ভয়ে কাঁপতে থাকা প্রানেশা পাত্রের দিকে তাকিয়ে লজ্জা ভুলে হা করে তাকিয়ে থাকলো৷ সকাল থেকে তার মায়ের বকাবকির কারণে পাত্রপক্ষের সামনে বসেছিলো সে। নার্ভাসনেসের জন্য নিচের দিকে তাকিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে ফ্লোরে ঘষছিলো৷ পাত্রের দিকে ভূলেও তাকায়নি৷ হঠাৎ নাম জিজ্ঞেস করায় প্রানেশার মনে হলো অতি পরিচিত কেউ। মুখের দিকে তাকাতেই, মুখ আপনা আপনি হা হয়ে গেলো৷
এটাতো তারই বয়ফ্রেন্ড রেয়ান!
পাঁচ বছরের সম্পর্ক প্রানেশার রেয়ানের সঙ্গে, রেয়ানের প্রপোজের থেকে প্রেমের শুরু। এখন প্রানেশা প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে রেয়ানকে৷ কয়েক দিন আগেও প্রানেশা যখন রেয়ানকে বিয়ের জন্য বললো, রেয়ান বলেছিলো ‘ কয়েক দিন যাক, তারপর বিয়ের ব্যাপারে ভাববো’ অথচ পরিবার নিয়ে বিয়ের কথা বলতে এলো! প্রানেশা অবাক হলেও ভিষণ খুশি হলো৷ ইশ,ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে সারাজীবন কাটানোর মতো সুসংবাদ আর কী হতে পারে!
প্রানেশা ঠিক করলো, রেয়ানকে এবার ধরবে। পেয়েছেটা কী! সকাল থেকে ফোনের পর ফোন দিয়েছে সে একবারও রিসিভ করেনি। কিছুক্ষণ পর,রেয়ানের বাবা নিজেই বললো দুজনকে একটু আলাদা করে কথা বলতে। প্রানেশা সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করলোনা, রাজি হলো। প্রানেশা রেয়ানকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। যেহেতু, প্রানেশা আগে থেকেই রেয়ানকে চেনে তাই লজ্জা না পেয়ে রুমের সিটকানি লাগিয়ে দিলো। রেয়ান পাশেই ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রানেশা কয়েক কদম এগিয়ে খপ করে রেয়ানের কলার টেনে রাগী মুখে তাকালো৷
-‘সমস্যা কী? ফোন ধরনি কেনো? জানো আমি কত ভয় পেয়েছিলাম৷ তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে কী হতো?জবাব দাও রেয়ান তেহজিব ‘
রেয়ান কোনো উত্তর দিলো না। ব্যায়ামপুষ্ট লম্বা দেহের উপর আক্রমণাত্মক দৃষ্টি দিয়ে তাকানো প্রানেশাকে হালকা হাতে ছাড়িয়ে নিলো। আয়েশি ভঙ্গিতে পাশের সোফায় বসে এসির রিমোট দিয়ে পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো৷ পায়ের উপর পা তুলে হাত ঘড়ির টাইমটা দেখে নিলো৷ প্রানেশা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে। রেয়ান এমন কেনো ব্যবহার করছে, সে বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ করে প্রানেশার মনে হলো, রেয়ানকে আজ
মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগছে৷ সাধারণত রেয়ান সুন্দর, পাঁচ ফুট দশের লম্বা দেহের ফর্সা ত্বকের অধিকারী। কিন্তু, এখন সামান্য কিছু পার্থক্য লাগছে। যেমন,বেশী ফর্সা দেখাচ্ছে, চুলগুলো একটু বড়, দেহটাও যেন আরও বেশি আকর্ষনীয় দেখাচ্ছে। এমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি হওয়ার কারণ বুঝতে পারলো না৷ বেশির ভাগ সময় রেয়ান তার রাগ ভাঙায়। যখনই প্রানেশা রাগে তখন রেয়ান কান ধরে, আদুরে কথা বলে। কিন্তু এখন এমন করছে কেনো?
রেয়ান প্রানেশার হাত হেঁচকা টান দিয়ে কোলে উঠিয়ে নিলো৷ প্রানেশা হকচকিয়ে তাকিয়ে আছে৷ তাকে আরও বিভ্রান্ত করতে রেয়ান প্রানেশার ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়াল। প্রানেশা থরথরিয়ে কাঁপা শুরু করলো। তিন বছরে প্রানেশা কখনোই রেয়ানকে এত কাছে আসতে দেয়নি। আজকে রেয়ানের ছোঁয়াও বোধ হয় বদলে গেছে। আগে হাত ধরলেও তেমন কোনো অনুভূতি হতো না, অথচ কেমন অস্থিরতায় ভেসে যাচ্ছে সে। এত প্রখর ছোঁয়ায় চুপসে গেলো প্রানেশা। রেয়ান কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো –
‘এত রাগ ভালো না প্রাণ। শরীরের ক্ষতি হয়। ‘
‘ প্রাণ? কখনো তো এই নামে ডাকোনি। তাহলে আজ কেনো?’
রেয়ান অধর ছড়িয়ে হাসলো। প্রানেশার চুলগুলো পিছনে সরিয়ে হিম শীতল কণ্ঠে বললো –
‘ আগে তো শুধু প্রেমিকা ছিলে, কয়েক দিন পর বউ হয়ে যাবে। বউ তো নেশার জিনিস প্রাণ,তাই এখন থেকে তোমার এই নামই বরাদ্দ হবে ‘
প্রানেশা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। রেয়ান তার ছোয়াঁয় তাকে আবার ডোবালো। প্রানেশা কাঁপতে থাকা গলায় বললো –
‘আজ কী আমায় মেরে দেয়ার মনোভাব স্থির করলে?’
রেয়ান হাসলো। দূরে সরে এসে প্রানেশার গলায় দুই আঙুল আলতো ছুঁয়ে বললো ধীর গতিতে বললো –
‘ এমন হাজারওবার মরতে তৈরি হও প্রাণ ‘
প্রানেশা কথাটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিলো৷ দুইজন বের হয়ে সম্মতি দিতেই বিয়ের কথা আগালো৷ ধুমধামে রেয়ান প্রানেশার বিয়ের আয়োজন শুরু হলো।
নিজের রুমে বসে প্রানেশা বধূ বেশে চুপটি করে বসে আছে৷ কিছুক্ষণ পরই বর আসবে। রেয়ান আর কিছুক্ষণ পরই তার নামে লেখা হয়ে যাবে৷ কী মনে করে প্রানেশা মোবাইল হাতে নিলো৷ মনে মনে ভাবলো একবার কল করে দেখা যাক রেয়ান কোথায়! কল দিতেই তিন বারের সময় রিসিভ হলো। সাথে সাথেই রেয়ান অতি আদুরে কন্ঠে বললো –
‘সরি জান এই দশদিন কল করতে পারিনি। বাবা আমাকে আর্জেন্ট কিছু কাজে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছিলো। এত ঝামেলা যে তোমায় কল করার সময় পাইনি। ‘
প্রানেশা থম মেরে বসে পড়লো। বুকের ভিতরটা হঠাৎ অস্থিরতায় ভরে উঠছে। ভাঙা কন্ঠে বললো –
‘মানে! আজ তোমার আর আমার বিয়ে। কয়েকদিন আগেও তো তুমি বললে আমায় লাল বেনারসিতে দেখতে চাও’
রেয়ান বিরক্তি ভঙ্গিতে অবাক হয়ে বললো-
‘এসব কী উল্টো পাল্টা বলছো প্রানেশা? দশ দিন আগেই আমি সিঙ্গাপুর চলে এসেছি, বিয়ে কীভাবে করবো?’
“অঙ্গারের নেশা”
” নাঈমা হোসেন রোদসী ”
-সূচনা পর্ব
চলবে…..