#অপরাজিতা
#২৫তম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা
রিমি সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে কোনোরকমে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে। এইসময়ে ও বের হচ্ছে দেখলে সবাই নানান প্রশ্ন করতো, বিশেষ করে নিয়ন! রিমি তুহিনের অফিসের সামনের রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করছে৷ এখানেই ওর সাথে দেখা করতে চেয়েছে তুহিন।
তুহিন হচ্ছে রিমির বয়ফ্রেন্ড। দু’বছরের মতো হয়ে গেলো ওদের রিলেশনশীপের। রিমিদের ক্যাম্পাসের একটা প্রোগ্রামে তুহিনের সাথে ওর পরিচয়। ওদের দেখা হওয়াটা কম নাটকীয় ছিলো না! সেগুলো মনে পড়তেই রিমির মুখে হাসি ফুটে উঠল।
কিন্তু ইদানীং তুহিন ওকে এড়িয়ে চলা শুরু করেছে। ওর ফোন তোলে না, দেখা করতে চায়না! কিছু বললে বলে যে, ওর নাকি সময় নেই! ব্যস্ত। অথচ এর আগে এর চেয়ে ব্যস্ত থাকা সত্বেও দুয়েকদিন পরেই ওর সাথে দেখা করতো। প্রতি সপ্তাহে কোথাও ঘুরতে বের হতো৷ একটু পর-পর ফোন করে ওর খোঁজ নিতো। আর এখন এর কিছুই করেনা।
রিমি বুঝতে পারে না যে, ও কি কোনো ভুল করেছে! যার জন্য তুহিন ওর সাথে এমন ব্যাবহার করছে!নাকি ভালবাসাগুলো পুরাতন হয়ে গেলে এমনি হয়! তুহিন রিমির জীবনে প্রথম ভালবাসা! ও ওকে কিছুতেই হারাতে চায়না। তুহিনকে যে ও নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসে!
রিমি খেয়াল করেছে যে, নিয়ন আসার পর থেকেই তুহিন এমন আজব ব্যবহার শুরু করেছে। নিয়ন ভাইয়া তুহিনের কথা জেনে যায় নিতো! নিয়ন ভাইয়াই তুহিনকে কিছু বলেনিতো! এসব ভেবেই ভয়ে আৎকে ওঠে রিমি! আর তুহিনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
খাওয়া-দাওয়ার পরে রাজিতা ওর রুমে শুয়ে পড়ে। অনেকদিন পর নিজের রুমটাতে ভালই লাগছে । আনান নিয়নের সাথে গল্প করছিলো। দু’জনের ভালই ভাব হয়েছে দেখে রাজিতার ভালই লাগছে। আবার ভয়ও হচ্ছে যে, নিয়ন আবার নতুন কোনো চাল চালছে নাতো! রিমির কথা সত্যি হয়ে থাকলেতো নিয়ন চাইবে যেন, রাজিতা আর আনান আলাদা হয়ে যাক! ওদের দু’জনের আলাদা গল্প কি হতে পারে! নিয়ন যদি আবার রাজিতার নামে উল্টাপাল্টা কিছু বলে! আনান কি সেগুলো বিশ্বাস করবে! এসব ভাবতে-ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে রাজিতা।
আনান নিয়নের কাছ থেকে রাজিতার গল্প শুনতে থাকে৷ ওর কি পছন্দ, কি অপছন্দ, কি করতে ভালবাসে, কি খেতে পছন্দ করে, সব। গল্প শেষে আনান রাজিতার রুমে গিয়ে দেখে যে, রাজিতা ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত রাজিতাকে দেখতে আনানের কি যে ভালো লাগে! মনে হয় সারাক্ষণ ওই ঘুমন্ত মুখটা দেখে কাটিয়ে দেয়। আনান এসব ভাবতে থাকে৷ তারপর রাজিতার পাশে গিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে ও নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে।
পুরো আধা-ঘন্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হলো রিমিকে৷ তারপর হাতের ঘড়িটা দেখতে-দেখতে সাদা কালারের একটা শার্ট আর কালো প্যান্ট,কোর্ট আর টাই পড়ে তুহিন প্রবেশ করলো রেস্টুরেন্টে। পায়ের জুতার কালারটাও কালো। পুরো ব্ল্যাক ডায়মন্ডের মতো লাগছে আজ তুহিনকে। আজ আবার নতুন করে তুহিনকে দেখছে রিমি। কাছের মানুষগুলো দূরে যেতে শুরু করলে তাদের বোধহয় আবার নতুন মনে হয়!এই ছেলেটার প্রেমে ও হাজারবার পড়তেও রাজি! ভাবতে থাকে রিমি।
রিমির সামনের চেয়ারটায় বসতে-বসতে তুহিন বলতে থাকে,
–“যা বলার তাড়াতাড়ি বলবে। আমার হাতে একদম সময় নেই। তোমাকে মানা করেছি আমার অফিসের টাইমে বিরক্ত করবে না। তারপরেও…”
–“তুমিতো এমন ছিলে না তুহিন? কি হয়েছে তোমার? আমাকে বলো। আমি কোনো ভুল করেছি? আমি কোনো ভুল করে থাকলে সেটাও বলো। তোমার এই ব্যাবহার আমার আর সহ্য হচ্ছে না।”
–“কে বলছে সহ্য করতে৷ যাওয়ার পথ খোলাই আছে। যখন খুশি চলে যেতে পারো৷ আমিতো তোমাকে আটকে রাখিনি। তাইনা?”
–“তুমি এমন করে কেন কথা বলছো আমার সাথে? তোমার মুখে এমন কথা শুনলে আমার যে ভীষণ কষ্ট হয়। সেটা কি তুমি বুঝো না? সামনেই নিলা আপুর বিয়ে। নিয়ন ভাইয়াও চলে এসেছে। তুমিতো বলেছিলে যে, নিয়ন ভাইয়া আসলে তুমি সব জানাবে। তাহলে এমন কেন করছো? আর কোথায় যাওয়ার কথা বলছো আমাকে?”
–“বাংলা কথা বুঝতে পারো না নাকি! আমার সাথে যদি তোমার ভালো না লাগে, আমার ব্যবহার সহ্য না হয়, তো তুমি আমার জীবন থেকে চলে যেতে পারো। আশা করি এইবার বুঝতে পেরেছো! ”
রিমি কাঁদো-কাঁদো গলায় বলল,
–“তুহিন, তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারো না। আমি তোমাকে ভালবাসি, অনেক ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। তুমিওতো আমাকে ভালবাসো। কি হয়েছে আমাকে বলো। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ প্লিজ এমন করো না।”
রিমির কথা শুনে তুহিন হাসতে থাকে।
–“তোমার নিয়ন ভাইয়ার সাথেতো আমি দেখা অবশ্যই করবো। উনার সাথে কথা না বললে সত্যিটা জানবো কি করে বলো! এতদিন যে আমি এই দিনটার অপেক্ষাতেই ছিলাম।”
–“এসব তুমি কি বলছো তুহিন! একবার আমাকে বলছো তোমার জীবন থেকে চলে যেতে। আবার বলছো যে, আমার ভাইয়ার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছো! তুমি আসলে কি চাইছো বলোতো?”
–“এটাই যে, এখন তোমার ভাইয়া বুঝতে পারবে যে, বোন কষ্ট পেলে কেমন লাগে! আমি তোমার ভাইয়ের কষ্টটা দেখতে চাই। আমিতো এটাই চেয়েছিলাম যে, তুমি আমার ভালবাসায় হাবুডুবু খাও! ”
–“তুহিন কি বলছো তুমি এসব। আমাকে কষ্ট দিয়ে! মানে আমার ভাইয়ের কষ্ট দেখে তোমার কি লাভ?”
তুহিন এবার রেগে গিয়ে বলতে লাগলো,
–“তোমার কি মনে হয় রিমি, তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি? না! একদম না! এটাতো একটা অভিনয় ছিল মাত্র। তোমার ভাই, তোমার নিয়ন ভাই আমার বোনের ভালবাসাকে অপমান করেছে। ছয়টা বছর রিমি! ছয়টা বছর উনারা রিলেশনশীপ কন্টিনিউ করেছে৷ কিন্তু তারপর জানিনা কেন তোমার ভাইয়া আমার বোনকে রেখে বিদেশ চলে গেছে। কোনো খোঁজ পর্যন্ত নেয় নি। এই তিনটা বছর আমার বোন কষ্ট পাচ্ছে৷ আমি ভাই হয়ে বোনের কষ্টগুলো কি করে সহ্য করছি ভাবো!”
তুহিনের জোরে কথা শুনে আশেপাশের অনেকেই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে রিমি বলল,
–“তুহিন আস্তে বলো! সবাই দেখছে। ”
–“দেখুক! আমিতো পুরো পৃথিবীকে দেখাতে চাই যে, আমি আমার বোনকে ধোঁকা দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হয়েছি। আমার বোনকেও বলতে চাই। আমিতো তোমার ভাইয়ের রিয়্যাকশনটা দেখার অপেক্ষায় আছি!”
–“তারমানে তুমি আমাকে কখনো ভালই বাসোনি? পুরোটাই তোমার নাটক ছিলো? আমাদের দেখা হওয়া, কথা হওয়া, ভালবাসা! সবটাই অভিনয়? সবটাই মিথ্যে? তুমি এটা কেন করলে তুহিন? হতে পারে ভুলটা তোমার বোনেরই ছিলো! আর যদি নিয়ন ভাইয়ার দোষ থেকেও থাকে তার শাস্তিটা তুমি আমাকে কেন দিচ্ছো? আমি কি দোষ করেছি? আমিতো শুধু তোমাকে অন্ধের মতো ভালবেসেছি! এটাই কি আমার অপরাধ? ”
–“ওকে, আমি তোমাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি! কাল বিকেলে ঠিক এইখানে তোমার ভাইকে নিয়ে আসবে৷ আমিও আমার বোনকে নিয়ে আসব। আমি সত্যিটা জানতে চাই৷ যদি আমার বোনের দোষ থেকে থাকে তাহলে আমি তোমার ভালবাসাকে গ্রহণ করে নিবো। আর যদি তোমার ভাইয়ের দোষ থাকে তাহলে আমি কখনো তোমাকে বা তোমার ভাইকে ক্ষমা করতে পারবো না।”
–“গ্রহণ করবে মানে কি তুহিন? তারমানে তুমি আমাকে সত্যিই ভালবাসো না? ”
–“জানিনা৷ আমি জানিনা, তোমাকে ভালবাসি কিনা! আমি শুধু এতদিন এটাই ভেবেছি যে, তোমার ভাইয়ের থেকে প্রতিশোধ নিতে হবে। ব্যস! কাল তোমার ভাইয়ের সাথে এখানে আসবে। এটাই লাস্ট কথা!”
–“ওকে তুহিন! তুমি যদি এতদিন অভিনয় করে থাকো তাহলে কংগ্রাচুলেশনস! কারণ তুমিতো অভিনয়ে নাম্বার ওয়ান! ভালবাসা যদি নাই থাকে আমি কেন তোমাকে আকড়ে ধরে পড়ে থাকবো! আমি তোমাকে মুক্তি দিচ্ছি! আমি চাইনা আমার জন্য আমার ভাইয়া কষ্ট পাক! তবে হ্যাঁ, আমি তোমাকে সত্যটা জানার জন্য হেল্প করবো! অবশ্যই করবো! আর সেখানে যদি আমার ভাইয়ের দোষ নাও থাকে ভেবোনা আমি তোমার অফার গ্রহণ করে নিবো! আমার ভালবাসা এতটা সস্তা নয় যে, একজন অভিনেতার কাছে তা বিক্রি হয়ে যাবে! আমি আমার ভালবাসা এমন কাউকে দিতে চাইনা যে ভালবাসার মূল্যই বোঝেনা! কাল বিকেলে আমি আসব আমার ভাইয়াকে নিয়ে। তুমিও এসো তোমার বোনের সাথে! সব সত্য জানা যাবে!”
বলেই কান্না করতে-করতে রিমি রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে গেলো। তুহিনও উঠে পড়লো৷ রিমি খাবারের অর্ডার করেছিলো, সেগুলো আর কারোর খাওয়াই হলো না৷ তুহিন বিলটা মিটিয়ে চলে গেলো অফিসে।
রিমি ভাবতে লাগলো যে, এসব হয়ত ওর পাপের ফল! ও রাজিতার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো আর এখন ওর নিজের জীবনটাই উথাল-পাতাল হয়ে গেলো৷ যাকে ও এত ভালবাসলো সে তাকে মোটেও ভালবাসেনি! অভিনয় করে গেছে! মানুষ যে বাস্তব জীবনে এত ভালো অভিনয় করতে পারে তা তুহিনকে না দেখলে হয়ত বুঝতেই পারতো না রিমি। রিমির নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। মন খুলে কান্না করতে মন চাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাউকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলে ভালো লাগবে! রাজিতা ওকে কত বিশ্বাস করতো! ও নিজেওতো রাজিতার বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে! তারমানে রাজিতাও নিশ্চয়ই এমনভাবেই কষ্ট পেয়েছে! রাজিতার কথা ভেবে ওর খারাপ লাগা শুরু করে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে খুব খারাপ লাগে রিমির! রাজিতা! নিয়ন! আনান! ওরা কি ওকে কখনো ক্ষমা করবে না!
রাতে নিয়ন আনানদের যেতে দিলো না। রাজিতাও রাজি ছিলো জন্য আনান আর জোর করলো না। বিয়ের পর থেকে রাজিতার এখানে থাকাতো দূরে থাক, বেশি আসাই হয়নি! নিয়ন জানালো যে, ওরা আজরাতে বাইরে ডিনার করবে! পরিবারের সবাই একসাথে রেস্টুরেন্টে ডিনার মজাই হবে!
রাজিতা অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে যে রিমি চুপচাপ বসে আছে। নাতো কিছু খাচ্ছে আর নাতো কারো সাথে কথা বলছে। রিমিকে ও মন থেকে আপন ভাবতো, তাই রিমি যাই করুক না কেন ওর মন খারাপ দেখে রাজিতার মোটেও ভালো লাগছে না। আর সব থেকে বড় কথা ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। মানুষকে একটা সুযোগতো দেওয়া উচিৎ! তাই রাজিতা ভাবলো যে, ও রিমিকে ক্ষমা করে দিবে। আর ওকে বিশ্বাস হয়তো করতে পারবে না আগের মতো। কিন্তু ওকে যদি বলে দেয় যে, ক্ষমা করে দিয়েছে তাহলে হয়তো ওর মন খারাপটা আর থাকবে না!
সবাই খুব আনন্দের সাথেই ডিনার সম্পন্ন করলো। সবাই অনেক খুশি। শুধুমাত্র রিমির মনটাই খারাপ। খারাপ হওয়ারই কথা! কেউ ওর সাথে ভালো করে কথা বলছে না! ব্যাপারটা সবাই জেনে গিয়েছে যে, রিমি রাজিতার সংসার ভাঙতে চেয়েছিলো! ব্যাপারটা সত্যিই অনেক জঘন্য!
নিয়ন আর আনানের গল্প যেন শেষ-ই হচ্ছে না! রাজিতা কিছুক্ষণ ওর চাচি আর নিলার সাথে গল্প করলো। অনেকদিন পর আগের মতো কথা বলতে পেরে রাজিতার খুব ভালো লাগছে। ওর শশুর-শাশুড়ী ওকে অনেক ভালবাসে শুনে ওর চাচি আর নিলা খুশিই হলো। ওর চাচিতো বলেই ফেলল,
–“নিশাদ আর ওর বাবা-মা এমন হলেতো আমার আর কোনো চিন্তাই থাকবে না নিলুকে নিয়ে! বোন দুইটা যে আবার কেমন হবে কে জানে! আর রিমির বিয়ে দিলে শশুরবাড়ি গিয়ে যে কি করবে! সেই চিন্তাতেইতো আমি অস্থির! আগে ভাবতাম যে, ওকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু এখনতো বড্ড ভয় হয়!”
রাজিতা ওর চাচিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
–“চিন্তা করবেন না ছোট আম্মু! দেখবেন নিশাদ ভাইয়া আপুর অনেক খেয়াল রাখবে৷ আমারতো মনে হয় উনার পরিবারের সবাইও অনেক ভালই হবে৷ দেখলেন না, ছেলের পছন্দ করা মেয়েকেই দেখার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। কত পছন্দ করেছে আপুকে উনারা। আর রিমিও আস্তে-আস্তে সব শিখে যাবে! ”
–“তাই যেন হয়! আমরাতো জানতাম যে, রিমি তোকে অনেক সাপোর্ট করে! কিন্তু রিমিই যে তোর এত বড় সর্বনাশ করতে চাচ্ছিলো তা কে জানতো! আর আমি নিজেওতো ওর কথা শুনে তোর মামি শাশুড়ীকে কতকিছু বলে দিলাম! তুই আমাকে মন থেকে মাফ করে দিয়েছিসতো রাজি?”
–“আরে আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন এতেই আমি অনেক খুশি৷ আর আমিতো ঠিক আছি, এটাই বড় কথা৷ আমি সবাইকে নিয়েই হ্যাপি থাকতে চাই। একা-একা কখনো সুখী হওয়া যায় না যে!”
তারপর নিলাকে উদ্দেশ্য করে রাজিতা বলল,
–“আর নিলু আপু! আমার পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই বিয়ের তারিখ দিলে কিন্তু খবর আছে! নিশাদ ভাইয়াকে বলবে যে আরো মাসখানেক ওয়েট করতে! আমার পরীক্ষার মধ্যে বিয়ে হলে আমি মজা করবো কি করে! ”
নিলা একটা লাজুক হাসি দিয়ে বলল,
–“আমি কি বলব! উনারা যা করবে তাইতো নাকি! নিয়ন ভাইয়ার জন্য এতদিন দেরি করা হলো। এখন আবার দেরি করবে কিনা আমি কি করে জানবো!”
–“ওকে, তোমার জানতে হবেনা! আমি নিশাদ ভাইয়াকে বলে দিবনে, অবশ্য তোমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে তো আমি কথা বলতে পারি!”
–“তুই শুধু-শুধু আমাকে লজ্জা দিচ্ছিস! আমি জানি নিশাদ কেমন ছেলে! আর তুই কেমন মেয়ে! সেদিনতো আমি শুধু…”
–“আচ্ছা থাক, বলতে হবে না৷ আমি বুঝতে পেরেছি তুমি কি ভাবছিলে৷ আসলে দুজন মানুষের মধ্যে বিশ্বাস থাকাটা জরুরি! বিশ্বাস উঠে গেলেই অন্যন্য ঝামেলারা বাসা বাধতে থাকে!”
–“আসলে রিমির মুখে তোর আর নিয়ন ভাইয়ার কথা শুনে আমার মনে হয়েছিলো যে, নিশাদ তোর সৌন্দর্য দেখে আবার মুগ্ধ হয়ে না যায়! সেদিন যেভাবে তোর দিকে তাকিয়েছিলো। পরে শুনলাম যে, প্রায় তোর মতো দেখতে নাকি ওর এক রিলেটিভ ছিলো, মারা গেছে। তাই ও তোর দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিলো। প্লিজ সেদিনের ব্যবহারে কিছু মনে করিস না!”
–“আচ্ছা আপু, আমার পরীক্ষার মধ্যে বিয়ে না করলেই হবে৷ আমি আর কিছু জানিনা!”
তারপর আরো কিছুক্ষণ ওরা দুইজন গল্প করলো। ওর চাচি গিয়ে শুয়ে পড়লো৷ নিলার সাথে রাজিতা কখনো এমন মন খুলে কথা বলে নি। কিন্তু আজ কেন জানি নিলার সাথে ওর কথা বলতে অনেক ভালো লাগছিলো।
রাজিতা রুমে গিয়ে দেখলো যে আনান শুয়ে-শুয়ে ফোন টিপছে৷ রাজিতা রুমে ঢুকতেই বলল,
–“তা আমার মহারানীর গল্প করা শেষ হয়েছে! আমিতো ভাবছিলাম যে, আজ রাতটা আমাকে একাই শুতে হবে! তা অবশেষে তিনি এলেন, অপেক্ষার অবসান ঘটালেন। এবার কি শুয়ে পড়বেন? নাকি গল্পের ঝুলিতে এখনো কিছু গল্প জমা আছে! না মানে আমার জন্য আর কি!”
রাজিতা দরজা লাগাতে-লাগাতে বলল,
–“তুমিওতো এতক্ষণ গল্প করছিলে নাকি! নিয়ন ভাইয়ার সাথে ভালই ভাব হয়েছে তোমার দেখছি! তা কি এত গল্প করলে শুনি!”
–“আসলেই নিয়ন ভাইয়া মানুষটা অনেক ভালো! ওহ! তোমাকে বলেছিলাম না যে, নিয়ন ভাইয়ার ব্রেকাপ হয়েছে! সেই গল্পই শুনলাম। শুনে খুব খারাপ লাগলো! মানুষ ছোট-ছোট ভুল নিয়েই কতদিনের সম্পর্কটাকে শেষ করে দেয়! আমার মনে হয় যে, ওই মেয়েটা যদি এখনো সিঙ্গেল থাকে তো তুমি চাইলেই হয়তো পারবে উনাদের দুজনকে এক করে দিতে?”
রাজিতা বিছানায় উঠতে-উঠতে বলল,
–“আমি পারবো মানে?… ওহ শিট! আমার একটু রিমির রুমে যেতে হবে! আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম! ওর মনটা খুব খারাপ! এই সময়টাতে আমি ওর পাশে গেলে হয়তো মন খারাপ কিছুটা কমবে! সবাই যদি ওকে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দেই তাহলে ও কোথায় যাবে বলো!”
–“তুমিও না! পারোও বটে! যে তোমার সংসার ভাঙার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলো! তার মন খারাপ দূর করার জন্য তুমি উঠে-পড়ে লেগেছো!”
রাজিতা আবার দরজাটা খুলে যেতে-যেতে বলল,
–“দুইটা আলাদা জিনিস! আর সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে। ওকে একটা সুযোগতো দেওয়া যেতেই পারে!”
কথাগুলো বলতে-বলতেই রাজিতা আনানের চোখের আড়াল হয়ে গেলো।
চলবে…..