#প্রণয়সন্ধি– ২০ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না
বিয়ের পরের দিন জুবরানের ঘুম ভাঙ বেশ দেরি করে। তা-ও শানায়ার ডাকে সকাল সকাল উঠে প্রিয়শীর মুখ দেখে জুবরানের মন ভালো হয়ে গেলো।
–‘ উঠো ভাইয়া মামণি খেতে ডাকছে। সারারাত কী করো? চুরি করতে যা-ও? এতো ঘুম কোথা থেকে আসে’
জুবরান শানায়ার কথার উত্তর না দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বলল
–‘ তুই আমার বউ?’
শানায়ার বুকের মধ্যে ধরাস করে উঠলো কিন্তু বাইরে থেকে স্বাভাবিক থেকে বলল
–‘ ছিঃ ছিঃ আমি তোমার বোন’
জুবরান রেগে গেলো তেঁতে উঠে বলল
–‘ থা*প্প*ড়িয়ে গাল লাল করে দিব’
–‘ এ্যাঁহ আইসে একদম নারী নির্যাতনের কেস ঠুকে দিব। এমনিতেই এটা বাল্যবিবাহ হয়েছে পুলিশ জানলে তোমাদের সবাইকে নিয়ে যাবে তার ওপরে আবার নির্যাতন করবে?’
জুবরান শানায়ার কথা শুনে অবাক না হয়ে পারল না। এই মেয়ে মুখে মুখে এমন কথা বলছে। জুবরান বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বলল
–‘ তুই হুমকি দিচ্ছিস?’
শানায়া উত্তর দিল না মুখ ভেংচি কে*টে চলে গেলো। জুবরান তাকিয়ে রইলো।
•
শানায়া সাওয়ার নিয়ে সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে। টিকটিকের করার জন্য গান চুজ করছে। তখন লোফা আসল মিটমিট করে হেসে বলল
–‘ তোর ফ্যান ফলোয়ারা জানে তুই বিয়াইত্তা?’
শানায়া রাগী চোখে তাকিয়ে বলল
–‘ তুই আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ। আমি কিন্তু তোর মাথা ফাটিয়ে দিবো’
–‘আরেহ বিয়াইত্তা মহিলা আআআ… ‘
লোফা আর কিছু বলতে পারল না তার আগে শানায়ার পাশে থাকা ফাউনডেশনওর দিকে ছুঁড়ে মারলো। ওর অবশ্য গায়ে না লাগলেও ঢং করে চিৎকার দিল। সকলে ওর চিৎকারে ছুটে এলো। শেফালী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলল
–‘ কী হয়েছে মা কাঁদছিস কেনো?’
লোফা ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল
–‘ মা শানায়া আমার গায়ে ফাউন্ডেশন ছুড়ে মারছে।ব্যাথা পাইছি হাতে’
শেফালী রেগে বলল
–‘জুলেখা মেয়েকে শিক্ষা দাও নি? অভদ্র মেয়ে হয়েছে’
শানায়া রেগে বলল
–‘ তোমার মেয়ে অভদ্র ফুপি ওর গায়ে লাগে নি ও মিথ্যা বলছে, মিথ্যা কান্না করছে’
জুলেখা মেয়ের ঠাস করে চ’ড় মে*রে দিলো। শানায়ার চোখ মূহুর্তে ছলছল করে উঠল। মিথ্যা অপবাদে চ*ড় খেলো!
–‘ বড়দের মুখে মুখে কথা বলবে না বলেছি না!’
শানায়া চুপ করে রইলো। শানায়ার বাবা শাহাদাত শানায়াকে আগলে নিল। শানায়া আহ্লাদে কেঁদে উঠলো। শাহাদাত জুলেখার কাজে রেগে গেলো। শেফালীর উদ্দেশ্যে বলল
–‘ তোর মেয়ে আমার মেয়ের ঘরে কী করছে? সবাই জানে দুজনে কখনো বনে না। তাও ওর রুমে ও কী করতে এসেছিল? আমার মেয়েকে আমি চিনি ও অকারণে কিছু করে না। লোফা বল তুই ওর রুমে কী করছিলি?’
লোফা আমতাআমতা করতে লাগল। সকলে যা বোঝার বুঝে গেলো শেফালী মেয়ের দোষ না দেখে বলল
–‘ ওটা যদি ওর চোখে লাগত তখন এসব যুক্তি কাটত না বুঝলি। মেয়েকে সময় থাকতে সামলা না হলে বড় হয়ে খু*নী হবে’
সবাইকে রুম থেকে যেতে বলল মেয়ের সাথে একান্তে কথা বলার জন্য সবাই গেলো। জুলেখা মনে মনে মেয়েকে মা*রার জন্য অনুতপ্ত হলো। সবাই যেতেই শানায়া বলল
–‘ পাপা বিশ্বাস করো ওর গায়ে লাগে নি। ও আমাকে আজেবাজে কথা বলছি। বলছিল আমি বিয়াইত্তা বলে খেপাচ্ছিল আমি রাগের মাথায় ছুঁড়ে মা*রছি কিন্তু ওর গায়ে লাগে নি ও মিথ্যা বলছে’
–‘ পাপা বুঝতে পারছে কাঁদে না সোনা মা।’
–‘ বিয়ে খারাপ পাপা?’
–‘ না তো! তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। আর তোমাকে কেউ রাগাবে আর তুমি ও রেগে যাবে তোমার রাগ এতো সস্তা? আর যদি ও ব্যথা পেত তখন তো তুমি ও কষ্ট পেতে তাই না?’
শানায়া মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
–‘ তাহলে এমন কী করা উচিত? তোমার রাগ কন্ট্রোল করা উচিত এভাবে রেগে যেতে নেই কথাই আছে না রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন…’
শাহাদাত হোসেন মেয়েকে বোঝালেন। জুলেখা এসে মেয়ের পাশে বসলেও শানায়া ফিরে তাকালো না ও বোঝাতে চাইলো মায়ের ওপরে রেগে আছে কথা বলবে না। জুলেখা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বোঝালো গালে বরফ লাগিয়ে দিল।
জুবরান বাইরে গিয়েছিল। এসে এসব শুনে হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। এদের ঝগড়াঝাটি যে আজীবন চলবে ওর বোঝা হয়ে গেছে।
সময় স্রোতের পানির মতো করে দু সপ্তাহ কেটে গেলো কালই জুবরানের ফ্লাইট। হাসি-কান্না, ভালোবাসা, মান-অভিমান, ঝগড়াঝাটি দিয়ে এই মিষ্টি সময়গুলো চলে গেলো। বাসার সবার মন খারাপ আদরের ছেলে চলে যাওয়া সময় এসেছে। জুবরানের অসহায় লাগছে বুকের মধ্যে খালি খালি লাগছে। মন শুধু বলছে ‘ফিরে এসে আবার এই সুখ পরিবার টা পাবো তো না-কি সময় সাথে সবটা বদলে যাবে?’
দুপুর বারোটার দিকে তখন সবাই রান্নাবান্নায় ব্যস্ত জিনিয়া ছেলের সব পছন্দের রান্না করছে। এমন সময় লোফা মাথা ঘুরে পরলো। চোখে মুখে পানির ছিটা দিলেও উঠছে না। ডক্টর এসে ভাবভঙ্গি দেখে বলল লোফা প্রেগন্যান্ট। সবাই বিস্ময়ে কী বলবে খুঁজে পেলো না। এই এক সপ্তাহ লোফা কেমন চুপসে গেছে ভয়ে ভয়ে থাকে সবসময়। শেফালী মেয়ে এসে মা*রতে গেলো সকলে আটকালো। লোফার বাবা শক্ত কণ্ঠে বলল
–‘ ছেলেটা কে?’
লোফার ভয়ে তখন অবস্থা খারাপ কেননা ওর বয়ফেন্ড ওর সাথে ব্রেকাআপ করছে তার ওপরে আবার বড়লোকের ছেলে। ছেলেটা যে লোফাকে মেনে নিবে না ও জানে। আবার সত্যিটা বললেও মা-বাবা যে রুক্ষে কিছু করতে যাবে উল্টে ওদের অপমানিত হতে হবে ভয়ে মিথ্যা বলে দিল।
–‘ জুবরান ভাই…’
সবাই জুবরানের দিকে অবাক হয়ে তাকালো। জুবরানও শকট এই মেয়ে ওর নামে মিথ্যা বলছে। জুবরান কিছু বলতে যাবে তার আগে জিনিয়া তেড়ে এসে জুবরানকে চ*ড় মা*রল।
–‘ জা*নো*য়ার হয়েছ। এতো অ*ধপ*তন হয়েছে তোর? একটা বাচ্চা মেয়েকে ছিঃ’
মায়ের চোখে নিজের জন্য ঘৃণা দেখে জুবরানের ম*রে যেতে ইচ্ছে করল নিজেকে সামলিয়ে বলল
–‘ মা তুমি ভুল বুঝছ। আর কী প্রমাণ আছে ওর বাচ্চার বাবা আমি?’
লোফার বাবা শক্ত কণ্ঠে বলল
–‘ ও কী এই পরিস্থিতিতে মিথ্যা বলবে জুবরান’
–‘ আপনার মেয়ে যা মিথ্যা বলতে সময় লাগবে না।’
জুবরানের কনফিডেন্স দেখে সবাই অবাক হলো লোফা ভেবেছিল জুবরান ঘাবড়ে যাবে তখন ও উচ্চা গলায় মিথ্যা বলবে।
–‘ চল লোফা হসপিটালে যাব আমি মিথ্যা দায় নিব না। এখন অনেক অপশন আছে বাচ্চার বাবাকে খুঁজে বের করার’
লোফা ঘমতে লাগলো। ভয়ে কেঁদে বলল
–‘ জুবরান ভাই না এটা অয়ন করেছে’
জিনিয়া হতভম্ব হয়ে বলল
–‘ আগে মিথ্যা বললি কেনো?’
নিজেকে বাঁচাতে লোফা আবারও মিথ্যা বলল
–‘ শানায়া ও সব জানত তাই ওর কাছে স্যালুশন চেয়েছিলাম ও বলল বাচ্চার বাবা নাম জুবরান ভাইয়ের নাম বলতে। ওর জুবরান ভাইকে বর হিসাবে পছন্দ না আর আমি যদি এটা বলি তাহলে বাসার সবাই ওদের ছাড়িয়ে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে। আর আমার বাচ্চার বাবার পরিচয় ও পাওয়া যাবে।’
জুবরান শক্ত কণ্ঠে বলল
–‘ আবারও মিথ্যা বলছিস না প্রমাণ কী? তোদের তো বনে না ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে তাহলে?’
–‘ না না মিথ্যা বলছি না আমার কাছে ম্যাসেজ আছে ওগুলো তো মিথ্যা না’
–‘ দেখা’
ওদের কনভার্সেশন এটা সত্যি জুবরান দম আটকে গেলো। এটা কীভাবে? কী হলো?এটা শানায়ার আইডি দু’দিন আগের কনভারসেশন…
শানায়া স্কুল থেকে যখন ফিরল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। জুলেখা শানায়াকে খুব মা*রল। শাহাদাত হোসেন মেয়ের অধপতন দেখে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। জুবরান সব গুচ্ছিয়ে ফেলেছে আজ রাত কোথাও থেকে কাল দেশ ছেড়ে চলে যাবে। এতো অবিশ্বাস, এতো ছলনা, এতো বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে এ বাড়িতে আর এদণ্ড থাকবে না। মাও তাকে অবিশ্বাস করে মা*রল এখানে থাকবে না সবাই আটকাতে চাইলেও জুবরান ফিরে তাকালো না। সেদিন বাড়ি থেকে ফিরে আর জুবরান বাড়ি ফেরে নি। একদিন ফেন্ডদের কাছ থেকে হঠাৎ খবর পেলো জুলেখা সিরি থেকে পড়ে মাথা ফে*টে র*ক্ত ক্ষরণ হয়ে মা*রা গেছে। তখন বাসায় ফোন দিল চাইলেও ওখান থেকে আর আসা তো মুখের কথা না। শানায়ার ওপরে অভিমানটা তিব্র ছিল। ওর জন্য এখন জঘন্য অপবাদে শিকার হতে হলো সবাই ওকে অবিশ্বাস করলো। মা ওকে সবার সামনে মা*রলো। এসব ভাবলে ওর ভিষণ কষ্ট হয়। ফোনে কথা বলার সময় যখন কেউ শানায়ার কথা বলত তখন ও রাগ করে ফোন কেটে দিত। বাসায় ধীরে ধীরে আর কেউ শানায়ার কথা জুবরানের সাথে বলত না। মাঝে মাঝে শানায়ার কথা ও জানতে ইচ্ছে করত তখন নিজের মনকে বুঝ দিত সবাই যখন আছে নিশ্চয়ই তাকে খারাপ রাখবে না সকলের আদরে ভালোই থাকবে। শানায়ার হয়ত ওর কথা মনে পড়ে না ভালোই আছে। আমি কেনো কষ্টে থাকব আমি ও ওকে ভুলে থাকতে পারি! সব ভেবে নিজেকে দমিয়ে রাখত জুবরান।
চলবে ইনশাআল্লাহ#প্রণয়সন্ধি– ২১ পর্ব (বোনাস)
#তাসনিম_তামান্না
।।বর্তমান।।
রাত তখন একটা ছুঁই ছুঁই চাঁদের আলোয় চারিদিকে আলোকিত। পাপড়ি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে রায়হান এসেছে। জামাই আদর করে বাসার সবাই মাথাই তুলে ফেলছে। সবার এতো আদিখ্যেতা পাপড়ির সহ্য হচ্ছে না এদিকে শানায়ার ফোনটাও বন্ধ বড্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
রায়হান বারান্দায় এসে পাপড়ির পাশে দাড়িয়ে বলল
–‘ কী করছ? তারা গুনছ? উমম তারা কিন্তু গোনা যায় না মানে খালি চোখে সব তারা খেতে পাবে না বুঝছ?’
–‘ কেনো এসেছ?’
–‘ আরেহ! আসব না? আমার বউ, আমার শশুড়বাড়ি, আমি একমাত্র জামাই, আমি আসব না তো কে আসবে?’
–‘ হেয়ালি আমার পছন্দ না’
ছেলেদের না-কি কাঁদতে নেই। কিন্তু রায়হানের বড্ড কান্না পাচ্ছে। এই হৃদয়হীনা মেয়েটাকে ভালোবেসে সর্বক্ষণ জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা সব দেখেও যেনো দেখছে না।
–‘ বুঝতে পারছ না কেনো এসেছি?’
–‘না ‘
–‘ আমাকে একটা চান্স দিয়ে দেখো… আমি… আমি… ‘
রায়হান হাসফাস করতে লাগল। পাপড়ি শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল
–‘ তুমি কিন্তু তোমার মা-বাবা কে সবটা সত্যি বলো নি তারা কখনো নিশ্চয়ই চাইবে না। তাদের ছেলের সন্তান না হোক’
–‘ তুমি এটা নিয়ে এতো কেনো ভাবছ? আমি আমি সব ঠিক করে দিব’
–‘ তুমি ম্যাজিশিয়ান নাও যে সব কিছু ঠিক করে দেওয়ার ক্ষমতা তোমার আছে’
–‘ ওকে ফাইন তোমার যখন বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে এতোই টেনশন আমরা ডক্টরের কাছে যাবো’
পাপড়ি চমকালো। বলল
–‘ কিছুই হবে না তারা বলে দিয়েছে’
–‘ দেখো এখন অনেক চিকিৎসা নিয়ে সব ঠিক হয়ে যায়। হবে না বলে কোনো কথা নেই। তাছাড়া ক্যান্সারের মতো রোগ যদি ঠিক হয় তাহলে এটা কোনো ব্যাপার না’
–‘ এতো কনফিডেন্সের সাথে কীভাবে বলছ তুমি?’
–‘ শোনো ঠিক হলে হবে না হলে এতো চাপ নেওয়ার দরকার নেই বুঝছ আমার শুধু তুমি হলেই চলবে’
পাপড়ি রায়হানের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। লোকটার চোখে একরাশ মুগ্ধতা, ভালোবাসা, না পাওয়ার তৃষ্ণা এই লোকটাকে ভালোবাসায় যায়। যেখানে ভালোবেসে ছেড়ে চলে যায় সেখানে এই লোকটা ওকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছে। বাবা-মার বিরুদ্ধে গিয়ে লড়াই করছে তাকে পাওয়ার জন্য আর ওর প্রাক্তন রুবেল কি-না বাবা-মা’র পক্ষে পাপড়িকে এক কথায় ছেড়ে দিয়েছিল। শুধু বাবা হওয়ার নেশায়।
আজকালকার দিনে এখনো মানুষের মনে মেয়েদের নিয়ে নিকৃষ্ট ধরণা রয়েই গেছে। তারা মনে করে মেয়েরা বাচ্চা জন্ম দেওয়ার যন্ত্র। যেখানে মেয়েরাই মেয়েদের ছোট করে কথা বলে অপমান, টিটকারি, ট্রল করে সেখানে ছেলেরা কবে সেটা অস্বাভাবিক কিছু না! মানুষ যদি খারাপ পরিস্থিতির জায়গায় নিজেকে বসিয়ে ভাবত তার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করত তাহলে হয়ত এমন অপমান, টিটকারি… করার সাহস পেত না। কিন্তু না মানুষ সে-সব ভাবে না সে যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজে সে পরিস্থিতিতে পড়বে ততক্ষণ তার বিবেক জাগ্রত হবে না।
–‘ কী ভাবছ? যাবে তো!…’
পাপড়ি ছোট করে উত্তর দিল
–‘ হুম’
রায়হান খুশি হয়ে বলল
–‘ আচ্ছা তাহলে এসব নিয়ে আর ভেব না। ভেব না আমি তোমাকে মাঝ রাস্তায় একা ফেলে পালিয়ে যাব। তোমার হাত যখন একবার ধরেছি তখন মৃত্যু আগপর্যন্ত ছাড়বো না আর না তোমাকে ছেড়ে যেতে দিব’
পাপড়ি মুগ্ধ চোখে রায়হানের দিকে তাকালো। কী সুন্দর কথা বলে। ছেলেটা এতো বুঝদার…এতো ম্যাচুয়ড আর আগে মনে হতো ছেলেটা অবুঝ বাচ্চাদের মতো আচরণ কিন্তু না এটা তার আরেক রূপ যা কাছ থেকে উপলব্ধি করতে হয়। সে কী প্রেমে পড়ছে? হুম পড়েছিল বাচ্চা ইমম্যাচুয়ড ছেলে সে ছেলেটা এখন তার স্বামী। ইশশ! সুখ, সুখ পাচ্ছে!
রায়হান পাপড়ির তাকানো দেখে ঠোঁট চেপে হেঁসে তুড়ি বাজিয়ে বলল
–‘ আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে নজর দিবে? কাল থেকে কালো পড়তে হবে দেখছি’
পাপড়ি চোখ ছোট করে বলল
–‘ ঘুম পাচ্ছে তোমার আজাইরা প্যাচাল তোমার কাছে রাখো’
–‘ আচ্ছা ঘুমাও তাহলে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে যা-ও ‘
পাপড়ি অবাক হয়ে বলল
–‘ তুমি আজ রাতে এখানে থাকবে না?’
–‘ আমি থাকলে তুমি খুশি হবে? তাহলে থাকব’
–‘ আব…’
–‘ থাক তোতলাতে হবে না। আমার বউ একরাতও শশুড়বাড়ি গিয়ে থাকল না আমি থাকি কী করে? আসো দরজা লাগিয়ে দিয়ে যাও’
পাপড়ি আমতা আমতা করে বলল
–‘ থেকে যা-ও রাত হয়েছে আন্টি ঘুমিয়ে গিয়েছে হয়ত ঘুমের ডিস্টার্ব হবে’
–‘ চাবি আছে’
•
সকালে শানায়ার ঘুম ভেঙে গেলো। ওর সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভাস মাঝে মাঝে আলসেমি করে উঠে না। কিন্তু আজ উঠে জুবরানের ঘুমন্ত নিঃশ্বপাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে ছিল। এতোগুলা দিন দেখা হওয়ার পর ও সেভাবে জুবরানের দিকে তাকায় নি। ঘুমন্ত অবস্থায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জুবরানকে দেখলো। আগের থেকে ফর্সা হয়েছে, হ্যাঙ্গলা পাতলা থেকে স্বাস্থ্যবান পুরুষ মানুষ লাগছে, চুলগুলো হাল্কা কালার করা। নিসন্দেহে সুদর্শন পুরুষ বলা যায়। কেনো যেনো এতো দিনের আ*ঘা*ত ভুলতে পারছে না। বুকটা দাওদাও করে জ্ব*লছে। একটু শান্তির খোঁজে বেড়িয়ে ছিল অশান্তি সাথে করে নিয়ে আসল।
জুবরান ঘুম থেকে উঠে শানায়াকে না পেয়ে লাফিয়ে উঠলো পরে যখন ওয়াসরুমে পানির আওয়াজ তখন শান্ত হলো। এই মেয়েটা ওকে মে*রে ফেলবে। ফ্রেশ হয়ে এসে বলল
–‘ কী খাবি বল? কী খেতে ইচ্ছে করছে?’
–‘ বি*ষ খেতে ইচ্ছে করছে এনে দেন’
–‘ সকাল সকাল মুড খারাপ করিস না’
–‘ তাহলে আমাকে যেতে দিলেই হয়’
–‘ সে সব ভুলে যা। এখন তোকে ইদুর আর তেলাপোকার সুপ খাওয়াব’
শানায়া নাক মুখ ছিটিয়ে বলল
–‘ ইয়াক’
জুবরান হেসে বলল
–‘ রেডি হয়ে আয়। আমরা বের হবো’
–‘ কেথায় যাবো?’
–‘ শপিংয়ে’
–‘ আপনি যান আমার এনার্জি নাই’
–‘ পালানোর চিন্তা বাদ দে’
শানায়া শুকনো ঢোক গিলল। লোকটা কীভাবে বুঝল? কথা ঘোরানোর জন্য বলল
–‘ শপিংয়ে কেনো জাবেন?’
–‘ রোজার বাজার করতে। আর শোন তোকে কিছু করতে হবে না আমি বুয়াকে আসতে বলছি’
শায়ানা মন খারাপ হলো। লোকটা তার এতো খেয়াল রাখছে কেনো? এভাবে ভালোবেসে কী আবারও আ*ঘাত করবে? ও যে এখন মানুষ কে ভালোবাসতে ভয় পাই।
চলবে ইনশাআল্লাহ