#বেটারহাফ
#নিশাত_তাসনিম_নিশি
|পর্ব ২৩|
শাওন এতটুকু বলেই চুপ করে গেলো। বোতল থেকে হাতে অল্প পানি নিয়ে মুখে ছিটকাঁতে লাগলো। মাথায় ও হালকা পানি দিয়ে দিলো। রাত্রি নির্বাক হয়ে বসে আছে। নিজেকে তার অনুভূতি শূন্য লাগছে। শাফি হালকা নড়ে উঠতেই সে দু হাতে শক্ত জড়িয়ে ধরলো তাকে। তার মনের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না, এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেনো হচ্ছে তার?
.
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে এসেছে। চারপাশ থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক কানে ভেসে আসছে। নিস্তব্ধতায় ঘেরা পুরো শহর। নির্জন পথঘাট। চৌধুরী বাড়ী প্রকৃতির থেকেও নিস্তব্ধ হয়ে আছে। সবাই বসে আছে বসার ঘরটায়, শুধু মাত্র রাত্রি উনুপস্থিত। দরজা টা পুরো খোলা, বাহিরের তাজা হাওয়া পর্দা এলোমেলো করে ভেতরে প্রবেশ করছে।
সবাই সেদিকে তাকিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। কখন যে রাত্রি আসবে?
শাহিনুর কঠিন দৃষ্টি রেখে তাকিয়ে আছে, বৃষ্টি বসে নখ কামড়াচ্ছে। ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও কতটা চিন্তিত! সাগর চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে।
সোহাগী আর সোহেল দুজনে একসাথে ডাইনিং টেবিলের দুটো চেয়ারে আসে আছে। সোহাগী একটু পর পর তার স্বামীকে পা দিয়ে খোঁচাচ্ছে।
শিফা বিরক্তি নিয়ে একপাশে পায়চারি করছে। সবাই রাত্রির ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। নিরব, ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে ড্রয়িংরুম জুড়ে।
কিছুক্ষণ বাদেই অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে রাত্রি বাড়ীর সামনে এসে পৌঁছালো। একটা দামী কার থেকে তাকে নামতে দেখা যাচ্ছে। ও বের হয়ে মাথা ডুকিয়ে ভেতরে কাউকে জড়িয়ে ধরলো। মাথা টা বের করে বাহিরে এসে দাড়াতেই ওপর পাশ থেকে দরজা খুলে বের হলো শাওন। তার চোখেমুখে খুশির জোয়ার। পুলকিত চেহারা! অত্যাধিক খুশি হলে মুখের হাসি টা অন্যরকম দেখায়, সেটা ই দেখাচ্ছে তার মুখে। রাত্রি তাকে হাসিমুখে, হাত জোড় করে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাড়ীর ভেতর ডুকতে লাগলো।
বেইস মেন্ট থেকে ঘরের প্রত্যেক টা সদস্যের চোখে পুরো ঘটনা টা পড়লো। সবাই দাড়িয়ে ওর কর্মকান্ড দেখছিলো। হাজারো বিষ্ময় আর অবাকের রেশ ফুটে উঠেছে প্রত্যেকের মুখে। শুধুমাত্র সাগর গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।
শিফা আর সোহাগী কানাঘুষো করে বলে,–” দেখেছো, রাত-বিরাতে বাড়ীর সামনে নষ্টামি করছে। একটা চাকরী পেতেই দেখলে রং বদলে গিয়েছে। চাকরী কি আর এমনি এমনি পেয়েছে নাকি! ”
দুজনের কানাঘুষো সাগর,শাহিনুর, সোহেলের কান পর্যন্ত পৌঁছালো। কেউ কিছু বললো না।
সাগর সোজা হয়ে দাড়িয়ে রুমের দিকে হাটা দিয়ে বলে,–” মা, আপনি যে মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন আশা করি তার উত্তর দেখেছেন। তাই এ বৈঠক এখানেই সমাপ্ত। দ্বিতীয় কথা, ও আমার ওয়াইফ, তাই ওর সম্পর্কে আশা করি কেউ যেনো কিছু না বলে। ও কি করছে না করছে সব আমার ব্যাপার। ওর বিষয়ে আপনারা কেউ কোনো কথা বলবেন না। আশা করি আমার কথা বুঝবেন। ”
সাগর গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে গেলো রুমের দিকে। যাওয়ার পথে বৃষ্টিকে ডাক দিয়ে বলে ওর সাথে যাওয়ার জন্য। বৃষ্টি চুপচাপ ওর পেছন পেছন চলে যায়।
সবাই যে যার রুমে চলে গেলো। শাহিনুর তখনও ওখানে দাড়িয়ে রয়েছে। সে কী ভাবলো আর কি হলো?
সবাইকে একসাথ করলো।
রাত্রির জন্য যখন অপেক্ষা করছিলো তখন সাগর অস্থির হয়ে কারণ জানতে চেয়েছিলো সেই সময় শাহিনুর বলেন,–” আমি তোমাদের সম্পর্কের মীমাংসা চাই। কোনো একটা পর্যায় চাই, কেউ ই তো কারো সাথে মিল নেই। তিনজন তিন মূখী হয়ে আছো। আজ আমি তোমাদের সম্পর্কের ফয়সালা চাই, অবশ্যই তিনজনের মতামতের উপর। তোমরা তিনজন যা বলবে তার উপরেই সব ঠিক হবে।”
সাগর সহ সবাই অবাক ছিলো, শুধু বৃষ্টি ছাড়া। কারণ ও মনে মনে ভেবে নিয়েছে ওর সাথে হয়তো আজ সম্পর্ক শেষ করা হবে। জবাবে সাগর তার মাকে বলে,–” আগে রাত্রি আর বৃষ্টি ওদের দুজনের মতামত জানতে চাই। পরা কি চায় আমিও সেটা জানতে চাই? তারপর না হয় আপনি যা সিদ্ধান্ত নিতে চান নিতে পারবেন।”
সবাই ওর কথা মেনে নিয়েছিলো। কিছুক্ষণ চলতে থাকে অপেক্ষা পরবো এরপর তো হলো এসব।
.
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাত্রি এসে বাসায় ডুকলো। প্রচন্ড ক্লান্ত সে, বাচ্চা টাকে সামলানো সহজ ব্যাপার নয়। কষ্টের সাথে তার মধ্যে খুশিও দেখা দিয়েছিলো। তার আরাম লাগছিলো সোনামণি, বাবু, এসব বলে ওকে আদর করা। রাত্রিকে একদম ছাড়তেই চাইছিলো না। রাত্রি অবাক ছিলো সেই সাথে প্রচন্ড খুশিও হয়েছিলো। জোর করে তাকে বাড়ীতে নিয়ে গিয়েছিলো শাফি, সারা বিকাল ওই বাড়ী তে ছিলো। শাফির সাথে কাটানো দিন টা তার জন্য সত্যি স্বপ্নের মতো ছিলো। বোনের ছেলে জানার পর তার প্রতি আরো বেশি টান পেয়েছিলো সে।
আসার সময় রাত্রি ওকে কত কিছু বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে, নামার সময় তো ওকে ছাড়ছিলোই না। রাত্রি নেমে ওকে জড়িয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলেছে যে, –” আজকে আমাকে যেতে হবে তাই না? তুমি যদি যেতে না দাও তাহলে আমি আর আসবো না।”
শাফি কাঁদো কাঁদো মুখে ওকে যেতে দিয়েছে। এরপর শাওন বের হয়ে ওকে এগিয়ে দিয়ে অনেক ধন্যবাদ জানালো।
রাত্রি ভীষণ খুশি মনে ওদের বিদায় জানালো। এতকিছুর মাঝে ওর মনেই ছিলো না আজকে সন্ধ্যায় যে ওকে নিয়ে আলোচনার বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে ডুকে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে টা বুকে জড়িয়ে বলে,–” আজকের দিন টা আমার জীবনের সবচেয়ে বেস্ট দিন ছিলো। আই উইশ আমার প্রতিটা দিন এমন সুন্দর হোক। আমি কোনোদিন ভুলবো না এ সুন্দর মুহূর্ত গুলো।”
কথাগুলো বলে তোয়ালে টাকে জড়িয়ে চুমু দিলো, ওর ধারনা এটা শাফি। ও একটা বাচ্চা পেয়ে গেছে! একটা নিঃসন্তান মেয়ে যখন কোনো বাচ্চা পেয়ে যায়, অনুভূতি টা তখন কত টা দামী আর মাধুর্যপূর্ণ সেটা শুধু সে নিজে উপলব্ধি করতে পারবে।
শাওন বলেছে শাফিকে ওকে দিয়ে ও বিদেশ চলে যাবে, এ কথা শুনার পর তো ও পাগলপ্রায়। শাফি চিরদিনের জন্য ওর হয়ে যাবে এরপর ও শান্তিতে শশুড়বাড়ী থাকতে পারবে। কেউ তাকে কিছু বলতে পারবে না, তাছাড়া ও আরো ভাবছে যে এ খবর সাগর শুনলে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে।
জানালার পর্দার আড়াল হতে সাগরের চোখে সব পড়ছে। সে শুধু তার প্রেয়সীর খুশি দেখছে। বুক টা অস্বাভাবিক উঠানামা করছে। হৃদস্পন্দন থেমে থেমে চলাচল করছে। সাগর নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজায় টোকা দিলো, রাত্রি উঁকি দিতেই সে বলে,–” ভাত খাবে না? আসো খেয়ে নিবে।”
সাগর কে দেখে রাত্রি উৎফুল্ল হয়ে গেলো। সে প্রায় মুখ দিয়ে বের করেই ফেলেছিলো শাফির কথা। খুশিতে গদগদ হয়ে বলতে নিচ্ছিলো তখন আবার নিজ থেকেই চুপ করে যায়। ভাবলো, এখন বলে কি হবো?তার থেকে বরং শাফিকে নিয়ে এসে একবারেই ওকে চমকে দিবো।
নিজের উত্তেজনা টা চেপে রেখে রাত্রি ক্লান্ত গলায় বলে,–” না, আমি খাবো না। খেয়ে এসেছি, পেট একদম ভরা। এখন ঘুমাবো, খুব ক্লান্ত। ”
সাগর গম্ভীর দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইলো, রাত্রি হাত উঠিয়ে আড়মোড়া ভাঙ্গতে লাগলো। সাগর মনেমনে বলে উঠে,’হ্যা দেখতে পাচ্ছি তোমার ক্লান্তি।’
ঠৌঁটে হালকা হাসি এনে বলে, –“আচ্ছা। তাহলে ঘুমাও। কিছু লাগলে আমাকে জানিও।”
রাত্রিও মিষ্টি হেসে ওকে বিদায় দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। দরজা বন্ধ করতেই সাগর লম্বা কয়েকটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
রাত্রিকে ছেলেটার ব্যাপার টা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো না। নিজের বিবেকে বাধঁলো বিষয়টা। তাই সে চুপচাপ চলে গেলো রুমের দিকে। বুকটা আজ ভীষণ জ্বলছে। ইচ্ছে করছে সব বরফ এনে বুকে লাগিয়ে রাখি তাহলে হয়তো ঠান্ডা হবে এ দহন।
বারান্দায় দাড়িয়ে আধ ঘন্টা যাবৎ সিগারেট টানছে সাগর। এত গুলো খাওয়ার পরেও তার নেশা টা জমলো না। খেয়েই চলছে,খেয়েই চলছে। কী করা উচিত? কাউকেই তো সে খুশি করতে পারছে না। তার জীবন টা নদীর মাঝখানে আটকে আছে, সে এ তীরেও যেতে পারছে না আবার ওই তীরেও যেতে পারছে না। এভাবে হলে তো ও মরে যাবে। কি করবে সে? কি হবে এর শেষ?
বাহিরে থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বারান্দার জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলো বৃষ্টি রুমের টেবিলের ওপর মাথা রেখে বসে কাঁদছে। বৃষ্টিকে সে প্রায় ই কান্না করতে দেখে, কিন্তু কিছু বলতে পারে না। সে নিরুপায়!
#বেটারহাফ
#Nishat_Tasnim_Nishi
| পর্ব ২৪ |
বাহিরে থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বারান্দার জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলো বৃষ্টি রুমের টেবিলের ওপর মাথা রেখে বসে কাঁদছে। বৃষ্টিকে সে প্রায় ই কান্না করতে দেখে, কিন্তু কিছু বলতে পারে না। সে নিরুপায়!
টান টান হয়ে কয়েকটা নিশ্বাস ছাড়লো সে। অর্ধ খাওয়া সিগারেট টা ফেলে দিয়ে রুমে চলে আসলো। বৃষ্টি তখন চুপ করে উঠে গিয়ে কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো। কোনো কথা না বলে সেও বৃষ্টির পাশে শুয়ে পড়লো। সে জানে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঘুমাতে আসবে বৃষ্টি বসে থাকবে। সাগর শুয়ে পড়তেই বৃষ্টি ঘুরে ওকে জড়িয়ে ধরলো। সাগর কিছু বললো না। সে চোখ বন্ধ করে রইলো। ঘুমের মাসি আসুক,এসে তাকে ছুঁয়ে দিক। যাতে তার সব ক্লান্তি, চিন্তা আর হতাশা দূর হয়ে শান্তির ঘুম নামবে।
রৌদ্রজ্জ্বল দিন!আকাশে সূর্যের আলোর মেলা বসেছে।বাতাসকে গায়েব করে সূর্য নিজের উত্তাপ দিয়ে ঘেরা করে আছে পুরো এলাকা। পিচ ডালা রাস্তা গরমে উত্তপ্ত হয়ে আছে, লোকজন ঘেমে একাকার। ভ্যাপসা গরমে রাত্রি প্রায় পুরো ঘেমে গিয়েছে। একটু পরপর কপালের ঘাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে ফেলছে সে। ঘন্টাখানেক থেকে বসে অপেক্ষা করছে সে। গরমে অস্বস্তি হলেও মুখে তার প্রশস্ত হাসি বিরাজমান। আজ তার জীবনে খুব বড় একটা খুশির দিন। শাওন আজ তাকে শাফিকে দিয়ে দিবে। জীবনে একসাথে এত খুশি আসছে যে সে ভেবেই কুল পাচ্ছে না সে কি আদৌ এসবের যোগ্য?
অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে শাওন বের হয়ে আসলো। লিগ্যাল কাগজ পত্র নিয়ে রাত্রির সামনে এসে দাড়ালো। শাওন চলে যাবে হাতে গোনা কয়েকদিন পর। তাই সে যাবার আগে কাগজ পত্র করে দিয়ে যাচ্ছে।
রাত্রি পেপার টা হাতে নিলো, চোখে তার অশ্রু। এ যে খুশির জল, শাওন বুঝতে পারছে। তার ছেলে সুখে থাকবে, খুব সুখে থাকবে তার অন্তর বলছে। ছেলের জীবনের জন্য এমন কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। ছেলে একটা ভালো জীবন পাক সেজন্য রাত্রির কাছে তাকে দিয়ে দেওয়ার কঠিন চিন্তা করেছে সে।
বিদেশে রাত-বিরাতে মদ খেয়ে টাল হয়ে পড়ে থাকে, মাঝে মাঝে কাজের চাপে কয়েকদিন বাড়ী ফিরে আসতে পারে না। তার জীবনের সুতো টা ছিঁড়ে গেছে। তাই সে এমন বেপরোয়া। নিজের জীবনের যেখানে ঠিক নেই, সেখানে সে এটুকু একটা বাচ্চা নিয়ে কীভাবে এত দূরদেশে একা থাকবে।তার অনুপস্থিতিতে ছেলেটার সাথে তো খুব খারাপ কিছুও হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে তার টাইফয়েড সেরেছে। ছেলেটা এমনিতেই খুব রোগা-পাতলা। তাই সে ছেলের সুস্থ,স্বাভাবিক জীবনের জন্য রাত্রিকেই তার বেস্ট অপশন মনে হয়েছে। আর যেহেতু শাফি তাকেই মা বলে জানে তাই বিশেষ অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।
রাত্রি পেপার টা হাতে নিয়ে শাওনের সামনে এনে বলে, –” ও সত্যিই আজ থেকে আমার ছেলে?”
–“হু।”
—” তিন সত্যি?”
–“তিন সত্যি।”
–” আপনি কথা দিয়েছেন ওকে কখনও আমার থেকে কেড়ে নিবেন না,তাই না?”
–“এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না?”
–” আপনার বাবা যদি কখনো ওকে জোর করে নিয়ে যেত চান?”
শাওন ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। এ নিয়ে সে হাজার বারের মতো রাত্রিকে বুঝিয়েছে যে সে বা তার বাবা কখনোই তার থেকে শাফিকে কেড়ে নিবে না। শুধু উনারা মাঝে মাঝে খোঁজ নিবেন। শাফির দাদু মাঝে মাঝে দু-একবার দেখাও করবেন। উনারা সবাই মিলে অনেক আলোচনার পর এ সিদ্ধান্তে এসেছেন। এত বুঝিয়ে বলার পরেও রাত্রি মানছে না। সে শুধু বলে, ‘আমি জানি, বড় হয়ে গেলে আপনারা ওকে আমার থেকে কেড়ে নিয়ে যাবেন।’
এত বুঝানোর পরেও রাত্রি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।
শাওন ক্লান্ত গলায় বলে,–” দুই মাসের বেশি চলছে শাফির আর আমার সাথে আপনার দেখা হওয়ার। এতদিনেও কি আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না যে সত্যিই দিবো কিনা? ”
—“বিশ্বাস তো হচ্ছে। কিন্তু আমার মন মানছে না। কেউ কেনো তার ছেলেকে অন্য কাউকে এত সহজে দিয়ে দিবে? শুধু মাত্র ভালো থাকার জন্য সেটা কি আদৌ বিশ্বাসের মতো কথা?”
—” দেখেন আপু সবাই যে এক হবে এমন তো নয়। আমার আর আপনার স্বামীর মধ্যেই দেখুন, কত তফাৎ! আমার স্ত্রী পৃথিবীতে না থাকা স্বত্ত্বেও আমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করছি না। আর আপনার স্বামী, আপনি থাকা স্বত্ত্বেও দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেছেন। দুঃখিত আপনার স্বামীর কথা বলেছি,না হলে আপনি বুঝতেন না।”
—” এটার সাথে ওটার মিল কীভাবে হলো? ”
—” মিল অমিলের প্রশ্ন নয় আপু। আমি বলতে চাইছি ব্যক্তিত্বের কথা। এই যে প্রত্যেক টা মানুষ স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচারণ সব দিক দিয়ে আলাদা। তাই আপনি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করতে পারেন যে, আমি আমার ছেলের ভালো থাকার জন্য তাকে অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারি।
সত্যি কথা বলতে আপু আপনি রুহির বড় বোন সেজন্যই আমি শাফিকে আপনার কাছে দিচ্ছি। কারন আমার পূর্ণ ধারনা আপনি আমার ছেলেকে আমার থেকেও বেশি আদর ভালোবাসা যত্নে বড় করবেন।”
—” আপনি আমাকে এতটা বিশ্বাস করছেন কেনো সেটা আমি জানি না আর জানতেও চাই না। আমি আপনার প্রতি কৃতঘ্ন রইলাম, এত মূল্যবান রত্ন আমাকে দেওয়ার জন্য। আপনাকে আরেকটা বিষয় ক্লিয়ার করে জানিয়ে দিতে চাই, শাফি যেহেতু আজ থেকে আমার বাচ্চা তাই আজকের পর ওর কোনো দায়িত্ব ই আপনার রইলো না সব আমার। আপনি যে ওর জন্য মাসে মাসে টাকা পাঠানোর কথা বলছেন সেটা বাতিল করে দিন আমি কোনো টাকা নিবো না।”
শাওন হাসলো,সে জানতো রাত্রি এমন টাই বলবে। রাত্রি সম্পর্কে তার অনেক খোঁজ নেওয়া। তার হাতে যদি সময় থাকতো তাহলে সে রাত্রিকে ওখান থেকে বের করে আনতো। কিন্তু তা সম্ভব নয়, এক তো তার হাতে সময় নেই, দুই রাত্রি আসতে চাইবে না কারন সে তার স্বামীকে অন্ধের মতো ভালোবাসে।
শাওন গম্ভীর কন্ঠে বলে,–” আপনি টাকা ব্যবহার করেন আর না করেন তা আমার জানার বিষয় নয়। আমি আমার ছেলের জন্য টাকা পাঠাবো। মাস শেষে আপনার এক্যাউন্টে ওর জন্য টাকা পৌঁছে যাবে। আমি এ নিয়ে অযথা তর্কে জড়াতে চাই না।”
রাত্রি কোনো কথা বললো না। পেপার টা ব্যাগে ভরে নিয়ে শাওনকে বলে,–” আচ্ছা, তাহলে এখন আমার ছেলেকে আমি নিয়ে যেতে পারি?”
শাওন অবাক হলো,তবে মুখে প্রকাশ করলো না। বেশ লাগলো তার, একদিনেই এত অধিকার। ছেলেকে নিয়ে তার আর চিন্তা রইলো না। এবার সে শান্তিতে কবরের ঘুম ঘুমাতে পারবে।
—” আপু,আমি ওকে আপনার কাছে আজ থেকে এক সপ্তাহ পর পাঠিয়ে দিবো। কারন এক সপ্তাহ পর আমি চলে যাবো। তাই যাবার আগে আমি চাই এ পুরো সপ্তাহ টা আমার ছেলের সাথে কাটাতে।”
রাত্রি কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। বহু ক্লান্তি নিয়ে বাড়ী ফিরলো সে। এত টা দিনে সে একবারও ঘরের কোনো জিনিসের প্রতি খবর রাখে নি। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত স্কুল এরপর শাফির সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বাড়ী ফিরে আসতো, এসে মাঝে মাঝে খেতো না হলে ঘুমিয়ে পড়তো। শুক্রবার পুরো দিন শাফির বাড়ীতে তার সাথে থাকতো । বাড়ীর প্রতিটা মানুষ তার সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করে কারন সাগর সবাইকে খুব সাবধান করে দিয়েছে যে তার বউ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে থাকুক। তাই সবাই ওই কথা ধরে পড়ে আছে। সাগর সকালে চলে যায় অফিসে আর রাতে ফিরে আসে। সে কারো কোনো খবর নিচ্ছে না। রাত্রির উপর তার কঠিন অভিমান জমে গিয়েছে, পর পর দুটো দিন সে তাকে আবার সেই ছেলের সাথে দেখেছে। রাত্রির উপর সেই দিন থেকে তার প্রচুর রাগ আর অভিমান জন্ম নিয়েছে।
তাই সে এখন বেপরোয়া ভাবে চলে। মন চাইলে বাড়ীতে আসে নাহলে আসে না।অফিসে কাজ বলে থেকে যায়।
মায়ের সামনে ভুলে পড়ে গেলে সে ক্লান্ত বলে চলে যায়।
শাহিনুর মনে মনে ভাবেন তার ছেলে আর ছেলের বউ কে হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। ঘরে ওদের দেখা
ই মিলে না। তিনিও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। সবকিছুর জন্য শুধু তিনি নিজেকে দায়ী মনে করে। তার জেদের কারণে সব ধ্বংস হয়ে আছে।
নানান টেনশন আর ডিপ্রেশনে উনার দিনকাল যাচ্ছে। নাওয়া -খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন।
শরীর টা কেমন শুকিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। তার মন বড্ড কু ডাকছে কয়েক টা দিন থেকেই। সিদ্ধান্ত নিয়েছে,–” ছেলেকে সে তার সব প্রশ্নের জবাব দিবে।”
সে কয়েকটা দিন থেকেই ছেলেকে খোঁজ করছে কিন্তু কোনো খবর পাচ্ছে না। সাগর যখন বাড়ীতে আসে তখন তিনি ঘুমে থাকেন আর সাগরের আসার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। তাই সে ঠিক সময় তাকে পায় না। ‘সাগর তো তাকে বলেছে বৃষ্টিকে সে সুখে রাখবে সাথে রাত্রিকেও। দুজনকেই তাদের ইচ্ছামতো চলতে দিবে। কেউ যদি তাকে ছেড়ে দিতে চায় তাহলে সে চুপচাপ মেনে নিবে। ‘
বৃষ্টির সাথে তার সম্পর্ক অনেক টা স্বাভাবিক। সাধারন স্বামী-স্ত্রীর মতোই সম্পর্ক। সাগর সেদিন রাতেই বৃষ্টির কান্নামাখা মুখ দেখে বলেছে,–” তুমি চাইলে চলে যেতো পারো। ”
বৃষ্টি হতবাক দৃষ্টিতে তাকালো। সাগরের শান্তশিষ্ট কথা তার ভেতরে ভয়ানক ঝড় তুলে দিলো।
সে ঝড় টা সাগরের উপর রাগের মাধ্যমে দেখালো।
রাগে চিৎকার করে বলে,—” চলে যাওয়া এত সহজ? আমি কুমারী মেয়ে হওয়া স্বত্ত্বেও বিবাহিত ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে। সেখানে ডিবোর্সী হওয়ার পর আমার জীবন বুঝি আরো সুখী হবে? আমার কি অবিবাহিত ছেলের সাথে বিয়ে হবে? বরং আপনার বাড়ীর থেকেও খারাপ কোথাও হয়তো আমার ঠাঁই হবে।”
সাগর চুপ করে রইলো। সে জানে বৃষ্টি যা বলছে তার এক বিন্দুও মিথ্যা নয়। নিম্নবিত্ত মেয়েদের ভালো জায়গায় বিয়ে হওয়াই কষ্টসাধ্য, সেখানে ডিবোর্সী!!
সাগর গম্ভীর গলায় বলে,—“তাহলে তুমি কি চাও? সারাজীবন এভাবে কি কেঁদে কেঁদে থাকতে চাও?”
বৃষ্টি এবার ঠান্ডা কন্ঠে বলে —“আমি কি চাই সেটা আপনি ভালো করেই জানেন।”
—“আরেকবার ভেবে দেখো, সারাজীবন কি পারবে আমার অন্য স্ত্রীর সাথে মানিয়ে চলতে? তুমি আমার জীবন দ্বিতীয়জন, তাই আমি কখনোই প্রথমজনকে ছাড়তে পারবো না।”
—“আমি আপনাকে তো একবারও আপুকে ছাড়ার কথা বলি নি। আমি বলেছি আপনি উনার মতো আমাকে সম্মান আর ভালোবাসা দিবেন। এমন কেনো?উনার জায়গা আপনার কাছে বেশি, উনার প্রাধান্য বেশি আর আমি মূল্যহীন! আমি চাই যে আমাকেও উনার মতো মর্যাদা দেওয়া হোক!”
—“তুমি কখনো ওর জায়গা নিতে পারবে না।”
—“সেটা আমার ব্যাপার। আর আমি আপুর মতো হতেও চাই না,আমি যেমন আছি ভালো আছি। আমি শুধু প্রাপ্য সম্মান চাইছি।”
সাগর জবাব দিলো না। সেদিন থেকেই বৃষ্টি আর সাগরের সম্পর্ক অন্য রকম হয়ে যায়। সাগর বৃষ্টি আর রাত্রির সাথে স্বাভাবিক আচরন করে। তার বন্ধুরা তাকে বলে,, ‘বিয়ে তো করেছোসসই তাহলে এখন এসব ভেবে কি লাভ? বিয়ে করার আগে তো জানতিই যে তােকে বৃষ্টির সাথে থাকতে হবে। এখন এসব মনে আনার কোনো লজিক ই নেই। বরং এসব ভাবা ন্যাকামি!’
সাগর ও সেটাই ভাবে তার তো এখন এসব ভেবে সত্যি লাভ নেই। তাকে তো সংসার করতেই হবে দুজনের সাথে।
সাগর আজ অনেক আগেই রাতে ফিরে আসলো। বৃষ্টি বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। সাগর তাকে দেখে হকচকিয়ে যায়।
—‘কি হয়েছে? তুমি এমন করছো কেনো? ”
সাগরের আওয়াজ পেয়ে বৃষ্টি এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো। পেটে হাত দিয়ে কাঁদছে সে। সাগর বৃষ্টির অঙ্গে হাত রাখতেই বৃষ্টি তাকে ধরে কেঁদে উঠলো। বৃষ্টির কান্না দেখে সে আরো অস্থির হয়ে পড়লো।
সে অস্থির কন্ঠে সবাইকে ডাকতে লাগলো। সাগরে চিল্লানো শুনে রাত্রির ঘুম ছুটে গেলো, সে প্রায় দৌড়ে চলে আসলো ওদের রুমে। এক এক করে ঘরের প্রায় প্রতেকটা সদস্য এসে যায়।
চলবে!
~~রিচেক করা হয় নি।জানি পর্বটা অনেক আগোছালো আর অনুভূতিহীন!পাঠকদের বানানগুলো কষ্ট করে বুঝে পড়ে নেওয়ার অনুরোধ রইলো!
চলবে!
~~~ আপু এত ধীর লেখছেন কেনো?কাহিনী এগুচ্ছে না তো। শুধু পেচিয়ে যাচ্ছেন।
উত্তরঃ আপু প্রথম পর্বেই বলেছি তৃতীয় পক্ষের লেখা টা টাফ। আমি সাজতে পারছি না,মিলাতেও পারছি না। প্রথম পক্ষ হয়ে লিখলে হয়তো সাজিয়ে গুছিয়ে দ্রুত লেখতে পারতাম। এরপরেও তো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তাই গল্প পড়ার মতো লেখার জন্য এমন ভাবে লিখছি। সময় নিয়ে পর্ব করে লিখছি। সবার বিষয় বিবরণ করছি তাই ধীর। আশা করি বুঝবেন।
*আপু গল্পের নায়িকা কে?
উত্তরঃ আপি গল্পের নাম টা বেটারহাফ মানে বউ। তাহলে এখানে বউ কে?
সবার ভালো লাগবে সে আশায় তো লিখি নি তাই অনেকের কাছে ব্যতিক্রম লাগবে তা জানি। রিচেক করি নি, ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।