান্স দেখে কি তোদের ও ইচ্ছা হচ্ছিলো।
রিফাত ভাইয়া বললো খাবার খেতে মনে না চাইলেও ভাই এগুলা আমাদের মনে চায়।
সুপ্তি বললো এক্সকিউজ মি!আমাদের কারো মনে চায় না শুধু আপনার একার ই মনে চাইতে পারে নাউজুবিল্লাহ মার্কা মানুষ যে তাই।
সুপ্তি নিরব কে বললো জিজু আকাশে মেঘ বৃষ্টি নামবে আপনি মন ভরে রোমান্স করুন।
#হিয়ার_মাঝে
৩৮.
#WriterঃMousumi_Akter
ঝড়ো বাতাসে রিফাত ভাইয়াদের চারতলার ছাদে গিয়ে দাঁড়ালাম,বাতাসে চুল গুলো উড়ছে আমার।ওড়না উড়ছে হাতের মুঠো থেকে ছাড়লেই নীল আকাশে পাড়ি জমাবে রঙিন ঘুড়ির মতো।ঝাপসানো প্রকৃতি শিতলতা পেয়েছে তারা এই বৃষ্টিকন্যার ই অপেক্ষা করছিলো।টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে প্রকৃতি গোসল করে স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে।কপোত কপোতিরা এই বৃষ্টিময় সন্ধ্যায় একান্তে রোমান্স করছে।ছাদের নিচে একটা টিন সেটের ঘর বৃষ্টি টুপ টাপ শব্দ অসম্ভব সুন্দর লাগছে।দুই হাত মেলে দিয়ে বৃষ্টিতে ভাষাচ্ছি নিজেকে।হাওয়ারা কানে কানে বলে যাচ্ছে এই বৃষ্টি তোমার জন্য, কখন বেখেয়ালে ওড়না উড়ে চলে গিয়েছে নিজের ই খেয়াল নেই।
পাখির মতো মেলে দেওয়া হাত দুটোতে হঠাত কারো চিরচেনা স্পর্শ অনুভব হলো।পেছন হাতে তার দুই হাতের দশ আঙুল দিয়ে আমার দু হাতের দশ আঙুল আলঙ্গন করেছে সে।পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখি হালকা গোলাপি ঠোঁট এ এক রাশ স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নিরব।ওর গলাতে আমার সাদা জরজেট ওড়না টা পেচানো।এতক্ষণে খেয়াল হলো ওড়না বেখায়ালে অন্য কারো দখলে চলে গিয়েছে।নিরব কে দেখেই আনমনে আলিঙ্গন করতে ইচ্ছা করলো।চোখে মুখে আমার ভীষণ লাজুকতা তবুও সব লাজুকতা হাওয়ায় ভাষিয়ে নিরব কিছু বলার আগেই ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
মানুষ টা পারফেক্ট হলে বোধ হয় এমন ই হয়।মুখ দিয়ে প্রেমের কবিতা উচ্চারণ না করেও আপন মনে আলিঙ্গন করে দুজনের হার্টবিট এর সাউন্ড শুনেও সব উপলব্ধি করা যায়।নিরবের বুকে মাথা রেখে ওর হার্টবিট শুনছিলাম আমি। হার্টবিট প্রতিটি স্পন্দনে বলছিলো ভালবাসি মৃথিলা।ওর হার্টের স্পন্দন এ এই একটাই কথা বাজছিলো।এভাবে কতক্ষণ কেটেছে খেয়াল নেই।
হঠাত আমার খেয়াল হলো যে,আমার মাথায় কোনো বৃষ্টি পড়ছেনা।নিরবের বুকে মাথা রেখেই বললাম, বলছি বৃষ্টি কি থেমে গিয়েছে।
তোমার মন এখন কোথায় আছে মৃথিলা।আর তুমি এখন কোথায় আছো?
পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ আশ্রয়স্হল,আমার চরম প্রশান্তির জায়গা আপনার বুকে।
আমার বউ যে, আমাকে সত্যি অনেক ভালবাসে সেটা বুঝতে আমার একটুও বাকি নেই।প্রকৃতির এই উথাল পাথাল ঝড় তার বোধগম্য হচ্ছে না।
আরেক টু আড়মোড়া দিয়ে নিরব কে আরো খানিক টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম প্রকৃতির এই ঝড়ের থেকে আপনার আগুনের মতো আগমন আমার ভিতরে আপনার প্রতি ভালবাসা আরো প্রগাঢ় গতীতে উথাল পাথাল ঝড় তুলেছে।
ইস!নিজেকে আজ লাকি মনে হচ্ছে। আমার কিউট বউটা আজ নিজে থেকে আমার কাছে এসছে।
নিরবের কথা শুনে এবার ওর বুক থেকে মাথা সরিয়ে দাঁড়িয়ে দেখি প্রকৃতির ঝড় থামে নি কিন্তু নিরব এত সময় আমার মাথার উপর ছাতা ধরে রেখেছিলো।এক শুভ্র রঙের ছাতার নিচে বৃষ্টিস্নাত সন্ধায় খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আমি।এমন ঝড় রোজ হোক,সব তছনছ হয়ে যাক।নিরবের হাত থেকে ছাতা টা নিয়ে দূরে ফেলে দিলাম।কিন্তু যখন খেয়াল হলো ওড়না গলায় লজ্জায় চিবুক নেমে গেলো,এত সময় সব লজ্জা উচ্ছুন্নে দিয়েছিলাম।
নিরব ওড়না টা নিয়ে আমার গায়ে জড়িয়ে দিলো।আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমার এক পা ওর হাঁটুর উপর তুলে নিলো।পায়ের পাতায় আলতো চুমু দিয়ে বিয়ের আগের দেওয়া নূপুর টা খুলে পকেটে রেখে দিলো।আর নতুন এক জোড়া নূপুর পরিয়ে দিলো।হাত ধরে টেনে সিঁড়ি ঘরে নিয়ে গেলো।একটা আলতার কৌটা বের করলো।আমাকে বসিয়ে আমার পা মুছিয়ে দিয়ে আলতা পরিয়ে দিতে দিতে বললো, আলতা টার প্রয়োজন ছিলো এই মুহুর্তে। তোমাকে এই বৃষ্টি কন্যা রূপে মানিয়েছে বেশ।আলতা রাঙা পায়ে, নূপূর পরে রিনিঝিনি করে বৃষ্টিতে ভিজবে আমি নয়ন ভরে দেখবো।জানো খুব ইচ্ছা করছে তোমার এই সুন্দর পায়ের নূপুর হয়ে তোমার সাথে মিশে থাকতে।ইচ্ছা করছে তোমার কানের দুল হয়ে গালের সাথে মিশে থাকতে।তোমার কানের দুল দেখলে খুব হিংসা হচ্ছে।বার বার তোমার গালের সাথে স্পর্শ করছে।
আরেক বার ও বৃষ্টিতে ভিজলাম।খুব ভিজলাম দুজনে একসাথে।এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা সাক্ষি হলো আমাদের ভালবাসার।আকাশে ডানা মেলে খুব জোরে চিৎকার করে বললাম ভালবাসি নিরব।সেই ভালবাসার উত্তরে নিরব আমার থেকে বেশী জোরে চিৎকার দিয়ে বললো ভালবাসি বউ পাখি টা।নিরব আমাকে বার বার নতুন করে নতুন ভাবে ভালবাসার ছোয়া দিয়ে যায়।ও প্রতিটি মূহুর্তে নতুন কোনো ভাবে ভালবাসা প্রকাশ করে।
ছাদ থেকে নেমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম। নিরব কালো৷ জিন্স আর কালো গেঞ্জি পরে নিলো।হলুদ প্লাজু আর লাল কামিজ পরলাম।গায়েএ হালকা শীত শীত ও লাগছে।রিফাত আর সুপ্তি খুনসুটিতে মেতে আছে।মুনতাহা আপু আর রিক ভাইয়া মান অভিমানের গল্প করছে।রিক ভাইয়ার চোখে মুখে মুনতাহা আপুর জন্য ভীষণ ভালবাসা স্পষ্ট। ভাবছি মামার অপারেশন এর পরে কথাটা বলবো।
তিন দিন পরেঃ
হসপিটালে পায়চারী করছি আমি মনের মাঝে ভীষণ অস্হিরতা কাজ করছে।মামার অপারেশন চলছে ভিতরে।হসপিটালের বেঞ্চেতে বসে আছে মামি,নানা,মুনতাহা আপু,রিক ভাইয়া,রিফাত ভাইয়া,নিরবের আম্মু।নিরব ডাক্তাদের সাথে কথা বলছে।হঠাত দেখি নবনিতা আপু তার ফ্রেন্ড এর সাথে হসপিটালে এসছে।আপুর ফ্রেন্ডের মা অসুস্থ। আমার সাথে দেখা হওয়াতে বেশ বিব্রত বোধ করলো।আমাকে দেখে বললো কিরে মিথু ঘর সংসার ছেড়ে হসপিটালে কেনো?কার কি হয়েছে?কি বলবো বুঝতে পারছি না।আমি চাইছিলাম না আমার মামাদের পরিচয় দিয়ে ওদের সাথে অশান্তি করতে।তাহলে মা আমার নানা কে অনেক বাজে কথা শুনাবে।আপুকে বললাম নিরবের বন্ধুর মামা অসুস্থ তাই এসছি।
কেনো কি হয়েছে উনার?
কিডনী তে সমস্যা।
এমন সময় মামি এসে বললো মা মৃথিলা ডাক্তার তো বেরিয়ে এসছে নিরব কোথায়?ডাক্তারের কাছে একটু শুনতে বল সব ঠিক ঠাক আছে কিনা।মামির কথা শুনে নানা বলেন আহা বউমা নিরব কে আর ডেকো না ও এমনি তে এত টাকা পয়সা খরচ করছে দৌড়াদৌড়ি করছে হয়তো কোথাও রেস্ট নিচ্ছে।আমরাই কথা বলে নিচ্ছি।বলেই নানা আর মামি চলে গেলো।
আপু আমাকে বললো তা ভালোই তো নিরবের বন্ধুর ফ্যামিলিকে মামা বাড়ি বানিয়ে নিয়েছিস।আর তোর সাথে এরা তুই তুকারি করে কথা বলছে মনে হচ্ছে তুই ওদের ফ্যামিলি পারসন।
আপু কে বললাম, আশা করবো আমার পারসোনাল ব্যাপারে নাক গলাবে না।তাছাড়া তোমাদের সাথে আমাদের তো এখন কোনো রিলেশন নেই তাইনা।সো বাই।
খারাপ মানুষেরা কখনো অন্যর ভাল বা সুখ শান্তি কোনটাই সহ্য করতে পারে না।এটা তাদের ভীষণ বড় একটা সমস্যা।মামা সাতদিনে হসপিটালে ছিলো।আমাদের রোজ যাতায়াতে বাবা, মা,আপু খোজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছে হসপিটালে আমি টাকা দিচ্ছি।নিরব টাকা দিতে চেয়েছিলো আমি দিতে দেয় নি।কারণ আমি চেয়েছি আমার মামা আমার মায়ের টাকাতে চিকিৎসা হোক।
মামাকে হসপিটাল থেকে আনার ঠিক দশ দিন পর দুপুর বেলা আমি আর নিরব রিফাত ভাইয়াদের বাসাতেই উপস্হিত৷ ছিলাম।আমরা দুপুরে খেয়ে নিজেরা গল্প করছিলাম।
হঠাত কলিং বেল বাজাতে মামি গিয়ে দরজা খুলে দিতেই বাবা,মা, আর আপুর প্রবেশ। আমি আর নিরব চমকে গেলাম উনাদের দেখে।নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য এসেছে। আমি বার বার আড় চোখে নিরবের দিকে চাইছি।নিরব আমাকে চোখের ইশারা দিয়ে বলে কুল।
বাবা বাসায় প্রবেশ করেই আমাকে বলেন,তা ভালোই তো ফ্যামিলি জুটিয়ে নিয়েছো সমাজ সেবা করছো।আমার টাকা দিয়ে কে তোমাকে সমাজ সেবা করতে বলেছে।বাবার চোখে মুখে ভয়ানক রাগ।তোমাকে কে অধিকার দিয়েছে আমার টাকা দিয়ে মানুষকে অপারেশন করানোর তাদের খরচ দেওয়া।মা বলে ওঠেন,ওর মায়ের মতোই দুঃচরিত্রা আর ঠক বাজ হয়েছে।আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে আমাদের টাকা পয়সা দিয়ে মানুষ কে দান করছে।নিজে জীবনে টাকা ইনকাম করেছিস। নিজের তো সে মুরদ এখনো হয় নি।তুই এক্ষুণি টাকা দে আমাদের।বাবা আমাকে বলেন, ভুল বশত তোমার নামে আমি টাকা রেখেছিলাম।আর তার সুযোগ নিয়ে তুমি আমার টাকা আত্মাস্বাদ করছো।এত বিশ্রি কথা শুনে নিরব এর শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে।নিরব এর হাতের মুঠো শক্ত করে ফেললো।এমন সময় নানা বললো মৃথিলা কে উনারা?
আমি বললাম নানা তোমার মেয়ে যার জন্য বাড়ি ছেড়েছিলো উনি সেই লোক।সম্পর্কে আমার নাম ধারী বাবা হন।
নানা ভীষণ ভাবে রেগে গিয়ে গেলেন।আমরা কেউ বুঝতে পারি নি নানা এট টা রেগে যাবেন।উনার পুরো জীবনের সুখ শান্তি যার জন্য নষ্ট হয়েছে সেই মানুষ টা আজ তার চোখের সামনে।আমার বিয়ের সময় নানার সাথে পরিচয় করায় নি কারোর।
নানা এসেই ঠাসস শব্দে মায়ের গালে স্বজোরে থাপ্পড় কষে দিলেন সেই সাথে বাবার দুই গালে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে নানা রাগে কাঁপছেন।
#হিয়ার_মাঝে
৩৯.
#WriterঃMousumi_Aktar
🖤
নানার দেওয়া থাপ্পড় এ মা বাবা উভয় ই আঁতকে উঠলেন।দাদুর পুরা শরীর কাঁপছে রাগে।চোখ থেকে মোটা ফ্রেমের চশমা টা খুলে বললেন,তাহলে তুই।তুই সেই বিশ্বাসঘাতক যে আমার কলিজার টুকরো কে আমার জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছিস বলেই দাদু হুঁ হুঁ করে উঠলেন।একজন বাবার আদরের মেয়ে কে কেউ কেড়ে নিলে সেই বাবার কাছে নিম্ন লেভেলের ঘাতক থাকে সেই ব্যাক্তি।একজন বাবা হিসাবে তার মেয়েকে হারানোর মতো কষ্ট নেই।মৃত্যু যদি স্বাভাবিক ভাবে হয় তাহলে সবাই মেনে নিতে পারে কিন্তু যে মৃত্যুর কারন টাই সবার অজানা রয়ে গিয়েছে সেই মৃত্যু মেনে নেওয়া টা খুব ই কষ্টের।
বাবা কখনো মায়ের ফ্যামিলির কারো সাথে যোগাযোগ করে নি তাই কাউকে তেমন চিনেও না।যোগাযোগ করে নি বলতে বাবা গভীর পানির মাছ তাই ধরা দিতে চান না।বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন নানার দিকে।বাবা খানিক সময় তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করলেন আপনি?
বাবার কথা শুনে নিরব বললো,
“হ্যাঁ উনিই সে হতভাগা বাবা।যার মেয়েকে আপনি আরো অনেক গুলা বছর আগে ঠকিয়ে বিয়ে করেছিলেন।”
“মানে।”
আমি খানিক টা শক্ত পোক্ত কন্ঠে বলে উঠলাম,,মানে এটাই এরাই আমার আপন জন।আমার নানা,মামা,মামি। আপনি কোনদিন তাদের ঠিকানা দেন নি।ইচ্ছা করলেই পারতেন কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ করতে।ভেবেছিলেন হয়তো আপনার ক্লোজ করা চ্যাপ্টার আজীবন ক্লোজ ই থাকবে।আমি আপনাকে একদিন বলেছিলাম একদিন না একদিন সব খুজে পাবোই। দেখুন আজ আমি সব খুজে পেয়েছি।আপনি এতদিন দূরে রেখেছিলেন আমাকে।আমার মায়ের সেই ডায়রি আমি পড়েছি সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিলো আপনার কুকির্তী।কি ভেবেছিলেন সারাজীবন আমি একা থাকবো।আপনি ত্যাজ্য করলে আমি বানের জলে ভেষে যাবো। আবার কেঁদে কেঁদে আপনার দুয়ারে যাবো।এই প্লান ই করেছিলেন তাইনা।
মা দাদুকে বললো, আপনি তাহলে সেই চরিত্রহীনার বাবা।আপনাকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো আমার।এমন মেয়ের জন্ম কিভাবে দিলেন।যে কিনা অন্যর সংসার নষ্ট করে।লজ্জা করে না আপনার সেই মেয়ের হয়ে কথা বলছেন।আমার সাজানো সংসার নষ্ট করেছে আপনার মেয়ে।ওর থেকে পতিতারা ভালো আছে।আমার জীবনের সব সুখ শান্তি নষ্ট করেছে আপনার মেয়ে।
দাদু এগিয়ে এসে মায়ের দু ‘গালে আরো দুটো থাপ্পড় মেরে বললেন আর একটা বাজে কথা বললে কথা বলার অবস্থা রাখবো না।ভেবো না বয়স হয়েছে বলে সব বল পড়ে গিয়েছে।একটা মৃত মানুষের নামে এসব বলতে মুখে বাঁধে না তোমার।তুমি যদি ভাল মেয়ে হতে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে আমার মেয়ের বিচার আমি করতাম।এমন মেয়েকে আমি জন্ম দেই নি যে অন্যর সংসার ভাঙবে।বাবার দিকে আঙুল উঁচু করে বলেন যা করার ওই কুলাঙ্গার করেছে।আমার মেয়ে চরিত্রহীনা তাহলে তোমার স্বামি কি?তোমরা সবাই মিলে আমার মেয়ের জীবন টা নষ্ট করেছো।একই ভাবে আমার নাতনীর পিছনে লেগেছিলে কিন্তু সফল হতে পারো নি। আমার নাতনির সাথে যে ব্যবহার সারাজীবন করেছো সুখ শান্তি কোনদিন তোমাদের জীবনে আসবে না।আমার মেয়ে মরে গিয়ে ভাল আছে।তোমরা বেঁচে আছো এই সন্তানহারা বাবার চোখের পানিতে কোনদিন ভাল থাকবে না তোমার।
আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, মা সম্পর্কে মা হও বলে আজ কিছুই বলতে পারি না।কুকুর মানুষ কে কামড়ায়।মানুষ কুকুর কে কামড়ায় মা।তাকিয়ে দেখো মা আমি ভাল আছি।আমার আশেপাশে ভালবাসার মানুষের অভাব নেই।তুমি কি ভেবেছিলে মা সারাজীবন তোমার অবহেলা নিয়ে বেঁচে থাকবো।তোমরা আমাকে ভালবাসো নি তাতে কি হয়েছে আল্লাহ আমাকে আজ ভালবাসায় পূর্ণতা দিয়েছেন।আমার মায়ের টাকা আমার মামার পেছনে খরচ করেছি সেটা তোমরা বলার কে?আমার মায়ের সাথে এতকিছু তো টাকার জন্য করেছো তোমরা।এই টাকার জন্য আমার মায়ের জীবন টা নষ্ট করেছো।
মামা এগিয়ে এসে বাবাকে প্রশ্ন করে আমার বোন এর কি অন্যায় ছিলো।কেনো একটা বার আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে দাও নি।আমার বোনের নামের সম্পত্তি কি হয়েছে।
নানা বলেন সম্পত্তি নিয়ে কিছুই বলিস না বাবা।তাহলে ওই নরপিশাচ ভাববে তোর বোনের থেকে সম্পত্তির জন্য বেশী খারাপ লাগছে তোর।
নানা আবার ও এসে বাবাকে প্রশ্ন করেন মানুষ আর অমানুষ দেখতে একই রকম হয় তোকে না দেখলে বুঝতাম না।আমার মেয়েকে তুই মেরে ফেলেছিস আমি জানি।আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী।পুলিশ পুলিশে দিবো আমি তোকে।
বাবা রিতীমত ভয় পেয়ে গেলো,দেখুন আমি আপনার মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম।ওর সম্পত্তির কিছুই আমি নেই নি।ও নিজে থেকেই আপনাদের সাথে যোগাযোগ করে নি।আমি বলেছি অনেক বার।আপনার মেয়ের কোনো কিছুই আমি নেই নি।
নিরব বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,আর মিথ্যা বলবেন না আঙ্কেল দয়াকরে।সত্যি টা সবাই জানে এখন।ইন ফিউচার ভুলেও মৃথিলার সাথে এসে বাজে বিহ্যাভ করবেন না।তাহলে আমি আপনাদের মুখ কথা বলার মতো রাখবো না।মৃথিলার মায়ের সাথে কি ঘটেছিলো সেটা এমনিতেই একদিন প্রকাশিত হবে আপনাকে বলতে হবে না।নিজের সন্তান এর সাথে যে ব্যবহার করেছেন আপনাদের মতো জঘন্য মানুষ পৃথিবীতে দেখি নি।এই বৃদ্ধ মানুষ চাইলেই আজ আপনাদের বিরুদ্ধে করা স্টেপ নিতে পারেন।কিন্তু উনার হাতে উপযুক্ত প্রমান নেই।তবে প্রমান কখন পেয়ে যাবে ঠিক নেই তাই সাবধান হয়ে যান।আর নেক্সট এখানে আসলে আপনার নামে কমপ্লেইন দিতে বাধ্য হবো।
নানা, মামা,মামি,মুনতাহা আপু সেদিন ভীষণ কেঁদেছিলো।তাদের পুরনো ক্ষত আবার জেগে উঠেছিলো।আমাকে পেয়েই হয়তো নানা মাকে হারানোর কষ্ট ভুলে থাকতে পারেন।
নিরবের বাবা আমাকে পাসপোর্ট করতে বলেন।নিরব রা ইউ এস সিটিজেন শিপ পেয়েছে।তাই আমার জন্য এপ্লাই করেছেন।কিন্তু নানা কে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব না আমার।আমি যাবো না বলে নিরব ও বিদেশ যাওয়া ক্যান্সেল করে দিলো।নিরবের মা আর বাবা বিদেশ চলে গেলেন।
কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক টা মাস।সব কিছু স্বাভাবিক চলছে।
_________________________________
ল্যাপটপের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে নিরব।আমি আজকে হঠাত শাড়ি পরেছি। ইচ্ছা করছে নিরব কে চমকে দিতে গিয়ে।ও দেখলে ভীষণ খুশি হবে।হঠাত শাড়ি পরেছি ওর ভীষণ ভাল লাগবে দেখলে।শুধু ওর মুখে একটাই কথা শুনবো বলে সেজেছি “তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে জানপাখি” ওর মুখের প্রশংসা শুনলে পৃথিবীর সব হাসি আনন্দ এসে জড় হয় মনের মাঝে।রুমে প্রবেশ করে বেডের কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম নিরব আমার দিকে তাকাচ্ছেই না।ভেবেছি বিজি আছে তাই ভাবলাম একটু পরেই আসবো এখন বিরক্ত করাটা ঠিক হবে না।আমি রওনা দিতেই আমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কি যেনো টাইপ করছে নিরব।এক হাতে শাড়ির আঁচল ধরে অন্য হাতে টাইপ করছে।এই রে আমায় দেখে ফেলেছে নিরব।ভাবলাম আমায় হয়তো দেখে নি কিন্তু না তাকিয়ে দেখলো কিভাবে।ল্যাপটপ এর সাটার অফ করে আমাকে এক ঝটকায় নিজের কাছে টেনে নিলো।মিনিট খানিক তাকিয়ে থাকার পরে বললো কি ভেবেছিলে আমি তোমায় দেখি নি।
“হ্যাঁ আমি তো তাই ভেবেছিলাম আপনি আমায় দেখেন নি।মন ছিলো ল্যাপটপ এ।”
“তোমার পরীক্ষার রুটিন ডাউনলোড দিচ্ছিলাম।এক মাস পর থেকে না তোমার এক্সাম। ”
“আমার দিকে না তাকিয়ে বুঝলেন কিভাবে আমি এসেছি।”
“আমার বউ এর পায়ে দুখানা নুপুর আছে সেটার রিনিঝিনি সাউন্ড হচ্ছিলো তো।তাছাড়া আমার বউ এর হার্টবিট আমি অনুভব করতে পারি।এই যে তোমার হার্টবিট অলওয়েজ বলছে আই লাভ ইউ নিরব।”
“হঠাত করেই গাল ফুলিয়ে বললাম আপনি কি আমার মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন।”
“উম কই নাতো।”
“একটুও দেখতে পাচ্ছেন না।”
“উহু!”
“যান ছাড়ুন আমাকে কোনো কথা বলবো না।”
“দেখি ট্রাই করে দেখি পরিবর্তন বুঝতে হলে একটু উঁচু করতে হবে।বলেই নিরব আমাকে পাজা কোলে তুলে উঁচু করে ধরলো।উঁচু করে বললো ওজন কমেছে মৃথিলা তোমার।মানুষ বিয়ের পরে মোটা হয় আর তুমি চিকন হচ্ছো কেনো বলোতো।”
“আপনি কি আমার মাঝে এখন এই পরিবর্তন পেলেন।”
“আমি আর কোনো পরিবর্তন পায় নি।তুমি এখন পড়তে বসো তো যাও।এক মাস পরেই এক্সাম।পরে রেজাল্ট খারাপ হলে সবাই বলবে মেয়েটাকে তার বর পড়ার কোনো সুযোগ ই দেয় না।বিয়ের পর আর লেখাপড়া কিছুই হবে না।আমি এই অভিযোগ ঘাড়ে নিবো না যাও পড়তে বসো কুইক।”
মনে মনে ভীষণ অভিমান হলো।বিয়ের এক বছর হতে পারে নি এত অরুচি।আমি মনে হয় পুরনো হয়ে গেছি।নিশ্চয়ই বিদেশি কোনো প্রেমিকার কথা মনে পড়েছে।নাকি আমাকে আর ভাল লাগছে না।ভাল লাগবেই বা কি করে ঠিক এ কারনেই বেশী সুন্দর চেহারার ছেলে বিয়ে করতে নেই।এতদিন পরে শাড়ি পরেছি তাও বিশেষ দিন বলে। সে পাত্তাই দিলো না।নিরবের দিকে তাকিয়ে দেখি আবার ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ।নিশ্চয়ই আমার চেয়ে ইমপরটেন্ট কোনো কাজ করছে।আমার থেকেও ইমপরটেন্ট কিছু হয়েছে নিশ্চয়ই। রাগে অভিমানে শাড়ি টা খুলে রাখলাম।রাগে রাগে জোরে চেয়ার টেনে নিয়ে পড়তে বসলাম।
নিরব আমার দিকে তাকিয়ে বললো কি সমস্যা এত জোরে চেয়ার টানছো ক্যানো?পড়তে বসো।
পড়তে বসেছি ঠিক ই কিন্তু পড়ার দিকে মোটেও মন নেই।চোখের পানিতে খাতা ভিজে গেলো।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ভালবাসার মানুষ সামান্য তম পরিবর্তন হলে মনের মাঝে ভীষণ তোলপাড় করে।কত টা কষ্ট হয় সেটা আজকের দিন টা না এলে বুঝতাম ই না।পড়ার দিকে মন নেই।ইউটিউব এ সার্চ দিলাম স্বামি পরিবর্তন হয়ে গেলে কিভাবে আবার তাকে ফিরিয়ে আনবো।একটা মেয়ে ইউটিউবারের চ্যানেলে দেখলাম অনেক গুলা সাবস্ক্রাইবার।সব ভিডিও তে অনেক ভিউ।মনে মনে ট্রাস্টেড ভেবে তার চ্যানেলের একটা ভিডিও প্লে করলাম।উনি পরামর্শ দিলেন ছেলেরা বাচ্চার পাগল।বাচ্চার প্রতি অনেক উইক তারা।স্বামি পরিবর্তন হয়ে গেলে সবার আগে একটা বাচ্চা নিতে হবে।তাহলেই সে আগের মতো কেয়ারিং হয়ে যাবে।চট করেই পড়ার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে আবার বেডের পাশে গিয়ে হাতের মুঠোতে ওড়নার এক মুড়ো ধরে কচলাতে লাগলাম।
নিরব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো কিছু বলবে।
“হ্যাঁ আমি বাচ্চা নিতে চাই।”
“নিরব আমার কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লো।পুরাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।আবার ও ভ্রু কুচকে বললো হোয়াট বাচ্চা।”
“ক্যানো এতে অবাক হওয়ার কি আছে। আমি এই মুহুর্তে বাচ্চা চাই।”
“এই মুহুর্তে বাচ্চা কি গুগল থেকে ডাউনলোড করবো।বলেই নিরব গুগলে সার্চ করে একটা কিউট বেবি পিকচার বের করে বললো এই নাউ বাচ্চা।”
“দেখুন ইয়ার্কি না আমাদের সংসারে আপনার আর আমার বাচ্চা চাই আমি।চাই মানে চাই।আমি বেবি নিতে চাই।”
“নিরব হেসে দিয়ে বললো একটা বাচ্চা এসে যদি আমার কাছে বাচ্চা চায় কেমন একটা লাগে না।”
“দেখুন আমি বাচ্চা থেকে বড় হয়ে গিয়েছি।
ওসব বলে আমাকে ইগনোর করা যাবে না।”
“ঠিক আছে কাঁছে এসো,কাছেই তো আসতে চাও না বাচ্চাটা হবে কিভাবে।”
“এখন থেকে রোজ কাছে আসবো যতদিন না বাচ্চা হচ্ছে।”
“নিরব আমার দিকে তাকিয়ে বললো কি ব্যাপার কাছে আসবে লজ্জা পাবে না”
“ক্যানো লজ্জা পাবো কেনো কাছেই তো আছি”
“এই কাছে সেই কাছে না।এই কাছে এলে বেবির আম্মু হয়ে যাবা।সো ভেবে চিন্তে ডিসিশন নাও।পরে তো বলবে আপনি এত ফাজিল আগে জানতাম না।এসব করতে হবে আগে বলেন নিতো।তাই কাছে আসার প্রস্তুতি ভাল ভাবে নাও।”
“দেখুন সব প্রস্তুতি নিয়েছি আই ওয়ান্ট বেবি।”
“নিরব আবার ও অবাক হয়ে বললো ও এমজি।বলে কি পিচ্চি।যাও আগে পড়তে বসো।এসবের সময় নয় এখন।আমি ঘুমোবো যাও চেয়ার টেবিলে।”
এবার আরো কষ্ট পেলাম।এই মানুষ টার মাঝে এত চেঞ্জ কেনো?উনি তো এমন না।শাড়ি পরলাম তাও কিছু বললো না।একবার তাকায় নি।কাহিনী কী?
চলবে,,
(