#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৪
হাতে গান নিয়ে আয়েশিভঙ্গিতে টেবিলের উপর পা তুলে বসে আছে একটা লোক। তার মুখে মাস্ক আর চোখে সানগ্লাস থাকায় চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে লোকটা কে। চারদিকে হালকা নিভু নিভু আলো জ্বলছে। লোকটার ঠিক সামনেই অচেতন অবস্থায় চেয়ারের সাথে হাত পা বাঁধা আরেকটা লোক বসে আছে। আর তার পিছনে আরো চারজন মুখুশধারী লোক হাতে রিভলবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বসে থাকা লোকটির ভাব ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে লোকটা এদের সবার লিডার। লোকটা কিছু একটা ইশারা করতেই একটা লোক রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানি ভর্তি একটা কালো বালতি হাতে আবার ফিরে এলো। তারপর ওই এক বালতি পানি অচেতন লোকটার গায়ে ঢেলে দিল। সাথে সাথেই অচেতন লোকটা ধরফরিয়ে উঠল। লোকটা বোঝার চেষ্টা করছে যে সে এখন কোথায় আছে। লোকটা চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
—“কে তোমরা? আমাকে এখানে কেন ধরে নিয়ে এসেছো? দেখ ভালোয় ভালোয় বলছি আমাকে যেতে দেও না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
টেবিলের উপর পা তুলে বসা মাস্ক আর সানগ্লাস পরা লোকটা হাতে থাকা গান টা দিয়ে ভ্রু চুলকাতে চুলকাতে বলল,
—“আমার থেকে খারাপ আর কি হবে?”
লোকটা বিষ্ময়ে হয়ে বলল,
—“AR?”
—“এখন বল মেয়ে গুলো কোথায়?”
AR এর কথা শুনে লোকটা ক্ষিপ্ত হলো। গলা উঁচু করে বলল,
—“দেখ AR আমাদের কাজে নাক গলাস না এর ফলে কিন্তু ভালো হবে না।”
AR হাওয়ার গতিতে বসা থেকে উঠে গিয়ে লোকটার কন্ঠনালী চেপে ধরে কিড়মিড় করে বলল,
—“শশশশ। আওয়াজ নিচে। আমার সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না।”
কন্ঠনালী চেপে ধরায় লোকটা দম নিচে পারছে না। চোখ দুটো বড় হয়ে গেছে। আরে কিছুক্ষণ পর মনে হয় চোখ দুটো বেরিয়েই আসবে। AR লোকটাকে ছেড়ে দিল। তারপর গিয়ে আবার গিয়ে আগের ভঙ্গিতে বসে পরলো। তারপর লোকটার দিকে গান তাকে করে বলল,
—“তুই নিজেই ঠিক কর সব সত্যি কথা বলবি নাকি মরবি?”
লোকটা নাকচ করে হেসে বলল,
—“মেরে ফেল। তবুও আমার মুখ থেকে একটা শব্দ ও বেরবে না।”
লোকটার হাসিই যথেষ্ট ছিল AR কে হিংস্র বানিয়ে তুলতে। AR উঠে কিছু না বলেই লোকটার দুপায়ে দুটো গুলি চালালো। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি আত্মনাত করে উঠলো। AR চেঁচিয়ে বলল,
—“মেয়েগুলো কোথায়?”
কিন্তু কোনো মতেই লোকটা বলতে নারাজ সে জবাব দিলো,
—“এখনো বলছি ছেড়ে দে আমায়। খুব বড় ভুল………….”
AR ছুড়ি দিয়ে এক কোপে মেরে লোকটার কনিষ্ঠা আঙ্গুল টা হাত থেকে আলাদা করে ফেললো। লোকটা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো। লোকটার আত্মনাতে কেঁপে উঠলো পুরো রুম। তবুও কেউ টু শব্দটিও করলো না। রিভলবার হাতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো শুধু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে দেখছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা এসবে অভ্যস্ত। লোকটা চিৎকার করছে আত্মনাত করছে কিন্তু সত্যি কথা বলছে না। AR একে একে লোকটার হাতে পায়ের সব গুলো আঙ্গুল কেটে ফেললো। তারপর লবণ আর মরিচের গুঁড়া কাটা জায়গা গুলোতে ছিটিয়ে দিতে লাগলো। তাও লোকটা AR কে কিছু বলল না। লোকটা ব্যথায় চিৎকার করতে করতে জ্ঞান হারালো। AR চেঁচিয়ে বলল উঠলো,
—“এক বালতি ফুটন্ত গরম পানি এনে এর মুখে ঢাল।”
সঙ্গে সঙ্গে একটা লোক গিয়ে এক বালতি জল ফুটন্ত গরম পানি নিয়ে এসে ওই লোকটার মাথায় ঢাললো সাথে সাথে লোকটা চিৎকার করে উঠলো। AR শীতল কন্ঠে ভয়ংকর ভাবে বলল,
—“এখনো সময় আছে সব বলে দে। নাহলে তার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ আমি এই ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করব। তুই ভালো করেই জানিস আমি কি কি করতে পারি।”
—“তুই মেরে ফেল আমাকে আমি তাও তোকে কিছু বলব না। তুই কখনো ওই মেয়েগুলোর কাছে পৌঁছাতে পারবি না। আজ রাতেই ওদের বিদেশে পাচার করা হবে।”
AR এর মুখে রাগে লাল হয়ে গেছে। কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে। মুখুস থাকা স্বত্বেও তাকে খুব ভয়ংকর লাগছে। AR গর্জন করে বলে উঠলো,
—“ওকে শক ট্রিটমেন্ট দিবি। আর যদি তাতেও কাজ না হয় তাহলে পানিতে কারেন্ট দিয়ে তার মধ্যে ফেলে দিবি।”
বলেই AR ওখান থেকে চলে গেল।
_______________
আরিফা রেজওয়ান আলিয়ার রুমে এসে দেখে মুন আর আলিয়া গল্পের আসর জমিয়েছে। আরিফা রেজওয়ান এগিয়ে এসে বললেন,
—“মুন মামনী আমি তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজছি আর তুমি এখানে বসে আছো।”
—“কেন আন্টি? কি হয়েছে?”
—“আজ তো তোমার আর আঁধারের তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা। এটা একটা নিয়ম। আচ্ছা আঁধার কোথায় ও কে তো দেখছি না।”
—“উনি তো অনেক আগেই বেরিয়ে গেছেন।”
—“ওওও। হসপিটালে গেছে হয়তো। তুমি আঁধার কে ফোন করে বলো তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে। বিকেলেই তোমরা বেরিয়ে পরবে।”
—“ঠিক আছে আন্টি।”
আরিফা রেজওয়ান মুনের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
—“আমি না তোমার আরেক মা? তাহলে মা বলে ডাক।”
আলিয়া হেসে বলল,
—“মিষ্টি তুমি মা কে আন্টি কেন বলছো? উনি তো তোমার শাশুড়ি হয়।”
সবার’ই প্রথম প্রথম নতুন জায়গায় নতুন মানুষদের সাথে মিশতে কিছুটা সময় লাগে। মুনের ও লাগছে। মুন নিজের চঞ্চলতা এখানে প্রকাশ করতে পারছে না। কারণ মুন এখনো এদের সবাই কে আপন করে নিতে পারেনি। মন খুলে কথা ও বলতে পারছে না। মুন চেষ্টা করছে সবাইকে আপন করে নেওয়ার। মুন বলল,
—“উনি আমার শাশুড়ি হন আবার আরেক মা ও তাহলে উনাকে কি ডাকা যায়?”
মুন একটু ভেবে উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,
—“হ্যাঁ পেয়েছি। শাশুমা, আমি তোমাকে শাশুমা বলে ডাকবো।”
শেষের কথাটা বলেই মুন আরিফা রেজওয়ান কে জড়িয়ে ধরলো। আরিফা রেজওয়ান মুনের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।
.
মুন নিজের রুমে বসে ভাবছে। আঁধার কে ফোন করবে কি করবে না। অনেক ভেবে মুন ঠিক করলো ফোন করবে। মুনের ওর আব্বু আম্মু’র কথা খুব মনে পরছে। আর যেহেতু নিয়ম মেনে আজ ওদের ওই বাড়িতে যেতে হবে। সেহেতু আঁধার কে ফোন করে বলতে হবে। মুন ফোন করলো। রিং হওয়ার সাথে সাথে আবার কেটে দিল। মুনের খুব ভয় করছে যদি আঁধার ওকে আবার ফোনের মধ্যেই বকা দিতে শুরু করে। ভাবনার মাঝেই আঁধার কল ব্যাক করল। মুন ফোন রিসিভ করে কানে নেয়। ওপাশ থেকে আঁধার ব্যস্ত গলায় বলল,
—“হ্যালো কে বলছেন?”
মুনের মাথায় আবার সয়তানি বুদ্ধিরা কিলিবিলি করতে শুরু করে। মুন ভাবে আঁধারের সাথে একটু মজা করা যাক। মুন গলা চেন্জ করে নরম গলায় মিষ্টি করে বলল,
—“আপনার খুব কাছের একজন।”
—“হোয়াট? কে আপনি?”
—“মনের চোখ দিয়ে দেখুন ঠিক চিনতে পারবেন।”
—“হোয়াইট ননসেন্স? এসব ফালতু কথা বলে আমার টাইম ওয়েস্ট করার জন্য ফোন করেছেন? আবার যদি ফোন করে বিরক্ত করেন তাহলে একবারে শুট করে দিবো। ইডিয়েট।”
বলেই আঁধার ফোন কেটে দিল। মুন হা করে বসে আছে। ও কত সুন্দর করে কথা বলল আর আঁধার ওকে ইডিয়েট বলে ফোটো কেটে দিল! মুন ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
—“ইডিয়েট। রসকষহীন একটা মানুষ। ইশশশ এসের জন্য তো ভুলেই গিয়েছিলাম ওনাকে বাড়িতে আসতে বলতে হবে। আবার ফোন করতে হবে।”
মুন আবার ফোন করলো কিন্তু আঁধার ধরলো না। মুন কয়েকবার ট্রাই করলো ফোন বেজে কেটে যাচ্ছে কিন্তু আঁধার ধরছে না। মুন এবার মেসেজ পাঠালো। ফোনে মেসেজ টুন বাঝতেই আঁধার ফোন চেক করলো। মেসেজ টা আগের নম্বর থেকেই এসেছে। মেসেজে লেখা ‘আমি মুন। আপনার বউ। ফোন ধরুন।’ কিছুক্ষণ পর মুন আবার ফোন করল। আঁধার ফোন কেটে। নিজে কল ব্যাক করল। মুন বলল,
—“হ্যালো আঁধার আপনি কোথায়?”
আঁধার ধমক দিয়ে বলল,
—“তুমি আমার নাম ধরে ডাকো কোন সাহসে? তোমার বয়স কত হবে পনেরো কি ষোল? আর আমার কত জানো? পঁচিশ। আমি তোমার থেকে দশ বছরের বড়। আর তুমি আমার নাম ধরে ডাকছো?”
—“অ্যা আপনার মতো বুরো বেটা আমার জামাই? হায় আল্লাহ আমার জীবনটা বরবাদ হয়ে গেল। এই বুড়ো বেটা কে বিয়ে করার থেকে মরে যাওয়া ও ভালো ছিল। এই জন্য’ই তো বলি এই বেটা এতো রসকষহীন কেন?”
আঁধার এতক্ষণ বিষ্ময়ে হয়ে বসে ছিল। এবার ধমক দিয়ে বলল,
—” আমাকে দেখে তোমার বুড়ো মনে হয়? আর রসকষহীন মানে কি হ্যাঁ?”
—“মানে হলো আপনি একটা রসকষহীন।”
আঁধার রেগে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
—“ফাজলামো করার জন্য ফোন দিয়েছো”
—“না। আমাদের বাড়িতে যেতে হবে নিয়ম আছে। তাই শাশুমা বলেছে আপনাকে ফোন দিয়ে বাড়িতে আসতে বলতে।”
—“আমি যেতে পারবো না তুমি একাই চলে যাও।”
—“আমি একা গেলে হবে না দুজনের’ই যেতে হবে।”
—“বললাম তো কাজ আছে। যেতে পারবো না।”
—“দেখুন আঁধার আপ……”
আঁধার ধমক দিয়ে বলল,
—“আবার নাম ধরে ডাকছো?”
—“সরি। আঁধার ভাইয়া শাশু……”
আঁধার এবার রাম ধমক দিয়ে বলল,
—“এই বেয়াদব মেয়ে আমি তোমার ভাইয়া?”
—“এবার ও সরি। তাহলে আঙ্কেল ডাকি। শুনুন আঙ্কেল আমা…………”
আঁধার রেগে বলল,
—“আমাকে দেখে তোমার আঙ্কেল বলে মনে হয়?”
মুন ও এবার রেগে গেল তেজী গলায় বলল,
—“নাম ধরে ডাকলে দোষ, ভাইয়া বললে ও দোষ, আঙ্কেল বললেও দোষ। তাহলে বলব তো বলব কি? বাবা বলব এখন?”
আঁধার অবাক হয়ে গেছে মুনের কথা শুনে এই মেয়ের বুদ্ধি জ্ঞান বলতে কিছুই নেই। আঁধার ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
—“বেয়াদব মেয়ে ফোন রাখ।”
বলেই আঁধার নিজেই ফোন কেটে দিল। এই মেয়ের সাথে কথা বরানোই ভুল হয়েছে তার। দু মিনিটে পুরো মাথা ধরিয়ে দিয়েছে তার। এদিকে আঁধার ফোন রেখে দিতেই মুন আরো রেগে গেল। রেগে ফোনকে আঁধার মনে করে কিছুক্ষণ ঝারলো। তারপর শান্ত হয়ে বসে ভাবতে লাগলো আঁধার আসবে কি না। মুন আশা নিয়ে বসে থাকে আঁধার আসবে।
চলবে,
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_৫
রাত ১টা বেজে গেছে কিন্তু আঁধারের আসার কোনো খবর নেই। মুন অপেক্ষা করতে করতেই বেডের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। মুখটা শুকনো লাগছে। মনে হচ্ছে সারাদিন কিছু খায়নি। চোখের কোণিশে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। নাকের ডগা ও লাল হয়ে আছে। গালে হালকা গোলাপী আভা ফুটে আছে। দেখে মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছে। আর কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে গেছে। দেয়াল ঘড়ি যখন জানান দেয় এখন রাত ১:৩০ বাজে তখন আঁধার বাড়িতে আসে। আরিফা রেজওয়ান পানি নিতে কিচেনের দিকে যাচ্ছিলেন আঁধার কে দেখে তার দিকে এগিয়ে যায়। আরিফা রেজওয়ান কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
—“কোথায় ছিলি এতো রাত অবধি?”
মায়ের মুখে তুই শুনে আঁধার বুঝতে পারে আরিফা রেজওয়ান খুব রেগে আছে তার উপর। কারণ আরিফা রেজওয়ান যখন রেগে যান তখনই আঁধার কে তুই করে বলে। আঁধার সাধারণ ভাবেই জবাব দিলো,
—“কাজ ছিলো।”
—“তোর রাত ১টা পর্যন্ত কিসের কাজ? আর তোর ফোন কোথায় ছিল? কতবার ফোন করেছি ফোন ধরিসনি কেন?”
—“ফোন কাছে ছিল না। তাই ধরতে পারিনি।”
—“মুন তোকে ফোন করেছিল? ওর সাথে কথা হয়েছে তোর?”
—“হ্যাঁ।”
—“আজ ওদের বাড়ি যেতে হবে এই জন্য ও তোকে বাড়িতে আসতে বলেছিল?”
—“হ্যা বলেছিল।”
আরিফা রেজওয়ান তেজী গলায় বললেন?
—“তাহলে আসিস নি কেন? মেয়েটা সারাদিন কিছু খায়নি আর রুমের দরজা ও খোলেনি। তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতেই বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে। তোর জন্য মেয়েটা মনে আঘাত পেয়েছে। আমি তোকে ভালো করে চিনি তুই হয়তো ওর সাথে ভালো করে কথা ও বলিস না। দেখ আঁধার মেয়েটা এখনো ছোট। ওর বয়স কিন্তু বেশি না। আর এ বয়সে বিয়ে, আপন জনদের ছেড়ে নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের সাথে মানিয়ে নিতে পারছে না। তার মধ্যে আমরা যদি ওকে সময় না দেই ওর সাথে বন্ধু্র মতো না মিশি। তাহলে ও ও আমাদের আপন করে নিতে পারবে না। আমাদের কথা বাদই দিলাম কিন্তু তুমি তো ওর স্বামী তোমার উচিত ওকে বেশী বেশী সময় দেওয়া। ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। ওকে বন্ধুর মতো ট্রিট করা। কারণ বিয়ের পরে মেয়েদের সব থেকে আপন হলো স্বামী। সব থেকে ভালো বন্ধু হলো স্বামী। সুখ দুঃখের সাথী হলো স্বামী। এখন তুমিই যদি ওকে না বুঝো তাহলে কে বুঝবে বলো। এমন চলতে থাকলে তো ও ড্রিপ্রেশনে চলে যাবে। আঁধার তুমি একজন ডক্টর আর আমার জানা মতে বুদ্ধিমান ও। অতীত কে আঁকড়ে ধরে বাঁচা বোকামি। যা হয়েছে ভুলে যাও। যে গেছে সে আর কখনো ফিরে আসবে না। আর যে এসেছে তাকে যেতে দিওনা। সে ছিল তোমার অতীত আর মুন তোমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। এখন তুমি ভেবে দেখ কি সিদ্ধান্ত নিবে? আমি জানি তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত ও নিবে।”
কথা গুলো বলে আরিফা রেজওয়ান তার রুমে চলে গেলেন। আঁধার এতোক্ষণ মাথা নিচু করে চুপচাপ সব শুনছিল। আরিফা রেজওয়ান চলে যেতেই আঁধার মাথা তুলে তাকালো। তার চোখ দুটি ছলছল করছে। নীল চোখে পানি গুলো মুক্তার মতো চিকচিক করছে। আঁধার কাঁদছে? হ্যা আঁধার কাঁদছে। অতীত তাকে কাঁদাচ্ছে। নাহলে কারো সাদ্ধ্য নেই আঁধার রেজওয়ান কে কাঁদানোর। আঁধার রুমের লক খুলে রুমে ঢুকলো। আর সাথে সাথেই তার চোখে পরল মুনের ঘুমন্ত মুখটায়। মুনের এমন অবস্থা দেখে আঁধারের নিজের প্রতি কিছুটা অপরাধ বোধ কাজ করছে। আঁধার সোজা বেলকনিতে চলে গেল তারপর একটা সিগারেট বের করো লাল আভার ঠোঁটের মাঝে রাখলো। সব কিছু বিষাক্ত মনে হচ্ছে আঁধারের। কিছুক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ আঁধার সিগারেট টা ফেলে রুমে চলে গেল তারপর একবার মুনের দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এলো হাতে প্লেট নিয়ে। আঁধার প্লেট টা ল্যাম্প টেবিলের উপর রেখে। মুন কে ডাকতে লাগলো। কিন্তু মুন ঘুমে এতোটাই বিভোর যে আঁধারের ডাকে তার মস্তিষ্ক সারা দিতে চাইছে না। আঁধার কিছুটা ইতস্তত করে মুনের বাহুতে হাত দিয়ে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো। মুন আধো আধো চোখে আঁধারের দিকে তাকালো তারপর অভিমানী সুরে বলল,
—“আপনি খুব পচা Mr.Husband খুব। আপনার একটুও দয়া মায়া নেই। জানেন আপনি আসতে পারবেন না বলে ফোন কেটে দেওয়ার পরও আমি আপনার অপেক্ষায় বসে ছিলাম। মনের কোনো এক কোণে এতটুকু আশা ছিল যে আপনি আসবেন। কিন্তু আপনি আসেন নি। আমার আব্বুর কথা অনেক মনে পরছিল। ইচ্ছে করছিল ছুটে আব্বুর কাছে চলে যাই। আমি জানি আব্বু ও আমাকে অনেক মিস করছিল। আমি আব্বুর প্রতিটা নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারি। অনেক বেশি ভালোবাসি যে তাকে। আমরা যাকে সব থেকে ভালোবাসি, মানে নিজের থেকেও বেশী ভালোবাসি তার প্রতিটা নিঃশ্বাস আমরা সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে থেকেও অনুভব করতে পারি। কিন্তু আপনি তা বুঝবেন না। আপনি যখন কাউকে ভালোবাসবেন তখন বুঝবেন। কিন্তু আপনি তো হার্ট লেস পার্সন আপনি কি করে কাউকে ভালোবাসবেন?”
এতক্ষণ ঘুমের ঘোরে কথা গুলো বলছিল মুন। বলা শেষ হতেই মুন আবার ঘুমিয়ে গেল। আঁধার তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
—“তুমি ঠিকই বলেছ মুন আমি হার্ট লেস পার্সন। কিন্তু এর জন্য দায়ী………..”
আঁধার থেমে গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে গ্লাস থেকে পানি নিয়ে মুনের চোখে মুখে ছিটিয়ে দিল। মুন পিট পিট করে চোখ মেলে তাকালো। আঁধার কে নিজের সামনে দেখেই মুনের মাথা গরম হয়ে গেল। আঁধার শীতল কন্ঠে বলল,
—“সারাদিন কিছু খাওনি কেনো?”
মুন নিশ্চুপ বসে আছে। আঁধার বেড টেবিল থেকে প্লেট টা নিয়ে মুনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
—“খাবারটা খেয়ে নেও। নাহলে শরীর দূর্বল হয়ে পরবে। তারপর অসুস্থ হয়ে যাবে।”
মুন তেজী গলায় জবাব দিলো,”
—“আমাকে নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে। আমি নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারি।”
মুনের কথায় পাত্তা না দিয়ে আঁধার আবারো বলল,
—“মুন বাচ্চাদের মতো জেদ করো না। খাও বলছি।”
মুনের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে আঁধার নিজেই প্লেটটা নিয়ে ভাত মেখে মুনের মুখের সামনে ধরে নরম গলায় বলল,
—“হা করো।”
মুন অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। আঁধারের ধৈর্য্যের সীমা অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে। আঁধার চোয়াল শক্ত করে একটু জোরে বলল,
—“মুন হা করো।”
মুন তবুও মুখ খুললো না। আঁধার এবার জোড়ে ধমক দিয়ে বলল,
—“হা করতে বলেছি না তোমাকে?”
মুন আঁধারের ধমকে কিছুটা কেঁপে উঠলো। তারপর ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। আঁধার নিজের উপর প্রচন্ড বিরক্ত। একটু কিছু হলেই রাগ মাথা চড়ে উঠে। অল্পতেই মাথা গরম হয়ে যায় তার। ছোট থেকেই এই রোগ। আঁধার নিজেও জানেনা এরকম কেনো হয়। সে নিজের রাগ কে একটুও কন্ট্রোল করতে পারে না। আঁধার কন্ঠ নরম করে বুঝিয়ে বলল,
—“জানো মুন আজ আমি একটা পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ের সার্জারি করেছি। ওতো টুকু বাচ্চা মেয়েটার হার্টে ছোট্ট একটা ছিদ্র হয়েছে। যার জন্য অপারেশন করতে হয়েছে। মেয়েটার বাঁচার চান্স খুব কম ছিল। মেয়েটা দেখতে খুবই কিউট। অনেকটা তোমার’ই মতো।”
মুন চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—“অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে তো? মেয়েটা এখন কেমন আছে?”
আঁধার হালকা হাসলো যা মুনের চোখে পরলো না। আঁধার গম্ভীর কন্ঠে বলল,
–“আগে তুমি বলো ওই বাচ্চা মেয়েটাকে অপারেশন থিয়েটারে ফেলে তোমাকে নিয়ে তোমার বাড়িতে ঘুরতে না যাওয়াটা অপরাধ? নাকি তোমাকে নিয়ে তোমার বাবার বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে বাচ্চা মেয়েটার অপারেশন করাটা আমার অপরাধ?”
মুন ভেবে দেখলো। আঁধারের কথা গুলো ঠিক। মুন নিজের ভুল বুঝতে পারে তাই মাথা নিচু করে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
—“সরি। কিন্তু আপনি তো আমাকে কথা গুলো তখনই বলতে পারতেন।”
—“বলার সুযোগ কোথায় দিলে? তার আগেই তো তুমি আমার মাথা গরম করে দিলে।”
মুন ক্ষিপ্ত গলায় বলল,
—“আমি আপনার মাথা গরম করেছিলাম না আপনি আমার মাথা গরম করেছিলেন?”
আঁধার ভ্রু কুঁচকে বলল,
—“আমি কি করেছি?”
—“নাম ধেরে ডেকেছি তাতে দোষ হয়েছে। ভাইয়া বলে ডেকেছি তাতে ও দোষ হয়েছে। আঙ্কেল বলেছি তাতেও রেগে গেছেন। এখন বলেন মাথা কে গরম করেছিল?”
—“আমি তোমার ভাইয়া, আঙ্কেল, বাবা হই? যে আমাকে এগুলো বলে ডাকবে?”
—“তাহলে কি বলে ডাকবো?”
—“কিছু বলার’ই দরকার নেই।”
মুন আঁধারের কথায় পাত্তা না দিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর হঠাৎ চেঁচিয়ে বলল,
—“পেয়েছি। আমি আপনাকে Mr.Husband বলে ডাকবো।”
আঁধার অবাক হয়ে বলল,
—“Mr.Husband একটা আবার কেমন নাম?”
—“যেমন’ই হোক আমি এটা বলেই ডাকবো। এতে কিন্তু আপনার কোনো প্রবলেম হওয়ার কথা না। কারণ আপনি Mister আর আমার husband ও। সব মিলিয়ে আপনি আমার Mr.Husband. হিহি।”
বলেই মুন খিল খিল করে হেসে উঠলো। যা ইচ্ছে বলে ডাক সমস্যা নেই কিন্তু আগে হা করো। মুন হা করলো। আঁধার মুনকে খাইয়ে দিতে লাগলো। আর মুন চুপচাপ লক্ষি মেয়ের মতো খেতে লাগলো। খাওয়া শেষ হতেই মুন বলল,
—“আপনি খাবেন না Mr.Husband?”
—“আমি খেয়ে এসেছি।”
বলেই আঁধার প্লেটটা নিয়ে রুম থেকে চলে গেল। মুন শুয়ে পরলো। কিছুক্ষণ পর আঁধার এসে সোফায় শুয়ে পরলো। মুন গলা উঁচিয়ে ডাকলো,
—“Mr.Husband আপনি কি ঘুমিয়ে গেছেন।”
আঁধার বিরক্তির সুরে বলল “না”। মুন আবার বলো,
—“আপনার তো সোফায় শুতে কষ্ট হয় আপনি কিন্তু চাইলে বেডে এসে শুতে পারেন।”
আঁধার ভারি কন্ঠে বলল,
—“প্রয়োজন নেই।”
মুন শোয়া থেকে উঠে বসে বলল,
—“ঠিক আছে। কিন্তু আপনি তো বললেন’ই না যে ওই বাচ্চা মেয়েটার কি হলো? মেয়েটার কিছু হয়নি তো? মেয়েটা সুস্থ আছে তো?”
আঁধার গম্ভীর গলায় জবাব দিলো,
—“আমি আজ পর্যন্ত যত গুলো সার্জারি করছ সব গুলোই সাকসেসফুল হয়েছে।”
—“তার মানে ওই বাচ্চা মেয়েটার অপারেশন ও সাকসেসফুল হয়েছে। থ্যাঙ্ক ইউ আল্লাহ। ইউ আর দি বেস্ট। আচ্ছা আরেকটা কথা। বলতে পারেন একটা আবদার।”
—“বলো?”
মুন খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
—“আপনি আমার ফ্রেন্ড হবেন?”
—“না। অনেক রাত হয়েছে চুপচাপ ঘুমাও। আমি আর একটাও কথা শুনতে চাই না।”
মুন আহত হলো। মন খারাপ করে চুপচাপ শুয়ে পরলো। ওভাবেই এক সময় ঘুমিয়ে পরলো।
চলবে,
[কিছু সমস্যার কারণে আমি রেগুলার গল্প দিতে পারছি না। তার জন্য আমি দুঃখিত। এখন থেকে একদিন পরপর গল্প দিবো। আর যদি পারি তাহলে রেগুলার দেওয়ার চেষ্টা করবো। আশাকরি আপনারা আমার সমস্যা টা বুঝবেন। ধন্যবাদ।]