#তুমিময়_প্রেম🥀♥
#PART_04
#FABIYAH_MOMO🍁
–দোস্ত দোস্ত দোস্ত তুতুই বাসার নিচে নাম তাড়াতাড়ি নিচে নাম দেরি করিস না দোস্ত….জীবন মরনের সওয়াল দোস্ত…..নিচে নাম….ও বরবাদ করে দিবো দোস্ত….নিচে নাম প্লিজ!!
একটুও সুযোগ পেলাম না আমি কলের বিপরীতে ইসুকে বলবো, “কি হয়েছে?”। ও কেটে দিলো। ছোট ভাই আমার সন্দেহের নজরে ছোট চোখে ঘটনা বুলাচ্ছে। আমি ওর মাথায় চাট্টি মেরে বললাম,
–কিরে শয়তান! তোর পড়া নাই! লেখা নাই! কেমনে তুই লুডুর জন্যে হন্য হয়ে আছিস!যা পড়তে বস যা!
মাথায় থাবড়া খেয়ে ঠোট ফুলিয়ে ও চলে গেল, দরজায় তাকিয়ে আমদানি দুশমনের মতো খাজুরা কি কি বললো ও-ই জানে। আমি গলার ওড়না টেনে মাথায় ঘোমটা দিলাম। আম্মুকে শুনিয়ে জোরে বললাম,
–ইসরাত নিচে ট্যামলা(টমি) কুত্তার দৌড়ানি খাইছে, আমি ছাড়িয়ে নিয়ে আসতেছি। বাসার কেউ যেন আমার তলব না বসায়।
জুতা পড়ে নিচে গেলে ইসরাত আমাকে টেনে ধরে বাসার গলির রাস্তায় এনে দাড় করায়। আঙ্গুল উঠিয়ে রাস্তার ওপাশে থামানো কালো গাড়িটায় দেখায়। ওই বিলাতি কুত্তা চ্যাংড়া শয়তান গাড়ির দরজায় পিঠ লাগিয়ে হাত ভাজে দাড়িয়ে আছে। ডেকির উপর নাসিফ বসে সিগারেটে মধ্যে টানের পর টান ফুকছে। রামিম সুপারম্যানের মতো কোমরে হাত দিয়ে কামলার মতো দাড়িয়ে আছে। পুরাই একখান কামলা! ইসরাতের কবজি ধরে খামচি মেরে বলি,
–খাচ্চর মহিলা! এই সন্ধ্যায় আমাকে চামার,কামার, চ্যাংড়া দেখানোর জন্য নিচে ডাকছিস! তুই জানিস আমার কত্ত স্বাদের পাকা গুটিটা খেতে নিছিলাম! ফালতু বেডি!
ইসরাত “আহ্ মম ছাড়” বলে হাত সরিয়ে নিল,
–তুই চোখ মেলে দেখছিস তোর বাপ এসে দাড়ায়া আছে! তোর বাসায় যদি একটাও পৌছায় কি সর্বনাশ ঘটবো, জানোস!
মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো! ওরা আমার বাপ! আরে চাক্কু একটা এইদিক দিয়া ঢুকালে ওইদিক দিয়া শেষ, আমাকে বুঝায় বাপ! রামিম দ্যা সুইপারম্যান! থুক্কু! আপনারা আবার থুতু ফেলবেন না!! আমি থুক্কু বলছি! দ্যা সুপারম্যান রামিম রাস্তার ওপার থেকে বলে উঠলো,
–এই মম এইদিকে তাকাও!
–ওই শালা তুই কারে মম ডাকোস! আপু ডাক আপু! “তুই” ডাকবি এক্কেবারে তোর গোষ্ঠী-গ্যারাজের নাম ভুলায়া রাস্তায় সাপ্লাই দিবো!
–আপা একটু তাকাবেন, আমরা আপনাকে ভয় দেখাতে আসছি,
ইসরাত রামিমের কথায় আমার পিছু যেয়ে লুকালো, ভীতু বনে বলে উঠলো-
–দোস্ত, দোস্ত, দোস্ত….কত ডেন্জারাস দেখছিস….প্লিজ ওদের কাছে মাফ চা দোস্ত…আমায় ভয় করতেছে মম, ওরা ভালো না,
যা বাবা! কার কথায় ডরায় কে? আমি এইগুলাকে জুতাপেটা করে বিদায় করতাম, ইসরাত দেখি ভয়ে পুরো পানি পানি।
–ওই হারামজাদা! তুই আমাকে তুলবি! পারলে আয় না! আয়! দেখি তোর বুকের পাঠা কতো!
–আপা আপনাকে রিসপেক্ট করে আসতে বলছি আপনি বোধহয় নিতে পারলেন না। আমরা কিন্তু কাউন্টিং করবো,…এক…
–তুই “দুই” টা খালি বলোস না দেখ আমি কি করি!! বল বল বল….কিরে বলা বন্ধ হলো কেন, ওই চামার বলোস না কেন!
ওই বিলাতি কুত্তা মুগ্ধ, রামিমের কানে কানে কি যেনো বলল। নাসিফ সিগারেটে আরেকটান দিয়ে অবশিষ্ট জলন্ত অংশটুকু ফেলে দিল। রামিম দেখি রাস্তার ওপার থেকে এপার আসার জন্য পা বাড়িয়েছে! আমিও পায়ের জুতা খুলে দেই ফিক্কে, “ধরাস” করে রামিমের গালে লেগে জুতা ওইটা পড়লো মাটিতে। রামিম “ও মাগো” বলে এক চিৎকার দিলো!! এদিকে ইসরাত “দোস্ত” বলে আমার দিকে তাকালো! ইসরাত আমার ডানপাশটায় আমার হাত ঝাকিয়ে বলল,
–তুই এইটা কি করলি! জুতা মারলি! ওই জুতা ফিরে পাবি! কি করলি….ওদের তো রাগের গন্ডি পেরিয়ে যাবে!
–আরে চিল মার! বাথরুমের স্যান্ডেল ওইটা। আমার রুমে বাথরুমে যাওয়ার আগে পড়ি, দাম বিশ টাকা। তাও নানির ইউজ করা অর্ধ ক্ষয় মারা মাল। যাহ্ জুতাটা আজকে মনিবের কাজে দিলো।
ইসরাত হ্যাবলা থেকে একটু পর হো হো করে হেসে দিলো, লুটিয়ে লুটিয়ে হাসি। ছেলে হলে মেবি লুঙ্গি উঠিয়ে হাসির নাচুনি দিতো!!বাট বেচারি মেয়ে এজন্য ঢঙ করে ন্যাকান্যাকা সুরে হাসি দিল। রামিম গালে জুতার বারি খেয়ে গাল ধরে “মুগ্ধ” না কি ওর কাছে গেল। নাসিফ-ও ডেকি থেকে নেমে গোল করে মিটিং বসালো। মুগ্ধের পুরো দৃষ্টি আমার দিকে, ওইযে একভাবে হাতভাজ করে দাড়িয়ে আছে এখনো ওভাবেই স্থির। পাশ থেকে রামিম ও নাসিফ নানা কথার ঝুড়ি বসালো, এরপর যার যার মতো একপলক আমার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। মুগ্ধ ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল্ট লাগিয়ে জানালার কাচ সম্পূর্ণ নামিয়ে দিল। ড্রাইভিং হুইলে দুইহাত রেখে জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। এখনো তাকিয়ে আছে, চোখের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র থাকলে ডিগ্রি উঠতো ১০৫° তাপমাত্রা। চোখ থেকে আগুনের তীক্ষ্মতর দৃষ্টি ঝড়ছে, “চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া” কথাটা সত্যি সত্যি বাস্তব হলে এই বেটা মেবি প্রয়োগ করতো!
ইসরাতকে নিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম। আম্মু ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে ছোট বদমাইশকে পড়া রেডি করে দিচ্ছে। ইসরাতকে দেখে আম্মু বলে উঠলো,
–ইসরাত, এখনো টমির ভয় পেলে চলবে? ও তো কিছুই করেনা, অতিথি আসতে দেখলে এই খালি ভেউ ভেউ করে আমাদের সংকেত পাঠিয়ে দেয়।
ইসরাত জুতা খুলে ভেতরে ঢুকে সোফায় যেয়ে বসলো। কপালে জমা ঘামের কনা ওড়না দিয়ে মুছে বলল,
–আন্টি আর বলবেন না, আপনাদের বাসার নিচে টমির লয়েলিটি দেখে আমারই অন্তর কাপিয়ে ছাড়ে….আমাকে এখনো চিনলো না।
আমি একপায়ের জুতা খুলে ভেতরে যেতে নিলে আম্মু পেছন থেকে ডেকে থামালো,
–দাড়া!
–কিছু বলবা?
–আরেক জুতা কই? এক জুতা কেন ওখানে?
–আম্মু রাস্তার মোড়ে কালাচান আছে না? ওই কালাচান জুতা নিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে বুঝছো? আমি অনেক খুজছি পাইনি, এজন্য স্মৃতি হিসেবে এটাও নিয়ে আসছি।
–কালাচান কি ওই যে তিয়াশাদের বাসার কুকুর? আজকেও ধাওয়া দিলো?
–মনটা চাইছিলো কি জানো! এই জুতাটা ওর উপর ছুড়ে দিয়ে আসি। কিন্তু আমার মন ভালো, ওই কুত্তার মতো খারাপ না। তাই কিছু করিনি চলে আসছি।
আম্মু কিছু বলল না, আমি ইসরাতকে আমার রুমে আসতে বলে বিছানায় যেয়ে বসলাম। ও পিছু এসে আমার বিপরীতে এসে বসলো,
–দোস্ত ওরা কিন্তু গেছে ঠিকই কাল দেখিস আবার আসবো। আচ্ছা তুই ওদের করছিস টা কি? এমন পিছনে কাঠালের আঠার মতো লেগে আছে কেন?
–ওই হিস্টোরি তোকে বলার টাইম পাইনি, শোন তাহলে……ওই লিডারের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখছিস না? কিভাবে ব্যান্ডেজ আসছে জানিস?
–শুনলাম তো তুই যেয়ে ফাটায়া দিয়ে আসছিস!
–তাহলে তো ঘটনা জানিসই!! ওই লিডারের বাচ্চায় ভার্সিটির হেড স্যারকে বলে আমার রাস্টিগেট নোটিশ পাঠাইছে। আর তুই তো জানিস ভালো, আমার জিনিসে কেউ বা-হাত ঢুকাইলে ওই বান্দা শেষষ! আমি জাস্ট টোকা দিতে ওই লিডারের কাছে গেছিলাম আরকি…
–সর্বনাশ! তুই কি থাবড়া দিয়ে আসছিস আবার?
–আরে ধুর! থাপ্পর কেন দিবো? আম্মুর সবজি কাটার ভোঁতা ছুড়ি দিয়ে ভয় দেখিয়ে আসছি। আর কিছু না। তুই দেখ, আমার চুলগুলিকে কেমনে কাটছে! আম্মু কথা বলা অফ করে দিছে। আমার মায়ের শখের চুল….
ইসরাত এবং আমি সারারাত হরর মুভি দেখার জন্য আমার বাসায় ব্যবস্থা করেছি। “The Nun” মুভি। আব্বু ফুপির বাসায় গিয়েছে কাজে, কাল সকাল অবধি ফিরবেন। আম্মু ছোটকে নিয়ে উনার রুমে ঘোড়া বেচে ঘুম। এক মগ পানি ঢাললেও আম্মুর ঘুম সজাগ হবেনা। দুইজনে রুম অন্ধকার করে মোবাইল নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেখছি। ইসরাত ভয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার বায়না ধরে পেট চেপে বসে আছে, কারন, আমি এখন মুভি দেখবো। ওয়াশরুমে যেয়ে তথাকথিত দ্যা নান মুভির ভূত এসে ইসুকে খেয়ে ফেলবে বলে আমি আর পাহাড়া দিতে পারবো না। ইসরাত কাতরানো সুরে বলে উঠলো,
–তোর পায়ে ধরি মম, আমার সাথে ওয়াশরুমে আয়…আমার একলা যেতে ভয় করতেছে….আজকে কিন্তু অমাবস্যার রাত…
–চটকনা খাবি ইসরাত! যা বলছি! বাচ্চাদের মতো টুকুটুকু করা লাগবে না। ভূত বলতে কিছু নেই, জাস্ট ইমেজিনেশন! ভূত নেই! গো স্টুপিড ফুল!
–প্লিজ…
–নো! নো মিনস নো!
–দেখিস তোর জামাই শান্তি পাইবো না!! তোর জামাই একটা ভূতের কেদানি হইবো! ভূত!
— হ হ যা….ভূত হইলেই জামাইর সাথে ভূত-ভূত খেলবো! কুত্তার মুখে গরুর ডাক মানায় না। যা ফট!
ইসরাত বিছানা থেকে নামার মধ্যেই একশোবার আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। আমি তো একবাক্যে অটল! না করেছি মানে না- ই। ও চলে গেল। রুম অন্ধকার, পুরো বাসা অন্ধকার, আম্মুও দরজা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে, ইসরাত ওর ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ওয়াশরুমে গিয়েছে, ওকে লাইট জ্বালাতে বারন করেছি। জাস্ট ওয়াশরুমের লাইট জ্বালাতে বলে দিয়েছি। মুভি দেখতে দেখতে পুরো দুই-ঘন্টা পারলাম কিন্তু ইসরাত আর আসলো না। আমি খেয়ালই করিনি ইসরাত এখনো রুমে ফিরেনি। রাতের আকাশে চাদ নেই, বিদঘুটে কালো অন্ধকার। আমি ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে রুমের সুইচে লাইট জ্বালানোর জন্য ক্লিক করেছি। “অন” জায়গায় সুইচ টিপছি সুইচের অনে লাইট জ্বলছে না! কি আশ্চর্য! পরশুই আব্বু নতুন লাইট লাগিয়ে দিয়েছে, আজই ফিউজ হলো? কয়েকবার “টুসটুস” করেও ফলাফল হলো না। জ্বললই না লাইট। আমি ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেলাম ইসরাতকে দেখতে।
আমি চোখের সামনে যে দৃশ্য দেখলাম তাতে মোবাইলের হাত কাপতে কাপতে যুদ্ধ করলো। হাত পা ঠান্ডা হয়ে জমে আসছিলো…..
-চলবে
-Fabiyah_Momo