< #ধোয়ার-নেশা #রোকসানা-রাহমান পর্ব (৭) কাগজের ভাজ খুলতেই পালক দেখতে পেলো ***I need a pad an emergency*** ইতি অন্ত্রীশা পালক এক লাইনের ইংলিশ লেখাটি দেখে যতটা না বিব্রত হয়েছে তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে নিচে ইতি লিখে নাম লিখার পুর্বে কিছু একটা লিখে কেটে দিয়ে আবার নামটা লিখা দেখে। বাচ্চাদের মতো কেটেকেটে কালো দলা পাকিয়ে রেখেছে। কেউ যে নিজের নাম লিখতে ভুল করে তা পালক এটা নিয়ে দুজনকে দেখলো। কাগজটি হাতে নিয়েই পালক নিজের অতীতে হারিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ বছরের আগের কথা। তখন পালক বিবিএ ৩য় বর্ষের ছাত্র। তুখোর মেধাবী হওয়ায় পুরো ভার্সিটিতে নামধাম বেশ কামিয়ে চলেছে। এদিকে জুনিয়র থেকে সিনিয়রসহ,শিক্ষকশিক্ষীকা ও প্রিনসিপালের মুখেও সারাক্ষন শুধু পালকের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। শুধু মেধাবী দিয়ে এত প্রশংসনীয় পাওয়া সম্ভব না। সাথে আরো বেশ কিছু গুনগানও বিদ্যমান। যার মধ্যে,শান্ত,ভদ্র শিষ্টাচার,ডিসিপলিন,আচার ব্যবহারেও সবার থেকে এককদম এগিয়ে। এতকিছুকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে গিয়ে মেয়েদের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে সে। কিন্তু সেটাকে নিজের দুর্বলতা না ভেবে বেশ গর্ববোধই করতো পালক। ৩য় বর্ষের ছাত্র,এত হ্যন্ডসাম,এত সুন্দর অথচ খুবই সাধারনভাবে চলাচল যেন সবাইকে আরো বেশি ভাবাত। মেয়েদের থেকে দুরে দুরে থাকাটা যেন মেয়েরা সহ্যই করতে পারতোনা। "" উফ! এত সকাল সকাল আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস,কাদির? আর এক সপ্তাহ পর ইনকোর্স। আমার এখনো কত কি পড়া বাকি জানিস?"" কাদির বাইকের স্পিড বাড়িয়ে বললো, "" আজকে আমি আমার ক্রাসকে প্রপোস করতে যাচ্ছি। খুব নার্ভাস লাগছে রে পালক। তোরা পাশে থাকলে আমার নার্ভাসনেসটা কিছুটা কমবে!"" "" তোরা মানে? আর কে আছে? আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা।"" "" আতিশও আছে। ও ভার্সিটিতেই ওয়েট করছে।"" বাইক থেকে নামতে নামতে বেশ বিরক্ত নিয়েই পালক বললো, "" এসব ফালতু কাজে তোরা আমাকে কেন টেনে আনলি? এইসব প্রেম ট্রেম দিয়ে কি হবে শুনি? একটা মেয়ের পেছনে শুধু শুধু সময় নষ্ট করা ছাড়া আরতো কিছু আমার চোখে পড়েনা।"" "" যখন পড়বে তখন তুই মরিচগাছে সরষে ফুল দেখবি!"" আতিশের কথায় এবার বেশ রেগে গেলো পালক। খানিকটা ওর কাছে এগিয়ে বললো, "" ফাজলামি করিস আমার সাথে? মরিচ গাছে সরষে ফুল? এমন অযৌক্তিক কথা তোরা কিভাবে বলিস,বলতো?"" আতিশ আর কাদির একতালে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। তাদের হাসি যেন পালকের রাগকে আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে। পালক রাগে কটমট করে ওখান থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই মেয়েলী কন্ঠ ভেসে এলো, "" এখানে পালক ভাইয়া কোনটা?"" মেয়ে কন্ঠ পেয়ে আতিশ আর কাদির হাসি থামিয়ে দিয়ে সামনে বোরকা পরিহিত মেয়েটির দিকে তাকালো। কালো বোরকার সাথে মুখে নেকাব করাই দুটো চোখ ছাড়া কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। দুজনেই বুঝার চেষ্টা করছে এই মেয়ের পালককে দিয়ে কি কাজ? পালক মেয়েটির দিকে এককদম এগিয়ে বললো, "" কেন?"" মেয়েটি তার হাতে গচ্ছিত দুভাজ করা একটি কাগজ পালকের দিকে এগিয়ে বললো, "" একটা আপু আপনাকে এটা দিতে বলছে। খুব আর্জেন্ট বলেছে। এটাতে নাকি উনার জীবনমরন প্রশ্ন লুকায়িত। আপনাকে উত্তর খুজে বের করতে বলেছে!"" মেয়েটির কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা পালক। একটা কাগজের সাথে জীবন মরনের প্রশ্ন কি করে লুকায়িত হতে পারে?? পালককে অবাক করে দিয়ে মেয়েটি তার হাত ধরে ফেললো। পালক কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে তার হাতে কাগজটি ধরিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেলো। কাদির পালকের দিকে এগিয়ে এসে কিছুটা বিদ্রুপের সুরে বললো, "" এতোদিন তো পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর খুজতি এখন নাহয় একটা মেয়ের জীবন মরনের উত্তর খুজবি! তোর জন্য এগুলোই পারফেক্ট!"" কাদিরের কথার পিঠে কোনো কথা না বলেই পালক হাঁটা ধরলো। তার রাগ হচ্ছে,ভীষন রাগ। তার বন্ধু হয়ে ওরা কেন তার মতো হলোনা? ইচ্ছে হচ্ছে ওদের মাথাগুলো ফাটিয়ে দিতে৷ শুধু ফাটালে হবেনা,মগজ থেকে প্রেমের ভুতও উপরে ফেলে দিতে হবে। বাসায় এসে পড়ার টেবিলে বসতেই পালকের সেই কাগজটির কথা মনে পড়লো। একটা কাগজে কি করে জীবন মরনের প্রশ্ন থাকতে পারে তা দেখার জন্য পকেট থেকে কাগজটা বের করলো। ভাজ খুলতেই গুটি কয়েক লাইন চোখে পড়ছে, **এই যে উত্তম পুরুষ! শুনলাম আপনি নাকি পৃথিবীর সব পুরুষের গুনাগুন নিজে একাই বয়ে বেড়াচ্ছেন?? কেন আপনার কি আর কোনো কাজ নেই? মানুষের মগজ চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছেন কেন? সাথে আমারটাও খাচ্ছেন। ক্লাসে টিচাররা ঢুকেই আগে আপনার নামে যখন কতগুলো ফুলঝুড়ি ছাড়েনা তখন আমার কি করতে ইচ্ছে করে জানেন? আপনাকে ব্লেন্ডারে ঢুকিয়ে সরবত বানিয়ে খেয়ে ফেলতে। আমার ফ্রেন্ডের কাছে শুনলাম আপনি নাকি শুদ্ধ পুরুষ? কোনো মেয়ের দিকে ঘুরেও তাকাননা? মেয়েদের দেখলেই নাকি আপনার শরীরে এলার্জি দেখা দেয়? আপনার এই এলার্জির ঔষধ আমি বানিয়ে ফেলেছি। খুব শীঘ্রই আপনার রোগ ভালো হতে চলেছে। আর আপনার এই শুদ্ধ পুরুষিয়োককে আমি কলংকিত করার নীলনকশাও করে ফেলেছি। আপনার শুদ্ধতার মধ্যে আমি কঠিন পদার্থ আর জড় পদার্থ একসাথে বিক্রিয়া করে জীবানু বানিয়ে,সেগুলো ঢেলে দিয়ে আপনাকে অশুদ্ধ বানিয়ে কলংকিত করে দিবো। এখন আপনি কতটা কলংকিত হতে চান সেটা ভাবুন। আপনার ভাবনার উপর বিবেচনা করেই নীলনকশার উপর সিলমারা হবে! ইতি পত্রীকন্যা এমন ভয়ংকর চিঠি পড়ে পালকের মাথা ঘুরছে। মাথার উপরে যে ফ্যানটা ৩৬০ ডিগ্রি আংগেলে ঘুরছে তার তুলনায় পালকের মাথা যেন ৩০৬০ আংগেলে ঘুরছে বললেও ভুল হবে৷ পালকের শরীর ঘেমে উঠেছে। হাত,পা কাঁপাও শুরু করে দিয়েছে। পালক মাথা কয়েকবার ঝাকিয়ে নিয়ে চিঠিটার দিকে পুনরায় সুক্ষ নজরে তাকালো। লেখার স্টাইলে মনে হচ্ছে মেয়েটি খুব বেশি হলেও ইন্টারে পড়বে। কিন্তু কথার ধরন দেখে মনে হচ্ছে তার থেকে সিনিয়রও হতে পারে! ইতি লেখার ঠিক নিচে নাম লেখার জায়গাটা কালো কালি দিয়ে কেটেকুটে দলা পাকিয়েছে। সেতো নাম লিখতে গিয়েই ভুল করে কলংকিত হয়ে গেছে। ভাবতেই পালকের ঠোটে হাসি ফুটে এসেছে। কাটাকাটির পর্বের শেষে তার ঠিক নিচেই খুব সুন্দর করে পত্রী কন্যা লেখা দেখে পালকের মাথা ধরা ভালো হয়ে গেলো। এমন অদ্ভুত নামও যে হতে পারে পালকের জানা ছিলোনা৷ কেন জানি মনে হচ্ছে এটা ছদ্মনাম! কিন্তু ছদ্মনাম কেন ইউস করলো? আর তাকে কলংকিত করবে মানে? এখানে কলংকিত দিয়ে কি বুঝাতে চাইছে? চিঠি নিয়ে ভাবতে ভাবতেই পালক টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়লো। সে রাতে তার আর পড়া হলোনা। যে ছেলেটা প্রেমের বিপরীতে চারশো চুয়াল্লিশ ধারায় মামলা করে বেড়াতো,সেই ছেলেই একটা চিঠির চিন্তায় ঘেমে যাচ্ছে! কে দিলো তাকে এমন ভয়ংকর চিঠি? চিঠির প্রত্যেকটা লাইনের প্রত্যেকটা অক্ষরে সে ঝাঝালো ঝংকারের ছোয়া পাচ্ছে। মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি তাকে ব্লেন্ডারে বসিয়ে একটু পর পর সুইচ টিপে দিচ্ছে! পুরো এক সপ্তাহযাবত সে চিঠির মালকিনকে খুজে বেড়ালো৷ চিঠির মালকিন তো দুরের কথা যার হাত দিয়ে চিঠি পেয়েছিলো তাকেও সে খুজে পেলোনা। ভার্সিটির প্রত্যেকটা ইয়ারের রেজিস্টার খাতায় সে পত্রী নামের কোনো মেয়ে আছে কিনা খুজে খুজে সে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবুও কোনো ক্লু পেলোনা। পাবেইবা কি করে সে যে খুব চালাকির সাথে ছদ্মনাম ইউস করেছে! পত্রী কন্যাকে খুজে না পেয়ে যখনি সে ঝিমিয়ে পড়ে পড়ায় মন বসাচ্ছিলো পালক, ঠিক তখনি আরেকটা চিঠি পেলো। তবে এবার কারো হাত দিয়ে নয়,সোজা কুরিয়ার হিসেবে বাসায় পাঠিয়েছে। "" এতোরাতে তুই এখানে?"" কাধে আতিশের হাতের ছোয়া পেয়ে পালক অতীত থেকে বেড়িয়ে, ওকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো। "" আমার সাথে কেন এমনটা হলো বলতো! আমি তো এগুলো থেকে দুরেই ছিলাম। তাহলে সে কেন যেচে এসে আমাকে ফেলে চলে গেলো? আমার পত্রী কন্যা আমাকে সত্যি সত্যি কলংকিত করে দিয়েছে!"" পালককে এভাবে কাঁদতে দেখে আতিশের বুকটা ধক করে উঠলো। আজ অনেকদিন বাদে ওর মুখে পত্রীকন্যার নাম শুনছে। হঠাৎ কি এমন হলো যে ওকে আবার এতো রাতে ভার্সিটিতে টেনে আনলো? হ্যা এটা সেই জায়গা যেখানে তার পত্রী কন্যা তাকে প্রথম চিঠি দিয়েছিলো! "" এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস কেন তুই? তোর সাথে কান্নাটা খুবই বেমানান লাগে। চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি। আন্টিরা খুব টেনশন করছেন। আর এখন তো তুই একা না তোকে তো আরেকজনের সুখদুখের কথাও ভাবতে হবে। এসব পত্রীকন্যা রুপকথার মতোই হয়,বুঝলি?"" ইন্টারভিউতে থাকা অবস্থায় মিসেস তানিয়া বেগমের কল পায় আতিশ। নিজের ইন্টারভিউয়ের পর্ব শেষ করেই কল ব্যাক করে। ফোনের অপরপাশে মিসেস তানিয়ার উদ্বিগ্ন কন্ঠ শুনেই আতিশ বুঝতে পেরেছিলো পালক কোথায় থাকতে পারে। তাই সে সময় নষ্ট না করে সোজা এখানে ছুটে এসেছিলো। পালককে নিয়ে কিছুদুর এগোতেই পালক আতিশকে বললো, "" তুই খুব টায়ার্ড,আতিশ! তুই বাসায় যা। আমি এখন ঠিক আছি।"" "" আমি কোনো টায়ার্ড না। তোকে বাসায় রেখে এসেই..."" "" তোর মতো বন্ধুর জন্যই আজো হাজারও হৃদয়ভাংগা প্রেমিকগুলো বেঁচে আছে! তুই এতো ভালো কেন রে?"" আতিশ হালকা হাসি দিয়ে বললো, "" তোর বন্ধু যে তাই!"" আতিশকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে পালক নিজের বাসার উদ্দশ্যে গাড়ী স্টার্ট দিলো। অন্ত্রীশা তার লাল জামদানী শাড়ীর আচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চোখের কোনটা ছিলে ফেলেছে। এতক্ষন পালকের জন্য কান্না পেলেও এখন চোখের নিচে ছিলে যাওয়া ফলে যে জ্বলন হচ্ছে তার জন্য কান্না পাচ্ছে। পালক রুমে ঢুকতেই অন্ত্রীশা উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। তার খুব অভিমান হচ্ছে। এতো বেশি কেন অভিমান হচ্ছে? ইচ্ছে হচ্ছে ছুটে গিয়ে পালকের কলারটা টেনে চিৎকার করে বলতে, কেমন স্বামী আপনি যে নিজের বউয়ের লজ্জাকে সামলাতে পারেননা? এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার আপনি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন? বউ হিসেবে না হোক একটা মেয়ে হিসেবেও তো তার লজ্জাটাকে ঢেকে রাখতে পারতেন!"" অন্ত্রীশার আবার চোখ ভরে এলো। তার চুমুবাবুটা সারাদিন পর বাসায় এলো তাকে সে দেখবেনা? একটু কথা বলবেনা? কিন্তু সে তো এখন রাগ করছে আর রাগ করলে কি কথা বলা যায়? তাহলে রাগের বৈশিষ্ট্যকে তো তার অপমান করা হবে। পালক কাগজে মোড়ানো একটা প্যাকেট অন্ত্রীশার পাশে রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। দরজায় সিটকিনি লাগানোর শব্দ পেয়েই অন্ত্রীশা দ্রুত উঠে বসলো। প্যাকেটটা হাতে নিয়ে কাগজ খুলতেই অন্ত্রীশার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। গরম ভাতের মারের মতো টগবগ করে ফুটছে। পালক ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলতেই অন্ত্রীশাকে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। শাড়ীর আচলটা কোমড়ের পেচিয়ে এনে একপাশে গুজে দিয়েছে। ওকে পাশ কেটে বের হতে গেলেই অন্ত্রীশা চেচিয়ে উঠলো, "" আপনি কি সময়ের কাজ সময়ে করতে শিখবেননা? আর কবে শিখবেন?"" পালক থমকে যেতেই অন্ত্রীশা নিজের হাতের প্যাকেটটা ওর মুখের সামনে ধরে বললো, "" এটা কি এনেছেন?"" পালক প্যাকেটের দিকে না তাকিয়েই বললো, "" তুমি যা আনতে বলেছিলে!"" অন্ত্রীশা আরেকটু উচ্চস্বরে বললো, "" আমি এটা আনতে বলেছিলাম?"" পালক এবার বিরক্ত হয়ে প্যাকেটটার দিকে তাকাতেই চোখ ছানাবড় হয়ে গেলো। এটাতো ময়দার প্যাকেট! কিন্তু কি করে হলো? ও তো লোকটাকে প্যাড দিতেই বলেছিলো! "" কি হলো এখন কথা বলছেননা কেন?"" "" অন্ত্রীশা আমি উনাকে প্যাডের কথায় বলেছিলাম। হয়তো উনি ভুল করে..."" "" অন্যজন যা বলবে তাই আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে? নিজে যাচাই করে দেখতে পারেননা আসলেই আপনি ঠিক জিনিসটা নিচ্ছেন নাকি? আর কত এমন একটার পরিবর্তে অন্যটা নিয়ে চলে আসবেন?"" অন্ত্রীশা ঝগড়ার মুডে থাকলেও তা দমে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। তার আবার কান্না পাচ্ছে। আজ এতো কেন কান্না পাচ্ছে? আজ কে কি তার কান্না দিবস? পালক অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার কিছু কিছু কথা এমন একটা ভাব তুলে মনে হয় সে তাকে অনেক আগে থেকেই চিনে। শুধু তার দিক থেকে না মাঝে মাঝে তো নিজেরও মনে হয় ওকেও সে চিনে। কিন্তু এমনটা কখনোই হতে পারেনা। কেননা ওকে তো প্রথম পাত্রী দেখতে গিয়েই দেখেছে এর আগে কোথাও দেখেছে বলে মনে করতে পারছেনা পালক! বেশ! ভাবান্ত অবস্থায় পালক মেঝেতে শুয়ে পড়েছে। অনিকশা আর আতাউর খন্দকার অনেক্ষনযাবতই মিসেস তানিয়া বেগমের সাথে গল্প করছেন। অন্ত্রীশাকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার বাহানায় এখানে আসা। এর মধ্যে অন্ত্রীশাও একবার এসে জড়িয়ে ধরে, কান্না করে আবার চলেও গেছে। কিন্তু এটা খুশির কান্না নাকি কষ্টের কান্না তা বুঝতে পারেনি অনিকশা। বুঝার সময়ও পাইনি। কিছু বুঝার আগেই চোখের পানি মুছে বাবার সাথে গল্পে মেতে উঠেছিলো অন্ত্রীশা। আতাউর খন্দকারের হাতে বেশি সময় না থাকা বিধায় তাকে গোছগাছ করার জন্যই পাঠানো হয়েছে। মিসেস তানিয়া বেগমের দিকে একদন্ড তাকিয়ে অনিকশার ভালো লেগে গেছে। বেশ হাসিঝুশি আর প্রানবন্ত মানুষ। প্রতিটা কথার ফাঁকে ফাঁকে ছোটছোট হাসি উপহার দিচ্ছেন। বারবার মুখগোমড়া করে অভিযোগের সুরে বলছেন, ""এতো কম সময় নিয়ে এলে মা? অন্তত দুপুরের খাবারটা তো খেয়ে যেতে পারতে। আমাদের বাসায় প্রথম এলে তোমরা,আপ্যায়নের সুযোগটাও পেলামনা!"" "" বিয়ের ঝামেলায় মা একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তো,তাই একটু তাড়াতাড়ি যেতে পারলে ভালো হয়। আর আপনি এভাবে কেন বলছেন? আমরাতো দুদিন পরপরই বোনকে দেখতে চলে আসবো। তখন আপ্যায়ন করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাবেন!"" অনিকশার এবারের কথাতেও মিসেস তানিয়াবেগম হেঁসে উঠলেন। তিনি এবার আতাউর খন্দকারের দিকে ঝুকতেই অনিকশা উঠে দাড়ালো। এতো কি গোছগাছ করছে অনতি? ঘন্টা তো পার হয়ে এলো। ভাবতে ভাবতেই অনিকশা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠা শুরু করেছে। অন্ত্রীশা শ্বাশুড়ির অনুমোতি নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে নিজেকে গুছিয়ে নিতে। জামাটা চেন্জ করে একটা সুতির শাড়ী পড়ে নিলো। চুলে চিরুনি দিতেই পালক হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট মুখে পুড়ে ম্যাচ খুজছে। এই বাসায় সে দুদিনযাবত আছে কই কখনোতো উনাকে সিগারেট খেতে দেখেনি। তাহলে আজ হঠাৎ তাও মেহমান থাকা অবস্থায় সিগারেট খাচ্ছেন কেন? আয়নায় অন্ত্রীশা পালককে দেখে থমকে গেলো। হাত থেকে চিরুনি ফেলে রেখে পালকের কাছে ছুটে এলো। বেশ অসহায়ভাবে বললো, "" আমার বাবা এসেছেন,সাথে আপুও। আর আপনি এখন সিগারেট ফুকছেন? খুব বাজে লাগছে। প্লিজ ওটা ফেলে দিন!"" অন্ত্রীশার কথা কানে না নিয়েই পালক সিগারেটটা ধরিয়ে ফেললো। একটা টান দিতেই অন্ত্রীশা এবার উত্তেজিত হয়ে বললো, "" আমার কথা কি আপনি বুঝতে পারছেননা? এখন যদি কেউ রুমে চলে আসসসসসস..."" অন্ত্রীশাকে তার কথা শেষ করতে না দিয়ে ওর ঠোটদুটো নিজের ঠোটের আয়ত্বে নিয়ে নিয়েছে পালক। ঘটনার আকস্মিকতাকে কাটিয়ে উঠতে না পেরে অন্ত্রীশা পালককে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ওর কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে ল্যেপ্টে নিলো পালক। আজও যে নিজের মধ্যে বন্দী হয়ে থাকা ধোয়াগুলো অন্ত্রীশার মধ্যে ঢেলে দেওয়া তার মুখ্য কাজ হয়ে দাড়িয়েছে! চলবে