হৃদরোগ #অহর্নিশা #পর্ব_সংখ্যা ২৩

#হৃদরোগ
#অহর্নিশা
#পর্ব_সংখ্যা ২৩

• আবার সূচনা হলো এক নতুন দিনের আর সুন্দর সকালের। সুদেষ্ণাদের বাড়িতে এখন জমজমাট ব্যাপার-স্যাপার ।‌বাড়ির ছোটো মেয়ের বিয়ে কিনা , একটু হোইহুল্লোর তো হবেই। অবশেষে সুদেষ্ণার বিয়ের ডেট ফাইনাল করা হয়েছে আজকে তাও আবার তার পছন্দের মানুষের সঙ্গে । হিমাদ্রর বাড়ির সবাই এসেছিলো এবং বিয়ের ডেট ফাইনাল করে গেছে , কেননা হিমাদ্রর বিয়ে করার ভীষন তাড়া । এই বিয়ে নিয়ে সবাই খুশিই আছে । হিমাদ্রর বাড়ির লোকের সুদেষ্ণাকে ভীষন মনে ধরেছে,,,,,, বিশেষ করে রেখা রায় চৌধুরীর। আর সুদেষ্ণার বাড়ির লোকেরও হিমাদ্রকে পছন্দ হয়েছে। কেননা হিমাদ্রকে অপছন্দ করার মতো কোনো কারন নেই, হিমাদ্র নিঃসন্দেহে একজন সুদর্শন এবং ভালো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ।

আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখতে ব্যস্ত সুদেষ্ণা , তার ভীষন মন খারাপ। হিমাদ্রর আজকে আসার কথা ছিলো কিন্তু তার কাজের জন্য আসতে পারিনি । সুদেষ্ণা তার প্রিয় মানুষটার জন্য সাজলো আর মানুষটাই এলো না। কতো দিন হলো মানুষটাকে দেখা হয়নি, না ঠিক মতো কথা হয়েছে। হিমাদ্র এখন বেশ ব্যস্ত থাকে নিজের পড়াশোনা নিয়ে কয়েক মাস পরেই তো হিমাদ্রর ফাইনাল ইয়ারের সমাপ্তি । সুদেষ্ণার বিশ্বাস হচ্ছে না অবশেষে তারও বিয়ে হবে তাও আবার হিমাদ্রর সঙ্গে । সুদেষ্ণা কখনো ভাবতেও পারিনি হিমাদ্রও কোনো দিন তাকে ভালোবাসবে , অবশ্য হিমাদ্র কোনো দিন বলেনি তবে প্রকাশ তো ঠিকই করে। এই তো কয়েকদিনের কথা,,,,,,, হিমাদ্র কি পাগলামিটাই না করছিলো সুদেষ্ণার সঙ্গে কথা বলার জন্য । হিমাদ্র যেই দিন তার দিদিভাই আর তার দাদার ব্যাপারে জানালো সেই দিন সুদেষ্ণা বেশ ভরকালো। সুদেষ্ণা প্রথমে বুঝতে পারিনি যে তার কি করা উচিৎ আর কি বলা উচিৎ। সেই দিন সুদেষ্ণা হিমাদ্রকে কিছু না বলেই বাড়ি এসে গেছিলো আর কারোর সাথে কোনো কথা বলিনি। পরের দিন সুতৃষ্ণা লক্ষ্য করেছে যে সুদেষ্ণার মন খারাপ এবং সুদেষ্ণাকে একা পেয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলো,,,,,,,

“ ছোটো তোর মন খারাপ?? কালকে আসার পর থেকে দেখছি চুপচাপ আছিস,,,,,,, হিমাদ্র কিছু বলেছে?

সুদেষ্ণা তাকালো তার দিদিভাই এর দিকে, ভাবলো জিজ্ঞাসা করবে হিমালয় রায় চৌধুরীর ব্যাপারে ।পরক্ষণে ভাবলো তার দিদিভাই যদি কিছু মনে করে । অবশেষে দ্বিধা-দ্বন্দ কাটিয়ে সুদেষ্ণা বলেই ফেললো,,,,,,,,,

“ হিমালয় রায় চৌধুরীকে তুমি চেনো?

সুদেষ্ণার কথায় সুতৃষ্ণার তেমন বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না । সে একটু মলিন হেঁসে সুদেষ্ণার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,,

“সে আমার প্রাক্তন,,,,,,,। বাকিদের মতোই তুইও আমাকে ভুল বুঝেছিস ছোটো?

“ না,,,,। আমি জানি আমার দিদিভাই কারোর সঙ্গে অত্যন্ত প্রতারনা করতে পারে না । তবে এরকম করার কারন ?

“জানিস আমি মানুষটাকে ভীষন ভালবাসতাম । হ্যাঁ ভালোবাসতাম,,,,,,,,,,এখন যা আছে শুধু শ্রদ্ধাবোধ । আমি এখনো তাকে ভীষন শ্রদ্ধা করি । আমাদের সম্পর্ক বেশ ভালোই চলছিলো , আমাদের তো বিয়ে করার ও কথা ছিলো। হিমালয়ের বাড়ির সবাই আমাদের সম্পর্কের কথা জানতো তবে হিমাদ্র বাদে কেউ কখনো আমাকে দেখিনি। হিমালয়ের বাড়ির সবাই জানলেও আমার বাড়ির কেউ জানতো না । তো আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়িতে জানাবো আমাদের কথা। যেই দিন বাবা বাড়িতে ছিলো আমি বাবার কাছে গেছিলাম বলতে কিন্তু আমি পারিনি বলতে। বাবা আমাকে দেখে ডেকে নিজের পাশে বসালেন এবং বললেন আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। তাও আবার বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে । বিয়ের কথা শুনে বাড়িতে সবাই অনেক খুশি ছিলো , আমি সবার খুশি দেখে আর কিছু বলতে পারিনি। বাড়ির কেউ একবার জিজ্ঞাসা করিনি আমি রাজি আছি কি না , তারা তো জানতো আমি এরকম কিছু করতে পারি না। আমাকে যেদিন জানানো হয়েছিলো ততদিনে সব ঠিক হয়ে গেছিলো। আমি বাবার সম্মানের কথা ভেবে আর কিছু বলিনি। আমার বিয়ের পর সবাই আমাকে ভুল বুঝেছে। এই দিকে আমার বিয়ে হয়ে গেল রাহুলের সঙ্গে আর অন্য দিকে হিমালয়ের শরীর খারাপ। প্রথম দিকে আমার অসুবিধা হয়েছিলো তারপর মানিয়ে নিয়েছি । একদিন হিমালয়ের সঙ্গে দেখা করে তাকে ব্যাপারটা বুঝিয়েছি এবং সে বুঝেছে। শুধু মাত্র বোঝেনি হিমাদ্র, তারপর যেই দিন আমরা মলে গেছিলাম হঠাৎ ওর সাথে দেখা হলো । ও আমাকে তোর কথা জানালো তারপর ওকে বোঝানোর পর হয়তো তোর মূল্য বুঝতে পেরেছে।এই বলে থামলো সুতৃষ্ণা

সুদেষ্ণা অপলক তাকিয়ে রইলো তার দিভাইয়ের পানে,,,,, তার চোখ থেকে জলের ধারা গড়িয়ে পড়ছে । আসলেই না পাওয়ার যন্ত্রনা তীব্র কষ্টদায়ক। সুদেষ্ণা যা বুঝলো এতে হিমাদ্রর কোনো দোষ নেই । সে ভেবেছে হয়তো সুদেষ্ণাও সুতৃষ্ণার মতো করবে , তাই তার ওরকম ব্যবহার ছিল। তারপর সুদেষ্ণা হিমাদ্রর সাথে কথা বলে সব মিটিয়ে নিয়েছে। এখন কথা বিয়ে পর্যন্ত এগিয়েছে ।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here