অবন্তর আসক্তি পর্ব ১৯+২০

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১৯
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
______
‘আমাকে ভালোবাসতে হবে না, ভালোবাসি বলতে হবে না

মাঝে মাঝে গভীর আবেগ নিয়ে আমার ঠোঁট দুটো ছুঁয়ে দিতে হবে না,

কিংবা আমার জন্য রাত জাগাপাখিও হতে হবে না।

অন্য সবার মত আমার সাথে রুটিন মেনে দেখা করতে হবে না

কিংবা বিকেল বেলায় ফুচকাও খেতে হবে না।

এত অসীম অসংখ্য “না”-এর ভিড়ে শুধুমাত্র একটা কাজ করতে হবে;

আমি যখন প্রতিদিন একবার “ভালোবাসি”

বলবো তুমি প্রতিবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে

একটু আদর মাখা গলায় বলবে “পাগলটা”

যদি আমার কাজল পড়িয়ে দিতে হয় তোমাকে, চুলে মুখে রঙ মাখিয়ে দিতে হয়, গায়ে সুগন্ধি ছিটিয়ে দিতে হয়, সবচেয়ে ভালো শাড়িটাও যদি পড়িয়ে দিতে হয়, শুধু আমি দেখবো বলে মালাটা চুড়িটা পরে সাজতে হয়, যদি তলপেটের মেদ, যদি গলার বা চোখের কিনারের ভাঁজকায়দা করে লুকোতে হয়, তবে তোমার সঙ্গে অন্য কিছু, প্রেম নয় আমার।

প্রেম হলে আমার যা কিছু এলোমেলো যা কিছু খুঁত, যা কিছুই ভুলভাল, অসুন্দর থাক, সামনে দাঁড়াবো, তুমি ভালোবাসবে। কে বলেছে প্রেম খুব সহজ, চাইলেই হয়! এতো যে নারী দেখি চারদিকে, কই, প্রেমিকা তো দেখিনা ! তুমি যেমনই হও আমার জন্য তুমিই হচ্ছো আমার বিশ্বাস সুন্দরী রাগরাগিণী।

‘এই শুনো না! শুনছো? এই তুমি কি শুনছো হুম উত্তর দিচ্ছো না কেন? বলো হুম! ‘

বর্ষা মলিন হেসে ঠিঠির উত্তরে মৃদুস্বরে বলল,’ হুম ‘

‘ আমার রাগরাগিণী তুমি কি জানো আমার হিংসে হয়। অনেক হিংসে হয় যখন তুমি অনন্য ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলো। মনে হয় মনের মধ্যে কে জেনো ধারালো ছুড়ি দিয়ে গায়েল করে দিচ্ছে। অজস্র যন্ত্রণা হয়। মাটির সাথে মিলিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তুমি কি জানো আমার হিংসে হয় তোমার ওই অবাদ্য ঘন কালো রেশম চুলগুলোর সাথে। যখন দেখি বেহায়া চুলগুলো তোমার কপালে এসে পরে থাকে। হাল্কা বাতাসে তা নেচে উঠে। তোমাকে বারবার জ্বালাতন করে বাতাসে উপচে পরে তোমার চোখে মুখে, তখন জানো আমার কি করতে ইচ্ছে করে? উঁহু জানো না। তখন আমার ইচ্ছে করে তোমার কাছে যাই তোমার হাত ধরে টান মেরে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে নিজের হাতের তর্জনী দিয়ে একটা একটা চুল সরিয়ে তোমার কানের পেছনে গুঁজে দেই। আরও একটা ইচ্ছে করে আমি তোমার মুখে ফু দেবো। তুমি চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিবে মুখেতে লেগে থাকবে অমায়িক হাসি। যে হাসি দেখে আমি বারন বার প্রেমে পরবো তোমার। হাত ধরে টেনে তুলবে তুমি আমায়। তুমি আমার এমনই এক জন রাগরাগিণী তোমাকে হাজারও ভালোবেসে ভরবে না এ মন।

★ আমি ভালো নেই আমার সুঘ্রাণী ফুল। ভালো নেই আমি আমার অবদ্ধ মন যে সারাক্ষণ তোমাকে চায়। সে জোরে জোরে বিট করে আমাকে জানান দেয়। আমার শুধু তোমাকে চাই। আমি কোনো কিছু তেই মন দিতে পারি না। কাজে কর্মে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে আমি ব্যর্থ হয়েছি। মন বলে, আমি তোমাকে পেয়ে গেলে আমার সকল বিষন্নতা একাকীত্ব আপনা আপনি কেটে যাবে। এই আমার বকুল ফুল বলো না তুমি কি হবে আমার? একাকীত্বের সঙ্গী। কাছে আসবে আমার? ভালোবাসার অতল সাগরে ভাসবে আমার সাথে? কথা দিচ্ছি তুমি একটিবার আমার হয়ে গেলে আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে আগলে রাখবো। ভালোবাসি! ভালোবাসার থেকেও অধিক ভালোবাসি। আমার মন পাড়ায় শুধু একটাই নাম ‘ বর্ষা রাগিনী ‘ আমার ভালোবাসার শুভ্র রঙে রাঙিয়ে রাখবো তোমায়। আমি ভালোবাসি শুধুই তোমাকে ‘
______

চিঠিবাজের চিঠি পড়ে প্রথম দিক দিয়ে ইমোশনাল হয়ে পরে চারবোন। মাঝখানটায় ফিক করে হেসে ফেলে। আবারও শেষের দিকে ইমোশনাল হয়ে পরে বর্ষা। আনমনে ভাবতে লাগে, ‘ কে এই চিঠিবাজ? যে সবার চোখের আড়ালে চিঠি রেখে যাচ্ছে। তাও এমন ভুবন ভুলানো শব্দে লেখা তার চিঠি পড়ে যে হৃদয়ে এক অজানা অনূভুতি দোলা দিয়ে যায়। কে এই প্রেমিক যে নিজের থেকেও অধিক ভালোবাসে বর্ষাকে?

রিমা কাটা চামচে নুডলস পেঁচাতে পেঁচাতে বলল,’ কে এই চিঠিবাজ? যে আমার অলস রাজ্যের রাণী বর্ষার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ‘

রিয়া ও বৃষ্টি সশব্দে হেসে উঠল। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকাতে ওদের দৃষ্টি মলিন হয়ে গেলো।
আমি আকস্মিক বিপর্যয় ঘটিয়ে হুট করেই বলে ফেললাম, ‘ কিছুক্ষণ আগে গাড়ি থেকে নামার সময় অভ্র ভাইয়া আমাকে বলেছিল, আমি জেনো আদ্রিকের সাথে কথা না বলি। আদ্রিককে ভালো ছেলে বলে তার মনে হয় না। মানে সে চায় না আমি ওর সাথে কথা বলি। ‘

বৃষ্টি ও রিমা অবাক হয়ে বলে উঠল,’ কিহহহ?’

রিয়া আমাদের তিনজনের দিকে এক নজর তাকিয়ে এটিটিউট নিয়ে বলল,’ তাতে কি যায় আসে ভাইয়া আমাকেও বলছে আদ্রিকের থেকে দূরে থাকতে। আর আদারস ছেলেদের সাথেও জেনো তেমন কথা বার্তা না বলি। ‘

রিয়ার কথা শুনে চুপসে গেলাম। তখনই অভ্র ভাইয়া রুমে প্রবেশ করল। আমাদের গোল মিটিং করতে দেখে রুমে ঢুকে আসল৷ শব্দহীন ভাবে পা টিপে টিপে এসেছে। আমাদের চারজনের উপস্থিতি বাদেও আরও একজনের উপস্থিতি আমরা বুঝতেই পারিনি। হাতে চিরকুট টা নিয়ে তাতে চোখ বুলাচ্ছি। হঠাৎ করে কেউ একজন ‘ ছ’ মেরে হাত থেকে টান মেরে কাগজ টা নিয়ে নিলো। পেছনে না তাকিয়েই অস্ফুটস্বরে চেঁচিয়ে বললাম, ‘ আব্বে কে রে? কার এত বড় সাহস? ‘

বিছানা থেকে নেমে ঘাড় ঘুরিয়ে ‘থ’ হয়ে গেলাম।
অভ্র ভাইয়া কে আমার রুমে দেখে মনে হলো আমার ১০৪° জ্বর এসে গেছে গায়ে। পরক্ষণেই মনে হলো এটা তো তার দেওয়া চিঠি সে কিছুই বলবে না।

তৎপর সে আমাদের আকস্মিক চেহারা কে বিস্মিত করে দিয়ে বলল,’ কলেজে যাসনি লাভ লেটার আদান প্রদান করতে? কি এইসব? এইসব করতে যাস তুই কলেজে? আজকে আসুক চাচ্চু তোর বিয়ের ব্যবস্থা করাচ্ছি। প্রেম করা লাভ লেটার দেওয়া গুচাচ্ছি। ‘

বলে চিঠিটা হাতের মধ্যে দুমড়েমুচড়ে ফেলল। নিজের শোঁখে আহত কেন হচ্ছি আমি আজব? এখন চিঠি নয় নিজেকে বাঁচাবো কিভাবে সেটাই ভাবান্তর।
আমার মাথায় এমন অবস্থায় শয়তানি বুদ্ধি অটোমেটিক চলে আসে। জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললাম,

‘ অভ্র ভাইয়া তুমি ভুল ভাবছো। এ চিঠি আমার নয়। চিঠি টা তো আমার ফ্রেন্ড নিঝুম হ্যাঁ নিঝুমের। ও একটা ছেলেকে ভালোবাসে আর আমাকে বলছে একটা চিঠি লিখে দিতে। আমি তো শুধু তাই করছিলাম লিখছিলাম। ‘

উনার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি আমার কথা মোটেও বিশ্বাস করেননি। তিনি গুরুগম্ভীর কন্ঠে বললেন, ‘ নিঝুমের চিঠি হলে, এখানে পাগলী হবে পাগল কেন লিখছিস? ফাজলামি করিস তুই আমার সাথে আর এটা কি তোর হাতের লেখা? ‘

ঠিচিটা আমার চোখের সামনে ধরে বলল। আমি দু’দিকে মাথা নাড়ালাম। মুখ দিয়ে বললাম, ” নাহহ, আমি ফাজলামি করছি না। ওটা পাগলীটা হবে ভুলে ই আকার দিতে ভুলে গেছি। দাও দাও চিঠি টা দাও, এখন আবার নতুন করে লিখতে হবে। ‘

অভ্র ব্রো আমার কথা মোটেও বিশ্বাস করলেন না। আঁড়চোখে আমার সৈন্য বাহিনীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ বর্ষা যা বলছে সব কি সত্যি? ‘

বৃষ্টি, রিয়া, রিমা তিনজনেই উপর নিচ মাথা দুলাতে লাগল। অভ্র ভাইয়া দুই পাশে দুবার মাথা দুলিয়ে চিঠিটা আমার হাতে গুঁজে দিলো। সাথে আরও একটা জিনিস গুঁজে দিয়ে ফিসফিস আওয়াজে বলল,’ নিজের জিনিস সব সময় নিজের কাছে ও যত্নে রাখাই ভালো। কখন কোথায় হারিয়ে যায় বলা মুশকিল৷ একবার হারিয়ে ফেলা জিনিস দ্বিতীয় বার আর পাওয়া যায় না। ‘

চলেই যাচ্ছিল ফিরে এসে আরও বলল,’ সময় পেলে ফ্রিজ খুলে দেখিস। ‘

চলে গেলো সে। আমি নির্বাক তাকিয়ে রইলাম তার যাওয়ার দিকে, অভ্র ভাইয়া যখন আমার সামনে আসে, আর এমন ভাবে ফিসফিস করে কথা বলে। তখন আমার হার্ট বিট তীব্র গতিতে ছুটতে লাগে। মনে হয় জেনো এখনই আত্মা টা বের হয়ে যায়। বুকের বা পাশে ধুকধুক শব্দ হয়। উনি চলে যেতে আমি হাতের মুঠি খুললাম, আমার এক জোড়া কানের দুল। হয়তো গাড়িতে খুলে পরে গিয়েছিল। আরও একটা হচ্ছে পায়েল। দু’টো একসাথেই হয়তো গাড়িতে পরে গিয়েছিল আর উনার চোখ পরে যায়। তাই তো হাতে করে নিয়ে আসি।

আমার ভাবনার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে রিয়া প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ এই বর্ষা কি হয়েছে তোর এমন পাথরের মতো দাড়িয়ে আছিস কেন? ‘

রিমা বলল, ‘ অভ্র ভাইয়া তোকে ফিসফিস করে কি বলল রে?

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালাম। চিঠিটা ছুড়ে বিছানার উপর ফেলে দিলাম। অলস ভঙ্গীতে বিছানার উপর বসে কষ্ঠমাখা কন্ঠে বললাম,’ কে জানি বলছিলো চিঠির মালিক অভ্র ভাইয়া। আয় বোইন সামনে আয়। দুইটা উস্টা দিয়া বিড়ালের ছাউয়ের মতোন জানালা দিয়ে ফালাই দেই। ‘

কথার পিঠে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। পেত্নীদের মতো হ হ করে হাসছে। পেত্নী তিনটায়।

বৃষ্টি থমথমে গলায় বলল, ‘ তার মানে এই চিঠিবাজ আমাদের অভ্র ভাইয়া না। ‘

বর্ষা হাত দিয়ে দাঁতের নখ কামড়াচ্ছে, চোখ তুলে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ উঁহু! ‘

রিয়া ও রিমা লাফিয়ে উঠে একসাথে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ তাহলে কে? ‘

ওদের দু’জনের কথার পিঠে এবার আজি ঠোঁট উল্টালাম। সন্ধ্যার দিকের ঘটনা বর্ষার মনে আসতেই উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে উঠ, ‘ কোন বই থেকে বের হয়েছে চিঠি টা? ‘

রিয়া আমার বইটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিলো আর বলল, ‘ এই বই থেকে, কেন কি হইছে? ‘

বইটা হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে দেখতে মনে মনে বললাম, ‘ এ এটা ওই বইটাই ‘

আমারে চিন্তিত দেখে বৃষ্টি প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ কি ব্যাপার একটা সামান্য বইয়ের জন্য এত চিন্তিত কেন দেখাচ্ছে তোকে? ‘

আমি বইয়ের উপরে দৃষ্টি সংযত রেখেই বললাম, ‘ এটা এখন মোটেও সাধারাণ বই না। ‘

রিমা ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে বলল, ‘ অসাধারণ হওয়ার জন্য কি এমন কাজ করছে বইটা? ‘

রিমাকে আঁটকে দিয়ে রিয়া বলল, ‘ যার ফলে বইটাকে তুই অসাধারণ উপাধি দিচ্ছিস? ‘

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে থেকেই নিচু কন্ঠে বলতে লাগলাম,
‘ সন্ধ্যার দিকে কাজ সব শেষ করে অডিটোরিয়াম থেকে চলে আসার সময় আমাকে পিছু ডেকেছিল আর্দিক। আদ্রিক-ই তখন আমার হাতে এই বইটাই দিয়েছিল। ‘

আমার মুখে আদ্রিক নাম শুনে উপস্থিত তিনজনের মুখ হা হয়ে যায় অস্ফুটস্বরে তিনজনেই বলে উঠে, ‘ কিহহহ ওই আদ্রিক নিদ্রিক ছেলেটা তোর চিঠিবাজ? ‘

রিয়া ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল,’ নাহহ! আমি মানি না মানবো না। ওই আদ্রিক নিদ্রিক ডাবল রোল বেটাকে আমি দুলাভাই হিসেনে মানবো নাহহহ। নো, নাহহ, নুহহহহ ‘
#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_২০
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
____________
সারাদিনের ক্লান্তি ভর করেছে, রাতে হালকা পাতলা কিছু খেয়ে চারজনেই শুতে চলে যায়। স্নিগ্ধ সকালের স্নিগ্ধ আবেশ স্নিগ্ধ পরশে ঘুম ভাঙলো বর্ষার। কেউ একজন তার ঠান্ডা শীতল নরম হাত বর্ষার গালে ছুঁয়ে দিচ্ছে। বর্ষা ঠান্ডা হাতের পরশে বারবার কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে এইমাত্র ফ্রিজ থেকে বের করে নিয়ে আসছে। অতিরিক্ত হাত ঠান্ডা হওয়ায় বর্ষার ঘুম ভেঙে যায়। সে ভেবেছিল এটা বোধহয় স্বপ্ন। কিন্তু তার ভাবনা ভুল প্রমাণিত হলো, কোনো কিছু দিয়ে খোঁচা লেগে, আঁখি জোড়া মেলে তাকাতেই দেখল সামনে অভ্র রয়েছে হাতে ঝুলছে তার পাঙ্গাস মাছ।

বর্ষা হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসল, এক দিয়ে গাল গষতে গষতে বিস্মিত স্বরে বলল,’ তার মানে সে এতক্ষণ আমার গালে পাঙ্গাশ মাছ গষতে ছিলি তুই? ‘

চিঠিবাজের দেওয়া নামটা এখন বর্ষার সাথে প্রচুর মানানসই রাগরাগিণী। বর্ষা এখন প্রচন্ড রেগে গেছে তাই ভুলবসত তুই মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে।

অভ্র এক দৌঁড়ে দরজার সামনে চলে গেছে। পাঙ্গাশ মাছ হাতে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ডেভিল হাসি দিয়ে বলল, ‘ আবার জিংগায় ‘

বর্ষা বিছানার উপর থেকে নরম তুলতুলে একটা ছোট হার্ট শেপ বালিশ অভ্রর দিকে ছুঁড়ে ফেলল, অবশ্য বালিশটা কিছুদূর গিয়ে মেঝেতে পরে যায়। বর্ষা রাগে রাগ্বানিত হয়ে কর্কশকন্ঠে বলল, ‘ বজ্জত আমার গাল কি মাছ গষার জিনিস? শয়তান ছেড়া তোর বিয়ে হবে না অসভ্য। ‘

‘ হবে হবে সময় হলে বিয়ে আন্ডা বাচ্চা সব হবে। শুধু বিয়েতে তোকে ইনভাইট করবো না। তুই একটা রাক্ষসী। ‘

‘ কুত্তাহহহহ ‘ বলে চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে চিৎকার করলাম। আমার চিৎকার শুনে বাড়ির অর্ধেক লোক আমার রুমে চলে এসেছে। সকলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,আমি ইতস্তত হয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম। বিছানা থেকে নেমে মিনমিন করে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম। দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আল্লাহ বাচাইছে, আর একটু হলেই একেক জনের হাতের, চামচ, লাকুর, বাতিল, কড়াই, বেলুন দিয়ে মার খেতাম। এটা পরিস্কার চিৎকার শুনে রুমে উপস্থিত সকলে হাতের সামনে যে যা পেয়েছে তা নিয়েই ছুটে এসেছে। খানিকবাদ দরজা আলকা খুলে বাহিরে তাকালাম। সকলেই চলে গেছে দেখে একধাপ ফ্রেশ হয়ে সালওয়ার কামিজ পরে নিজে চলে যাই। ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আমি পাউরুটি চাবাচ্ছি উইথ জেলি। সামনে একটা সিদ্ধ ডিম, এক গ্লাস দুধ চার পিছ পাউরুটি দু’টো পিছ নরমাল আর দু’টো ডিম দিয়ে ভেজে দিয়েছে। পাশে ছোট বাটিতে আপেল কমলা ও আঙ্গুর ফল কলা, ও তরমুজ ফল কেটে রাখা হয়েছে।

খুব সুন্দর করেই টেবিল সাজিয়েছে আরও অনেক কিছুই রয়েছে তবে সেগুলোর মধ্যে আমার ইন্টারেস্ট নেই। তাই আমি দেখি ও নি। তরমুজ আমার না পছন্দের তালিকায় তাই সেগুলো আমি ছুঁয়েও দেখবো না। টেবিলের উপর রাখা আছে যার যেটা খেতে ইচ্ছে করবে সে সেটাই নিয়ে খাবে এটাই নিয়ম। ওদের ফাউ কথা শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। কলেজে অনুষ্ঠান কে কি পরে যাবে আল্লাহ শুনতে শুনতে আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অভ্র ভাইয়া অবশ্য সকলের উদ্দেশ্য বলেছে তিনি কালো পাঞ্জাবি পরবে। আমার তাতে কোনো হেলদোল নেই বিকেল হতে এখনো বহুত দেরি যেকোনো একটা পরে চলে যাবো ব্যাস। আমার তো আর বয়ফ্রেন্ড নেই যে চুস করে দিবে বলবে,’ বাবু আজকে এইটা না ওইটা পরে আইসো এই কালার না ওই কালার পরে আইসো৷ চোখে কাজল দিয়ো হেনতন যতসব ন্যাকামি। ‘

ওদের কথা এক কান দিয়ে শুনছি আরেক কান দিয়ে বের করে দিচ্ছি। কোনো মতে খেয়ে রুমে চলে আসি। বিছানার উপর আরাম করে বসে ফোন টিপতে টিপতে দুপুর হয়ে যায়। মসজিদের আজান পরতে আলসেমি জেড়ে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকে পরি। টাওয়াল দিয়ে চুল পেঁচাতে পেঁচাত রুমে ঢুকি। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল ঝেড়ে পানি জড়িয়ে রুমে চলে যাই। রুমে এক কোণায় জায়নামাজ বিছিয়ে হিজাব বেঁধে নামাজ আদায় করি।

নামাজ শেষে আবারও বিছানায় গা এলিয়ে দেই। কেমন কেমন জেনো অলসতা ভোর করছে আমাকে শুধু শুয়ে থাকতেই ইচ্ছা করছে। অনুষ্ঠান শুরু হবে তিনটায়। আর আমি শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছি দুইটা বেজে গেছে। নামাজের পর বিছানা থেকে একবার উঠে গিয়ে লাঞ্চ করে আসি। তারপর আবারও শুয়ে পরি। ওদিকে আমার ভাই ও বোনরা সকলে রেডি অর্ধেক হয়েও গেছে।

দুপুর ২:৪৫ pm বাজে, সকলে পুরোপুরি তৈরি হয়ে একসাথে আমার রুমে উপস্থিত। সকলের চোখে মুখে বিরক্তি স্পষ্ট, কারণ আমি বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছি। রেডি হওয়া তো দূর সময় আছে মাত্র ১৫মিনিট।

সকলে অনেক ডাকাডাকি করেও আমাকে তুলতে পারল না। তখন মিস্টার বজ্জাত অর্ধেক গ্লাস পানি আমার মুখে ছিটকে মারল। সঙ্গে সঙ্গে আমি লাফিয়ে উঠে বসলাম। মুন্নী আপু দাঁত কটমট করে বলল, ‘ উঠলি কেন ঘুমা আর একটু ‘

‘ তুই ভুলেগেছিস আজ যে তোর কলেজের নবীন বরন অনুষ্ঠান আর তুই পরে পরে ঘুমাচ্ছিস? ‘ পুতুল আপু বলল।

‘ তুই জীবনেও সুধরাবি না ‘ তিন্নি আপু বলল।

বাকিরা সব চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ওদের চুপ থাকতে দেখে আমি ওদের উদ্দেশ্য বললাম, ‘ তোরা চুপ করে আছিস কেন হুহহ? তোরাও বল ‘

লাইক সিরিয়াসলি ওরাও সবগুলো একসাথে চেচিয়ে বলল,’ রেডি হোস নাই কেন এখনো? ‘

করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,’ যাবো না আমি হইছে যা তোরা আমি ঘুমাবো। ‘

অভ্র ভাইয়া সকলের উদ্দেশ্য বলল,’ কেউ নিজে ইচ্ছে যেতে না চাইলে তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার সাধ্য কারো নেই। চল সবাই আমরা যাই কারো জন্য তো আর আমরা অনুষ্ঠান মিস করতে পারি না। ‘

বলে একে একে সবাই তার পেছন পেছন চলে গেলো। আমি ছোট্ট বাচ্চাদের মতো ফেলফেল নয়নে তাকিয়ে রইলাম। দৌঁড়ে বেলকনি তে চলে যাই। গিয়ে দেখি গাড়ি গেইট দিয়ে বের হয়ে চলে গেছে। মনমরা হয়ে রুমে ফিরে আসি। মন কে বুঝাই আমি যাবোই না। ত্রিশ মিনিট ধরে বিছানার উপর গোড়াগুড়ি খাচ্ছি কিন্তু ভাল্লাগছে না। আমার ভাল্লাগছে না। বিছানায় শুয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসে পরলাম পরক্ষণে নিজেই নিজেকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ‘ দুইদিন ধরে গাধার খাটুনি খাটলাম এখন আমিই যাবো না। তা কি করে হয়? আমি যাবো তো যাবোই৷ বলে আলমারি দরজা খুললাম পরবো কি একটাও চয়েস হচ্ছে না। মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পরলাম আবারও মনে হলো আমি আজ যেতেই পারবো না।

তখনই মাথায় আসলো চিঠিবাজের চিঠির মধ্যে বলা একখানা কথা, এশ কালারের শাড়ি বকুল ফুলের গাছ। শাড়ির কথা চিন্তায় আসতেই ছুটে গেলাম আম্মুর কাছে। আম্মু তখন ফুপু ও চাচিদের সাথে গল্প করছিল। আমাকে দেখে সকলে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রয়। আম্মু আমাকে দেখে বলল, ‘ কিরে তুই যাসনি শরীর খারাপ নাকি তোর? ‘

আমি দৌঁড়ে আম্মুর কাছে গেলাম পাশে বসে হাত ধরে মিনতি স্বরে বললাম, ‘ আম্মু তোমার একটা শাড়ি দাও না প্লিজ আম্মো। আমি পরার জন্য কোনো কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না আর যা পাচ্ছি তা ভালো লাগছে না। ‘

তখনই ছ্যাত করে বলে উঠল ছোট ফুপু (বৃষ্টির আম্মু), ‘ তোর না আলমারি ভর্তি জামাকাপড় এক সপ্তাহ আগে গিয়েও না একগাধা শপিং করে আসলি ওই গুলো কি হইছে? ‘

ছোটো ফুপুকে দমিয়ে দিয়ে বড় চাচি আম্মু বলল,’ মেয়ের শাড়ি পরার শখ জাগছে ‘

বড় ফুপু সকলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ যা তো সায়েদা মেয়েকে একটা শাড়ি দিয়ে আয়। ইচ্ছে করছে যখন পরুক ‘

বড় ফুপির কথা ফেলার সাধ্য আম্মু নেই। আমি ফুপির দুইগাল চেপে ধরে খুশিতে গদগদ করে বললাম, ‘ থ্যাংক ইউ ফুপি। ইউ আর বেস্ট। ‘

বলে আম্মুর পেছনে ছুটতে লাগলাম। ফুপি মৃদু হেঁসে বলল, ‘পাগলী ‘

আম্মু আলমারি থেকে ১০ থেকে ১৫টা শাড়ি বের করে দিলো। সবগুলো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলাম কিন্তু আমার একটাও পছন্দ হচ্ছে না। হুট করে চোখ গেলো আলমারির কাভার্ডে একটা শপিং ব্যাগের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে গিয়ে ব্যাগটা হাতে নিলাম। খুলে দেখি একটা শুভ্র সাদা শাড়ি। শাড়ি এক নজর দেখতেই আমার পছন্দ হয়ে গেলো আমি পেছন থেকে বলে উঠলাম,’ আমি এই শাড়িটাই পরবো। ‘

আম্মু পেছনে আমার দিকে ঘুরে তাকালো। হাতের শাড়িটা ‘ছ’ মেরে নিয়ে নিল। আম্মুর এমন অদ্ভুত কান্ডে ‘থ’ রয়ে গেলাম আমি।
আম্মু শাড়িটা আগের মতো ব্যাগে ঢুকিয়ে আমার দিকে কষা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘ একদম না এটা আমার ছোট ভাই আমাকে দিছে। এটা আমি তোকে কিছুতেই দিবো না। আগের বার একটা শাড়ি ছিঁড়া আনছিস এইটা ভুলেও দিবো না। অন্য একটা পছন্দ করে নে। ‘

আম্মুর ছেঁড়া শাড়ির কথা শুনে মনে পরে গেলো। সেদিন লাফ দিতে গিয়ে পরে গিয়ে ছিলাম। ব্লাউজের সাথে শাড়িও ছিঁড়ে গিয়েছিল। শাড়ি ছিঁড়েছে বাড়িতে এসে দেখতে পাই। আম্মুর অনেক পছন্দের ছিল শাড়িটা। আব্বু anniversary তে উপহার দিয়েছিল। আর আব্বুর মেয়ে তা ছিঁড়ে ফেলে। এই নিয়ে অনেক বকাঝকা শুনতে হয়। আমি সোজা হেঁটে আম্মুর সামনে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়াই। রাগী রাগী কন্ঠে বলি,’ দিবে না? ‘

আম্মু সাফসাফ বলে উঠে, ‘ বললাম তো না। ‘

আমি সঙ্গে সঙ্গে আম্মুর দুই পা ঝাপ্টে ধরি। পায়ে ধরে ন্যাকা কান্না শুরু করি। চোখ দিয়ে এক ফোঁটাও জল বের হচ্ছে না। তা দেখে আম্মু আমার অগোচরে মুচকি হাসছে। আমি একশো একটা প্রমিস করি, ‘ নিজে শহীদ হয়ে যাবো তবুও শাড়ির গায়ে একটা দাগ ও লাগতে দেবো না। ‘

আমার সাথে আম্মু পারবে না। কারণ তার কাছে আমি ড্রামা কুইন, বাধ্য হয়ে শাড়িটা দিতেই হলো।
আমি আর আম্মু একদম সেম চিকনা তাই আম্মুর সব কিছুই আমার হয়। তবে আমি আমার ফ্যামিলির সব মহিলাদের থেকে বেশি লম্বা (ইহা বাস্তব।)

শাড়ি পেটিকোট ও ব্লাউজ হাতে নিয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে আছি আম্মুর সামনে। পরিয়ে দিতে হবে তো?
আম্মু মাথা দু’দিকে দুইবার নাড়িয়ে ভারী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,’ তুই বড় হবি কবে? আজ বিয়ে দিয়ে কাল বাচ্চার মা হয়ে যাবি। ‘

আমি টিটকারি মেরে আম্মু কে বললাম,’ আম্মো বাচ্চা বিয়ের একদিন পর কাল হয় না। বাচ্চা হতে ১০মাস ১০দিন সময় লাগে। ‘

বলেই মত্ত হাসিতে মেতে উঠলাম। আমি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’ মারবো টেনে এক চড় মায়ের সাথে টিটকারি মারা একদম ভুলে যাবি। ‘

আমি আহ্লাদী কন্ঠে বললাম,’ আম্মো। ‘

শুভ্র সাদা শাড়ি ও নীল রঙের ব্লাউজ পরেছি। আম্মু নিজের হাতে সাজিয়ে দিলো। তেমন কিছুটা ফেসের জন্য ফেস ক্রিম ও ঠোঁটে লাল লিপস্টিক চোখে গাঢ় করে কাজল পরিয়ে দিলো। একদম ছোটো বেলার মতো, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আম্মুর সাজের জিনিসগুলো দিয়ে সাজতে চাইলে আম্মু আমাকে তার কোলের উপর বসিয়ে নিজ হাতে সাজিয়ে দিতো। আজকেও ঠিক তাই হলো, আনন্দপ চোখের কার্নিশ ভারী হলো। আম্মুকে জরিয়ে ধরে আহ্লাদীত হয়ে বললাম,’ আই লাভ ইউ আম্মু। ‘

আম্মু প্রত্যত্তরে কপালে আলতো চুমু দিয়ে বলল, ‘ আমিও তোমাকে অধিক ভালোবাসি। আমার তিনটা সন্তানের মধ্যে তুমিই হচ্ছো সবার বড়। তোমাকপ মাঝেমধ্যে বকাঝকা করি তাই বলে তুমি এটা মনে করো না আম্মু তোমাকে ভালোবাসি না। খুব ভালোবাসি মা হওয়ার আনন্দ উল্লাস সুখ দুঃখ কষ্ট মা কি জিনিস মায়ের অনুভূতি কেমন। সবটাই আমি অনুভব করেছি তোমার ধারা কারণ তুমিই আমার প্রথম সন্তান তাই তোমার প্রতি ভালোবাসা টাও আমি বেশি। শুধু প্রকাশ করি না। বাবা মায়ের ভালোবাসা এমনই হয় তারা নিজেদের থেকেও বেশি নিজেদের সন্তানকে ভালোবাসে। নিজেদের ইচ্ছা অনিচ্ছা কে প্রাধান্য না দিয়ে সবার আগে শুধু নিজেদের সন্তানের ভালোলাগা ভালো থাকা নিয়ে চিন্তা করে। একজন বাবা তার সন্তানের জন্য দিন-রাত এক করে খাটে দিনশেষে সন্তানের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য তার আবদার করা জিনিসটা সে সঙ্গে নিয়ে আসে। অথচ তখন বাবা বা সন্তান কেউই কাউকে ভালোবাসি বলে না। কারণ আমরা সকলে জানি, বাবা-মা কে ভালোবাসি শব্দ টা না বললেও আমরা তাকে ভালোবাসি। বাবা-মা আমাদের কে ভালোবাসে না বললেও আমরা জানি তারা আমাদের অনেক ভালোবাসে। যে ভালোবাসা মনের গহীনে লুক্কায়িত থাকে। বাবা মা’য়ের ভালোবাসায় হারিয়ে ফেলার কোনো ভয় থাকে না। কারণ তাদের ভালোবাসা চিরকাল থাকবে। প্রকাশিত হোক বা অপ্রকাশিত তাদের ভালো বাসা চিরসত্য। ‘

বর্ষার চোখ বেয়ে অশ্রুপাত ঘটে, তা দেখে শাড়ির আঁচল দিয়ে গালের জল মুছে দিয়ে বলে, ‘ আমরা আমাদের মেয়েকে অধিক ভালোবাসি শুধু সময়ে সময়ে বলা হয়ে উঠে না। ‘

বর্ষা তার মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল, ‘ আমি এতকিছু জানতাম না আম্মু। সত্যি তোমাকে আর আব্বুকে আমি অনেক ভালোবাসি। ‘

‘ হয়েছে হয়েছে। তুমি রেডি হয়েছো কলেজ যাওয়ার জন্য। বিদায় নিয়ে শশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য না। তো কান্না কাটি না করে যাও দেরি হয়ে যাবে আর সাবধানে থেকো আমার শাড়ির জেনো কিছু না হয়। ‘

সিরিয়াস মোমেন্টে হাসি চলে আসল। আল্লাহ এই শাড়িটা কে আমি কি যে করবো? নাহহ কিছুই করা যাবে না উল্টো সাবধানে রাখতে হবে অতি সাবধানে। আম্মুকে বিদায় দিয়ে বের হয়ে পরলাম। রাস্তায় একটা রিক্সা ও নাই, অন্য মনস্ক হয়ে হাঁটতে লাগলাম। তখনই পাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠ ভেসে আসল সে বলল,’ হেই মিস! লিফট লাগবে? ‘

আমি কন্ঠস্বর চিনে ফেলি কারণ এই কন্ঠ আবার চেনা। ডান পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। বাইকে উনাকে দেখে আমি চমকালাম। সে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে মুখে ল্যাপ্টে আছে তার অমায়িক হাসি। আমি মৃদুস্বরে বললাম, ‘ কেনো নয়? লিফট দিলে নেওয়াই যায়। ‘

আমি বাইকের পেছনে উঠ বসতে সে বলল,’ আজ এতদিন পর তোর সাথে আমার দেখা হলো। তাও আবার আজ তুই শাড়ি পরেছিস ‘

‘ তুই হঠাৎ কোণ্থেকে উদয় হইলি? তুই না চার মাস আগেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছিলি। এখন হঠাৎ ‘

‘ কি করবো বল? তুই ভালোবাসার সুতো ধরে টান মেরেছিস আর আমি সে টানে ছুটে এসেছি। ‘

‘ নিভ যত্তসব? ‘ বলেই ওর পিঠে কিল বসালাম। নিভ বেঁকে বলল,

‘শাঁকচুন্নি তোর কথায় কথায় কিল মারার অভ্যোস যায়নি না? ‘

‘ নাহ যায়নি আর যাবেও না। জানিস আমরা তোকে কত মিস করেছি। তোকে ছাড়া একদন্ড ও ভালো লাগতো না। ‘ মলিন কন্ঠে বললাম। নিভ প্রত্যত্তরে সশব্দে হেসে উঠল।

আমি অভিমানী স্বরে বললাম, ‘ নিভ বারাবাড়ি হচ্ছে কিন্তু? আমি নেমে যাবো বললাম। ‘

‘ চলন্ত বাইক থেকে নেমে তো দেখা। ‘

‘ অসহ্য ‘

চলবে?

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)
#চলবে

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here