#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৬
কিছুক্ষন ভাবাবেগশুন্য হয়ে চেয়ে থাকে মায়া।চোখের পাতায় নেমে আছে একরাশ দম বন্ধকর অনুভূতি।সে জানে আরিয়ান জ্বরের ঘোরে এমন কথা বলছে তবুও তার লজ্জা লাগছে।এমন কথায় কার না লজ্জা লাগবে?সরাসরি ঠোঁটে চুমু খাওয়ার জন্য অনুমতি চাইছে?
আরিয়ান উওরের আশায় তাকিয়ে আছে সেই একই দৃষ্টিতে।সেই চাহনীতে গভীর তৃষ্ণা।
মায়া আমতা আমতা করে কিছু বলতে যায়।কিন্তু পারেনা।ততক্ষনে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মায়ার ঠোঁটে আলতোভাবে স্লাইড করছে আরিয়ান।
মায়া হাত ধরে আটকায়।গাল থেকে আরিয়ানের দুইহাত সরিয়ে নেয়।পিঠের বালিশ সরিয়ে আরিয়ানকে শুইয়ে দেয়।আরিয়ান কোন বাঁধা দেয় না।কোনরকম জোড়ও করেনা।সে হয়তো তার উওরটা পেয়ে গেছে।
আরিয়ানকে গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে উঠে যেতে গেলে তার হাত ধরে ফেলে আরিয়ান।চোখ বন্ধ অবস্থায় সে ধীর কন্ঠে বলে,
—“মায়াবতী,যেওনা..এখানেই থাকো।”
—“লাইটটা অফ করে দিয়ে আসি।আপনার ঘুম হবে না আলো থাকলে।”
আরিয়ান হাসে।ছেড়ে দেয় মায়ার হাত।জ্বরের উত্তাপে তার ফর্সা চেহারা লাল হয়ে আছে।নাকের ডগার জায়গাটা আর ঠোঁটগুলো অতিরিক্ত লাল।
ঘরে হাল্কা আলো জ্বালিয়ে দেয় মায়া।ওয়াশরুম থেকে মগে করে পানি এনে পাশের টেবিলে রাখে।রাতে যদি জ্বর না কমে তাহলে পানি দিয়ে গা মুছিয়ে দিতে পারবে।
অত:পর আরিয়ানের পাশ ঘেঁষে শুয়ে পরে।একহাত আরিয়ান নিজের বুকে চেপে ধরে রেখেছে।
অন্যহাতে সে নরম কোমল স্পর্শে আরিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
ভোরের দিকেও মায়ার চোখে ঘুম নেই।কপালে চিন্তার ছাপ।ওষুধ খাইয়েছে অনেকক্ষন হলো তবুও জ্বর কিছুতেই নামছেনা।উল্টা ক্রমাগত বেরে চলেছে।
জ্বরে কাঁপছে আরিয়ান।তার শরীরের তাপে মায়ার ও গরম লাগছে।ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে উঠে যায় মায়া।
এতরাতে তন্ময়কে ডাকতে কেমন যেন একটা অসস্তি হচ্ছে।তাই আর ডাকলোনা।ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিল।
ড্রেসিং টেবিল থেকে একটা রুমাল নিয়ে মগের পানিতে ভিজিয়ে প্রায় একঘন্টা কপালে পানি দেয়ার পর জ্বর কিছুটা কমে এলো।আরিয়ানের এতক্ষন অচেতন ছিলো।জ্বর নেমে যেতেই শরীর ঘামে ভিজে গেলো।
মায়া গায়ের কম্বল সরিয়ে দিলো।
আরিয়ানের জ্বরের ঘোর কেটে যায়।চোখ মেলে তাকায় সে।তবে ঘুমের রেশ কাটেনি।মায়াকে তার পাশে বসে থাকতে দেখে বলে,
—“মায়া..তুমি..
—“আছি আছি আপনার কাছেই আছি।কোথাও যাইনি।”
আরিয়ান হেসে ফেলে।মায়ার বলার ধরণ শুনে প্রচন্ড হাসি পায় তার।নিশ্চিত সে জ্বরের ঘোরে উল্টা-পাল্টা বকছিলো।এই সমস্যা তার আছে।তবে আগে এসব শোনার মতো কেউ ছিলনা।একা একাই কথা বলতো।একা একাই জ্বর সেড়ে যেত।এসব নিয়ে মাথা ঘামাতোনা সে।
আরিয়ানকে একা একাই হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে মায়া।
—“হাসছেন কেনো?”
—“তোমাকে খুব জ্বালিয়েছি তাইনা?বিরক্ত হয়েছো?”
—“উহু,বিরক্ত হইনি”।
বাস্তবিকই মায়ার একফোঁটা বিরক্তিও আসেনি।বরং চিন্তা হচ্ছিলো।সারাটা সময় অস্থিরতায় কেটেছে।নিজে অসুস্থ হলেও কখনো এতোটা টেনশন হয়না তার।
আরিয়ানের শার্ট ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপটে আছে।মায়া ইতস্ততভাবে বললো,
—“শার্টটা খুলে ফেলুন।ঘেমে গেছেন।এভাবে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”
আরিয়ান উঠে বসে।শার্টের তিনটা বোতাম খুলতেই মায়া চোখ নামিয়ে নেয়।আজকাল হুটহাট লজ্জা লাগে তার।খুব লজ্জা!
উঠে গিয়ে সে তোয়ালে নিয়ে আসে।আরিয়ানের দিকে এগিয়ে দেয়।
—“শরীর মুছে নিন।”
আরিয়ান মায়ার নত মুখের দিকে তাকায়।তোয়ালেটা নিয়ে গা মুছতে মুছতে বলে,
—“এত লজ্জা পেয়োনা।কাবার্ড থেকে টি-শার্ট বের করে দাও।”
মায়া কোন উওর দেয়না।টি-শার্ট বের করে দিলে সেটা পরে নেয় আরিয়ান।হাই তুলে মায়া।সারারাত ঘুম হয়নি।এখন ঘুম পাচ্ছে।
মায়া যেয়ে লাইট নিভিয়ে দেয়।আরিয়ান বালিশ ঠিক করতে করতে বলে,
—“দরজা খোলা মায়া।দরজা লক করে ঘুমাতে আসো।”
বিছানায় গা এলিয়ে ক্লান্তিতে দু’চোখ বন্ধ করে মায়া।তার চুলে পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আরিয়ান।
আজকে জ্বরের ঘোরেও লোকটা তার সাথে খারাপ কিছু করেনি।কোনরকম জোড় করেনি।নিজের নিয়ন্ত্রন হারায়নি।
••••••••••
সকালে আরিয়ানের রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই তন্ময়ের মুখোমুখি হয় মায়া।তাকে দেখেই তন্ময় প্রশ্ন করে,
—“ভাইয়ের জ্বর কমেছে?”
—“জি।এখন নেই জ্বর”।
—“কোথায় উনি?উঠেনি?”
—“উঠেছেন।,,,ওয়াশরুমে।”
—“ওহ্,আচ্ছা।বলে মায়াকে সাইড দিলো তন্ময়।মায়া মুচকি হেসে নিজের ঘরে চলে গেল।
।
।
আরিয়ান গলায় টাই বাঁধছে।অফিসে যাবে সে।মায়া বসে আছে তার সামনের সোফায়।সে বসে বসে মনোযোগ দিয়ে আরিয়ানের টাই বাঁধা দেখছে।আরিয়ান সন্দিহান কন্ঠে বলে,
—“আমাকে এভাবে কি দেখছো?”
—“আপনার টাই বাঁধা দেখছি।আপনাকে না।”
আরিয়ান হেসে দেয়।কাবার্ড খুলে একটা বক্স বের করে মায়ার সামনে একহাঁটু গেড়ে বসে।মায়ার বাম পা টেনে নিজের পায়ের উপর রাখতেই মায়া তাড়াহুড়ো করে বলে,
—“কি করছেন?”
আরিয়ান বক্স থেকে সেই পায়েলটা বের করে।যেটা সে নিজের বিছানায় পেয়েছিলো।খুব যত্ন করে রেখেও দিয়েছিলো।
চিরচেনা প্রিয় পায়েলটা এতদিন পর দেখে মায়ার মুখে খুশি উপচে পরে।ঠোঁটে ফুটে ওঠে মিষ্টি হাসি।
—“আপনি এটা কোথায় পেলেন?জানেন আমি কত খুঁজেছি?ভেবেছিলাম হারিয়ে ফেলেছি।আপনার কাছে এলো কি করে?”
—“আমার বিছানায় পেয়েছিলাম।তোমার পায়ে ব্যান্ডেজ করার সময় ওইদিন ডক্টর ভুলে খুলে রেখেছিল।”
মায়া কন্ঠে দুষ্টুমি মেখে বলে,
—“আপনি রেখে দিয়েছিলেন কেন?”
—“কেন রেখেছিলাম?কারণ শুনতে চাও?”
—“হুম”
আরিয়ান ভ্রু উচিয়ে বাঁকা হাসে।পায়েলটা পরিয়ে দিয়ে মায়ার কানের সামনে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
—“আমি কারণ বলতে শুরু করলে তুমিই লজ্জা পাবে মায়াবতী”।
~চলবে~