#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#পর্ব_১৮_শেষ
#জান্নাতুল_বিথী
সূর্যের মৃদু আলো চোখে পড়তেই অয়নের ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘুম ভাঙ্গতেই তার বুকে ভারী কিছু অনুভব করে।চোখ খুলে দেখে তার বুকে তার দিয়ুপাখি ঘুমিয়ে আছে।এটা দেখেই তার কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়।কাল রাতে দিয়া তার সাথে গল্প করতে করতে তার কাধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ে।তারপর সে আর দিয়াকে না তুলে কোলে করে বাড়ি নিয়ে আসে।ভাবতেই সে মুচকি হাসে।ঘুমন্ত অবস্থায় দিয়াকে কি কিউট লাগে তাই দেখছে সে।..
“তোমাকে এভাবে দেখে দেখেই যেনো আর আমার দিন শেষ হয় মায়াবিনী।”
কথাটা বলে অয়ন দিয়ার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়।কারো শীতল স্পর্শে কেপে উঠি আমি।আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।আমি চোখ পিট পিট করে তাকাতেই তার হাস্যজ্জ্বল মুখ খানা আমার চোখের সামনে ফুটে উঠে।আমি উঠে বসতে নিলেই সে আমাকে এক হাত দিয়ে শুইয়ে দেয় আর আরেক হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমি চোখ বন্ধ করে কাল রাতের কথা মনে পড়তেই তার দিকে তাকাই।.
“কাল রাতে তো আমরা রাস্তায় ছিলাম।ওই খান থেকে আমাদের বাড়ি যাওয়ার কথা আর আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে আসলেন।”
“বা রে যে বাড়িতে সারা জীবন থাকবে ওই বাড়িতে আসলেই বুঝি এতো সমস্যা।.????”
“তারপরও আমরা তো কেবল কালকে গেলাম।আরও দুই একদিন থাকলে কি এমন হতো।”(গাল ফুলিয়ে বলি আমি)
অয়ন আমাকে দুই হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে…
“বউ আমার রাগ করে না।আচ্ছা ঠিক আছে আমরা আর কিছুদিন পরেই যাবো আই প্রমিস।তারপরও রাগ করে না লক্ষী আমার।”
তার কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে দেই।অয়ন আমার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি।..
“আমার বউ টাকে সব লুকেই অনেক কিউট লাগে।বেশি কিউট লাগে যখন রাগ করে গাল ফুলিয়ে রাখো।”
শেষের কথাটা বলতে গিয়ে অয়ন হেসে দেয়।আর আমি তাকে কিল ঘুসি দিতেই থাকি।আমার কাজে অয়ন আরও জোরে জোরে হাসতে থাকে।
★
★
ডিনার করা শেষ হলে আমি অয়নের আম্মুর সাথে বসে অনেক্ষন বসে গল্প করি।আমার সে এখন ও বাড়ি আসে নাই।জানি না কখন আসবে।একা বসে বোর হওয়ার চেয়ে উনার সাথে বসে গল্প করাই বেটার।হঠাৎ আমার ফোনে একটা মেসেজ আসে..
“রুমে যাও আর তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিচে আসো আমি অপেক্ষা করছি।”
‘অচেনা পাগল’
নামটা দেখেই আমি ফিক করে হেসে দেই।কোনো ক্রমেই হাসি থামাতে পারছি না।শেষ পর্যন্ত নিজের বরকে অচেনা পাগল বানিয়ে দিলাম।ভাবতেই আবার হেসে উঠি।আমি তাড়িতাড়ি রুমে গিয়ে দেখি খাটের উপর কতো গুল জিনিস রাখা আছে।অয়ন হয়তো এগুলোর কথাই বলেছিলো।যাইহোক আমি আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি তৈরি হতে যাই।
★
অনেক্ষন যাবত অয়ন গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে তার প্রিয় তমার জন্য।এতক্ষন দাড়িয়ে আছে তারপরও তার একটুও বিরক্ত লাগছে না।হয়তো এর নামই ভালোবাসা।হঠাৎ চুড়ির টুংটাং শব্দে সামনে চোখ তুলে তাকায় অয়ন।তার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে তার সামনে কোনো নীল পরি আকাশ থেকে নেমে আসছে।দিয়া একটা নীল শাড়ি পরছে সাথে মেচিং করা হাত ভর্তি চুড়ি চুল গুলো একটু উপরে উঠিয়ে খোপা করে রাখা আছে।চোখে গাড় করে কাজল দেওয়া ঠোটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক ব্যস এনাফ।এতো টুকুতেই অয়ন নিজের চোখ সরাতে পারছে না।আমি অয়নের সামনে এসে মুখে হাত দিয়ে বলি…
“ইয়া আল্লাহ মিস্টার অচেনা পাগল আপনি হঠাৎ এতো সাজু গুজু করলেন কেনো।কি মতলব আপনার সত্যি করে বলুন তো।আজ আবার কাকে পাগল করতে বের হইছেন.????”
আমার কথা শুনে সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।আজ আমার অচেনা পাগল নীল পাঞ্জাবী চুল হুলো স্পাইক করা হাতে ব্যান্ডের ঘড়ি চোখ সানগ্লাস উপপপপ সেই লাগছে।আমি তো চোখ সরাতেই পারছি না।আমি আমার চোখের কোন থেকে একটু কাজল নিয়ে তার কানের পেচনে লাগিয়ে দেই।..
“আল্লাহ তুমি দেখো আমার বরটা যেনো শেষ পর্যন্ত আমারই থাকে।যে লুক নিয়ে দাড়িয়ে আছি ভাবছি কেউ আমাকে মেরে তাকে নিয়ে না যায়।”
আমার কথা শুনে অয়ন ফুক করে হেসে দেয়।আর কোনো কথা না বলে আমাকে তাড়া দেয় গাড়িতে উঠার জন্য।আমিও চোখ বন্ধ করে গাড়িতে উঠে যাই।প্রায় ১৫ মিনিট গাড়ি চলার পর হঠাৎ সে গাড়িয়ে থামিয়ে ফেলে।আর আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটা ফিতা দিয়ে আমার চোখ বেধে আমাকে নিয়ে যেতে থাকে।..
“অয়ন কি করছেন আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে।.????”
“ট্রাস্ট করো আমাকে।???”
“হুমমম।”
“তাহলে চলো আমার সাথে চোখ বন্ধ করে লক্ষী মেয়ের মতো।”
আমিও আর কিছু না বলে সুন্দর করে তার সাথে তার হাত ধরে হেটে যাই। সে অনেক সাবধানতার সাথে আমাকে নিয়ে যায়।আর এক সময় আমার চোখ খুলে দিতেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি।চোখে ঝাপসা দেখছি।কিন্তু ভালো করে তাকাতেই আমি বিস্ময়ে হা হয়ে যাই।নিজের চোখ কেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছি না আমি।আমি একটা ফুলের বাগানের মাঝখানে দাড়িয়ে আছি।আমার চারপাশে বিভিন্ন ধরনের ফুলে ভরপুর।এখানে মনে হয় সব ধরনের ফুল রয়েছে।সাথে চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ।মৌমাছি রা ফুলের উপর বসে মধু খায়।আমি আনন্দে মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছি।হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখছি আসলেই কি আমি যা দেখছি সব সত্যি।হঠাৎ পেচনে তাকিয়ে দেখি অয়ন অনেক ধরনের ফুল এক সাথে হাতে নিয়ে হাটু গেড়ে বসে আছে।আমি তার দিকে তাকাতেই সে বলে..
“তোমার হাত ধরে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চাই প্রিয়।ধরতে দিবে কি তোমার হাতটা একটু।তোমার মুখের হাসির কারন হয়ে থাকতে চাই সব সময়।হতে দিবে কি তোমার হাসির কারন প্রিয়।তোমার সুখের অংশীদার হতে চাই প্রিয় হতে দিবে কি তোমার সুখের অংশীধারি।তোমার চোখের জল সব সময় মুছে দিতে তোমার পাশে থাকতে চাই সারাজীবন আমি।রাখবে কি সারাজীবন তোমার পাশে আমাকে।তোমার ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো সব সময় পুরন করতে চাই আমি। সেই সুযোগ কি দিবে তুমি আমাকে।তোমার অচেনা পাগল হয়ে তোমার পাশে থাকতে চাই আমি দিয়ুপাখি।?????”
তার কথা শুনে আমার চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।সে উঠে দাড়িয়ে আমার চোখের পানি জোড়া মুছে দেয়।আর এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমি অয়নকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেই।আজ আমার সব কান্না সুখের কান্না।আমি আমার মনের মতো মানুষ খুজে পেয়েছি।খুজে পেয়েচি আমার অচেনা পাগল কে।..
“এই দিয়ুপাখি আমি কিন্তু আমার প্রশ্ন গুলো এখনো উত্তর পাই নাই।”
“আপনি জানেন না আপনার উত্তর কি হতে পারে।????”
“তারপরও তোমার মুখ থেকে একটি বারের জন্য শুনতে চাই আমি।”
তার কথা শুনে আমি মাথা নাড়াই।যার অর্থ হ্যা।তারপর সে আমার হাত ধরে এগিয়ে গিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসে।খোলা আকাশের নিচে তার কাধে মাথা রেখে তার সাথে গল্পে মেতে উঠি আমি।আমার সব হাসি আর কান্নার কারন তাকে বানাতে চাই।আমাদের এই সুখের একমাত্র সাক্ষী রেখেছি চাদকে।আমার স্বপ্ন পুরীতে বসে আমার মনের মানুষের কাধে মাথা রেখে গল্প করার স্বপ্ন পুরন হলো।হয়তো এভাবে আমার সব স্বপ্ন গুলো পুরন করবে আমার অচেনা পাগল।
(আর আপনাদের বলছি দিয়ুপাখি আর তার অচেনা পাগলের সুখের সংসারে কেউ নজর দিবেন না)
[ ধন্যবাদ সবাইকে।যারা এই গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমার সাথে ছিলেন সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।বাই দা গাড়ি কেমন হলো জানাবেন কিন্তু ]