#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_31
কপি নিষিদ্ধ ❌
তিশা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ওসমান ঘুমিয়ে আছে,ওকে আর না ডেকে তিশা নিচে চলে যায়।নিচে যেয়ে দেখে আয়েশ,অবান্তিকা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।
তিশা : আমি কিছু করবো?
অবান্তিকা : না কিছু করতে হবে না,ওসমান ঘুম থেকে উঠেনি?
তিশা : না এখনো ঘুমাচ্ছে।
অবান্তিকা : উঠলেই বা কি আমার সাথে তো কথাই বলে না,আবার কবে যে আমাকে মামনি বলে ডাকবে।
অবান্তিকার মুখটা মলিন হয়ে যায়।
তিশা : চিন্তা করো না মামনি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
অবান্তিকা : হয়তো কখনো কোনোকিছু ঠিক হবে না।
অবান্তিকা মন খারাপ করে রান্না ঘরে চলে যায়।
তিশা : সব ঠিক হবে মামনি শুধু একটু অপেক্ষা করো।
সবাই একসাথে নাস্তা করে যার যার রুমে চলে যায়।
তিশাদের রুমে,
তিশা : একটা কথা বলার ছিলো।
ওসমান : হুম বলো।
তিশা : আমার একটা জিনিস চাই।
ওসমান : কি চাই?
তিশা : যদিও বার্থডে তোমার আমার তো তোমাকে কিছু দেয়া উচিত।
ওসমান : আমার বার্থডে তো কি হয়েছে তুমি যখন যা চাইবে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তোমাকে সব দেওয়ার চেষ্টা করবো।বলো তোমার কি চাই?
তিশা : মামনিকে ক্ষমা করে দাও।
ওসমান : কি!
তিশা : হ্যাঁ আমার আর এসব ভালো লাগে না,তুমি আর মামনি যেমন কষ্ট পাচ্ছো,আমাদেরও তেমন কষ্ট হচ্ছে,
প্লিজ মামনিকে ক্ষমা করে দাও।
ওসমান : তুমি তো জানো সব তাও কেন বলছো।
তিশা : ভুলে যাও সবকিছু ক্ষমা করে দাও মামনিকে।
ওসমান : না সম্ভব না।
তিশা : কেন সম্ভব না,তোমাকে কথাগুলো বলতে চাইনি তাও বলছি আজ তোমার মা তোমার কাছে আছে বলে তুমি এমন করতে পারছো,তুমি জানো বাবা মা না পাওয়ার হাহাকার কি?জানো বাবা মা ছাড়া কতো কষ্ট করে বাঁ’চতে হয়,উহুম জানো না,আমি জানি আয়েশা জানে আমাদের মতো এতিম বাচ্চারা জানে কতো কষ্ট করে আমাদের বাঁ’চতে হয়।তোমাদের বাবা মা আছে বলে তোমরা কতো ভালো খেতে পেরেছো ভালো কাপড় পরতে পেরেছো,ভালো স্কুল কলেজে পড়েছো।কিন্তু যাদের বাবা মা নেই তারা জানে কষ্ট কাকে বলে,
তিশার চোখ থেকে পানি পরছে,
জানো যখন দেখতাম মায়েরা তাদের বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতো,আদর করতো তখন না খুব কষ্ট হতো,
আল্লাহর কাছে সবসময় বাবা মা চাইতাম,আর তুমি কি না বাবা মা পেয়েও এভাবে অবহেলা করছো,আচ্ছা কি দোষ করেছে মামনি যার জন্য তুমি এমন করছো,মামনি কি কখনো তোমার খারাপ চেয়েছে?হ্যাঁ মানলাম সে তখন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো,সে নাহয় রা’গের মাথায় ম’রা মুখ দেখার কথাটা বলেছে তাই বলে তুমি এমন করবে,তুমি তার সে কথা টা শুনলে,কিন্তু এতো বছর তার চোখের পানি দেখলে না তার কষ্ট বুঝলেনা?কেনো তোমার পক্ষে মামনিকে ক্ষমা করা সম্ভব নয়,তুমি কি কখনো কোনো ভুল করো নি আর মামনি কি তোমায় ক্ষমা করে নি,মামনি তোমায় ক্ষমা করতে পারলে তুমি কেন পারবে না,তোমাকে আর কিছু বলার নেই,তোমার যা ইচ্ছে করো আমি আর কিছু বলবো না তোমায়।
তিশা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
তিশা অবান্তিকার রুমে আসে,
অবান্তিকা বই পড়ছিল,তিশাকে দেখে ওর পাশে বসতে বলে,তিশাও বসে পরে,
অবান্তিকা : কি হয়েছে মামনি,চোখ লাল হয়েছে কেন তুমি কি কেঁদেছো?
তিশা কিছু না বলে অবান্তিকার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকে,
তিশা : মামনি মাথায় বুলিয়ে দাও।
অবান্তিকা বুঝতে পেরেছে তিশার মন খারাপ তাই কিছু না বলে তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
চুলে হাতের পরোশ পেয়ে তিশা চুপটি করে শুয়ে থাকে,
কাঁদার ফলে মাথা চোখ ভারি হওয়ায় চুলে হাত বুলিয়ে দেওয়ায় তিশা আসতে আসতে ঘুমিয়ে পরে,কিছুক্ষণ পর তিশার ঘুম কিছুটা ভারি হলে অবান্তিকা ওর মাথা বালিশের উপর রেখে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।সামনে তাকিয়ে দেখে ওসমান দাঁড়িয়ে আছে,
অবান্তিকা : বাবা কিছু বলবে?
ওসমান মাথা নাড়ায়।
অবান্তিকা : আসো ভেতরে এসো।
ওসমান রুমের ভেতরে এসে অবান্তিকার হাত ধরে বেডে বসিয়ে নিজে মেঝেতে দু হাটু গেড়ে বসে অবান্তিকার হাত ধরে বলে,
সরি মামনি।
অবান্তিকা চোখ বন্ধ করে ফেলে,বন্ধ চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে।
ওসমান : সরি মামনি,আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি,ছোট একটা ভুলের অনেক বড় শাস্তি দিয়েছি,তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমিও ভালো থাকতে পারিনি আমারও অনেক কষ্ট হতো,তুমি তো বাবার সাথে শেয়ার করে কষ্ট টা একটু হলেও কমাতে পেরেছো কিন্তু আমি তা পারিনি সব সময় বুকের মাঝে কষ্টটা পুষে রেখেছি,
ওসমান,অবান্তিকা দুজনের চোখ দিয়ে পানি পরছে,
ওসমানের গলার আওয়াজ শুনে তিশার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ওসমান অবান্তিকা কাঁদছে।তিশা কিছুই বুঝতে পারছেনা প্রশ্ন করবে তার পূর্বেই ওসমান বলতে শুরু করে,
সবসময় ভাবতাম তুমি ম’রে যাওয়ার কথা বলে আমাকে কষ্ট দিয়েছো কিন্তু তিশা আমাকে বুঝিয়েছে তুমি ভুল ছিলে না তুমি আমার খারাপ চাওনি,কারণ মায়েরা কখনো সন্তানের জন্য খারাপ কিছু চায়না।মামনি সরি,তুমি খুব ভালো মা,আর আমি খুব খারাপ সন্তান,তোমাকে খুব কাঁদিয়েছি সরি মামনি,মামনি ক্ষমা করবে না?
অবান্তিকা ওসমানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
কাঁদতে কাঁদতে,
সরি তো আমার বলা উচিত তখন তোমার কথা না শুনে বিয়ে করার জন্য জোর না করলে এতো কিছু হতো না,
সরি বাবা।
ওসমান : আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম,তুমিও আমাকে ক্ষমা করে দেও।
অবান্তিকা : তোমাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি।
ওদের কথা শেষ হতেই তিশা জোরে “ইয়াহু” বলে উঠে,ওর গলার স্বর শুনে ওসমান অবান্তিকা চমকে যায়।
তিশা : ইয়াহু আমি পেরেছি তোমাদের মন মালিন্য দুর করতে,এবার আমাকে থ্যাঙ্ক ইউ বল।😁
ওসমান অবান্তিকা ওরা কথা শুনে হেসে দেয়।
তিশা ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
কি হলো থ্যাঙ্ক ইউ বলো।
ওসমান অবান্তিকা মুচকি হেসে ওকে থ্যাঙ্ক ইউ বলে।
অবান্তিকা : তোমার জন্য আজ সব ঠিক হলো,তুমি
সব ঠিক করে দিবে আমার সেই বিশ্বাস ছিল,থ্যাঙ্ক ইউ মামনি।
তিশা উত্তরে মুচকি হাসি দেয়।
নিচ থেকে ওয়াহিদের ডাক শুনে অবান্তিকা নিচে চলে যায়।
অবান্তিকা চলে যেতেই ওসমান তিশার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
ওসমান : থ্যাঙ্ক ইউ হৃদয়হরণী আমার জীবন আসার জন্য,আমার সব প্রবলেম গুলো ঠিক করে দেওয়ার জন্য।তুমি আমার জীবনকে আসলে আর আমার সব সমস্যা এক নিমিষেই মিটিয়ে দিলে।
ভালোবাসি জানপাখি।
তিশা : কখনো কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে,
যেকোনো বিষয় সমস্যা হক সবার আগে আমায় বলবে,সোলিউশন বের না করতে পারি অন্তত শুনতে তো পারবো,আজ একটা কথা বলে রাখি কখনো আমাকে মিথ্যা বলবে না যেই পরিস্থিতি হোক না কেনো আমাকে মিথ্যা বলবে না।
ওসমান : আচ্ছা।
তিশা : আমি সবসময় সব পরিস্থিতিতে তোমার পাশে থাকবো,কিন্তু তুমি কখনো আমাকে তোমার থেকে দুরে সরিয়ে রেখো না,আমি সহ্য করতে পারবো না।
ওসমান : তুমি সব সময় এই কথা বলো কেনো?
তিশা ওসমানকে জড়িয়ে ধরে,
তিশা : আমার ভয় হয়,সব সময় মনে হয় এই বুঝি তুমি আমার থেকে দূরে সরে গেলে।আমি তোমাকে হারাতে চাইনা ওসমান।তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি।
ওসমান তিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
ওসমান : কোনো ভয় নেই,মৃ!ত্যু ছাড়া কখনো আমাদের মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি হবে না।
তিশা কিছু বলে না ওসমানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে।
ওসমান তিশার মাথায় চুমু দেয়।
ওদের ধ্যান ভাঙ্গে কারো গলা খাক্কারিতে।
আয়েশা : মামনি লাঞ্চ করার জন্য নিচে যেতে বলেছে।
তিশা : আসছি।
আয়েশা চলে যায়।
ওসমান তিশাও হাত মুখ ধুয়ে নিচে যায়।
ওরা একসাথে লাঞ্চ করে,ওসমান অবান্তিকার মধ্যেকার মন মালিন্য দুর হওয়ায় সবাই খুব খুশি।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে,
হল রুম খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে,
গেস্টরা আসতে শুরু করেছে,
তিশা : শাড়ির কুঁচিটা ঠিক করে দেও তো।
ওসমান : দেও ফুলগুলো আমি লাগিয়ে দেই।
ওসমান তিশার কানের কাছে তিনটি লাল গোলাপ লাগিয়ে দেয়।
তিশা : চুল কি বাঁধবো?
ওসমান : উহুম ছাড়াই ভালো লাগছে।তুমি যখনই কালো শাড়ি পরো তখনই তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে।
ওসমান আঙ্গুলে একটু কাজল নিয়ে তিশার কানের পিছে লাগিয়ে দিয়ে,পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
ওসমান : এবার আমার ছাড়া আর কারো নজর লাগবে না।
তিশা : তাহলে লাভ হলো কি সেই তো তোমার নজর লেগেই গেলো।
ওসমান : আমার বউয়ের শুধু আমার নজরই লাগবে অন্য কারো না বুঝেছেন মহারানী।
তিশা : জ্বি জনাব বুঝেছি,এবার চলুন নিচে যাওয়া যাক।
ওসমান : আরেকটু থাকি।
তিশা : জ্বি নেহি, নিচে যেতে হবে।
ওসমান : যথা আগ্গা মহারানী।
তিশা মুচকি হেসে ওসমানের হাত ধরে নিচে চলে যায়।
নিচে যেয়ে দেখে সবাই চলে এসেছে।
ওরা সবার সাথে কুশল বিনিময় করে,
কিছুক্ষণ পর ওসমান তিশার হাত ধরে একসাথে কেক কাটতে নিবে তখনই,
Happy Birthday To You
Happy Birthday To You Osman.
কারো গলার স্বর শুনে সবাই সদর দরজার দিকে তাকায়।
অবান্তিকা অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে,
জেসমিন!
#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_32
কপি নিষিদ্ধ ❌
অবান্তিকা : জেসমিন।
জেসমিন সদর দরজার দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। পার্টিতে উপস্থিত কেউই জেসমিনকে আশা করেনি।জেসমিন অবান্তিকার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়।
কেমন আছো আন্টি?
অবান্তিকাও ভদ্রতার খাতিরে বলে,
হুম ভালো আছি।
রাগ করে আছো আমার উপরে,অবশ্য রাগ করাটাই স্বাভাবিক আমি যা করেছি,আসলে তখন বুঝতে পারিনি,সিহাবকে ভালোবাসে ওকে অ’ন্ধে’র মতো বিশ্বাস করেছি ও যা যা বলেছে তাই তাই করেছি,ওর
কথা শুনে আমি মায়ের মতো আন্টির বিশ্বাস ভে’ঙেছি তোমার পরিবারের ক্ষ’তি করতে চেয়েছি,কিন্তু আজ বুঝতে পেরেছি আমি কতটা খারাপ কাজ করেছি,আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি,আমাকে মাফ করে দাও আন্টি।
জেসমিন অবান্তিকার হাত জড়িয়ে,
আমাকে মাফ করে দেও আন্টি,আমি তো তোমার মেয়ের মতো আমাকে মাফ করে দেও,মেয়ে হলে বুঝি মাফ করতে না?
জেসমিনের কথায় অবান্তিকার মন গোলে যায়,
আচ্ছা মাফ করলাম তোমায়,মানুষ মাএই তো ভুল হয়,
এটা তোমার প্রথম ভুল ছিল তাই ক্ষমা করেছি আর কখনো এমন ভুল করবে না।
হুম,আর কখনো এমনটা হবে না।
জেসমিন ওয়াহিদের কাছে যায়,
সরি আঙ্কেল,আপনিও আমাকে মাফ করে দিন।
তোমার আন্টি যখন তোমাকে মাফ করেছে তখন আমিও তোমাকে মাফ করে দিলাম,তোমার বাবা,মা কেমন আছে?
আমার বাবা মা বেঁ’চে নেই।
কি!
হুম,৫ বছর আগে তারা মা!রা গেছে।
কিভাবে?
থাক না আঙ্কেল এখন এই সুখের মুহূর্তে দুঃখের কথা না হয় নাই বললাম।
জেসমিন ওসমান,ওমরের কাছে যায়,
তোমরাও আমাকে মাফ করে দাও।
ওসমান,ওমর : আচ্ছা ঠিক আছে।
জেসমিন : ওসমান এটা তোমার বার্থডে গিফট।
ওসমান : থ্যাঙ্ক ইউ।
জেসমিন : চলো এবার কেক কা’টি।
জেসমিন যেয়ে ওসমানের পাশে দাঁড়ায়,ওসমানের হাতে ছু!ড়ি দিয়ে নিজে ওসমানের হাত ধরে কেক কা’টতে যাবে তখনই তিশা ওসমানের হাত ধরে,তিশা
জেসমিনের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে ওর হাত থেকে ওসমানের হাত ছাড়িয়ে নিজে ওসমানের পাশে দাঁড়ায়,
তিশা মুচকি হেসে জেসমিনকে বলে,
ননদিনী আপনার সাথে তো আমার পরিচয়ই হয়নি।
ননদিনী!
হুম ননদিনী,আপনি বয়সে আমার বড় হলেও সম্পর্কে আমি আপনার বড়,আমি আপনার বড় ভাইয়ের স্ত্রী,
আর এটা কোন ধরনের বে’য়া’দ’বি বড় ভাইয়ের নাম ধরে ডাকছেন কেন,সুন্দর করে ওসমান ভাইয়া বলবেন।
কি আমি ওসমানকে ভাইয়া বলবো?
হুম বলবেন,ওসমান আপনার দু বছরের বড় তাই আপনি ওকে ভাইয়া বলবেন।ওসমান অনেক দেরি হয়ে গেছে এবার কেক কা’টো।
তিশা ওসমানের হাত ধরে কেক কা’টে,
সবাই ওসমানকে উইস করে,
ওসমান প্রথমে অবান্তিকা,ওয়াহিদকে কেক খাইয়ে দেয়,তারপর তিশা,ওসমান,আয়েশাকে খাইয়ে দেয়,
ওসমান জেসমিনকে কেক খাইয়ে দিতে নিলে তিশা ওসমানের হাত থেকে কেক নিয়ে জেসমিনকে খাইয়ে দেয়।আর মুচকি হেসে বলে,
ওয়েলকাম ননদিনী।
পার্টি শেষ করে সবাই সবার রুমে চলে যায়।
জেসমিনকে ওসমানের পাশের রুম দেওয়া হয়েছে।
জেসমিন রুমে এসে বেডে ব্যাগটা ছু’ড়ে মা’রে।
এতোক্ষণ খুব কষ্টে রা’গটা কন্ট্রোল করে ছিল।
জেসমিন রা’গে ফুঁ’সছে,
তিশা চেয়েছিলাম তোমার কোনো ক্ষ’তি করবো না কিন্তু তুমি নিজেই নিজের মৃ!ত্যু ডেকে এনেছো, তোমাকে আমি এতে সহজে ছাড়বোনা।
ওমরের রুমে ওসমান,ওমর,আয়েশা,তিশা বসে আছে।
ওমর : সাব্বাশ ভাবিজ্বী,কতো সুন্দর করে ঠান্ডা মাথায় জেসমিনকে অপ’মান করলে।
তিশা : থ্যাঙ্ক ইউ দেবরজ্বী।উনি শুধু শুধু এখানে আসেনি এবারও কিছু না কিছু করতে এসেছে।
ওসমান : হুম,কিন্তু এবারও ও ওর কাজে ব্যর্থ হবে।
তিশা : আমাদের সাবধানে থাকতে হবে।মামনি আর বাবা ওনার চাল ধরতে পারেনি তাই ক্ষমা করে দিয়েছে,
কিন্তু আমাদের চোখ কান খুলে কাজ করতে হবে।
আয়েশা : হুম।
ওমর : এবার আর ও কিছু করতে পারবেনা।
পরদিন সকালে,
তিশা,আয়েশা,অবান্তিকা সকালের নাস্তা বানাচ্ছে,
রান্না শেষে তিশা আয়েশা খাবার গুলো টেবিলে রাখছে।ওয়াহিদ নিচে আসে,
ওয়াহিদ : গুড মর্নিং মামনি।
আয়েশা,তিশা : গুড মর্নিং বাবা।
তিশা : এই নাও বাবা নিউজপেপার।
ওয়াহিদ : থ্যাঙ্ক ইউ মামনি।
জেসমিন,ওমর,ওসমানও নিচে চলে আসে,
একসাথে খেতে বসে,
ওয়াহিদ : অবান্তিকা আগামী মাসের ৩ তারিখ আলিফার (রায়হানের মেয়ে)বিয়ে গতকাল রায়হান দাওয়াত দিয়া গেছে।আমাদের বিয়ের একসপ্তাহ আগে যেতে বলেছে।
অবান্তিকা : আর দশ দিন পর বিয়ে।
ওয়াহিদ : হুম।ওসমান তুমি সবাইকে নিয়ে তিনপর তোমার চাচ্চুদের বাসায় চলে যেও,আমি আর তোমার মামনি হলুদের আগের দিন যাবো।
ওসমান : আমরা সবাই একসাথে যাই।
ওয়াহিদ : আমার হসপিটালে কাজ আছে তাই আমার যেতে দেরি হবে।তোমরা সবাই চলে যেও।
জেসমিন : আঙ্কেল তাহলে আমি আগামীকাল হোটেলে সিফ্ট হবো।
অবান্তিকা : কেনো তুমিও ওদের সাথে যাবে।
জেসমিন : না আন্টি তোমাদের ফ্যামিলি প্রোগ্রামে আমি যেয়ে কি করবো আমি বরং হোটেলে চলে যাবো।
ওয়াহিদ : না মামনি তার দরকার নেই তুমি যতোদিন বাংলাদেশে আছো তুমি আমাদের সাথেই থাকবে,
আর রায়হানের বাসায় গেলে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে,তুমি সবার সাথে আলিফার বিয়েতে যাবে,
ঠিক আছে।
জেসমিন : আচ্ছা আঙ্কেল।
ওরা আরো কিছু কথা বলে নাস্তা শেষ করে যার যার রুমে চলে যায়।
জেসমিনের রুমে,
জেসমিন পায়চারি করছে আর মনে মনে ভাবছে,
আঙ্কেল আন্টি তোমাদের বিশ্বাস কিছুটা অর্জন করতে পেরেছি,আমার যা করার তা রায়হান আঙ্কেলের বাসায় যেয়ে করতে হবে তবে তার আগে সবার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।ওসমান তোমার তিশাকে আগলে রেখো না জানি কখন তোমার থেকে দুরে সরে বহু দুরে।
জেসমিন একটা শয়’তা’নি হাসি দিল।
তিশা রুমে বসে জামা কাপড় ভাজ করছে আর কিছু ভাবছে,ওসমান আস্তে করে দরজা খুলে ভেতর প্রবেশ করে দেখে তিশা আনমনে কিছু একটা ভাবছে,ওসমান তিশার পাশে যেয়ে বসে কিন্তু তিশা তার ভাবনায় এতোটাই মগ্ন ছিল যে ও ওসমানকে খেয়াল করেনি,
ওসমান তুরি বাজাতেই তিশার ঘোর কাটে,
আব..তুমি কখন এলে?
একটু আগে,এতোটা বিভোর হয়ে কি ভাবছিলে?আমার উপস্থিতিও টের পেলে না।
তেমন কিছু না,আমরা শপিং করতে যাবো না?
হুম আগামীকাল যাবো।
আচ্ছা।
তিশা ভাজ করা জামা কাবার্ডে রাখছে ওসমানও ওকে হেল্প করছে।
ডান।থ্যাঙ্ক ইউ হাসবেন্ডজ্বী।
ওসমান তিশার হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,
অনেক কাজ করেছো এবার স্বামী সেবা করো।
তো স্বামী এখন কি আপনার পা টি’পে দিব না কি গ’লা টি’পে দিব?
তিশা ব্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।
তিশাকে নিজের সাথে আরেকটু মিশিয়ে নিয়ে,
পাও টি’পতে হবে না গ’লাও টি’পতে হবে আপাতত চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো আর আমাকে ভালোবাসতে
দাও।
তিশার উত্তর শুনার আগেই ওসমান তিশার গলায় মুখ গুঁজে দেয়।তিশাও আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় আর ওসমানের পরশ অনুভব করে।
কিছুক্ষণ পর ওসমান মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে তিশা চোখ বন্ধ করে আছে ওসমান মুচকি হেসে তিশার ঠোঁটের মাঝে ঠোঁট ডুবাতে নিলে কেউ রুমের দরজা খুলে ভেতরে এসে পরে,তিশা ওসমানেরও ঘোর কাটে ওরা একে অন্যের কাছ থেকে সরে আসে,
জেসমিন : সরি,সরি আমি পরে আসছি।
তিশা : আপু কিছু বলবেন?
জেসমিন : হুম বসে বসে বোর হচ্ছিলাম,ভাবলাম সবাই একসাথে আড্ডা দেই তাই তোমাদের ডাকতে
আসলাম।
তিশা : আয়েশা,দেবরাজ্বীকে ডেকেছিলেন?
জেসমিন : হুম,ওরা নিচে।
তিশা : আচ্ছা আপনি যান,আমরা আসছি।
জেসমিন : আচ্ছা।
জেসমিন চলে যায়।
তিশা ওসমানের দিকে তাকিয়ে বলে,
চলুন নিচে যাওয়া যাক।
তিশা দরজা দিকে যেতে নিলে ওসমান ওর হাত ধরে আটকে দেয়,ওকে আবারও নিজের সাথে মিশিয়ে চোখে চোখ রেখে আনমনে বলে উঠে,
“শোনো-হরিনী কাজল-মায়ার আদল-ডাগর আঁখির মেয়ে ”
তুমি জলদি আসো আমার নিকট ধে’য়ে…!
ধন্য আমি-আমার জীবন তোমায় কাছে পেয়ে!
তুমি আমার আয়না হবে-
সকাল-বিকাল অর্হনিশি দেখবো শুধু চেয়ে!!
তুমি তাকালে,চোখ বাঁকালে,মনে জাগে প্রেম
বুকপকেটে মেরিলিন মনরো-সোফিয়া,সুখ রকেটের ফ্রেম।
তুমি থাকলে কাছে প্রানটা বাঁ’চে,অনুভূতির জ্যাম,
গেলে দূরে,মনটা পু’ড়ে,হৃদয় বি’ষা’ক্ত হেম।।
বাহ্ কবি হলে নাকি?
হলে ক্ষ’তি কি,ঘরে সুন্দর বউ থাকলে মন এমনিতেই কবি কবি করে।
হয়েছে এবার নিচে চলো।
তিশা ওসমানের হাত ধরে নিচে যায়।
সোফায় সবাই বসে কথা বলছে,
ওসমান : আগামীকাল আমি তিশা শপিং করতে যাবো,
তোমরা যাবে?
আয়েশা : হ্যাঁ আমারও যেতে হবে।
জেসমিন : আমারও কিছু কেনাকাটা করতে হবে।
ওমর : তাহলে সবাই একসাথে কাল শপিংয়ে যাব।
ওসমান : আজ বিকালে পাশের পার্কটায় যাবো, তোমরা যাবে?
ওমর,আয়েশা,জেসমিন : হুম।
ওরা দুপুরে লাঞ্চ করে,একটু বিশ্রাম নিয়ে রেডি হয়ে সবাই বেরিয়ে পরে,সেখানে ঘুরে রাতে ডিনার করে বাসায় চলে আসে।
জেসমিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিহাবের সাথে ফোনে কথা বলছে,
বেবি তুমি কবে আসবে?
জেসমিন আমি আসতে পারবো না।
কেন?
আমার অফিসে একটু সমস্যা হয়েছে এখন যাওয়া সম্ভব না,তুমি সব কিছু প্ল্যান মতো করছো তো?
হুম,আঙ্কেল আন্টির মন জয় করে ফেলেছি,এবার আয়েশা আর তিশার মন জয় করতে হবে।
তুমিই তো বললে তিশা নাকি তোমাকে ঠান্ডা মাথায় অপ’মান করছে,তাহলে তুমি ওর মন জয় করবে কিভাবে?
হ্যাঁ বলেছি,বাট ওকে দেখে যা বুঝলাম,ও খুব সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করে ফেলে।আমাকে এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ওর মন জয় করতে হবে।
আচ্ছা তুমি তাই করো,রাখছি।
আচ্ছা।
রাত বারোটা বাজে তিশা বিছানা ঝাড়ছে,
ওসমান রুমে এসে তিশার দিকে একটা প্যাকেট বারিয়ে দেয়,
এটা কি?
খুলেই দেখো।
ওয়াও এতো সুন্দর গাউন আমার ভিষণ পছন্দ হয়েছে।
পরে এসো,আজ আমার জানপাখিকে আমি নিজ হাতে সাজাবো।
আচ্ছা তুমি ৫ মিনিট ওয়েট করো।
তিশা ওয়াশরুমে যেয়ে গাউন টা পরে আসে।
ওসমান ওকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে চোখে কাজল লাগিয়ে দিচ্ছে,কাজল দেওয়া শেষে ঠোঁটে হালকা কফি কালার লিপস্টিক লাগিয়ে দেয়।হাতে সাদা চুরি,কানে ছোট ঝুমকো পরিয়ে দেয়।
চুল আঁচড়িয়ে দিয়ে ওড়না সেট করে দেয়।
মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে একদম সাদাপরী,চলো।
চলো মানে কোথায় যাবো?
বাহিরে যাবো রাতের ঢাকা দেখতে।
ওহ,বাইককে করে ঘুরবো।
আচ্ছা চলো।
তিশা ওসমান রুমের দরজা লাগিয়ে নিচে নেমে আসে,
ওরা তাকিয়ে দেখে সবার রুমের লাইট নিভানো সবাই এখন ঘুমাচ্ছে,ওসমান গ্যারেজ থেকে বাইক নিয়ে আসে তিশাও বাইকে উঠে বসে ওসমানকে জড়িয়ে ধরে,
ওসমান বাইক স্টাট দেয়।
হাসবেন্ডজ্বী আমরা কোথায় যাবো?
যেদিকে দু চোখ যায়।
অজানা গন্তব্যে হা’রাতে চাও?
হুম তোমায় নিয়ে।
কিছুক্ষণ পর ওসমান বাইক থামায় আইসক্রিম পার্লারের সামনে,সেখানে বাইক পার্ক করে শপ থেকে আইসক্রিম নিয়ে ওরা রাস্তা দিয়ে হাটছে আর
আইসক্রিম খাচ্ছে,
বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছেনা।
কেন জানপাখি?
দেখো আকাশটা কতো সুন্দর তাঁরায় ভরা দেখে মনে হচ্ছে তাঁরার মেলা বসেছে।এই দৃশ্য ছেড়ে বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না।
তাহলে চলো হা’রিয়ে যাই।
তোমায় নিয়ে অজানা গন্তব্যে হা’রাতে চাই প্রিয়।
ওরা আবারও সেই আইসক্রিম পার্লার থেকে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরে,সারারাত ঘুরে সূর্য উঠার আগেই ওরা বাসায় চলে আসে।
সকালে ওসমান তিশা ঘুম থেকে উঠে সবার সাথে নাস্তা করে,তার পর সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়,দুপুরের লাঞ্চ করে,রেডি হয়ে ৪ টার দিকে ওরা শপিং করতে বের হয়।শপিং করতে করতে রাত হয়ে যায় তাই ডিনারটা বাহিরে থেকে করে আসে।
তিশা ঘরে বসে ফোন চালাচ্ছে,সাজ্জাদ চল করেছে তাই ওসমান ওমর বাহিরে গিয়েছে,তিশা আয়েশার রুমে যেয়ে দেখে আয়েশা ঘুমাচ্ছে তাই আবারও রুমে চলে আসে,বসে বসে ফোন চালাচ্ছিল তখন কেউ দরজায় নক করে,
চলবে কি?
[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
চলবে কি?
[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,ভিষণ অসুস্থ কোনো রকম করে লিখে দিয়েছি তাই ছোট হয়েছে,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]