অপূর্নতার সংসার পর্ব ৮

#পর্ব৮
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু

–“রোজার দুই পাশে তার দুই মেয়ে আলো আর মিষ্টি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে। মাঝখানে রোজা বসে রয়েছে তখনি আগমন ঘটলো বড়ো সাহেবের। বড়ো সাহেবকে দেখে রোজার মুখ থেকে আপনা আপনি কথা বেড়িয়ে আসল”!

রোজাঃ ডাক্তার আংকেল আপনি এখানে! তারমানে এটা আপনারই বাড়ি আর আপনিই হচ্ছেন এ বাড়ির বড়ো সাহেব। আর আপনার ছেলেই হচ্ছে এ বাড়ির ছোটো সাহেব যাদের কথা রহিমা খালা বলছিলো আমায় এতোক্ষণ”!

ডাক্তারঃ হ্যাঁ রে রোজা এটা আমারই বাড়ি। তোকে আমি আগে কতোবার আসতে বলেছি তুই আসিসনি। আদিল এসেছে অনেকবাড় এবাড়িতে। আর আমার ছেলেকেও তো তুই কখনো দেখিসনি তাই চিনিস না। কিন্তু তুই এখানে হঠাৎ করে কি করে আসলি আর তোদের মাথায় এরকম ব্যন্ডেজ কেনো? কোনো বিপদ হয়েছে কি তোদের সাথে?

–“তারপর রোজা ডাক্তার সাহেব মানে মিঃ করিম সাহেব কে সবকিছু খুলে বলতে লাগলো, কি করে কি হয়েছে তার সাথে। আদিল এর দিত্বীয় বিয়ের কথা, তার সাথে খারাপ ব্যবহার করার কথা, মেয়েদের গায়ে হাত তোলা এমনকি ডির্বোস এর কথাও বলতে ভুললো না রোজা। সবকিছুই খুলে বলেছে”। সবকিছু শোনার পর ডাক্তার করিম বললেন..

করিম সাহেবঃ যা হয়েছে তোর সাথে তো অন্যায় হয়েছে রে। তুই মুখ বুজে সবটা মেনে নিয়েছিলিস এতোদিন! আমি তোকে আগেরবার জিগেস করাতে কিছুই বলিস নি তখন। এসব কারনেই তাহলে তুই সেদিন অজ্ঞান হয়ে গেছিলি! যাইহোক যা করেছিস ভালোই করেছিস। ওখানে থাকলে আরো কষ্ট পেতিস, বাচ্চাদের ভবিষ্যতে ও নষ্ট হয়ে যেতো। এর চেয়ে বড়ং তুই এখানে আমার বাড়িতেই থাক। এমনিতেও এ বাড়িতে আমি, রওশন, রহিমা, আর ড্রাইভার তো গাড়ি চালাতেই আসে শুধু আর কেউই নেই। তোরা থাকলে আরো ভালো হবে বাড়িটা পূর্ন হবে। নাতনি দের সাথে থাকতে পারবো আমি। থেকে যা এখানে রোজা।

রোজাঃ কিন্তু আংকেল রওশন সাহেব যদি কোনো আপওি করেন? বা আপনাদের যদি কোনো অসুবিধা হয়? আংকেল আমি চলে যায় বরং কোথাও বাসা নিয়ে ঠিক থাকতে পারবো। আপনি বলেছেন এতেই খুশি।

করিম সাহেবঃ দূর পাগল! রওশন কি বলবে? ও কিছুই বলবে না তোকে। আর আমাদের কি অসুবিধার কথা বলছিস তুই? কোনো অসুবিধা হবে না। এই মস্ত বড়ো বাড়িতে তোরা তিনজন মানুষ থাকবি তাতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং তেরা থাকলে আরো আমাদের ভালো লাগবে।

রহিমা খালাঃ হ্যাঁ গো তুমি থাইকা যাও আমি তো সারাদিনই একলা একলা থাহি এই মেলা বাড়িখানায়। তুমি যদি থাহো আমারো ভাল্লাগবো। তাই কইতাছি আর মানা কইরো না, থাইকা যাও এহানে। আর অহনকার পরিবেশ ও তো ভালা না দেহো না যদি কোনো বিপদে পড়ো? দেখলা না আজকা কি হইলো! এর চেয়ে ভালা তুমি এইহানেই থাহো আমাগো লগে। আমি তো এতোবছর ধইরা রইতাছি কোনো সমস্যা ই নাই তুমিও থাকবার পারো।

–” অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো রোজা সে তার মেয়েদের নিয়ে এখানেই থাকবে। কেনোনা করিম সাহেব এমনি একজন মানুষ যাকে বাবার স্থানে বসিয়ে অন্ধের মতন ভরসা করা যায়। আর এই মস্ত বড়ো কোলাহল শহরে রোজা একলা থাকলে সুখের চেয়ে বিপদের আশংকাই বেশি তাই সে এখানে থাকায় মত দিলো”
ও বাড়িতে….

আদিলঃ মা একটু শোনো তো রিনির ক্ষিদে পেয়েছে কখন থেকে। আর রোজাকেও দেখতে পাচ্ছি না! তুমি একটু রিনির জন্য রান্না করে দাওতো। আর হ্যাঁ মা রান্না যখন করবে একটু বেশি করেই করো কারন আমারো খুব ক্ষিদে পেয়েছে।

ইদারা বেগমঃ কি বলছিস তুই আদিল আমি রান্না করবো মানে! আমিতো হাঁটুর ব্যাথায় সকাল থেকে এই এখনো অব্দি শুয়েই রয়েছি। ওঠতে পারছি না আর তুই আমাকে রান্না করতে বলছিস? আর রোজাটা গেলো কোথায় সকাল থেকে? একটু তেল মালিশ করে দিতো, ওকেও তো পাচ্ছি না সকাল থেকে! তুই যা পারিস তাই রান্না করে নে বাবা। আমার পক্ষে সম্ভব না রান্না ঘরে গিয়ে এখন রান্না করা।

আদিলঃ ঠিক আছে মা তোমার যখন সমস্যা আছে তখন আর কি বলবো তোমায়! আর রোজা কি জানি কোথায় গেছে! বাচ্ছাদের নিয়ে বেড়িয়েছে ফোনটাও বন্ধ, ফোনে পাচ্ছি না । এসে পড়বে একটু পড়েই কোথায় আর যাবে সে।

–আদিল নিজে তো রান্না করতে পারে না তাই হোটেল থেকে বিরিয়ানি অর্ডার করলো তাদের খাওয়ার জন্য। বিরিয়ানি অর্ডার করেই রুমে আসতে দেখতে পেলো টেবিলের উপর একটি কাগজ ভাজ করা আছে। দেখে মনে হচ্ছে এর ভিতরে অনেক কিছু লিখা আছে। আগ্রহ কমাতে আর কাল বিলম্ব না করে চিঠি খুলে পড়তে লাগলো আদিল”।

“প্রিয় আদিল”..

— ” জানি এখন আর তুমি আমার প্রিয় নেই। হয়ে গেছো অন্য কারো। হয়তো এখন তোমার আমাকেও দেখলেও রাগ ওঠে! তোমার ব্যবহারে আমি এরকমই আভাস পেয়েছিলাম। জানো তুমি যখন রিনিকে তোমার দিত্বীয় স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েছিলে তখন কতোটা খারাপ লেগেছে আমার! আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে তুমি এটা করতে পারলে? তারপরে যখন কারন বললে তোমার বলা কারন শুনে তো আমি আরো অবাক হয়েছিলাম এরকম একটা জিনিশ নিয়ে কেউ এমন করতে পারে? যাই হোক তুমি তো করেছো কারন তোমার তো বংশধর চাই এখন। সব কিছুর পরেও জানো ভেবেছিলাম এইখানেই থাকবো মায়ায় পড়ে গেছিলাম তো তাই। কিন্তু যখন দেখলাম আমার মেয়েদের গায়ে হাত তুলতে বাকি রাখলো না তোমার দু’দিনের আসা রিনির! আর তুমিও কিছু বললে না। তখন যেনো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। কারন যে মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এখানে থাকবো ভেবেছিলাম সেটুকুই নেই। তাই চলে যাচ্ছি আমার মেয়েদের নিয়ে ভবিষ্যতে ওদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে তোমার সামনে দাড়াবে দুজনে। যেটা কোনো ছেলের থেকে কম অংশ নয়। রাএেবেলা তোমাদের খেতে ডাকার সময় তোমাদের কিছু কথা কানে আসে তখন শুনতে পেলাম তুমি আমাকে ডির্ভোস দিতেও এগিয়ে গেছো। মানে কোনো পিছুটান নেই তোমার আমার বা মেয়েদের প্রতি। এখন রিনিই তোমার কাছে সব হয়েছে। ওর ভালোবাসায় তুমি অন্ধ হয়ে গেছো যেদিন চোখ খুলবে তখন আর আলো দেখতে পাবে না চোখের সামনে। তাই তোমাকে সব বাধন থেকে একবারে মুক্তি দিয়ে চলে গেলাম। কোনো রকম খোজখবর নেওয়ার চেষ্টাও করবে না। যোগাযোগ করার ও না। ডির্ভোস পেপারে সই করে দিয়েছি টেবিলের পাশেই রাখা আছে। ভালো থেকো তুমি তোমার রিনি আর অনাগতো সন্তান নিয়ে”।

–“চিঠি পড়ে যেনো কোনো ভাবন্তরই হলো না আদিল এর মধ্যে। সে চিঠিটা আর ডির্ভোস পেপারটা সযত্নে রেখে দিলো আলমারিতে। আর ভাবছে রোজা কোথায় গেলো? এতো সহজে তাদেরকে ছেড়ে, তার মেয়েদের নিয়ে কোথায় গেলো?
_____________________

রোজাঃ রহিমা খালা অনেকক্ষন তো হলো এসেছি এবার আমি আমার মেয়েদের গোসল করিয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিই।

রহিমা খালাঃ আইচ্ছা তুমি তাইলে যাও বাচ্ছাগুলান রে গোসল করাও। আমি ততক্ষণে তোমাগো লিগা খাওন আনতাছি।

–ওদিকে রোজা তার মেয়েদের ওঠাতে লাগলো। দু’জনে ঘুম থেকে ওঠেই এক প্রশ্ন মাকে যে তারা কোথায় এসেছে? কেনো এসেছে? আব্বু কই? বাকি সবাই এলো না এসব কিছুই। রোজা উওর দিতে লাগলো ।

“মামুনিরা যখন তোমাদের কারো সাথে ঝগড়া হয় বা কেউ তোমাদের কষ্ট দেয় তখন তোমরা কি করো তাদের সাথে?

“একসাথে আলো আর মিষ্টি বলতে লাগলো ”

“যারা আমাদের সাথে ঝগড়া করে আমাদের কে কষ্ট দেয় তখন আমি আর আপু আমরা দু’জনে মিলেই তার সাথে আড়ি করে দিই। আর কথাও বলি না তাদের সাথে ”

–“মামুনিরা সেরকমই মনে করো তোমার আর তোমার আব্বুর সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছে, তোমার আব্বু আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। সেকারনে তোমার আব্বু নেই আমাদের সাথে “।

আলোঃ আম্মু তাহলে তাহলে আমরা কি করলাম?
#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here