হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব -৩৫+৩৬

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৪
নাস্তার টেবিলে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা শ্বশুরবাড়িতে প্রিয়ার প্রথম রান্নার প্রশংসা করল। নাস্তা শেষে মেয়েরা সব আড্ডা দিতে ড্রয়িংরুমে জড়ো হয়েছে আর ছেলেরা ছাদে। বিয়ের পরেরদিন বৌভাতের অনুষ্ঠান না রাখায় ব্যাস্ততা কিছুটা কম। বৌভাতের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি অর্ধেকের বেশি আগেই করে ফেলেছে। তাসফি আজ সকালে একটা প্রপোজ পেয়েছে। ছেলেটা জারিফের বন্ধু হয়। তাসফি এখনও কাউকে জানায়নি। বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছিল তখনি কোথা থেকে এসে ছেলেটা কতোগুলো নয়নতারা ফুল দিয়ে বলেছিল,

“অ্যাই লাভ ইউ! অ্যাই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ।”

তাসফি তখন থতমত খেয়ে গিয়েছিল। চুপ করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পর ছেলেটার আবার জিজ্ঞেস করাতে পিছু দৌঁড়ে চলে এসেছে। এখন বেচারির আড্ডাতে মন নাই। প্রিয়ারা সবাই মিলে গানের কলি খেলছে। প্রিয়া তাসফিকে একটা অক্ষর দিতে গিয়ে দেখে মেয়েটা বেখেয়ালি। প্রিয়া ওকে ঠে*লা দিয়ে বলে,

“কী-রে? কোথায় হারালি? বল।”

তাসফি হকচকিয়ে উঠে।
“হু? কী বলব?

“তোকে তামান্না আপু অক্ষর দিয়েছে। এখন সেটা দিয়ে গা*ন গাইবি। কী হয়েছে তোর?”

তাসফি হাসার চেষ্টা করে বলল,
“না কিছুহয়নি। আচ্ছা গাইছি।”

তাসফি কোনোমতে গান গেয়ে প্রিয়ার কাছে ত অক্ষর দিলো। প্রিয়া একটু ঠিক হয়ে বসে গা*ন ধরল,

“তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে,
আমায় দিতে পারো
আমার ভালো লাগা ভালোবাসা
তোমায় দেবো আরো!(২)
তুমি হাতটা শুধু ধরো
আমি হবো না আর কারো! (২)
তোমার স্বপ্ন গুলো আমার চোখে
হচ্ছে জড়সড়!
তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে,
আমায় দিতে পারো
আমার ভালো লাগা ভালোবাসা
তোমায় দেবো আরো!”

গা*ন শেষ হলে জারিফের এক কাজিন ভাবী বলে উঠে,
“দিয়ে দাও তাকে তোমার ইচ্ছে গুলো। সে তোমার হাতটা খুব ভালোবেসে সারাজীবন ধরে রাখবে।”

প্রিয়া লজ্জা পেলো। লজ্জায় মা*থা নিচু করে মুখ লুকালো। এদের আড্ডা চলছেই আর ছেলেরা দা*বা ও ক্যারাম খেলছে ছাদে। জারিফ খুব ভালো দাবা খেলতে পারে। ওর সাথে এখন পর্যন্ত জায়ান ও তাদের বাবা খেলে জিততে পারেনি। তো জায়ান এখনও পারল না! বেচারা জায়ান বলে,

“এই তুই একবার তো আমাকে জিততে দিতে পারিস! আমার রাজাকে তুই প্রথমেই চে*কমে*ট কেনো দিস!”

“তুমি হে*রে গেলে আমি কী করব ভাইয়া? ইচ্ছে করে তো হারতে পারি না!”

জায়ানের কিঞ্চিত ক্ষো*ভ মিশ্রিত বুলিতে জারিফের প্রতিউত্তরে এক কাজিন বলে,

“পদে পদে ইচ্ছে করে হারতে হবে ভাই আমার! নাহলে তোকে স*ন্ন্যাসী হতে হবে!”

জারিফ মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“তোমাদের বউরা এমন করেছে বলে কি আমার বউও করবে? তাহলে তো তোমাদের বউদের থেকে প্রিয়াকে দূরে দূরে রাখতে হবে। সে আমার সামনে ভীতু ও লাজুকটাই আদুরে।”

“প্রথম প্রথম এমনি থাকে ভাই! পরে…!”

“উফ! পরেরটা পরে দেখা যাবে। খেলো তো তোমরা।”

জারিফ আবার খেলা শুরু করল।

____________

সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে বালিশের সাইড থেকে ফোনটা নিয়ে সময় দেখে নেট অন করলো। গতকাল অনেক রাত করে বাসায় এসে ঘুমিয়েছিল। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করার পর মেসেঞ্জারে গেলো। পিহুর আইডি থেকে মেসেজ এসেছে সকাল নয়টার দিকে। লিখেছে,

“এই শুনুন! আব্বুকে কাল বলেছিলাম আমি ঢাকাতে ভর্তি হবো। সেকেন্ড ইয়ারে ঢাকাতে গিয়ে একটা কলেজে ভর্তি হবো। আব্বু একটু আগে আমাকে জানিয়ে গেছেন, তিনি রাজি। ঢাকাতে আমার খালামনির বাড়িতে পাঠাবে আমাকে। অ্যাই অ্যাম সো এক্সাইটেড। আপনার শহরে আসব। বন্ধুদের ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে তবে ওরা তো এইচএসসির পরে ঢাকা যাবেই। ওদেরকে গতকাল বলেছিলাম আমার এই ইচ্ছের কথাটা। মন খারাপ করেছে ওরা। আমি মানিয়ে নিবো ওদের সমস্যা নাই।”

আয়ান অবাক দৃষ্টিতে লম্বা মেসেজটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কি পা*গ*ল! একা একা ঢাকাতে পড়তে আসবে! আয়ান চোখ কঁচলে আবার মেসেজটা পড়লো। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হেসে উঠলো। মা*থা চুলকে স্বগোতক্তি করলো,

“মেয়েটা এতো ডেসপারেট কেনো? তার চেনা শহর, চেনা সব ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের টানে ছুটে আসছে! সে যদি মনঃক্ষুণ্ণ হয়?”

আয়ান চোখ বন্ধ করে লম্বাশ্বাস নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

_________

সন্ধ্যার আড্ডার আগে প্রিয়া নামাজ পড়ে রুমে বিছানার উপর বসে আছে। আজ সারাদিন জারিফের সাথে তার কথা হয়নি। তাই এখন জারিফ মসজিদ থেকে আসবে তাই অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে জারিফ আসলো। প্রিয়াকে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখে হেঁটে ড্রেসিংটেবিলের সামনে যেতে যেতে বলল,

“তৈরী হওনি?”

প্রিয়া ভ্রুঁকুটি করে বলে,
“কেনো? তৈরী হবো কিসের জন্য?”

জারিফ প্রিয়ার দিকে ঘুরে বলে,
“কেনো ফিহা তোমাকে বলেনি?”

প্রিয়া এবার মুখ লটকে বলল,
“কী বলবে?

“ফিহা জেদ ধরেছে। আজ সবাইকে নিয়ে ট্রিট দিতে হবে। ওরা সবাই স্ট্রিট ফুড খেতে যাবে।”

প্রিয়া মনে করার চেষ্টা করল অতঃপর বলল,

“ওহ হ্যাঁ। ফিহা বলেছিল আপনি ট্রিট দিবেন। তবে এখন সেটা বলেনি?”

জারিফ হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বলল,
“মাত্রই ওদের সময় বলে জায়ান ভাইয়ার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। যাই হোক রেডি হও। ফিহা তো শুনেই দৌঁড় দিয়েছে।”

প্রিয়া হাসে তারপর আলমারির কাছে গিয়ে খুলে কী পরবে তা সিলেক্ট করতে চেষ্টা করছে। জারিফ ব্যালকনিতে গিয়ে একটা ফোন কল এটেন্ড করে এসে দেখে প্রিয়া এখনও পছন্দ করতে পারেনি। জারিফ এবার প্রিয়ার পেছোনে এসে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে একটা সবুজ রঙের থ্রিপিস বের করে দিলো।

“এটা ট্রাই করো। ওয়েদার এন্ড এনভায়রনমেন্টের সাথে তোমাকে সু*ট করবে।”

প্রিয়া জারিফকে ধন্যবাদ দিয়ে খুশিমনে চেঞ্জ করতে চলে গেলো। জারিফ আর চেঞ্জ করল ন। সে একটা ব্ল্যাক পাঞ্জাবী পরে আছে। প্রিয়ার সাথে কালার কম্বিনেশনেও মিলবে।

______
রাহা একটা ব্লু রঙের চুড়িদার পরেছে। সাথে নীল চুড়ি। সে তৈরী হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে ফিহার পাশে বসেছে। লিপস্টিক ও ক্রিম ছাড়া অন্য কোনো প্রসাধনী সে ব্যাবহার করেনি। তাসফি কাজল পরছে খুব ধীর গতিতে তাই রাহা ওকে রেখে বেরিয়ে চলে এসেছে। নাহান ফোন টিপতে টিপতে ড্রয়িংরুমের সিঙ্গেল সোফাতে এসে বসেছে। আশেপাশে সে তাকায়নি। নাহানকে বসতে দেখে ফিহা মুখ ভে*ঙচি দেয়। পাশে রাহাকে দেখে রাহার কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,

“এই ব্যা*টার উপর আমি এক কালে ক্রা*শিত ছিলাম। প্রচুর ভাব তার। আবার রুডও। সারাক্ষণ একটা ভাব নিয়ে চলে। ব্যাবহার আমার পছন্দ হয়নি। তাই পরে ক্রা*শ তুলে নিয়েছি। থাকুক সে তার সো কলড এটি*টিউ*ড নিয়ে। আমার নেক্সট ক্রাশ তো এখন তামান্না ভাবীর চাচাতো ভাই তন্ময়! ছেলেটা অনেক মিশুক আর ফানিও। আর হ্যান্ডসামও বটে। তার সাথে আমার ফেসবুকে কথা হয়। সে এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। রাজশাহী থেকে পড়াশোনা করেতো তাই আসতে পারেনি।”

রাহা চুপ করে ফিহার একাধারে কথা শুনে গেলো। বিনিময়ে হালকা হেসে নাহানের দিকে তাকালো। নাহানের ধ্যান জ্ঞান সব ওই ফোনেই। রাহা নিজেও তো ফিহার মতো চঞ্চল কিন্তু নাহান সামনে থাকলে কেমন চুপসে যায়। এখন যদি নাহান সামনে না থাকতো তবে রাহা ফিহার সাথে কথায় তাল মিলাতো।

_________

চটপটি, ফুচকা, মমোস, হালিম, সবকিছু খেয়ে জারিফকে পথের ফ*কি*র করে ছেড়েছে সবাই মিলে। জারিফের এক কাজিন এসে জারিফকে ধীরে ধীরে বলে,

“বলেছিলাম না! দেখলি! তোর জন্য মায়া হচ্ছেরে ভাই।”

জারিফ বিরক্ত হয়ে বলে,
“এতো মায়া হলে অর্ধেক বিলটা দিয়ে দেও না! তাও সারাক্ষণ কানের কাছে এসব বলা বন্ধ করো।”

বেচারা চুপসে গেছে। এসেছিল জারিফকে শান্তনা দিতে কিন্তু জারিফের তিরিক্ষি কন্ঠস্বরে এখন সটকে পরেছে। জারিফের চার হাজারের উপরে বিল হয়েছে। জারিফ এতো খুচরো আনেনি। ম্যানিব্যাগে কার্ড আছে কিন্তু এসব দোকানে তো কার্ডে পরিশোধ করা যায় না। তাই জায়ানের থেকে আপাততো ধার করে পরিশোধ করে বাড়ির পথ ধরল সবাই। মেয়েরা তো প্রচন্ড খুশি। এসব মুখোরোচক খাবার হলে প্রচন্ড রকমের খুশি হওয়াটাই জায়েজ।
#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৫
বৌভাতের অনুষ্ঠানে প্রিয়া ওর বাবা-মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। উনারা কাছাকাছি চলেও এসেছেন। সেই সকালে ভাবীরা মিলে পার্লারে নিয়ে গেলো আর একটু আগে এলো। এতো লম্বা ড্রেস যে সামলাতে পারছে না। প্রিয়ার এখন মনে হচ্ছে, গাউনের থেকে শাড়িই ভালো। গাউনটা যদিও তুলনামূলক হালকা কাজের। এই হোয়াইট গাউনটা জারিফ তার বান্ধুবী মারিয়াকে দিয়ে কানাডা থেকে অর্ডার করে আনিয়েছে। মারিয়া প্রিয়ার পাশেই বসে আছে। মারিয়া বিদেশিনী হয়েও আজ সে শখ করে সবুজ কাতান শাড়ি পরেছে। প্রিয়ার সাথে তার ভালোই ভাব জমেছে।

অদূরে জারিফ হোয়াইট সুটে তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। প্রিয়া মুগ্ধ দৃষ্টিতে এই শুভ্রতায় রাঙানো পুরুষটিকে দেখে মুখ ফুটে বলে ফেলে,

“আমার শুভ্র মানব! এতো ভালো লাগে কেনো? বিরক্তি থেকে কিভাবে যে তার প্রেমে আমি এতোটা আসক্ত হলাম! এখনও আমি তার প্রতি হৃদয়ে লুকানো প্রেম কোনো শব্দে ব্যাক্ত করতে পারিনি।”

মারিয়া, তাসফি ও রাহা প্রিয়ার পাশে বসা। তিনজনেই প্রিয়ার ঘোরলাগা দৃষ্টিতে মুখ চেপে হাসছে। বেচারি হয়তো ভুলেই গেছে সে এখন সেন্টার অফ দ্যা পয়েন্টে আছে। রাহা প্রিয়ার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

“এই প্রিয়ুপু, আস্তে বলো হ্যাঁ! তোমার হৃদয়ে লুকানো প্রেম আর লুকানো নাই। আমরা তো শুনে ফেললাম। তাই না তাসফিপু, মারিয়াপু?”

প্রিয়া আচমকা থতমত খেয়ে যায়। মারিয়া মুচকি হেসে বলে,
“ইয়েস ডিয়ার, উই অল নো। থিংস আর নট সিক্রেট ইয়েট।”

প্রিয়া লজ্জা পেয়ে যায়। রাহার বাহুতে দুটো কি**ল বসিয়ে দেয় বিনিময়ে। রাহা সহ ওরা হাসতে থাকে। কিছুক্ষণ পর শোরগোলে তাসফি বলে উঠে,

“প্রিয়া আপু, মনে হয় মামারা চলে এসেছেন। চলো রাহা। আপু তুমি বসো।”

তাসফি ও রাহা উঠে যায়। জারিফও গিয়ে প্রিয়ার বাবা-মায়ের সাথে কুশল বিনিময় করে উনাদের নিয়ে আসে। উনারা স্টেজের কাছে আসলে প্রিয়া উঠে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুটা আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রিয়ার মা মেয়ের গা*লে এক হাত রেখে নিজের চোখ মুছে বলেন,

“মাশাআল্লাহ্। আমার মেয়েটাকে একদম প্রিন্সেস লাগতেছে।”

প্রিয়ার বাবা স্ত্রীর কথায় বিরোধীতা করে বলেন,
“আমার মেয়ে সবসময় প্রিন্সেস। প্রিন্সেস অফ মাই কিংডম। কোনো সাজসজ্জা তাকে প্রিন্সেসের রূপ দিতে পারে না কারণ সে সয়ং একজন প্রিন্সেস। অ্যাপেল অফ মাই অ্যাইস।”

প্রিয়া টলমল নয়নে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। প্রিয়ার বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে জারিফের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“হেই প্রিন্স চার্মিং! আমার প্রিন্সেসের চোখে যেনো তোমার কারণে দুঃখের অশ্রু না গড়ায়। মা*ইন্ড ইট।”

জারিফ পকেটে হাত গুঁজে দেখছিল। শ্বশুরের থ্রে*ট মূলক বুলিতে মা*থা নুইয়ে হাসে।

রিশেপশনের অনুষ্ঠানের শেষে প্রিয়া ও জারিফকে নিয়ে প্রিয়াদের বাড়িতে রওনা হয়। ফিহাও সঙ্গী ওদের। এদিকে ফিহাকে প্রিয়ার এক কাজিন ভাই পছন্দ করে বসে আছে! গাড়িতে সে ইচ্ছে করে ফ্রন্ট মিররটা ফিহাকে দেখা যায় এমন পজিশনে রেখেছে। ফিহা কিন্তু সবই বুঝেছে আর তাই সে মিটিমিটি হাসছে।

________
মুন্নির মা তার ভাই-ভাবীর থেকে বিদায় নিয়ে সন্ধ্যার বাসে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। পাঁচদিন হলো এখানে আছে। মেয়েটার আর একটা পরীক্ষা বাকি। প্রতিনিয়ত মেয়ের খবরাখবর তো রাখছেই। দুইদিন প্রিয়াকে দেখে তার ভালোই লেগেছে। এখন ফিরে গিয়ে নিজের মেয়ের সুখের পথ নিশ্চিত করতে হবে।

মুন্নি আজকে বিকেলে খালাকে বলে বেরিয়েছে। উদ্দেশ্য রাদিফের সাথে দেখা করতে লেকপাড়ে যাবে। রাদিফই গতকাল তাকে বলেছে যখন সে পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিল। মুন্নি জিজ্ঞেস করেছিল, অফিস বাদ দিয়ে এখানে আসার কারণ কী? রাদিফ আজ সেই কারণটা বলতেই ডেকেছে। মুন্নি কী ভেবে রাজি হয়ে গেলো নিজেও জানে না। সারা বিকেল লেকপাড়ে কিছুটা নির্জনে বসেছিল ওরা। রাদিফ প্রায় অনেকক্ষণ নিরব ছিল। দুজনের সঙ্গী তখন বাদাম ও বুট ভা*জা। যখন দুটোই শেষের পথে আর সূর্য ডুবেও গেছে তখন মুন্নি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,

“আপনার মৌনতা শুনতে ডেকেছেন? আপনার নিরবতার ভাষা বোঝার ক্ষ*মতা আমার নাই। যদি শব্দ খরচ করে কিছু বলতেন।”

রাদিফ রক্তিম আকাশের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেয়। কথাটা বলতে তার ভয় হচ্ছে। যেই কয়দিন ওদের কথা হয়েছে তাতে রাদিফ এটুকু বুঝতে পেরেছে মুন্নি কাউকে খুব ভালোবাসে বা বাসত! এতোদিনে সে বুঝতে পেরেছে মুন্নি কোনো করুণ সত্যের শি*কা*র। রাদিফ দম নিয়ে বলে,

“ভেঙে যাওয়া হৃদয় কী কখনও জোরা লাগাবেন না?”

মুন্নি চমকে উঠলো। সে তো ভেবে নিয়েছিল, ছেলেটা কোনো কথাই বলবে না। হুট করে বলে উঠায় খানিক চমকে যায়। মুন্নি ভাবলেশহীন ভাবে বলে,

“এবার নিজ থেকে আর কিছুতে জড়াব না। আর যেচে দুঃখ টানতে ইচ্ছে হয় না। আমার বাবা-মা যা বলবেন তাই করব।”

রাদিফ বলে,
“আমি যদি বলি, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই! তাহলে?”

মুন্নির ঠোঁট কোলে তার নিজের অজান্তেই হাসির রেখা ফোটে। কিন্তু এতে মুন্নির দৃষ্টিসীমা হটেনি। দৃষ্টি তার সম্মুখে রক্তিম অম্বরে। রাদিফ ঠিকই সেই হাসিটা দেখল। মুন্নি বলে উঠে,

“যদি অদৃষ্টে লেখা থাকে সবই সম্ভব।”

মুন্নি কথাটা বলেই কালক্ষেপণ না করে উঠে দাঁড়ায় তারপর একটা কথা বলে একাই স্থান ত্যাগ করে।

“যদি আপনার অদৃষ্টে এই ভগ্ন হৃদয়ের মালকিন লেখা থাকে তবে কেউ সেটা খন্ডাতে পারবে না। তাও আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাই কারণ চেষ্টা না করলে যে ললাটে আছে তাকেও পাওয়া হবে না।”

রাদিফ এক দৃষ্টিকে মুন্নির গমনপথের দিকে তাকিয়ে আছে। লাল-হলুদের মিশেলে থ্রিপিসে এই গোধূলিতে মেয়েটাকে তার কাছে “গোধূলি কন্যা” লাগছে।

___________

আড্ডা শেষে রুমে গিয়ে জারিফ প্রিয়াকে জানায়,
“আমরা সকালের ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবো তারপর সেখান থেকে সেন্টমার্টিন।”

প্রিয়া অবাক সাথে খুশিও হয়। তার অনেকদিনের ইচ্ছা সে তার বরের সাথে সমুদ্রবিলাশ করবে। আরও অনেক বাসনা আছে সমুদ্র নিয়ে। প্রিয়া বলে,

“বাবা-মাকে জানিয়েছেন? আরেকটা কিসের যেনো ফাংশন বাকি আছে।”

“হ্যাঁ আমি আঙ্কেলকে বলেছি আর প্রিয়মকেও।”

“ফিহা? ও কী করবে?”

“ফিহাকে কাল প্রিয়ম পৌঁছে দিবে বলেছে।”

“ওহ আচ্ছা। তবে প্যাকিং করে নিই।”

প্রিয়া আলমারি খুলতে উদ্দত হলে জারিফ প্রিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে। প্রিয়া আচমকা এহেনো টানে চমকে উঠে। জারিফ প্রিয়ার মুখের উপর আসা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে গালে স্লাইড করতে করতে হালকা স্বরে বলে,

“তোমার কিছু করতে হবে না। সব গোছানো আছে। সকালে নাহান কালকে ভোরে ট্রলিটা নিয়ে আসবে।”

প্রিয়া চোখ বন্ধ করে নেয়। সে বারবার জারিফের হাতের স্পর্শে শিউরে উঠছে। জারিফ প্রিয়াকে আরও কাছে টেনে প্রিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

“ওখানে কিন্তু তুমি আর পালাতে পারবে না! সর্বক্ষণ তুমি আমাকেই পাবে।”

প্রিয়া ছুটার জন্য নড়াচড়া করছে। জারিফ দেখল প্রিয়ার মুখশ্রীতে ব্রীড়া মিশ্রিত হালকা আভা। কপালের ঠোঁটের স্পর্শ করে প্রিয়াকে হাতের বাঁধন মুক্ত করল। প্রিয়া এক ছুটে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। তার এখন হাত-মুখ ধু*তে হবে! জারিফ হেসে বিছানায় হেলান দিয়ে বসল। কখন লজ্জা রানীর লজ্জা কমবে আর সে বেরোবে সেই অপেক্ষায়।

________

সকাল সাড়ে ছয়টায় কলিংবেলের শব্দে রাহা ঘুম ঘুম চোখে উঠে দরজা খুলল। তার আজকেও কেনো জানি ঘুম আসছে না। পরনে তার টিশার্ট, প্লাজো আর ওড়না। হাই তুলতে তুলতে এতো সকালে কে এলো দেখতে গেছে। রান্নাঘর থেকে শব্দ হচ্ছে মানে তার ফুফি উঠে গিয়ে নাস্তা বানাচ্ছে। দরজা খুলে যে রাহা শ*ক*ড হয়ে থতমত খে*য়ে যাবে সে কল্পনাও করেনি।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here