#আসক্তি২
পর্বঃ৪৯
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
বার্তাকক্ষের ছবিগুলোর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শান নজর রাখে ফেসবুকের নিউজফিডে।সামনেই জ্বলজ্বল করছে আয়ানের হাস্যোজ্বল মুখ।সামান্যতম অপরাধবোধ, অনুশোচনা যেখানে নেই।নিউজের হেডলাইনেই বড় বড় অক্ষরে লেখা “মাদকদ্রব্যের সাথে জড়িত সিলেট মৌলভীবাজারের স্বনামধন্য ব্যবসায়ীর ছেলে ইশতিয়াক মাহমুদ আয়ান”
রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে শানের।তৎক্ষণাৎ মনে পড়ে আয়ানের সাথে তার সেদিনের কথোপকথনের সম্পূর্ণ অংশ।যেন কানের কাছে রেকোর্ডারে বাজছে সবটা।চোখ বন্ধ করে সম্পূর্ন ঘটনা রিমাইন্ড করে শান।
“এতোটা কেয়ারলেস কি করে হলাম?”,অস্ফুটস্বরে নিজের মাঝে বিড়বিড় করে ওঠে।চোখ খুলে বেডে শুয়ে থাকা পাখির দিকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকে শান।
“আমার অসাবধানতার ফলাফল তোমার এই অবস্থা।আমি ওকে ঠিক সেভাবেই বাঁচিয়ে রাখবো, যেভাবে বাঁচলে প্রতিটা মূহূর্তে কেউ নিজের মৃত্যু কামনা করে”
রাগে ক্ষোভে কাঁপতে থাকে শান।ব্যান্ডেজে জড়ানো পাখির মাথাটায় সন্তোর্পনে হাত বুলিয়ে চোখের কোণ দুটো মুছে দ্রুত বাহিরে চলে আসে।
দরজায় পা রাখতেই রনির মুখোমুখি হতে হয়।
“ভাইয়া”
লাল লাল রক্তচোক্ষু দুটো অন্যদিকে সরিয়ে তখনো কাঁপতে থাকে শান।রনি অভয়ে কাঁধে হাত রাখে।
“কিছু কথা ছিলো ভাইয়া”
“পরে শুনব”
“প্লিজ ভাইয়া “,অনুনয়ের স্বরে বলে রনি।
এরপর শানের হাত টেনে নিয়ে যায় পাশের ফাঁকা এক কেবিনে।আমতাআমতা করে রনি দাঁড়িয়ে থাকে শানের সামনে।ভ্রুকুচকে শান ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বলে,”কিছু বলার থাকলে বল।আমি একখানে বের হবো”
“ভাবি রেইপ্ড,তাই না ভাইয়া!”,আহত,কম্পিত কন্ঠে কথাটা বলে রনি শানের দিকে তাকায়।
মূহূর্তেই গায়ে শীতল হাওয়া বয়ে যায় শানের।কান তালা মেরে আসে।সোজা হয় কুঞ্চিত ভ্রুজোড়া।কপালের ভাঁজ সোজা করে ডানহাত কোমড়ে বাঁ হাতে নিজের পুরো মুখটা মুছে নেয়।
“কিভাবে জানলি, কে বললো তোকে?কোন ডক্টর নাম বল?আজই তার শেষদিন এই মেডিকেলে।স্পিক আউট ড্যাম ইট!”,দুইহাতে রনির কলার চিপে ধরে রাগে দাঁতে দাঁত পিষে বলে শান।
রনি জানতো তার ভাই রিএক্ট করবে কিন্তু এতোটা তা সে ভাবতেও পারে নি।মাথা নিচু করে কন্ঠের স্বর খাঁদে ফেলে বলে,”ভাবির শাড়ি,সাইড ব্যাগ, ভাঙ্গা ফোন সবটা দেখে আমি বুঝে নিয়েছি ভাইয়া।আর ইনায়াহ্’র ঘরেও দেয়ালের একদম নিচে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ ছিলো”
হাতের গতিবেগ হালকা হয়ে আসে শানের।গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে পাখির সাথে ঘটা বিশ্রী নোংড়া দূর্ঘটনার কথা ভাবতেই।রনির কলার ছেড়ে পাশে রাখা চেয়ারটায় বসে শান।গা থেকে দরদর করে ঘাম ছুটেছে শানের,এদিকে গা কাঁপছে ভীষণ দৃশমান আকাড়ে।রনি দ্রুত শানের সামনে মেঁঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে।
“ভাভাইয়া, ঠিকাছো ততুমি?”,জড়িয়ে আসা কন্ঠে বলে শান।
মাথা উচিয়ে স্থীরদৃষ্টিতে চেয়ে বলে,”এমন হলো কেন আমার জীবনে?একটু সুখ কি আমার জীবনে স্থায়ী হবে না! আরে দোষ আমার অথচ মধ্যখান থেকে ঐ নির্দোষ মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে।জীবনে সে’ই বা কি পেলো বলতো?ছোটবেলায় মা বাবাকে হারানো,বড় বাবার সংসারে কাজের লোকের মতো আচরন,ভালোবাসার মানুষের থেকে ধোঁকা,আমার থেকে হাজার হাজার লাঞ্ছনা,এরপর।এরপর ভালোবেসে ফেললো আমার মতো একটা অভাগা মানুষকে।ও জানতো আমি কোনদিনও ওকে সন্তান সুখ দিতে পারব না।তবুও সবটা জেনে আমায় আপন করে নিলো।আমার সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিলো।আমায় নতুন করে পরিচয় করালো আমার ফেলে আসা অতীতের সাথে।এরপর সুখের একটু মুখ দেখলাম।সব মিথ্যেকে সরিয়ে সে আমায় বাবা হওয়ার মতো ধ্রুব সত্যিটার সাথে পরিচয় করালো।জীবনটা কানায় কানায় পূর্ণ হলো আমার।এই পূর্ণতাই সহ্য হলো না সৃষ্টিকর্তার? কেড়ে নিলো সবটা!আমার পাখিটা কি পেলো জীবনে?”,বলতে বলতে কেঁদে ফেলে শান।
“ভাইয়া, ভাইয়া প্লিজ এভাবে ভেঙ্গে পরো না ভাইয়া।সব ঠিক হয়ে যাবে”,কান্না জড়িয়ে আসা কন্ঠে বৃথা সান্ত্বনা দেয় রনি।
“কিচ্ছু ঠিক হবে না রে।আমার বাচ্চাটা নেই, মানলাম।ও আর মা হতে পারবে না, মানলাম।ও যে….সবই মানলাম।আমি সবকিছুই মেনে নিলাম।কারণ আমার নেশা ও।যাতে আসক্ত আমি।যার নেশা শ্বাস থাকা অবধি আমি ছাড়তে পারব না।আমার কাছে ওর বেঁচে থাকাটা জরুরী।আর কিচ্ছুই না।কিন্তু ওকে মানাবো কি করে ভাই?আমি ওকে সামলাবো কি করে?ও তো বেঁচেও বাঁচবে না।নিজেকে শেষ করে দেবে।তাহলে আমি বাঁচব কি করে?”
“এভাবে কেন বলছো ভাইয়া।তুমি আছো, আমরা সবাই আছি।সবাই মিলে ভাবিকে আগলে রাখব।এখানে ভাবির তো কোন দোষ নেই।সে তো বিনাদোষে ভিক্টিম।তাহলে তাকে কেন আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারব না!কেন মৃত্যুই তার আসল ডেস্টিনেশন হতে হবে!”
শানের দিকে তাকিয়ে পূনরায় রনি বলে,”ভাইয়া আমরা আইনী ব্যবস্থা নেবো।অবশ্যই কালপ্রিটের শাস্তি পেতে……”
“সসসসসসস…..আর বলবি না “,রনির কথার মাঝে ওকে থামিয়ে দেয় শান।রনির দুই ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে বলে,”এই ব্যপার এখানেই কবর দে।না জানবে বাড়ির লোক, না জানতে দেবো দশের কাছে।”
শান উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”ওর সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আমার।আমি অক্ষম ;তা পালনে ব্যর্থ।কিন্তু আর না।আর শাস্তির কথা বলছিস?শাস্তি আমি দেবো,আইন না।”
” ও চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করবে।মৃত্যু ভিক্ষে চাইবে কিন্তু মৃত্যু হবে না”,খুব স্বাভাবিক, শান্তস্বরেই কথাটা বলে শান।
এরপর বাহিরে বের হতেই আবারো রনির দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এখানে থাকতে পারবি?”
“অবশ্যই ভাইয়া।কেন পারব না”
শান কৃতজ্ঞতাস্বরূপ শুকনো হেসে বলে,”থাক।আমি আসছি। আর ওর জ্ঞান ফিরলে আমায় সাথে সাথেই কল করবি ”
“ঠিকাছে ভাইয়া”
🌸🌸
বাড়ি ফিরে ইনায়াহ্’র ঘরে ঢোকে শান।রনির কথামতো দেয়ালের নিচে চোখ রেখে বুঝতে পারে সত্যিই রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।হাঁটু মুড়ে বসে হাতের আলতো স্পর্শ করে রক্তে মাখানো দেয়ালের সেই অংশ।কি যেন ভেবে তড়িৎগতিতে ছুটে চলে ওয়াশরুমের দিকে। বালতি ভর্তি পানি এনে ভেজা কাপড়ে ঘষে ঘষে তুলে ফেলে সে রক্তের আস্তরন।
ঘরে এসে ক্লান্ত শ্রান্ত শরীরটা বিছানার লোভ সামলাতে পারে না।গা এলিয়ে দিয়ে পরশকে কল করে।কিছুক্ষন কথা বলে ওয়াশরুমে ঢোকে শান।দীর্ঘ ৪০ টা মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে শাওয়ারের নিচে।মেলাতে থাকে জীবনের অঙ্ক।হিসেব যে বড্ডো অগোছালো।যা গুছিয়ে নেয়ার দায়িত্ব তারই।
“নিজের পৌরষত্বের অযুহাতে আমি তোমায় হারাতে পারব না।পারব না জীবনের বাকিটা পথ তোমায় ছেড়ে চলতে।জীবনের সবটা দিয়ে হলেও সেই জঘন্য রাতের স্মৃতি আমি মুছে দেবো”
_______________
“কাম”,সহাস্যে শানকে রুমে ঢুকতে দেখে বলে ওঠে পরশ।
নিজেকে যথেষ্টই স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে শান।সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে পরশের সাথে মুছাফাহ্ করে।পরশ হাতের ইশারায় সামনে রাখা চেয়ারে বসতে বল শানকে।
“বল কি খাবি?”
“কিছুই না”
মুখে মশকরার হাসি বজায় রেখে পরশ বলে,”কি, শ্বশুর আর শালাবাবুর শোকে বুঝি পাথর বনে গেলি”
“মশকরা ছাড়।কিভাবে কি হলো, বল”,পরশের দিকে প্রশ্ন ছোড়ে শান।
পরশ চেয়ারের পিছনে গা এলিয়ে বলে,”দীর্ঘদিন ধরে মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত ওরা।ব্যপারটা সবারই মোটামুটি জানা।কিন্তু কেউ মুখে স্বীকার করত না।জানিসই তো আয়ানরা কি ওখানকার!”
“হুম,তারপর”
“ব্যপারটা স্থানীয় থানায় পৌঁছালে সবাই এলার্ট হয় হাতেনাতে ওদের ধরতে।কিন্তু খুব ধুরন্ধর লোক ওরা বুঝলি!সতর্ক হয়ে যেত।পরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ধরে সবটাই ডিসমিস করে ফেলত।কিন্তু গতকাল সন্ধ্যার পর তোর শালা বাবুকে উত্তরার তোর বাড়ির পাশেই ওদের মেইন অফিসে ধরে ফেলে পুলিশের তদন্ত কমিটি।সেখানে কাল ওদের মাসিক মিটিং ছিলো।পুরো গ্যাং কে ধরে ফেলে পিবিআই।তোর শ্বশুর, আর আয়ানকে ধরতে পারলেও রায়ানকে ধরা সম্ভব হয় নি।”
শানের আর বুঝতে বাকি থাকে না কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়িয়েছে।
“তবে একটা কথা , আয়ানের হাতে কিছু দলিল ছিলো।সেসব….”
“দলিল?কিসের দলিল?দেখাতে পারবি?”,ভ্রুকুচকে সিনা টানটান করে বসে প্রশ্ন করে শান।
“কাওসার আয়ানের ফাইলটা নিয়ে আসো”
“জ্বি স্যার”
_______
“এই যে দেখ”,ফাইল থেকে কাগজ গুলো বের করে শানের সামনে রাখে পরশ।
নিজের চেয়ারে সোজা হয়ে বসে বলে,”তোর ওয়াইফ সদিচ্ছায় কি করে লাখ লাখ টাকার সম্পত্তি ওদের নামে করতে পারে আমি বুঝলাম না”
শান উৎকন্ঠা নিয়ে একে একে সবগুলো দলিলের স্বাক্ষরের স্থানগুলো দেখে নেয়।সেখানে জ্বলজ্বল করছে পাখির নামটা।কিন্তু সদিচ্ছায় স্বাক্ষর করার মতো মনে হচ্ছে না কোনমতেই।
এরপর শান প্রতিটা দলিলের লেখাগুলো মনযোগ দিয়ে পড়ে নেয়।গা যেন শিউরে ওঠে থেকে থেকে।শান নিজের ভাবনার উপর আরো বেশি দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে ওঠে।
“আমার কিছু কথা আছে তোর সাথে”,তড়িৎগতিতে দলিলগুলো একপাশে রেখে চট করে পরশের হাত ধরে বলে শান।
হকচকিয়ে ওঠে পরশ।অবাক হয়ে কাওসারকে চোখের ইশারায় রুম ছাড়তে বলে ।
“কি হয়েছে?”,সন্দিহান চোখে প্রশ্ন করে পরশ।
“আমি এই মূহূর্তে আয়ানের সাথে কথা বলতে চাই।ইট’স আর্জেন্ট”
“উফফ,এই জন্যে এভাবে চমকাইলি?আমি তো ভাবছিলাম….এটা কোন ব্যপার হলো!”,দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে পরশ।
“চল”,বলে শানকে আয়ানের সেলে নিয়ে যায় পরশ।
_________
“আরে জামাই বাবু যে।ওয়াইফের কাছে না থেকে আমার কাছে যে”,পিছনে ফিরে ঠোঁটে মুচকি হাসি বজায় রেখে বলে আয়ান।
আয়ানের মুখটা দেখেই রাগে শরীরের প্রতিটা শিরা উপশিরা চামড়া ভেদ করে জানান দিচ্ছে শানের।কপালের রগ গুলো দপদপিয়ে ওঠে।ভেসে ওঠে কপাল ভেদ করে। দুইহাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে আয়ানের নাক বরাবর সজোড়ে ঘুষি মারে শান।
“শান কি করছিস কি? “,বলেই এগিয়ে এসে শানকে ধরে পরশ।
অপর মুখ করে দুহাতে নাক চেপে ধরে আয়ান।খানিক বাদে হাসি দিয়ে হাত দুটো সামনে এগিয়ে বলে,”রক্ত বাহির করে ফেলছো? ”
শান কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে না।সজোড়ে আরেকটা ঘুষি মেরে দুইহাতে কলার চেপে পুরুষাঙ্গ বরাবর লাত্থি মারে।এরপর এলোপাথাড়ি মার শুরু করে চোখে মুখে।
ঘটনাটা এতোটাই আকষ্মিকভাবে ঘটে গেলো পরশ প্রতিহত করার সুযোগটাও পেলো না।ততোক্ষনে আয়ানকে মেঝেতে ফেলে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আয়ানের নাক মুখ ফাটিয়ে ফেলেছে শান।আর নির্লজ্জের মতো হাসি ঠোঁটে রেখে আয়ান বলে,”আমি যদি হাত উঠাই তবে পাখির মতো তোরও অবস্থা করব।মেডিকেলে কল করে বেড রেডি রাখতে বলিস”
পাখির নামটা কানে আসতেই আহত, অর্ধ্বমৃত,রক্তমাখা মুখটা ভেসে ওঠে শানের চোখের সামনে।ভিতরটা জ্বলেপুড়ে ছাঁই হয়ে যায় মূহূর্তেই।কয়েক মূহূর্ত চোখ বন্ধ করে আবার খোলে শান। এবার হিংস্র প্রানীর রূপ নেয়। পৃথিবীর সমস্ত শক্তি এসে ভর করে শানের শরীরে।পরশের হাতকে ঝটকা মেরে ফেলে দিয়ে ডানহাতে আয়ানের গলার নালিটা সজোড়ে চেপে ধরে একদম পিছনের দেয়ালে ঠেকিয়ে দেয়।
“কাওসার,আজাদ তাড়াতাড়ি আসো এখানে”
পরশ একার শক্তি দিয়ে শানকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে যায়।জোড়ে শব্দ করে দুজন পুলিশকে সেলের ভিতরে ডেকে নেয়।সবাই মিলে টেনে হিচরেও শানকে সরাতে পারে না।এলোপাথাড়ি মেরে চলেছে আয়কানকে।এক পর্যায়ে আয়ানের গলা দিয়ে গোঙ্গানির আওয়াজ বের হতেই পরশ আরো দুজন কর্মী সহ দ্রুত টেনে আয়ানকে বের করে নেয়।
শান কিছুতেই নিজেকেই নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে না।সবাইকে ডিঙ্গিয়ে আবারও ঝাপিয়ে পরে অর্ধ্বমৃত আয়ানের উপর। সবার ফাঁক দিয়ে সজোড়ে আরেকটা লাত্থি মারে পুরুষাঙ্গ তাক করে।দুহাতে ব্যথা চেপে আয়ান পরে যায় মেঝেতে।নাকে মুখে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে যায় আয়ানের।
সবাই সবার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়েও শানকে ছাড়াতে পারে না।আতঙ্কে শুকনো ঢোক গেলে পরশ।
“শান, বোঝার চেষ্টা কর আমার জবের নিশ্চয়তা জড়িয়ে আছে এখানে।আয়ানের কিছু হলে জবাবদিহিতা আমাকেই করতে হবে।ছাড় ওকে।মরে যাবে ও”,অনুরোধের স্বরে বলে পরশ।
হাতের শক্তি ক্ষীন হয়ে আসে শানের।মূহূর্তেই আনমনে ভাবে,”এভাবে মারলে তো ও সত্যিই মরে যাবে।কিন্তু আমি তো একে এভাবে মারব না”
শান আয়ানকে ছেড়ে মূহুর্তেই সরে যায়।
“ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসো কুইক,আর ডক্টরকে কল করো”,তাড়া দিয়ে বলে পরশ।
___________
ঘন্টা খানিক পরে লম্বা টেবিলটার একপাশে আয়ানকে বসানো হয় একটি চেয়ারে।শানকে বিপরীত পাশে বসানো হয় মুখোমুখি। আর তাদের দুজনের মাঝে বসে পরশ।এটাকে রিমান্ড ঘর বলা হয়।কেমন যেন ভ্যাঁপসা একটা পরিবেশ।
পরশ আয়ানের দিকে একনজর চেয়ে শানের দিকে তাকায়।
“বল, কি হয়েছে?”,শানকে প্রশ্ন করে পরশ।
আয়ানের দিকে রক্তচোক্ষু নিয়ে তাকিয়ে শান জবাব দেয়,”একে আমার চাই”
ভ্রুকুচকে পরশ বরে,”কি বলিস এসব? বুঝতে পারছি না।ক্লিয়ারলি বল”
“হুমম, একে আমার চাই।কতো লাখ লাগে আমি দেবো।শুধু একে আমার কাছে দে”,পরশের দিকে ফিরে বলে শান।
পরশ অবুঝের মতো মুখোভঙ্গি করে বলে,”সেটা কি করে সম্ভব ?আচ্ছা এতো রেগে গেছিস কেন?সম্পদ তো পাখি নিজেই ওর নামে করে দিয়েছে।তাহলে তোর সমস্যা…..”
“নিজের ইচ্ছেয় করে নি। ও বাধ্য করেছে পাখিকে”,জোড়ে চিল্লিয়ে বলে শান।
“আচ্ছা শান্ত হ।এতো উত্তেজিত হোস না।সবটা বল আমায়।আমি আছি তো”
“আমার ওয়াইফ আজ আইসিইউ এর বেডে অচেতন হয়ে পরে আছে শুধু মাত্র এই কু** বাচ্চার জন্যে।এই মাদার ফা* এর জন্যে আজ ওর এই অবস্থা।আমার ওয়াইফ তিন মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলো।মিসক্যারেজ করিয়েছে আমার বাচ্চাটার।সারা শরীরে আঘাতে আঘাতে জর্জিত করেছে পাখিকে।তারপর ও স্বাক্ষর করিয়েছে।আর বলছিস নিজ ইচ্ছায় করেছে?”,পরশের দিকে রাগীচোখে তাকিয়ে বলে শান।শেষের কথা গুলো বলতে কন্ঠে কম্পনের রেশ কানে ভাসে পরশের।
স্তম্ভিত হয়ে পরশ চেয়ে থাকে শানের দিকে। বাকি কথাটা পুরোটাই পরশের থেকে লুকিয়ে ফেলে শান।পরশ শানের কাঁধে হাত রেখে কি বলে সান্ত্বনা দেবে বুঝতে পারে না।ঠোঁট খুলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান অসহায় কন্ঠে বলে,”আমার পাখি আর কখনোই মা হতে পারবে না পরশ।ওকে বিকলাঙ্গ করে ফেলেছে এ”,
আয়ান এবার অগ্নিমূর্তি ধারন করে বলে,”যা আমার চাই, তা আমার চাই’ই চাই।সেটা যেকোন মূল্যেই হোক।সম্পদগুলো আমার দরকার।ভালোভাবে বলেছি স্বাক্ষর করে নি।খুব ছোটাছুটি করেছিলো।পরে বাধ্য করেছি স্বাক্ষর করতে।হ্যা তোর বাচ্চাটাকেও আমি মেরেছি। কিন্তু ইচ্ছে করে মারি নি।পরে বুঝতে পেরেছি পাখি প্রেগন্যান্ট ছিলো।অবশ্য একটু অনুশোচনা হয়েছিলো।আরে খারাপ হলেও জেনেশুনে একটা ভ্রুনকে মেরে ফেলার মতো খারাপ আমি নই”
“একটাও মিথ্যে কথা বললে জিহ্ব টেনে ছিড়ে ফেলব”
আয়ানের কথা শেষ হতেই শান আবারো তেড়ে আসে।
“ফল খুব খারাপ হবে অফিসার।সামলাতে পারবি তো”,পরশকে উদ্দেশ্য করে কাটকাট গলায় বলে আয়ান।
মূহূর্তে ডান গালে কষিয়ে থাপ্পোর বসিয়ে দেয় পরশ।বেল্ট খুলতে খুলতে বলে,”আমাকে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার দেখাস!”
রাগে গর্জিয়ে পরশ বলে,”তোকে মেরে লাশ গুম করতে একটা দিনও সময় লাগবে না আমার। কাকপক্ষীও টের পাবে না”,পিঠে, বাহুতে বেল্টের আঘাতে জর্জিত করে বলে পরশ।
“এএই অফিসার,না না একদম মারবি না।ভুলে যেও না আমার হাত কতো উচুু”,সহাস্যে পরশকে বলে আয়ান।
“ওহহহহ রিয়েলি!দেখা তোর হাত”,বলে সজোড়ে আরেকটা আঘাত করতেই
শান এগিয়ে এসে পরশকে বাঁধা দিয়ে বলে,”ওকে আমি কঠিন মৃত্যু দিবো পরশ।আমার শুধু ওকে চাই।কোর্ট,থানা,আইন যা ম্যানেজ করার কর।যতো টাকা লাগুক আমি দেবো।তুই শুধু ওকে গুম করার নাটকটা সাজা।”
পরশ একটু দূরে শান্ত হয়ে বসে হাঁপাতে থাকে।নিজেকে কোনমতে ধাতস্ত করে গলার স্বর নামিয়ে বলে,”এভাবে যে হয় না রে।আমাদের হাতে ক্ষমতা থাকলেও সেটা প্রয়োগের ব্যবহার খুব কম।সবকিছুরই একটা ধারাবাহিকতা আছে।ওর কঠিন থেকে কঠিনতর কেইস সাজাবো আমি।শাস্তির ব্যবস্থা করব আমি, তুই নিশ্চিন্তে থাক।”
“ও পুরোটাই মিথ্যে বলছে পরশ।ও পরিকল্পিত ভাবে আমার বাচ্চাটাকে নষ্ট করে দিয়েছে।”,আয়ানের দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে কেঁপে উঠে বলে শান।
“আচ্ছা এদিকে আয়,শান্ত….. ”
“আরে রাখ তোর বা* সান্ত্বনাবানী।এ বুশরা না প্রেগন্যান্ট? আমার যতোদূর মনে পড়ছে আমার ওয়াইফের প্রেগন্যান্সির ১৫ দিন পর বুশরার প্রেগন্যান্সির খবর তুই আমায় জানাস।আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলি সেদিন।আমার টা ভাব তো। যেখানে আমি জেনে এসেছি আমি বাবা হতে পারব না। কিন্তু হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমি কোন সাত সপ্তাহের ভ্রুনের বাবা।আমার তখনকার অনুভুতিটা একটু বোঝার ট্রাই কর ভাই।আমার সেই অনাকাঙ্ক্ষিত সুখ নষ্ট করেছে ও”
পরশ অসহায়ের মতো মুখটা করে। আবার হাত বাড়িয়ে বলে,”আমি সবই বুঝেছি ভাই কিন্তু…..”
“সেই প্রানপ্রিয় ২ মাস ১৫ দিনের অন্তঃস্বত্তা বুশরাকে যদি কেউ পরিকল্পিতভাবে গর্ভপাত ঘটিয়ে মৃত্যুর মতো যন্ত্রনা দিয়ে নিজের বিকৃত যৌন লালসা পূরন করে, কেমন হবে রে ভাই?খুব খুশি হবি? তখনও কি তোর সো কল্ড আইনের বিচারের উপর ধৈর্য রাখতে ইচ্ছে করবে?নাকি ঐ বাস্টার্ডকে কেটে, রক্ত দিয়ে গোসল করার ইচ্ছে জাগবে?একটিবার ভেবে বলিস ভাই, কেমন?”,খুব শান্ত অথচ চকচকে ধারালো ছুড়ির মতো ধার শানের কথাগুলোয়।
জমে বরফ হয়ে যায় পরশের পুরো শরীর।এতো ঘৃন্য আর জঘন্য একটা সত্য লুকিয়ে আছে তা পরশ ঘুণাক্ষরেও আন্দাজ করতে পারে নি।চোখ বুজে কল্পনা করে শানের কথা গুলো।শানের স্থানে নিজেকে আর পাখির স্থানে বুশরাকে ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে পরশের।কয়েক মূহূর্তেই অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শানের দিকে।
“প্লিজ।আমি ওকে এমন মৃত্যু দিতে চাই যার জন্যে ও প্রতিটা মূহূর্ত মূমূর্ষের মতো কাতরাবে”
“ব্যাস, অনেক বলেছিস।আমি স্বীকার করছি আমি পাখিকে আঘাত করেছি।এতে ওর মিসক্যারেজ হয়।যেটা আমি পরে জানতে পারি। জানলে কখনোই আমি ওভাবে আঘাত করতাম না।কিন্তু রেইপ!
এটা কোনদিনও আমি করিনি।এতোটাও নোংড়া, নিচু মানসিকতা আমার নয়।আর আমি কোন স্যাডিস্ট নই।আমার কার্য হাসিল করে আমি চলে এসেছি।হ্যা যদিও পাখি ধরে নিয়েছিলো আমি ওর ক্ষতি করব কিন্তু ও ভুল ছিলো।কারণ আমি সেখানে দলিলে সাইন টা নেয়ার উদ্দেশ্যেই গিয়েছি। আফটার অল আই’ম আয়ান।ওকে? যে ইউজ্ড ম্যাটারিয়ালসে হাত দেয় না।নিউ ম্যাটারিয়ালস পারসেচ করে তারপর সেখানে হাত দেয়।”,নিজের শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে দাম্ভিকতার স্বরে শেষের কথাটা বলে আয়ান।
রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে শানের। মুখ দিয়ে বিশ্রী একটা নোংড়া শব্দ বলে এগিয়ে যায় আয়ানের সামনে।
“যতোটা মিথ্যা বলবি তার তিনগুন সুদে আসলে আসল শাস্তি সহ ফেরত পাবি।আমি তোকে একবারে মারব না রে। প্রতিটা সেকেন্ডে সেকেন্ডে মারব রে। যতোটা আঘাত আমার পাখিকে করেছিস তার থেকেও হাজার হাজার গুনে বেশি আঘাত করব আমি”
বলতে বলতেই শানের ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে।আয়ানের চোখে চোখ রেখেই শান ফোনটা বের করে আনে।একপলক ফোনের দিকে তাকিয়ে রিসিভ করে নেয়।
“হ্যা আনভীর, বলো”
“স্যার ম্যামের ফরেনসিক রিপোর্ট এসে গেছে।যা আঁচ করেছিলাম তাই।”
“রিপোর্ট আমার ড্রয়ারে রেখে লক করে রাখো।আমি আসছি কিছুক্ষন পর”,বলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনটা রেখে দেয় শান।
পরশ শানের মনের অবস্থা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছে।কাঁধে হাত রেখে বলে”এদিকে আয়”
“আরে কেউ তো এক গ্লাস পানি দাও!প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে রে ভাই”,জোড়ে শব্দ করে কথাটা বলে আয়ান চেয়ারে ধপ করে বসে।
শান ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই সিস দেয় আয়ান।
“আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে, আয়ান সত্যি বলছে।আই মিন ও পাখির সাথে….. ”
“একটা ক্রিমিনালের কথা বিশ্বাস করছিস?”
“আচ্ছা বাদ দে, তোর বাড়ির দারোয়ানও কি বিয়েতে গেছিলো।এতো বড় ঘটনা ঘটলো সে তোকে ইনফর্ম করলো না?”
“না।আমার মনে হয় ও সবটা জানে”,বলতে বলতে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে শানের।
মাথা দুইবার উপর নিচ করে পরশ বলে,”ওকে তো তাহলে লাগবেই”
স্বগতোক্তি করে শানের দিকে তাকিয়ে মিনমিনে স্বরে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলে, “কেইস— ফাইল—করবি কি?”
“উুহু একদমই না।আমি জানি রেইপ কেইস রেইপের থেকেও কতোটা জঘন্য হয়।কেইস ফাইল হবে তবে তাতে রেইপটা উঠবে না।বাকিটা যা করার তোকে করতে হবে”,বলেই শান অন্যদিকে নজর রাখে একধ্যানে
“বুঝলাম।তোর ফোন বাজছে ”
পরশের কথায় সম্বিৎ ফিরে শান ফোন কানে নেয়।
“হ্যালো ভাইয়া,ভাবির জ্ঞান ফিরেছে”,রনির কথায় গা কাঁপা শুরু করে শানের।
কম্পিত কন্ঠে বলে,”আআমি আআসছি”
ফোনটা পকেটে ভরে নিজেকে প্রস্তুত করে পাখির সামনে যাওয়ার জন্যে।
“কি হয়েছে?পাখি ঠিকাছে?”
“ওওর সেন্স এসেছে পরশ।ককিন্তু আআমি ওওওকে ফেইস করব কি করে ভাই”,অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শান।
পরশ কাঁধে হাত রেখে বলে,”কিছু কিছু বাস্তবতা আমাদের ভেঙ্গে গুড়িয়ে নতুন করে তৈরী করে।কিছু অভিজ্ঞতা না চাইতেও জ্ঞানের খাতায় জুড়ে যায়।যেগুলো চাইলেও আমরা পাশ কাটাতে পারি না।ধরে নে এটাও তোর লাইফে সেরকম কিছু একটা হতে চলেছে।আল্লাহ্ ভরসা তুই সামলাতে পারবি।তোর মতো পুরুষ যদি পাখিকে মেনে নিতে পারে তাহলে তাকে সামলেও নিতে পারবে”
#আসক্তি২
পর্বঃ৫০
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
স্টেয়ারিং এ হাত রেখে চোখ বন্ধ করে গাড়িতে বসে আছে শান।সে জানে না পরমূহূর্তেই তার জন্যে কি অপেক্ষা করছে।ক্ষনকাল পরেই চোখ খুলে কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।এরপর ছুটে চলে মেডিকেলের রাস্তায়।
রাস্তার দুইপাশে কতো কিছু ছুটে চলেছে।ছুটে চলেছে হাজারও জীবন।মনের মাঝে হাজারও কল্পনা নিয়ে শেষমেশ এসে পৌঁছায় গন্তব্যে। গাড়ি পার্ক করে পা রাখে গাড়ির বাহিরে।শানের মনে হচ্ছে পায়ের তলার মাটিটা কাঁপছে মৃদু।পরপর কতোগুলো শুকনো ঢোক গিলে এগিয়ে চলে ভিতরের পথে।সম্মুখেই দেখা মেলে ডক্টর আনভীরের।পাশ কাটিয়ে যায় শান।কারণ মাথায় এখন একটাই চিন্তা চলছে, “কিভাবে সামলাবো সবটা!”
অন্যদিকে ধ্যান দেয়ার মতো মনমানসিকতা শানের নেই।
“স্যার “,ক্ষীনস্বরে ডেকে ওঠে আনভীর।
সাড়া না দিয়েই শান অদ্ভুত দৃষ্টিতে ঘাড় বাঁকিয়ে পিছনে তাকায়।
“ম্যামের জ্ঞান ফিরেছে ”
আনভীরের কথায় মাথা উপর নিচ করে শান চলে যেতেই।আবার পিছনে ডাকে আনভীর।
“স্যার রিপোর্টটা আপনার ড্রয়ারে রেখে লক করেছি, এই যে চাবি টা”,বলেই একটা চাবি ধরিয়ে দেয় আনভীর
“এতো দেরি হলো কেন রিপোর্ট আসতে?”
“আপনিই তো বলেছিলেন স্যার ব্যপারটা যেন গোপনীয়তা আর নমনীয়তার সাথে করা হয়।বিশ্বস্ত মানুষ দ্বারা করতেই একটু দেরি হলো স্যার”
“আচ্ছা, যাও”
___________
আইসিইউ রুমের সামনে বাড়ির সকলেই অপেক্ষা করছে।টনক নড়ে শানের।ভ্রুকুচকে রনির দিকে তাকায়।এগিয়ে চাপাস্বরে কপোট রাগ দেখিয়ে বলে,”সবাই কেন?কেউ কি ভিতরে গেছিলো?পাখির সাথে কথা বলেছে নাকি?”
“না ভাইয়া।আমি কাউকেই ভিতরে এলাউ করিনি।টেনশন করো না”
হাঁফ ছেড়ে বাঁচে শান।সবার দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।সবার চোখে মুখেই আতঙ্কের ছাপ।কিছু জানার জন্যে উৎসুক।
শান চোখ নামিয়ে দরজায় শটান হয়ে দাঁড়ায়।এলোমেলো চুল গুলো পাঁচ আঙ্গুলে সেট করে নেয়।চশমার ফ্রেমে হাত রেখে ঠিক করে নেয়।পিছনে ঝুলে যাওয়া শার্টের কলারটা টেনে টুনে ঠিক করে নেয়।হাতের ঘড়িটা ঠিক করে শুকনো ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নেয় জিহ্বা দিয়ে।শানের মনে হচ্ছে পৃথিবী যদি এখানেই থেমে যেত! তাহলে হয়ত এ দিনটার মুখোমুখি হতে হতো না।
পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখে রনি।
“তুমিই যদি এরকম করো তাহলে কেমন করে হবে ভাইয়া!তোমায় যে অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে হবে! ”
শান নিজেকে এইবার পুরোপুরি প্রস্তুত করে পাখির সামনে যাওয়ার জন্য।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে।
চট করে ফোনটা হাত নিয়ে মিছেমিছি স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে ফোন স্ক্রোল করে ইকরার উদ্দেশ্যে বলে,”ইকরা মহারানীর জ্ঞান ফিরলো তবে!এবার তুমি যাও, মহারানীর সেবায় মহারাজ হাজির”
বলেই মুখে জোড়পূর্বক মিথ্যে হাসি টেনে ইকরার দিকে তাকায় শান।বেডে শুয়ে থাকা পাখির দিকে তাকানোর মতো সাহস কেন জানে না পাচ্ছে না সে।
শঙ্কিত মুখে ইকরা কেবিন ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। শান আরো বেশি করে ফোনের দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করে। চোখের মণিটা সামান্য ঘুরিয়ে পাখির দিকে তাকাতেই বুঝতেই পারে একধ্যানে চেয়ে আছে সে উপরের দিকে।শান নিজেকে কোনমতে ধাতস্ত করে পাশে রাখা টুলটায় বসে।
“কেমন আছেন ডাক্তার সাহেব?”
বসতে বসতেই কানে আসে পাখির ভাঙ্গা কন্ঠের কথাটা।মাত্রাতিরিক্ত চিৎকারে গলার স্বর ভাঙ্গে পাখির।বসতে গিয়েও থমকে যায় শান।চাপা আর্তনাদ টা ভিতরে মাটি চাপা দিয়ে চট করে বসে পরে।তাকিয়ে দেখে পাখির দিকে।ঠিক আগের মতোই উপরের দিকে তাকিয়ে পাখি।
বাম হাতটা দুইহাতের মুঠোয় ভরে শান জবাব দেয়,”রাজা এতোক্ষন ভালো ছিলো না।এখন, এখন অনেক ভালো।কিন্তু রানী?”
হাতটা খুব সন্তোর্পনে শানের হাতের ভাঁজ থেকে বের করে আনে পাখি।ঠোঁটের কোণের কাটা দাগটা এখনও দগদগে।কপালের কাটা দাগটায় মেডিসিন লাগানো।শান মাথা তুলে একে একে সবটাই পরোখ করে পাখির মনোভাব বোঝার চেষ্টা করে।
মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “বললে না তো এখন কেমন লাগছে?”
পাখি মাথার উপর থেকে শানের হাতটা সরিয়ে বলে,”প্রতিটা সুন্দর জিনিসেরই একটা করে ভয়ানক দিক থাকে।দেখুন না,পৃথিবী কতো সুন্দর তবে তা এখন ভয়ানক সুন্দরে পরিনত হয়েছে”
“আচ্ছা বাদ দাও এসব।অতিরিক্ত কথা হয়ে যাচ্ছে। বাড়িটা খুব ফাঁকা লাগছে তোমায় ছাড়া। আজকেই বাড়ি নিয়ে যাবো “, মজাকের স্বরে কথাটা বলে পাখির দিকে তাকায় শান।
অনুভূতিহীন চোখ দুটো তিড়তিড় করে কাঁপছে পাখির।ঠোঁট এলিয়ে স্মিত হেসে বলে,”আইসিইউ থেকে কোন রোগীটা ডিরেক্ট বাড়ি যায় ডাক্তার বাবু!”
পাখির কথায় স্তম্ভিত শান।
“কেন দেরি করলেন?আপনি না বলেছিলেন জীবনের শেষ নিঃশ্বাসের শেষ বিন্দু পর্যন্ত পাশে থাকবেন!তাহলে কেন ২.১৫ মিনিট আমার পাশে থাকলেন না।কেন একা ছাড়লেন আমায়?কেন এভাবে আপনার উপর নির্ভরশীল করে গড়ে তুললেন?আমি তো জীবনযুদ্ধে সর্বদাই একা ছিলাম।একা লড়েছি, একা চলেছি। কেন এভাবে পরনির্ভরশীল করে…… “,
বাকি কথা আর বলতে পারে না পাখি।কেমন যেন দম খাটো হয়ে আসে।
শান পাখির পুরো কথাগুলো মাথানত করে শুনে চলেছে।সে জানে এই মূহূর্তে পাখিকে থামানো সম্ভব না।কিন্তু পাখির থেমে যাওয়ায় চট করে মাথা তুলে তাকায় শান।চেয়ে দেখে, মুখে ব্যথার নীল বেদনায় বিষিয়ে উঠছে পাখি।হাতটা ধরে বলে,”আমি তোমার সব কথা শুনবো জান।সব অভিযোগ মাথা পেতে মেনে নেবো।শুধু তুমি একটু সুস্থ হও”
মূহূর্তেই চোখের পাতা বুজে নেয় পাখি।কোণ দিয়ে দুইপাশে গড়িয়ে পরে শ্রাবণধারা। শান হাত উচিয়ে মুছে দিতেই পাখি চোখ খুলে মুখ ফিরিয়ে নেয় অপরপাশে।আবারও হাতটা বের করে আনে শানের মুঠো থেকে।শান ব্যপারটা বুঝতে পেরে ভ্রুকুচকে সবটা বোঝার চেষ্টা করে।
“ওরা আমায় বাঁচিয়ে কেন রাখলো?মারলো না কেন?কি করবো বেঁচে থেকে? আমার সন্তান সে তো সেই কবেই মরে গেছে।ডাক্তার বাবু ওকে না, ওকে না আয়ান মেরেছে বুঝেছেন!কি করেছে জানেন,আমার এই যে, এই যে তলপেট এখানে না জোড়ে একটা লাত্থি দিয়েছে।”,হড়বড়িয়ে নিজের তল পেটে হাত রেখে বলে পাখি।
শানের বুকের ভিতর তোলপাড় উঠে যায় মূহূর্তেই।কারণ ঝড়টা দোরগোড়ায় এসে গেছে।
“ইনায়াহ্’র ঘরে যখন ও আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো, আমি ভাবছিলাম ও আমার ক্ষতি করবে।তাই পালানোর জন্যে পথ খুঁজছিলাম।বিছানার চারিদিকে দৌঁড়ে বেড়িয়েছি ওর থেকে বাঁচতে।ও তখন ভীষণ রেগে যায়।আমি দরজার দিকে এসে ছিটকিনিটা খুলে বের হতেই আমায় ধরতে ওড়না টা ধরে ফেলে। ছুড়ে মারে মেঝেতে।এরপর আমার না, চুলের মুঠি ধরে ফেলে।আমি ব্যথায় ককিয়ে উঠি।এরপর দেয়ালে সজোড়ে ধাক্কা মারে আমায়।ব্যথার চোট সামলাতে না পেরে পরে যাই নিচে।তখন ও দাঁতে দাঁত চেপে আবারও আমায় নিচেই কপাল ঠেকিয়ে ধাক্কা মারে।এই যে দেখেন না কপাল টা কেটে গেছে গো।এরপর মাথায় হাতের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঘাত করে বলে,’তোর শরীরের প্রতি বিন্দুমাত্র লোভ আমার নাই।দলিল টা সাইন কর আমি চলে যাব।যতো ছুটবি ততো কাঁদবি’।
আমি দলিলটা হাত বাড়িয়ে চেয়ে নেই ;বাঁচতে।দ্রুত কাঁপা কাঁপা হাতে সাইন করে দেই।তখন ও কিড়মিড় করে বলে,’আমি সাপকে আধমরা করে ছাড়ি না’
আমি ওর কথায় আবারও উঠে ভয়ে দরজা খুলে বাহিরে চলে আসি। ও আবার আমার পিছু নেয়।তখন মনে হয়েছিলো এবার আমার জীবন বুঝি শেষ হবে।দৌঁড়ে আসি ডায়নিং এর কাছে।কাপাঁ কাপাঁ হাতে ফলের ছুড়িটা হাতে নিতেই ও খেপে যায়।দ্রুত এসে ছুড়িটা কেড়ে নিয়ে আমার দুইগালে কষিয়ে থাপ্পোর দেয়।আমি না খুউউব ব্যথা পেয়েছিলাম।কেঁদে কেঁদে কতো চিৎকার করেছি কেউ শোনে নি।এরপর জীবন বাঁচাতে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতেই ও আরো খিপ্ত হয়।আমি রান্না ঘরের দরজাটা খোলা পেয়ে ঢুকে পরি।আয়ান কতোগুলো লাত্থি দিতেই ছিটকিনি টা খুলে যায় রান্নাঘরের। এই ডাক্তার সাহেব, ও আমারে তল পেটে লাত্থি যখন দেয় তখন আমি রান্নাঘরের পিছন দেয়ালে ঐ যে লোহার স্ট্যান্ড গুলো, যেখানে হাতা খুন্তি রাখি সেখানে গিয়ে পরে যাই।শরীর টা খুব দূর্বল হয়ে চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে গেছিলো আমার। মাথার পিছনে হাত দিয়ে দেখি অনেকখানি লোহা ঢুকে যাওয়ায় মাঝে মাঝে গর্ত হয়ে গেলো।ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলো। এই যে, এই যে এখানে।ডাক্তার ঐ জায়গা গুলোর চুল উঠায় দিছে না? “,মাথার পিছনে হাতরিয়ে বলে পাখি।
শান চোখ বন্ধ করে একটিবার সেই ঘটনাটা কল্পনা করতে থাকে।কাঁপতে থাকে পুরো শরীর।
“আমি যখন মাথা চেপে ধরে শরীরের ভার আর ধরে রাখতে পারছিলাম না।তখন ও আবারও আমার তলপেটে লাত্থি মেরে আমায় ফেলে দেয়।দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে খাড়া কোমড়ে পরে যাই মেঝেতে।আর তখনি, তখনি আমার ব্লিডিং শুরু হয় ডাক্তার।এই ডাক্তার সাহেব আমার বাচ্চাটা তখনি শেষ হয়ে যায় গো।নিচের দিকে একবার তাকিয়ে আয়ানের দিকে দেখতেই ও হকচকিয়ে খারাপ একটা গালি দিয়ে বলে,’তুই কি প্রেগন্যান্ট ছিলি’
আমার পুরো পৃথিবী তখন অন্ধকার হয়ে আসছিলো।মুখের সামনে আয়ানের মুখটা ঝাপসা হয়ে এলো।আধখোলা চোখ দুটো দিয়ে একনজর দেখে মাথা উপর নিচ করে বললাম ‘হ্যাহহ’
মনে হচ্ছিলো মরে যাচ্ছি।তলপেটে খামচি দিয়ে ধরলো ভিতরে।চিনচিন করে ব্যথার পরিমান বেড়ে গেলো দ্বিগুন।পুরো শরীর আমার থরথর করে কাঁপছিলো।মনে হচ্ছিলো মরে যাচ্ছি কিন্তু মরছি না।আয়ান বাচ্চার কথা শুনে ছটফট করা শুরু করলো।আর তারপর আমি কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। দুচোখের কোণা দিয়ে অজস্র জোনাকিপোকা বেড়িয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু আমার কান খাড়া।কানে ভেসে আসলো রনি আর রাফির গলা।ওরা গলা উচিয়ে আমায় ডাকছিলো।চোখ খুলতে পারলাম না। গলা দিয়ে কথা এলো না। কান দিয়ে সবই শুনতে পেলাম।বুঝলাম আয়ান রান্নাঘরের জানলা দিয়ে লাফ দিলো বাহিরে।”
“চুপ করো, চুপ করো পাখি।আমি আর নিতে পারছি না। এর থেকে আমাকেই মেরে ফেলো জান।আমার জীবন কেন থেমে গেলো না কাল?কেন রাস্তায় চলতি পথে মৃত্যু হলো না আমার”,বসে দুহাতে কান চেপে চোখের দুকোনা ভিজিয়ে বলে শান।
“আচ্ছা ডাক্তার সাহেব, রনি সব ঘর খুঁজলো রান্না ঘরের দরজাটা ঠেলে কেন ভিতরে তাকালো না।একটু খেয়াল করে যদি খুঁজত!আমি তো ওখানেই ছিলাম!
আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেললো, আমার দুনিয়াকে আঁধার করে দিলো।আমার সারা শরীরের দাগ লাগিয়ে দিলো।না না একদম ছোঁবেন না আমায়। আমি অপবিত্র, আমি নোংড়া”,শানের হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে বলে পাখি।
শান টুল ছেড়ে উঠে পাখির দুগালে হাত রেখে কপালে, গালে, নাকে, চোখে, মুখে, ঠোঁটে অজস্র চুমুর স্পর্শ দিতে থাকলো।ক্ষত হওয়া প্রতিটা স্থানে ঠোঁট বুলিয়ে দিতেই কান তালা মেরে যায় পাখির গগন বিদারী চিৎকারে।
“ওরা আমায় বাঁচতে দিলো না ডাক্তার সাহেব,আমার সন্তানকে বাঁচতে দিলো না।আমার সম্ভ্রমকে বাঁচতে দিলো না।আমার সুখের পৃথিবী কেড়ে নিলো ওরা।”
পাখির চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যায় মূহূর্তেই। জমে যায় আইসিইউ কেবিনের বাহিরে মানুষের ঢল।দরজা ঠেলে আনভীর ভিতরে আসতেই পাখির কপালে ঠোঁট ঠেকিয়ে পিছনে হাত উঠিয়ে বেড়িয়ে যেতে বলে শান।
“কিচ্ছু হয় নি তোমার।তুমি তো কোন পাপ করো নি।তাহলে এভাবে কেন কষ্ট পাচ্ছো।এভাবে চিৎকার করো না জান।তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে।সদ্য অপারেশান হয়েছে গো।আমার নতুন করে গড়ে তোলা সব স্বপ্ন ভাঙ্গিয়ে দিও না।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচব, বলো না আমায়”
“আমার বেঁচে থাকার সকল কারণ মাটিতে মিশিয়ে দিলো……ওরা”,বলেই সেন্স হারিয়ে ফেলে পাখি।
শান উঠে পাখির দুগালে হাত রেখে বলে,”এইই না না না, একদম না হুহহ!কি হলো তোমার।পাখি?”
বলেই ডান হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে ক্যানুলা খুলে রাখা।শানের আর বোঝার বাকি থাকে না কে খুলেছে এটা।
দ্রুত বেডের অপর পাশে গিয়ে নতুন করে ক্যানুলা লাগাতে বার বার হাত কেঁপে ওঠে শানের।
চিল্লিয়ে বলে,”আনভীর”
দরজা ঠেলে ভিতরে হন্তদন্ত হয়ে ঢোকে আনভীর।শান হাতের ইশারায় পাখির হাত দেখায়। কিন্তু মুখে কিছুই উচ্চারন করতে পারে না।
“ওহহ শিট,স্যার কখন হলো এসব?”,বলতে বলতে দ্রুত এগিয়ে যায় সেদিকে।
শান মুখে হাত দিয়ে নজর এদিক সেদিক করে আনভীরকে বলে,”ও বাঁচবে তো আনভীর”
কথায় আছে বিপদে জ্ঞানশক্তি লোপ পায়। শানেরও তাই।আনভীর বুঝতে পারে শানের মাথা এখন পুরো হ্যাং হয়ে গেছে।ক্যানুলা দ্রুত লাগিয়ে শানের কাছে এসে হাত ধরে পাশে বসায়।
“স্যার একটু শান্ত হোন।ক্যানুলা খুলে যাওয়াতে ম্যামের কিছু হবে না স্যার।এরকম করবেন না”
“ও এতো হাইপার কেন হলো আনভীর?যখন ঘরে ঢুকলাম তখন শান্তশিষ্ট ছিলো।কথা বললো আমার সাথে।তারপর হঠাৎই ওসব কথা বলতে বলতে এতো হাইপার হয়ে গেলো…….”
“স্যার কাল তো আপনাকে বললামই ম্যামের ব্রেইনে প্রচুর আঘাত পরেছে।তার তো একটু ইফেক্ট থাকবেই।সচরাসচর এরকম কেইসে পেশেন্ট কিছুদিনের জন্যে মানসিক রোগীতে পরিনত হয় বা শর্ট টাইমের জন্যে ম্যামরি লস হয়ে যায়।ভাগ্য ভালো সেরকম কিছুই হয় নি।”
🌸🌸
চোখ জ্বলছে শানের।তবুও এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে অবচেতন পাখির দিকে।বুকের ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসে লম্বা দীর্ঘশ্বাস। তাকিয়ে দেখে পাখির চোখ দিয়ে পানি পরছে।পাখির হাতের উল্টোপিঠে চুমু একে দিয়ে একটু উঠে সন্তোর্পনে চোখ মুছিয়ে দেয় শান।
ফোনে কারো কল আসে।স্ক্রীনে না তাকিয়েই কলটা রিসিভ করে কানে নিয়ে ক্ষীনস্বরে বলে,”হ্যালো”
“দারোয়ান ধরা পরেছে।একটিবার থানায় আসতে পারবি?যদিও রাত এখ…”
“আমি আসছি”,কঠিন কন্ঠে জবাব দেয় শান।
চলবে….
[