#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_২৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabhaসেই বৃষ্টিতে ভেজার পর টানা তিনদিন তুমুল জ্বর ছিলো।এত জ্বর এসে ছিলো যে বিছানা থেকে উঠতে পারেনি নূর। এই তিনদিন মাহি আর রুদ্র ওর খুব খেয়াল রেখেছে। মাহিতো পাঁচ মিনিটের জন্য নূরকে রেখে কোথাও জায়নি। ভার্সিটিতেও জায়নি।তিনটা দিন বেহুঁশের মতো পরে থেকে চতুর্থ দিনে প্রায় অনেকটাই সুস্থ হয়েছে।
আজ ইরিন ফোন দিয়ে জানিয়েছে ক্লাস টেস্ট পরিক্ষা আজকে। ও যদি সুস্থ হয় তাহলে যেনো আসে।
নূর উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে গেলো। হালকা নাস্তা করে বেরিয়ে পরলো কলেজের উদ্দেশ্যে। পিছন থেকে আনিতা বেগম অনেক বার ডাকলেন মেডিসিন খেয়ে যাওয়ার জন্য। ঔষধ দেখলেই নূরের শরীর গুলায়।
ক্লাস রুমে নূর আর ইরিন বসে কথা বলছে।এমন সময় কয়েকটা ছেলে মেয়ে এসে বললো,’ সরি নূর আমাদের ক্ষমা করে দাও।আমরা বুঝতে পারিনি ওই দিন তোমার সাথে বাজে ব্যাবহার করে ফেলেছি।তোমার সাথে বাজে ব্যাবহারের জন্য আমরা লজ্জিত্য।’
নূর দেখলো ওই দিন ওকে আর শুভ ভাইকে নিয়ে অপমান করা ক্লাসের ছেলে মেয়ে গুলো আজকে ওর কাছে ক্ষমা চাচ্ছে। ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷ কিন্তু সেই হাসি আর বেশি সময় থাকলো না।
পাশে থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো, ‘ সরি ভাবি আপনার আগে বলার উচিৎ ছিলো আপনি শুভ ভাইয়ের হবু বউ।তাহলে তো আমরা আপনাকে ভুলেও কিছু বলতাম না।’নূরের কান দিয়ে মনে হচ্ছে গরম ধুঁয়া বের হচ্ছে রাগে।চোখ মুখ খিঁচে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।একটু সামনে যেতেই ফায়াজ স্যারের সামনে পরলো। ফায়াজ নূরকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো, ‘ কেমন আছো নূর..?’
নূরঃ জ্বি স্যার আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি..?
ফায়াজঃ আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। জ্বর কমেছে.?
নূরঃ একদম ভালো হয়ে গেছি স্যার।
ফায়াজঃ তাহলে ক্লাস রুম ছেড়ে ওই দিকে কোথায় যাচ্ছো..?
নূরঃ ভালো লাগছে না স্যার তাই ভাবলাম ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাক।
ফায়াজঃ একটু আগেই তো বললে ভালো হয়ে গেছো। আবার ডাক্তারের কাছে কেনো..?
নূরঃ ওফ্ফ স্যার আপনি এই সব গোয়েন্দাগিরি না করে। রাট বারো টায় লোকের বাসার বারান্দায় ডিল না মেরে জলদি বিয়ে করে নেওয়ার প্লেন করেন কাজে দিবে।
ফায়াজ নূরের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে হেসে উঠলো।
ফায়াজঃ যাই বলো নূর তোমরা দুই বোন খুব ডেঞ্জারাস মহিলা।
নূরঃ মহিলা!!
ফায়াজ নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার হেসে দিলো নূর ও ফায়াজের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো । এই কয় দিনে ফায়াজের সাথে খুব ভাব জমে গেছে।——
আবির আদিবাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আদিবা ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আদিবার এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে। আদিবা মনে মনে বলছে,
~এই বেটাকে তো বিয়ের আগে একদম ভদ্র ছেলে মনে হয়েছে।ওফ্ফ এখন তো একদম লুচ্চুদের খাতায় নাম উঠিয়ে ফেলেছে।একটু পরেই আমার আবার নিচ থেকে ডাক পরবে। দরজাটা ও খোলা কেউ যদি আমাকে দেখে তাহলে নিশ্চয়ই অনেক কথা শুনাবে।
ইরিনঃ আপনি অফিস থেকে কেনো এসেছেন..?
আবিরঃ ঘরে সুন্দরী বউ রেখে কাজে মন বসে না।তাই বসের থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসলাম। ভাবছি হানিমুনে যাবো। আচ্ছা কোথায় যাওয়া যায় বলো তো..?
আদিবার হানিমুনের কথা শুনেই চোখ কপালে।——
কলেজ ছুটির পর নূর বাসায় না এসে হসপিটালে চলে গেলো ইরিনের আম্মুকে দেখতে। আন্টি হার্ট অ্যাটাক করেছে হসপিটাল ভর্তি।
নূরকে দেখে ইরিনের আম্মু অনেক খুশি হলেন।উনার সাথে অনেকক্ষন কথা বলে উঠে দাঁড়ালো নূর।
নূরঃ তাহলে আন্টি আসি।
~আচ্ছা মা। ইরিনের সাথে আমাদের বাসায় আসবে ঠিক আছে।
নূরঃ অবশ্যই আসবো আন্টি।নূরকে এগিয়ে দিতে ইরিন ও নূরের সাথে বের হলো। আসার সময় হঠাৎ চোখ আটকে গেলো একটা পরিচিত মুখের মধ্যে।পাশের ক্যাবিনে রুদ্রকে দেখে অবাক হয়ে গেলো নূর।
ইরিনঃ কি হয়েছে বলে তাকিয়ে ওর চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠলো। পরক্ষনে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ ভুলেও আর কারো উপর ক্রাশ খাবো না। আমি ভালো মেয়ে হয়ে গেছি.’রুদ্র রোগী দেখে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।
রুদ্রঃ নূর তুমি এখানে কেনো..?
নূর হালকা হেসে ওর পাশে ইরিন কে দেখিয়ে বললো ওর আম্মুকে দেখতে এসেছি।
ইরিন ভদ্র মেয়ের মতো সালাম দিলো।
রুদ্র সালামের উওর দিয়ে কিছুক্ষন ইরিনের সাথে পরিচিত হলো।
রুদ্র ইরিনের সাথে কথা বলে নূরের দিকে এগিয়ে এসে। নূরের কপালে হাত রেখে দেখলো জ্বর আছে কি নেই।
নূর প্রথম ঘাবড়ে গেলেও পরে নিজেকে সামলে নিলো।রুদ্র নূরকে আর ইরিন কে বললো ওর ক্যাবিনে যেতে নূর বললো বাসায় যাবে। অন্য একদিন আসলে ক্যাবিনে যাবে ইরিনও বললো পরে কোনো এক সময় যাবে।
রুদ্র চলে যেতেই ইরিন বলে উঠলো, ‘ দুস্ত এতো সুন্দর পুলা ঘরে থাকতে তুই এখনো সিঙ্গেল কেমনে। আমি হলে কবে টুকুস করে প্রেম করে বিয়ে করে চার পাঁচটা বাচ্চার আম্মা হয়ে যেতাম।
নূর ইরিনের কথা শুনে রাগ করলো না হুঁ হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো। সাথে ইরিন ও হেসে দিলো।———
মাহি ভার্সিটি থেকে বের হতেই সামনে ফায়াজ পরলো।
মাহিঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার।
ফায়াজ সালামের উওর দিয়ে বললো, ‘ মাহি একটা কথা ছিলো। তুমি কি ফ্রী আছো..?’
মাহিঃ জ্বি স্যার।
ফায়াজঃ আমার সাথে একটু মার্কেটে যাবে৷ আসলে আমি তো মেয়েদের কিছুই চিনি না বুঝি না। তাই তোমাকে দেখে বললাম।
মাহিঃ কার জন্য..?
ফায়াজঃ আম্মুর আজকে বার্থডে তাই ভাবলাম হঠাৎ কিছু নিয়ে চমকে দেই।
মাহি খুশি হয়ে বললো,’ তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো চলুন। ‘———
রাতে রুমে শুয়ে গল্পের বই পড়ছে নূর। মাহি নূরের রুমে ঢুকেই নূরকে টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে নিলো। তারপর খুশিতে নূরকে নিয়ে ঘুরা শুরু করলো। মাহি খুশিতে কি করছে সে নিজেও বুঝছে না৷ নূর অবাক হয়ে গেছে মাহির এমন পাগলামি দেখে।
নূরঃ আসতে আসতে আপু আমি পরে যাবো তো।
মাহিঃ নূর! নূর আমি আজকে এত এত খুশি যা আমি তোকে কেনো কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না।
নূর অবাক হয়ে বলে উঠলো, ‘ কেনে রে তুই কি কোনো জব পেয়েছিস। নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ‘
মাহি লাজুক হেসে মাথা নাড়লো।
নূর কিছুক্ষন থমকে তাকিয়ে আছে।
মাহি অবাক হয়ে বললো,’ কি হয়েছে নূর। কিছু বলছিস না কেনো…’
নূর একটু হাসার চেষ্টা করে বললো, ‘ সত্যি আপু তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে.? নাকি আমার সাথে মজা করছিস।
মাহিঃ তোর কি মনে হয় বিয়ের মতো এমন একটা সিরিয়াস কথা নিয়ে আমি মিথ্যা বলবো। বলে বিছানায় বসলো মাহি।মাহির বিয়ের কথা শুনেই নূরের চোখের সামনে ফায়াজের মুখটা ভেসে উঠলো।
নূরঃ ছেলের নাম কি? বাসা কোথায়? বিয়ে ঠিক হলো কবে? তোমাকে দেখতে আসলই বা কবে?
মাহিঃ ওরে বইন একটু শ্বাস ফেলে প্রশ্ন কর। আর ছেলে দূরের কেউ না।
নূরের মুখে হালকা হাসি ফুটে উঠলো মনে মনে বলে উঠলো, ” তাহলে কি ফায়াজ স্যার”নূর খুশিতে মাহি কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, ‘ তাহলে ছেলেটা কে শুনি..?
মাহিঃ আমাদের রুদ্র ভাইয়া.. বলেই দু’হাতে মুখ ডেকে নিলো।নূরের মনে হচ্ছে ও ভুল শুনেছে। রুদ্র ভাইয়া!! এটা কি করে হতে পারে। আর আপু এতো খুশি। আপুকি আগে থেকে ভাইয়া কে পছন্দ করতো..? আর রুদ্র ভাইয়া কে দেখে তো মনে হয়নি কখনো আপুকে ভালোবাসে।
মাহি আবার বলে উঠলো, ‘ দেখলি রুদ্র ভাইয়া কে দেখে তো একদমি মনে হয়নি উনি আমাকে পছন্দ করেন। কিন্তু তলে তলে বিয়ের প্রস্তাব ও উনার আম্মুকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আজকে রাতে বিয়ের তারিখ ঠিক করবেন সবাই বসে।
নূর অবাক হয়ে গেলো মাহির কথা শুনে। ওর কেনো বার বার ফায়াজের মুখটা ভেসে উঠছে। সেই মুখটা যেটা, প্রতি দিন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মাহির বারান্দার দিকে। তাহলে কি আরো একজনের মন ভাঙ্গার গল্প শুনা যাবে।একতরফা ভালোবাসার গল্প। রুদ্র ভাইয়া কি এক বারও বুঝতে পারেনি তার বেস্ট ফ্রেন্ড এর মনের খবর নাকি রুহির মতো সব বেস্ট ফ্রেন্ড তার বন্ধুর মন ভেঙে শান্তি পায়।
ফায়াজ রাতে মাহি কে পড়াতে এসে শুনতে পায়৷ মাহির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। মহূর্তেই ফায়াজের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। রাগে ফায়াজ হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ করে রেখেছে। চোখ দিয়েই যেনো আগুন বের হচ্ছে। ও কখনো কারো বাসায় গিয়ে টিউশনি করায় না। রুদ্র একবার বলার সাথে সাথে রাজি হয়ে গিয়ে ছিলো কারন মেয়েটা যে মাহি ছিলো।
ফায়াজঃ ছেলের বাসা কোথায়..?
মাহি লজ্জা মাখা মুখে বলে উঠলো স্যার ছেলেটা রুদ্র ভাইয়া।
ফায়াজ হঠাৎ একদম শান্ত হয়ে গেলো।না চাইতেও চোখের কোনে পানি জমা হচ্ছে । মুচকি হেসে বলে উঠলো, ‘ আরে বাহ্ খুব ভালো তো। তো বিয়ে কবে..? আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম তাও একবার বলার প্রয়োজন মনে করলো না।!’ফায়াজ মাহির রুম থেকে বেড়িয়ে চলে যাবে এমন সময় নূর পিছন থেকে ডেকে উঠলো।
ফায়াজ পিছন ফিরে নূরকে দেখে হাসার চেষ্টা করে বললো,’ কিছু বলবে নূর..?’
নূর ফায়াজের চোখের দিকে তাকালো। চোখে চিকচিক করা হালকা পানি ঠোঁটে হাসি মারাত্মক লাগছে ফায়াজ কে। ওর আফসোস হচ্ছে কেনো এই মানুষটার। এমন মন কাড়া হাসি ওর বোনের চোখে পরলো না। এই যে চোখে চিকচিক করা জলটা। এটা হলো না বলতে পারা কথাগুলোর ব্যথা।এই ব্যথাগুলো সবার সামনে দেখানো যায় না। সবাই যে এই ব্যথা বুঝে না। যাকে বুঝানো প্রয়োজন সে না বুঝে নিলে, অন্য কাউকে বলে লাভ কি। যে সে কতটা ব্যর্থ, নিজের ব্যর্থতার গল্প।
ফায়াজঃ কি হলো নূর কিছু বলবে..?
নূরঃ হুহ্,, না না স্যার কিছু বলবো না।ফায়াজ ড্রয়িং রুমে যাওয়ার সাথে সাথে আনিতা বেগম ফায়াজকে খাবার খেয়ে যাওয়ার জন্য জেদ ধরে বসলেন। উনার জেদ এর কাছে পরাজিত হয়ে খাবার খেয়ে যেতে হলো ফায়াজ কে।
আনিতা বেগম মনে করেন ফায়াজ যেনো ওনার ছেলেরজ মতো৷ এই ছেলেটার প্রতি উনার মায়া জমে গেছে।প্রতি দিন মাহিকে পড়িয়ে যাওয়ার সময় খাবার না খাইয়ে ছাড়েন না।বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে আজ থেকে তিনদিন পর বিয়ে…. মাহি তো খুশিতে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা। বুকে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে….
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।#এই_অবেলায়_তুমি
#বোনাস_(পর্ব _২৫)
লেখিকা #Sabihatul_Sabhaচোখের পলকে যেনো দুইটা দিন চলে গেলো। আজ বাদে কাল বিয়ে। চৌধুরী বাড়ির ছেলেদের শেষ বিয়ে বলে কথা।কোনো কিছুর কমতি রাখেনি।
ফুলে ফুলে পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে, লাইটিং করা হয়েছে। আত্মীয় স্বজনে বাড়ি টইটুম্বুর। বিয়ের আগের দিন এতো মানুষ আসার মানে টা বুঝলো না নূর। ঠিক আছে বিয়ে দাওয়াত দিয়েছে কাল কে আসবে। আজ এসে কেনো বাড়িটাকে মাছের বাজারের মতো বানিয়ে রেখেছে।
বর কনে তো এক বাড়ির তাই দুই পক্ষের আত্মীয় স্বজনরা ও এক বাড়িতে এসেছে। তাই বাড়িতে এত মেহমান।হলুদ সন্ধ্যায়,
মাহিকে খুব সুন্দর করে হলুদ আর লাল পাড়ের শাড়ি, হলুদ আর লাল মিশ্রিত গহনা দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। মাহি তো দেখতে এমনিতে মাশাল্লাহ খুব সুন্দর। পার্লারের মেয়েরা মাহি কে সাজিয়ে নূূরের দিকে তাকালো।
নূর গালে হাত দিয়ে ওর আপুর দিকে তাকিয়ে আছে।
মাহি নূর কে ঠিক হয়ে দাড়াতে বললো। উনারা শাড়ি পরাবে।
নূর বিরক্তিতে মহিলা গুলোর দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার শাড়ি আমি পড়ে নিতে পারবো। আপনারা রুম থেকে বের হন।’
যেহেতু উনাদের কাজ শেষ তাই উনারা বেরিয়ে যেতে নিলে মাহি রেগে বলে উঠে, ‘ আপনারা দাঁড়ান। আর তুই বেশি পন্ডিত হয়ে গেছিস না। চুপচাপ দাঁড়া এখানে। তোকে আমার মতো সাজিয়ে তারপর তারা বের হবে৷ আর না হলে আমি একে একে সব খুলে ফেলবো। ‘
নূর নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,’ তাহলে উনাদের বলো আরো পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে।’
মাহি এক ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো, কেনো..?
নূরঃ ইরিন আসছে তাই। এক সাথে হলুদের জন্য রেডি হবো।
মাহির হঠাৎ আদিবার কথা মনে পরলো । ইসস বিয়ের খুশিতে সে তো আদিবার রেডি হওয়ার কথাই ভুলে গেছে।
মাহি নীল কে ফোন দিলো ওর রুমে আসার জন্য।কিছুক্ষন পর রুমের দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হতেই নূর এগিয়ে গেলো দরজা খুলতে।
দরজা খুলতেই দেখলো নীল বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে।
নূরঃ হনুমানের মতো মুখ করে আইছিস কেনো..?
নীলঃ একদম হনুমান বলবি না। নিজের চেহারা একবার আয়নার মধ্যে দেখ গিয়ে। পেঁচার মতো মুখ করে তাকিয়ে আছিস। আমার মতো একটা সুদর্শন যুবক কে হনুমান বললে তোর জীবনে ও বিয়া হইবো না।
নূরঃ কি তুই সুদর্শন যুবক!! বলেই নূর হাসা শুরু করলো।
নীলঃ আজাইরা পেঁচাল বাদ দে। আগে বল হরিণ কই। আসতে বলছ নাই..?
নূরঃ কেনো ওকে দিয়ে তোর কি কাজ..? আর ও কেনো আসবে আমাদের বাড়ির বিয়েতে। ও এই বাড়ির কি হয়..? ও জাস্ট আমার কলেজের ফ্রেন্ড।
নীল রেগে বলে উঠলো, ‘ তোরা মেয়েরা এক নাম্বার পল্টি বাজ।এতো দিন গলায় গলায় ভাব আর আজ কে জাস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেলো। সর তো সামনে থেকে।
নূর কিছু বলবে তার আগে মাহি ভেতর থেকে নীল কে বললো,’ ওই ঝগড়া থামা। আমার গায়ে হলুদ শেষ হয়ে যাবে তোরা দু জনের ঝগড়া শেষ হবে না। নীল গিয়ে আদিবা কে বল মাহি ডাকছে।ইরিন আসার পর নূর বললো আগে ইরিন কে সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে। ইরিনের পর আদিবাকে সাজালো তারপর শুভ্রতা, তারপর নূর। সবাইকে ঠিক এক রকম ভাবে সাজিয়েছে শুধু মাহির সাজটা একটু ভিন্ন। যেনো বউ কে চিনতে অসুবিধা না হয়।
আর এদিকে আমাদের রুহি ভাবি উনার ঠিক করা পার্লারের মেয়েদের কাছে সেজেছে তাকেও খুব সুন্দর লাগছে।
ছেলেরা সবাই পরেছে হলুদ পাঞ্জাবিতে লাল, সাদা সুতার কাজ করা।
রুদ্র আব্বু রেগে নিজের রুমে বসে আছেন। ছেলে তার দিন দিন বেয়াদবের খাতায় নাম তুলে নিচ্ছে। আজ তার গায়ে হলুদ বাড়ি ভর্তি লোকজন কিন্তু ছেলের কোনো খবর নেই।বিয়ের জন্য তো দুই দিনের ছুটি নিতে পারে হসপিটাল থেকে। এই নিয়ে না হয় ১০০+কলের উপরে কল দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু রুদ্র কল রিসিভ করছে না।
ছাঁদে খুব সুন্দর করে হলুদের স্টেজ সাজিয়েছে। মাহি কে নিয়ে সবাই ছাঁদে গেলো৷ একটু পর মেহেদী দিয়ে দেওয়ার জন্য পার্লার থেকে মেয়ে আসবে।
নীল সাথে করে চারটা মেয়ে নিয়ে ছাঁদে আসলো।
নীলের সাথে চারটা সুন্দরী মেয়ে দেখে ইরিন রেগে নূরের হাত খামচে ধরলো।
নূর হঠাৎ এমন আক্রমনে ‘আহহহ’ বলে আর্তনাদ করে উঠলো।
নূরের মুখে আর্তনাদ শুনে সাথে সাথে ইরিন ছেড়ে দিলো নূরের হাত। অপরাধীর মতো মুখ করে নূরের দিকে তাকালো।
নূর হেসে বলে উঠলো, ‘ একদম এভাবে তাকাবি না। ‘
ইরিনঃ সরি জান্স..এই নীলের সাথে মেয়ে গুলো কে..?
নূর চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো, ‘ তুই জেলাস..!
ইরিন নূরের থেকে চোখ সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ মুটে ও না। ‘মেয়েগুলো এসে মাহির সামনে একজন বসলো। বাকি তিনজন শুভ্রতা, আদিবা কে দিয়ে দিচ্ছে।
নূর আর ইরিনের সামনে একজন দাঁড়িয়ে আছে।
নূরঃ আপনি ইরিন কে দিয়ে দেন। আমি মেহেদী দিবো না।
ইরিনঃ তুই না দিলে আমিও দিবো না নূর।
নূরঃ চুপচাপ বসে থাক। বেশি কথা একদম বলবি না৷মাহি কে মেহেদী পড়ানো মেয়েটা বলে উঠলো, ‘ আপু বরের নামটা একটু বলেন৷ ‘
এমন সময় ছাঁদে প্রবেশ করলো রুদ্র আর ফায়াজ৷
ফায়াজ কালো পাঞ্জাবি পড়েছে। শ্যামলা চেহারার পুরুষটাকে কালো রং টায় মারাত্মক সুন্দর লাগছে। আর রুদ্র সাদা শার্ট আর কালো টাউজার।
রুদ্রের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো নূর। বেটার আজ বাদে কাল বিয়ে। আজ গায়ে হলুদ সে কি না শার্ট আর টাউজার পড়ে আছে৷মাহি ফায়াজের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো”ফায়াজ”
মেহেদী পড়ানো মেয়েটা ভাবলো হয়তো বরের নাম ফায়াজ সুন্দর করে মাহির হাতে ফায়াজের নামটা লিখে দিলো।ফায়াজ ছাঁদে এসে মাহির দিকে এক বার ও তাকালো না। ওই দিনের পর একটা কল ও দেয়নি। রাস্তার পাশে এসেও দাঁড়ায় নি।
রুদ্র গিয়ে মাহির কাছে কি যেনো বললো, মাহি লজ্জায় মাথা নিচু করে মাথা নাড়লো।নূর এটা দেখে রেগে নিচে নেমে গেলো৷ ইরিন ও মেহেদী দেওয়া বাদ দিয়ে নূরের পিছু পিছু দৌড়ে দিলো৷
———
ছাঁদে এখন কেউ নেই সবাই কে নিচে নামিয়ে দিয়েছে রুদ্র।
ছাদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র আর মাহি৷
মাহি লজ্জায় রুদ্রের উল্টো দিকে ফিরে আছে৷ আজ মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব লজ্জা যেনো মাহির মধ্যে এসে ভীড় জমিয়েছে।রুদ্র নীরবতা ভেঙে বলে উঠলো, ‘ মাহি তুমি কি এই বিয়েতে রাজি..?
মাহি রুদ্রের কথায় অবাক না হয়ে মনে মনে বলে উঠলো, ‘এটা কেমন কথা রে ভাই৷ আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি রাজি না। কাল বিয়ে আজ এমন আজগুবি চিন্তাভাবনা মানে কি। ‘
মাহিঃ জ্বি ভাইয়া আমি রাজি।রুদ্রের নির্লিপ্ত জবাব,’ কিন্তু আমি রাজি না।’
মাহি চমকে রুদ্রেদিকে তাকালো।
নাহ রুদ্রের মুখ দেখে তো মনে হয় না৷ উনি মজা করছে।
মাহি চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলো, ‘আপনি জানেন আপনি কি বলছেন..?’
রুদ্রঃ জানি মাহি.. আমি যেটা বলছি এটা এই মুহূর্তের জন্য একদম বলা উচিৎ নয়। কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।
মাহিঃ কেনো জানতে পারি..?
রুদ্রঃ এক মনে তো আর দুই জনকে জায়গা দেওয়া যায় না।
মাহিঃ সেটা এত দিনে মনে হলো৷ আজ বাদে কাল বিয়ে। আর আপনি এখন বলছেন।
রুদ্রঃ আমি আরো আগে বলতে চেয়েছি। কিন্তু সময় হয়ে উঠে নি৷
মাহিঃ আপনি কি এটা ছেলে খেলা পেয়েছেন। সময় হয়ে উঠে নি!! এই কথাটা বলতে কি একটা দিন লেগে যেতো।না হয় পাঁচ মিনিট লাগতো এই সময়টাই আপনার কাছে হয়ে উঠে নি। ওকে সব বাদ কালকে এত গুলো মানুষকে বড় আব্বু কি জবাব দিবে,একবার ভেবে দেখেছেন..?
রুদ্রঃ তুমি চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে মাহি। শান্ত হয়ে কথা বলো।
মাহিরঃ আমি চাইলে! নিজে বড় আম্মুকে বললেন বিয়ের কথা আবার আপনি বলছেন অন্য কাউকে ভালোবাসেন।মাঝ খানে আমার এই ছোট্ট মনটাকে কেনো টানলেন রুদ্র ভাইয়া। ছলছল চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললো মাহি।রুদ্র সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো।
রুদ্রঃ আমি তো তোমার কথা বলিনি। ঘরের মেয়ে বলেছি..
মাহিঃ সেটাই তো ঘরের মেয়ে বলেছেন। ঘরের মেয়ে বলতে আর কাকে বুঝিয়ে ছেন..?
রুদ্রঃ কেনো আর কেউ নেই..?
মাহি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলো, “নূর!!”
রুদ্র কিছু বললো না।
মাহিঃ আপনার বড় আম্মুকে নূরের নামটা বলার দরকার ছিলো। কারন এখন ঘরে বড় আমি আর তাই ঘরের মেয়ে বলাতে আমাকে বুঝেছে।
রুদ্রঃ তুমি চাইলে সব ঠিক হতে পারে মাহি।
রুদ্রের কন্ঠে কি ছিলো আকুতি..?
মাহি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি কিভাবে..? ‘
রুদ্রের চোখ পরলো মাহির মেহেদী দেওয়া হাতে। যেখানে বরের জায়গায় “ফায়াজ” নামটা জ্বলজ্বল করছে। চোখ সরিয়ে রুদ্র মুচকি হেসে বললো।
রুদ্রঃ তুমি খুব ভালো জানো। এখন কিভাবে ঠিক করবে।
মাহি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো৷ প্রিয় মানুষটির না হয় এই টুকু উপকার করলো।
মাহিঃ ঠিক আছে।রুদ্র মাহির মুখে ঠিক আছে শুনে খুশিতে মাহিকে জড়িয়ে ধরলো।
মাহি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রুদ্র ছাঁদ থেকে নেমে যেতেই মাহি হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। অনেক কষ্টে এতক্ষন নিজেকে শক্ত রেখে ছিলো৷ এই কয়দিন সাজানো হাজারো স্বপ্ন গুলো কাঁচের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। না এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। তাহলে কেনো হলো..?সবি কি নিয়তির খেলা।
আধাঘন্টা পর মাহি ছাঁদ থেকে নেমে ফায়াজ কে খুঁজা শুরু করলো। ড্রয়িং রুমে সবার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে ফায়াজ। মাহি গিয়ে ফায়াজের সামনে দাঁড়ালো।
ফায়াজ এই চারদিনে এই প্রথম মাহির দিকে চোখ তুলে তাকালো।
মাহি ফায়াজের হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো।
ফায়াজ অবাক হয়ে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ের আবার কি হলো?।
মাহি গিয়ে থামলো বড় আব্বুর সামনে।
উনি মাহিকে এভাবে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কি হয়েছে মাহি। কিছু বলবি মা..?’
মাহি চোখ গুড়িয়ে দেখলো এখানে ওর আম্মু, বড় আম্মু, আব্বু, বড় আব্বু সহ, ফুপিমণি সবাই বসে আছে।
মাহিঃ বড় আব্বু তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবে প্লিজ।
বড় আব্বু কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ দেওয়ার মতো হলে দিবো।’
মাহি ভয়ে ফায়াজের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো, ‘ আমি ফায়াজ স্যারকে ভালোবাসি….চলবে..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_২৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha“আমি ফায়াজ স্যারকে ভালোবাসি”
কথাটা শুনেই ফায়াজ চমকে মাহির দিকে তাকালো। ও কি সত্যি শুনলো নাকি কোনো ঘুড়ে আছে সে।
মাহির বড় আব্বু বলে উঠলো, ‘ মাহি তুমি কি বলছো বুঝতে পারছো। বাড়ি ভর্তি মানুষ আর কালকে তোমার আর রুদ্রের বিয়ে আজ তুমি বলছো অন্য কাউকে ভালোবাসো!…’
মাহির আব্বু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন নিজের আদরের মেয়ের দিকে। উনার ছেলে নেই তাই অন্য বাবাদের মতো নিজের মেয়েদের ঘরে আটকে রাখেননি। উনার পুরো বিশ্বাস ছিলো। মেয়েরা এমন কিছু কখনো করবে না। যাতে উনার মাথা সবার সামনে নিচু হয়ে যায়। কিন্তু আজ উনার মেয়ে উনার সব বিশ্বাসের এই মর্যাদা দিলো।
মাহি ছলছল চোখে বাবার দিকে তাকালো। সে তো তার বাবার বিশ্বাস ভাঙতে চায় নি। সে আজ পরিস্থিতি শিকার।
আনিতা বেগম উঠে এসে মাহির সামনে দাঁড়ালো।
মাহি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে হাত পা কাঁপছে।
আনিতা বেগমঃ মাহি তুই আমার বড় সন্তান। আমি তোর কোনো কিছুর অভাব রাখিনি। যখন যা চেয়েছিস তার থেকেও বেশি এনে দিয়েছি।কাল বিয়ে আর তোর আজ কে মনে হলো তুই ফায়াজকে ভালোবাসিস।
মাহিঃ আম্মু আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারিনি।হঠাৎ আনিতা বেগমের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে উঠলো। মাহির গালে পর পর ৪-৫টা থাপ্পড় মেরে বসলেন।
কেউ ভাবতেও পারেনি এই শান্ত মহিলা হঠাৎ এভাবে রেগে যাবেন।
আনিতা বেগমঃ ফাজলামো পেয়েছো তুমি। এটা পুতুল খেলা যে এতো দিন বিয়ে নিয়ে নাচানাচি করলে রুদ্র কে বিয়ে করবে বলে আর বিয়ের আগের দিন মনে হলো ফায়াজকে ভালোবাসো।
আনিতা বেগম কে শায়েলা বেগম টেনে মাহির সামনে থেকে নিয়ে গেলেন৷
কোনো দিন ও আনিতা বেগম তার মেয়েদের গায়ে হাত তুলেন নি। আজ সেই মেয়েকেই সবার সামনে এভাবে মারলেন।
মাহি কাঁদছে না। চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতর ফেটে যাচ্ছে তাও মুখ তালা বদ্ধ করে রেখেছে।
তখনি এখানে আগমন ঘটলো রুদ্রের৷
রুদ্র মাহিকে ফায়াজের হাত ধরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো। তার পর সামনে তাকিয়ে ভড়কে গেলো। আনিতা বেগম কে ওর আম্মু ধরে কি যেনো বুঝাচ্ছে। ওর আব্বু মাথা নিচু করে বসে আছে।আর বাকি সবাই মাহির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রুদ্র বুঝতে পারছে না আসলে এখানে হচ্ছেটা কি। ওর জানা মতে নূর আর মাহিকে সবাই খুব ভালোবাসে। এভাবে তাকানোর কথা তো না।
রুদ্র গিয়ে ওর আব্বুর পাশে বসে বললো,’ কিছু কি হয়েছে আব্বু..? ‘
শায়েলা বেগম ছেলের পাশে এসে বসে বলে উঠলেন,’ শুন রুদ্র তুই কোনো চিন্তা করিস না৷আমি তোর জন্য আমার বান্ধবীর একটা মেয়ে আছে। ওর সাথে কালকে বিয়ে দিবো। বাবা সবারি একটা পছন্দ ভালোবাসার ব্যাপার আছে। আমার আগে দরকার ছিলো মাহিকে জিজ্ঞেস করার।
রুদ্র যা বুঝার বুঝে গেলো। লোকে যে বলে মেয়েরা এক লাইন বেশি বুঝে তা রুদ্র আজকে প্রমাণ পেলো। মাহিকে কে বলেছে আগে আগে এসে পন্ডিতি দেখাতে। রুদ্র তো শুধু বলেছে তুমি চাইলে ঠিক হতে পারে। ও তো আর বলেনি তুমি গিয়ে সবাইকে বলো আমাকে বিয়ে করতে চাও না।
বিরক্তিতে মাহির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো। এই মেয়ে এমন কেনো..? এত কিছুর পর ও এতো স্ট্রং আছে কিভাবে..?
রুদ্রঃ আম্মু আমার কিছু কথা ছিলো..
শায়েলা বেগমঃ হুম বল বাবা..
রুদ্রঃ তুমি এই তো বললে.. সবার একটা পছন্দ, ভালোবাসার ব্যাপার স্যাপার আছে।তাহলে শুনো আমিও এই বিয়েটা করতে চাইছি না। আর আমি এটা মাহি কেও একটু আগে জানিয়েছি।
রুদ্রের আব্বু অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন ছেলের দিকে। উনার যা বুঝার উনি বুঝে নিয়েছেন৷ যে মেয়ে কখনো উনাদের কথার বাহিরে যায়নি। সে কখনো এত গুলো মানুষের সামনে উনার মাথা নিচু হবে এমন কাজও করতে পারে না। শুধু রুদ্রের ভালোর জন্য এই নাটক করছে।
শায়েলা বেগমঃ কেনো রে আমি যখন তকে মেয়েদের ছবি দেখালাম তখন তুই কি বলে ছিলি..! ঘরে মেয়ে থাকতে বাহিরে যাওয়ার কি দরকার! আর আজকে বলছিস তুই ওকে বিয়ে করবি না।“ঘরের মেয়ে বলতে কিন্তু রুদ্র একবার ও মাহির নাম নেয় নি বড় আম্মু ” বলে রুমে ঢুকলো আবির।
সবাই জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকালো।
রুদ্রের আব্বু বলে উঠলো, ‘ আবির এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা না বলে। সোজাসুজি বলো কি বলতে চাও..?’
আবিরঃ বড় আব্বু এখানে আসলে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। তবে এখানে দোষ রুদ্রের বেশি। ওর দরকার ছিলো বড় আম্মুকে ঘরের মেয়ে না বলে নাম বলার। আর রইলো মাহির কথা ওর কোনো দোষ নেই। রুদ্র ওকে বিয়ে করতে পারবে না বলাতেই ও এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ও চায়নি রুদ্র সবার সামনে দোষী হোক।
আনিতা বেগমের চোখ জলে ভরে উঠলো। কোনো দিন মেয়েদের গায়ে হাত তুলেন নি আর আজ এত গুলো মানুষের সামনে মারলেন। তাও মেয়েটা মুখ খুললো না। এত শান্ত,শক্ত ধাঁচের কেনো মেয়েটা।
রুপা বেগম বলে উঠলো, ‘ তাহলে রুদ্র কাকে বুঝিয়েছে রে আবির..?’
আবিরঃ কেনো ফুপিমণি মাহি ছাড়া কি ঘরে আর কেউ নেই..?
রুদ্রের আব্বু বলে উঠলো, “নূর”
আবিরঃ হুম বড় আব্বু।
উনি রেগে রুদ্রের দিকে তাকালেন। রুদ্র মাথা নিচু করে বসে আছে।
এতক্ষনে মুখ খুললেন নূরের আব্বু, ‘ কিন্তু নূর তো ছোট।এখনো ওর বিয়ের বয়স হয়নি।’
শায়েলা বেগমঃ দেখ ছোট ভাই এত বড় সমস্যা কখনো হতো না যদি আমি ভুল না বুঝতাম। প্লিজ তুই আর কথা বাড়াইস না।নূর বিয়ের পরও নূর পড়াশোনা করবে।পড়াশোনা বন্ধ থাকবে না।’
তারপর সবাই মিলে আরো অনেক কথা হলো লাস্ট পর্যায় ঠিক হলো কাল নূর আর রুদ্রের বিয়ে হবে।আনিতা বেগম মাহির কাছে এসে বললেন, ‘ আমি কি এতটাই পর হয়ে গেছি যে একবার সত্যি টা আমাকে বলা যেতো না। সব বাদ ফায়াজকে ভালোবাসিস এটাও একবার বলতে পারলি না।
তারপর ফায়াজের সামনে গিয়ে বললেন তুমি কি মাহি কে বিয়ে করবে বাবা। তুমি রাজি থাকলে আমি তোমার আম্মুর সাথে কথা বলতে চাই। কাল এক সাথে দুটো বিয়ে হবে।
ফায়াজের মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে। খুশিতে চোখের কোনে এসে জল জমে গেছে। হারাতে হারাতে প্রিয়তমা কে পাচ্ছে এবার আর হারাতে দিবে না।——
নিজের রুমে বসে আছে মাহি ওর পাশেই আদিবা।
আদিবাঃ মাহি তুই তো রুদ্র ভাইয়া কে ভালোবাসিস তাহলে মিথ্যা কথা কেনো বললি..?
মাহিঃ আদিবা তোর সাথে সকালে কথা বলবো। এখন নিজের রুমে যা।
আদিবাঃ এই সব পাগলামোর মানে কি..? তুই বুঝতে পারছিস তুই কি করে ছিস..?
মাহিঃ জোর করে আর যাই হোক কখনো ভালোবাসা হয় না।
আদিবাঃ এক ছাঁদে নিচে এক রুমে থাকলে এমনকি তেই হয়ে যায়।
মাহিঃ তাই নাকি।
আদিবাঃ হুম তাই।আর নূরকে এখনো বিয়ের কথা কেনো জানানো হয়নি..?
মাহিঃ এমনি, সকালে জানিয়ে দিবে।
আদিবাঃ এটা তোরা কি পুতুল খেলা শুরু করে ছিস। যার বিয়ে তার খবর নেই। আর তুই বিয়ে করবি না বলেছিস নূরের জন্য তাই না??।
মাহিঃ আমার প্রিয় দুটো মানুষ ভালো থাকলে আমি ভালো থাকবো আদিবা।তুই এখন যা।
আদিবাঃ আমি আজকে তোর সাথে ঘুমাবো।
মাহিঃ একদম না। আমার রুম থেকে বের হ।বলে ঠেলে আদিবা কে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলো ।
আদিবাঃ মাহি এটা ঠিক না দরজা খোল। না হলে আমি দরজার সামনে ঘুমাবো।
মাহিঃ আচ্ছা ঘুমা।
কিছু ক্ষন পর আদিবা চলে গেলো নিজের রুমে।মাহি নিচে বসে আছে হটাৎ পাশে থেকে গ্লাসটা হাতে নিয়ে ছুড়ে মারলো ড্রেসিং টেবিলের আয়নার মধ্যে। সাথে সাথে আয়না ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। মাহি হাসতে হাসতে বললো, ‘ আমার মন ও যে ভেতর ভেতর এমন ভেঙে চুরমার হয়ে আছে।কেউ কি বুঝতে পারছে! নাহ কেউ বুঝবেও না। আমি যে বুঝতে দিবো না। আমার প্রিয় মানুষগুলোর সুখের জন্য এর থেকেও বড় বড় কষ্ট বুকের ভেতর যত্ন করে লুকিয়ে রাখবো।
নূর ঘুমাতে পারছে না। সাথে ইরিন আর দুইটা মেয়ে। পুরো বাসায় মেহমানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটু পর পর একজন পা এনে ফেলছে উপরে আবার কখনো হাত। এদের ঘুমানোর অবস্থা খুবই বাজে।নূর উঠে ঘড়ি দেখলো ২টা বাজে। এখনো অনেক রাত বাকি। বাকি রাত কিভাবে ঘুমাবে এই মেয়েগুলোর সাথে। জগ হাতে নিয়ে দেখলো পানি নেই। রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো কেউ সোফায় ঘুমিয়ে আছে আবার কেউ নিচে বিছানা করে। খুব সাবধানে পা ফেলে গিয়ে পানি খেয়ে রুমে আসার সময় সামনে রুদ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো।
নূরঃ রুদ্র ভাইয়া আপনি। এখনো ঘুমান নি।
রুদ্রঃ ছাঁদে আসো কথা আছে।
নূরঃ আপনার মাথা ঠিক আছে। এত রাতে আমি আপনার সাথে ছাঁদে যাবো কেনো।
রুদ্রঃ বেশি কথা বললে। লুকজন উঠে যাবে। চুপচাপ ছাঁদে চলো।
নূরঃ কাল আমার আপুর সাথে আপনার বিয়ে আজকে আমি এতরাতে আপনার সাথে ছাঁদে কেউ দেখলে বা আপু এই কতা শুনলে কি হবে ভাবতে পারছেন..!
নূরের কথা শুনে রুদ্র হাসলো।এই মেয়ে তাহলে এখনো বিয়ের কথা জানে না।
নূরঃ একদম শয়তানের মতো হাসবেন না। সরে দাঁড়ান রুমে যাবো।
রুদ্র অবাক হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। ও কখন শয়তানের মতো হাসলো। ওর হাসি কি দেখতে শয়তানের মতো!!
রুদ্রঃ বেশি কথা না বলে চলো আমার সাথে।
নূরঃ এত রাতে আমি আপনার সাথে ছাঁদে যাবো না।
রুদ্রঃ তুমি কি চাও বাড়ি ভর্তি লোক তোমাকে আর আমাকে এক সাথে দেখুক।তারপর কি হবে বুঝতে পারছো।নূর বাধ্য হয়ে রুদ্রের সাথে ছাঁদে আসলো৷ ছাঁদে এসে নূর তো অবাক নিচে সুন্দর করে পাটি বিছানো আছে।
রুদ্র আর নূর নিচে বসে আছে। রুদ্রের থেকে অনেকটা দূরত্ব রেখেই নূর বসেছে। রুদ্র একটা মেহেদী বের করে হাতে নিলো।
মেহেদী দেখে নূর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
রুদ্র নূরের হাতটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইশারা করলো। নূর কৌতুহলের বসে হাত বাড়িয়ে দিলো।
রুদ্র নূরের হাত নিয়ে মেহেদী দেওয়া শুরু করলো। নূর হা করে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।এই ছেলের কি মাথা খারাপ নাকি।নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে নূরের গেলো মেজাজ খারাপ হয়ে। মেহেদী দিতে জানেনা তাও কেনো দিতে আসছে।
নূরঃ আপনি এটা কি করলেন..?
রুদ্র অবাক হওয়ার মতো মুখ করে বললো, ‘ কি করেছি.?’
নূর দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো, ‘ আমার হাতটাই নষ্ট করে দিলেন..’
রুদ্রঃ নূর খুব সখ ছিলো নিজের হবু বউয়ের হাতে নিজে মেহেদী পড়িয়ে দিবো।
নূর দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘ আপনাকে ধরে রেখেছে কে। জান গিয়ে মেহেদী পড়িয়ে দেন। আমার এত সুন্দর হাত টাকে নষ্ট কেনো করছেন।
রুদ্রঃ হবু বউয়ের হাতেই তো পড়িয়ে দিচ্ছি।
নূরঃ আপনি কি জানেন আপনি একটা পাগল।
রুদ্রঃ সেটা তো অনেক আগেই হয়ে গেছি।
নূরঃ তারাতাড়ি ডক্টর দেখান।
রুদ্রঃ আমি নিজেই তো ডক্টর।
নূরঃ পাগলের!.
রুদ্রঃ সেটা তুমি ভালো জানো।
নূরঃ আপনার সাথে একটা সুস্থ মানুষ কখনই থাকতে পারবে না।
রুদ্রঃ তুমি থেকে গেলেই হবে।
নূরঃ কাল আপনার বিয়ে।
রুদ্রঃ সেটা সবাই জানে।
নূরঃ আমি রুমে যাবো।
রুদ্রঃ আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি।
নূর নিজের হাতের দিকে তাকালো। ইসস হাতটার যা তা অবস্থা হয়ে গেছে। আগে এমন হবে জানলে রুম থেকেই বের হতাম না।
রুদ্রঃ রুম থেকে তুলে নিয়ে আসতাম।
নূর আর কিছু বললো না। কথা বললেই কথা বারে।রুদ্রঃ যাও আমার কাজ শেষ।
নূর আবার হাতের দিকে তাকালো লাভের মাঝ খানে সুন্দর করে রুদ্রের নাম দেখে নূর রেগে গেলো৷
নূরঃ এটা কেমন ফাজলামো রুদ্র ভাই।
রুদ্রঃ তুমি যদি এখন আমার সামনে থেকে না যাও আমি ছাঁদ থেকে টুপ করে তোমাকে নিচে ফেলে দিবো।
নূর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।সকালে ঘুম থেকে উঠে মাহি নামাজ পড়বে। ওযু করতে ওয়াশরুমে গেলো। রাতে মেহেদী গুলো তুলা হয়নি। শুখিয়ে গেছে অনেক কষ্টে মেহেদী হাত থেকে তুললো। মেহেদী দেওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো….মেহেদীর মাঝ খানে সুন্দর করে গুটিগুটি করে লেখা “ফায়াজ” নামটা দেখে চমকে উঠলো।
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।