#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#পর্ব_০২
#Written_by_Mehebin_Nira
দরজায় যেই মানুষটি দাঁড়িয়ে আছে সে আর কেউ নয় রোহান নিজেই। তার চোখ অসংখ্য মেয়ে কে দেখেছে কিন্তু কখনো থমকে যায় নি। যা সে এই প্রথম নিরা কে দেখার পর উপলব্ধি করল। অতঃপর একটা কথা স্মরণ হতে লাগলো। আর তা হলো নিরা কে তার চাই। বেড পার্টনার হিসেবে। আজ পর্যন্ত সে যা চেয়ে এসেছে তাই পেয়েছে নিরা কেও তার পেতেই হবে। এই মেয়ের সাথে এক রাত আয়েশে করে কাটাতে না পারলে জীবন টাই বৃথা। সে ভালো করে এই নিয়া কথা ও বলতে চেয়েছিলো নিরার সাথে কিন্তু সে বার বার ইগনোর করে গেছে।
নিরা রোহান কে দেখে বলল,
‘আপনি এখানে?’
‘হ্যাঁ মানে না…
‘আমতা আমতা করছেন কেন?’
‘ইয়ে…
রোহানের মতিগতি ভালো লাগছে না নিরার কাছে তাই সে তাড়া দিয়ে বললো,
‘আপনি বোধহয় কোনো কাজে এসেছিলেন তাই না ভাইয়া? আচ্ছা আমি যাই তাহলে!’
নিরা রোহান কে ক্রস করে যেতে নিবে দরজার উপর হাত দিয়ে বাঁধা প্রদান করে সে।
‘কি হলো আটকালেন কেন?’
‘ইগনোর করছো কেন আমাকে?’
‘মানে?’
‘ঠিক ই বলেছিলে আমি কাজ করতে এসেছি। তবে কাজ টা আমার তোমার সাথেই! সো তুমি যেতে পারবেনা!’
‘আমার সাথে কি কাজ? আপনার কাজ পরে এখন আমায় যেতে হবে!’
‘নো নো। আমার সাথে কি কাজ সেটা বলছি ওয়েট!’
রোহান নিরা কে কিছু বলতে না দিয়ে দরজা টা বন্ধ করে দিচ্ছে দেখে নিরা বললো,
‘আরে আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেন?’
‘তোমার আমার মাঝে দরজা টা বড্ড প্রবলেম করছে বুঝলে?’
‘হোয়াট?’
নিরা চলে যেতে রোহান পেছন থেকে তার হাত টেনে ধরে ফেলে। এটা দেখে নিরা রেগে আগুন। তখন ওভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য ও রাগ হলো।
‘হাত ছাড়েন আমার!’
‘না ছাড়লে!’
নিরা আর সহ্য করতে না পেরে ঠাস করে একটা বসিয়ে দেয় রোহানের গাকে। চড় খেয়ে শক্ড সে। কারণ সে ভাবতে পারে নি যেই মেয়েটা কে তার ভিতু মনে হয়েছে সে চড় দেওয়ার দুঃসাহস দেখাবে। চড় খেয়ে গাল টা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। সেই সাথে ক্ষিপ্ত চোখ জোড়া ও।
‘তোর দৃষ্টি আমার আগেই খারাপ মনে হয়েছিলো। বলছিলি না কেন ইগনোর করছিলাম? এই নে উত্তর। কিন্তু কে জানতো আমার হাতের চড় টা তোর গালে লিখা ছিলো। ভবিষ্যতে আর কোনো মেয়ের সাথে অসভ্যতামি করার চেষ্টা ও করবি না নাহলে এর পরের বার হাত নয় সোজা জুতা উঠবে গালে!’
চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে দরজা খুলে বেরিয়ে নেয় নিরা। রোহান পুরো কথা গুলো শুনে প্রচন্ড রেগে যায়।
রোহান সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রক্তচক্ষু জ্বলজ্বল করছে।
‘কি সমস্যা? এখনো শিক্ষা হয় নি!’
‘খুব হয়েছে। এবার তোকেও কিছু শিখাতে চাই ডার্লিং!’
রোহান আধো খোলা দরজা যতটা পেরেছে বন্ধ করে দেয়। নিরা কে জোড় করে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে।
‘ছাড়েন বলছি আমাকে!’
যত যাই হোক একটা ছেলের সাথে একটা মেয়ে শক্তিতে কখনো পেরে উঠা সম্ভব নয়। এই বেলায় এ তাই হলো। রোহান নিরা চিৎকার করছে দেখে রেগে নিজেও এবার নিরার গালে একটা চড় মারে। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে নিরা।
‘সরি সোনা। আমার খারাপ রূপ টা কে সামনে নিয়ে আসতে তুমি ই বাধ্য করলে!’
ব্যথায় নিরা কেঁদে উঠে। রোহানের ঠোঁটে রাজ্যজয়ের হাসি। নিরা এবার খুব ভয় পেয়ে যায়। এতক্ষন ভেবেছিলো যে চড় খেয়ে রোহানের শিক্ষা হবে কিন্তু সে যে এতো বাজে রূপ ধারণ করবে বুঝে নি। রোহান এবার তার কাঁধের উপর শাড়ি তে হাত দেয়। বিষ্ময়ে এবার চোখ কপালে উঠে যায় নিরার। কি করতে যাচ্ছে ও?
‘আমার কাজ আমাকে করতে দাও সোনা। জোড়াজুড়ি করো না এই গোটা রুম টায় তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই। বিশ্বাস করো একটা টু শব্দ ও বাহিরে যাবে না। তাই শিসস চুপ করে উপভোগ করো।’
নিরা রোহানের হাত ছিটকে ফেলেন দেয়। প্রাণপনে ছুঞে পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। রোহান তকে ধরে ফেলে। তার সর্ব শক্তি দিয়ে নিরার দুই হাত দেওয়ার সাথে ঝাপটে ধরে রাখে। তারপর নিরার কাঁধে থেকে শাড়ি আঁচল টা নিচে ফেলে দেয়। নিরা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘প্লিজ আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না! আমি ঐ রকম মেয়ে না। আমাকে ছেড়ে দেন!’
‘তুমি কেমন মেয়ে তা আগেই বুঝেছিলাম। তোমাকে ছেড়ে দেবার প্রশ্নই আসে না। এই রকম রাত আর হতেই পারে না। এখন ই তো মোক্ষম সুযোগ হাহাহা!’
রোহানের ঠোঁটে পৈশাচিক হাসি। নিজেকে বাঁচাতে সব রকম চেষ্টা করে নিরা। শেষে ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়। গলা ছেড়ে কাঁদতে থাকে। সত্যি ই একটা মানুষের কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। আজ নিজের সতীত্ব কে হারাতে হবে তার ভাবতেই মরে যেতে ইচ্ছা করছে! রোহানের মতো নরপশুর হাতে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে এক সময় ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারে নি। মানুষ খারাপ হয় তাই বলে এতো টা খারাপ?
_____________________
আদ্রাজ নিচে চলে আসে। মুখে কথা বলছে ঠিকই তবে মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে। মেয়েটা হুট করে উধাও ই বা হয়ে গেলো কি করে? রাতুল আদ্রাজ কে অন্য মনষ্ক দেখে বলল,
‘কি ভাই তোর মন কোথায় বলতো?’
‘আমার মন আবার কোথায় হবে?’
‘না আমি খেয়াল করছি তুই আমার কথা শুনছিস ই না। টোটালি অমনোযোগী তুই!’
সত্যি ই তাই। আদ্রাজ নিজের মনোযোগ ঠিক রাখতে পারছিলো না। মন টা কেমন খচখচ করছে। সূক্ষ্ম এক খারাপ লাগা মনের কোণে বিষাক্ত তীরের মত বিঁধছে। এ কেমন অনুভূতি? কেন এমন অনুভব হচ্ছে তার?
‘রাতুল আমি তোর সাথে পরে কথা বলবো!’
‘আরে আদ্রাজ কই যাচ্ছিস শোন..!’
আদ্রাজ তার কথা শুনলো না পা ফেলে সেদিকে এগিয়ে চললো যে দিকে মন সায় দিচ্ছে। রাতুল ও তার পেছন পেছন আসতে নিলে আশা তাকে আটকে দেয়। আশা কে চোখে পড়তেই সে নিজেই থেমে যায়। এই একটা জায়গায় ভীষণ দুর্বল সে! আর তার সেই দুর্বলতা আশা নিজেই!
নিচে সকল রুমে মানুষ গিজগিজ করছে। হঠাৎ ই একটা রুমে এসে থমকে দাঁড়ায় আদ্রাজ। এই রুম টা এতো নিশ্চুপ কেন? কান পাতা বা নক করা ঠিক হবে না ভেবে চলে যেতে নিয়েও থমকে দাঁড়ায়। কারো কান্নার শব্দ কানে আসছে তার! কন্ঠ টা চিনতে কষ্ট হলো না তার! মন টা কেমন ছেত করে উঠলো। কোনো প্রকার নক না করেই দরজা টা ধাক্কা দেয় আদ্রাজ। হালকা তে লেগে থাকা দরজা টি ধাক্কা লাগায় হুক সরে খুলে যায়। ভেতরে প্রবেশ করতেই চক্ষু ছানাবড়া আদ্রাজের। এ কি দেখছে সে?
রোহান জোড় পূর্বক নিরা কে কিস করার চেষ্টা করছিলো তক্ষুনি দরজা ঠেলে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে সে সরে দাঁড়ায়। কারো তো আসার কথা ছিলো না তাহলে কে আসলো? কান্নারত চোখ দুটো নিয়ে নিজের দিকে তাকাতে প্রচন্ড ঘৃনা হলো নিরার! আদ্রাজ কে দেখে দেহে যেনো প্রাণ ফিরে পেলো। নিচে শাড়ির আঁচল বিছিয়ে আছে। নিরা ধপ করে ফ্লোরে বসে হতভম্ব হয়ে আঁচল দিয়ে নিজেকে ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চোখের পানি টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে।
রোবটের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে অবাক নয়নে সব অবলোকন করলো আদ্রাজ। ঘটনা টা বুঝতে তার সময় লাগলো না! মিনিটের মধ্যেই রাগে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। রক্ত যেনো এক লাফ দিয়ে মাথায় উঠে গেলো। রোহান বললো,
‘তুমি? তুমি এখানে কি করছো? রুমে ঠুকতে গেলে যে পারমিশন লাগে তা জানো না?’
কথা টা শুনে আরো ক্ষেপে যায় আদ্রাজ। হাটু তে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকা নিরার দিকে তাকিয়ে ছুটে গিয়ে রোহানের কলার চেপে ধরে সে।
‘হাউ ডেয়ার ইউ!’
‘হেই কি করছো তুমি? ছাড়ো বলছি!’
‘পারমিশনের কথা বলছিস তুই আমাকে?’
বলেই রোহান কে লাগাতার কিল ঘুষি মারতে থাকে আদ্রাজ। এইসব দেখে বাজ পড়েছে তার মাথায়। সে ছাঁদে ও লক্ষ্য করেছিলো রোহান কিভাবে কোন চোখে নিরা কে দেখছে! নিরা কিছু বলে নি দেখে তখন ও রাগ জন্মেছিলো কিন্তু জোড় করে নিরার সাথে কিছু করতে চাইবে তা কল্পনায় ও ছিলো না আদ্রাজের।
_____________
আশা রাতুলের সামনে তুড়ি মেরে একটু জোড়েই বলল,
‘চোখে ছানি পড়ে যাবে!’
রাতুল থতমত খেয়ে যায়। আশা ভ্রুঁ কুঁচকে বললো,
‘আমি জানি আমি সুন্দরী তাই বলে মানুষ কে এভাবে দেখতে হবে তা তো কোথাও বলা নেই!’
‘কে বলে তুমি সুন্দরী? তুমি তো একটা আস্তো ভূতনি! হাহা!’
‘কিহ?’
‘ভূতনি ভূতনি!’
আশার দিকে তাকিয়ে ভেঙ্গচি মেরে দৌড় দেয় রাতুল। আশা ও ক্ষেপে গিয়ে তার দিকে তেড়ে আসতে নেয়। সে দৌড় লাগিয়েছে দেখে আশা ও পিছু নেয়।
সেই রুমের সামনে চলে আসে রাতুল। যেখানে আদ্রাজ লাগাতার রোহান কে মারতে ব্যস্ত ছিলো। চোখের সামনে আচমকা এসব দেখে হতভম্ব রাতুল।
আদ্রাজ বললো,
‘তোকে আজকে আমি জানে মেরে ফেলবো! তোর সাহস কি করে হয় একটা মেয়ের দিকে হাত বাড়ানোর! তোর সেই চোখ আমি আজ উপড়ে ফেলবো যেই চোখে কোনো মেয়ে নিজেকে সুরক্ষিত মনে না করে বরং ভয়ে থাকে! তোকে আমার হাতেই মরতে হবে!’
গলা চেপে ধরে আদ্রাজ রোহানের। রাতুল দেখে একপাশে একটা মেয়ে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কাঁদছে। মুখ টা ঢাকা তাই সে চিনতে পারলো না এটা কে। আশা ততক্ষণে সেখানে চলে আসে!
রাতুল দেখলো রোহান চোখ মুখ উল্টে ফেলেছে। এটা কি করছে আদ্রাজ। এতো সত্যি সত্যি ই মরে যাবে। নাক মুখ থেকে রক্ত পড়ে অবস্থা আরো খারাপ। মেরে ফেললে খুনের দায়ে ফাঁসি তে ঝুলতে হবে নিশ্চিত। রাতুল দৌড়ে আদ্রাজ কে বলে,
‘আদ্রাজ ছাড় ও তো মরে যাচ্ছে!’
‘ওকে তো আমি মেরেই ফেলবো আজকে!’
‘নাহ এটা করিস না দোস্ত!’
আশার নিরা কে চিনতে দেরি হল না।
‘নিরা তুই এখানে?’
আশার গলা শুনে মুখ উঠায় নিরা। আশা ও নিচে বসে পড়ে। নিরা আশা কে দেখে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। আজ মরা ছাড়া যে কোনো উপায় ছিলো না তার।
আশা শক্ড সে কি করবে। নিরা কে শান্তনা দিতে পেছনে ফিরে দেখে এদিকে অবস্থা আরো খারাপ। রোহান কে না মেরে ছাড়বে না আদ্রাজ। এক হাতে নিরা কে ধরে রেখে আশা না পারতে বলল,
‘ভাইয়া আমার কসম লাগে তুমি এই ছেলেটা কে ছেড়ে দাও। প্লিজ ভাইয়া!’
বোন নিজের কসম দিয়ে বসবে ভাবতে পারে নি আদ্রাজ। হাত জোড়া অবশ হয়ে আসতেই সে রোহান কে ছেড়ে দেয়। রাতুল আদ্রাজ কে সরিয়ে নিয়ে আসে রোহানের কাছ থেকে। আদ্রাজের কাছ থেকে ছাড়া পেতেই হাঁপাতে থাকে রোহান! আর একটু হলেই যেনো প্রাণ পাখি টা দেহ ছেড়ে উড়াল দিতে যাচ্ছিলো..!
চলবে———————
এত কষ্ট করে গল্প লিখি রেসপন্স না পেলে খুব খারাপ লাগে! আর লিখতেই ইচ্ছে করে না!