#অদ্ভুত_প্রণয়নামা
#পর্ব_২৫
#তাশরিন_মোহেরা
ঘণ্টাখানেক বাদে শূন্য মস্তিষ্কে চেতনা ফিরলো আমার। চোখ খুলেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমার রুমে। সামনে তাকিয়ে দেখি আব্বা চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে। মুখখানা মলিন হয়ে আছে তার।
নিজের চোখখানা ঢলে নিলাম ভালোমতো। সেকেন্ডের মধ্যেই মনে পড়লো কিছুক্ষণ আগে দেখা স্বপ্নের কথা। শেষ পর্যন্ত মুখরের দেখা পেয়েও গিয়েছিলাম তবে তার মুখটাই দেখতে পারলাম না। ঘটনাটা স্বপ্ন ছিলো অথচ কি জীবন্ত মনে হয়েছে সবকিছু আমার! মুখরের ‘মিস.তিথিয়া’ ডাকটাও কি স্পষ্ট! তার এ ডাক শুনেই তো আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে! বুকে হাত দিয়ে দেখলাম, এখনো তা লাফাচ্ছে অবিরাম। কি অদ্ভুত এক ধোকা দিলো মুখর আমায়? স্বপ্নে এসেও সে এভাবে চমকে দিতে পারলো আমায়?
আমি চোখ খুলেছি বুঝতে পেরেই আব্বা ব্যস্ত পায়ে আমার মাথার কাছে এগিয়ে এসে বললো,
‘তিথি মা! এখন কেমন লাগছে তোর? ঠিক আছিস?’
আমি হতভম্বের মতো আব্বার দিকে চেয়ে আছি। বোকা বোকা হয়ে বললাম,
‘আমার কি হবে আব্বা? আপনি এতো ব্যস্ত হচ্ছেন কেন?’
আব্বা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘কি বলছিস তুই এসব? কিছুক্ষণ আগেই তো তুই মাথা ঘুরে রাস্তায় পড়ে গেলি!’
আমি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আব্বার দিকে তাকিয়েই রইলাম। আব্বা এসব আমায় কি বলছে? মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম মানে? কবে পড়লাম? আমি তো এইমাত্রই ঘুম থেকে উঠলাম। এমন অসময়ে ঘুমিয়ে পড়েছি বলে নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে আমার! পাগল আসলে আমি নই বরং আব্বা-ই হয়ে গিয়েছেন! কি আবোল তাবোল বকছেন!
আব্বা আমাকে আগ বাড়িয়ে আরো কিছু বলতে যাবে এমন সময় আন্টির ফোন এলো। রিসিভ করতেই তিনি কাঁপা গলায় বললেন,
‘তিথিয়া মা? তোমায় এখনই একটু থানায় আসতে হবে। দেরি না করে জলদি চলে এসো। আমি এখন থানায় আছি!’
এটুকু বলেই তিনি কলটা কেটে দিলেন। আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি মুহুর্তেই! আন্টির আবার কি হলো যে তার এ অসময়ে থানায় যেতে হলো?
আর কিছু না ভেবেই উঠে একটা হিজাব নিয়ে তা পড়তে শুরু করলাম। যা-ই হোক, আন্টি আমায় বিপদে ডেকেছেন। যাওয়াটা জরুরি নয় বরং অত্যাবশ্যক!
আব্বা আমার সামনে এসে বলতে লাগলেন,
‘কি হলো? এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস?’
কিছুটা চটে গিয়ে বললাম,
‘একটু কাজ আছে আব্বা।’
আব্বা ভ্রুকুটি করে বললেন,
‘এই ভরদুপুরে তোর আবার কিসের কাজ? আর রাস্তায় এমনিতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেছিস, ঐ রূপক ছেলেটা তোকে দিয়ে গিয়েছে বাসায়। এ অবস্থায় তোকে আমি বাইরে পাঠাবো?’
হিজাব বাঁধতে বাঁধতেই ভাবছি, ভার্সিটিতে মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম আবার রূপক ভাই আমাকে বাসায় দিয়ে গেল, এসবের কিছুই আমার মনে নেই কেন? যা মনে পড়ছে তা হলো আমি একটা সরু গলির ভেতর ঢুকে একজন খুনির খপ্পরে পড়লাম, মুখর সাহেব আমাকে বাঁচালেন। এসবই তো! আর এ তো আমার স্বপ্ন বৈ কিছুই নয়! তবে?
সে যা-ই হোক, আব্বাকে আশ্বস্ত করে বললাম,
‘চিন্তা করবেন না, আব্বা! আমি যাবো আর আসবো!’
আব্বা আমার হাতটা এবার খপ করে ধরে ফেললেন। এরপর আমাকে রাগ নিয়ে বললেন,
‘জেদ করিস না, তিথি! তোকে আমি একা ছাড়বো না এখন।’
এ মুহুর্তে আব্বার এসব আমার বিন্দুমাত্র ভালো লাগছে না। যে করেই হোক, মানুষটাকে রাজি করাতেই হবে! অনেক ইনিয়েবিনিয়ে বলার পর শেষমেশ রাজি হলেন, তবে আমি একা নই, রূপক ভাইও আমার সাথে যাবে। প্রথমদিকে আব্বার সিদ্ধান্তে অবাক হলেও পরে বুঝেছি, আব্বা হয়তো বুঝতে পেরেছেন রূপক ভাইয়ের সাথে আর যাই হোক আমার অন্তত প্রেম নেই।
রূপক ভাইকে নিয়ে এবার সরাসরি থানায় চলে এলাম। সেখানে গিয়ে দেখি পুলিশের সামনের চেয়ারে বসে আছেন আন্টি। তার পাশে দ্রুত এগিয়ে মুগ্ধের কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, মুগ্ধকে অর্কের বাসায় রেখে এসেছেন। আন্টির পাশে তখন থেকে পুলিশ সুপারের সাথে চিৎকার করে যাচ্ছেন এক ভদ্রলোক। তার মুখে ছোপ ছোপ সাদা দাড়ি, পড়নে স্যুট-কোট! দূর থেকে দেখলেই বোঝা যায় লোকটা উচ্চবিত্ত। তার পাশে সুঠাম দেহের দুইজন শ্যামকালো লোক ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা আমার দিকে তাকাতেই হঠাৎ টগবগিয়ে উঠলো। আমার দিকে আঙুল তাক করে বলতে লাগলো,
‘এই মেয়েটা! এই মেয়েটার সাথেই আমি মুখরকে দেখেছিলাম আজ। মেয়েটাকে কোলে করে নিয়ে একটা ভার্সিটিতে নিয়ে যাচ্ছিলো সে।’
আমি ভয় পেয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলাম। লোকটা কে? আমায় নিয়ে এসব কি বলছে? আর তার মুখে মুখরের নামই বা কেন? মুখর কেন আমায় কোলে করে মাঝরাস্তায় হাঁটবে? মুখর তো নিখোঁজ তাই না?
মনে হাজারো প্রশ্ন উদয় হতেই আমি আন্টির দিকে তাকালাম। তিনিও আমার দিকে চেয়ে আছেন আশাভরা দৃষ্টিতে। আমি এখানের পরিস্থিতি কিছুই টের পাচ্ছি না! কি হচ্ছে টা কি?
আন্টি বসা থেকে উঠেই আমার হাতটা ধরে বললেন,
‘মা! আমার ছেলের খোঁজ তুমি পেয়েছো, তাই না? বলো? আমার ছেলে কোথায়, বলো!’
আমি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে বললাম,
‘আন্টি! আপনি কি বলছেন? আমি কিভাবে..’
লোকটা আবারো উচ্চস্বরে চিৎকার করতে করতে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘এই মেয়ে, একদম মিথ্যা বলবে না! তুমি জানো ঐ ছোটলোকটা কোথায়! ঐ বেয়াদবটা-ই আমার ফ্যাক্টরি পুড়িয়েছে, অফিসার।’
লোকটা শেষের কথাটা পাশ ফিরে অফিসারকে বললেন। তক্ষুণি আন্টি ঘৃণ্য চোখে রাগত দৃষ্টিতে তাকালেন লোকটার দিকে। আমাকে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে দেখে থাকতে দেখে আন্টি বললেন,
‘রূপন্তীর বাবা!’
আপনাআপনিই আমার ঠোঁট জোড়া হা হয়ে গেল। রূপন্তীর বাবা মানে এরশাদ মুত্তাকী-ই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এ তো বিশ্বাসযোগ্য নয়! আর তিনি ছোটলোকই বা বলছেন কাকে? মুখরকে? এতো সাহস এলো কোথা থেকে লোকটার?
এরশাদ সাহেব আন্টিকে বিন্দু পরিমাণ তোয়াক্কা না করে আমার দিকে তর্জনী উঁচিয়ে গর্জে উঠলেন,
‘এই মেয়ে, বলো মুখর কোথায়? তুমি ছাড়া এ খবর আর কেউই জানবে না। তোমার সাথেই আমি মুখরকে দেখেছি আজ। তুমি নিশ্চয়ই তার সেই প্রেমিকা, তাই না? যার জন্যই ঐ প্রতারকটা আমার ফুটফুটে মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে চলে গেছে। বলো, মুখর কোথায়? না হয় এই মুহুর্তে গুলি করে মাথার খুলি উঁড়িয়ে দেবো তোমার।’
লোকটা তর্জনী নামিয়ে আমার মাথা বরাবরই গুলি ধরলেন। তার চোখেমুখে রাগ স্পষ্ট। এই গুলিতেই তিনি আমায় মেরে ফেলতে পারেন। এমনই একটা মানুষ এরশাদ মুত্তাকী। এই যে স্বয়ং পুলিশ সুপারের সামনেই আমার মাথায় গুলি ধরলেন, এতে কেউ কিচ্ছুটি বলছে না! কেননা এদের হাত করতে এক সেকেন্ডও সময় নিতে হয়নি তার। লোকটাকে দেখে ভয়ের বদলে ঘৃণা জন্মালো আমার। কি বাজেভাবেই না সম্বোধন করছেন মুখরকে! তার কুকীর্তির জন্যই ছেলেটা এতোদিন কতো কষ্ট পেয়েছে! তা কি মনে পড়ছে না সেসব?
আন্টি পাশেই ভয়ে ঠোঁট কামড়ে অশ্রুপাত করছেন। তার চোখে ফুটে উঠেছে অনুশোচনা! হয়তো আমাকে নিয়েই অনুশোচনায় ভুগছেন তিনি! আমি ইশারায় সাহস দিলাম তাকে। সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম এরশাদ সাহেবকে,
‘মুখর সাহেব তবে আপনার বন্দীশালা থেকে মুক্তি পেয়েছে? আমি তো ভেবেছিলাম মুখর সাহেবকে খুন করে গায়েব করে ফেলেছেন আপনি!’
এরশাদ সাহেবের চোখে জড়ো হয় একগুচ্ছ আফসোস! এই আফসোস নিয়েই তিনি বললেন,
‘ঐ ছেলেটা আমার কোম্পানি কে ও মিলস এর কয়েকটা শাখা পুড়িয়ে দিয়েছে আমার অজান্তে। আমার সামনে এসেই তারউপর আমায় শাঁসিয়ে গিয়েছে। সেদিনই আস্ত পুঁতে ফেলতাম তাকে, কিন্তু! কিন্তু আমার মেয়েটার আবেগের জন্য তা হলো না। রূপন্তীর জন্য ছেড়ে দিয়েছিলাম মুখরকে। আর এই আবেগের সুযোগটাই নিয়েছে ঐ বদমাইশটা!’
আমি সহ উপস্থিত সবাই এ ঘটনায় হতবিহ্বল। আন্টির চোখ জুড়ে উচ্ছ্বাসের দেখা মিললো কিছুটা। তিনি ছেলের বেঁচে থাকার সংবাদ শুনে শান্তি পেয়েছেন বোধহয়। মুখর সাহেব এসব কিছু এই ক’দিনে করলো কিভাবে? আর তিনি এখন কোথায়? কেমন আছেন? এসব ভাবনার মাঝে কৌতুহলের বশে লোকটাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,
‘তাহলে মুখর সাহেব এখন কোথায়?’
লোকটা গুলিটা এবার আরো জোরে আমার মাথায় টুকে ধরলেন। আমার হিজাবটা পেছন থেকে আঁকড়ে ধরে বললেন,
‘একদমই বোকা সাজার চেষ্টা চালাবে না, মেয়ে! তুমিই জানো মুখর এখন কোথায়। আজ সকালে তুমি সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলে মুখর তোমায় কোলে করে তোমার ভার্সিটি দিয়ে আসে। ছেলেটা মাস্ক পড়েছিলো বলে তখন এতোটা আমলে নেইনি। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছেলেটা মুখরই।’
আমি ভাবনার জগৎ হতে এখনো বেরোতে পারছি না। আমিই বা কখন সেন্সলেস হলাম? আর কখনই বা মুখর আমায় ভার্সিটি দিয়ে এলো। এ সবকিছুই আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আর লোকটার হাবভাব কিছুতেই সুবিধার মনে হচ্ছে না। যেন এখনি আমায় গুলি করে লাশ বানিয়ে ফেলবেন। আমি চোখমুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছি। কেননা এরশাদ সাহবকে উত্তর দেওয়ার মতো কোনো ভাষা-ই আমার কাছে নেই।
ঠিক তখনি কাছে এসে কেউ বললো,
‘আমার প্রিয় জিনিসে হাত দেওয়াটা আমি একদমই পছন্দ করি না, মি.এরশাদ মুত্তাকী!’
চেনা সুরে চোখের পাতা খুললাম তড়িৎ! হৃদপিণ্ড থমকে গেল সাথে সাথেই। কাঙ্ক্ষিত পুরুষটিই চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুখর আমার সামনে দাঁড়িয়েই এরশাদ সাহেবের হাত আঁকড়ে আছে শক্ত করে। যে হাতটা আমার হিজাব আঁকড়ে ছিল তা ধরেই মুখর ছিটকে সরিয়ে ফেলে। ধাক্কা দিয়ে এরশাদ সাহেবকে দূরে পাঠিয়ে দেয় মুখর। কাছে এসে দু’হাতে আমার মুখটা নিয়ে আলতো ভাবে জিজ্ঞেস করলো সে,
‘ঠিক আছেন, মিস.তিথিয়া? খুব বেশি ব্যাথা দেয় নি তো লোকটা? কোথাও ব্যাথা পেলে বলুন, হাত দুটো আমি গুড়িয়ে দেই।’
শেষের কথাটা বেশ তেজ নিয়ে বললো মুখর। এদিকে আমার ঠোঁট দুটো সম্পূর্ণ অবশ হয়ে গেছে। কথাগুলোও গলায় এসে আটকে গেছে। মুখরকে সামনে দেখছি আমি! আমার নিখোঁজ ভালোবাসা আমার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে! তার চোখে জমা হয়েছে রাগ আর ভয়ের সংমিশ্রণ!
আমি কাঁপা হাতে চিমটি কাটলাম গালে। ব্যাপারটা সত্যি কিনা তা জানার জন্য। কোনোটাই মিথ্যা নয়! আমি যা দেখছি কিংবা যা শুনছি সবটাই সত্যি! আমাকে এমনটা করতে দেখে মুখর ফিক করে হাসলো। আন্টি তার দিকে এগিয়ে এসে তাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। পরম আদরে মুখের এখানে সেখানে হাজার খানেক চুমু খেলেন। জড়ানো কণ্ঠে বললেন,
‘আমাকে রেখে কোথায় গিয়েছিলি, মুখর? কতো চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলি জানিস?’
মুখর তার মাকে শক্ত হাতে জড়িয়ে বললো,
‘আর যাবো না, মা! সবসময় তোমাদের পাশে থাকবো আমি।’
চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলাম একবার। মুখরের সাথে এসেছে আরও চারজন ছেলে। ছেলেগুলো তাদের হাত দুটো পেছনে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সোজা হয়ে। দেখে মনে হচ্ছে মুখরের আদেশেই এখানে আসা তাদের! কিন্তু মুখরকে কাছ থেকে যতটা দেখেছি, কখনো শুনিনি মুখরের চার চারজন বন্ধু আছে। আমার না জানাটা অত্যন্ত স্বাভাবিক, কিন্তু আন্টি নিজেই যে এই বিষয়ে অবগত নন তা বুঝেছি আমি! কেননা মুখরের নিখোঁজ হওয়ার সময় তিনি তার কোনো বন্ধুর কথা উল্লেখই করেননি!
তার মধ্যে হঠাৎ চোখ পড়লো লম্বাচওড়া এক ছেলের দিকে। এই সেই ছেলে যাকে আমি স্বপ্নে আমার দিকে তেড়ে আসতে দেখেছি। যার ভয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে মুখরের কোলে ঢলে পড়েছি। ছেলেটাকে মুখরের সাথে দেখে ভীষণ রকমের অবাক হলাম আমি। স্বপ্নে ছেলেটা ভিলেন ছিল কিন্তু এখন এসে হিরোর বন্ধু হয়ে গেল কি করে? ছেলেটাও একবার আমার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো। সেও ভীষণ সংকোচবোধ করছে! কিন্তু তার সংকোচবোধ করার কোনো মানে দেখছি না। ছেলেটা তো আমায় চেনে না, তাই না? ঠিক তখনি মনে পড়লো একবার ছেলেটাকে মুখর ভেবে মাঝ রাস্তায় ডেকেছিলাম। আর সেদিনই ছেলেটা আমায় পাগল বলেছে! এখন নিশ্চয়ই বন্ধুর চেনা পরিচিত কেউ দেখে ছেলেটা অনুতপ্ত হচ্ছে ব্যাপারটার জন্যে! হ্যাঁ, এটাই হবে!
আর এতোটা সময় ধরে একটা কথাও বলেনি রূপক ভাই। সে এক কোণে ঠাঁই দাঁড়িয়েছিলো। আমি কপট রাগ দেখিয়ে তাকে বললাম,
‘তোমার ভরসায় আব্বা আমাকে ছাড়লো আর সেই তুমিই কিনা এক কোণে ভয়ে দাঁড়িয়ে আছো? লোকটা আমায় গুলি করে দিলে কি বলতে আব্বাকে তুমি?’
রূপক ভাই আমার দিকে চোখ টিপ মেরে বললেন,
‘তোকে বাঁচানোর জন্য উচিৎ মানুষটাকেই ডেকে আনলাম তাই! শত হোক, দুলাভাই বলে কথা!’
আমি তার বাহুতে চাপড় মেরে বললাম,
‘দুলাভাই মানে? রূপক ভাই!! এখন এটা বোলো না যে, তুমিও মুখর সাহেবের কথা জানতে? সে কোথায় লুকিয়েছিলো তা জানতে!’
রূপক ভাই ঠোঁট টিপে হেসে বললো,
‘সবটা না হয় মুখর ভাইয়ের কাছ থেকেই শুনে নিবি!’
আমি অবাক হলাম। ভীষণ অবাক হলাম! রূপক ভাইয়ের মুখর ভাই হয়ে গেল কবে থেকে? রূপক ভাই মুখরকে হালকাভাবে চিনলেও কখনো অতো গভীরে গিয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি মুখরের ব্যাপারে! তবে? এই কদিনে ঠিক কি এমন হলো রূপক ভাই মুখরের এতো ক্লোজ হয়ে গেল? আর মুখর না রূপক ভাইকে নিয়ে ঈর্ষান্বিত ছিলো? কই গেল সেই ঈর্ষা এখন? এরা ভেতরে ভেতরে কি কি প্ল্যান করে রেখেছে তার কিছুই বুঝতে পারছি না আমি! তবে মনে মনে কিছুটা কষ্টও পেলাম! রূপক ভাইও মুখরের খোঁজ জানতো, আর এদিকে আমি যে ধুকে ধুকে মরেছি তাতে বিন্দু পরিমাণ মন গললো না এদের! আমায় সামান্য জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না তারা!
(চলবে)
(ভাবছি গল্পটা শেষ করে দেবো। মুখর-তিথিয়ার প্রেম হওয়াটাই এ গল্পের মূল লক্ষ্য ছিলো। আর তা কয়েক পর্বের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যাবে, আশা করি! বাকিটা পাঠকমহলের ইচ্ছে! কি বলেন আপনারা?)