#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_৬
#নিশাত_জাহান_নিশি
—“আকাশকে খোঁজার রাইট টাইম এটা না জায়ান। আগে আমাদের তমাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমার মনটা ভীষণ অস্থির লাগছে।”
কথাটা বলেই তমাল জায়ানকে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের করে সোজা গেইটের বাইরে চলে এলো। জায়ান ঘোরের মধ্যে আছে। আকাশ আর জাবেদকে নিয়ে ওর মনের মধ্যে আকাশ চুম্বী সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশেষ করে জাবেদের প্রতি ওর সন্দেহ হচ্ছে বেশি। রক্ত মাখানো শার্ট হচ্ছে এর মূল কারণ। তমাল জায়ানকে টেনে গাড়ির ভিতর বসিয়ে দিলো।
তমাল গাড়ি ড্রাইভ করছে আর চিন্তিত কন্ঠে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,
—-“কই খুঁজব তমাকে? আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না।”
জায়ান এক নিশ্বাসে তমালকে উদ্দেশ্য করে উওেজিত কন্ঠে বলল,,,,,
—-“গাড়িটা তাড়াতাড়ি স্টপ কর তমাল। আমার মন বলছে তমা আকাশদের বাড়িতেই আছে। কোনো অপরিচিত ব্যক্তি যদি তমাকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত বা তমার সাথে জোরাজুরি করত তাহলে নিশ্চয়ই তমা চিৎকার চেঁচামেচি করত বা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করত। কিন্তু আমরা তো কোনো চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ ই শুনি নি। সবচেয়ে বড় কথা হলো লোকটি যদি তমাকে টেনে হেছড়ে বাড়ি থেকে বের করতো তাহলে অন্তত কারো না কারো চোখে পড়ত। কই কেউ তো তমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেখে নি বা ঐ লোকটাকে ও বের হতে দেখে নি। এই সব গুলো লজিক একসাথে করলেই বুঝা যায়, তমা আকাশদের বাড়িতেই আছে।”
জায়ানের কথা মতো তমাল গাড়ি থামিয়ে দিলো। তমাল ও জায়ানের যুক্তিতে একমত। গাড়ি ঘুড়িয়ে তমাল বাড়ির দিকে রওনা দিলো। গেইটের কাছে গাড়ি থামতেই জায়ান চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। তমাল ও জায়ানের পিছু পিছু বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো।
বাড়ির ভিতর ঢুকেই জায়ান বাড়ির মেইন গেইটটা বন্ধ করে দিলো। শুধু বন্ধ বললে ভুল হবে সোজা তালাবন্ধ করে দিলো। গেইটের চাবিটা জায়ান তমালের হাতে ধরিয়ে দিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বাড়ির লোকজন প্লাস গেস্টদের উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“আপনারা যে যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন। কেউ নিজেদের জায়গা থেকে বিন্দু পরিমাণ নড়বেন না। আশা করি আপনারা সবাই আমার কথা বুঝতে পেরেছেন।”
বাড়ির সব গেস্টরা ভয়ে পেয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাঁড়িয়ে সম্মতি জানালো। তমার আম্মু আর আব্বু কাঁদতে কাঁদতে জায়ানের হাত ধরে বলল,,,,,,
—-“আমাদের মেয়েটা কোথায় জায়ান? খুঁজে পাবো তো আমরা আমাদের মেয়েকে?”
জায়ান চোখের জল ছেড়ে ওদের দুইজনের হাতে হাত রেখে বলল,,,,,
—-“অবশ্যই আমরা তমাকে খুঁজে পাবো। খুব জলদি খুঁজে পাবো। তোমরা টেনশান করো না। তমাল আর আমার উপর ভরসা রাখো।”
কথা গুলো বলেই জায়ান সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশের আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,,
—-“আন্টি আপনাদের বাড়িতে কোনো গুপ্ত দরজা আছে? যে দরজা দিয়ে কেউ অনায়াসে বাড়ির ভিতর ঢুকতে পারে বা থেকে বের হতে পারে?”
—-“না বাবা নেই। প্রায় এক বছর আগে বাড়ির পিছনের গেইটটা আকাশের আব্বু ভেঙ্গে বাউন্ডারী দিয়ে দেয়। তাই এখন মেইন গেইট ছাড়া অন্য কোনো গেইট দিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকা বা বের হওয়া সম্ভব না।”
জায়ান আর দেরি না করে সোজা ছাঁদের উপর উঠে গেলো। পিছু পিছু তমাল ও ছুটল। ছাঁদের দরজার কাছে পা রাখতেই জায়ান থমকে গেলো। ছাদের পিলারের সাথে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে আকাশ, তার পাশেই আছে জাবেদ। ওদের মুখে কালো এক্টা পট্টি লাগানো। দুইজনই প্রাণপনে নিজেদের ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। জায়ানকে দেখে ওরা দুজনই উম উম উম করছে। জায়ান থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছে না। তার হিসেব অনুযায়ি জাবেদ সাসপেক্ট। এখন তো মনে হচ্ছে জাবেদ ই ভিকটিম।
জায়ান দৌঁড়ে গিয়ে জাবেদ আর আকাশের মুখের পট্টিটা খুলে দিয়ে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,
—-“আমার তমু কোথায়?”
জাবেদ হাফাতে হাফাতে মিনমিন করে বলল,,,,,,
—-“চিলিকোঠার রুমে যা। ঐখানেই আছে তমা।”
জায়ান আর দেরি না করে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দৌঁড়ে চিলিকোঠার রুমে চলে গেলো। মুখ বাঁধা অবস্থায় তমা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। জায়ানের চোখ বেয়ে টলটল করে জল পড়ছে। কারণ তমার কপাল কেটে রক্ত বের হচ্ছে। জায়ান ধীর পায়ে হেঁটে ধপ করে তমার পাশে বসে পড়ল। জায়ানের চোখের পানি গুলো সরু ভাবে তমার চোখের কোনায় পড়ছে। তমা পিটপিট করে তাকানোর চেষ্টা করছে। মুহূর্তেই জায়ান তমাকে ঝাপটে ধরে বুক ফাঁটা চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,
—-“আমি নিতে পারছি না তমু। একদম নিতে পারছি না। নিজের চোখের সামনে তোর সাথে এসব ঘটে যাওয়া অন্যায় গুলো আমি নিতে পারছি না। বুকে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। নিজেকে হেল্পলেস মনে হচ্ছে। পাশে থেকে ও আমি তোকে সেইফ করতে পারছি না। বার বার কোনো না কোনো ভাবে ঐ অদৃশ্য মানুষটা আমার থেকে তোকে ছিনিয়ে নেয়। তোকে কষ্ট দেয়, যন্ত্রণা দেয়। আমি ব্যর্থ তমু। আমি ব্যর্থ।”
জায়ান এসব কথা বলছে আর চিৎকার করে কাঁদছে। তমা চোখ খুলে কাঠ কাঠ গলায় জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
—-“আকাকাকাশ আররর জাবেদদদ ভাভাভাইয়া ঠিক আছে তো?”
জায়ান তমাকে শোয়া থেকে উঠিয়ে কপালের রক্ত গুলোতে হাত দিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,,,,,
—-“এসব নিয়ে পরে কথা বলব। আগে তোর ট্রিটমেন্ট করতে হবে।”
কথাটা বলেই জায়ান তমাকে কোলে নিয়ে চিলিকোঠার রুম থেকে বের হয়ে ছাদের দরজার কাছে গেলো। তমাল এতক্ষনে জাবেদ আর আকাশের হাতের বাঁধন খুলে দিয়েছে। দুজনই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেটে জায়ানের পিছু চলল। তমাল সবার পিছনে।
জায়ান তমাকে দুতলার রুমে শুইয়ে দিয়ে ভিতর থেকে দরজাটা লক করে দিলো। তমার আম্মু্, আব্বু তমাকে দেখে যেনো প্রাণ ফিরে পেলো। উনারা আকাশ আর জাবেদকে নিয়ে নিচ তলার ড্রইং রুমে চলে গেলো। সবে মাএ ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য বাড়ির সবাই বেশ আতঙ্কের মধ্যে আছে। সবার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
ডেস্কের ড্রয়ার থেকে জায়ান ফার্স্টএইড বক্সটা নিয়ে তমার পাশে বসল। তমা চোখ খুলে এক দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। খুব নার্ভাস লাগছে জায়ানকে। জায়ানের ফর্সা মুখটা নেতিয়ে গেছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ভারী টেনশানের মধ্যে আছে।
জায়ান তুলোতে স্যাভলন লাগিয়ে তমার কপালের কাটা অংশটা ওয়াশ করে দিচ্ছে। তমা চোখ, মুখ খিঁচে রেখেছে। জ্বালা করছে খুব। জায়ান তমার দিকে না তাকিয়ে কাটা জায়গাটা ভালোভাবে ওয়াশ করছে। তমার দিকে তাকালেই এখন তার মায়া হবে। সে নিশ্চয়ই সামান্য মায়ার জন্য তার বউ এর ইনফেকশানের ঝুঁকি বাড়াবে না।
ভালোভাবে ওয়াশ করার পর জায়ান কাটা জায়গাটায় এন্টিসেপটিক লাগিয়ে তমার কপালে চুমো খেয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,
—-“তমু….এবার আমাকে প্রথম থেকে সব খুলে বল। তোর সাথে এক্সেট কি কি হয়েছে? আকাশ আর জাবেদ ভাইয়া ই বা ছাদে বাঁধা অবস্থায় ছিলো কেনো?”
তমা এক্টা শুকনো ঢোক গিলে কান্নাজড়িত কন্ঠে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে মিনমিন করে বলল,,,,
—-“তুমি স্টোর রুমে ঢুকার সাথে সাথেই ঐ লোকটা আমার পিছনে এসে দাঁড়ায়। আমি খেয়াল করে দেখলাম তখন সিঁড়ি বেয়ে জাবেদ ভাইয়া আর আকাশ ও আসছে। দুজনেই নিজেদের মধ্যে কথা বার্তায় ব্যস্ত। সব স্বাভাবিক ই ছিলো। কিন্তু হুট করে কোথা থেকে দুজন হুডি ওয়ালা লোক এসে পিছন থেকে জাবেদ ভাইয়া আর আকাশকের মুখ চেঁপে ধরে টানতে টানতে ছাদের দিকে নিয়ে যায়। আমি এসব দেখে যেই না চিৎকার দিতে যাবো এর আগেই আমার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা আমার মুখ চেঁপে ধরে। জাবেদ ভাইয়াদের মতো ঐ লোকটা ও আমাকে টানতে টানতে ছাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। আমি অনেক চেষ্টা করে ও লোকটা থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারি নি। তবে আমি এক্টা জিনিস আন্দাজ করতে পেরেছি। এই লোকটা স্যাডোধারী লোকটা না। এই লোকটা অন্য কেউ ছিলো। কারণ, স্যাডোধারী লোকটার হাতে সবসময় এক্টা রিং থাকে। কিন্তু আজ আমি লোকটার হাতে রিং এর কোনো অস্তিত্ব পাই নি। এরপর লোকটা আমাকে চিলিকোঠার রুমে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে আমার কানের কাছে এসে মিনমিন করে বলল,,,,,,
—“তোর লাভার জায়ানকে বলে দিবি মিছি মিছি আমার বসকে খুঁজে লাভ নেই। সে সাত জনম তপস্যা করলে ও আমার বস অব্দি পৌঁছাতে পারবে না। তোর লাভার তো আমাদের মতো সামান্য চ্যালার ভার ই নিতে পারছে না আর আমার বস অব্দি পৌঁছানো তো চরম দুষ্কর ব্যাপার। আর শুন….আমার বস বলেছে তোকে এতো তাড়াতাড়ি না মারতে। তিলতিলে ভয় দেখিয়ে তোকে মারতে। সাথে তোর লাভার জায়ানকে ও। মাঝখান থেকে ভুল টাইমে জাবেদ আর আকাশ এসে নিজেদের শনিটা লাগালো। কি দরকার ছিলো ভুল টাইমে এন্ট্রি নেওয়ার? তাই তো দিলাম ছাদের সাথে বেঁধে। পাক এবার শাস্তি। তোকে কেনো এখানে ধরে এনেছি জানিস? তোর প্রাণের লাভার জায়ানকে নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুড়ানোর জন্য। আমার বস দেখতে চায় জায়ান তোর জন্য কতোটা ঘুড়তে পারে। যদি ঐ হারামীর উপস্থিত বুদ্ধি থাকে তাহলে নিশ্চয়ই তোকে শীঘ্রই খুঁজে পাবে নয়তো গোল গোল হয়ে পুরো দুনিয়া ঘুড়বে।”
কথাগুলো বলেই লোকটা আমাকে আবার ফ্লোরের উপর ছুড়ে মারে। সাথে সাথেই আমি সেন্সলেস হয়ে যাই। এরপর কি হয়েছে না হয়েছে আমি কিছুই জানি না।
কথা গুলো শুনে জায়ান রাগে গিজগিজ করছে। রাগে ওর চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। জায়ান আর দেরি না করে রুমের দরজা খুলে নিচ তলায় তাকিয়ে দেখল আকাশ আর জাবেদ সোফায় বসে আছে। দুজনের মুখটাই বিবর্ণ হয়ে আছে। জায়ান ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,
—“জাবেদ ভাইয়া আর আকাশ দুজনেই এক্টু উপরে আয়।”
জায়ানের চিৎকারের আওয়াজে দুজনই হকচকিয়ে উঠল। জায়ান ওদের দিকে তাকিয়ে আবার হাত দিয়ে ইশারা করে বলল উপরে আসার জন্য। ওরা আর বসে না থেকে ধীর পায়ে হেঁটে উপরের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরল। জায়ান রুমে ঢুকে তমার পাশে বসে পড়ল। আকাশ আর জাবেদ রুমে ঢুকে জায়ানের মুখোমুখি দাঁড়ালো। জায়ান দুইজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“তোমাদেরকে ঐভাবে বাঁধল কে? আর তোমরাই বা ছাদে গেলে কি করে?”
জাবেদ আর আকাশ দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মুখ খুলে জাবেদ জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“জয়াকে বাড়ি নেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিলো। তুই আর তমা আসতে লেইট করছিলি তাই আমি আর আকাশ তোদেরকে এগিয়ে আনতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিলাম হুট করে পিছন থেকে কেউ এসে এক্টা কালো কাপড় দিয়ে আমাদের মুখ চেপে ধরে। এর পর পরই আরো একজন হুডি ওয়ালা লোক এসে তমার মুখ চেঁপে ধরে। আমরা কেউ ই চিৎকার করতে পারছিলাম না। ওরা তিনজনই আমাদের কে টানতে টানতে ছাদের উপর নিয়ে গেলো। আকাশকে আর আমাকে ছাদের পিলারের সাথে বেঁধে দিলো। আর তমাকে নিয়ে চিলি কোঠার রুমে ঢুকিয়ে নিলো। তমার সাথে লোকটা কি করেছে এই বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। লোক দুটো আমাকে আর আকাশকে বেঁধে রেখে সিঁড়ি বেয়ে আবার নিচে নেমে গেলো। তৃতীয় লোকটি কিছুক্ষন পর চিলিকোঠার রুম থেকে বের হয়ে আমাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছাদ থেকে দ্রুত পায়ে প্রস্থান নেয়।”
জায়ান কিছুটা চিন্তিত হয়ে মাথায় হাত দিয়ে জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়ালো। জায়ান চোখ মুখ কুচকে হাত দিয়ে কপাল ঘঁষছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,
—-“তিন তিনটে লোক বাড়ির ভিতর ঢুকে এতো বড় ক্রাইম করে চলে গেলো অথচ আমরা কেউ তাদের ধরতে ও পারলাম না? এটা কি আদৌ সম্ভব? তাহলে কি লোক গুলো আমাদের পরিচিত? নিশ্চয়ই লোক গুলো আমাদের সবাইকে খুব ভালো করে চিনে। তাই এতো অনায়াসে এই বাড়িতে ঢুকতে পেরেছে। আমি যখন তমাকে না পেয়ে চিৎকার করছিলাম তখন নিশ্চয়ই লোক গুলো ছাদের সিঁড়িতে উৎ পেতে দাঁড়িয়েছিলো। আমরা সবাই দুতলা থেকে সরে গেলেই লোক গুলো বাড়ি থেকে ছুটে পালাবে। হলো ও ঠিক তাই। আমি আর তমাল যখন বাড়ি থেকে হম্বিতম্বি হয়ে বের হয়ে যাই তখন নিশ্চয়ই সবাই দুতলা ছেড়ে নিচ তলায় চলে গিয়েছিলো আর সেই সুযোগেই লোক গুলো বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। তাছাড়া বাড়িতে তো অনেক গেস্ট। এতো গেস্টের মাঝ খান থেকে খুব ইজিলি নিজেদের গা বাচিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকা এবং বের হওয়া দুটোই সম্ভব। লোক গুলো আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে আমাকে। লোকটা তো তমাকে ডিরেক্টলি বলে ই দিয়েছে আমাকে হেনস্তা করার জন্য লোক গুলো এমন করছে। বিশেষ করে ওদের বস। তমা আর আমার মধ্যকার অদৃশ্য শত্রু একজন নয় হাতে গোনা অনেক জনই। তবে আমার কেনো জানি জাবেদ ভাইয়াকে খুব সন্দেহ হচ্ছে। জাবেদ ভাইয়ার দৃষ্টি আমার অস্বস্তির কারণ। তাছাড়া শার্টে লাগা রক্ত। এই রক্তটাই আমার মনে ঘটকার সৃষ্টি করছে। আমার কি একবার জাবেদ ভাইয়াকে জিজ্যেস করা উচিত রক্তটা কিসের?”
জায়ান কিছুক্ষন ভেবে আবার বলল,,,,,,
—-“নিশ্চয়ই জিগ্যেস করা উচিত। তবে ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে। জাবেদ ভাইয়া যেনো আঁচ করতে না পারে যে আমি ওকে সন্দেহ করছি।”
কথাগুলো বলেই জায়ান ঠোঁটে মলিন হাসি ঝুলিয়ে জাবেদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জাবেদের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে জাবেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“ভাইয়া তুই কি পান খাস? শার্টের কলারে পানের পিচকি লেগে আছে।”
—-“আরে ওটা পানের পিচকি না। রক্ত লেগেছে কলারে।”
#চলবে,,,,,,,,,,,,,