#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#অন্তিম_পর্ব
#Written_by_Mehebin_Nira (ছদ্মনামী)
কেটে গেছে অনেক গুলো দিন। নিরা তার খালামনি কে নিয়ে অন্য একটা বাসায় থাকছে। নিরা জহির কে অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায় নি। কোনো এক সময় জহির আবার ফিরে আসবে আর আবার যে জেসমিনের উপর হাত তুলবে না, তার কোনো গ্যারান্টি নেই! তাই নিরা সেই বাসা টাই ছেড়ে দিয়ে একটা নতুন বাসা ভাড়া নেয়! নিরা এখন ছোট খাটো একটা জব ও করছে! সেদিন সেখানে আদ্রাজ ও গিয়েছিলো। ডক্টর বলেছিলো যা বিপদের আশঙ্কা ছিলো তার কিছুই হয় নি! বিপদ কেটে গেছে! ভালো ট্রিটমেন্ট পেলে জেসমিন দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবে! হ্যাঁ তাই ঘটেছে জেসমিন এখন পুরোপুরি সুস্থ! সেদিন টাকা গুলো আদ্রাজ দিয়েছিলো! নিরা তা শোধ করে দিবে বলেছিলো কিন্তু আদ্রাজ কিছুতেই তা নিতে চায় নি! এই ব্যাপার টা নিরার কেমন যেনো লাগে! একটা মানুষের কাছে ঋণী হয়ে থাকার কোনো মানে হয় না! মূলত নিরা চাকরি পেয়েছে আদ্রাজের অফিসে এবং কি আদ্রাজের পিএ হিসেবে! দুজনার আর আগের মতো রাগারাগি চলে না। ভালো ও বাসে দুজন দুজন কে কিন্তু কেউ কাউকে তা বলে না। আশা দুজনের মন ভালোই পড়েই নিয়েছে। এখন দেখার অপেক্ষা শেষ পর্যন্ত কি হয়!
_____________________
এদিকে রোহান টোটালি রেডি হয়ে নিয়েছিলো নিরার ক্ষতি করার জন্য। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে একদিন তার নিজের বোন টাকেই কেউ ধর্ষণ করে মেরে ফেলে! এই ঘটনার জন্য রোহান নিজেকে দায়ী মনে করে! সে অন্যের বোনের জীবন নিয়ে খেলেছে আর আজ তার বোন টাই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। নিজের কৃতকর্মের ফল কলিজার টুকরা বোন টা হারিয়ে একদম চেঞ্জ হয়ে যায় সে। সব কিছু ছেড়ে দিয়ে একজন প্রকৃত ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করে! নিরার কাছে এসে ক্ষমা ও চেয়ে যায়।
____________________
নিরা নিজের কেবিন বসে আদ্রাজের কথা ভাবছে। তার বিপদে আদ্রাজ কিভাবে চলে আসে তা এখনো বুঝতে পারলো না নিরা। এমন করতে করতে কিভাবে যে মানুষ টা তার ভরসা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে গেলো তা সে টের ই পায় নি! আর সেই থেকে একটু একটু করে ভালোবাসে ফেলা! হঠাৎ ই আদ্রাজের সেদিন হসপিটালে চলে আসার কথা গুলো মনে পড়ে। টাকা গুলো শোধ করতেই হবে নাহলে যে মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করা ছাড়বে না তা সে ভালোই বুঝতে পারছে! নিরা নিজের কেবিন থেকে উঠে আদ্রাজের কেবিনের সামনে যায়।
‘আমি কি ভেতরে আসতে পারি স্যার?’
‘আসো!’
নিরা মুচকি হেসে ভেতরে আসে। আদ্রাজ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘হুম বলো কেন আসলে?’
‘স্যার আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো!’
‘অফিসের কাজ সম্পর্কিত হলে বলে ফেলো!’
কথাটা অফিসের কাজ নিয়ে নয় তাই নিরা বলে,
‘তাহলে আমি যাই!’
‘কথা টা কি অন্য বিষয়ে?'(ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে)
‘হুম!’
‘অফিস টাইম শেষ হওয়ার পর শুনবো! আর হ্যাঁ আজকে আমি তোমাকে ড্রপ করে দিবো ওকে?’
‘ওকে স্যার!’
নিরা চলে যায়। অফিসের কাজে নিরার মনোযোগ নাই তা আদ্রাজ হাবভাব দেখে বুঝে গেলো। কিন্তু কেন তা বুঝতে পারলো না!
অফিস শেষে একটা রেস্টুরেন্টে যায় দুজন। সামান্য খাওয়া দাওয়া শেষে আদ্রাজ বলল,
‘এবার বলো কথা টা!’
‘আমাকে আপনি কবে ঋণ মুক্ত করবেন বলেন তো!’
‘মানে?’
‘টাকা গুলো আমি শোধ করতে চাই!’
‘ও মাই গড তুমি এখনো সেই টাকা গুলো নিয় পড়ে আছো? আমি আরো ভেবেছিলাম..
‘কি ভেবেছিলেন?’
‘নাহ কিছু না!’
‘প্রশ্নের উত্তর দিলেন না?’
‘সত্যি ই শোধ করতে চাও?’
‘হ্যাঁ অবশ্যই!’
‘তাহলে টাকা নয় অন্য কিছু দিয়ে শোধ করতে পারো!’
‘সেটা কি?’
‘জানিনা!’
কে কাকে ভালোবাসার কথা আগে বলবে সেই আশা নিয়ে বসে আছে। কিন্তু কেউ ই বলে না। আদ্রাজ ভাবছে নিরা বলবে নিরা ভাবছে আদ্রাজ!
এভাবে করে আরো দিন গড়ায়। রাতুল আশা কে বিয়ে করে নেয়! ওরা দুজন চুটিয়ে প্রেম করেছে অনেক দিন! আর এদিকে আদ্রাজ আর নিরা কেউ ই ভালোবাসা টা প্রকাশ ই করতে পারছে না দেখে ভেতরে ভেতরে কষ্ট পাচ্ছে দুজন ই। রাতুল আর আশা খুব চেষ্টা করছে দুজনের মিল করাতে কিন্তু পারছে না। আদ্রাজের জন্মদিন সামনে পড়ে যায়।
আজকে নিরা সেচ্ছায় আদ্রাজের গাড়ি করে যেতে চাচ্ছে দেখে খুব অবাক আদ্রাজ!
‘কি ব্যাপার বলো তো? আজ নিজ ইচ্ছায় আমার গাড়ি তে উঠলে!’
‘তো কি নেমে যেতে বলছেন? আচ্ছা ঠিক আছে নেমে যাচ্ছি!’
‘না না তা কখন বললাম!’
‘তো কি বলেছেন?’
‘আচ্ছা সরি!’
‘আজকে আমি আপনার সাথে আপনার বাসায় যাবো নিয়ে যাবেন?’
আদ্রাজ অবাক ই হচ্ছে শুধু! আজ নিরার হলো টা কি!
‘নিরা তুমি ঠিক আছো?’
‘হ্যাঁ একদম! আশা এসেছে তাই আমাকে যেতে বলেছে! না গেলে খুব রাগ করবে! তাছাড়া একটা স্পেশাল দিন আমি না যাই কি করে!’
‘স্পেশাল দিন মানে?’
নিরা বুঝতে পারলো সে কি বলে ফেলেছে। জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,
‘আশা তো আমার জীবনে একটা স্পেশাল পারসন! তাই না? ও এসেছে মানে স্পেশাল একটা দিন!’
‘তোমার লাইফে আর স্পেশাল কেউ নেই?’
‘উহুঁম!’
আদ্রাজ মন খারাপ করে ফেলে। নিরা তা লক্ষ্য করে মিটমিট হাসে! আদ্রাজ দেখতে পেয়ে বিষয় টা চেঞ্জ করার জন্য বলল,
‘তুমি জানলে কিভাবে যে, আশা আসছে?’
‘ফোনে বলেছে!’
বাকি পথ আরো কোনো কথাই হলো না দুজনের মধ্যে! নিরা কে আসতে দেখে আদ্রাজের বাবা মা নিরা রাতুল খুব খুশি হয়। নিরার কথা আদ্রাজের পরিবার ও জানে। নিরা কে নিজেদের মেয়ের মতোই আদর স্নেহ করেন! আদ্রাজ নিরার খালামনি কেও আসতে দেখে কিছুই বুঝতে পারলো না। আদ্রাজের বার্থদে তে উনাকেও ইনভাইট করেছে আশা। বলেছে অবশ্যই আসতে হবে। নিরা নিজের খালামনি কেও সেখানে দেখে খুশি হয়!
রাত বারোটায় আদ্রাজ কে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য সবাই রেডি হয়ে নেয়। একটা রুমে খুব সুন্দর ডেকোরেশন করা হয়েছে। আদ্রাজ তার জন্মদিনের কথা বেমালুম ভুলে যায়। নিরা কে মনের কথা বলতে না পেরে রাগে দুঃখে বেচারা ঘুমিয়ে গেছে। হঠাৎ ই নিরার ডাকে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে সেটি কে স্বপ্ন ভেবে বলে দেয়,
‘নির পাখি বড্ড জ্বালাচ্ছো আমাকে! আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি কি তা কখনো বুঝবে না?’
নিরা ঘুমের মধ্যে আদ্রাজের বিড়বিড় করা শুনে আদ্রাজের কানের সামনে গিয়ে বলল,
‘হুম মশাই বুঝি তো!’
আদ্রাজ এবার কথাটা শুনে চোখ খুলে ফেলে। ভূত দেখার মতো চমকে উঠে বললো,
‘ত-তু-তুমি?’
নিরা হাসতে হাসতে বলল,
‘হুম আমি! এখন উঠুন! আরে উঠুন না!’
আদ্রাজ কিছুই বুঝতে পারলো না।নিরা আদ্রাজ কে সেই রুম টায় নিয়ে যায়। দরজা খোলার পর অতঃপর সকলে সমস্বরে ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’ বলে তাকে উইশ করে! আদ্রাজ একেবারেই ভড়কে গেছে।
‘ভাইয়া এভাবে হা করে না থেকে কেক টা কাট!’
আদ্রাজ কেট টা কেটে সবাই কে একে একে খাইয়ে দেয়। হঠাৎ ই আদ্রাজ সকলের সামনে নিরা কে প্রপোজ করে বসে। একটা ছোট রিং হাতে নিয়ে হাটু গেড়ে নিরার সামনে বসে বলল,
‘উইল ইউ ম্যারি মি নিরা?’
নিরা হতভম্ব হয়ে যায়। কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। সকলে তাকিয়ে আছে নিরার দিকে। সে কি উত্তর দেয় তা দেখার জন্য! নিরা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়! আদ্রাজ রিং টা নিরার হাতে পড়িয়ে দেয়। সকলে হাত তালি দেয়!
ছাঁদের দোলনায় পাশাপাশি বসে আছে দুজন। আদ্রাজের হাতে নিরার হাত শক্ত করে ধরে রাখা। কারোই মুখে কোনো কথা নেই। আকাশে থালার মতো একটা চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোয় দুজন কে খুব চমৎকার লাগছে। আদ্রাজ নিরার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
‘বুঝে ও বুঝতে পারি নি,
বলবো বলবো করেও বলা হয় নি,
তোমায় ভালোবাসি ঠিক কতখানি,
আজ বুঝেছি এই হৃদ_মাঝারে_তুমি!
আই লাভ ইউ নিরা! আই লাভ ইউ সো মাচ্!’
নিরা শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয়। কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দেয়,
‘আই লাভ ইউ টু!’
বলে লজ্জায় আদ্রাজের বুকে মুখ লুকায় নিরা। আদ্রাজ হাসে! এই হাসি প্রশান্তির! এই হাসি ভালোবাসার! দীর্ঘজীবী হোক ভালোবাসা!
______________সমাপ্ত_________________