#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_০৬
#মোহনা_হক
‘দু থেকে তিনবার বলার পর রুয়াত রাজি হলো আয়াজের কথায়। হুমকিও দেওয়া হয়েছিলো মেয়েটাকে। ইচ্ছে না থাকার পরও আয়াজের কপালের ঘাম মুছে দিলো। মানুষটা কে ভয় পায় রুয়াত। আর যখন কাজটি করছিলো না কথার সাথে সাথে তখন ধমক দিয়েছে আয়াজ। নিজের মান সম্মানের কথা ভেবে রাজি হলো। সামনে একজন ড্রাইভার আছে
কিন্তু সে খেয়াল নেই মানুষটার। ‘
‘বিরক্তসুরে আয়াজ বললো-‘
-‘কথার সাথে সাথে কাজ করতে চাও না কেনো? কি সমস্যা তোমার?’
‘রুয়াত মুখটা ঘুরিয়ে জানালার কাচের কাছে নিয়ে গেলো। তার এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে কাচটা সরিয়ে দিলে ভালো লাগতো। এরকম বদ্ধ গাড়িতে উঠতে মন চায় না তার। বাহিরের বাতাস আসলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যেতো। কিন্তু এখন তো বলা যাবে না। বলবেও বা কি করে?’
‘রুয়াত উত্তর দিচ্ছে না দেখে আয়াজ আবারও গলা ছাড়লো।’
-‘কানে ও কি শুনতে পাও না তুমি?’
‘আচমকা এই কথা শোনায় রুয়াতের চোখ বড় হয়ে গেলো। আয়াজের দিকে ফিরলো সে। মানুষটার চোখ মুখে বিরক্তিকর ছাপ স্পষ্ট। ‘
-‘জ্বী আমি কানে শুনতে পাই।’
-‘তাহলে উত্তর দিলে না কেনো? ‘
-‘দুঃখিত।’
‘আয়াজ মানলো না। রুয়াতের হাত চেপে ধরে বললো-‘
-‘আমার রাগ চরম পর্যায়ে তুলে দুঃখিত বলবেন? একদম মেরে গুম করে দিবো এমন করলে। ভালোভাবে কথা বলছি দেখে গা’য়ে লাগছে না?’
‘রুয়াত একটু খিঁচে বসলো। মাইর কে চরম ভয় পায় সে। আর এই লোকের কথাকে তো যমের মতো ভয় পায়।’
-‘পরেরবার থেকে আর এমন করবো না।’
‘আয়াজ হেসে দিলো। বোকাসোকা মেয়ের বোকা বোকা কথা। এই প্রথম আয়াজের হাসির সাথে পরিচত রুয়াত। তার মনে হলো এটা সবচেয়ে সুন্দর হাসি। রুয়াতের এরূপ চেয়ে থাকা দেখে আয়াজ হাসি বন্ধ করে দিলো।’
-‘মনে থাকে যেনো।’
‘রুয়াত জ্বী বললো। কিন্তু তার মনের কৌতূহল দূর হচ্ছে না। কোথায় যাচ্ছে সেটাই তো জানা হলো না। দেরি হলে তো তার মা চিন্তা করবে। কখনো কি কলেজ ছুটির পর কোথায় গিয়েছে নাকি। আজ নিশ্চিত তার মায়ের হাতে মা’ই’র খাওয়া লাগবে। এবার রুয়াত সাহস করে বলেই দিলো।’
-‘আমাকে কোঁথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’
‘আয়াজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রুয়াতের দিকে।’
-‘তুমি কি একা যাচ্ছো নাকি? আমিও তো যাচ্ছি দেখছো না।’
-‘দেখেছি। কিন্তু কোঁথায়?’
-‘আপাতত চুপ থাকো। গেলেই দেখতে পাবে।’
‘রুয়াত চুপ হয়ে রইলো। কথাটি খারাপ লাগলো তার। কিন্তু কিছু বললো না। শুধু চুপ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। গাড়ি ছুটে যাচ্ছে আপন মনে। তার নিজ গন্তব্যের দিকে। আশেপাশের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সেদিকটায় মন তার। কিছু সময় বাদে গাড়ির কাচ খুলে দিলো আয়াজ। অবাক হয়ে পাশের মানুষটার দিকে তাকালো রুয়াত। লোকটি তাকাচ্ছে না। সিটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চুপ করে আছে। আবার তৎক্ষনাত চোখটা সরিয়ে ফেললো। এক চিলতে হাসি ফুঁটে ওঠলো। এখন আর খারাপ লাগছে না তার। বাহিরের ঠান্ডা বাতাস গাড়িতে ঢুকছে। মনে শান্তি শান্তি অনুভব হচ্ছে।
প্রেয়সীর হাসি খেয়াল করেছে আয়াজ। পাশে এক সুন্দরী রমণী বসে আছে। তাও আবার হাতে হাত রেখে। আর কি লাগে তার! হোক না হাত রাখাটা একজনের ইচ্ছায়। ভালো লাগাটাই হচ্ছে আসল কথা। এমন সুন্দর মুহুর্ত বারবার পেতে চায়।’
‘গাড়ি থামলো একটা লেকের সামনে। যা শহর থেকে খানিকটা দূরে। প্রেয়সীর সাথে সময় কাটানোর জন্য ভালো একটা জায়গা মনে হয়েছে আয়াজের। তাই এখানেই নিয়ে আসলো। গাড়ি থেকে নামলো। কিন্তু রুয়াত বসে আছে। সে নামছে না। আয়াজ চায় মেয়েটার সামনে রাগ না দেখাতে কিন্তু এমন কাজ কর্মে না চাইতেও রাগ চলে আসে।’
-‘তোমাকে আমি এখন কোলে করে নামাবো না সো নিজ ইচ্ছায় বের হয়ে আসো।’
‘রুয়াত লজ্জা পেলো। অচেনা জায়গায় বেশ অস্বস্থি হয় তার। তাই নামছিলো না।’
‘রুয়াত নামার পর হাতটা ধরলো আয়াজ। রুয়াত তাকালো আয়াজের দিকে। আয়াজ আজ সাদা রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে। তাই রুয়াতের কলেজের ইউনিফর্মের সাথে মিলে গিয়েছে। জায়গাটা অচেনা আবার এসেছে এই অবস্থায়। একটুও ভালো লাগছে না তার। এখানে বেশি মানুষ না থাকায় ভালো হয়েছে নাহলে আজ তার ই’জ্জ’ত চলে যেতো।’
‘লেকের ভিতরেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে সোজা ঢুকে পড়লো। কিন্তু রুয়াত অবাক। তার বোন, জাফরি, আর জিজু বসে আছে। তাদের সামনের চেয়ারে আয়াজ বসে পড়লো। তার বোন যে এখানে আসবে বা থাকতে পারে সে মোটেও ভাবতে পারেনি। বোনের কাছে এভাবে ধরা খেয়ে ভীষণ লজ্জিত। আয়াজ রুয়াতের হাত ধরে টান দিয়ে বসালো তার পাশের চেয়ারে।’
‘ইনিমা একটু মজা নেওয়ার জন্য বললো-‘
-‘রুয়াত চিনতে পেরেছিস আমায়?’
‘রুয়াত মাথা নাড়লো। কিন্তু আয়াজের রাগ হলো। ইনিমার উদ্দেশ্যে বললো-‘
-‘দেখেছেন ভাবি মুখে কথা বলেনি। ওর সমস্যাট কি সেটাই ধরতে পারলাম না। সব সময় ইশারা। আমার কপালে আসলেই জুটেছে একটা।’
‘ইনিমা কিছু বললো না। তার বোনের যে এ স্বভাব আছে সেটা ভালো করেই জানে। তাই সে চুপ থাকলো। এর মাঝে আরহাম উত্তর দিলো।’
-‘আমার শালীকা অনেক ভালো। অন্তত তোর থেকে হাজার গুণে ভালো আছে। ‘
‘আয়াজ তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
-‘তাই! ভাবি আপনি না আপনার পাশের এই আধ পাগলটা কে সহ্য করতে পারেন না?’
‘লজ্জায় আরহামের মুখটা কালো হয়ে গেলো। ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের এরূপ তফাৎ। আয়াজের পাশে থাকা রুয়াত ফিক করে হেসে দিলো। ইনিমা তো কথায় সম্মতি দিয়ে দিয়েছে। পাশ ফিরে আয়াজ একবার তার প্রেয়সী কে দেখে নিলো। হাসছে মেয়েটা।’
‘আরহাম আর লজ্জা সইতে না পেরে বললো-‘
-‘আমি আধ পাগল এখন হইনি রে বোকা বিয়ের পর পাগল হয়েছি। তুইও আমার মতো পাগল হবি। তাই আগে আগেই শুভকামনা জানিয়ে রাখলাম।’
-‘ বিয়ের পর তোমার শালীকা পাগল হবে, আমি না।’
-‘হয়েছে সেটা দেখতেই পাবো। কিছু ওর্ডার দে। তোদের জন্য এতক্ষণ বসেছিলাম।’
‘আয়াজ ওর্ডার করলো না। ইনিমা কে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হলো। আয়াজ জাফরির সাথে খেলতে ব্যস্ত। একবার জড়িয়ে ধরছে তো আবার চুমু দিচ্ছে। রুয়াত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। যা মনেহয়
আয়াজ ছোট্ট বাচ্চাদের খুব আদর করে। আর জাফরিও তার একমাত্র চাচ্চুর সাথে খেলছে। জাফরি এক একটা প্রশ্ন করছে আর আয়াজ উত্তর দিচ্ছে।’
-‘আয়াজ ইকরামুল তাহের নাকি এবার এমপি পদে দাঁড়াবে আদোও কি কথাটা সত্যি?’
‘আরহামের কথায় সবাই তাকালো তার দিকে। শান্ত কন্ঠে আয়াজ বললো-‘
-‘হ্যাঁ। ‘
-‘তুই ও তো এমপি পদে দাঁড়বি। তাহলে?’
-‘সমস্যা কোঁথায়?’
-‘তুই এভাবে শান্ত হয়ে বসে আছিস কিভাবে?’
‘আরহামের কথায় বিরক্ত হলো আয়াজ।’
-‘এখন কি অশান্ত হয়ে বসে থাকবো?’
‘আরহাম বুঝলো না আয়াজের এরূপ শান্ত হয়ে বসে থাকার কারণ।’
-‘তুই কি মারামারি করবি এবার?’
‘আয়াজ একবার রুয়াতের দিকে তাকালো। মেয়েটার মুখটা ছোট হয়ে এসেছে। পাঞ্জাবীর কলার একটু টেনেটুনে বললো-‘
-‘সে যদি ওরকম কিছু করে তখন ভেবে দেখবো। আর করলে মারামারির জন্য একটুও হাত কাঁপবে না।’
-‘কিছু ভেবেছিস ইলেকশন নিয়ে?’
-‘এখনো অনেক সময় আছে ভেবে দেখার।’
‘আরহাম কথা বাড়ালো না। তার ভাই অতাত্ত্বিক সাহসী। নাহলে কি আর এরকম প্রফেশনে টিকে আছে! আয়জের সুনাম বেশি তাই জিতার সম্ভাবনা ও বেশি৷
রুয়াতের মনটা একদম ছোট হয়ে এলো। দুশ্চিন্তায় ভালো লাগছে না। কিছুদিন এই বিষয়টা ভুলে গেলেও আবার নাড়া দিচ্ছে মনের ভিতর। রুয়াতের কাছে রাজনীতি মানে মরামারি ,খুন, হানাহানী। এর ভালো কিছু আছে বলে মনে হয় না তার। আয়াজের ও তার ভবিষ্যৎ কি? কেমন হবে আসলে? একটু একটু করে মেনে নেওয়া শুরু করেছে সে। যদি এর আগেই তার বিশ্বাস ভরসা সব ভেঙে যায়? তাহলে? ‘
‘খাওয়া শেষ করে আরহাম আর ইনিমা হাঁটছে। রুয়াতের কোলে জাফরি বসে আছে। আর আয়াজ কথা বলছে ফোনে। হঠাৎ আয়াজ রুয়াতের হাতটা ধরলো। রুয়াত আয়াজের দিকে তাকালো। হাতের উল্টো পিঠ তার অধর বরাবর রাখলো। যার কারণে আয়াজ কথা বললে বারংবার স্পর্শ হয় হাতে। মুখ বুজে সহ্য করে নিলো রুয়াত।’
‘আয়াজের কথা বলা শেষে ফোন কেটে দিলো। রুয়াতের কোল থেকে জাফরি কে এনে তার কোলে বসালো। কিন্তু রুয়াতের হাত ছাড়লো না।’
‘জাফরির মাথার চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বললো-‘
-‘জাফরি তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো? আমায় না তোমার মিম্মিম কে?’
‘রুয়াত খুব আগ্রহী হয়ে তাকিয়ে আছে জাফরির দিকে। নিশ্চয়ই জাফরি তার নাম বলবে না তার চাচ্চুর সামনে। কারণ আয়াজ জাফরিকেই বেশি আদর করে।’
‘জাফরি হেসে দিয়ে বললো-‘
-‘দুজনকেই ভালোবাসি। ‘
‘আয়াজ জড়িয়ে ধরে বসে রইলো বাচ্চাটা কে। এই কথা আয়াজ জাফরিকে আগেই শিখিয়েছে। বলা হয়েছে তার মিম্মিমের সামনে জিগ্যেস করলে বলবে দু’জনকেই। কোনো কারণেই তার প্রেয়সীর মনটা ছোট করবে না সে।’
‘জাফরি দৌড়ে চলে গেলো তার বাবা মায়ের কাছে। আয়াজ তার হাত একটা হাত রুয়াতের কাঁধে রাখলো।’
-‘কতো চুপ থাকতে পারো তুমি?’
‘রুয়াতের থেকে কোনো রেসপন্স পেলো না। আবার ও বললো-‘
-‘কথা বলো। ‘
-‘জ্বী।’
-‘আর কিছু বলতে পারো না? শুধু জ্বী জ্বী।’
‘রুয়াত অস্পষ্ট স্বরে বললো-‘
-‘কি বলবো?’
‘আয়াজ রুয়াতের কাঁধে নিজের মাথাটা ফেলে বললো-‘
-‘তুমি তোমার অধর আমার গালে ছুঁয়ে দিয়ে শুধু বলবে আমি আপনাকে ভালোবাসি। শুধু আপনাকেই।’
‘রুয়াতের আর সহ্য হলো না আয়জের মাথাটা সরিয়ে দিলো।’
-‘এসব ভালো লাগছে না।’
‘আয়াজ হেসে দিলো। রুয়াতের গালে আলতো করে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বললো-‘
-‘বলেছিলাম তুমি আমায় তোমার ভয়ংকর প্রেমিক হিসেবে দেখবে। এটা ছিলো আমার দেওয়া তোমাকে প্রথম ভালোবাসা। ‘
#চলবে…
[আসসালামু আলাইকুম। ব্যস্ততার কারণে পার্টটা একটু ছোট হয়েছে। সামনে তো ঈদ বুঝতেই পারছেন। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_০৭
#মোহনা_হক
‘আজ জাফরির জন্মদিন। তিন বছর পূর্ণ হয়ে গেলো ছোট মেয়েটার। তাই মজুমদার বাড়ি থেকে সবাই যাবে চৌধুরী বাড়িতে। রুয়াত সেদিনের পর থেকে আর যায়নি আয়াজের সামনে। ইনিমার থেকে রুয়াতের নাম্বার নিয়ে কল ও দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু কোনো মতেই রুয়াত আয়াজের সাথে দেখা বা কথা কিছু বলেনি। আজ কিভাবে সে মানুষটার সামনে উপস্থিত থাকবে সেটা নিয়েই ভাবছে। সন্ধ্যায় সবাই যাওয়ার কথা ও বাড়িতে। সবাই রেডি হচ্ছে। আর রুয়াত এখনো বসে আছে।’
‘মেহরুবা ফাইরোজ রুয়াতের রুমে এসে দেখলেন রেডি না হয়ে খাটে বসে আছে এখনো। ধমক দিয়ে বললেন-‘
-‘তুই এখনো রেডি না হয়ে বসে আছিস কেনো? একটু পরেই তো তোর বাবা চিল্লাবে আমার উপর। মেয়েদের দোষ তো দেখে না তিনি তো মনে করেন সব দোষ আমার।’
‘রুয়াত বিরক্ত হয়ে বললো-‘
-‘তোমরা যাও না। আমার ভালো লাগছে না।’
‘মেহরুবা যেনো আরও রেগে উঠলেন মেয়ের কথায়।’
-‘তুই না জাফরির মিম্মিম? বোনের মেয়ের জন্য দেখছি একটু মায়া নেই তোর। আমি কিন্তু এখনই ইনিমা কে কল দিয়ে বলবো তুই এমন করছিস।’
‘ইনিমার কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠে পড়লো।’
-‘না মা বলো না। আমি তাড়াতাড়ি করে রেডি হবো।’
-‘আচ্ছা ঠিক আছে শাড়ি পড়বি তুই।’
‘মেহরুবা একটা হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি বের করে দিলো। রুয়াত পড়তে চাচ্ছিল না কিন্তু তিনি জোর করে পড়িয়ে দিলেন। এমনিও সেদিনের পর থেকে রুয়াত দেখা করেনি কথা বলেনি। আয়াজের সামনে আজ এভাবে গেলে তো নিজের কাছে নিজেকেই অস্বস্থি লাগবে। আর তার মায়ের কথা তো ফেলে দেওয়া যাবে না।’
‘সবাই রওনা হলো চৌধুরী বাড়ির উদ্দেশ্যে। ভালোই জমজমাট করে সাজানো হয়েছে বাড়িটা কে। বাহির থেকেই বোঝা যাচ্ছে সব। বেশ কিছু অপরিচিত মানুষ ও দেখা যাচ্ছে। রুয়াত ঘোমটা টেনে বাসার ভিতর প্রবেশ করলো। অনেকদিন পর এই বাড়িতে আসা তার। ইনিমা তার মা বাবা কে দেখে দৌড়ে আসলো। মায়া চৌধুরী ও আসলেন। রুয়াত চারপাশ খুঁজে ও আয়াজ কে দেখলো না। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বললো রুয়াত। হান্নান মজুমদার কে ফজলুল চৌধুরী নিয়ে গেলেন তার সাথে। মেহরুবা ফাইরোজ মায়া চৌধুরীর সাথে। বাকি রইলো রুয়াত। এতো মানুষের সামনে এখন নিজেকে বেশ অসহায় অসহায় লাগছে। ইনিমার পিছু নিলো রুয়াত।’
‘ইনিমা রুয়াতের হাত ধরে রান্নাঘরে নিয়ে গেলো। সে কাজ করছে আর রুয়াত দাঁড়িয়ে আছে।’
-‘তুই কেনো আয়াজের সাথে কথা বন্ধ করেছিস?’
‘বহু চেনা পরিচিত নাম শুনে ধক করে উঠলো রুয়াতের বুক। আয়াজের সাথে কথা বন্ধ করেছে এ কথা ইনিমা কিভাবে জানে?’
-‘তুমি কিভাবে জানো?’
‘ইনিমা পায়েসের উপর বাদাম ছিটিয়ে দিতে দিতে বললো-‘
-‘আয়াজ বলেছে। অনেকবার তোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে ছেলেটা কিন্তু বরাবরের মতো ফিরিয়ে দিয়েছিস সব জানি আমরা।’
-‘মানে আর কে কে জানে?’
-‘ আমি, আরহাম আর মা।’
‘রুয়াত অবাক হলো মায়া চৌধুরীর কথা শুনে।’
-‘আন্টিও জানেন? কিভাবে?’
-‘আয়াজ বলেছে। তুই একদম বেশি বেশি করছিস। এইতো সামনেই তোর এক্সাম তারপর এক্সাম শেষ হলেই তো বিয়ে। এখন যদি একটু একটু করে মেনে না নিস তাহলে ধরেই মেনে নিতে পারবি? ও কিন্তু তোর ভালোর জন্য বিয়েটা আগে আগেই দেয়নি। আমি বুঝিনা তোর এতো কিসের সমস্যা? ওর মতো ছেলে পেতে হলে ভাগ্য লাগে। তুই তো চাসনি কিন্তু দেখ তোর ভাগ্যই পড়েছে। মাথায় কিছু নাই তোর। সব উল্টো পাল্টা জিনিস নিয়ে থাকিস। ‘
‘রুয়াত মাথা নিচু করে ফেললো।’
-‘আন্টি কে বলার কি দরকার ছিলো?’
‘ইনিমা বললো।’
-‘আমি না আয়াজ বলেছে। তুই ওর সাথে কথা বলিস। অবশ্য সে বলবে কিনা তা সন্দেহ আছে।’
‘রুয়াত ব্যস্ত হয়ে বললো-‘
-‘কেনো বলবে না? আচ্ছা ওনি কোঁথায়? দেখলাম না একবারও। ‘
-‘তুই যেভাবে ইগ্নোর করেছিস না বলাই উচিৎ। আর ও কোনো দরকারে বাহিরে গিয়েছে বোধহয়। তুই এখন জাফরির কাছে যা। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে না। অনেক গরম এখানে।’
‘রুয়াত চলে আসলো না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। নিজের কাজে জন্য এখন তার সংকোচ বোধ হচ্ছে। ওরকমটা করা একদম উচিৎ হয়নি। কিন্তু সে ও বা কি করবে আয়াজের ওরকম কান্ডে তার ভীষণ লজ্জা লেগেছিলো। এর জন্য দু’দিন কলেজ ও মিস দিয়েছে। লোকটার আগে বোঝা উচিৎ ছিলো মেয়েটা কে। সে কি অভ্যস্ত নাকি? কিভাবে এখন সামনে দাঁড়াবে সে নিয়ে চিন্তা করছে। আর মায়া চৌধুরী ও জেনে গিয়েছেন, এবার যদি কথা না বলে তাহলে নিশ্চয়ই খারাপ ভাববেন। সবাই তো আর সত্যিটা জানে না। শুধু জানে রুয়াত কথা বলছে না। মেয়েটার মনে অনেক চিন্তা হচ্ছে। আয়াজ তাকে দেখে কিরূপ আচরণ করবে? যাই হোক একবার সরি বলে দিবে লোকটা কে।’
‘রুয়াত ইনিমার পাশে এসে দাঁড়ালো।’
-‘আপু ওনাকে একবার সরি বললে হবে না?’
‘ইনিমা খুশি হলো বোনের কথায় কিন্তু প্রকাশ করলো না তা। তার বোন অবশেষে লাইনে আসছে।’
-‘আমি কি জানি? তোর টা তুই বলবি।’
‘রুয়াত মানতে পারলো না।’
-‘আপু বলো না কিছু। সরি বললে হবে তো।’
-‘তোর ইচ্ছে।’
‘রুয়াত কথা বাড়ালো না আর। যে করেই হোক আজ সরি বলবেই। সরি বলাটা প্রতিজ্ঞা হিসেবে ধরে নিলো। ভয়ে আছে না জানি আয়াজ কি বলে তাকে। রুয়াত ইনিমার রুমে এসে শুয়ে পড়লো। ধীরে ধীরে মানুষের সমাগম বাড়ছে। এমপির বাড়ি বলে কথা মানুষ তো থাকবেই। তবে সব সময় থাকে না যখন বড় করে কোনো অনুষ্ঠান হয় তখন। শাড়ি পড়ে এভাবে অচেনা মানুষদের সামনে থাকতেও লজ্জা লাগছে।’
(*)
‘চেয়ারে বসা আয়াজ চিন্তায় মগ্ন। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সাহেদ। ইকরামুল তাহের আয়াজের লোকদের হুমকি দিয়েছে। সামনেই অনেক বড় কাজ রয়েছে। এর মাঝেই ইকরামুলের হুমকি। উদগ্রীব হয়ে সাহেদ বললো-‘
-‘স্যার ইকরামুল তাহের কে পাল্টা জবাব দিতে হবে। এভাবে চুপ করে বসে থাকলে হবে না স্যার।’
-‘দিবো শুধু সময় হোক। যা কিছু করছে সবগুলোর জবাব ফিরিয়ে দিবো। ওর ধারণায় ও আসছে না ইকরামুল কার সাথে লাগতে এসেছে।’
-‘আমাদের দলের লোকেরা ভয়ে আছে স্যার। তারা তো আর কাজ করতে চাইছে না।’
‘মাথায় অনেক চিন্তা এসে জমা হচ্ছে এক এক করে। মনকে শান্ত রাখতে পারছে না আয়াজ। ইকরামুল কে কড়ায়গণ্ডায় হিসেব বুঝিয়ে দিবে।’
-‘শুনো ওর দোকান যা আছে সব বন্ধ করার ব্যবস্থা করো। ওর সব কুকীর্তির কাহিনী বের করার চেষ্টা করো। অনেক মানুষের টাকা খেয়েছে সেগুলোর প্রমাণ খোঁজার চেষ্টা করো। এরপর দেখবো কিভাবে এমপি পদে দাঁড়ায়। এখন সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে ওর নামে যতো বা’জে কাজ জড়িত রয়েছে সব কাজ মানুষের কাছে উপস্থাপন করা। আর হুমকি দেওয়া তাই না! বাকিটা আমার কাছে ছেড়ে দেও। ইকরামুলের ই এর অস্তিত্ব মুছে ফেলবো একদম। ভালো চেহেরাটা দেখিয়েছিলাম তার পছন্দ হলো না। এবার নাহয় খারাপটাই দেখুক তাহলে। ‘
-‘স্যার আজকে থেকেই সব কাজ শুরু করে দিবো?’
-‘হুম। আচ্ছা আমি এখন আসি।’
‘আয়াজ বেরিয়ে পড়লো অফিস থেকে। মায়া চৌধুরী বারবার বলে দিয়েছে সে যেনো তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে। তাই আর দেরি করলো না। ইকরামুলের ব্যাপারটা আজকের মতোই এখানেই ক্লোজ করে দিলো। আজ আর ড্রাইভার নিলো না। নিজেই ড্রাইভ করে চলে আসছে বাসায়।’
(*)
‘বাসায় আসার পর প্রথমেই মেহরুবা কে দেখলো। সালাম দিয়ে কথা বললো। নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ‘জাফরি জন্য যে গিফট গুলো এনেছে সেগুলো নিয়ে ইনিমার রুমের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।’
‘রুয়াত শুয়ে আছে। আর জাফরি পেটের উপর বসে আছে। হেসে হেসে কথা বলছে দু’জনে। এমন সময় আয়াজ আসলো। রুয়াত কারো আসার শব্দ শুনে তাকালো দরজার দিকে। আয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। আয়াজের সর্বপ্রথম চোখ পড়লো রুয়াতের উপর। আবার তৎক্ষনাত চোখটা সরিয়ে নিলো সে।’
‘শান্ত কন্ঠে আয়াজ বললো-‘
-‘জাফরি এখানে আসো।’
‘জাফরি হুড়োহুড়ি করে চললো আয়াজের কাছে। রুয়াত উঠে বসেছে। সুন্দর করে শাড়ি টেনেটুনে দিলো।’
‘আয়াজ জাফরির হাতে গিফটটা দিয়ে দিলো। বাচ্চাটা গিফট না খুলেই মহাখুশি।’
-‘জাফরি মা ডাকছে তোমায়। তুমি তোমার মায়ের কথা শুনে আসো যাও।’
‘জাফরি চলে যাওয়ার পর আয়াজ দরজা আটকে দিলো। রুয়াতের সাথে বেশ বোঝাপড়া বাকি আছে। পাগলের মতো ঘুরিয়েছে তাকে।
‘দরজা আটকানো দেখে রুয়াত ঘাবড়ে গেলো। আবার অন্য কিছু করবে নাকি? আনমনে শাড়িতে হাত চেপে ধরলো। ‘
‘বুকে হাত গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে একদম কাটকাট স্বরে বললো-‘
-‘প্রথমত বলছি আমি তোমার সাথে রো’মা’ন্স করতে আসিনি। এভাবে শাড়ি চেপে ধরে কি প্রমান করতে চাইছো?’
‘রুয়াত আয়াজের রাগ উঠার আগেই বললো-‘
-‘না আসলে তেমন কিছু না।’
‘আয়াজ অবাক হলো এই প্রথম মনেহয় সে রুয়াতের সাথে এক কথা একবার বলার পরেই উত্তর দিয়েছে। নাছোড়বান্দা বানিয়ে ছাড়ে মেয়েটা তাকে।’
-‘আমি যে এতো কল দিলাম, মেসেজ দিলাম, দেখা করতে চাইলাম ফিরিয়ে দিয়েছো কেনো? কেনো দিয়েছে বলো? তোমার ভাগ্য ভালো তোমার সামনে এক্সাম দেখে তুমি সময় পাচ্ছো। নাহলে আমাকে এভাবে ইগ্নোর করার পানিশমেন্ট এমন ভাবে দিতাম, যেনো পরেরবার ভুলেও এমন কাজ করার সাহস না পাও।’
-‘দুঃখিত।’
-‘তোমার এই কথায় চরম বিরক্ত আমি। ভেবেছিলাম তোমায় তুলে এক আছাড় দিবো কিন্তু তা দেওয়া যাবে না।’
‘আয়াজ চেয়ার টেনে রুয়াতের একদম সামনে এসে বসলো। দূরত্ব কম তাদের মাঝে। সে খেয়াল নেই আয়াজে।’
-‘আজ শাড়ি পড়ার কারণ?’
‘রুয়াত সাথে সাথে উত্তর দিলো।’
-‘মা বলেছে পড়তে।’
‘আয়াজ রুয়াতের শাড়িটার একপাশ ধরলো।’
-‘অধিকার বোধের জন্য নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে হয় বুঝেছো।’
‘রুয়াতের এভাবে শাড়ি পড়া দেখে আয়াজের রাগ নিমিষেই উধাও। মেয়েটার ভিতরে কি যে আছে সেটাই বোঝা মুশকিল। অশান্ত মনে কে শান্ত করার উপায়। মাতাল স্বরে বললো-‘
-‘অসম্ভব সুন্দর লাগছে প্রেয়সী। ‘
#চলবে….
[আসসালামু আলাইকুম। কাল ঈদ তাই কাল গল্প দেওয়া হবে না। কেউ অপেক্ষা করবেন না। আর রুয়াত কে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় আছি😒। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]