আমার_পূর্ণতা #রেদশী_ইসলাম পর্বঃ ১৯

0
574

#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ১৯

একটি রৌদ্রজ্বল দিন। টানা সপ্তাহ খানিক বৃষ্টি হওয়ার পর আজ আকাশে রোদ ঝলমল করছে। চৌধুরী বাড়িতে উপস্থিত আছে শুধু চৌধুরী বাড়ির লোকজন এবং ঘনিষ্ট কিছু আত্মীয় স্বজনরা সাথে রাদিয়ার শশুড় বাড়ির লোকজন ও আছে। বাইরের কাউকেই জানানো হয় নি বিয়ের ব্যাপারে। ইশতিয়াক চৌধুরীর নিষেধাজ্ঞা আছে এ ব্যাপারে। তার কথা অনুযায়ী এখন শুধু আকদ হবে। পরে তাফসির পুরোপুরি বাংলাদেশে চলে আসলে তবেই বড় করে অনুষ্ঠান হবে এবং এলাকা শুদ্ধ সবাইকেই দাওয়াত করা হবে।
রান্না ঘরে গিন্নিরা ব্যস্ত আছেন রান্নার বিশাল আয়োজন করতে। বিয়ে ঘরোয়া ভাবে হলে কি হবে খাওয়া দাওয়ায় কোনো কমতি চলবে না। তাই তারা হরেক রকমের খাবার রান্নার তোড়জোড় করছেন।
আর ছোটরা ব্যস্ত আছে ডেকোরেশন নিয়ে। ড্রয়িংরুমের এক কোনায় বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল ফুল, রঙ বেরঙের কাপড় এবং ফেইরি লাইট দিয়ে ছোট্ট করে একটা স্টেজ করছে তারা। স্টেজের ফ্লোর বেডের উপর মাঝখানে বসে আছে প্রাচুর্য। এবং প্রাচুর্যকে ঘিরে বসে আছে তার এবং তাফসিরের মামতো,খালাতো ভাই-বোনেরা। বর্তমানে প্রাচুর্যের হাতে মেহেদী লাগানো হচ্ছে। যে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে সে প্রাচুর্যের ছোট খালার মেয়ে। প্রাচুর্যের ক্লাসমেট। তবে এ বয়সেই পাক্কা মেহেদী আর্টিস্ট। কি সুন্দর ফটাফট প্রাচুর্যের দুহাত ভরে সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। সাথে হাতের মাঝ বরাবর তাফসিরের নাম টাও লিখতে ভুল হয়নি তার। কিন্তু এতোক্ষণ বসে থাকার দরুন কোমর থেকে পা পর্যন্ত ঝিমঝিম করছে প্রাচুর্যের।
তার মধ্যেই সেখানে হাজির হলো শাহিন। প্রাচুর্যের মেহেদী পড়া হাত দেখে প্রবল উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো—

” আরে বাহ ভাবি কি সুন্দর লাগছে আপনাকে। সাথে হাত ভর্তি মেহেদী এবং মেহেদী আর্টিস্ট সবই একদম ঝাক্কাস।”

শাহিনের এমন উক্তি এবং ভাবি সম্মোধন করায় লজ্জা পেলো প্রাচুর্য। মাথা নিচু করে স্মিত হেঁসে বললো—

” ধন্যবাদ ভাইয়া। ”

শাহিন আগের মতোই উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে উঠলো—

” এবার চটপট পোজ দিন তো আপনার স্বামীর আদেশ আছে যেনো আপনার সব ঝাক্কাস ঝাক্কাস ছবি তুলি। ”
.
.
.
দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিট বোধহয়। সবে মাত্র গোসল শেষ করে মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো প্রাচুর্য। কেমন অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে তার। নিজের অনুভুতি সে নিজেই বুঝতে অপারগ। হঠাৎ হাতের উপর কারও শীতল স্পর্শে কেঁপে উঠলো প্রাচুর্য। পেছনে ফেরার চেষ্টা করলেও ফিরতে পারলো না সে। প্রাচুর্য কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো—

” ক.কি করছেন তাফসির ভাই? দুরে সরে দাড়ান। কেউ দেখলে কি ভাববে?”

প্রাচুর্যের কথায় হেঁচকা টানে পেছনে ঘুরিয়ে প্রাচুর্যকে নিজের মুখোমুখি দাড় করালো তাফসির। ভ্রু কুঁচকে বললো—

” কে কি বলবে? আর ছয় ঘন্টা পর বউ হতে যাচ্ছিস আমার। আর তাছাড়া ও যার যা ইচ্ছা বলুক তাতে আমার কি? হবু বউয়ের কাছে এসেছি আমি অন্য কারও কাছে তো না। ”

তাফসিরের কথায় প্রাচুর্য ব্যাঙ্গাত্বক স্বরে বললো—

” তাই না? এখন তো খুব ভালোবাসা দেখাচ্ছেন। এতোদিন কোথায় ছিলো আপনার এই ভালোবাসা? দিনের পর দিন যে আমাকে অপমান করে গেছেন তার বেলায়? ছোটো বেলায় যে কথায় কথায় গায়ে চড়,থাপ্পড় মারতেন তখন? কি ভেবেছেন সব ভুলে গেছি? আগ্গে না সব মনে আছে আমার। একটু অপেক্ষা করুন একে একে সব শোধ তুলবো আমি ”

তাফসির আচমকা প্রাচুর্যকে এক টানে বুকে নিয়ে আসলো। প্রাচুর্যের দু’হাত পেছনে মুড়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো—

” তাই? শোধ তুলবি? তা কিভাবে শোধ তুলবি শুনি? এখন একটু নমুনা দেখা। চলে যাওয়ার আগে দেখে যায় একটু।”

তাফসিরে এমন কাজে ভয় পেলো প্রাচুর্য। ইতিমধ্যে হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়েছে তার। তবুও দমলো না সে। সাহস যুগিয়ে বললো—

” হ.হ্যাঁ শোধ তুলবোই তো। সব অপমানের। তবে এএখন না। আগে বিয়ে টা তো হোক। আমার মন মর্জি মতো শোধ তুলবো আমি। ”

তাফসির নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো—

” হ্যাঁ সেটাই তো দেখতে চাচ্ছি আমি। তখন নাহয় ভালো করে তুলিস। এখন তো একটু নমুনা দেখাতে বললাম মাত্র। কিন্তু দেখ তুই তো রীতিমতো কাঁপছিস ভয়ে। ”

” ভয়ে কাঁপছি না। আপনি এতো কাছে এসেছেন বলে কাঁপছি। ”

প্রাচুর্যের এমন কথায় তাফসির দুষ্টু হেঁসে বললো—

” এখনো তো ঠিক ভাবে কাছে এসেই পারলাম না তাই এ অবস্থা। তাহলে বাসর রাতে কি হবে? ”

তাফসিরের এমন কথা কর্ণকুহরে যেতেই লজ্জায় গালের বর্ন লালাভ হলো প্রাচুর্যের। তাফসিরকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো—

” ছি অশ্লীল ”

” অশ্লীলতার কি করলাম আজব। যা সত্যি তাই তো বলেছি। ”

” এতো সত্যি কথা বলতে হবে না আপনার ”

কথার এক পর্যায়ে তাফসির প্রাচুর্যের দু’হাত মুখের সামনে আনলো। হাতের দু পিঠ উল্টে পাল্টে দেখার পর মুখের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হলো। প্রাচুর্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললো—

” কি মেহেদী দিয়েছিস? এমন ফ্যাকাসে রং কেনো? লাল হয় নি তো ”

” এটা অর্গানিক মেহেদী তাফসির ভাই। আস্তে আস্তে রং হবে ”

প্রাচুর্যের কথায় তাফসির বিরক্ত গলায় বললো—

” উফফ আবার সেই তাফসির ভাই? ধুর বা* মুড টাকেই নষ্ট করে দিলি। থাক তুই আমি গেলাম। ”

এ কথা বলে প্রাচুর্যকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তাফসির রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আর তার যাওয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো প্রাচুর্য। তৎক্ষনাৎ ঘরে প্রবেশ করলো রিয়া। হাতে একগাদা জিনিস। ফলস্বরূপ মুখটাও দেখ যাচ্ছে না ঠিক ভাবে তার। তাই ঘরে ঢুকেই চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে প্রাচুর্যকে ডাকতে লাগলো। রিয়ার ডাক শুনে প্রাচুর্য তড়িঘড়ি করে রুমে ঢুকেই দেখলো রিয়ার হাতের জিনিসগুলো। প্রাচুর্য তাড়াতাড়ি জিনিস গুলো বিছানার উপর নামিয়ে রাখতেই রিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে বললো—

” দেখ তো জিনিস গুলো পছন্দ হয়েছে কি না। তোর বিয়ের কিছু জিনিস আছে এতে ”

প্রাচুর্য সব জিনিস গুলোর দিকে একবার চোখ বুলিয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো—

” আপু বিয়েতো সেভাবে ধুমধাম করে হচ্ছে না তাহলে এতো কিছুর কি দরকার? ”

” বড় মা’র আদেশ। শুধু আকদ হবে তাতেই ওনার এতো ব্যবস্থা তাহলে যখন তোদের ধুমধাম করে বিয়ে হবে তখন কি করবে আল্লাহ ই জানেন। যায় বলিস না কেনো, শাশুড়ী কিন্তু জব্বর পেয়েছিস। ওনার মধ্যে অন্তত চুল টানাটানির ব্যাপার নেই। সাথে শশুড় বাড়িও কিন্তু ফাটাফাটি। ”

” ইহহ এমন ভাবে বলছো যেনো অন্য বাড়ির বউ হয়ে যাচ্ছি। আরে বাবা তুমি কি ভুলে গেছো যে আমি এই বাড়ির ই মেয়ে? আমার জন্ম এই বাড়িতে। সাথে বিয়ে ও হচ্ছে এ বাড়িতেই। ”

প্রাচুর্যের কথায় রিয়া হেঁসে প্রাচুর্যকে জড়িয়ে ধরে বললো—

” একদমই না। ভুলবো কেনো? তুই তো আমার বনু। একটু পর ভাবি হয়ে যাবি। আচ্ছা বল তো তোকে কি বলে ডাকবো? ভাবি নাকি আপু? তুই যেহেতু বড় ভাইয়ের বউ সে হিসাবে তো তুই ভাবিই হোস। আচ্ছা একটা কাজ করি। আমি বরং তোকে ভাবিনু বলে ডাকি? কি বলিস? ”

” ভাবিনু আবার কি আপু? ”

” তুই আমার ভাবি ও হইস আবার বনু ও হইস। দুইটা একসাথে মিলিয়ে ভাবিনু। ”

” ধুর কিসব বাজে বকছো। তুমি আমাকে প্রাচুর্য বলেই ডাকবা। নো ভাবি অর ভাবিনু। আর আমি তোমাদের প্রাচুর্য ছিলাম, আছি আর থাকবো। ওইসব কথা বলে আমাকে একদম পর করে দেবে না বলছি। আমি কষ্ট পাবো তাহলে। ”

” আহারে আমার বনুটা। ঠিক আছে তোকে প্রাচুর্য বলেই ডাকবো। ”

পরমুহুর্তেই বিরস কন্ঠে বললো—

” কিন্তু একটা জিনিস দেখেছিস? আমি তোর বড় হয়েও আমার আগে তোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। হায়রে একেই বলে কপাল ”

” থাক আপু কষ্ট পাইয়ো না। আর এখনই তো সংসার করা শুরু করছি না। যখন করবো তখন নাহয় বলো। আর তার আগে তুমিও বিয়ে করে নেও ”

প্রাচুর্যের কথায় রিয়া চোখ মেরে হেসে বললো—

” করবো করবো খুব তাড়াতাড়ি করবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি ”

” তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আছে কেউ। এই আপু বলো না সে কে? প্লিজ প্লিজ।”

” পরে শুনিস। আচ্ছা একটা কথা বলতো। তোর আর ভাইয়ার তো সাপে নেউলে সম্পর্ক ছিলো। হঠাৎ কি এমন হলো যে এক কথায় তুই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলি? কাহিনী কি? ”

রিয়ার কথায় মনে মনে খানিক চমকে উঠলো প্রাচুর্য। পরমুহুর্তে মুখে জোরপূর্বক মেকি হাসি টেনে বললো—

” ক.কাহিনী আবার কি হবে আপু? কিছুই না। পরিবারের সবাই যখন রাজি তখন আমি আর অমত করবো কেনো বলো। আর তাছাড়া ও বড় বাবার মুখের ওপর না করি কিভাবে তাই রাজি হয়ে গেলাম। ”

প্রাচুর্যের কথায় সন্ধিহান চোখে তাকালো রিয়া। তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কথাটা বিশেষ বিশ্বাস হয় নি তার। তবুও কিছু না বলে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলতে শুরু করলে তারা।
.
.
.
.
অক্টোবর মাস। সন্ধ্যা ছ’টা হতে না হতে মাগরিবের আজান দিয়ে দেয়। নামাজ শেষ করে প্রাচুর্যকে নিয়ে যাওয়া হলো ড্রয়িং রুমের সেই ছোট খাটো স্টেজ খানায়। হালকা সাজ, হালকা গয়না এবং খুবই সিম্পল গোল্ডেন এবং সাদার মিশ্রণে তৈরি শাড়ি আর মাথায় লাল টুকটুকে বিয়ের ওড়না পরিধান করা মেয়েটিকে দেখে তাফসিরের চোখ সরাতে ইচ্ছা করছে না। এতো সামান্য সাজ পোশাকে ও কোনো মেয়েকে এতোটা সুন্দর লাগে জানা ছিলো না তার। তবে এটা সবার চোখে নাকি শুধু তার চোখেই তা জানে না সে। তাফসির এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রাচুর্যের দিকে। চোখের পলক পড়েছে? হয়তো না। প্রাচুর্য একবার সে দৃষ্টির দিকে তাকিলো। ক্রমশ হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো তার। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো। সে দৃষ্টিতে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকার শক্তি তার নেই। তাই বর্তমানে নতজানু হয়ে থাকায় শ্রেয়।
তাফসির চেয়ে চেয়ে দেখলো সেই নতজানু হয়ে থাকা মুখশ্রী। শব্দহীন হাসলো সে। উপভোগ করলো সমগ্র বিষয়টুকু।

এর মধ্যেই সামনে থেকে শোনা গেলো কোলাহল। সাথে দেখা গেলো ইশতিয়াক চৌধুরীর সাথে করে আনা কাজি সাহেব কে। স্বল্প সময়ে, স্বল্প আয়োজনে বিয়ে হলো দুজনের। শুরু হলো একটি নতুন বৈধ দাম্পত্য জীবন। সাথে সাথে চারপাশে মুখরিত হলো আলহামদুলিল্লাহ ধ্বনিতে। একে একে সবাই জানাতো শুরু করলো নতুন দাম্পত্য জীবনের জন্য শুভ কামনা।

সব অনুষ্ঠান এবং নিয়মনীতি শেষ হতেই দুজনকে ঘিরে বসলো কাজিন মহল। শুরু হলো তাদের নিয়ে হাসা-হাসি এবং বিভিন্ন ধরনের কথা বার্তা। এবং তার প্রভাব পরছে প্রাচুর্যের ওপর। বসে বসে লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে সে। তার কাজিন মহল যে এতোটা অশ্লীল সে ধারনায় করতে পারে নি। কিন্তু এদিক দিয়ে তাফসির পুরোটাই নির্বাক। সে নিজের মতো বসে বসে মোবাইল টিপছে। তাকে দেখে বোঝায় যাচ্ছে না যে সে আদেও এই দুনিয়ায় আছে কি না। তা দেখে বিরক্ত হলো শাহিন। তাফসিরের কাঁধে চাপর মেরে বললো—

” তোর সমস্যা টা কি ভাই? আমরা সবাই এখানে কতো গল্প করছি আর তুই বা* একটার মধ্যে হান্দায় আছোস। ”

” তোদের এইসব ছি মার্কা কথা শুনলে কান পঁচে যাবে আমার। তার থেকে ফোন দেখতে দেখতে দেখতে চোখ চান্দে গেলেও লাভ। আর তোরা তোদের এইসব কথা বন্ধ করতো। দেখছিস না আমার বউটা অস্বস্তিতে পরেছে। ”

তাফসিরের প্রাচুর্যকে বউ সম্বন্ধ করাই চারদিক থেকে সবাই ” হো হো বউ তাইনা? ” বলে উঠলো। এতোক্ষণ বোধহয় এইটুকু বাকি ছিলো যা তাফসির পূর্ণ করে দিলো। প্রাচুর্যের এবার মাটিতে ঢুকে যেতে ইচ্ছা করছে।
তার মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হলো মিসেস শাহানা। তিনি খুব তাড়াহুড়ো করে আসলেও প্রাচুর্য আর তাফসিরকে একসাথে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখে থামলেন। মনে শতবার মাশাল্লাহ উচ্চারন করলেন। তার চোখ ছলছল করছে ঠিকই তবে মুখে মিষ্টি হাসি লেগে আছে। তিনি প্রাচুর্য আর তাফসিরের কাছে এসে দু’জনের কপালে স্নেহের চুমু খেয়ে বললেন—

” মাশাল্লাহ আমার ছেলে আর মেয়েটাকে কি সুন্দর লাগছে। আল্লাহ না করুন কারও নজর যেনো না লাগে। ”

মিসেস শাহানার কথায় প্রাচুর্য ঝাপটে ধরলো তাকে। প্রাচুর্যের চোখ দিয়ে পানি পরছে। সে ভাবছে আজ যদি তাফসিরের জায়গায় বাইরের কারও সাথে তার বিয়ে হতো তাহলে তো সবাইকে ছেড়ে এই পরিবার ছেড়ে চলে যেতে হতো তাকে। তখন সবাইকে ছেড়ে সে থাকতো কিভাবে। এমনিতেই বাড়ির বাইরে সে কখনো একরাত কোথাও থাকে নি। হ্যাঁ থেকেছে কিন্তু তখন তো বাড়ির সবাই সাথে ছিলো তাই তার কষ্ট হয়নি। কিন্তু একা কিভাবে থাকতো সে যদি অন্যত্র বিয়ে হতো।
এর মধ্যেই মিসেস শাহানা প্রাচুর্যের মাথায় দ্বিতীয় বার চুমু খেয়ে বললেন—

” কি হয়েছে আম্মা? কাঁদছিস কেনো? ”

” কিছু হয় নি মা। ”

” কিছু না হলে এভাবে কাঁদতিস নাকি?”

” সত্যি কিছু হয় নি। বাদ দাও। আগে বলে তুমি কি কিছু বলতে এসেছিলে? ”

প্রাচুর্যের কথায় মিসেস শাহানার মনে পড়লো যে সে কেনো এখানে এসেছিলো। সাথে সাথে সবাইকে তাড়া লাগিয়ে বললো—

” দেখেছিস একদম ভুলে বসেছিলাম যে কি কাজে এসেছি। বাচ্চা পার্টি তাড়াতাড়ি ওঠো এবার খাওয়ার সময়। দেখেছো কতো রাত হয়েছে? তাড়াতাড়ি চলে সবাই। ”

মিসেস শাহানা তাদেরকে বাচ্চা পার্টি সম্বোধন করায় গায়ে লাগলো সবার। তিশা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো—

” কি বলছেন আন্টি? আজ বিয়ে দিলে কাল বাচ্চা হয়ে যাবে আর আপনি এখনো বাচ্চা বলছেন আমাদের? আর তাছাড়াও আপনার মেয়ের তো বিয়ে হয়েই গেলো। দু’দিন পর দেখবেন কোলে বাচ্চা নিয়ে ঘুম পরাচ্ছে এখন কিন্তু আর আমাদের বাচ্চা বলা চলে না। ”

তিশার কথায় সবাই তাল মেলালো। মিসেস শাহানা হেঁসে উঠে বললেন—

” ঠিক আছে বাবা। ভুল হয়েছে আমার। এবার তাড়াতাড়ি চলো তো সবাই। দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। ”
.
.
বাড়ির মুরব্বিদের খাওয়া দাওয়ার পাঠ আগেই চুকে গিয়েছে। শুধু বাকি ছিলো ছোটরা অর্থাৎ কাজিন মহল। তারা নানা রকম গল্পে মত্ত ছিলো বলে তখন কেউই খেতে যায় নি। তবে এখন খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই উঠে দাঁড়ালো সবাই। তৎক্ষনাৎ সেখানে হাজির হলো ইশতিয়াক চৌধুরী। তিনি সবাইকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলেন। কথার এক পর্যায়ে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন—

” খাওয়া শেষ হয়েছে না সবার? এবার আজকে আর কোনো হৈ হুল্লোড় না। সবাই এবার যার যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরো। সবাই বলতে আমি কিন্তু সবাইকেই বলছি।”

তাফসির হাত ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত মুচছিলো তখন। কিন্তু ইশতিয়াক চৌধুরীর কথা শুনে থম মেরে দাঁড়িয়ে গেলো সে। ইশতিয়াক চৌধুরী যে কথাটা তাকেই উদ্দেশ্য করে বলেছেন এই কথাটা বুঝতে বাকি নেই কারও। সবাই অসহায় দৃষ্টিতে তাফসিরের দিকে তাকিয়ে থাকলেও প্রাচুর্য মিটমিট করে হাসতে হাসতে রুমে চলে গেলো। সে মুহুর্তে তাফসির কাধে কারও স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকালো। শাহিন মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব এনে বললো—

” থাক ভাই কষ্ট পাইস না। তোর বাসর আর করা হলো না। এবার বিবাহ দম্পতি হয়েও আলাদা থাকবি। আগে যেমন ছিলি লাইক কাজিন। ”

শাহিনের কথায় তাফসির ভ্রু কুঁচকালো। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো—

” মজা নিচ্ছিস? ”

তাফসিরে মুখভঙ্গি দেখে শাহিন পেট ফাটা হাসিতে ভেঙে পরলো।

#চলবে

[রিচেক করি নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here