#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_২৪
রিপাকে নিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকলো ইমরান। রিপার মাথা বেয়ে টপটপ করে ঘাম পড়ছে।
রিপাকে বিছানার উপরে বসিয়ে দিয়ে রুমের এসি অন করে জগ দিয়ে গ্লাসে করে পানি ঢেলে রিপার সামনে ধরলো। ইমরানের হাত থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ঝিম দিয়ে বসলো রিপা।
ইমরান রিপার পাশে বসে রিপার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তারপর বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে যায়। কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই। রিপা চোখ তুলে ইমরানের দিকে তাকায়। বুকের মাঝে তার শত সহস্র সমুদ্রের ঢেউ যেনো প্রচন্ড বেগে আছড়ে পড়েছে। আর সেই শব্দ বেজে উঠছে ইমরানের বুকের গভীরে। ইমরান ও তাকিয়ে আছে রিপার দিকে।
রিপার চোখে মুখে ভয় দেখা যাচ্ছে।
-“রিপা তোমার কী হয়েছে??
ইমরানের কথাটা শুনে রিপার চোখ ছলছল করছে পানিতে।
রিপার বুকের মাঝে হঠ্যাৎ এক ঝাঁক কষ্ট দানা বেঁধে ওঠে।
ইমরানের মুখটা হঠ্যাৎ মলিন হয়ে গেলো। গলার ভিতরে ঢোক গিলে দৃঢ় ভঙ্গিতে বললো,,,
-“রিপা এভাবে চুপ করে আছো কেনো??
বলোনা কী হয়েছে?
রিপার চোখ থেকে কান্না বেরিয়ে আসে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,
-“রাস্তায় রাহাতের সাথে দেখা হয়েছিলো?? আমাকে দেখে বাজেভাবে ইঙ্গিত করেছে। ইমরান আমি আর বাঁচতে চাইনা। প্লিজ আমাকে তুমি মেরে ফেলো। আমার মতো এমন বাজে মেয়ের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
.
ইমরান এবার রাগি গলায় বললো,,,,
-” রিপা উল্টা পাল্টা কথা যদি আরেকবার বলো তাহলে আমি নিজেই তোমার কাছ থেকে চলে যাবো।
-“নিশ্চুপ রিপা।
-“রিপা কথা কী বলবেনা??
-“নিশ্চুপ রিপা।
ইমরান কোন কথা না বলে চলে যেতে নিলে রিপা ইমরানের হাত টেনে ধরে।
রিপার দিকে মুখটা ঘুরিয়ে বললো,,,
-‘হাত ধরেছো কেনো??
তারপর ইমরান মুখটা বাঁকিয়ে বলে,,,এখন এত ভালোবাসা দেখানো লাগবেনা। আমি যাচ্ছি।
-“রিপা কেনো জানি হাসি আটকাতে পারলোনা। হো হো হো করে হেসে ওঠে।
রিপার হাসি দেখে ইমরান ও কিঞ্চিৎ হাসতে লাগলো।
তারপর হাসি থামিয়ে বললো,,
-“রিপা হাসছো কেনো??
-“এমনি।
-“এমনিতে পাগলে হাসে।
-“আমি পাগল না। আমি তোমার পাগলী।
-‘ইমরান ঠোঁটের কোণে ঈষৎ লাজুক হেসে বললে,,,তোমাকে যতই দেখি ততোই মুগ্ধ হই।
রিপা শোন এবার রাহাতের শাস্তি পাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। তুমি কোন চিন্তা করোনা। তোমার সম্মান আমি ফিরিয়ে দিবো। আমি চাই তুমি সবার কাছে মাথা উঁচু করে থাকবে। তার জন্য যা যা করা লাগবে সবটা করতে আমি রাজি।
ইমরানের কথায় রিপা ভীষণ মুগ্ধ হয়। তারপর মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থেকে বলে,,,
ইমরান আমি তো তাই চাই তুমি সারাজীবন এভাবে আমাকে আগলে রাখবে।
ইমরান এগিয়ে এসে রিপার হাতদুটো মুঠির মধ্যে ধরে। তারপর পরম আদর করে কপালে চুমো এঁকে দিলো।
রিপার সমস্ত শরীরে অদ্ভুত ভালো লাগা দোলা দিয়ে যায়। রিপা ইমরানের দিকে চোখ বড় করে তাকায়।
ইমরান এখন ও অপলোক চোখে রিপার দিকে একইভাবে বিমুগ্ধ ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে।
রিপা হঠ্যাৎ মুখ টিপে হেসে উঠে। এভাবে তাকিয়ে থেকে কী দেখছো??
-“তোমাকে?
-“আগে মনে হয় দেখোনি?
-“দেখেছি।
-“তাহলে?
-“এখন আবার নতুন করে দেখছি।
-‘বেশী দেখা লাগবেনা। চোখ অান্ধা হয়ে যাবে।
-‘ভালোই হবে। তাহলে তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে।
-“ইস! তোমাকে খাওয়াতে আমার বয়েই গেছে।
কিছুক্ষণ বাদেই ইতি আসলো।
.
-‘ইমরান ভাইয়া আমি চলে যাচ্ছি। আমি যে ভুল করেছি তার মাত্রাটা হয়তো অনেক বেশি করে ফেলেছি। যার কোন ক্ষমা নেই। আর তার জন্য আমি খুবই লজ্জিত। তুমি আমাকে কাল সকালে চলে যেতে বলেছো কিন্তু আমার মন একদম মানছেনা। তাই আমি এখুনি চলে যাবো।
.
ইমরান ও রিপা দুজনেই নিশ্চুপ।।
-“আমি চলে যাচ্ছি ভাবী। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। কথাটা বলেই ইতি বাসা থেকে চলে গেলো।
ইমরান গিয়ে দরজটা লক করে রুমে আসলো।
এসেই পিছন দিয়ে রিপার কোমড়ে হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে কাঁধের উপরে চুমো দিলো।
রিপা ইমরানের দিকে ফিরেই ইমরানকে ধাক্কা মেরে চলে যেতে চাইলে খপ করে রিপার হাত চেপে ধরলো।
রিপার সমস্ত শরীর কাপন দিয়ে ওঠে।
ইমরানের চোখে মুখে দুষ্টামির ভাব।
-“কোথায় যাচ্ছো রিপা??
-“টিভি দেখতে। ছাড়ো বলছি। আমাকে চেপে ধরে আছো কেনো?
-“কোথায়?? আমি তো তোমাকে ধরিণি?
-“ইস! কী মিথ্যা কথা বলছে। তুমি ধরণি তো কে ধরেছে আমার ভূতে?
-“হয়তে বা।
-“দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। রিপা ইমরানের হাতটা ছাড়াতে চেষ্টা করলে ইমরান আরো জোরে রিপার দুই বাহু চেপে ধরে। কী হলো এবার যাও??
রিপার বুকের ভিতরটা ধুকধুক করতে থাকে।
.
.
ইমরানের খেয়াল হলো রাহাতকে তার কল করতে হবে।
.
-“রিপার কাপালে আলতো করে চুমো এঁকে দিয়ে বললো,,
-“রিপা আমি একটু ছাদে যাবো। রাহাতের সাথে আমার একটু কথা ছিলো।
ইমরানের মুখে এমন কথা শুনে রিপা তো বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,,
-“তুমি কী কথা বলবে??
রাহাতের সাথে পুরানো অনেক হিসাব নিকাশ আছে। যা সুদেআসলে অনেক ভারী হয়ে গেছে। সব কিছুর একটা সীমা আছে। কিন্তু রাহাত অনেক আগেই সীমা পেরিয়ে গেছে। আমি ছাদে যাচ্ছি।
কথা শেষ করেই ইমরান দ্রুত যাবার জন্য পা বাড়ায়।
রিপা ইমরানের এক হাত চেপে ধরে বললো,,,
-“আমি কী আসবো তোমার সাথে??
-“রিপার হাতটা ছাড়িয়ে বললো,,, না জান। তুমি থাকো আমি আসছি।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে ছাদের দিকে চলে গেলো।
.
রাহাতের নাম্বারটা ডায়েল করে কল দিলো। কয়েকবার রিং হওয়ার পরে রাহাত কলটা রিসিভ করলো।
-‘হ্যালো….রাহাত। তোর সাথে কথা ছিলো।
-“বল।
-“ভিডিও ক্লিপটা কোথায়?
-“কীসের ভিডিও ক্লিপ?
-“দেখ রাহাত ভালো ভাবে বলছি ভিডিও ক্লিপটা আমাকে দে।
-“একদম না।
-“আমার মেজাজ গরম করিস না। তুই কিন্তু শান্তিতে থাকতে পারবিনা।
-“তোর যা ইচ্ছা তুই কর। কথাটা বলেই রাহাত কল কেটে দিলো।
ইমরান রাহাতের নাম্বারে আবার ও কল দিলো। কিন্তু নাম্বার বন্ধ বলছে।
ইমরান তুহিনের নাম্বারে কল দিয়ে বললো,,,
-“দোস্ত শালাকে কল দিয়েছিলাম কিন্তু ভিডিও টার কথা সে কিছুতেই স্বীকার করেনা। এখন তুই যা করার কর।
-“তোর আর কিছু বলতে হবেনা। আমি যা করার করছি।
-“হুম।
.
তুহিন বাসা দিয়ে নেমে গাড়িতে বের করে হসপটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
গাড়িটা পার্কিং করে হসপিটালে গেলো তুহিন। কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিকে দেখছে।
হঠ্যাৎ নার্স কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসলে তুহিন ভিতরে ঢুকলো। বিথীর পাশে একজন ভদ্র মহিলা বসে আছে।
তুহিনে বুঝতে পারলো হয়তো মা নয়তো শ্বাশুড়ি হবে।
.
তুহিনকে দেখে চমকে উঠলো বিথী!
-“কে আপনি??
-“আমাকে আপনি চিনবেন না। আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
.
-“আজব লোক তো আপনি! আপনাকে আমি চিনিনা তাহলে আমার সাথে কীসের কথা আপনার??
-“দেখুন। আপনি প্লিজ বোঝার চেষ্টা করেন। আমার দরকার না হলে আপনার কাছে আসতাম না।
আমার কথাটা একটু শোনেন।
-“জ্বি বলেন।
-“আপনার সাথে আমার পার্সোনাল ভাবে কথা বলার ছিলো। সবার সামনে বলা যাবেনা।
-“মা তুমি একটু বেলকুনিতে যাও। ওনার কথাটা শুনে দেখি সে কী বলতে চায়।
বিথীর মা চলে গেলে,,,
-“জ্বি বলেন।
-“আমি যে কথাটা বলবো সেটা হয়তো আপনি বিশ্বাস করবেন না। যদি বিশ্বাস না করেন তবুও সত্যি কথা কখনও মিথ্যা হয়ে যাবে না। কিন্তু কথাটা সত্যি।
-“কথা না পেঁচিয়ে যদি সোজাসুজি বলতেন তাহলে মনে হয় ভালো হয়। আমার স্বামী এসে পড়বে যদি এসে দেখে আপনার সাথে কথা বলছি তাহলে ভীষণ রাগ করবে।
-“আপনার ভালোবাসায় কী এমন ঘাটতি ছিলো?? যার কারণে রাহাত অন্য মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।
-মানে কী?? কী বলতে চাচ্ছেন? খুলে বলেন।
-“আপনার বিশ্বাসের স্বামী যে পরকিয়ায় মেতে আছে তার কী কোন খবর আপনার কাছে আছে?? আপনি কী জানেন এমন কোন কথা?
.
এবার বিথী পুরোই রেগে ওঠে। আপনার তো সাহস কম না আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার স্বামীর নামে বাজে কথা বলতে আপনার বিবেকে একটু ও বাঁধেনা। বেরিয়ে যান আমার সামনে থেকে।
-“দেখেন আমি আপনার কাছে দাওয়াত খেতে আসিনি। আপনার স্বামীর কৃতকর্মের কথাটা জানাতে আসছি। আপনার স্বামী আমার বন্ধুর বউয়ের সাথে অবৈধভাবে রিলেশন করেছে। যেখানে আপনি আপনার স্বামীকে ভীষণ ভালোবাসেন। রাহাত শুধু ফিজিক্যাল রিলেশন করেই থেমে যায়নি। তার ভিডিও বানিয়ে ভাবীকে ব্লাকমেইল করছে তার সাথে যেনো আবার ও ফিজিক্যাল রিলেশন করে। না হলে রীতিমত হুমকি দিচ্ছে ভিডিও টা ভাইরাল করে দিবে। এখন আপনি বলেন,,আপনার স্বামীকে কী করা উচিত!
-“just shut up…..
বেরিয়ে যান এখান থেকে। আমি রাহাতের নামে আর কোন রকম বাজে কথা শুনতে চাইনা। আমার স্বামী কখন ও এমন নোংরা কাজ করতে পারেনা। রাহাতকে আমি ভালো ভাবেই চিনি।
এমন সময় রাহাত ভিতরে ঢুকলো। তুহিনকে দেখেই চমকে উঠলো রাহাত।
-“এই তো এসে গেছে আপনার বিশ্বাসের স্বামী। তাকেই না হয় জিজ্ঞাস করেন আমি মিথ্যা বলেছি কিনা!
কথাটা বলেই তুহিন কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
.
রাহাত অপরাধীর মতো বিথীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো।
চলবে……………