#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩৩
মায়া ঠোঁট এলিয়ে ভাবলেশহীনভাবে হাসে।আমতা আমতা করে বলে,
—“আসলে..একটুখানি কেটেছে।বেশিনা”
আরিয়ান তার দিকে রাগী দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে হাত থেকে বাটিটা নিয়ে পাশে রাখে।আলতো স্পর্শে মায়ার হাত ধরতেই “আহ্”বলে আর্তনাদ করে উঠে মায়া।আরিয়ান শীতল কন্ঠে বলে,
—“একটুখানি কেটেছে তাইনা?”
মায়া মুখ লটকালো।যার রাগ ভাঙানোর জন্য এত কষ্ট করে রান্না করলো সে ই নাকি আবারো তার উপর রাগ করছে।
মায়ার কোমড় পেচিয়ে ধরে একপায়ের উরুর উপর বসিয়ে রেখেছে আরিয়ান।তাই স্বাভাবিকভাবেই আরিয়ানের থেকে একটু উঁচু হয়ে আছে সে।
মায়া একটু কাত করে আরিয়ানের কাঁধের উপর মাথা রাখে।কন্ঠে সিক্ততা নিয়ে বলে,
—“আপনি আমার উপর রাগ করছেন কেন?আপনি রাগ করলে আমার মন খারাপ লাগে”।
মায়ার সিক্ত কন্ঠে কিছুটা শিথিল হয় আরিয়ান।তবুও স্বরে গাম্ভীর্য টেনে বলে,
—“রাগ করার মতো কাজ করো কেনো?”
—“ভুলবশত কেটে গেছে।আমিতো ইচ্ছা করে করিনি।তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হঠাৎই কেটে গেলো”।
—“তাড়াহুড়ো করেছো কেন?”
—“কারণ আপনি বলে গিয়েছিলেন তাড়াতাড়ি ফিরবেন।…আমিতো আপনার রাগ ভাঙানোর জন্য রাঁধতে গিয়েছিলাম কিন্তু দেখেন উল্টা আপনি আরো রাগ করে বসলেন।”
আরিয়ান দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে।এই মেয়ের উপর রাগ ধরে থাকা তার সাধ্যের বাইরে।মায়ার অতিসাধারণ কথাগুলোই তার কাছে শুকনো আবেগে এক পশলা বৃষ্টির মতো প্রিয়।মেয়েটার মধ্য কিছুতো একটা আছে।
সেই প্রথম দিন থেকে যে সে মায়ামীয় ঘোরে ফেঁসেছে আজ পর্যন্ত তার ঘোর কাটলোনা।বরং বেরে চলেছে দিনকে দিন।মায়া নিজের অতিসরল মন দিয়ে তাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ফেলছে তার মায়াময়ী এক অজানা ঘোরে।
আরিয়ান মায়াকে একটু নিচু করে বসায়।মায়ার মাথাটা বুকে নিয়ে কাঁটা হাতটা নিজ হাতের মুঠোয় রেখে ধীরস্থির কন্ঠে বলে,
—“মায়াবতী,তুমি কি জানো তোমার গায়ে একটু আঘাতের ছোয়াঁই আমার গোটা পৃথিবীটাকে নিকষ কালো বিষাদে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।তবে কেন আমাকে এই বিষাদময় যন্ত্রনাটা দাও?”
মায়া একেবারে চুপ করে যায়।কথার পিঠে এতক্ষন জবাব দিলেও এখন কিছু বলেনা।
আরিয়ানের বুকের হৃদস্পন্দনের আওয়াজটা তার খুব ভালোলাগে।রোজ রাতে যখন আরিয়ান তাকে বুকে নিয়ে ঘুমায় তখন এই আওয়াজটাই তার উপর ম্যাজিকের মতো কাজ করে।সেজন্যই খুব অল্প সময়ের মধ্য ঘুমিয়ে পরে সে।
মায়ার কোন উওর না পেয়ে আরিয়ান চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।মায়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
—“মায়াবতী?ঘুমিয়ে পরলে নাকি?”
মায়া বুকের মধ্যই মৃদুভাবে মাথা নাড়ায়।আচ্ছন্ন কন্ঠে বলে,
—“উহু!এখনো জেগে আছি।তবে ঘুম পাচ্ছে।”
আরিয়ান নি:শব্দে হাসে।বিছানায় একটু পিছিয়ে আয়েশ করে মায়াকে একহাত দিয়ে ধরে বসে বলে,
—“আচ্ছা ঘুমাও।আমি নাহয় তোমার ঘুম ভাঙলেই ফ্রেশ হবোনে”।
চকিতে মাথা উঠায় মায়া।আরিয়ানের পরণের জামাকাপড়ে একবার চোখ বুলিয়ে বলে,
—“আপনি ফ্রেশ হননি?…ওহ্,হ্যাঁ তাইতো ফ্রেশ হবেন কিকরে?যান জামাকাপড় বদলে আসেন।”
বলে উঠে যেতে নিলেই তাকে চেপে ধরে আরিয়ান।বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
—“ওটার থেকে তোমার ঘুম বেশি জরুরি।ঘুমাও।”
—“পাগলামো করেননাতো।ছাড়ুন!!আরিয়ান ছাড়েনা দেখে মায়া মাথা খাটিয়ে বলে,”দেখুন আপনার গা থেকে ঘামের গন্ধ আসছে।জলদি কাপড় বদলে আসেন”।
আরিয়ান বাঁকা হেসে মায়াকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ায়।জামাকাপড় হাতে নিয়ে মায়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
—“আপনার যে আমার গায়ের পারফিউমের গন্ধটা অনেক বেশি প্রিয় সেটা আমি জানি ম্যাডাম।আমি অফিসে গেলে আপনি যে সেটা সারা রুমে স্প্রে করে রাখেন সেটাও আমার জানা আছে।তাই অযথা ঘামের গন্ধের দোহাই দিয়েন না।”
মায়ার চোখে মুখে নিমিষেই লজ্জা ছেঁয়ে যায়।আরিয়ান জানলো কিকরে?লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে কিছু বলার আগেই আরিয়ান বলে,
—“উহু!ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগানো নেই।পারফিউমের বোতল প্রতি সপ্তাহেই খালি হয়ে যায়।একই ব্র্যান্ডের পারফিউম কিনতে কিনতে আমি ক্লান্ত মায়াবতী।”
বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে যায় আরিয়ান।মায়া লজ্জামাখা নয়নে চেয়ে থাকে।ইশ্!আরিয়ান না জানি কি ভাবছে।
উফ!!এত লজ্জা সে কই রাখবে?পারফিউমের মতো ছিটিয়ে দিবে নাকি সারাঘরে?
______________
______________
হালুয়ার বাটি সম্পূর্ণ খেয়ে শেষ করেছে আরিয়ান।লজ্জায় বুঁদ হয়ে তার পাশেই বসে আছে মায়া।খালি বাটিটা মায়ার হাতে ধরিয়ে দিতেই মায়া সেটা পাশের টেবিলে রেখে দিলো।আরিয়ান মায়ার নত মুখের দিকে চেয়ে ঠাট্টার ছলে বললো,
—“আর লজ্জা পেয়োনা।প্রতিসপ্তাহে পারফিউম কিনার মতো যথেষ্ট টাকা আমার আছে।কোন সমস্যা নেই!তোমার যত ইচ্ছা ততো স্প্রে করো।”
অতিরিক্ত লজ্জায় মায়া এবার মুখ খুললো।লজ্জামাখা অদ্ভুত এক অভিযোগের স্বরে বললো,
—“হ্যাঁ তো?আপনার গায়ের গন্ধ আমার ভালো লাগে মানে লাগে।আমি সেটা ঘরে দিয়ে রাখি মানে রাখি।আপনি সেটা জানেন তো কি হয়েছে?তাই বলে এভাবে আমাকে লজ্জা দিবেন?,এখন থেকে আরো বেশি করে দিয়ে রাখবো,একদিনেই পুরো বোতল শেষ করে ফেলবো।”
—“আচ্ছা করো শেষ”।
—“করো শেষ মানে?আমি অযথা পারফিউম শেষ করবো আর আপনি বলছেন করো শেষ?”
আরিয়ান তখন পাশ থেকে ল্যাপটপ হাতে নিয়েছে।মায়ার কথার উওরে সে ছোট্ট করে জবাব দেয়,
—“হুম”।
—“এই কি হলো আপনার?”
আরিয়ান ভ্রু কুচকিয়ে মায়ার মাথার তালুতে হাত রাখে।তালু যথেষ্ট গরম হয়ে আছে।আরিয়ান ল্যাপটপ নামিয়ে মায়াকে কাছে টেনে বুকে নিয়ে বলে,
—“শান্ত হও।আমার কিছু হয়নি।বরং তোমারই মাথা গরম হয়ে গেছে।তখন ঘুমাতে পারোনি বলে বোধহয়।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,জলদি ঘুমিয়ে পরো।”
কিছু সময় অতিবাহিত হতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় মায়া।আরিয়ান আবারো ল্যাপটপ হাতে নেয়।মায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,
—“তোমার লজ্জামাখা চেহারার মুগ্ধতায় আমি বারবার আটকে যাই মায়াবতী।সেজন্যইতো সময়,অসময়ে তোমাকে লজ্জায় ফেলি।কিরকম স্বার্থপর আমি দেখেছো?নিজে মুগ্ধ হওয়ার জন্য তোমাকে লজ্জা দেই।”
এমনিভাবেই স্রোতের ন্যায় গড়িয়ে যেতে থাকে সময়।আরিয়ান মায়ার খুনসুটিতে কেটে যেতে থাকে দিনের পর দিন।সময় গড়ালেও তারা দুজন আটকে থাকে তাদের মধ্যেকার ভালবাসায়।আরিয়ান আবিষ্ট থাকে তার মায়াময় দুনিয়ায়।আর মায়া আরিয়ানের ভালবাসার দুনিয়ায় তার মায়াবতী হয়ে।
~চলবে~
[আজকে পর্ব দেয়ার ইচ্ছা ছিলনা।প্রচন্ড মন খারাপ আমার।তবুও আপনাদের কথা ভেবে ছোট করে দিলাম।
কমেন্টে জানিয়েন কেমন হয়েছে💛]