#পর্ব১৩
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু
“মেঘে ঢাকা কালো আকাশে যেমন বৃষ্টির পর যেমন সচ্ছ ও সুন্দর দেখায়। ঠিক তেমনি ভাবে রোজার জীবনটা ও সুন্দর, শান্তিতে কাটছে”।
–“হলুদ রঙের পরিহিতা শাড়ি, আর দু’হাত ভর্তি হলুদ চুড়ি, মাথায় খোপার ফুল টাও হলুদ সব মিলিয়ে রোজাকে একদম হলুদ পরীর মতন দেখা যাচ্ছে। যেনো আকাশ থেকে নেমে আসা কোনো এক হলুদ পরী। যার থেকে দৃষ্টি সরানো বড্ড কঠিন। তবুও রওশন নিজের দৃষ্টি সংযত করে ফেললো। কারন সেই হলুদ পরী তো তার নিজের একান্ত ব্যক্তিগতো সম্পদে রুপান্তরিত হয়নি। হয়তো হবে কোনোদিন একদিন। সেটা সময়ের অপেক্ষা”!
“রোজার পেটের অপারেশন টাও ঠিকঠাক ভাবে হয়ে গেছে। রোজা এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে। সেই খুশিতেই রওশন সবাইকে নিয়ে তার রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে যাচ্ছে”।
রওশনঃ রোজা আপনার হয়েছে নিশ্চয়ই? তাহলে চলুন যাওয়া যাক? আর বাচ্চারা কোথায়?
–বাচ্চাদের কথা বলতে বলতে সঙ্গে সঙ্গেই হাজির হয়ে গেলো দুই বোন! তারপর তারা সবাই মিলে আনন্দ সহকারে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
রোজা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখতে পেলো রেস্টুরেন্টটা খুব সুন্দর দেখতে। চারপাশ টা অনেক সুন্দর সুন্দর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। গেস্টদের জন্য অনেক ভালো ভালো জায়গা রেখেছে। হরেক রকম আলে জ্বলছে। কিন্তু সব রকম সব কিছু দেখতে পেলেও রোজা সেখানে বাঙালী খাবার দেখলো না বললেই চলে।
তাই সে মনে মনে ঠিক করলো যে কাল থেকেই কিছু ভালো ভালো বাঙালী রান্না করবে। অন্ততোএটুকু তো করতেই পারে রোজা রওশন দের জন্য।
রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে আসার সময় তারা দেখতে পেলো একটি বাচ্চা মেয়ে বসে কাঁদছে কেউ নেই পাশে তাই রোজা মেয়েটিকে হোটেলের ভিতরে এনে খাইয়ে দাইয়ে বাইরে একটি দোকানের ভিতরে বসিয়ে রেখেছে। তখনি বাচ্চাটির মা এসে বললো,
“ম্যাডাম আপনে আর আপনার স্বামী বড়ো ভালা মানুষ। আমার মাইয়াডারে কতো যত্ন করলেন। আমি মন খুলে দোয়া করতাছি আপনারা আপনাগো মাইয়াগো রে নিয়া বহুত সুখে থাকবেন”।
ভদ্রমহিলার মুখ থেকে রওশন কে নিজের স্বামী শুনে কেমন জানি লাগলো রোজার। রওশন চুপচাপ ভাবে দেখলো সবকিছু কিছুই বললো না! যতোই হউক সে তো এ বাড়ির আশ্রিতা। তাই রওশনের স্ত্রী হওয়ার ও কোনো যোগ্যতা তার নেই। আর রোজাও চায় না আদিল এর মতোন আর কারো কাছ থেকে এরকম নরক যন্ত্রনা পেতে।
এক মাস যাওয়ার পর _________________________
এখন রোজা যেমন রওশনের পরিবারের সকলের খেয়াল রাখে যত্ন করে ঠিক তেমনি করিম সাহেব, রওশন সবার সর্বক্ষেএেই রোজাকে ছাড়া এখন তাদের চলে না! এভাবেই বাড়ির প্রতিটি সদস্যের খেয়াল রাখছে রোজা। নিজের মেয়েদের নিয়ে কোনো চিন্তাও নেই এখন। তারা স্কুলে যাচ্ছে পড়াশোনা করছে। একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠছে আর কোন কিছুই চায় না রোজা।
রওশনঃ রোজা আপনার খাওয়ার গুলো কিন্তু খুব খুব ভালো হচ্ছে। আগে আমার রেস্টুরেন্টে বাঙালী খাবার কেউই খেতো না বলতে পারেন! এখন তো বেশির ভাগ অর্ডারই আসছে বাঙালী খাবারের। সত্যি রোজা আপনি না থাকলে আমার রেস্টুরেন্টে টা এতো ভালো চলতো না! আর হ্যাঁ মনে আছে তো আপনার দায়িত্ব? আজকে কিন্তু একটা জন্মদিনের পার্টিতে প্রায় দু’শো বিরিয়ানির অর্ডার এসেছে। আপনি যখন দায়িত্ব নিয়েছেন তখন তাড়াতাড়ি করে ফেলুন তো দেখি আপনার হাতের জাদু!
হ্যাঁ এখন রোজা বাড়ির সবার খেয়াল রাখার পাশাপাশি রওশন এর রেস্টুরেন্টের কাজেও হাত লাগিয়েছে। আর রোজার হাতের রান্না অনেক মানুষ পছন্দ ও করছে। রোজা মনে করে এভাবে শুধু শুধু ঘরে বসে না থেকে রান্নাটুকুও করলে রওশনের রেস্টুরেন্টের যেমন একটু উপকার হবে তেমনি রোজারও ভাল্লাগবে এই পরিবারের জন্য কিছু করতে পেরে।
বিকেলে বাচ্চাদের সাথে গল্প করার সময় হঠাৎই মিষ্টি তার মা’কে প্রশ্ন করে ওঠলো,
“আম্মু আজকে কতোদিন হয়ে গেলো অথচ আব্বু আমাদেরকে একটা ফোনও করেনি কিংবা একটু দেখাও করেনি বলো? আমি তো আব্বুকে খুব মিস করছি”!
রোজা জানতো বাচ্চারা এতো সহজে আদিল এর কথা ভুলতে পারবে না। যতোই হউক তাদের আব্বু তো!
মিষ্টি মামুনি তোমাদের না আম্মু বলেছিলো মনে নেই তোমাদের? তোমাদের আব্বু এখন আর তোমাদের ভালোবাসে না। তাই তো দেখছো না কতোদিন হয়ে গেলো অথচ তোমাদের আব্বু দেখা করতে এসেছে তোমাদের সাথে? আসেনি তো কারন সে তোমাদের কে আর ভালোবাসে না। মিস ও করে না তোমাদের কেও!
মায়ের কথা যেনো একটু হলেও বুঝেছে মিষ্টি। তাই আর কথা না বাড়িয়ে সে রোজাকে বললো,
হ্যাঁ আম্মু তুমি ঠিকই বলেছো। আব্বু আমাদের কে আর ভালোবাসে না। না মিস করে? এর চেয়ে তো ভালো আমাদের আংকেল। কতো সুন্দর করে খেলে আমাদের সাথে, কথা বলে, কতো আদর করে আমাদের। আংকেল যেভাবে আমাদের ভালোবাসে আব্বুও কোনদিন সেভাবে ভালোবাসেনি আমাদের! আংকেল খুব খুব খুব ভালো আম্মু। আমরাও আর মনে রাখতে চাই না আব্বুকে। আব্বু পঁচা।
রোজা জানতো হয়তো মিষ্টি এগুলাই বলবে।” বাচ্চারা যার কাছ থেকে ভালোবাসা পায় ঠিক ততোটুকুই ভালোবসা তাদেরকে ফেরত দেয়”।
_________________________________
রিনির এখন আট মাস চলছে প্রেগন্যান্সির। তবুও তার এটা চাই, ওটা চাই লেগেই আছে আদিল এর কাছে থেকে। এইতো সেদিন শপিং করতে গেলো, এ অবস্থায় আার পার্লারও গিয়েছে। আবার কদিন পরপর পার্কেও যায় সে। আদিল থামাতেও পারছে না রিনিকে। রিনির সব আবদার মুখ বুঝে সহ্য করছে। রোজা যাওয়ার পর থেকে কেনো জানি আদিল এর এখন রোজার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে আগের একসাথে কাটানো দিনগুলোর কথা। ইদারা বেগম ও মাঝে মাঝে বলেন মেয়েটা থাকলে ভালো হতো।
আদিল এর সাথে রিনির দেখাটা হয়েছে, আদিল যখন বাসার উদ্দেশ্য ফিরছিলো তখনই রিনি আদিল এর সামনে এষে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আদিল ও বিপদ বুঝতে পেরে রিনিকে বাসায় নিয়ে যায়। সেদিন রোজা বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে গেছিলো সামনের পার্কে। ব্যস তারপর থেকেই আদিল এর সাথে ফোনে কথা বলা। আস্তে আস্তে সখ্যতা গড়ে ওঠা দু’জনের মাঝখানে। তারপর সর্বশেষে ভালোবাসার দোহাই দিয়ে আদিল এর সাথে বিয়ে করে আদিল এর বাড়িতে এসে ঝাঁকিয়ে বসেছে রিনি রোজার জায়গায়!
রিনিঃ আদিল আমার না একটুও ভাল্লাগছে না তুমি একটা গান শোনাও আর আমার মাথায় বিলি কেটে দাও।
আদিল হাসিমুখে রিনির আবদার পুরন করছে।
একটু পরে আবার রিনি বলছে,
রিনিঃ আদিল আমাকে একটু প্লিজ কালকে পার্লারে নিয়ে যাবে। দেখোনা আমার হাতগুলো কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে।
এবার মাথা গরম হয়ে গেলো আদিল এর, রাগাত্নিক স্বরে সে রিনিকে বলতে লাগলো,
তুমি কি পাগল রিনি? এই অবস্থায় বারবার বাহিরে যেতে চাচ্ছো যখন তখন? বেবির কোনো চিন্তা নেই তোমার নেই তোমার মাথায়? পার্লারে না গেলে কি তোমার আহামরি অসুবিধা হয়ে যাবে?
রিনি ও যেনো ক্ষেপে গেলো আদিল এর কথা শুনে,
এই বলেছিলে তুমি আমাকে আদিল? তুমি তো বলেছিলে আমার সব আবদার তুমি পুরন করবে। বলেছো যখন তখন সব করতেই হবে তোমাকে।
এবার রাগের চোটে আদিল গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো নিজের পায়ে কুড়োল টা নিজেই মেরেছে!
ওদিকে রওশন রোজাকে কবে থেকে একটা কথা বলবে বলে বলেও বলতে পারছে না! আজকে ভাবছে যখন বাচ্চারা স্কুলে থাকবে তখন রোজাকে বলতেই হবে তার না বলা কথাটি।
সঙ্গে সঙ্গে সে সবকিছু জোগাড় করতে চললো । কারন একটু সারপ্রাইজ দিতে চায় রোজাকে। তাই সে খুশি মনে বাজারে চললো সবকিছু আনতে।
কিন্তু রোজা কি আদৌ রওশন এর কথা শুনবে?
#পর্ব১৪
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু
“মানুষ যখন তার ভালোবাসার মানুষের জন্য কিছু তৈরী করে তখন সেটার সৌন্দর্য যেনো আরো বেড়ে যায় ” আলতো পরশে সে তার প্রেয়সীর জন্য আনানো জিনিসগুলো দিয়ে পুরো ঘরটা সাজাচ্ছে। যাতে তাতে কোনো বিন্দু পরিমান ও খুঁত না থাকে।
–“প্রথমেই পুরো ঘরটাকে বেলুন আর কিছু তারা দিয়ে সাজিয়ে দিলো। তারপরে রোজার জন্য রোজার প্রিয় ফুচকা নিজের হাতে তৈরী করেছে রওশন! খুব যত্ন করে তৈরী করেছে। একটা টেবিলের উপর গোল করে অনেক গুলো লাল, সাদা রঙের গোলাপ ফুল দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে। গোলাপ ফুলের মাঝখানে রয়েছে অনেকগুলো হলুদ রঙ মিশ্রিত সুন্দর গাধা ফুল,তার মাঝখানে রয়েছে কতোগুলো নীল রঙের অর্ধপ্রস্ফুটিত গোলাপ ফুল! সবকিছুর মাঝখানে রেখেছে রওশন একটি নীল চিরকুট যেখানে তার ইচ্ছের কথা লিখা আছে। আর তার পাশেই একটা জায়গায় তার হাতের তৈরী ফুচকা রেখেছে রোজার জন্য। আর রোজাকে তার জীবনে আমন্ত্রিত করবার জন্য দরজার সামনে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাস্তা বানিয়ে দিলো। যাতে এই গোলাপের মতই সুন্দর হয় তার সাথে রোজার আগামী পথ চলা।
–“হ্যাঁ রওশন এই পুরো ঘরটা এতো যত্ন করে সাজাচ্ছে শুধুমাএ রোজার জন্য। কারন রোজার উপর তার একটা মায়া পড়ে গেছে যে মায়া কখনোই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এক কথায় বলতে গেলে ভালোবেসে ফেলেছে রওশন রোজাকে। এখন শুধু সেটা রোজার কাছে প্রকাশ করার পালা”।
সবকিছু আয়োজন শেষ করে সে রোজাকে একটি লাল রং মিশ্রিত খুব সুন্দর একটি শাড়ি দিলো পড়ার জন্য। সাথে সাথে ম্যাচিং করে কানের দুল, গলার হার আর মাথায় দেওয়ার জন্য সুন্দর একটি গাজরা এনেছে। সবকিছু রোজার হাতে দিলো পড়ার জন্য।
“রোজা যদিও প্রথমে না করেছিলো কিন্তু পরে রওশন এর কথা ফেলতে পারেনি হুট করে। তাই সে পড়তে রাজি হয়ে যায়”।
সবকিছু পড়ে তৈরী হয়ে যায় রোজা। রওশনের রুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই,
কতোগুলো গোলাপ ফুলের পাপড়ি এসে পড়লো রোজার সারা গায়ে! তারপর যখন ঘরে প্রবেশ করলো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাস্তা বানানো। সেই পথ দিয়েই রোজা সামনে আগালো। সামনে এগিয়ে দেখতে পেলো রওশন টেবিলে বসে আছে। রোজা সেখানে বসলো। তার চোখ আঁটকে গেলো মনোমুগ্ধকর টেবিলটি দেখে! ফুলের সু’গন্ধে সুবাসিত করলো নিজেকে। তারপর রওশনের চিরকুট টি খুললো, তাতে লেখা রয়েছে,
“অর্ধপ্রস্ফুটিত গোলাপে লুকিয়ে আছে ভালোবাসা”
“আমার সেই ভালোবাসা শুধু তোমারই জন্য”
“ভালোবাসি তোমার ওই মায়া মুখটিকে মায়াবতী”
“সাথে তোমার ওই মায়া ভরা মেয়েদের কেও ”
“যদি তুমি সুযোগ দাও তোমার ওই হাতটি ধরার”
“কথা দিচ্ছি সুখ বই কষ্ট দিব না কোনদিন আর”
চিরকুট টা পড়ে রোজার কাছে সবটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, রওশন কেনো এতো সুন্দর করে পুরো আয়োজন করেছে! রওশন বলতে লাগলো,
দেখো রোজা, তোমাকে স্পষ্ট করেই বলছি আমি,” আমি তোমাতে ভালোবেসে ফেলেছি”। হ্যাঁ তোমার মেয়েদের শুরুতেই নিজের মেয়ের মতন ভালোবেসেছি কারন আমার নিজেরই কোনো সন্তান নেই! ওদের পেয়ে যেনো আমার শুকনো মরুভুমিতে একটু পানির দেখা মিলেছে! এরকম মনে হয়েছিলো আমার। এই এতো গুলো দিন তোমার সাথে, আশেপাশে থাকতে থাকতে কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও বলতে পারবো না রোজা! শুধু চাই যে তুমি আর মেয়েদের নিয়ে আমি বাকিটা জীবন সুন্দর ভাবে কাটাতে চাই মৃত্যুর আগ অব্দি। কথা দিচ্ছি কখনো কষ্ট পেতে দিবো না তোমায়!
রোজাঃ আমি সবটা বুঝতে পারলেও, আপনার সিদ্ধান্ত টা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না কিছুতে। আমি আর ঠকতে চাই না নতুন করে, না কোনো কষ্ট পেতে চাই। কিচ্ছু চাই না আমি কিচ্ছু না! মেয়েদের নিয়ে ভালো থাকতে পারবো বাকি জিবন আমি। জানেন রওশন,
“জীবন হলো অনেকটা জ্যামিতির উপপাদ্যের মতন, চিত্র দেখলে মনে হয় কত সহজ, কিন্তু প্রমাণ করতে গেলে বোঝা যায় কতটা কঠিন”!
রওশনঃ কিন্তু পরিশেষে তোমার একটি ছায়ার প্রয়জোন ছিলো, মেয়েদের ও। আমি ভেবেছিলাম তোমার পাশে ছায়ার মতো থাকবো। ছায়া যেমন কখনো দূরে যায় না ঠিক তেমনি আমিও কখনো দূরে সরে যাবো না। জানোতো রোজা,
“অস্থায়ী জীবনে চিরস্থায়ী হল মানুষের সুন্দর ব্যবহার, যা মৃত্যুর পরেও সবার স্মৃতিতে থাকে”
“আমি না হয় তোমার আর মেয়েদের সাথে কাটানো সেই সৃত্বি নিয়েই থাকবো। জোর করবো না তোমায় কোনোদিনও তুমি চাইলে আসতে পারো আমার মনের গহিনে যেখানে শুধু তোমার বসবাস”।
রওশন বুঝতে পারলো, রোজার এসব কথা শুনে মন খারাপ করেছে, তাই সে এসব কথা বাদ দিয়ে কাজের কথা বলতে লাগলো,
রোজা, তাহলে এখন চলো মেয়েদেরকে স্কুল থেকে নিয়ে আসা যাক? আমি ওই রাস্তায়ই যাবো চলো একসাথে যাওয়া যাক?
রোজাও আর কথা বাড়ালো না রওশনের সাথে মেয়েদেরকে আনার জন্য বেড়িয়ে গেলো!
____________________________
আদিলঃ রিনি অনেক তে হলো এবার এসব বাদ দাও? বাদ দিয়ে চলো এখন বিশ্রাম নাও। তোমার তো কিছুই করা লাগে না! খালি খাবে আর ঘুমাবে। মাঝখান দিয়ে আবার এসব পার্লার টার্লার যাওয়ার কোনো দরকার নেই বুঝেছো?
রিনিঃ সারাদিন শুয়ে বসে থাকতেও ভাল্লাগে না। তাই তো বলছি চলো পার্লার থেকে বেরোবার পর আমরা আজকে অনেক জায়গায় ঘুরবো।
রিনির কথার কাছে আদিল হার মেনে চললো রিনির কথা মতন রিনির সঙ্গে।
রিনি প্রথমে পার্লারে গেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আদিল ওয়েট করছে রিনির জন্য । অবশেষে পার্লার থেকে বেরিয়ে রিনির বায়না পূরনের জন্য আদিল রিনিকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছে। সে মানা করেছিলো রিনিকে এসব খাওয়া থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু রিনি কি আদৌ আদিল এর মানা শুনে নাকি? তাইতো আদিল রিনির কথা মতো চললো ফুচকা খাওয়াতে।
____________________________
স্কুলে আজকে এক্সর্টা ক্লাস চলছে। রোজা সেটা জানতো না বিধায় এখন রোজা আর রওশন দুজনকেই ওয়েট করতে হচ্ছে।
অবশেষে নিরবতা কাটিয়ে রওশন রোজাকে বললো যে “সামনে একটি পার্ক রয়েছে সেখান থেকে একটু ঘুরে আসা যাক”?
রোজা বারন করতে চাইলেও পারলো না! কারন একটু আগের ব্যবহারে রওশন এর মন খারাপ কয়ে আছে। সেটা রওশন স্বীকার না করলেও রোজা তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে! তাই সে রওশনের সাথে গেলো সামনের পার্কটাতে হাটতে।
“নীরবতা এবং হাসি দুটোই জীবনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। হাসি যেমন সমস্যা মেটাতে সাহায্য করে নীরবতা সেই সমস্যাগুলিকে এড়িয়ে চলতে শেখায়”।
ঠিক তেমনি ভাবে নিরবে দু’জন হেঁটে চলছে। হাঁটতে হাঁটতে রোজার চোখ গেলো সামনের ফুচকাওয়ালার দিকে, যেখানে সে আদিল এবং রিনিকে দেখতে পেলো!
রিনির হাতে ফুচকার প্লেট সেখান থেকে রিনি ফুচকা খাচ্ছে রিনি খাচ্ছে বললে ভুল হবে আদিল রিনিকে খাইয়ে দিচ্ছে, আর রিনিও আদিলকে খাইয়ে দিচ্ছে। ওদের কে দেখে মনে হচ্ছে যে যেনো পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ তারা দু’জনে। হঠাৎই রোজার মনে হলো, আদিল কখনো ফুচকা খেতে চায়নি! রোজার মন খারাপ হতো বলে বাধ্য হয়ে তখন খেতো আদিল। তাও অল্প কয়েক! আর এখন দেখে মনে হচ্ছে আনন্দে তৃপ্তি করে রিনির সাথে খাচ্ছে। সত্যি ই আদিল পাল্টে গেছে! সবদিক দিয়ে পাল্টে গেছে সে, আদিলকে দেখে মনেই হচ্ছেই না যে আদিল এর স্ত্রী সন্তান নিখোঁজ। হয়তো তাদের নিয়ে কোনো ভাবান্তরও নেই আদিল এর মধ্যে। যদি থাকতো তাহলে সে চেষ্টাটুকুনি করতো ওদেরকে ফিরিয়ে আনার! না চাইতেও অঝোর ধারায় অশ্রু নির্গত হচ্ছে অক্ষিজোড়া থেকে!
দূর থেকে সবটা রোজার সাথে সাথে রওশন ও দেখতে পেলো। সবটা বুঝে শুনে সে রোজাকে বলতে লাগলো,
“আমাদের এমন কারো জন্য কষ্ট পাওয়া কখনোই উচিত নয় যার কাছে আমাদের কোনো মুল্যই নেই”
শুধু শুধু যার কাছে তোমার মূল্য নেই তার জন্য চোখের পানি ফেলাও বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। কারন তার কাছে তোমার মূল্যই নেই কোনো সে তোমার চোখের পানির দাম দেবে এটা ভাবাও একধরনের মুর্খামি।
তাই বলছি এগিয়ে যাও জিবনে। আদিল নামে কেউ ছিলো ভুলে যাও সে কথা একেবারে।
#চলবে?