#হৃদয়জুড়ে_বিষন্নতা
#পর্বসংখ্যা_৯_ও_১০
#আনিশা_নিঝুম
পলাশী আপুর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না! কথাটা শুনেই আমার মাথায় বাজ পড়লো। হাত পা ভয়ে থরথর কাঁপতে লাগলো। নিজের রক্তের চেয়েও বেশি ভালোবেসে যাওয়া আপুটা নিখোঁজ! এরচেয়ে শোকের কিই বা আছে। আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে ত্রিধারের পানে তাকালাম। তিনি চিন্তিত ভঙ্গিতে কাকে যেনো ফোন দিচ্ছেন। প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হলেও, গলা থেকে আওয়াজ বের হলো না। নতজানু হয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম।
ত্রিধার আমার কাছে এসে পাশে বসলে আশ্বস্ত করলেন, বললেন,’স্নিগ্ধতা! চিন্তা করো না, পলাশীকে যে করেই হোক আমি খুঁজে বের করবো।’
বলে পরম আবেশে হাত বুলালেন আমার চুলে। ততক্ষণে কান্না থামিয়ে আমি তাকে বললাম,’এর পেছনে কাদের হাত থাকতে পারে?’
ত্রিধার নিচুস্বরে জবাব দিলেন,’মঈনুল রশীদের সম্ভবত।’
ত্রিধারের কথায় হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি। পলাশী তো তার নিজের সন্তান! তাহলে তার ক্ষতি কিভাবে করতে পারেন তিনি? মানুষ এতোটাও নিচে নামতে পারে ছি! পলাশী আপু মানুষটা কি ভালো! তবুও কেনো বারবার তার সাথে এইরকম হচ্ছে? হয়তো তার পিতার পাপের বোঝা তাকে টানতে হচ্ছে। আসলে কি! এর সঠিক বিশ্লেষণ ইহ জীবনে কেউই দিতে পারবে না! সবই ভাগ্যের উপর।
১০.
আলোয় জ্বলজ্বল করে উঠলো ঘরটি। পলাশী পিটপিট করে তাকালো। মাথা ঘুরিয়ে উঠলো পলাশী, নিভু নিভু চোখে চারদিকে চোখ বুলালো! ত্রিধার আর স্নিগ্ধকে একা রেখে সে একটু বাহিরে গিয়েছিলো হুট করে এক কালো গাড়ি এসে তার সামনে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে একজন বেরিয়ে পলাশীর হাত ধরলো খপ করে পলাশী প্রতিক্রিয়া দেখাবে তার আগেই পিছন থেকে লাঠি দিয়ে আঘাতকরা হলো মাথায়। চোখের সামনেই নিজেকে ধরা দিতে দেখলো পলাশী। চোখ খুলেই নিজেকে বিশাল এক খালি গার্মেন্টসে আবিষ্কার করলো। পলাশী ঝিম ধরা মাথায় হাত ঠেকালো। হাত নামিয়ে দেখলো তার রক্তাক্ত হয়ে রয়েছে। পলাশীর হাত কাঁপতে লাগলো রক্ত দেখে তখনই কেউ বলে উঠলো,’সামান্য রক্ত দেখেই কাঁপছিস আবার বিড়ালের মতো কলিজা নিয়ে লড়তে মাঠে নেমেছিস কেন?’
পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে পলাশী তাকালো। নিজের বাবাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলো, তারচেয়েও বেশি অবাক হলো নিজের ভাই ও মাকে দেখে৷ রাফাত মাথা হাত দিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,’তোমার জন্য ওই আফশান ফায়াজ পুরো মাথাই ফেটে দিয়েছে আমার।’
মাথা দেখিয়ে বলল,’এইযে দেখো ব্যান্ডেজও লেগেছে। রাস্কেল একটা! ওকে তো পেলে পু তেই দেবো আমি।’
মঈনুল রাফাতকে হাত উঁচিয়ে থামতে বললাম। রাফাত একবার তাকিয়ে নিজের শরীর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো। মোহনা যেনো মেয়ের চোখের সাথে চোখ মেলাতে পারছেন না! বড্ড আদুরে মেয়ে তার। জামাতার মৃত্যুতে মেয়ের ভেঙ্গে পরা দেখে ভীষণ ভেঙ্গে পরেছিলেন তিনি। কেউ জানুক আর না জানুক তিনি তো মেয়ের কষ্ট বুঝেন! মেয়েটাও তাকে ভালোবাসে সবার চেয়ে বেশি।
‘আমার মেয়ে হয়ে আমার সাথে কিভাবে বিশ্বাসঘাতকা করলি?’
পলাশী মঈনুলের কথায় তাচ্ছিল্য হাসলো,বলল,’এটা বিশ্বাসঘাতকতা হলে আপনি যা করেছেন তা কি?’
‘বাংলাদেশে এমন বহু আর্মি আছে যারা আড়ালে আড়ালে এইসব কাজ করে। সেহেতু এইগুলো অস্বাভাবিকের কিছু নেই।’
‘নেই? আচ্ছা নেই! তবে আমার বিশ্বাসঘাতকতাও স্বাভাবিক। আপনি করেছেন দেশের সাথে আমি করেছি আপনার সাথে। মিল আছে না আমাদের বাবা মেয়ের? দুইজনই বিশ্বাসঘাতক! হাহ!’
মঈনুল রেগে সজোরে চড় লাগালেন পলাশীকে। পলাশীর অধর বেয়ে গড়িয়ে পড়লো টুপ করে রক্ত। মোহনা চাইলেন মেয়েকে ধরতে পলাশী হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো কর্কশ গলায় বলল,’আমাকে ছুঁয়েছেন তো আপনার এই হাত কেটে দিবো আমি।’
মোহনা দমে গেলেন। মুখ কাচুমুচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন এক জায়গায়।
পলাশী মঈনুলকে প্রশ্ন করলো,’আপনি নয়নকে কেনো মেরেছেন?’
‘তুমি জানলে কি করে? আমি নয়নকে মেরেছি?’
‘আপনার এই হাতের আংটিই তার প্রমাণ! এই অবিকল আংটি আমি ওইদিন হত্যাকারীর হাতে দেখেছি! কিন্তু ফ্যাক্ট সেটা না! আপনি কেনো মেরেছেন নয়নকে? আমার নয়নকে এতো কষ্ট কেনো দিয়েছেন? নিজের মেয়েকে বিধবা করে কি পেলেন আপনি? নিজের মেয়ের সঙ্গিকে এইভাবে মারতে বুক কাঁপলো না আপনার?’
‘মেরেছি বেশ করেছি! ও আমার কীর্তিকলাপের সম্পর্কে সব জেনে গিয়েছিলো। ও এটা নিয়ে কাউকে কিছু বলার আগেই আমি ওকে মেরে দিয়েছি। আমি কেয়ার করি না এতে কে বিধবা হলো!’
‘আপনার নামে মাত্র মেয়ে আমি! কেয়ার করবেনই বা কেনো?’
‘তোমার নয়নের কাছে যাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে, আপু?’ ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলল রাফাত। পলাশী রাগে রি রি করতে করতে বলল,’খবরদার নিজের ওই পাপী মুখ দিয়ে আমায় আপু বলবি না! তোর আপু মরে গিয়েছে! যাকে ছোট থেকে এতো ভালোবেসে বড় করলাম দিনশেষে সেই আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিলো।’
‘আমি স্নিগ্ধকে ভালোবাসতাম।’
‘নাহ! বাসতি না তুই! স্নিগ্ধকে ভালোবাসতি না! তুই ওর সহায় সম্পত্তিকে ভালোবাসতি! লোভী একটা,কুলাঙ্গার তুই।’
‘আপু!’ রাফাত চিল্লিয়ে বলে উঠলো। মঈনুল থামালেন। রাফাত ফোস ফোস করতে করতে ক্ষুদ্ধ চোখে তাকালো পলাশীর দিকে। পলাশী মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
‘বাবা যা করার জলদি করো! আফশান ফায়াজ খোঁজ পেয়ে গেলে আমার আমাদের প্রব্লেম হবে।’
মঈনুল ছেলের কথা সহমত পোষণ করলেন। এতক্ষন পর মোহনা মুখ খুললো, কাঁদতে কাঁদতে বললেন,’মঈনুল অন্তত নিজের মেয়ের প্রাণটা ভিক্ষা দাও! এতোটা নিষ্ঠুর হওয়ো না! রাফাত তুই তো বোনকে বাঁচা। এই বোন কতই না কষ্ট সহ্য করে করে তোকে মানুষ করেছে!এর ক্ষতি চাইবি তুই?’
রাফাত বিরক্ত হলো। জবাবে বলল,’আমরা নিষ্ঠুরই! নিজের স্বার্থে যে কাউকে মারতে পারি। তুমি বেশি কথা বললে তোমাকেও মেরে দিবো।’
রাফাতের এরূপ হিংস্রতা দেখে আতকে উঠলেন মোহনার৷ এতো বছর পর আবারো সেই দৃশ্যপট ভেসে উঠলো। অনন্তা ও এইভাবে আকুতি করেছিলো সে শোনেনি! মেরে দিয়েছে তাকে। আজ সেই কাহিনী আবারো হচ্ছে শুধুই তার আর তার মেয়ের সাথে। নিজের পাপের প্রায়শ্চিত করতে করতে মেঝেতে বসে পড়লেন তিনি! আকুতি ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,’আমাকে মেরে ফেল! এই জীবন রাখবো না আমি! আমার পাপের বোঝা আমার মেয়ে টানছে আমি তা সহ্য করতে পারবো না। আমি ম রে যাবো! রাফাত আমায় তুই মে রে ফেল! নিজ থেকে মরার চেয়ে অন্যের হাতেই ম রা ভালো!’
মোহনার এহেন পাগলামীতে রাফাত পিস্তল দিয়ে ভয় দেখাতে গেলে কান্ড ঘটিয়ে ফেলে। মোহনা সেই পিস্তল টেনে নিজের বক্ষে চেপে বলে,’আমি ম রে যাবো!’
এরপর পলাশীর দিকে তাকিয়ে বলে,’ মা রে মাফ করে দিস আমায়। এই মা একই ভুল করেছিলো বহু বছর আগে। এমন কোনো দিন নেই এই নিয়ে আমার ভয়ংকর স্বপ্ন আসেনি! অনন্তার আত্মচিৎকার কানে ভেসে আসেনি! তখন ভয়ে কুঁকিয়ে উঠতাম আমি! মানসিক রোগীতে পরিণত হচ্ছিলাম নিজের বেস্টফ্রেন্ডের হত্যাকারী হয়ে। এই ভার আর নিতে পারছি না আমি। আমায় মাফ করে দিস।’
বলতে বলতে আরো চেপে ধরলেন পিস্তলটাকে। রাফাত কেড়ে নিতে চাইলে পিস্তল নিয়ে হুলস্থুল কান্ড বেঁধে যায়।
১১.
গুলির শব্দে পলাশী চোখ খুলে তাকালো। মোহনা ধপ করে লুটিয়ে পরলো মাটিতে। রক্তে ভরে গেলো চারপাশ। পলাশী আতকে উঠলো সেই রক্তে। রাফাতের দিকে তাকালো। সে হতভম্ব হয়ে গিয়েছে! আশাও করেনি এমন কিছু হয়ে যাবে। মঈনুলও বেশ অবাক হয়েছেন। পলাশী চিৎকার করে বলে উঠলো,’মা!’
তাদের দুইজনের ধ্যান ভাঙলো তারা মোহনার লাশের কাছে গেলো। মঈনুল মোহনার নাকের কাছে আঙ্গুল নিয়ে এসে দেখলেন, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,’ম রে গেছে।’
‘বুড়ি এমনেও মরতোই একদিন! এই শুভ কাজটা সে নিজ হাতে করেছে। আর কারো করা লাগেনি।’
বলেই হাসলো রাফাত। পলাশীর ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকালো ভাইয়ের দিকে! যে কিনা নিজের গর্ভধারিণী মায়ের মৃত্যুতেও খুশি! ধিক্কার জানালো রাফারকে পলাশী। রাফাতের মুখ বরাবর থু থু দিয়ে রেগে বলস,’একটা পশু তুই রাফাত! ধিক্কার তোকে! কাপুরুষ কোথাকার!’
রাফাত দ্রুত এসে পলাশীর গলা চেপে ধরলো। পলাশী নিশ্বাস যায় যায় অবস্থা। রাফাত রেগে বলল,’বেশি কথা বললে তোকেও মেরে দিবো পলাশী!’
বলেই পলাশীকে ছাড়লো। পলাশী কাশতে কাশতে বলল,’এমনেই মেরে দিয়েছিস তুই আমায়! যে কিনা নিজের মাকে মারতে পারে সে তার বোনের স্বামীকেও হত্যা করতে দুবার সময় নিবে না।’
‘ হ্যা আমিই মেরেছি নয়নকে! কি করবি তুই?’
কথাটা বলেই অবাক হলো রাফাত। অবাক সুরে প্রশ্ন করলো,’নয়নকে আমি মেরেছি জানলি কি করে? সত্যি করে বল তোর এইসবে কে সাহায্য করছে?’
‘যেই করুক তোর জেনে কোনো লাভ নেই।’
পলাশীকে পিস্তল দেখিয়ে রাফাত বলে উঠলো,’বল নয়তো এখানেই মে রে দিবো! কেউ বাঁচাতে আসবে না তোকে।’
‘কে বলেছে আসবে না?’
পিছন থেকে শব্দ আসতেই তাকালো মঈনুল আর রাফাত। দুইজনই চমকে গেলো! রাফাতের হাত থেকে পিস্তলটা পরে গেলো। অপরপাশের মানুষ হাসলো তা দেখে বলল,’তুই কুকুর ছানা হয়ে বাঘের সাথে লড়তে মাঠে কেনো নেমেছিস মূর্খ!’
মূর্খ বলায় রাগ রাফাতের।
‘আপনি এখানে কেন? আমার বোনের সাথে আমরা আছি, আপনি কেউ না।’
‘আমি আফশান ফায়াজ! ক্যাপ্টেন পদে আছি।’
শুনে হালকা ভয় জন্মালো রাফাতের মনে। লোকটা এমনেই ভয় পেতো সে এখন যেনো ভয়ে তার প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়ে যাচ্ছে। আফশান হাসলো বলল,’এটুকুতেই অবস্থা তোর কুপোকাত। যখন আমার আসল ক্ষমতা প্রয়োগ করবো তখন তোর প্যান্টই ভিজিয়ে ফেলবি আবার।’
মঈনুল মুখ খুললেন,বললেন,’ক্যাপ্টেন আফশান ফায়াজ, আপনি আপনার ক্ষমতা অন্য জায়গায় দেখিয়েন! আমি মেজর মঈনুল রশীদ নিশ্চয়ই জানেন?’
‘জানি! তবে আপনায় বিশ্বাসঘাতক রূপে চিনি।’
মুখমণ্ডল গম্ভীর হলো মঈনুলের। কিছু বললেন না হিতে বিপরীত হয়ে যাবে ভেবে। আফশান তার সহকর্মী মুমিনকে বলল,’এদের দুইজনকে ধরে নিয়ে যাবি! যতক্ষণ না আমি আসবো এদের পেটে একটা দানাও যাতে না পড়ে।’
আফশানের কথায় মুমিন মঈনুল আর রাফাতকে ধরে নিলো। রাফাত ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলে বলে,’এখন কি হবে? আমাদের মেরে ফেললে।’
‘কিচ্ছু করবে না ও আমাদের। ওতো সাহস নেই ওর!’
‘ওর সাহস অনেক! ভীষণ ধূর্ত ও। ওকে কাঁচা খেলোয়াড় মনে করলে হবে না’
১২.
‘ঠিকাছো পলাশী?’
পলাশী ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ঠোঁট চেপে কান্না আটকে বলল,’নয়ন! আমার নয়নকে মেরেছে রাফাত! নিজের বোনের স্বামীকে কিভাবে মারলো ও আমায় বলবে ত্রিধার?’
‘এর উত্তর আমার কাছে নেই পলাশী। তবে রক্তের সম্পর্কেরও চেয়েও বেশি বড় আত্মার সম্পর্ক। তোমার ভাই তোমার রক্ত হলেও কোনোদিন তোমার জন্য যা করেনি স্নিগ্ধতা তা কিছুক্ষণের মাঝেই করেছে। কেঁদে কেটে কি বেহাল দশা বানিয়েছে! যেয়ে দেখবে, ওকে শান্ত করো একটু আমি পারছি না ওকে শান্ত করতে।’
‘ত্রিধার, আমার মা মারা গিয়েছে।’
পলাশীর কথায় শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো ত্রিধার,বলল,’হুম।’
‘উনার লাশের সাথে কোনোরকম কাটাছেঁড়া করোনা। মানুষটা অনেক কষ্ট পেয়ে ম রে ছে! নিজের সন্তানের হাতে তাও আবার! আমি চাইনা মৃত্যুর পরেও কষ্ট পাক।’
‘তিনিও দুইজনকে মেরেছেন পলাশী। তখন তাদের কষ্ট লাগেনি?’
ত্রিধারের কথায় ছলছল চোখে তাকালো পলাশী! এর জবাব নেই তার কাছে কিন্তু সে জানে তার মা এই নিয়ে ভীষণ অনুতপ্ত! সে যে প্রতিদিন নিজের মাকে চোখের পানি ফেলতে দেখতো! সেগুলো তো আর মিথ্যা হয় না! সেইগুলো কোনো অভিনয় ছিলো না তার।
‘আর ইউ অলরাইট, পলাশী?’
মুমিনের কথায় পলাশী মাথা তুলে তাকালো। মুমিন চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকে প্রশ্ন করছে। মুমিনের প্রশ্নের উত্তর দিতে কোনো আগ্রহবোধ জন্মালো না পলাশীর মনে। থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো।
১৩.
‘পলাশী আপু,ঠিকাছো তুমি? কতো চিন্তা করছিলাম আমি জানো?’
কাঁদতে কাঁদতে বললাম আমি। আমাকে উত্তেজিত দেখে পলাশী আপু আমাকে বিছানায় বসিয়ে বলে,’আসতে আস্তে ক্যানোলা দিয়েছিস তো! এমন করলে ব্যথা পাবি। বস চুপচাপ।’
‘আপু! তোমার মাথায় রক্ত।’
‘ওই একটু লেগেছে! চিন্তা করিস না আমি ব্যান্ডেজ করে নিবো।’
‘আমি ব্যান্ডেজ করে দেই তোমাকে?’
পলাশী আপু আমার আবদারে হেসে বললেন,’এটাও আবার প্রশ্ন করা লাগে নাকি, বোকা মেয়ে!’
আমি পলাশী আপুকে ব্যান্ডেজ করতে করতে বললাম,’তোমাকে যখন পাওয়া যাচ্ছিলো না শুনে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। মনে হচ্ছিলো আমি আমার পরিবার হারিয়ে ফেলছি আবারো!’
‘কে বলল হারিয়ে ফেলছিস তুই পরিবার? তোর পরিবার আছে! তোর স্বামী! আমার হারিয়ে গেলেও সে আজীবন তোর সাথে থাকবে তোর পরিবার হয়ে, তারপর তোদের বাচ্চাও হবে! তখন এই নিরীহ পলাশীর কথা মনে থাকবে তোর?’
পলাশী আপুর কথায় লজ্জা পেলাম আমি। তা পলাশী আপু বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন, আমার গাল টেনে মুচকি হেসে বলেন,’নতুন নতুন প্রেমে পড়েছিস বুঝি?’
উত্তর দিলাম না আমি। পলাশী আপুর মাথায় ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নতজানু হলাম। পলাশী আপুর যা বুঝার বুঝে নিলো, নম্র কণ্ঠে আমার উদ্দেশ্যে বললেন,’খেয়াল রাখিস সেই মানুষটা যাতে আর কষ্ট না পায়! মানুষটার সাথে খাপে খাপ মিলিয়ে চলবি। মানুষটার দুঃখে দুঃখী হবি, সুখে সুখী হবি! মনে করবি পৃথিবীতে তোর আপন অভিভাবক বলতে সেই আছে। পলাশী আপুর কোনো অস্তিত্বই নেই!’
‘আপু! এইভাবে বলো না।
‘প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, স্নিগ্ধ। আমি আজ আছি কাল নেই, ত্রিধারও তোর পাশে আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে তোর তো নিজের পায়ের নিচে মাটি শক্ত করা দরকার না? কতটুক পড়েছিস? তার আগেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছে!সৃষ্টিকর্তারই নেয়ামত এটা! আমি জানি তুই পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিস! আর করবি না ভেবে পণও করেছিস। কিন্তু বোন পড়ালেখাটা চালিয়ে যা আর কিছু কর আর না কর। আজ আমার পায়ের নিচের মাটিটা শক্ত থাকলে কি আমি এইভাবে পরে থাকতাম? আমি চাই তুই যাতে কোনোদিন আমার মতো জীবন না কাটাস! তোর পুরো জীবনটাই থাকুক রঙিন! আমার মতো বেরঙা জীবন যাতে তোর না কাটাতে হয়।’
‘কিন্তু ত্রিধার করতে দিবে?’
‘কেনো দেবো না আমি তোমায় পড়ালেখা করতে?’
ঘরে প্রবেশ করতে করতে বললেন ত্রিধার। ত্রিধারের কথায় পলাশী আপু মৃদু হেসে বলল,’দেখেছিস ত্রিধারও বলেছে অযথাই ফাকিবাজি করিস না। আগে তো ধমকে ধমকে পড়াতাম তোকে আমি, আমি চলে গেলে কে ধমকাবে তোকে? ত্রিধার তো আর সারাদিন বাড়ি থাকবে না! ট্রেনিং থেকে কখনো কখনো সপ্তাহ, মাস ও লাগতে পারে৷ তাই বলে ফাঁকিবাজি তো আর করতে পারবি না!’
‘তুমি কোথাও যাচ্ছো না পলাশী! এই বাসায়ই থাকবা।’
ত্রিধার কঠোর কণ্ঠে বলল পলাশীকে। পলাশী মলিন হেসে বলল,’না! ত্রিধার সম্ভব না। আমি এখানে থাকতে পারবো না। আমার যেতে হবে।’
‘এখানে থাকতে কে বলেছে? নিজের বোনের কাছে থাকো। তবুও এখানে থাকবে। নতুবা ভুলে যাও স্নিগ্ধতা আর আমাকে।’
‘তোমাদের ভুলতে পারবো না আমি ত্রিধার! আজকের মতো জিতে গেলে তুমি।’
ত্রিধার পলাশীর আপুর কথায় মৃদু হেসে বললেন,’আফশান সবসময়ই জিতে।’
ত্রিধারের কথায় চমকে গেলাম আমি, সন্দিহান গলায় শুধালাম,’আফশান?’
চলবে….