#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_১৩
রিপা কয়েক সেকেন্ড রাহাতের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকে। তারপর নরম সুরে বলল,,,
-“রাহাত প্লিজ এমনটা তুমি করতে পারোনা। তুমি না আমাকে ভালোবাসো?? তাহলো ভালোবাসার মানুষের সাথে এমন প্রতারণা করার কারণ কী??
অদ্ভুত ভঙ্গিতে হেসে ওঠে রাহাত। ভালোবাসি কাকে? সেটা আবার তোমাকে??? একদম না। আমার কাছে তোমাকে ভালোবাসার কথার কোন কারণ নেই। এসব ছিলো আবেগের কথা। আমাদের ভিতরে যা কিছু হয়েছে এটাকে কোন সমাজ মূল্য দিবেনা। দুজনেই বিবাহিত। তাহলে এখানে ভালোবাসাটা কীভাবে সম্ভব?? সব কিছুরই একটা সামাজিক স্বীকৃতি আছে।
আমি আমার স্ত্রী কে কখন ও ছাড়তে পারবোনা। মানছি তোমার সাথে আমার অন্তরঙ্গ হয়েছে তাই বলে ভালোবাসা,,,বিয়ে এসব কথা বলা ভিত্তীহীন।
এখন শুধুমাত্র যেটা সম্ভব সেটা হলো,,,আমি যখন বলবো তুমি আমার কাছে চলে আসবে আর তখন আমরা দুজনে ইনজয় করবো।
আরেকটা কাজ করতে পারি তোমাকে বিয়ে করে আলাদা রাখবো। কিন্তু কখন ও স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিবোনা। আর যখন শহরে থাকবো তখন তোমার সাথে এক বিছানায় থাকবো। কী বলো তুমি?? খুব ভালো একটা সিদ্ধান্ত তাই না!….হেসে হেসে রাহাত।
রিপা এক মূহুর্তের জন্য থেমে যায়। তারপর খানিকটা উদাসীন ভঙ্গিতে বললো,,,,আমি কোন বেশ্যা নই যে তোর মতো এমন নোংরা মেন্টালিটির শর্তে রাজি হয়ে যাবো। শোন ভুল মানুষ একবার করে বারবার না। তাই তোকে ভালো ভাবে বলছি ভিডিওটা ডিলিট দিয়ে তুই তোর বউকে নিয়ে শান্তিতে থাক আর আমাকে ও শান্তি দে। তবুও আমার কথাটা যদি বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে তোর বউয়ের কাছে তোর কৃতকর্মের কথা জানিয়ে দিয়ে আসবো। তখন মুখটা কোথায় রাখবি?? ভেবে দেখ।
রাহাত মুখ টিপেটিপে হেসে বললো,,আমার বউয়ের কাছে নালিশ করবে। আচ্ছা কবে যাবে বলো,,,আমি নিজেই তোমাকে ওর কাছে নিয়ে যাবো।
তবে একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো আমার বউ তোমার কথা কখন ও বিশ্বাস করবেনা। উল্টো তোমাকে অপমান করে পাঠিয়ে দিবে। কারণ আমার বউ বিশ্বাস করে তার স্বামী ধোয়া তুলশি পাতা। তার দুনিয়া একদিকে আর স্বামী অন্যদিকে।
রিপা একটু বিব্রতবোধ করে বললো,,,,তোর বউ যদি তোকে এতই বিশ্বাস করে তাহলে তুই তার বিশ্বাসের ঘরে চুরি করেছিস কেন?? ছিঃ ছিঃ ধিক্কার জানাই তোর মতো নোংরা লোককে।
রিপা দরজাটা খুলে বেরিয়ে গেলো রাহাতের রুম থেকে।
.
রাস্তায় বেরিয়ে কোন গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই রওনা দিলো। হাঁটছে আর ভাবছে কাল সকালে ইমরানের কাছে যেতে হবে। এভাবে রাহাতের ভয়ে চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবেনা।
.
বাসায় এসে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ারের নিচে হাত পা মেলে দিয়ে বসে পড়লো রিপা। চোখদুটো পানিতে ছলছল করছে। বুকের ভিতরে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
কেনো জানি না আজকে নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে। নিজের এই নোংরা শরীর নিয়ে ইমারানের সামনে কীভাবে দাঁড়াবো?? ভাবতে ও নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা লাগছে। যদি মরে যেতে পারতাম তাহলে এত কিছু সহ্য করতে হবেনা। প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে ভিজে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো সে।
বিছানার উপরে চুলগুলো বালিশে এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো। রাতে কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়লো।
গভীর রাত হয়ে গেছে। কিন্তু রিপা এখন ও বসে আছে। চোখের কোণে বিন্দুমাত্র ঘুম আসছেনা। রিপা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলো। ইমরানকে ঘৃণা করে একজন প্রতারককে বিশ্বাস করে ভালোবেসে নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছে তার কাছে। ইমরানকে ধোঁকা দিয়ে সুখের খোঁজে রাহাতকে বিশ্বাস করাটা তার সব থেকে বোকামি ছিলো। আজ বুঝতে পারছে নিজের স্বামীর থেকে আপন কেউ হয়না। এমন একটা ভুল করেছে যে ভুলের কোন ক্ষমা নেই। আছে শুধু অনুশোচনা। রিপার জীবনে কলঙ্কের দাগ লেগে গেছে। কোন স্বামী এই কলঙ্কের দাগ লাগা স্ত্রীকে মেনে নিবে না এটা চিরন্তন সত্যি। সারাটা রাত ভাবতে ভাবতে কাটিয়ে দিলো রিপা।
.
ভোরের আলোয় রিপা শোয়া থেকে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকলো। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে আলমারি খুলে শাড়ি বের করলো। শাড়িটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে চোখের জল ছেড়ে দিলো। কারণ শাড়িটা ইমরান তাকে শখ করে কিনে দিয়েছিলো ঘুরতে বের হবে বলে। কিন্তু আজ সেই শাড়িটা পড়ে সে মূমুর্ষ মানুষটার কাছে যাবে। কিন্তু মাথার দুপাশেই চিনচিন করে ব্যাথা করছে। সারারাত দুচোখের পাতা এক করেনি বলেই তার মাথাটা ব্যাথা করছে। রিপা আর সময় নষ্ট না করে শাড়িটা পড়ে নিলো। তারপর দুহাত দিয়ে চোখটা মুছে নিলো। ব্যাগের ভিতরে পড়ার মতো কয়েকটা ড্রেস নিলো। তারপর ব্যাগটা হাতে নিয়ে বিছানার উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে দরজাটা আটকে বের হলো।
গেটের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। বেশ কিছুক্ষণ পর রিক্সা আসলো। তারপর দ্রুত রিক্সায় উঠে চলে গেলো বাসষ্টান্ডে। বাসের টিকিট কেটে সোজা গিয়ে সিটে বসলো। চোখে মুখে চিন্তার ভাব তার।
.
৫ ঘন্টা পরে বাস এসে গাবতলীতে থামলো। জানালার ফাঁক দিয়ে তাকায় রিপা। আকাশটা অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। হালকা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। দমকা বাতাস ও বইতে শুরু করলো। বাস থেকে লোকজন নামতে শুরু করলে রিপা ও নেমে দাঁড়ায় বাস থেকে।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে রিপা। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। এক মূহুর্ত দেরী না করে ভিজতে ভিজতে হাঁটতে শুরু করে রিপা।
সামানে সিএনজি পেয়ে তাতে উঠলো সে। রাত থেকে কিছু খায়নি তবুও ক্ষিদে নেই তার।
কিছুক্ষণ পরে হসপিটালে পৌছালো সে। সিনজির ভাড়া দিয়ে হসপিটালে প্রবেশ করলো। তারপরে সোজা গিয়ে কেবিনে ঢুকলো যেখানে ইমরানকে রাখা হয়েছে।
কেবিনে ঢুকে বেডের দিকে তাকাতেই বিস্মিত হয়ে ওঠে রিপা। ইমরান দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। রিপাকে দেখেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো তার।
ইমরানের মুখে হাসি দেখে রিপার বুকটা কেঁপে ওঠে। তবুও কাঁপা কাঁপা ভেজা গলায় দৃঢ়তার সাথে বলল,,,ইমরান কেমন আছো???
-“ইমরান কোন উত্তর দিলো না। রিপা ইমরানের মুখের দিকে তাকালো। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওর মনটা ভালো না।
রিপা আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে বললো,,,ইমরান কী হলো কথা বলছো না কেনো?? আমি আসাতে তুমি খুশি হওনি??
-‘তোমার সাথে কোন কথা নাই রিপা।
-“কেনো ইমরান?? আমি কী করেছি??
-“তুমি আমার এক্সিডেন্টের খবর কী আগে পাওনি???
-“তুমি যেদিন এক্সিডেন্ট করেছো সেদিন আমি ভীষণ অসুস্থ ছিলাম তাই মোবাইলটা সাইলেন্ট করা ছিলো তাই ধরতে পারিনি। আর পরেরদিন যখন জানাতে পারলাম তখন রাতের বেলা একা আসার সাহস পাইনি বলে আসিনি ইমরান।
-“ইমরান গম্ভির গলায় বললো,,,,আমি যদি মরে যেতাম তাহলে তুমি খুব খুশি হতে তাই না?? তোমার পথের কাঁটাটা সরে যেতো।
-“রিপা ইমরানের ঠোঁটে হাত দিয়ে বললো,,,এমন কথা বলো না প্লিজ। তুমি কেনো মরবে?? অপরাধ আমি করেছি তাই সাজাটা আমারই প্রাপ্য। দোয়া করো আমার যেনো তাড়াতাড়ি মৃত্যু হয়।
রিপার কথা শুনে চোখ মুখ লাল করে বেড থেকে উঠে রিপার গালে ঠাস্ করে ডান গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিলো। একদম ফালতু কথা বলবেনা। তুমি কেনো মরবে?? এই মরে যাওয়ার কথা আর কোনদিন মুখে আনবেনা। রিপাকে ছাড়া ইমরানের বেঁচে থাকা অসম্ভব। আমার কথা কী বুঝতে পারছো তুমি??
-“নিশ্চুপ রিপা।
রিপার চোখের কোণে ঈষৎ জল ছলছল করে উঠলো। তারপর ইমরানের হাত ধরে বললো,,,ইমরান আমার অজান্তে,,,অনিচ্ছায় যদি কখনও তোমার সাথে অন্যায় করে ফেলি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
ইমরান ঈষৎ ঠোঁট নেড়ে হাসে। তুমি সত্যি পাগলী আমার। তুমি যদি সত্যিই কোন অন্যায় করে এভাবে বলতে তাহলে আমি ভীষণ খুশি হতাম। কারণ তোমাকে কোনদিন অন্যায় করতে দেখিনি আমি। অন্যায় তো আমি করেছি তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
রিপা চুপচাপ যথা স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। চোখ দুটো আস্তে আস্তে জলে ঝাপসা হয়ে আসে। ভীষণ অনুশোচনা হয় তার। বুকের মাঝে ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। মনে মনে বলে ইমরান তুমি আমাকে এত ভালোবাসো,,,এত বিশ্বাস করো অথচ আমি পারিনি তোমার ভালোবাসার ও বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে। তুমি কী সত্যিই আমার অপরাধ ক্ষমা করতে পারবে??? আর আমি বা কোন মুখে তোমার কাছে সে কথা বলবো।
আই অ্যাম স্যরি ইমরান,,,,রিয়েলি রিয়েলি স্যরি। আই বেগ ইওর পারডোন। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে কান্না থামাতে চেষ্টা করে রিপা।
.
৫ দিন পর…….
বিকালে ইমরানকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হলো।
ধীরে ধীরে ইমরান সুস্থ হয়ে উঠলো।
এদিকে রাহাত রিপার ফোনে বারবার কল দিচ্ছে কিন্তু রিপা ফোনটা কখন ও সুইচ অফ রাখে। আবার না হলে অল টাইল ফোনটা সাইলেন্ট করে রাখে।
রাহাতের ম্যাসেজ আসলো রিপার ফোনে।
ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজ টা চেক করলো সে। তাতে লেখা ছিলো।
-“তুই ফোন না ধরে কাজটা ভালো করিস নি। আমি তোর সাথে ভালো বিহেভ করেছি বলে কী ভেবেছিস তোর পিছু ছেড়ে দিবো। কখন ও না?? তোর আর আমার ভিডিও প্রতি রাতে আমি একাই দেখি। এখন তুই যে কর্মকান্ড শুরু করেছিস তাতে আমার মনে হয় ইমরান সহ পুরো ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেওয়াটাই বেটার মনে হবে। কারণ ভিডিও তে তোর মুখটাই স্পষ্ট দেখা যায় আমাকে না। তাই আমার কোন সমস্যা হবেনা। তোকে একটা সুযোগ দিতে চাই তুই আমাকে কল ব্যাক করে কথা বলে আমার মাথা ঠান্ডা কর না হলে তোর সর্বনাশের জন্য তুই নিজেই দায়ী থাকবি।
ম্যাসেজটা পড়ে রিপার হাত পা কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেলো।
কী করবে বুঝতে পারছেনা। এদিকে ইমরানের কাছে ও সত্যিটা বলার সাহস পাচ্ছেনা।
এভাবে আরো ৭ দিন গেলো।
.
ইমরান এখন পুরোপুরি সুস্থ। এতদিন অসুস্থতার জন্য দুজনের ভিতরে কোন সম্পর্ক হয়ে ওঠেনি।
.
রাত ১১ টায়…..
ইমরান রুমে এসে রিপাকে বিছানায় বসিয়ে বললো,,,রিপা তুমি কী আজকে ফিজিক্যালভাবে এটাচাড্ হতে পারবে?? মানে তোমাকে জিজ্ঞাস করছি কারণ তুমি তো আজকে প্রস্তুতি না ও থাকতে পারো। এখন তোমার মনে প্রশ্ন আসতে পারে এতদিন জোর করে তোমার সাথে ফিজিক্যাল করলাম তাহলে আজ হঠ্যাৎ তোমার কাছ থেকে পারমিশন কেনো নিচ্ছি?? এটার একমাত্র কারণ হচ্ছে আমি যখন এক্সিডেন্ট করালাম তখন তোমার মুখটাই বারবার ভেসে উঠেছে। আমার তখন একটাই ইচ্ছা ছিলো শেষবারের মতো তোমার সাথে যেনো আমার দেখা হয়। তোমাকে কতবার জোর করে ফিজিক্যাল করেছি তুমি আমার উপরে হয়তো মনে মনে রাগ ও করেছো। তাই এখন আমি চাই দুজনের ইচ্ছাতেই সব কিছু যেনো হয়।
রিপা ইমরানের কথায় হা হয়ে গেছে,,,ইমরানের জন্য আরো সম্মানটা বেড়ে গেছে। ইমারান তার কাছে অনুমতি চাইছে,,যা রিপার হৃদয়কে ছুঁয়ে গেছে।
কিন্তু সে যে কাজগুলো করেছে তাতে সে ভীষণ বড় অপরাধী। আর তার এই অপরাধ ক্ষমার যোগ্য না।
তবুও নিজেকে সামলে ইমানের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
তুমি আমার স্বামী তাই তোমার ইচ্ছাটাই আমার কাছে বড়।
-“তুমি রাজি আছো??(ইমরান)
-“হুম।(রিপা)
.
ইমরান রিপার মাঝে ডুব দিলো। আর রিপা ও ইমরানের মাঝে। আজ ইমরানের শরীরটা রিপার কাছে এত বেশী পরিমাণে আকৃষ্ট করেছে যে রাহাতের সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা ভুলে গিয়েছে সেই রাতের জন্য। আজ ইমরানের ছোঁয়ায় শুধু ভালোবাসা অনুভব করে সে। মূহুর্তের মধ্যে ইমরানের ভালোবাসার মাঝে হারিয়ে যায় রিপা।
রাত…….৩.৪০ মিনিটে ইমরান ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। আর রিপা ইমরানকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
চলবে…………….